মেঘপিওনের চুপকথা পর্ব-০৭

0
278

#মেঘপিওনের চুপকথা
#লেখিকা_আলো_ইসলাম

“৭ম পর্ব”

–” নিশ্চুপ চারিপাশ। নেই কোনো কোলাহল। সারাদিনের ব্যস্ত মানুষ ক্লান্ত বাড়ি ফেরার পথে। সারাদিনের খাবার সন্ধানী প্রাণী গুলো ফিরছে আপন নীড়ের টানে। দিনের আলো ছুটি নিয়েছে কিছুখন আগেই। এরপর আঁধারের ঘনোবেশ। সময়’টা সন্ধ্যা। সম্রাটের বাড়ির পরিবেশ’টাও সন্ধ্যার ন্যায় অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। কেউ ভালো নেই। সম্রাট সারাদিন রুম থেকে বের হয়নি। ভাংচুর শেষে ঘরের মধ্যে থেকে গেছে। রিনা খান তখন ছুটে এসেও লাভ হয়নি। অনেকবার ডাকার পরও সম্রাট রুমের দরজা খুলেনি৷ রিনা খান কি করবে বুঝে না৷ কান্নায় ভেঙে পড়ে। রাশি তার রুমের দরজার পাশ থেকে দাঁড়িয়ে নিরব চাহনিতে সবটা দেখে গেছে শুধু। সব কিছু তার জন্যই হচ্ছে। এমন হাসিখুশি পরিবার ‘টা তার জন্য এমন হয়ে গেছে। রাশির সেই মুহূর্তে এইটাই মনে হয়েছে। কিন্তু সম্রাট!! সম্রাট কেনো এমন করছে রাশি যেনো বুঝেও বুঝে উঠে না।

– রিনা খান ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছেন একটা হাত কপালের উপর দিয়ে। সাজ্জাদ খান বাড়ি ফিরে সব শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছেন৷ তিনিও চিন্তিত হয়ে দৃষ্টিটা ফ্লোরে নিবদ্ধ রেখে বসে আছেন। রাশি তার ঘর থেকে আর বের হয়নি তারপর। রনি ফোন দিয়েছিলো অনেকবার৷ কিন্তু রাশি ফোন রিসিভ না করে উল্টো অফ করে রাখে।
– এইভাবে বসে থেকে কি হবে রিনা? আমার ছেলেটা তো এমন ছিলো না। তাহলে ও কেনো এমন করছে ওই মেয়েটার জন্য। সাজ্জাদ খানের কথায় রিনা খান অসহায় চোখে তাকায় তার দিকে৷ কিন্তু মুখে কিছু বলে না। এই মুহূর্তে তার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না আপাতত। তাছাড়া ভীষণ ক্লান্ত সে। শরীর খারাপ লাগছে তার। আর হবে না কেনো৷ এই বয়সে এসে এত চিন্তা ধকল নিলে কারই বা শরীর ভালো থাকে।

