মেঘবৃত্ত পর্ব-৭+৮

0
499

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

‘আফজাল কুটুরি’এর বসার ঘর জুড়ে এই মুহূর্তে পিনপতন নীরবতা। মাটিতে একটা সুঁচ পড়লে, তারও আওয়াজ কানে বেজে উঠবে, ততটাই নীরব ঘরটা। সোফায় বৃত্তের বাবা, আফজাল হোসেন থমথমে মুখে বসে আছেন। উনার পাশে বৃত্তের মা। বড় সোফায় বসে আছেন, মেঘার বাবা-মা। মেঘার বাবার মুখ থেকে যেনো লাভা বের হচ্ছে। রাগে রীতিমত ফুস-ফুস করছেন তিনি। একবার রাগ নিয়ে মেঘার দিকে তাকাচ্ছেন তো আরেকবার বৃত্তের দিকে। মেঘা বাবার এমন রাগ দেখে ভয়ে একদম সিঁটিয়ে যাচ্ছে। কাঁচুমাঁচু মুখে ও বৃত্তের পিছনে লুকালো। বৃত্ত নিজেও মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। বৃত্তের মুখে তাদের বিয়ের কথা শুনে সবার রক্ত রীতিমত ছলকে উঠছে। নীরবতা ভাঙলেন বৃত্তের বাবা। বলে উঠলেন,
— কেনো করলে এমন?
বৃত্ত চুপ। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে প্রচণ্ড রকম ভয় পায় বৃত্ত। এমন না যে, আফজাল হোসেন ছেলের প্রতি কড়া।তবে, সন্তানদের সামনে নিজেকে সর্বদা এক শক্ত খোলসের মধ্যে আবৃত করে রাখতেই তিনি ভালোবাসেন। তাই জন্যেই, বৃত্তের এত ভয়!
— বৃত্ত? আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি। উত্তর দাও!
বৃত্তের বাবা এবার গর্জন করে উঠলেন। ধমক শুনে, বৃত্তসহ মেঘা নিজেও কেঁপে উঠলো। মেঘা তুমুল ভয়ে পিছন থেকে বৃত্তের কোমরের শার্ট মুচড়ে ধরলো। বৃত্ত আমতা আমতা করে বলল,
— আমি মেঘাকে ভালোবাসি। তাই বিয়ে করেছি।
— তা, এই কথা আমাকে বলা যেত না? আমাকে না বলতে পারলেও তোমার মাকে বলতে। সেটাও তো তুমি করো নি। নিজে নিজেই পণ্ডিত হয়ে গেছিলে? ”
বৃত্ত ত্যাড়াচোখে মায়ের দিকে তাকালো। বৃত্তের মায়ের মুখখানা পাংশুটে আকার ধারণ করেছে। বৃত্ত পুনরায় মাথা নত করে উত্তর করলো,
— মাকে বলেছিলাম।
বৃত্তের বাবা এবার নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালেন। বৃত্তের মা চোখের ইশারায় সম্মতি দিলেন। বৃত্তের বাবা এবার খানিক দমলেন। সবার সামনে স্ত্রীকে ধমক দিবেন, এটা তার বংশ শিক্ষা দেয়নি। তাই, তিনি নিচু গলায় স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— তুমি জানতে এসব?
বৃত্তের মা আস্তে করে বললেন,
— হুম।
— তাহলে, আমাকে বলো নি কেনো এসব?
— আসলে, আমি..
— থামো। আর বলা লাগবে না। যা বুঝার আমি বুঝে গেছি।
