মেঘকন্যা পর্ব-২৬ এবং শেষ পর্ব

0
3927

#মেঘকন্যা☁️
#Last_Part
#Writer_NOVA

সাদা মেঘের ভেলায় করে আমরা মেঘরাজ্যে যাচ্ছি। নিচের কিছু দেখা যাচ্ছে না। সবকিছু সাদা আভায় ঘেরা।পাশাপাশি চলছে তিনটা মেঘের ভেলা।প্রথমটাতে আব্বিজান,আম্মিজান ও মন্ত্রী মশাই। দ্বিতীয়টাতে তাজিন ও রাকিন।সবার শেষেরটায় আমি ও আয়িশ।আমি দুই হাতে আয়িশের বাহু ধরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি। ভীষণ ভয় করছে।আর আয়িশ মুচকি মুচকি হাসছে।একবার তো বলেই ফেললো “দিলাম ধাক্কা।” আমি গগণ বিদারক এক চিৎকার দিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
আমার কান্ড দেখে সবাই হেসে উঠলো।

আয়িশঃ আমি এখন তোকে ফেলে দিবো মাল্টি কালার। বহু জ্বালিয়েছিস আমায়।তুই যখন আমাকে ইগনোর করছিলি তখন আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। তার প্রতিশোধ নিতে আমি তোকে এখন নিচে ফেলে দিবো।(শয়তানি হাসি দিয়ে)

আমিঃ একদম না।তুই না আমার ভালো জামাই। এমন করিস না।এখন থেকে তুই যা বলবি তাই করবো।তোর কোন কথার অমান্য করবো না।প্লিজ আমাকে নিচে ফেলে দিস না।নিচের দিকে তাকালেই তো আমার আত্মা কেঁপে উঠে।এখান থেকে পরলে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবে না। এমনি শরীরের কোন ওজন অনুভব করছি না।মনে হচ্ছে শক্তিগুলো সব টেনে কেউ শুষে নিচ্ছে। (ভয় পেয়ে)

আয়িশঃ আমি তো তা মানছি না।তোকে এখন এখান থেকে আমি ফেলে দিবো মানে দিবোই।তোর কোন কথায় কান দিবো না।

আমিঃ না না না না।প্লিজ আমার সোয়ামি। এমনডা কইরো না।(জোরে চিৎকার করে)

আমার চিৎকার শুনে রাণীমা মানে আমার শাশুড়ী মা আয়িশকে ধমকে উঠলেন।

রাণীঃ আবরার,খামোখা কন্যাকে ভয় কেন দেখাচ্ছো? তুমি দেখতে পাচ্ছো ও ভয় পাচ্ছে। তারপরেও দুষ্টমী করে যাচ্ছো।

আয়িশঃ ওকে ভয় দেখাতে আমার অনেক মজা লাগে।ওর ভয়ার্ত মুখটা অনেক মায়াবী লাগে আমার কাছে।তাই এমন করছি।

আমিঃ আম্মিজান,দেখছেন কি বলছে?আমার ভয়ে জান পাখিটা উড়ু উড়ু করছে।আর তার নাকি মজা লাগছে।আমি যাবো না আপনাদের সাথে। আমার আব্বি, আম্মির কাছে দিয়ে আসুন😭।আয়িশ আমায় একটুও ভালোবাসে না।ভালোবাসলে এই কথাগুলো কখনো বলতে পারতো না।(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)

আয়িশঃ আচ্ছা সরি।আর ভয় দেখাবো না।
আমিঃ সত্যি তো🥺!!!
আয়িশঃ তিন সত্যি।

আমি আয়িশের বুকে লেপ্টে আছি।কিছু সময় পর পর ওর বুকে মুখ লুকাচ্ছি।চোখ পিট পিট করে একটু তাকাই আবার চারিপাশ দেখে ওর বুকে মুখ গুঁজি।
এই ভয়ংকর অবস্থায়ও তাজিনের কান্ডকারখানা দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।তাজিন তো রাকিনকে প্রায় জরিয়ে ধরে নিচে পরে যায় যায় অবস্থা।ওর হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। বেচারা রাকিনের অবস্থা নাজেহাল করে ফেলছে।