–‘ দেখো সমু রুমের দরজা খুলেছে কি-না। আমার এইসব ঝামেলা একদম ভালো লাগছে না৷ একটা বাইরের মেয়ের জন্য আমার পরিবারে অশান্তি মেনে নেবো না আমি এই বলে রাখছি। রেগে বলেন সাজ্জাদ খান।
– রাশি চুপ করে ঘরে বসে থাকতে পারে না আর৷ সম্রাট যে এখনো রুম থেকে বের হয়নি এটা রাশি জানে। রাশি ওয়াসরুমে গিয়ে চোখ মুখে পানি ছিটিয়ে ওড়না’টা মাথায় জড়িয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। উদ্দেশ্য সম্রাটের রুমে যাবে। যদি সম্রাট দরজা না খোলে এখনো তাহলে রাশি সেটা খুলতে বাধ্য করবে। এইভাবে বসে থাকা তো যায় না৷ তার জন্য সবাই মন খারাপ করে থাকবে এটা রাশি কোনো ভাবে মানবে না। রাশি মনে মনে ঠিক করে, সম্রাট যদি না চাই তাহলে আর রনির সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না। রনিকে বুঝিয়ে বলবে৷ তাও কোনো ঝামেলা আর সে চাই না।
– রাশি যাওয়ার আগে রিনা খান আসেন সম্রাটের রুমের সামনে। রিনা খানকে দেখে রাশি সরে যায়। সম্রাটের রুমের সামনে আসতেই একটা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রিনা খান। কারণ সম্রাট রুমের দরজা খুলে দিয়েছে৷ কিন্তু সারা ঘর আঁধারে ছেয়ে আছে। রিনা খান সাবধানে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে৷ রুমের আলো জ্বালাতেই চমকে উঠে ঘরের অবস্থা দেখে। এরপর সম্রাটের দিকে নজর যেতেই তিনি আঁতকে উঠেন। সমু বলে ছুটে যায় সম্রাটের কাছে। সম্রাট ফ্লোরে বসে আছে মাথা নিচু করে দুই হাঁটু ভাঁজ দিয়ে। সম্রাটের ডান হাত কেটে রক্ত শুকিয়ে গেছে৷ ফ্লোরে অনেক রক্ত পড়ে আছে। আসলে সম্রাট যখন নিজের রাগ কন্ট্রোল পারছিলো না। রাশিকে চড় মারার জন্য অনুশোচনা হচ্ছিলো। তাই তার ঘরে থাকা গ্লাস হাত দিয়ে চেপে ধরে শক্ত করে। আর তাতে গ্লাস ভেঙে কাচের টুকরো তার হাতে ফুটে যায়। অনেকটা কেটে গেছে সম্রাটের হাত। তারই রক্ত শুকিয়ে হাতে লেগে আছে।

–‘ রাশি দরজার আড়ালে ছিলো। রিনা খান হাত উঁচু করতেই রাশি চমকে উঠে ভয়ার্ত চোখে তাকায়। সম্রাটের এমন অবস্থা মোটেও আশা করেনি রাশি। রাশির অনেক কষ্ট হচ্ছে৷ নিশ্বাস আটকে আসছে যেনো তার৷ চোখ দিয়ে আবার টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করে।
– এইসব কি করেছিস নিজের সমু। তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? কেনো করছিস এমন পাগলামি কথাটা বলে রিনা খান ডুকরে কেঁদে উঠে।
– সম্রাট এখনো চুপচাপ একই ভাবে বসে আছে।
– কি হলো উত্তর দে। কেনো এমনটা করছিস তুই। ঘরের কি অবস্থা করেছিস দেখেছিস তুই। সাথে নিজের ক্ষতিও করে বসে আছিস৷ তুই তো এমন ছিলি না সমু৷ তুই তো আমার শান্তশিষ্ট, খুব বুদ্ধিমান ছেলে ছিলিস। তাহলে কেনো এইসব বোকামি করছিস। আমার কথা কি একবার ভাববি না তুই। তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে থাকবো বলতে পারিস। তুই ছাড়া কে আছে আমার বল। চিৎকার করে বলে রিনা খান এবার। রাশির দম বন্ধ হয়ে আসছে। তার জন্য আজ এমনটা হয়েছে৷ রিনা খান তার জন্য এত কষ্ট পাচ্ছে৷ এইসব কিছু ভেবে রাশির ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছে কষ্টে।। নিজেকে অপরাধী লাগছে ভীষণ ভাবে তার।