বৃত্তের মা চুপ করে গেলেন। খুব হঠাৎ করেই বৃত্তের বাবা উপলব্ধি করলেন, ‘এক ছাদের নিচে থাকা সত্বেও নিজ স্ত্রী ও ছেলের কাছে কতটা দূরে তিনি। শরীরের দিক থেকে এত কাছাকাছি থাকা সত্বেও, মনের দিক থেকে মাইল-মাইলের দূরত্ব তাদের মধ্যে। এর কারণ কি? এটা নিছকই তার প্রতি সবার ভয়? নাকি, অন্য?’
বৃত্তের বাবা এবার মেঘার বাবা-মায়ের দিকে তাকালেন। মেঘার বাবা মাথা নত করে বসে আছেন। মুখে ‘রা’ নেই। চোখে-মুখে ভয়ংকর রকম কাঠিন্য! বৃত্তের বাবা এবার গলা খাঁকারি দিলেন। মেঘার বাবার ধ্যান ভাঙলো। বৃত্তের বাবার দিকে তিনি শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। বৃত্তের বাবা সুধালেন,
— বিয়েটা যখন হয়েই গেছে। তখন আমাদের এই বিয়ে মেনে নেওয়া উচিৎ। জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে এসবের উপর তো আমাদের হাত নেই। সবই উপরওয়ালার খেল। আমরা তো ওসিলা মাত্র। আর আমার মতে, আমাদের বিয়েটা মেনে নিয়ে একটা সমঝোতায় আসা উচিত। কি বলেন?
মেঘার বাবা এক সেকেন্ড ‘থ’ হয়ে বসে রইলেন। পুরো ব্যাপারটা এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। আসলে, নিজ মেয়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস তাকে বিশ্বাস করতে বাঁধা দিচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে, ‘এটা নিছকই একটা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু, তিনি এই দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পাচ্ছেন। বুক চিঁড়ে কান্নারা দলা পেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তিনি জাগতে চান। এই ভয়ঙ্কর দিবা স্বপ্ন থেকে জেগে উঠতে চান। খুব করে চান!’
— জুয়েল ভাই?
বৃত্তের বাবার ডাক শুনে মেঘার বাবা বাস্তবে ফিরলেন। মনে পড়ে গেলো, এটা কোনো দিবা স্বপ্ন না। বরং, এক জঘন্য বাস্তব। মেঘার বাবা ছোট্ট করে বললেন,
— বলুন!
বৃত্তের বাবা বললেন,
— আপনি জানতে চাইছি, এই বিয়ে নিয়ে আপনার কোনো অমত আছে কিনা? আপনার অমত থাকলে আমরা বিকল্প সিদ্ধান্ত নেবো।
‘বিকল্প সিদ্ধান্ত’ কথাটা শুনে মেঘা, বৃত্ত দুজনেরই গলা শুকিয়ে গেলো। বাবা কি বিকল্প সিদ্ধান্ত নিবেন? এই বিয়ে কি তবে নিরর্থক? বৃত্ত মেঘার দিকে তাকালো। মেঘাও অবাক চোখে বৃত্তের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃত্ত চোখের ইশারায় মেঘাকে আশ্বাস দিলো। তবে, সেই আশ্বাসটা মেঘাকে খুব একটা আশ্বস্থ করতে পারলো না। মেঘার চোখে এখনো ভয়েরা খেলা করছে, নৃত্য করছে। কি বিশ্রী সেই নৃত্য!
