মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-০৭

0
521

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_07
.
🍁
মিতুলের সামনে এক গাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আফিফ।এই রাস্তায় হঠাৎ আফিফ কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো মিতুল।বিস্ময় প্রকাশ করে বললো…..
.
আরেহ আপনি…?
.
মিতুলের কথায় হেসে উঠলো আফিফ।হাসির রেখা ভ্রু জোগল উঁচু করে বললো…..
.
_____কেন…?কি ভেবেছিলে আর কোনোদিন দেখা হবে না…?
.
আফিফের কথয় চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মিতুল।মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো…..
.
আরে না!আসলে আপনার সাথে এভাবে এখানে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দেখা হবে ভাবতে পারিনি।
.
_____তার মানে আমার কথা ভাবতে তুমি…?
.
আফিফের কথায় বিস্মিত মিতুল।মিতুল কিছু বলতে যাবে তার আগে বলে উঠলো আফিফ…..
.
যাগগে সেসব কথা!এখন বলো তুমি কেমন আছো…?ব্যান্ডেজ কবে খুলেছো…?এখন পুরোপুরি সুস্থ নাকি প্রবলেম আছে…?
.
আফিফের কথায় হাসলো মেয়েটি।কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো ঠিক করতে করতে বললো…..
.
_____আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো!ব্যান্ডেজ দু’দিন পরই খুলে ফেলেছি এখন পুরোপুরি সুস্থ আমি।
.
মিতুলের সুস্থতার কথা শোনে খুশিতে মনটা ভরে গেলো আফিফের।যাক এখন তার প্রেয়সী সুস্থ।
.
____যাক তুমি এখন সুস্থ।আমার জন্য কষ্ট করতে হলো।সরি সরি!
.
আফিফের কথায় খিল খিল করে হেসে উঠলো মিতুল।আফিফ মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রয়েছে মিতুলের দিকে।উফ!কি মনোমুগ্ধকর সেই হাসি।ইচ্ছে করে এই মুখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেই শত সহস্র বছর।আফিফের স্থির চাহনী অস্বস্তিে ফেলে দিয়েছে মিতুলকে।মিতুলের অস্বস্তি বুঝতে পেরে চোখ সরিয়ে নিলো আফিফ।ওড়নার কোণা আঙ্গুলে পেঁচিয়ে বললো মিতুল…..
.
_____আচ্ছা আমি আসছি ভালো থাকবেন।
.
মিতুলের কথায় মুহূর্তেই মন খারাপ হয়ে গেলো আফিফের।মেয়েটাকে এত তাড়াতাড়ি বিদায় জানাতে নারাজ সে।যদিও মন চায় কখনও চোখের সামনে থেকে না যায়। কিন্তু সেটা হওয়ার নয়।এই মুখের দিকে তাকিয়ে পার করতে চায় হাজার বছর।কিন্তু বিদায় দিতে হবে।মিতুলের সাথে আরেকটু সময় কাটানো জন্য ফন্দি আটলো আফিফ। অনুরোধের সুরে বললো…..
.
______কিছু মনে না করলে আমি তোমাকে বাসা অবধি ড্রপ করে দেই
.
আফিফের কথায় কিছুটা বিস্মিত হলো মিতুল।এইটুকু রাস্তা ড্রপ করে দেওয়ার কি আছে।সে নিজেই যেতে পারবে।তাই বললো…..
.
____না লাগবে না!আমি যেতে পারবো।
.
মিতুল নিজের অজান্তেই মন ভেঙে দিলো আফিফের।বাসায় ড্রপ দেওয়া এটা একটা বাহানা মাএ।আফিফ চায় তার বাসাটা চেনে রাখতে।ভবিষ্যতে যাতে তাঁকে খুঁজতে প্রবলেম না হয়।তাই বিনয়ের সুরে বললো…..
.
_____প্লিজ না করো না!!তাছাড়া আঙ্কেল আন্টির সাথেও দেখা করতে চাই আমি।সেদিনের জন্য উনাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আমায়।
.
তাঁকে কোনোভাবে পিছানো যাবে না।তাই বাধ্য হয়ে সাথে করে নিয়ে গেলো মিতুল।বাড়ির গেটের কাছে যেতেই বললো মিতুল…..
.
___এটাই আমাদের বাসা।চলুন ভিতরে যাওয়া যাক।
.
বাসাটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিলো।মুচকি হেসে বললো….
.
____আজ একটা কাজ আছে অন্য একদিন যাবো।বলে মিতুলের কাছ থেকে বিদায় নিলো আফিফ।হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিতুল।একটু আগে বললো সবার সাথে দেখা করবে এখন আবার না বলে চলে গেলো।কি হলো ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না মিতুলের।
.
.