— তুই কি রাশিকে ভালোবাসিস সমু? মায়ের এই কথায় চোখ তুলে তাকায় সমু তার মায়ের দিকে। যে চোখে আছে অসহায়ত্বের ছাপ, বেদনা, কোনো কিছু হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয়। রিনা খান আশাপ্রদ হয়ে তাকিয়ে আছে সম্রাটের দিকে মলিন চেহনিতে।
– কি হলো বল সমু? তুই রাশিকে ভালোবাসিস তাই না? মায়ের নরম স্বরে বলা কথায় সম্রাট নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। রিনা খানকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠে। রিনা খান এতে ভীষণ অবাক হয়ে যায়৷ স্তব্ধ হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। যে ছেলের চোখে কোনো দিন একফোঁটা পানি দেখেনি। হাজার কষ্ট, দুঃখের মাঝেও নিজেকে স্থীর রেখেছে৷ নিজেকে শক্তিশালী আর সমর্থন ভাবে উপস্থাপন করেছে। সে ছেলে আজ বাচ্চাদের মতো কান্না করছে তাও একটা মেয়ের জন্য এট যেনো রিনা খান ভাবতেই পারছে না।
– রাশি সবটা দেখছে বাইরে দাঁড়িয়ে। রিনা খানের এমন কথায় সেও থমকে গিয়েছিলো কিছু সময়ের জন্য।

–‘ রিনা খান আগলে নেয় সম্রাটকে বক্ষমাঝে।
– রাশি কেনো এমন করলো আমার সাথে মা। ও-কি বুঝে না আমি কেনো এমন করি। কেনো রনির সাথে মিশতে দিইনা। হ্যাঁ মানছি রনি ভালো ছেলে কিন্তু আমার একদম সহ্য হয়না ওকে রাশির সাথে। শুধু রনি কেনো! আমি কোনো ছেলেকেই রাশির পাশে দেখতে চাই না। আমি ওকে ভালোবাসি মা। অনেক ভালোবাসি। কিন্তু রাশি ও বুঝতেই চাইনা। আচ্ছা মা তুমি বলো! রাশি কি এতটাই অবুঝ যে, আমার মনের কথা বুঝে না৷ কেনো ওকে আগলে রাখি, শাসন করি ও-কি সত্যি বুঝে না?

–“রাশি সে-তো শকড সম্রাটের কথা শুনে। তার অনুভূতি বিকল হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। তার মস্তিষ্ক যেনো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। রাশি নিশ্বাস নিতেই যেনো ভুলে গেছে এমন ভাব। সম্রাট কি বলল এইটা। তাকে ভালোবাসে?
-“তার জন্য কি রনির সাথে মিশতে দেয়না আমাকে। আমাকে অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলে সম্রাটের জেলাস ফিল হয়। আর কিছু ভাবতে পারে না রাশি। নিজেকে সব থেকে বড় অসহায় লাগছে তার এই মুহূর্তে।

— রাশি আমাকে ঠকিয়েছে মা। বারণ করা সত্ত্বেও ও রনির সাথে যোগাযোগ রেখেছে। ওর সাথে সম্পর্কে… বাকিটা বলার আগে থেমে যায় সম্রাট। রাশি অবাকিত চোখে তাকিয়ে আছে সম্রাটের দিকে।

–‘ তুই সত্যি বুদ্ধিসুদ্ধি খোয়া দিয়েছিস সমু? মায়ের এমন কথায় ছলছল চোখে তাকায় সমু।
– আচ্ছা তুই কি একবারও তোর মনের কথা গুলো রাশিকে জানিয়েছিস। ওর কি মতামত এই ব্যাপারে শুনেছিস? শুন সমু! রাশির নিজস্ব একটা জীবন আছে। ওর জীবনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ওর আছে। রাশির যাকে ভালো লাগবে তাকে জীবন সঙ্গী করবে এটাই স্বাভাবিক। এখানে আমি বা তুই কারো কিছু বলার নেই। হ্যাঁ! তুই ভালোবাসিস রাশিকে এটা সত্য। কিন্তু ওকে জানা সেটা। যদি রাশি তোকে ভালোবাসে৷ তোকে চাই তাহলে নিশ্চয় তোর ডাকে সারা দেবে৷ আর যদি রাশির মনে অন্য কেউ থাকে তাহলে তোকে সরে আসতে হবে সমু৷
– রিনার খানের লাস্টের কথা টায় সম্রাট চমকানো চোখে তাকায়। গাল বেয়ে আরেকফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।