মেঘার বাবা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
— বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে, সেখানে আমার আর কি বলার? তবে, এখন আমি মেয়ে উঠিয়ে দিতে চাইছি না। বৃত্ত ভার্সিটি শেষ করুক। একটা চাকরী পাক। তখনই নাহয় মেয়ে তুলে দিবো। ততদিন আমি চাইব, মেঘা আর বৃত্ত যেনো পরস্পরের সাথে যোগাযোগ না রাখে। শুধু এটাই আমার বলার ছিল।
এই কথাটা মেঘা আর বৃত্ত দুজনকেই কাঁপিয়ে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট ছিল। একসাথে না থাকলে বাচ্চার ব্যাপারটা কি করে সামনে আনবে? একটা অজুহাত তো থাকতে হবে? মেঘা চোখ বড়বড় করে বৃত্তের দিকে তাকালো। বৃত্ত নিজেও হতভম্ভ। হুট করে মেঘার বাবা এমন প্রস্তাব তুলে বসবেন, সেটা বৃত্ত ঘুর্নাক্ষরেও টের পায়নি। বৃত্তের বাবা স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন,
— ঠিক আছে। আপনি যেটা ভালো মনে করেন, সেটাই হবে। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই।
বৃত্ত এবার কি করবে ভেবে পেল না। অন্তত এক রাত একসাথে থাকলেই বাচ্চার কথাটা বলা যাবে। কিন্তু, কথাটা বলবে কি করে? সেটাই ভেবে পাচ্ছে না বৃত্ত।
বৃত্তের মাথায় হঠাৎ করেই এক চিন্তা এলো। সবাই যখন সোফা ছেড়ে উঠে পড়ছিলেন তখনই বৃত্ত বলে উঠলো,
— আঙ্কেল, রাতের খাবারটা নাহয় আমাদের এখানেই করে নিন। অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন বাসায় গিয়ে খাবার গরম করাও আরেক ঝামেলা। তার চেয়ে আমাদের এখানেই নাহয় খাওয়া সেরে নিন। কি বলেন, বাবা?
বৃত্তের বাবা খাওয়ার কথা শুনে ভারী লজ্জায় পড়ে গেলেন। শত হোক, মেঘার বাবা-মা এখন তাদের আত্মীয়। এই কথাটা তো তার বলা উচিৎ ছিল। কিন্তু, এত এত মানুষিক চাপের মধ্যে বেমালুম ভুলে গিয়েছেন তিনি। বৃত্তের বাবা তাড়াহুড়ো করে বললেন,
— হ্যাঁ, হ্যাঁ। বসুন, জুয়েল ভাই। রাতের খাবারটা অন্তত খেয়ে যান। এত রাত করে আমাদের বাড়ি থেকে না খেয়ে ফিরবেন। বিষয়টা খারাপ দেখায়।
অতঃপর, মেঘার বাবা-মা শত অনুরোধ ফেলতে পারলেন না। রাতের খাবার খাওয়ার জন্যে রয়ে গেলেন। এদিকে, সবার অগোচরে মেঘা আর বৃত্ত ফুড়ুৎ হয়ে গেল। একসাথে থাকার ব্যাপারটা এখন প্ল্যান করা উচিৎ। আপাতত মেঘা আর বৃত্তের মূল উদ্দেশ্য এটাই।