তাজিনঃ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যলিমিন।লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু,মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। আল্লাহ বাঁচাও।এই যাত্রায় বাঁচিয়ে দিও।আল্লাহ আমার এখনো বিয়ে হয়নি।আমি মরে গেলে আমার হবু বরটার কি হবে গো?তুমি আমায় রক্ষা করো।

রাকিনঃ আপনি শুধু একা পড়বেন না।সাথে আমাকে নিয়েই পরবেন।এত নড়াচড়া করছেন কেন?একে তো আমাকে জাপটে ধরে আমার দম বন্ধ করে ফেলছেন।তার মধ্যে এমন আজগুবি কথা বলে ইচ্ছে মতো নড়াচড়া করছেন।একটু স্থির হয়ে দাঁড়ালে কি সমস্যা হয়?সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।

তাজিনঃ কথা আমি নই আপনি বলছেন।একটু জড়িয়ে ধরছি বলে এতগুলো কথা শুনাবেন।ভয় পেয়েছি বলেই তো জড়িয়ে ধরেছি।কোথায় আমায় একটু আশ্বাস দিবেন,ভয় কাটানোর চেষ্টা করবেন।তা না করে উল্টো আরো ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছেন। না ধরলাম আপনাকে?বয়েই গেছে আপনাকে ধরার।আমার কাছ থেকে সরে দাঁড়ান। একদম আমার আশেপাশে ঘেঁষবেন না।(রাগী সুরে)

রাকিনঃ যাক বাবা,আমি আবার কি করলাম?উনি নড়াচড়া করবে তাতে দোষ নেই। আমি বললেই দোষ। আমাকে জাপটে ধরে নিশ্বাস বন্ধ করে ফেলছে তখন কিছু হয়নি।আমি তা বলেছি বলে গায়ে ফোস্কা পরে গেছে। খবরদার, আমাকে ছাড়বেন না।যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকুন।নয়তো উল্টো হয়ে নিচে পরে গিয়ে চিৎপটাং হয়ে যাবেন।

তাজিন রাগ করে রাকিনকে ঠেলে সরাতে গিয়ে নিজেই পরে যেতে নিলো।সাথে সাথে রাকিন ওকে হেচকা টান মেরে আবার নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।তাজিন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাই এবার কোনরকম নড়াচড়া না করে রাকিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রাকিন মিটমিট করে হাসছে।আমি আয়িশের বুকে মুখ লুকিয়ে এক চোখে তাকিয়ে ওদের কান্ড দেখছিলাম।আয়িশ আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।

মিষ্টি একটা বাতাস বইছে।দারুণ লাগছে ওয়েদারটা। হাওয়ায় আমার জামা,ওড়না উড়ছে।আকাশটা ঝকঝকে পরিষ্কার। চারিদিকে সাদা মেঘের আনাগোনা।পাখিরা খুব সামনে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।হালকা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। পরিবেশটা উপভোগ করার মতো।এরকম একটা পরিবেশ সাথে ভালোবাসার মানুষ হলে কি আর কিছু লাগে বলুন।ভয় অনেকটা কেটে গেছে। আয়িশ ধরে রেখেছে বলে আর ভয় করছে না। মুগ্ধ হয়ে চারিদিকেের পরিবেশ দেখছি। কিছু সময় পর আমরা মেঘরাজ্যে এসে নামলাম।

🌨️🌨️🌨️

মেঘরাজ্যে ঢুকতেই আমাদেরও ওপর লাল গোলাপের পাপড়ির ঢল নামলো।মনে হচ্ছে আজ গোলাপির পাপড়ি দিয়ে গোসল করবো।বিশাল বড় রাজ ফটক দিয়ে ঢুকলাম।আমাদের স্বাগত করার জন্য সারা রাজ্যের মানুষ পথের দুই পাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আর লাল গোলাপ পাপড়ি ছুঁড়ে মারছে।রাজ ফটক থেকে শুরু করে রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত পথে পুরোটা লাল হয়ে আছে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে। আমি আয়িশের হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করলাম।সাথে সাথে আমাদের ড্রেস পাল্টে গেল।আমার ও আয়িশের দুজনের গায়ে সাদা পোশাক। বিশাল বড় গাউন সমলাতে এবার আমি হিমশিম খাচ্ছি।একহাতে যতটুকু পারেছি সামলিয়ে অন্য হাতে আয়িশকে ধরে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি।সবাই খুশিতে হৈ-হুল্লোড় করছে।

