মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-০৪

0
603

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_04
.
🍁
আমি আর তিথি মুগ্ধর যাওয়ার পানে চেয়ে আছি।ঝামেলা যেন পিছুই ছাড়তে চায় না আমার।একটা শেষ হতে না হতেই আরেকটার উৎপওি।আদনানকে নিয়ে যথেষ্ট আপসেট আমি আর এখন এই মুগ্ধ।উফ কোথাও এক ফোঁটা শান্তি নেই আমার।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললো তিথি…..
.
_____ওই রাস্তায় কি হয়েছে রে….?ভাইয়া তোকে কিসব বললো….?
.
তিথির কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আমার।তারপর সবকিছু খুলে বললাম ওকে।সবটা শুনে হা হয়ে আছে তিথি।তারপর বললো….
.
_____মুগ্ধতা রে তোর কপালটাই খারাপ! তুই পরেছিস ভাইয়ার খপ্পরে।ভাইয়া এমনিতে কারো পিছনে লাগে না।আর যদি কেউ লাগে তাকে সহজে ছাড়ে না।এখন তোর কি হয় কে জানে…!!
.
তিথির কথায় চমকে উঠলাম আমি।আল্লাহ একটা বিপদ শেষ হতে না হতেই আরেকটা।এখন এই মুগ্ধ আমাকে কি করবে।পুরো জীবনটাই শেষ। জীবনে কি পেলাম শুধু হতাশা আর গ্লানি ধুর ভাল্লাগেনা…!!
.
🍁
জানালার বাইরে মুখ করে বসে আছে মেয়েটি।মুখে কোনো কথা নেই।একবারের জন্য আফিফের দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত।এটা কিছুতেই মানতে পারছে না আফিফ।মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য হালকা কাশলো আফিফ।কিন্তু তাতেও তার কোনো হেলদোল নেই যেভাবে ছিলো সেভাবেই রইলো।এতে বেশ খারাপ লাগলো তাঁর।হঠাৎ গাড়ি থামায় চমকে আফিফের দিকে তাকালো মেয়েটি।ভ্রু কুঁচকে বললো……
.
_____কি হলো আপনি গাড়ী থামালেন কেন….?আমি তো এখনপ বাসার সামনে আসিনি…?
.
আমার কথায় মৃদু হাসলো আফিফ।নরম কন্ঠে বললো….
.
_____জানি আপনার বাসায় এখনও পোঁছাইনি।আসলে কেউ যদি আমার উপর রেগে থাকে তাহলে শান্ত হয়ে ড্রাইভ করতে পারি না আমি।
.
লোকটার কথায় হতবাক আমি।বেশ অবাক হয়ে কি বলছেন কে রেগে আছে আপনার উপর…?
.
নিজের চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে উঠলেন উনি…..
.
____ওই যে সামনে থাকা মেয়েটি।যদিও এখনও নাম জানিনা আমি তাই “মেয়েটি” বলে সম্বোধন করছি এরজন্য আবার রাগ করা যেন না হয়।যদি নামটা বলতেন তাহলে উপকৃত হতাম।তা আপনার রাগের কারণটা বলবেন কি আমায়…?
.
আমার কথায় হাসলো মেয়েটি!!মেয়েটির হাসি মুখ দেখে অজানায় হারিয়ে যাচ্ছি আমি।
.
_____প্রথমত আমি কারোর উপর রাগ করিনি।কেউ আমার কথা না শোনলে খারাপ লাগে আমার।আপনি আমার কথা শোনেন নি তাই একটু আপসেট আর কিচ্ছু নয়।আমার নাম মিতুল।সবাই মিতু বলেই ডাকে।
.
মেয়েটির কথায় হেসে উঠলাম আমি।ওকে রাগানোর জন্যই বললাম…..
.
“তেঁতুল”!!ওহ্হ মাই গড সিরিয়াসলি তেঁতুল কারো নাম হতে পারে নাকি…?
.
ছোলেটির কথায় ক্ষেপে গেলাম আমি।অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম…..
.
_____তেঁতুল নয়!!দাঁতে দাঁত চেপে আমার নাম মিতুল।কানে প্রবলেম থাকলে ডক্টর দেখান তবুও ভুল ভাল বকবেন না ওকে।
.
ওহ্হ সরি!রাগ করবেন না।ফান করলাম।খুব সুন্দর নাম মিতুল অর মিতু।আমি আফিফ যদিও আমার নাম জানার ইচ্ছে নেই আপনার তবুও বললাম আর কি।
.
আমার কথায় খিল খিল করে হেসে উঠলো মিতু।তারপর বললো…..
.