#চলবে

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

— এখন কি করবো, মেঘ? তোর হিটলার বাবা এমন একটা গাঁজাখুরি প্রস্তাব তুলে ধরবে, সেটা জানলে তোর বাপের মুখে ফেবিকল আটকে দিতাম আমি। ড্যাম!
বৃত্তের মুখে নিজের বাবার নামে এসব কথা শুনে মেঘা ফুলে-ফেঁপে ঢোল হয়ে গেলো। আগুন চোখে তেড়ে গেলো বৃত্তের দিকে। বৃত্তের দিকে নিজের তর্জনী উঁচিয়ে বললো,
— বাবার নামে একটা বাজে কথা বলবি তো এখানেই তোর মাথা ফাটিয়ে ফেলবো আমি। তাই নো সাউন্ড, ওকে?
বৃত্ত মেঘার এমন রণমূর্তি ভাবখানা দেখে এক বিন্দুও বিচলিত হলো না। বরং, খুব ধীরে সুস্থে মেঘার আঙ্গুল হাত দিয়ে নিচে নামিয়ে বলে উঠলো,
— একশোবার বলবো। কি করবি তাহলে?
— ভালো হবে না কিন্তু! বাবার নামে একটাও বাজে কথা আমি বরদাস্ত করবো না। বুঝলি?
— তোর হিটলার বাপরে হিটলার বলবো না তো কি বলবো? সন্ন্যাসী?
— বৃত্তের বাচ্চা!
মেঘা রেগে মেগে ধমকে উঠলো বৃত্তকে। বৃত্ত বাঁকা হেসে মেঘাকে রাগানোর জন্যে বললো,
— যেমন বাপ তেমন তার মেয়ে! দুজনের ভিতরেই জিলাপির প্যাচ।
ব্যাস! এটুকুই কথাই মেঘাকে রাগানোর জন্যে যথেষ্ট ছিল। মেঘা তুমুল রাগ নিয়ে বৃত্তের পুরুষালি বাহুতে জোরেসোরে একের পর এক ঘুষি দিতে লাগলো। মেঘার চুড়ুইপাখির মত হাতে বৃত্তের ব্যথা না লাগলেও বৃত্ত চোখ মুখ খিঁচে ব্যথা পাওয়ার ভান ধরলো। হাত দিয়ে মেঘাকে আটকানোর চেষ্টা করে বললো,
— আরে! ব্যথা পাচ্ছি তো। সর! সর বলছি। আর একটা মারবি তো খবর আছে তোর। সর!
মেঘা সরলো না। বরং, হাতের তৃষ্ণা মিটিয়ে তারপরই ক্ষান্ত হলো। অতঃপর, ক্লান্ত শরীরে বিছানায় বসে পড়লো। হাঁপাতে লাগলো অবিরত। হাত ব্যথা হয়ে গেছে পুরো। মেঘা দুবার হাত ঝাড়া দিলো। বৃত্ত মেঘার এমন কাণ্ড দেখে শব্দ করে হেসে ফেললো। বৃত্তের সেই হাসি মেঘার নিভে যাওয়া রাগকে মুহূর্তের মধ্যে আবারও জ্বালিয়ে দিলো। মেঘা রাগ নিয়ে তাকালো বৃত্তের দিকে। বৃত্ত সেসব পাত্তা না দিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
— জান নাই এটুকু। আর আমার সাথে লাগতে আসিস? আজ পর্যন্ত কখনো পেরেছিস আমার সাথে? হুঁ?
এটা সত্য কথা! বৃত্তের কথা, যুক্তি, কাজের সাথে কখনোই মেঘা পেরে উঠে না। বৃত্ত সবসময় মেঘার থেকে তিন কদম এগিয়ে থাকে। তবে, মেঘা সেই সত্য স্বীকার করলো না। মুখ বাঁকিয়ে বললো,
— হুহ, আসছে! তোর মতন চিটিং করলে আমিও তোর থেকে সবসময় এগিয়ে থাকতাম। বুঝেছিস?
বৃত্ত মুচকি হেসে মেঘার পাশে এসে বসলো। বললো,
— হুম,বুঝলাম। বুঝলাম যে, আমরা নিজেদের প্রবলেম মেটানোর বদলে নিজেরাই ঝগড়া করছি। সো লেইম!
মেঘা হেসে ফেললো। আসলেই তো? ওরা কেনো ঝগড়া করছে? ওদের তো এখন প্ল্যান করার কথা ছিল। তবে, মেঘা কি এটা জানে? এই ছোট খাটো ঝগড়াই তাদের বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন? এক মিষ্টি বন্ধুত্বের পরিচয়?

— এখন কি করা যায়, মেঘ?
— হুম, তাইতো! আমি জানি না। তুই ভাব!
— আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না, বাল!
— এই তুই আবার স্ল্যাং ইউজ করছিস? মানা করেছিলাম না আমি?
মেঘা আবারও তেঁতে উঠলো। বৃত্ত মেঘার রাগকে তুচ্ছ করে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে বললো,
— তো? ফ্রেন্ড ছিলি যখন তখন মেনেছি। এখন তুই আমার বউ! তো এখন আমি যা বলব তোর তাই মানতে হবে। ওকে?
‘তুই আমার বউ’ কথাটা শুনে মেঘার মনে প্রশান্তি ছেয়ে গেল। এত কেনো ভালো লাগলো কথাটা? মনে হচ্ছে, বৃত্তের মুখে এই বাক্যটা শোনার জন্যেই তার জন্ম হয়েছে! ইশ!এই তো! এখনো কানে বাজছে সেই কথাটা! কানে মিষ্টি এক ঝঙ্কার তুলে দিয়েছে এই মধুর বাক্য। মেঘা চুপটি মেরে বসে রইলো। অনুভব করতে লাগলো সেই মিষ্টি অনুভূতি!