চারদিকে সাদা আভার ছড়াছড়ি। সব জায়গায় মনে হচ্ছে সাদা ধোঁয়া উড়ে বেড়াচ্ছে। আসলে এগুলোই কিন্তু সাদা মেঘ।বাষ্পমান সাদা আভা।যাকে ধরা, ছোঁয়া বা আটকে রাখা যাবে না। সে তার গন্তব্যে ঠিক চলবে।অপূর্ব সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ মেঘরাজ্য।কেউ স্বপ্নে বা কল্পনায় দেখে হয়তো এর বিবরণ করতে পারবে না।রাজ্যের মানুষের পরনে হালকা আবছা আকাশি রঙের পোশাক। সবার গায়ে এক রকম পোশাক।ধনী বা দরিদ্রের কোন ভেদ নেই। রাজপ্রাসাদে ঢুকতেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পরলো আমাকে নিয়ে। আমাদের পেছন পেছন তাজিন ও রাকিন। তাজিনও আমার মতো অবাক চোখে সবকিছু দেখছে।আম্মিজান আমাদের বরণ করে নিলো।আয়িশ অন্য দিকে চলে গেল।কয়েকজন দাসী এসে আমাকে নিয়ে একটা বিশাল কক্ষে বসিয়ে দিলো।

চারিদিকে আয়িশের ছবি দেখে বুঝতে পারলাম, এটা আয়িশের কক্ষ।আমি ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখছি।সবকিছু স্বর্ণের তৈরি। তাজিনকে অন্য একটা কক্ষে বিশ্রাম করতে পাঠানো হয়েছে।আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। যতদূর চোখ যায় শুধু সাদা মেঘের দেখা মিলে।মাঝে মাঝে দু একটা পাখিকে উড়ে যেতে দেখা যায়।হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আব্বি, আম্মির কথা অনেক মনে পড়ছে।আসার সময় আমাকে ধরে সেকি কান্না।আমারও কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গিয়েছিলো।বাবার বাড়ি ছেড়ে আসার কষ্টটা আজ উপলব্ধি করতে পারছি।

সকালে………

ইশালকে মেরে ফেলার পর আমরা সবাই আমাদের বাসায় গেলাম।কলিং বেল বাজাতেই আম্মি এসে দরজা খুলে দিলো।আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।

আম্মিঃ কেমন আছিস মা?তুই ঠিক আছিস তো?সেই যে তোকে আয়িশের সাথে ডিনার করতে পাঠালাম তারপর থেকে তোর কোন খবর নেই।তোর চিন্তায় চিন্তায় তোর আব্বির প্রেসার বেড়ে গেছে। মানুষটা পুরো চুপচাপ হয়ে গেছে। আয়িশ মাঝে একদিন এসে সব বলে গিয়েছে। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম ঐ ইশাল শয়তান তোর ক্ষতি করে ফেলেছে। এদিকে তোর কোন খবর পাই না,আয়িশও আসে না।আমাদের অবস্থা পুরো পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিল। এখন যে কত ভালো লাগছে তা তোকে বুঝাতে পারবো না। আমার সাত রাজার ধন আমার বুকে ফিরে এসেছে।

আমি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেই যাচ্ছে। কিছু সময় পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে পাগলের মতো মুখে অজস্র চুমু দিলো।আব্বি কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে নিচে চলে এসেছে।

আব্বিঃ কে এসেছে গো মেঘার মা?কোথায় তুমি? কথা বলছো না কেন?আমার মেয়েটার কি কোন খবর পেলে?কোথায় আছে আমার কলিজাটা?