আচ্ছা এবার যাওয়া যাক।আমার দেরি হচ্ছে।
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ড্রাইভ করতে শরু করলো আফিফ।একটা মোড়ের মাথায় গাড়ী দাঁড় করালো।মিতুর বাসাটা মোড়ের শেষে সে চায় না কেউ জানুক কোনো ছেলে তাকে নামিয়ে দিয়েছে।তাই এখানে থামাতে বললো আফিফকে।।মিতু গাড়ী থেকে নেমে ধন্যবাদ জানালো আফিফ কে।আফিফ তার শরীরে যত্ন যাতে ঠিক ভাবে নে সেই ব্যাপারে অনেক উপদেশ দিলো।তারপর আফিফকে বিদায় জানিয়ে হাঁটতে লাগলো মিতু।আফিফ এখনও দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে মিতুর যাওয়ার পানে।বেশ কিছুক্ষন পর মিতুকে আর দেখা যাচ্ছে না তখন মনের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আফিফের।একরাশ বিরক্তি নিয়ে মন খারাপ করে গাড়ী স্টার্ট দিলো আফিফ।
.
🍁
কলেজে চারটা ক্লাস করে হাঁপিয়ে উঠেছে মুগ্ধতা।এদিকে মাথা ব্যাথায় মাথা ফেঁটে যাচ্ছে।কিছুতেই ক্লাসে মন বসাতে পারছে না।শুধু কালকের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে চোখে ভাসছে তাঁর।আর পারছে না ক্লাসে বসে থাকতে।তিথিরও ইচ্ছে নেই ক্লাস করার কিন্তু মুগ্ধের ভয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ক্লাস করছে সে।আজকে ফার্স্ট ক্লাস মিস সেটাও দেখে নিয়েছে মুগ্ধ।তার পর যদি আবার দেখে তাহলে রক্ষে নেই।বাসায় সত্যি সত্যি বলে দেবে। বাড়িতে তিথির মা এ নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটাবে।।তাই বাধ্য হয়ে ব্যাগ কাঁধে একা একা বেড়িয়ে আসলো মুগ্ধতা।মাথাটা ঝিম মেরে আছে।ব্যাগ কাঁধে আস্তে আস্তে এগিয়ে চলেছে মুগ্ধতা।হঠাৎ কারো সাথে সজোরে ধাক্কা খায়।ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে সামনে থাকা লোকটিকে জড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।চুলগুলো এসে উপছে পড়ে মুগ্ধতার মুখে।ঘন কালো চুল তার ফাঁকে ফাঁকে হালকা মুখ দেখা যাচ্ছে তার।ছেলেটা তার মুখের চুলগুলো সরিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার দিকে।মুগ্ধতা চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। চুলগুলো সরিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলেছে তাকে।ধবধবে ফর্সা মুখ, জোড়া ঘন কালো ভ্রু জোগলের নিচে ডাগর ডাগর চোখ।ঠোঁটের নিচে কালো ছোট্ট একটা তিল যা মেয়েটার সৌন্দর্য কে আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করে ছেলেটি।
.
হঠাৎ কপালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো মুগ্ধতা।চোখ পিটপিট করে তাকিয়েই অবাকের চরম পৌঁছালাম আমি।”যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়”!এটা যেন মুগ্ধতার সাথেই মানায়।সামনে মুগ্ধতার সাথে লেপ্টে আছে মুগ্ধর শরীর।একধ্যানে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ।হঠাৎ মুগ্ধতার আওয়াজ শুনে হুশ ফিরলো তার…..
.
___এই যে এভাবে ৩৬ হাজার টন ওজন নিয়ে আমার উপর পড়ে আছেন কেন…?এত ওজন আমার শরীর নিতে পারছে না।প্লিজ তাড়াতাড়ি উঠুন।
.
মুগ্ধতার কথায় হুশ ফিরলো আমার।সীট!!কি হচ্ছিলো আমার।এতক্ষণ ধরে একটা মেয়েকে এভাবে দেখে গেলাম ছিঃ।দ্রুত মুগ্ধতা কে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি।আশপাশ তাকিশে না তেমন কেই নেই।এখন ক্লাস টাইম যে যার ক্লাসে তাই দু চারজন ছাড়া কেউ দেখেনি।উঠে দাঁড়িয়ে নিজের হাত ঝারতে লাগলাম আমি।মুগ্ধতা ও এরমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছে।ওকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম…..
.
____এই মেয়ে তুমি চোখে দেখ না।আন্ধা নাকি…?প্রথমে ভাবলাম পাগল তারপর দেখলাম বয়রা এখন দেখি আন্ধাও।ভাবা যায় একসাথে এতগুলো সমস্যা নিয়ে আছো।
.
