মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-০৫

0
551

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_05
.
🍁
পার্কে বসে আছি আমি।যঝনই মন ঝারাপ হয় তখনই ছোটে এখানে চলে আসি আমি।এখামে আসলেই সব মন খারাপ গুলে অদ্ভুদভাবে হারিয়ে যায়।মনে অজানা এক প্রশান্তি পাই আমি।আমার মব খারাপের পর এখানে আসি এটাবআদনান ভালো ভাবেই জানতো।যখনই ওর সাথে ঝগড়া হতো তখনই এখানে এসপ বসে থাকতাম আর আদনান কতশত উপায়ে রাগ ভাঙ্গাতো আমার।আর আজ মাএ একটা অজুহাত দেখুয়ে আমার থেকপ হাজার মাইল দূরে চকে গেছে আদনান যতই ভুলে যপতে চাই না কেন পারছি না কোথাও না কোথাও ওর জন্য মন খারাপ থেকে যাচ্ছে আমার।হয়তে এভাবেই সারাজীবন ওকে মাথায় নিয়পই বেঁচে থাকতে হবে আমায়।কথাগুলো ভাবতেই চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে উঠলো।টুপটাপ পড়তে লাগলো ঝরণা ধারা।চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টায় আছি তখনই কারে কথা কানে এলো আমার।কথাগুলো শুনে চোখ খুলে সামনে তাকালাম আমি.!চোখ খুলে হতভম্ব হয়ে আছি আমি। মুগ্ধ…….
.
এই যে মুগ্ধতা!এখানে বসে কাঁদছো কেন…?নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ড আসবে বলে আসে নি আর সেই দুঃখে মুক্তদানা গুলো ঝরাচ্ছ তাই না।
.
আচমকা উনার গলা পেয়ে চমকে উঠলাম আমি। লোকটা যেন পিছুই ছাড়তে চাইছে না আমার।কই আগে তো কখনও দেখিনি তাহলে আজ এতবার উনার সাথে দেখা হচ্ছে কেন আমার।উনার কথার পিঠে কোনোকথা না বলে বসে আছি আমি।আমাকে চুপ থাকতে দেখে বললেন উনি….
.
_____কি দিনকাল এলো মাইরি!মেয়েরা কলেজ ফাঁকি দিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসে আবার বয়ফ্রেন্ড না আসলে বাচ্চাদের মতো কাঁদতেও থাকে আশ্চর্য।
.
লোকটার কথায় চরম বিরক্ত আমি।বুঝতে পারছি আমাকে নিয়ে মজা করছেন উনি।কিন্তু এরকম মজায় নেই আমি।আমার অবস্থা যদি জানতে পারতেন তাহলে কেঁপে উঠতেন উনি।
.
_____বাবা গো বাবা!!বয়ফ্রেন্ড আসে নি বলে এত রাগ যে আমার কথার উওরই দিচ্ছে না।দেখেছো চেনা মানুষ কত সহজেই না চেনার ভান ধরে আছে।
.
মুগ্ধ!!এই লোকটা এতটা বিরক্তিকর হবে এটা কখনও ভাবতেও পারিনি আমি।কর্কশ কন্ঠে বললাম….
.
____আপনি এখানে কেন..?আমি যেখানেই যাই সেখানেই আপনাকে কেন যেতে হয় বলেন তো আমায়।এখানে আমি প্রেম করি আর যাই করি তাতে আপনার কি।
.
নাথিং!!তুমি প্রেম করে দেবদাস থুক্কু দেবদাসী হলেও আমার কিচ্ছু না।
.
তাহলে আমার পিছু পিছু এখানে এসেছেন কেন…?আমাকে পাহাড়া দিতে…?
.
মুগ্ধতার কথা শোনে চোখ বড়বড় করে তাকালাম আমি!মেয়েটা বলে কি আমি ওকে পাহাড়া দিতে এখানে এসেছি আজব!
.
____তোমার মাথায় খুব বড় রকমের সমস্যা আছে তাই না মুগ্ধতা….?
.
উনার কথায় রাগে শরীর রিরি করছে আমার।কি মনে করেন নিজেকে উনি।তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে….
.
_____এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আমাকে পাগল বলে ফেলেছেন আপনি।পাগল আমি নই পাগল আপনি।তাই আজেবাজে বকছেন।
.
স্টপ!!নিজে পাগল হয়েও স্বীকার করবে না।তোমার আচার-আচরণই প্রমাণ করে তুমি পাগল।নইলে কেউ রাস্তায় এভাবে কাউকে আঘাত করে মা গো এখনও ব্যাথা করছে।
.
লোকটার কথায় বেশ লজ্জা পেলাম আমি সত্যি এই কাজটা করা উচিৎ হয়নি আমার।মুখ কাচুমাচু করে বললাম…..
.
____দেখুন এই একটা কাজের জন্য বারবার আমাকে পাগল বলতে পারেন না আপনি।তখন পরিস্থিতি অন্যরকম ছিলো তাই এটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম আমি।
.