আম্মিঃ দেখো কে এসেছে? আমাদের মেয়ে আমাদের কোলে ফিরে এসেছে।

আম্মির কথা শুনে আব্বি ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।আব্বিকে কখনোও আমি এতটা কাঁদতে দেখিনি।আব্বি এর আগেও কান্না করেছে,তবে এতটা নয়।লাস্ট আমি আব্বিকে গতবার অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর কান্না করতে দেখেছিলাম।কিন্তু আজ তার চোখ দিয়ে অনরবত পানি পরছে।

আব্বিঃ কেমন আছো মা-মণি?তোমার চিন্তায় চিন্তায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।আমি অসুস্থ হয়ে পরছিলাম তোমার জন্য। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি কোটি শুকরিয়া। তিনি আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে।

আমিঃ আব্বি এটা কিন্তু ভালো কথা নয়।তুমি নিজের একটু খেয়ালও রাখো না।তা না হলে তুমি অসুস্থ হতে না।আমি তোমার সাথে একটুও কথা বলবো না। তুমি আমার জন্য নিজের কি হাল করেছো দেখো দেখি?শরীর পুরো ভেঙে পরেছে।ঠিক মতো ঔষধ খাও না তাই না?আমি সত্যি তোমার সাথে এখন আড়ি দিয়েছি।একটুও কথা বলবো না।(মুখ গোমড়া করে)

আব্বিঃ এখন তুমি এসেছো সব ঠিক হয়ে যাবে।আমার যে কি খুশি লাগছে।মেঘার মা যাও গিয়ে আমার মেয়ের জন্য ওর পছন্দের খাবার রান্না করো।আজ আমরা একসাথে সবাই দুপুরের খাবার খাবো।

এতক্ষণে আব্বি, আম্মি আমাকে নিয়ে এতটা বিভোর ছিলো যে আমার সাথে থাকা মানুষদের খেয়াল করিনি।সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। হুট করে তাদের দেখে আব্বি, আম্মি দুজন অবাক হলো।আয়িশের বাবাকে দেখে আমার আব্বি চিনে গেল।আমাকে ছেড়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।

আব্বিঃ আসালামু আলাইকুম বেয়াইসাব।

রাজাঃ ওয়ালাইকুম আস সালাম। কেমন আছেন?

আব্বিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?ভেতরে আসুন।

রাজাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি ব্যস্ত হবেন না।আমরা ঠিক আছি।আমি মনে হচ্ছে আমাদের কন্যাকে তার উপযুক্ত বাবা-মার হাতে তুলে দিয়েছিলাম।

আব্বিঃ আপনাদের মেয়েকে আমার নিজের কন্যার থেকে এক বিন্দুও কম কিছু ভাবিনি।সে আমাদের ঘরের মধ্যমণি।আমি যথাযথভাবে ওর দেখ-ভাল করেছি। (আমার দিকে ঘুরে)মেঘা মা-মণি আমাকে মাফ করে দিস।এতদিন তোর কাছে থেকে আমরা অনেক বড় একটা কথা লুকিয়েছি।আসলে অনেকবার বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পারিনি।ভয় হয়েছে যদি তুই আমাদের ছেড়ে চলে যাস।

আমিঃ আমি জানি আব্বি।আমি তোমাদের সন্তান নই।তোমরা আমাকে কোন অংশে নিজের সন্তানের থেকে কম করোনি।উল্টো আমাকে অনেক আদর,যত্ন দিয়ে বড় করেছো।কখনো আমার গায়ে ফুলের টোকা দেওনি।বরং রাজকন্যার মতো বড় করেছো।আমি তোমাদের কাছে ঋণী।এই ঋণ আমি জীবনেও শোধ করতে পারবো না।আর আমি শোধ করতে চাইও না।তোমরা আমাকে না বলে ভালোই করেছো।যদি আমি জানতাম তোমরা আমার বাবা-মা নও তাহলে হয়তো আমার মন-মানসিকতা পাল্টে যেতো।তোমাদের ভুল বুঝতাম।

আব্বি এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আম্মি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমার শ্বশুর মশাই যখন বললো আমাকে আজ নিয়ে যাবে।তখন আমার আম্মি,আব্বির মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।অনেক কষ্টে তারা নিজেকে সামলিয়ে সবার জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করলো।দুপুরে একসাথে খাবার খেয়ে উঠলাম।আমার গলা দিয়ে খাবার নামছিলো না।আম্মি তো কিছু সময় পর পর চোখ মুছছে।আব্বি থুম মেরে বসে আছে। বিকালে যখন বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠলো তখন আব্বি, আম্মি আমাকে ধরে অনেক কান্না করছে।তাদের ছেড়ে আমার আসতে মন চাইনি।কিন্তু কিছু করার নেই। বুকে পাথর চাপা দিয়ে চলে এসেছি। এর মাঝে আম্মি কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে গেছে।
আমি কথা দিয়ে এসেছি মাসে একবার তাদের কাছে গিয়ে ৩/৪ দিন থেকে আসবো।এতে অবশ্য আয়িশও সম্মতি দিয়েছে।

