মেঘবৃত্ত পর্ব-১১+১২

0
448

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_১১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

চিরচেনা সেই পার্ক। সেই টগবগে রোদে ঝলসে যাওয়া বেঞ্চ। পার্কে হেঁটে যাওয়া ফোকলা দাঁতের সেই বুড়ি। যার হাতে পাঁচটা ছোট বেলুন। চোখে, রঙিন রংধনু। ময়লা শাড়ির আঁচল মাটি ছুঁই ছুঁই। কিছুই বদলায় নি এ কদিনে। শুধু বদলে গেছে দুটো প্রাণ। ভাগ্যের চাকা ঘুরে গিয়েছে ডান দিকে। আবদ্ধ হয়ে গেছে একটি পবিত্র বন্ধনে। মেঘা বেঞ্চে বসে আছে। হাতে বাদামের প্যাকেট। একটা একটা বাদাম মুখে পুড়ে চিবুচ্ছে। বৃত্তের হাতেও একটা বাদামের প্যাকেট। একসময় বৃত্ত বললো,
— সব প্ল্যান সাক্সেসফুল। ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে এখন। মাথাটাও হালকা হয়ে গেছে। উফ! কি ধকল গেছে এ কদিন। কি বলিস?
মেঘ সদূরে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক স্থির, জরাজীর্ণ। সত্যিই কি সব বিপদ কেটে গেছে। কই? মেঘার তো মনে হচ্ছে, বিপদের কেবল শুরু। যখন সবাই জেনে যাবে মেঘার বাচ্চার বয়স তাদের বিয়ের বয়সের চেয়ে বেশি, তখন কি হবে? সবাই তো ঠিকই আঙ্গুল তুলবে। যতোই হোক! বিয়ের আগে বাচ্চা, বিষয়টা কেউ মেনে নিবে না। তখন? মেঘা নীরব হয়ে গেলো। অপরপাশ থেকে কোনো জবাব না পাওয়ায় বৃত্ত ঘুরে তাকালো। মেঘাকে স্থির দেহে বসে থাকতে দেখে বৃত্ত বড় বিরক্ত হলো। হাত দিয়ে মেঘাকে হেলিয়ে বললো,
— ওই? কই হারালি?
মেঘা নড়েচড়ে বসলো। হাতে লেগে থাকা বাদামের খোসা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বৃত্তের দিকে তাকালো। বললো,
— কটা বাজে? বাসায় যেতে হবে।
বৃত্ত হাতের কব্জিতে থাকা কালো রঙের ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বলল,
— বারোটা দশ বাজে। আর কিছুক্ষণ বসি? ত্রিশ বাজলে যাবো।
মেঘা তাড়া দেখালো। পাশে থাকা ব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বৃত্তের দিকে চেয়ে বললো,
— না। দেরি হয়ে যাবে। চল এখন। বাসায় গিয়ে অনেক কিছু ফেস করতে হবে আমার।সেটা ভেবেই আমি ভয়ে শ্যাষ। জলদি চল।
বৃত্ত হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো। মেঘা বদলে গেছে। আগের ঝরঝরে মেঘা কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে।তার সামনে থাকা এই মেঘা বেশি কথা বলে না, হুটহাট গান গেয়ে তার কান ঝালাপালা করে না, আগের ন্যায় বাচ্চামো করে না। এই মেঘার সাথে এক সপ্তাহ আগের মেঘার বহুত তফাৎ। এ মেঘা তো কোনো অন্য কেউ। বৃত্ত কি বলবে! মেঘার কথায় সায় দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বাইকের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
— চল তাহলে। তাও শান্তি থাক, মেরি মা।
মেঘা মুচকি হাসলো। সে বদলে গেলে কি হবে ? বৃত্ত তো ঠিকই আগের মত। কথাবার্তা, আচার সব আগের ন্যায়। একটুও বদলায় নি। ভালো! খুব ভালো!
_________________________
মেঘার বাসার নিচে বৃত্ত বাইক থামালো। মেঘা তিন তলা বিল্ডিংটার দিকে একবার তাকাল। মুখখানা মলিন করে নেমে দাঁড়ালো। বৃত্তকে বিদায় জানিয়ে বাসার দিকে উদ্যত হলো।
তবে, মাঝপথে বাঁধ সাধলো বৃত্ত। পিছন থেকে ডাক দিলো,
— মেঘ?
মেঘা থেমে গেলো। পিছন ফিরে তাকালো। বললো,
— কি?
বৃত্ত কিছুক্ষণ থামলো। দূরে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো। অতঃপর, গম্ভীর সুরে বললো,
— তুই বদলে গেছিস,মেঘ। খুব বেশি বদলে গেছিস।
মেঘার প্রাণটা কেঁপে উঠলো কথাটা শুনে। সে কি সত্যিই বদলে গেছে? বৃত্ত কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। বাইক চালিয়ে শো করে চলে গেলো। মেঘা সেখানটায়, সেই আম গাছের নিচেটায় দাঁড়িয়ে রইলো। নিজেই আনমনে মস্তিষ্ককে প্রশ্ন করলো, ‘ তুই কি সত্যই বদলে গেছিস, মেঘা?’