পুরো ভার্সিটি খুঁজেও মুগ্ধতাকে খুঁজে পেলো না মুগ্ধ।বুঝতে বাকি নেই হয়তো বাসায় চলে গেছে।এভাবে অপমানিত হওয়ার পর কেই বা থাকতে চাইবে!কেউ চাইবে না।মুগ্ধতা কে না পেয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো মুগ্ধর।ওর ফ্রেন্ড সার্কেল মেয়েটাকে এভাবে অপদস্ত করলো ভাবলেই মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে।সব কটাকে কড়া কথা শুনাতে ইচ্ছে করছে তাঁর।হঠাৎ মনে পড়লো তিথির কথা।সাথে সাথে ডায়াল করলো তার নাম্বারে।প্রথমবার রিং হয়ে কেটে গেলো আবার ট্রাই করলো এবার ওপাশ থেকে বললো তিথি……
.
____আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম!মুগ্ধতা কোথায় রে…?
.
মুগ্ধর মুখে মুগ্ধতার নাম শুনে চমকে উঠলো তিথি।সচরাচর তিথিকে কল করে না মুগ্ধ।হঠাৎ তাঁকে কল করার কারণ তাহলে মুগ্ধতা।অভিমানী সুরে বললো তিথি…..
.
_____ওর খবর দিয়ে তুমি কি করবে ভাইয়া…?সবার সামনে অপমান করে সাধ মিটেনি।এখন আবার অপমান করবে বুঝি!যেখানে ইচ্ছে থাকুক তাতে তোমার কি…?
.
তিথির চ্যাটাং চ্যাটাং কথায় চরম বিরক্ত মুগ্ধ।ধমকের সুরে বললো…..
.
______এতকথা না বলে যা জিজ্ঞেস করেছি ঠিকঠাক উওর দে।
.
ধমক শুনে ভয়ে চুপসে গেলো।আর বললো…..
.
_____তোমাদের কাছ থেকে আসার পর অনেক কাঁদছিলো।তাই আমি ওকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছি।ও এখন ওর বাসায় আছে।মেয়েটার জীবনে দুঃখের শেষ নেই।এখন ভার্সিটিতেও শান্তি নেই বলে কল কেটে দিলো তিথি।পুরো দিন অস্বস্তিতে কাটলো মুগ্ধর।দিন পেরিয়ে রাত নামলো কিন্তু বুকের ভিতরের কষ্ট টা কমলো না।শুধু বারবার ভেসে উঠছে ছলছল ওই মুগ্ধতার মুখ খানি।কতটা কষ্ট বুকে চেপে কান ধরেছিলো সেটা যেন অনুভব করতে পারছে মুগ্ধ। কিছুতেই ভুলতে পারছে না।বুকের ভিতরে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে।রাত কেটে ভোর হতে চললো ঘুম নেই মুগ্ধর চোখে।।এই প্রথম কোনো মেয়ের কথা ভেবে নির্ঘুম রাত কাটালো। ভোরের দিকে চোখ লাগায় সকালে উঠতে অনেকটা লেইট হয়ে গেলো।
.
অন্যদিকে মুগ্ধতা নিজের কপালকেই দোষারোপ করে চলেছে।জগতের যত সমস্যা সব যেন ওর জন্যই তোলা থাকে।মুগ্ধ ছেলেটাকে একটু অন্য রকম মনে করেছিলো মুগ্ধতা।কিন্তু না সব ছেলেরাই এক।কেউ কারোর থেকে ব্যাতিক্রম নয়।নইলে এমন একটা কাজ মুগ্ধ কখনও করতে পারতো!পারতো না।চোখ থেকে টুপটাপ পানি পরছে মুগ্ধতার।জীবনে কোথাও একটু শান্তি নেই।যখনই একটু সুখের দেখা পাবে তখনই একটা ঝড় এসে তছনছ করে দেয় সবকিছু।লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব।একটা দীর্শ্বাস ফেলে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে মুগ্ধতা।
.
.

ক্যান্টিনে বসে আছে মুগ্ধতা আর তিথি।চারটা ক্লাস করে হাঁপিয়ে গেছে তুথি।তার খুব ক্ষিদে পেয়েছে তাই মুগ্ধতাকে নিয়ে ক্যান্টিনে বসে আছে ।তিথি এই নিয়ে কয়েকবার মুগ্ধর কথা তুলতে গিয়েও মুগ্ধতার চোখ রাঙ্গানো দেখে তুলতে পারে নি।হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হলো মুগ্ধ আর রাতুল।মুগ্ধ কে দেখেও না দেখার ভান ধরে বসে আছে মুগ্ধতা।মুগ্ধ এসে তিথির পাশের চেয়ার টেনে বসলো।পাশের চেয়ারে রাতুলকেও বসতে বললো।এটা দেখে একটু নড়েচড়ে বসলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ আর রাতুলকে এভাবে বসতে দেখে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় করে তাকালো তিথি।তিথিকে এভাবে তাকাতে দেখে বললো মুগ্ধ…..
.
_____কি রে ডাইনি!এভাবে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছিস কেন…?
.
