মেঘবৃত্ত পর্ব-৫+৬

0
508

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

— ” খাচ্ছিস না কেনো? ”
বৃত্তের ধমকানোতে মেঘা একটু নড়েচড়ে বসলো। রুটি ছিঁড়ে তাতে সবজি পুড়ে মুখে দিলো। খাবারটা মুখে দিতেই পেটের ভিতর গুড়ুম গুড়ুম শুরু হয়ে গেলো। পেট গুলিয়ে বমি আসছে। কি একটা অবস্থা! প্রেগন্যান্সির মাত্র এক মাস দু সপ্তাহ হলো। এতেই এত বমি! বাকি দিন কি হবে, সেটা ভেবেই মেঘা ভয়ে ক্ষয়। মেঘা নিজেকে সামলালো। আস্তে আস্তে খেতে খেতে বৃত্তকে প্রশ্ন করলো,
— ” তুই কি যেনো বলতে চাইছিলি না? ”
বৃত্ত ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললো। কি থেকে কি শুরু করবে, ভেবে পাচ্ছে না ও। মায়ের বলা কথাটা মেঘা কেমন করে নিবে সেটাও বিরাট চিন্তার বিষয়। বৃত্ত হাফ ছাড়লো। যায় হোক, বলতেই ত হবে। কিছু করার নেই। বৃত্ত মিহিয়ে যাওয়া সুরে বললো,
— ” মা বিয়েটা মানছেন না। ”
মেঘা থমকালো। হাতের খাবার মুখ অব্দি নিয়ে আবারও প্লেটে রেখে দিলো। ভয়ার্ত চোখে বৃত্তের দিকে চেয়ে বললো,
— ” এখন? ”
বৃত্ত একহাতে কপাল চুলকালো। অস্থির হাতে ঘন চুলে হাত চালিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। মেঘার ভয়ার্ত চোখে চোখ রেখে বললো,
— ” এখন নিজেদেরই বিয়ে করতে হবে। কাজী অফিসে সাক্ষী এনে। ”
মেঘার খুব দুঃখ দুঃখ লাগলো। বৃত্তের মায়ের মানা করার কারণ তার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। মেঘাকে তিনি পছন্দ করেন, সেটা মেঘার অজানা নয়। তাহলে, বাঁধাটা কোথায়? মেঘা ভেবে পেল না। মেঘা বললো,
— ” এভাবে কারো মত না নিয়ে, বিয়ে করাটা কি ঠিক হবে? তারা যদি পরে মেনে না নেন? তখন? ”
— ” তখনের টা তখন দেখা যাবে। এখন যেটা করা উচিৎ সেটাই করবো আমরা। বুঝেছিস? ”
মেঘা মানা করলো না। মেঘার হাতে যে আর কোনো উপায় নেই। অবিবাহিত মেয়ের পেটে বাচ্চা! বিষয়টা যে সমাজে চরম নিন্দনীয়! তবে, মেঘার ভাগ্য ভালো। অন্যান্য বাজে ছেলের মত বৃত্ত এই সময়ে মেঘার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় নি। বরং, পাশে থেকেছে। কখনোই ভরসার হাত ধরে বলেনি, ‘ আমি আছি তো। ভয় কিসের? ‘ কিন্তু,, দুর থেকে তার জন্যে লড়াই করে গেছে। এসব নিতান্তই বন্ধুত্বের খাতিরে। আর সেটা মেঘা জানে। আর জানে বলেই তার এত কষ্ট। সে তো চেয়েছিল, বৃত্ত তার পাশে থাকবে। তবে, বন্ধু হিসেবে নয়। স্বামী হিসেবে। কিন্তু, সে কি আদৌ সম্ভব?
মেঘার হঠাৎ করেই মনে হলো, বৃত্ত তো একবারও তার সন্তানের বয়স জানতে চায়নি। জানতে চায়নি, সন্তানটা কেমন আছে? পেটের মধ্যে তার কষ্ট হচ্ছে কিনা? সন্তানটা সুস্থ আছে কিনা? না, কিচ্ছু জানতে চায়নি সে। সে শুধুই মেঘার প্রতি নিজের দায়িত্ববোধ পালন করছে। এটুকুই! মেঘা হঠাৎই জিজ্ঞেস করলো,
— ” বৃত্ত। একটা কথা জিজ্ঞেস করি? ”
বৃত্ত মনোযোগ দিয়ে মোবাইলে হাত চালিয়ে উত্তর করলো,
— ” হুম, বল। ”
মেঘা লালারস দিয়ে গলা ভেজালো। কম্পমান কণ্ঠ নিয়ে বললো,
— ” তোর কখনোই জানতে ইচ্ছে হয়নি, আমাদের বাচ্চাটার বয়স কত হলো? ”
বৃত্ত থমকে গেলো। মোবাইলের অর্ধেক মেসেজ টাইপ করেই তাকালো মেঘার দিকে। কিছু একটা চিন্তা করে বললো,
— ” তোর পেট দেখে যা মনে হলো, এক মাসের হবে বোধহয়। কেনো, বলতো? ”
মেঘা হতাশ হলো। বৃত্তের মধ্যে বাবা হওয়ার কোনো আনন্দই নেই। তার কাছে, সন্তান হওয়াটা যেনো নিতান্তই স্বাভাবিক। কিন্তু, মেঘা তো খুশি। একটা ছোট্ট বাচ্চা তার পেটে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। মেঘার কাছে এর চেয়ে সুন্দর অনুভূতি দুটো নেই। হোক না বাচ্চাটা অবৈধ। তবুও, তারই তো বাচ্চা, তার সন্তান। যে তাকে আদো আদো বুলিতে ‘ মা ‘ বলে ডাকবে। পাতলা ঠোঁটে মেঘার গালে চুমু খেয়ে বলবে, ‘ মাম্মাম, তেমন আচো। ‘ বাচ্চার কথা ভেবেই মেঘার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। মন চাচ্ছে, বাচ্চাটাকে একবার যদি ছুঁয়ে দেখা যেত। শুধু একবার?