মস্তিষ্ক কাল বিলম্ব না করে উত্তর করলো, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ।’
___________________________
মেঘা বাসার কলিংবেল চাপলো। বুকের ভিতরটা ‘ধুকপুক’ করছে। যদি বাবা বাসায় থাকেন? তাহলে, আজকে মেঘা শেষ। বাবা মেরে ফেলবেন পুরো। মেঘার মনে হচ্ছে, তার মাথা চক্কর দিচ্ছে। আর একটু চিন্তা করলেই সে মাটিতে লুটিয়ে যাবে।
একটু পর মেঘার মা দরজা খুললেন। মেঘাকে দেখেই তার মুখ কঠিন হয়ে গেলো। মেঘা অস্ফুট সুরে সালাম দিলো। মেঘার মা সেই সালাম কানে তুললেন না। বরং, মুখখানা কিড়মিড় করে পাশ কাটিয়ে ঘরে চলে গেলেন। মেঘা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ঘরে ঢুকে সদর দরজা আটকে দিলো। নিজের ঘরে যেতে যেতে একবার রান্নাঘরে তাকালো। মা রান্না করছেন। মেঘা খুব মন চাইলো, মাকে জড়িয়ে ধরতে। মায়ের কাছে নিজের কষ্টের ঝুলিটা উপুর করে দিতে। মায়ের সাথে মন খুলে কথা বলতে। তবে, মেঘা তার কিছুই করতে পারলো না। না পারার আফসোসে মেঘা অসংখ্য দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চোখ সরিয়ে চুপচাপ নিজের ঘরে চলে এলো।
বাথরুম থেকে গোসল সেরে বের হলো মেঘা। মনটা বড্ড চা, চা করছে। এই মুহূর্তে একটা কড়া লিকারের চা খাওয়া প্রয়োজন। মেঘা মাথার চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে রান্নাঘরে গেলো। মা নেই সেখানে। মেঘা দু কাপ চা বানিয়ে ট্রেতে নিলো। অতঃপর, ধুকপুক মন নিয়ে ট্রেটা নিয়ে নিজের মায়ের ঘরে গেলো।
মেঘা মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো। মা বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে আছেন। তবে, মেঘা জানে মা মোটেও ঘুমাচ্ছেন না। এ সময়ে মা টিভি দেখেন। ড্যান্স বাংলা ড্যান্স দেখে সারাঘর মাতিয়ে তোলেন। তবে, আজকে তার শুয়ে থাকার কারন মেঘা নিজেই। মায়ের এমন ভগ্ন আচরন দেখে মেঘার ভারী কষ্ট হলো। মেঘা ট্রে নিয়ে রুমে ঢুকলো। মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আলতো গলায় ডাক দিলো,
— মা? ও মা?
মেঘার মা মেয়ের গলা শুনে চোখ খিঁচে ঘুমানোর ভান করলেন। মেঘা মায়ের এমন বাচ্চামো দেখে মনে মনে হাসলো। ট্রেটা টি টেবিলের উপর রেখে মায়ের কাছে বসলো। মায়ের কোনো চুলে হাত বুলিয়ে বললো,
— মা? চা এনেছি। খাবে না?
মেয়ের ওমন আদুরে কথা শুনে মেঘার মায়ের মন অজান্তেই গলে যেতে শুরু করলো। তবুও, তিনি তাকালেন না। কঠিন সুরে বললেন,
— আমি তোর হাতের বানানো কিছুই খাবো না। এখন ঘুমাবো আমি। লাইট নিভিয়ে রুম থেকে চলে যা।
মেঘা বড্ড আশাহত হলো। মায়ের এমন কঠোর রূপের সাথে মেঘা মোটেও পরিচিত নয়। আরো একবার কিছু বলতে গেলে মেঘার মা কঠোর সুরে বললেন,
— এখনো যাচ্ছিস না কেনো? বললাম তো, ঘুমাবো আমি।
মেঘা এবার ভেঙেচুরে গেলো। চোখে জমলো দু ফোঁটা জল। এত কষ্ট হচ্ছে কেনো ওর? মেঘা আর অপেক্ষা করলো না। মায়ের জন্যে করা চায়ের কাপ টি টেবিলে রেখে ট্রে টা নিয়ে চলে গেলো। রুম ছাড়ার আগে মায়ের কথামত ঠিকই লাইট নিভিয়ে গেলো। মেঘা রুম ছেড়ে যেতেই মেঘার মা উঠে বসলেন। টি টেবিলে চায়ের কাপ দেখে তার মনটা বিষিয়ে গেলো। মেয়েটা কেনক এমন করলো? কেনই বা আজকে এ দিন দেখতে হলো? মেয়ের প্রতি তিনি কখনোই কঠোর ছিলেন না।আজকে পরিস্থিতির চাপে পড়ে তাকে কঠোরতার মুখোশ পড়তে হচ্ছে। এর চেয়ে বিশ্রী অনুভূতি আর কিছুই হতে পারে না। মেঘার মা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। একটা, দুটো, অতঃপর অসংখ্য।