— তোর মতো বুদ্ধিমান একটা ছেলের থেকে এমন অ-যৌক্তিক কাজ একদম আশা করিনি সমু হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে রিনা খান।
– রাশি মন খারাপ করে আছে তার ঘরে। মেয়েটার সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নে। ওর বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করা ঠিক হবে না। তাই রাশিকে রাশির মতো ছেড়ে দে সমু। দেখ সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাই না৷ তোরটাও তেমনি মনে কর। কথাটা বলতে রিনা খানের গলা ধরে আসে। কিন্তু সত্যি তো বলতেই হবে তাকে।

— রাশি আর দাঁড়ায় না সেখানে। দাঁড়িয়ে থাকার মতো পর্যাপ্ত শক্তি তার মধ্যে নেই এখন। রাশির মধ্যে তোলপাড় করা অবস্থা। দ্বিধাদ্বন্দ্ব, অনুশোচনা, অকল্পিত আশা সব কিছু এক সাথে ঘিরে ধরেছে তাকে।

–” পরের দিন..

– সম্রাট রেডি হয়ে বের হয় বাড়ি থেকে। গতরাতে তার মায়ের কথা শোনার পর অনেক ভেবেছে সে৷ সত্যি তো জোর করে কিছু হয়না৷ রাশি যদি রনিকে ভালোবাসে তাহলে তাদের মধ্যে থেকে সম্রাট সরে যাবে। সম্রাট চাই রাশি ভালো থাকুক। ভালোবাসার মানুষ ভালো থাক এটাই তো সবাই চাই। সব ভালোবাসায় পূর্ণতা আসে না। তাই সম্রাট চাই তার অপূর্ণ ভালোবাসা তার মধ্যেই রাখতে। কখনো সেটা প্রকাশ করবে না রাশির সামনে। কিন্তু এইসব ভাবলেও মানতে যে অনেক কষ্ট হয়। ভালোবাসার মানুষ কে অন্য কারো সাথে দেখার ক্ষমতা কারোই থাকে না৷ যে যত শক্তিশালী আর সবল মনের মানুষ হোক না কেনো প্রেমের কাছে সে দুর্বল। সম্রাটের ক্ষেত্রেও তাই৷ তারপরও মানতে হবে তাকে। সম্রাট মনস্থীর করে রাশির কাছে ক্ষমা চাইবে। রাশির গায়ে হাত তোলার জন্য রাশি যা শাস্তি দেবে তা মাথা পেতে নেবে। রাশির জীবনে আর হস্তক্ষেপ করবে না সে।

–‘ সম্রাট না খেয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। রিনা খান অনেক বার বলে খেয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু সম্রাট শুনেনি। রাশি উপরে থেকে সবটা দেখেছিলো দাঁড়িয়ে। সম্রাট কে এইভাবে বেরিয়ে যেতে গেছে একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফুকে আবার নিজের রুমে চলে যায়। বারান্দায় মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে রাশি। দমকা হাওয়া এসে মাঝে মাঝে রাশিকে স্পর্শ করে যাচ্ছে। নীড়ে থাকা পাখি গুলো বের হচ্ছে খাবারের সন্ধানে কিচিরমিচির শব্দ করে। গাড়ির হর্ণের তীব্র শব্দ বেড়ে চলেছে আস্তে আস্তে। তারপরও যেনো রাশির এইসবে কিছু যায় আসে না। এত তীব্র শব্দ কোলাহল, আনাগোনা কিছুই যেনো তার কর্ণপাত হচ্ছে না আর না দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। তার মন তো আছে সম্রাটের বলা সে কথা গুলোর প্রতি।

– রাশির চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে এই একদিনে। কাল থেকে কারোই খাওয়া নেই। রিনা খান রাতে অনেকবার এসে এসে রাশিকে দেখে গেছে৷ রিনা খান রাশিকে অনেক ভালোবাসে৷ নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখতে চাই সারাজীবন। সম্রাটের আগে তারই পছন্দ হয়েছিলো রাশিকে পুত্রবধূ হিসেবে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়াবে ভাবেনি কেউ। রাশি কি সত্যি রনি ভালোবাসে নাকি অন্য কেউ আছে এটা রিনা খান এখনো বুঝে উঠেনি। নাকি রাশির মধ্যে এইসব চিন্তা ভাবনা নেই?