— ” মেঘ, চল। ”
বৃত্ত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মেঘা মাথা উঁচু করে বৃত্তের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
— ” কোথায় যাবো? ”
বৃত্ত থমথমে কণ্ঠে উত্তর করলো,
–” কাজী অফিসে। ”
__________________________________
কাজী অফিসে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মেঘা আর বৃত্ত। তাদের সামনে তাদেরই চারজন বন্ধু। বৃত্ত সব ফরমালিটিস শেষ করে মেঘার পাশে এসে দাঁড়ালো। মেঘাকে জিজ্ঞেস করলো,
— ” চিন্তা হচ্ছে? ”
মেঘা চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টানলো। প্রচন্ড চিন্তা হচ্ছে তার। নিজের পরিবারকে ধোঁকা দিতে তার মনটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে মায়ের আদুরে মুখ ভেসে উঠছে। বাবার রাগের আড়ালে মায়া ভাসছে মনের মাঝে। বৃত্তের মায়ের চিন্তাটাও মনের ভিতরটা কুটকুট করে খেয়ে ফেলছে। সবমিলিয়ে মেঘার অবস্থা করুন। মেঘা মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো। বৃত্তের উদ্দেশ্যে বললো,
— ” বিয়ে কখন হবে? ”
বৃত্ত আশপাশে তাকিয়ে উত্তর করলো,
— ” মিনিট দশেক পর। ”
— ” ওহ। ”
মেঘা চুপ হয়ে গেলো।
অতঃপর, সময় এলো রেজিস্ট্রি পেপারে সাক্ষর দেওয়ার। বৃত্ত পেপারে স্বাক্ষর করে কলমটা মেঘার দিকে এগিয়ে দিলো। মেঘা কাঁপা হাতে কলম নিলো। পেপারটা হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে, চোখ বন্ধ করে ফটাফট সাইন করে দিল।সাক্ষীরা সবাই করতালি দিয়ে একসঙ্গে বলে উঠলো,’কনগ্রাচুলেশন ‘।
মালা বদল হলো দুজনের। সব কাজ শেষ করে কাজী অফিস ছেড়ে বের হলো ওরা। বৃত্তের বন্ধুরা বৃত্তকে নিয়ে টিটকারী করলো,
— ” ভাই, শেষমেশ নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডরেই বিয়া করলা? ”
বৃত্ত হাসলো। বললো,
— ” বেস্ট ফ্রেন্ড ত কি হইলো? মেয়ে তো! একটা মেয়ে হইলেই হয়। ”
সিদ্ধার্থ বললো,
— ” বহুত ত বললা, সি ইজ জাস্ট ম্যাই ফ্রেন্ড। নাথিং এলস। এই তোমার নাথিং এলসের নমুনা? ”
বৃত্ত চোরাচোখে মেঘার দিকে একবার তাকালো। বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বললো,
— ” সবই বিধি কা খেল, মামা। আমি তো এক আম জনতা।”
সবাই হেসে উঠলো বৃত্তের কথায়। মেঘা এসব টিটকারীর মধ্যে নেই। ও তো একপাশে চুপটি হয়ে বসে আছে। মুখে রাজ্যের চিন্তা। সামনে কি হবে, তা ভেবেই ভয়ে তার মুখের রক্ত শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃত্ত সবাইকে সামলে মেঘার পাশে এসে দাঁড়ালো। মেঘার চিন্তিত মুখ দেখে সে খুব একটা অবাক হলো না। এটাই স্বাভাবিক। শুধু মেঘা চিন্তা করছে, তা নয়। সে নিজেও বিয়ে নিয়ে চিন্তিত। বৃত্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাক দিলো,
— ” মেঘ? ”
মেঘা তাকালো বৃত্তের দিকে। বৃত্ত বললো,
— ” এখন যাওয়া যাক। ”
— ” কোথায়? ”
— ” আমার বাড়িতে। ”
মেঘার মুখখানা আবারও পাংশুটে হয়ে গেলো।