#চলবে

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_১২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সেদিনের পর কেটে গেছে আরো কটা দিন। নিজের ঘরেও মেঘা কেমন যেনো অপরিচিতদের মত। দরকার ছাড়া কেউই খুব একটা কথা-টথা বলে না। মাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে, উত্তরে শুধু ‘ হু, হা ‘ করেন। মেঘা এসব দেখে প্রায় ভেঙেই পড়েছিলো।
ঐ তো, আজকের কথা। দুপুরের খাবার খাচ্ছে সবাই। মেঘার বাবা স্ত্রী সাথে ব্যবসার সম্পর্কিত কথা বলছিলেন। মেঘা মাথা নত করে চুপচাপ খাবার খাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাবার মুখের পানে তাকানোর সাহস হয়নি তার। বাবা অবশ্য তাকে এ ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করেননি। তবে, বাবার মৌনতা মেঘাকে তিলেতিলে শেষ করে দিচ্ছে।
মেঘার প্লেটে ছিলো, রুই মাছের তরকারি আর ভাত। খাবার দেখেই মেঘার গা গুলিয়ে আসছে। মুখ ভর্তি করে বমি পাচ্ছে। এক মাসও হয়নি বাচ্চাটার। এখনি মেঘার অবস্থা করুন। একসময় মেঘা বমি আটকাতে পারলো না। তাড়াহু়োতে করে টেবিল ছেড়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেল। মেঘার এমন তাড়াহুড়োয় টেবিলের একটা গ্লাস মাটিতে পড়ে গিয়ে ঝনঝন শব্দ তুলে ভেঙে গেলো। মেঘার বাবা-মা হতভম্ব হয়ে মেঘার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলেন। মেঘার বাবা মেয়ের এমন বেখেয়ালিপনা দেখে তেতে উঠলেন। হরহর কণ্ঠে বললেন,
— দেখেছো মেঘার মা? তোমার মেয়ের কাণ্ড দেখেছো। চার আনা রোজগার করার ধান্দা নেই। দুশো টাকা ক্ষতি করিয়ে ফেললো। ওকে বলে দিও, আমার ঘরে জিনিস-টিনিস ভাঙ্গা চলবে না। ভাঙতে হলে যেনো নিজের শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ভাঙে।
মেঘার মা এখনো ফ্যালফ্যাল চোখে এখনো মেয়ের বন্ধ ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে আছেন। আজকাল মেয়ের হলোটা কি? আগের মত খাবারে রুচি নেই। মুখটাও কেমন যেনো শুকিয়ে, শুকিয়ে গেছে। কোনো অসুখ হলো কি? মেঘার মা আঁতকে উঠলেন। নাহ! মেয়েকে আজই একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