আমাকে পরিস্থিতি দেখাতে এসো না।আধ পাগল মেয়ে একটা।কিচ্ছু জানো আর নাই জানো পাগলামিটা খুব ভালোই জানো দেখছি।
.
মুগ্ধর সাথে বর্তমানে কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।মাথা ব্যাথায় মাথা ফেঁটে যাচ্ছে।তার উপর উনার ফালতু বকর বকর।সব মিলিয়ে অতিষ্ট আমি।এখানে থাকলে উনার সাথে ঝগড়াই করতে হবে আমায়।তাই কথা না বাড়িয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি।কাঁধে ব্যাগ নিয়ে সামনে এগুতে লাগলাম।পেছনে মুগ্ধ আমাকে ডেকে হাজারটা কথা বলছে তার কিছুই যেন শুনতে পাচ্ছি না আমি।কারণ কথাগুলো শোনার ইচ্ছে নেই আমার।
.
_____মুগ্ধতা শোন!চলে যাচ্ছ কেন…?তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করবে না…?যাহ্ বাবা চলে গেলো!মেয়েটা কেমন আজব প্রকৃতির।হঠাৎ হঠাৎ চুপ করে যায়।আর এমন কান্ড করে যেন অবুঝ বাচ্চা।গাড়ে হাত বুলিয়ে বাবা দজ্জাল মেয়ে কি মারটাই না মেরেছে।উফ!কিন্তু মেয়েটা হঠাৎ চলে গেলো কেন…?ধুর কিছুই বুঝলাম না আমি।
.
.
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে টুকটাক কিছু কাজ সেরে নিলাম আমি।দুপুরে হালকা কিছু খারাপ খেয়ে নিজের রুমে চলে এলাম।রুমে এসে বসতেই শুরু হলো অন্যন্যা আপুর ডাক। তার ডাক কানে আসতেই দৌড়ে তার রুমে চলে গেলাম।কারণ একমিনিট লেইট হলে ৩৫-৪৫ টা কথা শুনতে হবে আমায়।রুমে যেতেই এক গাধা কাপড় হাতে ধরিয়ে দিলো আমায়।সেগুলো এখন ধুয়ে দিতে হবে। এগুলো নতুন নয় আপুর যাবতীয় কাজ একমাএ আমাকেই করতে হয়।যদি কাজ না থাকে তাহলে ভালো জমা কাপড় গুলোকেও আমাকে দিয়ে ধুয়াবে।কেন আমকে এতটা অপছন্দ করে জানিনা আমি।কোনোকথা না বলে কাপড়গুলো ধুতে চলে গেলাম আমি।কাপড় ধুয়ে ছাঁদে শুকাতে দিয়ে নিচে যেতেই আন্টি বললো…..
.
____মুগ্ধতা আমার কোমড়ে খুব ব্যাথা করছে একটু ম্যাসাজ করে দে তো!!
.
আন্টির কথায় না করতে পারলাম না আমি।আন্টির সাথে চুপচাপ তাঁর রুমে চলে গেলাম।কোমড় হাত পা টিপে আন্টিকে ঘুম পাড়িয়ে রুমে ফিরে এলাম আমি।রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।মাথা ব্যাথা এখনও কমে নি।তবে আগের থেকে বেটার লাগছে এখন।
.
🍁
বাসায় এসেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে আফিফ।মুগ্ধতা কে বলে এসেছে কফি দেওয়ার জন্য।মুগ্ধতা ছাড়া কারোর হাতের কফি ভালো লাগে না আফিফের।বিয়ের জন্য আজ তিনদিন মুগ্ধতার হাতের কফি খায় নি আফিফ।তাই আজ বাধ্য হয়েই অনেকটা স্বার্থপরের মতোই ওকে কাজটা করতে বলে এসেছে।ল্যাপটপে অফিসের কিছু কাজ করতে ব্যস্ত সে।হঠাৎ মনে পড়লো সেই মায়াবীনীর কথা।চোখে ভেসে উঠলো সেই মুখের প্রতিচ্ছবি।যাকে আজ সারাদিনে প্রায় দুইশতবার মনে পড়েছে তার।যতই মনে না করার চেষ্টা করে ততই আরো বেশি মনে পড়ে তার।এই বিষয়টা নিয়ে খুবই চিন্তায় পড়ে গেছে আফিফ।এই পর্যন্ত কত মেয়ের সাথে উঠাবসা হয়েছে কিন্তু কখনও এভাবে মনে জেঁকে বসতে পারে নি কেউ।আর আজ কিনা কয়েকঘন্টার পরিচয়ে একটা মেয়েকে এতবার মনে পড়ছে স্ট্রেঞ্জ।সোশ্যাল সাউডের কথা মনে পড়তেই “মিতুল” লিখে সার্চ দিলো কিন্তু অনেক খুঁজেও কোথাও সেই কাঙ্ক্ষিত মিতুলকে খুঁজে পেলো না।হতাশ হয়ে মুখ কালো করে বিছানায় বসে রইলো আফিফ।
.