#চলবে

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

— ” এ কি করেছিস বৃত্ত? ”
বৃত্তের মায়ের কণ্ঠে আহাজারি। দরজার সামনে নত মুখে দাঁড়িয়ে আছে বৃত্ত আর তার স্ত্রী মেঘা। বৃত্তের মা বেসামাল হলেন। চোখে জল চিকচিক করে উঠলো। বৃত্ত তার কথার দাম দেয়নি। শেষমেষ এই মেয়েকেই বিয়ে করে নিয়ে এলো? একটি মাত্র ছেলের কাছে এমন আচরন তিনি মোটেও আশা করেন নি। বৃত্তের মা মাথায় হাত দিয়ে সোফায় হাতল ধরলেন। মাথা ঘুরছে তার। বৃত্ত এগিয়ে এলো মায়ের দিকে। মায়ের অগোছালো চেহারা দেখে আগলে নিতে চাইলো তাকে। তবে, বৃত্তের মা দূরে সরে গেলেন। তাচ্ছিল্য করে বললেন,
— ” দূরে থাক আমার থেকে। ছুঁবি না আমায়। ”
বৃত্ত অসহায় চোখে চেয়ে রইলো মায়ের দিকে। বৃত্তের মা সোফায় বসে পড়লেন। মাথায় হাত ঠেকিয়ে নত মুখে বসে রইলেন। বৃত্ত মায়ের এমন ভেঙে পড়া দেখে কষ্ট পেলো। মায়ের পায়ের কাছে কাছে হাঁটু গেরে বসে মায়ের দুহাত নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করলো। মায়ের দিকে চেয়ে মায়া ভরা গলায় ডাক দিলো,
— ” মা? ”
বৃত্তের মা জবাব দিলেন। অবশ্য, বৃত্ত জবাবের আশায় বসে রইলো না। মায়ের দিকে চেয়ে বলতে লাগলো,
— ” মা, আমি আমার খুশির জন্যে মেঘাকে বিয়ে করেছি। তুমি কি আমার খুশিতে খুশি নও? বলো মা? ”
বৃত্তের মা আড়চোখে পাশে নত মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘার দিকে তাকালেন। মেঘার চোখে মুখে স্পষ্ট অপরাধবোধ। মেঘার মুখের এই অসহায়ত্ব দেখে বৃত্তের মায়ের বড় রাগ হলো। খুবই হঠাৎ করেই তিনি ভাবলেন, ‘মেঘা তার ভোলাভালা ছেলেকে ফাঁসিয়েছে।’ তিনি জানেন, এই ভাবনা নিতান্তই যুক্তিহীন, অযথা। তবুও তুমি ভাবলেন। ভাবনার জগতে বিচরণ করেই, ছেলের দোষ আড়াল করলেন। এতেই তিনি যেনো বড্ড শান্তি পেলেন। ভাবনার জগতে জিতে যাওয়ায় মেঘার প্রতি জন্মালো ক্ষোভ। সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি হুংকার ছাড়লেন,
— ” এই মেয়ে খুব ধুরন্ধাজ, বৃত্ত। ওর মত মেয়ে তোর সাথে মানায় না। একদমই মানায় না। এ তুই কি করে ফেলেছিস। ”