ঘরে এসেই মেঘা বাথরুমে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে অনবরত বমি করছে। সকাল থেকে যেটুকু খেয়েছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বমি করেছে। শরীরের শক্তি একদম নিঃশেষের কোঠায়। একসময় বমি থামলো। মেঘা কিছুক্ষন থেমে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে আসলো। পা চলছে না তার। খুব কষ্ট ক্লান্ত শরীরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। এত ক্লান্ত শরীর। তাও মেঘার চোখে ঘুম নেই। আজকাল মেঘার ঘুমগুলো বড্ড ফাঁকিবাজ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ তাদের লুকোচুরি খেলা চলেই। মেঘার চোখে এখন ঘুমেরা ধরা দেয়না। মেঘা ঘুমুতে গেলে চোখে ভর করে রাজ্যের চিন্তা। সেই চিন্তায় হাবুডুবু খেয়ে মেঘার ঘুমগুলো হুরহুর করে পালিয়ে যায়। কি এক যন্ত্রনা!

বিকেল ছটা বেজে দশ মিনিট পেরিয়ে গেছে। মেঘার ঘুম ধীরে ধীরে চোখ থেকে নামছে। মেঘা দুবার পলক ঝাপটালো। অতঃপর, আস্তে আস্তে চোখ খুললো। ঘড়িতে সময় দেখেই মেঘার চক্ষু চড়কগাছ। এত বেলা হয়ে গেছে। ইশ! আজকের আসরের নামাজটা কাযা হয়ে গেলো। মেঘা হুড়মুড়িয়ে বিছানা ছাড়লো। বাথরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করলো। কদিন পরেই ফাইনাল এক্সাম। বাচ্চার কথাটা ফাইনাল এক্সাম অব্দি লুকিয়ে রাখতে হবে। যেভাবেই হোক। আজকাল মেঘার মাথায় সারাক্ষণ বাচ্চার কথাই ঘুরে। বাচ্চাটা কেমন আছে, কত বড় হলো, বাচ্চার ভবিষ্যৎ কী? এসবই মেঘার মাথায় পাজলের মত ঘুরঘুর করে। মেঘা বাচ্চার কথা ভেবেই মিটমিট করে হাসলো। অতঃপর, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। এই মুহূর্তে এক কাপ চা সবচেয়ে প্রয়োজন।
রান্নাঘরে যাওয়ার আগে মেঘা মায়ের ঘরে একবার উঁকি দিলো।মা তজবিহ পড়ছেন। মেঘা দরজার সামনে থেকে আস্তে করে ডাক দিলো,
— মা?
মেঘার মা অনিচ্ছাসত্তে তাকালেন। চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন,
— কি?
— চা খাবে?
মেঘার মা তজবিহ ধরে রাখা হাত উঁচিয়ে মানা করলেন। মেঘা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
— তুমি তো মাগরিবের পরে চা খাও। আজ খাবে না?
মেঘার মা মৌন হয়ে গেলেন। মেঘা বুঝলো, মা চা খাবেন। তবে, তা মুখে বলবেন না। বাহ! কি রাগ!
মেঘা চলে গেলো।

দুকাপ চা বানিয়ে মায়ের ঘরে এলো। টি টেবিলের উপর মায়ের চা রেখে চলে যেতে উদ্যত হলে পিছন থেকে মেঘার মা ডাক দেন,
— শোন?
মেঘা তাকালো। মেঘার মা চোখ বুজে তাজবিহ পড়তে পড়তে বলেন,
— চা খাওয়ায় পর রেডি থাকিস। তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।
মেঘার মাথায় যেনো বজ্রপাত হলো। মা আজ ডাক্তারের কাছে যাবেন, মানে? মেঘা বললো,
— কিন্তু, কেনো? আমি তো সুস্থ আছি। তবে?
— আমি কি একবারও বলেছি, তুই অসুস্থ। আমার মনে কু ডাকছে। তাই নিয়ে যাবো। তাই বেশি কথা না বলে চা খেয়ে রেডি হ।
মেঘা আর কথা বাড়ানোর সুযোগ পেলো না। চুপচাপ নিজের চা নিয়ে রুমে চলে এলো।

রুমে এসেই বৃত্তের ফোনে কল দিলো মেঘা। দুবার রিং হলো। তিনবারের সময় কল কেটে দিলো বৃত্ত। মেঘা যেনো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো তাতে। কল ছেড়ে মেসেজ লিখলো, ‘ ma amake doctorer kache niye jachen test korate. tui kichu ekta kor.. ‘
মেসেজ লিখে মেঘা কিছুক্ষণ ফোনের দিকে চেয়ে রইলো। নাহ! বৃত্ত এখনো কোনো কল করেনি।

— মেঘা? এই মেঘা? রেডি হয়েছিস? দেরি হলে পরে ডাক্তার তো চলে যাবে। মেঘা?
মায়ের রুম থেকে আওয়াজ শুনে মেঘা এখন চোখে সরষে ফুল দেখতে লাগলো। কি করবে এখন? এদিকে বৃত্তের কোনো খবর নেই। এই বৃত্তকে মন চাচ্ছে, ড্রেনের নদীতে চুবিয়ে কালো করে দিতে। উফ! দরকারের সময় এরে পাওয়া যায়না। অসহ্য!