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় আমার হুশ ফিরলো।মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম আয়িশ।

আয়িশঃ আম্মি,আব্বির কথা চিন্তা করছো।মন খারাপ করো না।আমাদের বিয়ের আগে তাদেরকে নিয়ে আসবো।তাছাড়া মাসে একবার করে তো তুমি তাদের কাছে বেড়াতে যাবে।তাহলে মন খারাপ করে কি লাভ বলোতো?সব মেয়েকেই তো তার পরিবার ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যেতে হয়।তুমিও তেমন সব ছেড়ে চলে এসেছে। আমি জানি এটা মানতে তোমার কিছুটা সময় লাগবে।আমি তোমাকে অবশ্যই সেই সময়টা দিবো।তাই মন না খারাপ করে একটু হাসো প্লিজ।

আমি কিছু বললাম না।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওর দিকে তাকিয়ে একটা কৃত্রিম হাসি দিলাম।কোন কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না।আমি জানি এখানকার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে মানিয়ে নিতে আমার বেশ সময় লাগবে।

🌨️🌨️🌨️

১০ দিন পর……

পুরো মেঘরাজ্যে আনন্দের ঢল বয়ে যাচ্ছে। আজ এই রাজ্যে দুটো বিয়ে হয়েছে। আয়িশর সাথে মেঘার, রাকিনের সাথে তাজিনের বিয়ে হয়েছে। রাতের আকাশে বাজি ফুটছে।তবে সেগুলো ফুলের। মেঘার বাবা-মাকে বিয়ের দুই দিন আগে নিয়ে এসেছে। মেঘা ও আয়িশ রাজপ্রাসাদের ছাদে বসে চন্দ্রবিলাস করছে।পাশের কুঠুরিতে তাজিন ও রাকিন কথা কাটাকাটি করছে।ওদের মাঝে পুরো টম এন্ড জেরী সম্পর্ক।একজন আরেকজনের সাথে লেগে থাকবে।কিন্তু একজনের কিছু হলে অন্যজন পাগল হয়ে যায়।বেশ কিছু সময় পর কথা কাটাকাটির পর তারা নিজেদের কক্ষে ফিরে গেছে।

গায়ে বিয়ের পোশাক খুলে অন্য একটা ড্রেস পরেছি।আমি হালকা আকাশি রঙের বিশাল বড় গাউন পরে আছি।আর আয়িশের রাজ পোশাকটা সাদা রঙের। হাতে এক ঝুড়ি স্ট্রবেরি। আয়িশের কোলে বসে আছি। চাঁদটা পুরো আমাদের মাথার ওপর।মনে হচ্ছে হাতটা বাড়ালেই ধরতে পারবো।চারিদিকে সাদা মেঘে ধোঁয়াটে হয়ে আছে।

বাসরঘরে বসে ছিলাম।সেখান থেকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে এসেছে। আমার সাথে নাকি আজ চাঁদ দেখবে।আসার সময় এক ঝুড়ি স্ট্রবেরি নিয়ে এসেছে।

আয়িশঃ জানো আমি এই রাতটার জন্য আমি কত অপেক্ষা করেছি।আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে চাঁদ দেখার।

আমিঃ আমাকে কোল থেকে নামাও।তোমার পা ব্যাথা হয়ে যাবে।আমাকে এভাবে কোলে নিয়ে বসে থাকার কোন মানে হয় না।

আয়িশঃ আমার বউ আমি কোলে নিয়ে বসে থাকবো তাতে তোমার কি হু হু? আচ্ছা,সব স্ট্রবেরি কি তুমি একাই খাবে?আমাকে দিবে না।

আমিঃ তুমি অর্ধেক ঝুড়ি খেয়ে ফেলছো।তারপরেও বলছো আমি তোমাকে দিচ্ছি না।আমি খাইয়ে দিচ্ছি আর সে চুপচাপ গিলছে।আর বলছে কিনা আমি তাকে না দিয়ে একা একাই খাচ্ছি।