মুগ্ধতা আফিফের কফি নিয়ে রুমে এসে মুখভার দেখে বললো….
.
_____ভাইয়া কি হয়েছে তোমার মন খারাপ কেন…?
.
মুগ্ধতার গলা পেয়ে চমকে উঠলো আফিফ।মুখে হাসির রেখা টেনে….
.
____তেমন কিছু না।জানি তোর মন ভালো নেই তবুও তোকে বললাম কাজটা ঠিক হয়নি আমার।।তোকে কষ্ট দিলাম তাই না রে।আসলে তুই তো জানিস তোর হাতের কফি ছাড়া কারোর হাতের কফি ভালো লাগে না তাই বাধ্য হয়ে বললাম কিছু মনে করিস না প্লিজ।
.
ভাইয়া এমন একটা মানুষ যে কখনও কাউকে কষ্ট দিতে চায় না।অধরা অন্যন্যা আপুকে যতটা ভালোবাসে আমাকেও ঠিক ততটাই ভালোবাসে।কখনও বুঝতে দেয় না আমি তার বোন নই।এরকম একজন মানুষ পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বললাম…..
.
____এভাবে কেন বলছো ভাইয়া!এক কাপ কফিই তো চেয়েছো তুমি।আর তো কিছু নয়।এসব কথা বললে কিন্তু গাল ফুলিয়ে বসে থাকবো আমি।
.
আমার কথায় হাসলো ভাইয়া।কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো…..
.
____যা হয়েছে সব ভুলে যা মুগ্ধতা।এরকম লো ম্যান্টালিটির মানুষের জন্য কখনও কষ্ট পাস না প্লিজ।জীবনটাকে নতুন করে সাজা।কোনো সেলফিশের স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচার চেষ্টা করিস না।নিজেকে শক্ত কর।
.
ভাইয়ার কথাগুলো মন দিয়ে শুনলাম কিছু না বলে রুম থেকে চলে আসলাম।ভাইয়ার কথাগুলো ঠিকই যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করবো আমি।কিন্তু চাইলেই কি সব হয়।মনের উপর কি জোর চলে…!!
.
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজকর্ম করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম আমি।আজ কোনো ঝামেলা ছাড়াই কলেজ ঢুকে গেছি।মুগ্ধ নামের লোকটাকে কোথাও দেখিনি।সারাটাদিন ভালোই কেটেছে আমার।যাক এইবার শান্তি।আর কখনও যেন লোকটার সামনে না পড়ি আমি।কথাটা বলেই সামনে পা বাড়াতেই অবাক হলাম আমি।মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে লোকটা সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আমার।মুগ্ধ কে দেখেও না দেখার ভান ধরে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি এমন সময় তিথিকে বলে উঠলো মুগ্ধ…..
.
____তিথি তোর শাঁকচুন্নি বান্ধবী কে বলে দে….আমাদের কলেজের নিউ টিচার আদিবা ম্যাম ওকে ডেকে পাঠিয়েছেন।১০ মিনিটে যেন উনার সাথে দেখা করে।
.
লোকটার কথায় চরম অবাক হলাম আমি।আদিবা ম্যাম পরশু জয়েন করেছেন সেটা শুনেছি যদিও এখনও তাকে দেখিনি আমি।কিন্তু উনি হঠাৎ আমায় ডাকবেন কেন…?তিথির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিে আছি আমি…..তিথি বললো____
.
____আদিবা ম্যাম মুগ্ধতা কে ডাকছেন কেন ভাইয়া…?আর তাছাড়া সেটা ওকে না বলে
তোমাকে বললেন কেন…?
.
সেটা তোকে জানতে হবে না।সিম্পল একটা বিষয় আমি ওদিকে আসছিলাম তাই আমাকে বলেছে যদি চিনে থাকি তাহলে যেন বলি তাই বললাম আর কিছু নয়।
.
____শুনেছি আদিবা ম্যাম খুব রাগী খিটেখিটে মেজাজের একজন মানুষ।উনি কলেজ ঢুকতে না ঢুকতে আমায় ডাকলেন কেন কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না আমার।আমি আর তিথি ঝিম মেরে আছি।দুজনেই বুঝতে পারছি না কেন আমাকে ডাকলেন উনি….!!আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও বললেন উনি…..
.
____ম্যাম সময় সম্পর্কে খুব সচেতন।যদি ১০ মিনিট পরে যাও তাহলে খবর আছে তোমার।তাই এক্সট্রা শাস্তি পাওয়ার আগে তাড়াতাড়ি যাও হারি আপ!!
.
হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ম্যামের রুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম আমি….!!
.
.
লোডশেডিংশের জন্য গতকাল গল্প দিতে পারিনি।জানি ভালো হয়নি অগোছালো হয়েছে।অনেক তাড়াহুড়োয় লিখেছি ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন…!!
.
.
#চলবে……