অতঃপর, মেঘা কিছুই করতে পারলো না। মেঘার মা মেয়েকে বগলদাবা করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন।
মেঘা গাড়িতে বসেও বৃত্তকে হাজারখানা কল দিয়েছে। তবুও বৃত্ত ধরেনি। রাগে দুঃখে মেঘার চুল ছিঁড়তে মন চাচ্ছে। বৃত্তকে একবার সামনে পেলে মেঘা তার গালে দু-চার ঘা বসিয়ে দিবে নিশ্চিত।
একটু পর মেঘার সিরিয়াল এলো। ভয়ে মেঘার আত্মা মনে হয় বেরিয়ে আসছে। মেঘার মা মেয়েকে এমন ঘামতে দেখে ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে এগিয়ে দিলেন। বললেন,
— ঘামছিস কেনো এতো? টিস্যু ধর।
মেঘা টিস্যু হাতে নিয়ে ঘাম মুছলো। তবে, মনের মধ্যে যে এক বিরামহীন ঘাম ছুটছে তার বেলায়?

মেঘার মা, মেয়েকে নিয়ে চেম্বারে ঢুকলেন। ডাক্তার মূলত মেয়ে। সামনে কার্ড ঝোলানো, গাইনোকলজিস্ট। তবে কি মেঘার মা কোনো কিছু সন্দেহ করেছেন? মেঘা অনবরত ঘেমেই যাচ্ছে। ডাক্তার খুব সফট কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— রোগী কে?
মেঘার মা মেয়ের কাধে হাত রেখে বললেন,
— আমার মেয়ে।
— ওহ। কি সমস্যা?
— কদিন ধরেই কিছু খেতে পারছে না। মুখখানা কেমন যেনো শুকিয়ে গেছে।
ডাক্তার মেয়েটা পালে ভাঁজ ফেলে চশমা উপরে তুললো। বললো,
— বমি হয়?
মেঘার মা চিন্তিত হলেন। বমি হয় কিনা, সেটা তো উনি জানেন না। তিনি মেয়েকে প্রশ্ন করলেন,
— বমি হয় তোর?
মেঘা তড়িৎ গতিতে মাথা নেড়ে মানা করলো। ডাক্তার মেয়েটা আবারও জিজ্ঞেস করলো,
— বিয়ে হয়েছে মেয়ের?
মেঘার মা এবার থতমত খেয়ে গেলেন। কি বলবেন ভেবে পেলেন না। নিজেকে ধাতস্থ করে বললেন,
— হুম।
— স্বামীর সাথে মিল আছে?
— হ-হ্যাঁ।
— ওহ। আচ্ছা, আমি কিছু টেস্ট দিয়েছি। সেগুলো করিয়ে নিবেন। আর রিপোর্ট আগামীকাল দেওয়া হবে। রিপোর্টটা আমাকে দেখাবেন। আর রিপোর্ট দেখাতে মেয়ের স্বামী আসতে হবে। ঠিক আছে?
— কেনো? মেয়ের স্বামী আসতে হবে কেনো?
— কারণ, আপনার মেয়ের মধ্যে প্রেগন্যান্সি লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আর প্রেগন্যান্ট সিওর হলে, আমরা মেয়ের স্বামীকেও প্রথম এই খবরটা জানাই। স্বামীর সাথে বনিবনা না হলে অন্য ব্যাপার। সেক্ষেত্রে আপনাদের যেহেতু মিল আছে। তাই স্বামীকেই সাথে নিয়ে আসতে হবে। ক্লিয়ার?

মেঘার মায়ের মাথা ঘুরতে লাগলো। তার মেয়ে প্রেগন্যান্ট? সে কি করে সম্ভব? ইয়া আল্লাহ! ধৈর্য্য দাও আমাকে।
#চলবে।