আয়িশঃ আমার সাথে এমন একটা সময়ও তুমি
লাগবে😐?এটা কিন্তু ঠিক নয়।

আমিঃ ওহ মাই আল্লাহ!! এতবড় মিথ্যে কথা। সবসময় নিজে আমার সাথে লাগে।আর আমার দোষ দেয়।যাঃ বেডা তোর সাথে কথা নাই। ভাগ এখান থেকে।আমারে নামা কোলের থেকে। তোর লগে কথা কমু না। (মন খারাপ করে)

আমি উঠে যাওয়ার জন্য ছুটাছুটি করতে শুরু করলাম।হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছি।কিন্তু আয়িশ আমকে শক্ত করে নিজের সাথে ধরে রেখেছে।

আয়িশঃ একদম নড়বা না।নয়তো কোলে তুলে ছাদ থেকে ফেলে দিবো।চুপচাপ বসে থাকো।আমাকে খাইয়ে দেও।কোন কথা নয়।

আমি মন খারাপ করে ঠোঁট উল্টে বসে রইলাম।আয়িশ আমার মুখ ঘুড়িয়ে কপালে গভীর করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।আমি মুখ ঘুরিয়ে রেখেছি।

আয়িশঃ ইস,আমার বউটা আবার রাগও করতে পারে।তোমার এই বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টানো আমার ভীষণ ভালো লাগে।মন চায় ঠোঁটের মধ্যে কুটুস করে একটা কামড় বসিয়ে দেই।

আমিঃ কথা নেই তোমার সাথে হু হু।তাই ভাব নিয়ে লাভ নেই। (ভেংচি কেটে)

আয়িশঃ ওকে সরি,আর করবো না।সব দোষ আমার।এবার হয়েছে।

আমিঃ আলবাত হয়েছে।

আয়িশের গাল টেনে কথাটা বললাম। আয়িশ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চাহনী বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না। অনেকটা ভয় ভয় লাগছে।মতিগতি সুবিধার ঠেকছে না।আমার পিঠ ওর বুকের সাথে থেমে থেমে বারি খাচ্ছে। আয়িশ খাওয়া রেখে আমার চুলে অলরেডি মুখ গুঁজে ফেলেছে।ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে সেখানে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।আমি খুব জোরে চমকে উঠলাম।নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলাম।তাতে আয়িশ আরো জোরে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।কানের কাছে লো ভয়েজে বললো।

আয়িশঃ আমি আজ তোমাকে নিজের করে পেতে চাই মেঘপরী।সেই অনুমতিটা কি দেবে তুমি?

আয়িশের কথায় বুকটা ধক করে উঠলো।শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হতে লাগলো।আমি পুরো জমে গেছি।কি উত্তর দিবো তাও জানি না।বারবার কানে কথাটা বারি খাচ্ছে।

আয়িশঃ আমাদের মধ্যে অনেক আগেই চেনা-জানা হয়ে গেছে। নতুন করে তো একে অপরকে চিনতে হবে না।তাহলে আমি কি তোমাকে পেতে পারি মেঘকন্যা?তোমাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিতে দিবে আমায়।(অনুরোধের সুরে)

আয়িশের কথা শুনে আমার হৃৎপিণ্ডটা খুব জোরে লাফানো শুরু করেছে।এই ছেলেটা কি আমাকে এভাবেই মেরে ফেলবে নাকি।ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অন্য দিকে দৌড়ে গিয়ে হাঁপাতে লাগলাম।আবারো পেছন থেকে আয়িশ আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

আয়িশঃ আজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।প্লিজ মাল্টি কালার। আই নিড ইউ।(আকুতির সুরে)

আমি পেছনে ঘুরে আয়িশকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকালাম।আয়িশ ওর উত্তর পেয়ে গেল।খুশিমনে আমাকে কোলে তুলে কক্ষের দিকে রওনা দিলো।আমি লজ্জায় ওর বুকে মুখ লুকালাম।শুরু হলো আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায়।নতুন করে আমাদের পথচলা। যেখানে শুধু থাকবো আমি ও আয়িশ।ওয়াহাব বা ইশালের কোন কালো ছায়া আমাদের মাঝে বাঁধা সৃষ্টি করবে না।আল্লাহর কাছে আমার শুধু একটাই চাওয়া ইহকাল ও পরকালের জন্য আয়িশকে চাই।

__________________(সমাপ্ত)_______________