বৃত্তের মায়ের কণ্ঠে কষ্টের আভাস। বৃত্ত অবাক চোখে মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। মায়ের এমন বিরূপ রূপ দেখে বৃত্ত রাগ হলো খুব। বরাবরই বৃত্তের রাগ চূড়ান্ত। তবে, বৃত্ত রাগ সামলে উঠে গেলো। শান্ত সুরে বললো,
— ” মা, আমি যা করেছি ভেবে চিন্তেই করেছি।আমি এখন বড় হয়েছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত বোধশক্তি আমার হয়েছে। মেঘা খুব ভালো একটা মেয়ে। আমার বউ হিসেবে এই গুনটাই যথেষ্ট। তুমি কেনো এমন করছো, মা? ”
বৃত্তের মা বিস্ময় নিয়ে ছেলের দিকে চেয়ে রইলেন। বৃত্তের থেকে এমন কথা তিনি কল্পনায় আশা করেন নি। বৃত্তের এমন কথায় তিনি বড়ই অদ্ভুতভাবে মেঘার প্রতি রেগে যেতে লাগলেন। ভয়ঙ্কর ক্ষোভ মাখা চোখে তিনি মেঘার দিকে তাকালেন। মেঘা সেই চাওনিতে পিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বৃত্তের মায়ের এমন দাজ্জাল শাশুরি রূপ দেখে মেঘা বিস্মিত, হতভম্ব।
মেঘার ক্লান্ত মুখশ্রীর দিকে চেয়ে বৃত্তের মা খানিক দমলেন। যায় হোক, তিনি মেঘাকে পছন্দ করেন। সেটা তো তিনি অস্বীকার করতে পারবেন না। মুখ দেখেই মনে হচ্ছে, মেয়েটার উপর দিয়ে আজকাল বিরাট ধকল যাচ্ছে। মুখটা কেমন যেনো শুকনো শুকনো লাগছে। বৃত্তের মায়ের রাগ একটু কমলো। তবে, একদম নিঃশেষ হলো না। ভিতরে ভিতরে চাপা ক্ষোভ নিয়ে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালেন। পড়ে যাওয়া শাড়ীর আঁচল মাথায় তুলে বৃত্তের দিকে চেয়ে বললেন,
— ” বিয়ে যখন করেছ, তখন বউ নিয়ে রুমে যাও। বিকেল হলে নিজের বাবার সাথে নিজেই এ নিয়ে কথা বলো। বিয়ের ব্যাপারে মেঘার পরিবারও নিশ্চয়ই জানে না। তাদেরকেও জানাতে হবে। কিন্তু, খবরদার এসবের মাঝখানে আমাকে টানবে না। বলে দিলাম। ”
বৃত্তের মা হনহনিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন।
_________________________
মেঘা বিছানায় চুপটি করে বসে আছে। বৃত্ত গোসল সেরে মেঘার পাশে এসে বসলো। মেঘার এমন দেবদাস হয়ে বসে থাকা দেখে বৃত্ত জিজ্ঞেস করলো,
— ” তোর আবার কি হলো? ”
মেঘা চিন্তা ফেলে আগুন চোখে বৃত্তের দিকে তাকালো। দাঁত খিঁচিয়ে বললো,
— ” আজকাল যা হচ্ছে তা দেখে মজায় আমি গড়াগড়ি খাচ্ছি। ভাবছি এত মজা একা পেয়ে লাভ আছে? তাই, একটা মজার বাজার খুলে বসবো। । ফাওল একটা। সর সামনে থেকে। ”