মুগ্ধর কথায় মুচকি হাসলো রাতুল।এই মেয়েটা একদম পাগলি টাইপ।রাতুলের মনের কথাটা আজও বুঝলো না।ইশারা ইঙ্গিতে অনেকবার বুঝিয়েছে ওর জন্য একটা স্ফট কর্ণার আছে কিন্তু সেটা বুঝতে নারাজ তিথি।তাই এখন বুঝানো ছেড়ে নিজের ভালোবাসা নিজের মধ্যেই রেখে দিয়েছে। যদি কখনও নিজ থেকে বুঝতে পারে ওকে কেউ ভালোবাসে তাহলে তখন না হয় দেখা যাবে।মুগ্ধর কথায় গাল ফুলালো তিথি।লোক সমাজে এভাবে ডাইনি বলে অপমান মানতে পারছে না সে….গাল ফুলিয়ে বললো….
.
____আমি ডাইনি না!
.
মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ!মুগ্ধতা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।এখানে আসার একমাত্র কারণ মুগ্ধতা।কালকের ঘটনার জন্য সরি বলতে চায় মুগ্ধ।সব কিছু খুলে বলে মিটমাট করতে চায় মুগ্ধতার সাথে।কিন্তু মুগ্ধতা মুগ্ধর দিকে একটি বারও তাকাচ্ছে না।তিথিকে কথাগুলো বলার কারণ যদি তবুও কথা বলে কিন্তু না চুপ করে আছে।মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে থেকে মুগ্ধ বললো…..
.
____তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন…?যেন এই দিনের বেলায় ভূত দেখেছিস…?
.
মুগ্ধর কথার সাথে সম্মতি জানালো তিথি।হ্যাঁ সে ভূতই দেখেছে।মুগ্ধ তার কাজিন হলেও আজ পর্যন্ত এভাবে পাশাপাশি কখনও বসে নি।ইভেন ভার্সিটিতে দেখলেও দুজনে কথা বলতো না আর সেই মুগ্ধ আজ ওর পাশে বসে আছে।সেটা দেখেই অবাক তিথি।
.
মুগ্ধ আর তিথির কথার মধ্যেই উঠে দাঁড়ালো মুগ্ধতা।এখানে বসে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তাঁর।মুগ্ধ এই ছেলেটাকে টলারেট করতে পারছে না।তাই এখান থেকে কেটে পড়াই উওম।মুগ্ধতা উঠে দাঁড়াতেই তিথি কিছু বলতে যাবে তাঁর আগে মুগ্ধ বললো…..
.
_____মুগ্ধতা কোথায় যাচ্ছ…?বলতে বলতে মুগ্ধতার সামনে দাঁড়ালো।একটু দাঁড়াও তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
.
মুগ্ধর কথা শোনে থমকে দাঁড়ালো মুগ্ধতা।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে সহ্য করতে পারছে না।তিথি আর রাতুলের দিকে দেখলো দুজনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।মুখে কঠিন ভাব ফুটিয়ে বললো…..
.
____কিন্তু আপনার সাথে তো আমার কোনো কথা নেই।জানেন আমি খুবই অসভ্য একটা মেয়ে।যদিও তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছেন আপনি।তবুও আবার বললাম।আমি সিনিয়রদের অসম্মান ছাড়া সম্মান দিতে শিখিনি।তাই আমার মতো মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকাই উওম।
.
মুগ্ধতার কথাগুলো তীরের মতো বুকে বিধলো মুগ্ধর।মুগ্ধ জানে এগুলোর একটাও তার মনের কথা নয়।মুগ্ধর উপর অভিমান হয়েছে তাই এসব বলছে।মুগ্ধ বললো…..
.
____আমি বুঝতে পারছি মুগ্ধতা তুমি কেন এসব বলছো।দেখ তুমি কেমন সেটা জানি আমি।কালকের ঘটনার জন্য তুমি হয়তো আমকে দোষারোপ করছো কিন্তু…….
.
মুগ্ধ কে আর কিছু বলতে না দিয়ে মুগ্ধতা বললো…..
.
_____দোষারোপ!দোষারোপ করতে যাবো কেন…?আমি দোষ করেছি তাই আপনি কমপ্লেন করেছেন।যদি আমি দোষ না করতাম তাহলে আপনি কমপ্লেন ও করতে পারতেন না।এখন আমার একটা অনুরোধ আপনার কাছে আশা করি রাখবেন…..
.
বলো আমি রাখার চেষ্টা করবো!
.
____আর কখনও আমার সামনে আসবেন না আপনি।কখন আপনাকে কি বলে ফেলি কে জানে।নিজের সম্মান নিজেকেই রাখতে হয়।আপনি আপনার সম্মান রাইখেন।খারাপকে যখন কিছু করা সম্ভব হয় না তখন খারাপের নাগালের বাইরে যেতে হয় যাতে তাঁর নাগাল না পায়।কথাগুলো বলেই বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো মুগ্ধতা।ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে তিথি,রাতুল,মুগ্ধ।মেয়েটা কতটা অভিমানী সেটা আজ বুঝতে পারলো মুগ্ধ।যেভাবেই হোক মুগ্ধ মেয়েটার অভিমান ভাঙ্গাবেই ভাঙ্গাবে।
.
.
#চলবে……