— ওই, কই হারালি?
বৃত্তের ডাকে মেঘার হুশ ফিরলো। মেঘা নিজেকে ধাতস্থ করে তাকালো বৃত্তের দিকে। বৃত্ত কিছু একটা চিন্তা করে বললো,
— এক কাজ কর, তুই অসুস্থ হয়ে যা।
মেঘা হতবাক হয়ে গেলো। কিছুই বুঝলো না। বোকার মত প্রশ্ন করলো,
— মানে?
— মানে হলো তুই আজকে মিথ্যে মিথ্যে অসুস্থ হয়ে যা। সবচেয়ে ভালো হয় জ্বর হলে। হাউ’জ দ্যাট আইডিয়া?
মেঘা ভাবলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো,
— কিন্তু, হুট করে অসুস্থ হবো কি করে?
বৃত্তের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। বললো,
— জাস্ট ওয়ান সেকেন্ড। আই অ্যাম কামিং।
বৃত্ত রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। মেঘা বোকার মত বসে ভাবতে লাগলো, ‘বৃত্তের প্ল্যানটা কি?’

খানিক পর বৃত্ত রুমে এলো। হাতে একটা পিঁয়াজ। বৃত্ত মেঘার পাশে এসে বসলো। বললো,
— মনে আছে মেঘ? আমি যেদিন স্কুলে যেতে চাইতাম না, সেদিন এই পিয়াজ ব্যাবহার করে জ্বরের অভিনয় করতাম। কেউ সেটা না বুঝলেও তুই ঠিক বুঝে যেতি? আজ ঠিক এই ট্রিকসটাই অ্যাপ্লাই করবো আমরা। সো, রেডি?
মেঘা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো বৃত্তের দিকে। বৃত্তের মাথায় কি চোরা বুদ্ধি! মেঘা মনে মনে বৃত্তের বুদ্ধির তারিফ করে নিলো। সামনা সামনি করলে আবার ভাব বেড়ে যাবে।
____________________________
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ। মেঘার বাবা-মা চলে যাবেন এখন। কিন্তু আশেপাশে মেঘাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না? কোথায় গেলো ও? মেঘার বাবা বৃত্তযে জিজ্ঞেস করলেন,
— বৃত্ত? মেঘা কোথায়?
বৃত্ত নিচু সুরে বললো,
— জ্বি, আমি দেখছি।
বৃত্ত সম্পূর্ণ ঘর খুঁজে প্ল্যানমাফিক নিজের মায়ের ঘরে গেল। মেঘাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে পিছন ফিরে চেচিয়ে বললো,
— আঙ্কেল, মেঘা এখানে।
মেঘার বাবা সেই রুমের দিকে এগিয়ে এলেন। বিছানায় মেঘাজে শুয়ে শুয়ে কাতরাতে দেখে মেঘার বাবা হতভম্ব হয়ে গেলেন। তাড়াহুড়ো করে মেঘার পাশে এসে বসলেন। ব্যাকুল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
— কি হয়েছে তোর?
মেঘা আস্তে করে বলল,
— মনে হচ্ছে, গা পুড়ে যাচ্ছে। সারা শরীরে কি ব্যথা! আমি কি মারা যাচ্ছি বাবা?
মরার কথা শুনে মেঘার বাবার মুখখানা পাংশুটে হয়ে গেলো। তিনি মেঘার কপালে হাত ছুঁলেন। ওরে বাবা! কি জ্বর! মেঘার বাবা অসহায় চোখে মেঘার দিকে তাকালেন। বললেন,
— হঠাৎ করে জ্বর এলো কেমন করে? একটু আগে তো ভালোই ছিলি।
মেঘা উত্তর করলো না। বিছানায় এপাশ হতে ওপাশ ফিরে কাতরাতে লাগলো। অস্ফুটসুরে জ্বরের প্রলাপ বকতে লাগলো।

#চলবে।