–‘ রিনা খান রাশির জন্য নাস্তা নিয়ে আসে রুমে। নাস্তার প্লেট’টা টেবিলে রেখে রাশির কাছে এগিয়ে যায় সে।
– রাশি এখনো খেয়াল করেনি রিনা খানকে। আনমনে থাকায় রিনা খানের উপস্থিতি সে বুঝতে পারে না।

– খেয়ে নে রাশি। কাল থেকে কিচ্ছুটি মুখে তুলিস নি। এইভাবে চললে শরীর খারাপ করবে৷ হঠাৎ রিনা খানের গলা পেতে রাশি চমকে উঠে। পাশে তাকাতেই রিনা খানকে দেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে ব্যথিত নয়নে তাকায়।

-‘ কুটকুটে নিরবতা দুজনের মাঝে। রাশি কিছু বলে না। আর রিনা খান সেও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে রাশির পাশে।
-” একটা কথা বলি রাশি তোকে? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিরবতা ভেঙে বলে রিনা খান। তার কথায় রাশি বিমুঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে হুম বলে।

– তোর জীবনে সব রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তোর আছে। তোর যাকে ইচ্ছে তাকে জায়গায় দিতে পারিস। ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতাও তোর মধ্যে আছে। তারপরও একটা কথা বলি। এটা উপদেশ হিসেবে ধরতে পারিস। জীবনে যাই কিছু করিস না কেনো একটু ভেবে চিন্তে করিস মা। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেকবার ভেবে নিস। তুই যাকে নিয়ে সুখী থাকবি ভালো থাকবি অবশ্যই তাকেই আঁকড়ে ধরবি। তবে সে মানুষটা যেনো ভুল মানুষ না হয়। আমি চাই তুই ভালো থাক। পড়াশোনা করে অনেক দূর এগিয়ে যায়।

– রাশি আহত চোখে তাকিয়ে থাকে রিনা খানের দিকে। রিনা খান তাকে কিছু বোঝাতে চাইছে রাশি সবটা বুঝেছে। এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাইনা রাশি কাউকে কিছু। তবে সবাই ধরে নিয়েছে রনির সাথে রাশির রিলেশন চলছে। এইটা ভেবে রাশি একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আবার। আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে দৃষ্টিটা সেদিকেই রাখে৷

— খাবারটা খেয়ে নিস। কথাটা বলে রিনা খান রাশির মাথায় হাত বুলিয়ে রেখে চলে আসে। রিনা খান রুম থেকে বের হতেই রাশি ফুঁপিয়ে উঠে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার এই মুহুর্তে। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।

–‘ সম্রাট তার বন্ধুদের সাথে ভার্সিটির একপাশে বসে আছে একটা গাছের নিচে। সম্রাট একদম চুপচাপ হয়ে আছে৷ এমনিতেও সে সব সময় চুপচাপ থাকে। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না৷ তবে আজ একদম নিরব মেরে গেছে। সাথে মুখটা গম্ভীর করে আছে। রাহাত, হাসিব জানে সম্রাটের মন ভালো নেই। তাই কেউ-ই তাকে ঘাটায় না আজ।