মেঘার এমন চেঁতে যাওয়া দেখে বৃত্ত খুব একটা অবাক হলো না। আর অবাক হবেই বা কেনো? এটা তো খুব স্বাভাবিক। মেঘার হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাওয়া সে এতকাল ধরেই সহ্য করে আসছে। বৃত্ত প্রস্থ ভাবে বিছানায় শুয়ে পড়লো। যার দরুন বৃত্তের দুনো পা মাটির দিকে ঝুলে আছে। বৃত্ত দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে লম্বা একটা হাই তুললো। অতঃপর মেঘার দিকে চেয়ে ভাবুক ভঙ্গিতে বললো,
— ” কথাটা কিন্তু মন্দ বলিস নি! একটা মজার বাজার খুলা যেতেই পারে। আমরা সেখানে মজা বিক্রি করবো। আজকাল মানুষের জিন্দেগি থেকে মজা জিনিসটাই উঠে গেছে। আমরা সেই মানুষদের কাছে মজা বিক্রি করে কোটিপতি হয়ে যাবো। বাহ! কোটিপতি হওয়ার কি দারুন আইডিয়া! জিও মেঘ, জিও! ”

মেঘার রাগ এবার তুঙ্গে উঠলো। সেই রাগ ধীরে ধীরে আগুনে পরিণত হলো। মেঘা আশপাশ খুঁজে পাশে পেলো দুটো বালিশ। মেঘা আর দেরি করলো না। বরং, একটা বালিশ হাতে তুলে বালিশ দিয়েই বৃত্তের শরীরে একের পর এক আঘাত করতে লাগলো। বকতে লাগলো,
— ” কুত্তা, শয়তান। তুই আমার সকল শান্তি কেড়ে নিয়ে এখন মজা নিচ্ছিস। তোরে তো আজকে মেরেই ফেলবো। কুত্তা! ”
বৃত্ত হাসতে হাসতে নিজেকে আঘাত থেকে বাঁচাতে লাগলো। তবে, মেঘাযে না দমতে দেখে সে নিজেও একটা বালিশ হাতে তুলে নিলো। নিজেও মেঘার বিপরীতে পাল্টা আঘাত করতে লাগলো।
বৃত্তের মা রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। বৃত্তের ঘর থেকে চিৎকার শুনে তিনি হাতের কাজ ফেলে ছুঁটে গেলেন সে রুমের দিকে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছেলে-বউয়ের এমন খুনসুটি দেখে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। হঠাৎ করেই বুকটা ভরে গেলো তার। দুচোখ জুড়িয়ে চেয়ে রইলেন তাদের দিকে। নিজের অজান্তেই বুক চিঁড়ে দোয়া এলো,’সুখী হ তোরা!” কিন্তু, পরক্ষনেই বৃত্তের আচরন মনে করেই তার মুখটা থমথমে হয়ে গেলো। যায় হোক, বৃত্তকে তিনি এত তাড়াতাড়ি ক্ষমা করছেন না। মোটেও না।
বৃত্তের মা আরো একবার রুমের দিকে তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন।
মেঘা আর বৃত্ত একসময় ক্লান্ত হলো। দুজনেই বালিশ একপাশে ছুঁড়ে গেলে বিছানায় শটান হয়ে শুয়ে পড়ল। বৃত্তের বাহুতে মেঘার মাথা। দুজনেই সিলিংয়ের দিকে চেয়ে আছে। হাপাচ্ছে তারা। বৃত্ত একসময় ফিক করে হেসে বললো,
— ” কতদিন পর এমন করে একসাথে হাসলাম দুজন। বল?”
মেঘা উত্তর দিলো না। আনমনে সিলিংয়ের দিকে চেয়ে রইল। কয়েক মিনিটের জন্যে সব ভুলে গেলেও আবারও একে একে মনে পড়লো। মাথায় ঘুরতে লাগলো, রাজ্যের চিন্তা। সমাজের বিষাক্ত কথার তীর ফুটতে লাগলো মনের আনাচে কানাচে। তাদের এই সম্পর্কের পরিণতি কী? ভেবে পেল না মেঘা।

#চলবে