উনার কথাগুলো শুনে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।রাগী কন্ঠে দাঁত কটমট করে বললাম….
.
আন্ধা আমি নই আন্ধা আপনি।আমি ঠিকই ছিলাম।আমি দেখে চলতে পারেন নি নাকি মেয়ে দেখলেই ধাক্কা মারতে ইচ্ছে করে কোনটা…?
.
মুগ্ধতার কথায় বেশ রাগ হলো আমার।আর সবকিছু মানা যায় কিন্তু কেউ আমার চরিএ নিয়ে কথা বলবে।সেটা টলারেট করার মতো শক্তি বিধাতা আমায় দেন নি।হ্যাঁ মানছি দোষটা আমারই কিন্তু তাই বলে আমার চরিএ নিয়ে টানাটানি করবে এটা মানবো না আমি।মুগ্ধতার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম…..
.
হেই লিসেন আমাকে আর যাই ভাবো না কেন চরিএহীন ভেবো না।মেয়েদের যথেষ্ট রেসপেক্ট দিয়ে চলি আমি।আর তুমি নিজেকে কি মনে করো যে তোমাকে দেখে ইচ্ছে করে ধাক্কা মারবো।যদি সুন্দরী রূপসী মায়াবী কোনো এক মানবী হতে তাহলে ভেবে দেখতাম কিন্তু তাও নও।খুবই সাদামাদা ডাইনি বুড়ির মতো দেখতে তাহলে কেন শুধু শুধু তোমার পেছনে টাইম নষ্ট করবো আমি।
.
মুগ্ধর কথায় বেশ খারাপ লাগলো আমার।হয়তো এই সাদামাটা হওয়ার জন্যই আদনান আমার পরিচয়ের অজুহাত দেখিয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।নইলে এভাবে আমাকে ভুলে যেতো পারতো না।মন খারাপগুলো উড়ে এসে ভীর জমালো মনের উঠানে।মাথা ব্যাথায় এমনি মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে তার উপর এতসব আর নিতে পারছি না।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললো মুগ্ধ……
.
___এমন হাতি মার্কা হওয়া স্বত্বেও আমাকে তুমি কি বললে ৩৬ হাজার কেজি ওজন আমার।হ্যাঁ আমার ওজন ৩৬ কেজি হতে পারে তবে তোমার মতো ৩৬ হাজার কেজি হবে না।
.
নাহ!উনার মতো লোককে ছেড়ে দেওয়া যায় না।যত ভাবছি কথা বাড়াবো না তত কথা বলেই যাচ্ছেন উনি।বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম…..
.
_____আপনার ওজন ৩৬ হাহা।আপনাকে হয় ভূতে নয় পাগলে ধরছে।অবশ্য মোটা হাতি কখনও নিজেকে মোটা মনে করে না।তার থেকে ছোট কাউকেও তার থেকে বড় মনে করে এ আর এমন কি….অন্যভাবে যদি বলি….চোর চুরি করে কখনও বলে না “আমি চুরি করেছি”।তাই আপনি যতই মোটা হাতি মার্কা হন না কে কখনই বলবেন না আপনি মোটা হাতি।
.
তোমার সাহস তো কম নয়।তুমি আমাকে মোটা হাতি বললে…?
.
____জ্বী তাই বললাম!!আর আমার সাহস বরাবরই একটু বেশি।যেহেতু একই কলেজে আছি সেহেতু আপনার জেনে রাখা ভালো।
.
তুমি কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলছো!!সিনিয়রদের সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয় সেটুকুও শিখ নি দেখছি।
.
____সম্মান,অসম্মান সবকিছুই নিজের উপর নির্ভর করে।নিজ গুণে মানুষ সম্মানিত হয় আবার অপমানিত ও হয়।যাগগে এত কথা বলে লাভ নাই।আপনার হয়তো ফালতু ক্যাচাঁল ভালো লাগে কিন্তু আমার ভালো লাগছে না।যদি নিতান্তই ঝগড়া করতে ইচ্ছে তাহলে এখানে দেখেন অনেক মেয়ে আছে যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করেন।
.
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে মলিন মুখে চলে গেলো মুগ্ধতা।আমি চেঁচিয়ে ডাকা স্বত্বেও পেছন ফিরে তাকায়নি।মেয়েটার ইলেম আছে বলতে হবে।আমার ডাক উপেক্ষা করে চলে গেলো।এই মুগ্ধর ডাক উপেক্ষা করলো।খুব বার বেড়েছে তোমার তাই না মুগ্ধতা।ঠিক আছে বাকা হেসেবএবার দেখো কি হয়…!!
.
.
#চলবে…..