–‘ একজোড়া হাত এসে সম্রাটের কলার চেপে ধরে। আকস্মিক এমন ঘটনায় সবাই চমকে উঠে। ঘাবড়ে যাওয়া চোখে তাকায় সে মানুষটার দিকে। সম্রাটের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে উঠে। রাগে মুখশ্রী লালাভ বর্ণ ধারণ করে। সম্রাটের সাথে উঁচু গলায় কথা বলার সাহস কেউ রাখে না৷ সেখানে তার কলার ধরেছে বিষয়টা মানতে পারছে না৷ সম্রাট চোখ তুলে তাকাতেই রনিকে রাগী চেহারায়, চোখ লাল করে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে। রনিকে দেখে সম্রাটের রাগের মাত্রাটা আরো বেড়ে যায়। হাতের মুঠো আরো দৃঢ় হয়ে আসে। কিন্তু পরোক্ষে রাশির কথা মাথায় আসতেই সম্রাট নিজেকে গুটিয়ে নেয়। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে থাকে।

– রাশি কোথায় সমু? কি করেছিস তুই ওর সাথে? আমার ফোন রিসিভ করছে না কাল থেকে ও। এখন তো ফোনটা অফ বলছে ওর। তুই কি করেছিস রাশির সাথে? ওকে কষ্ট দিলে ওর সাথে খারাপ কিছু হলে আমি তোকে ছেড়ে দেবো না সমু। তেজী কন্ঠে বলে রনি।

– কলারটা ছাড় রনি। বেশ শান্ত কন্ঠে বলে সম্রাট। রাহাত, হাসিব, শান ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। সম্রাট যে এখনো নিজেকে স্থীর রেখে এটা ভাবতেই তাদের ঘাম ছুটে যাচ্ছে।
– তোকে আজ আমি মেরে ফেলবো সমু। বল রাশি কোথায়? ও কেনো আমার ফোন রিসিভ করছে না। আচ্ছা ও ভালো আছে তো? ওকে সুস্থ রেখেছিস তুই। বল কি করেছিস তুই ওর সাথে। খারাপ কিছু করিস নি তুই। সম্রাট এবার আর সহ্য করতে পারে না। নিজেকে এতখন সামলে রাখলেও এখন আর তার পক্ষে সম্ভব হয়না৷ রাগে একটা ঘুষি মেরে দেয় রনির ঠোঁটের কোণে। এতে রনির ঠোঁট কেটে রক্ত পড়তে শুরু করে। উপস্থিত সবাই থমকে যায়। হঠাৎ এমন একটা কাজ করে বসবে সম্রাট ভাবিনি। সম্রাট রনিকে মারার জন্য আবার হাত উঠাতে যাবে তখনই রাহাত সম্রাট কে আঁটকে দেয়।

– কি করছিস সমু। পাগল হয়ে গেছিস তুই? ভার্সিটির মধ্যে এইগুলো কি হচ্ছে? সবাই কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে দেখ একবার।
– রাহাতের কথায় পাত্তা না দিয়ে সমু রনির দিকে আবার তেড়ে যেতে চাই। এবার হাসিবসহ সম্রাট কে আটকায়।

– ছাড় আমাকে। আজ আমি ওকে মেরে ফেলবো। আমার সব কাজে ও বাধা দেয়। সব কিছুতে এসে ভাগ বসায়। আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবখানে এতেও কিছু বলিনি ওকে৷ এবার ওর নজর গেছে রাশির দিকে। যাকে আমি নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি তাকে ছিনিয়ে নিতে চাই৷ আবার বড় বড় কথা বলছে এসে। ওর জন্য রাশি ভালো নেই, আমি ভালো নেই। আমার পরিবার ভালো নেই।

– আমি ভালোবাসি রাশিকে। সম্রাটের কথা শেষ হওয়ার আগেই রনি চিৎকার করে বলে উঠে। সবাই রনির দিকে কৌতুহলী হয়ে তাকায়।
– আমি রাশিকে ভালোবাসি আর রাশিও আমাকে ভালোবাসে। তুই আমাদের মধ্যে বাধা হয়ে কেনো আসছিস?

– রনির কথায় দু কদম পিছিয়ে যায় সম্রাট।

-” চলবে…