মেঘের ওপারে পর্ব-১১

0
196

#মেঘের_ওপারে
#পর্ব:১১
#Devja_Ni

নিজের রুমে চিন্তিত হয়ে বসে আছে আয়ান।ভাবছে,অদ্রিকে মিথ্যে বলা কি ঠিক হলো তার!হয়ত হয়নি। কিন্তু তাছাড়া আর কিই বা বলত সে? আমি কক্সবাজার যাচ্ছি শ্রেয়ার সাথে তুই সাবধানে থাকিস,এটা বলত!হয়ত বলতে পারত। অদ্রি নিরবে শুনতো। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তো কষ্ট পেতো।এত বড় বাড়িতে একা কিভাবে থাকবে অদ্রি?

বাস্তবতা হলো আয়ানের নিজেরও কোথাও থেকে ঘুরে আসতে ইচ্ছে হচ্ছিল বেশ কয়েকদিন ধরে।শ্রেয়া আর সে একা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে নয়।

অদ্রিকে নিয়েই সমস্যাটা।তার আম্মু থাকলে নাহয় তার কাছে অদ্রিকে রেখে যেতে পারতো। কিন্তু তাতো সম্ভব না।অদ্রি গেলেও কোনো সমস্যা ছিল না। ভালোই লাগত তার। খুশি হতো। তাছাড়া অদ্রিও অনেকদিন কোথাও যায় না।

আয়ানের ফোনটা বেজে উঠে। তাকিয়ে দেখে তার মা রিহা রায়হান ফোন করেছে।রিহা রায়হানের ফোন দেখে মনে মনে একটা উপায় বের করে ফেলেছে সে।আয়ান ফোনটা রিসিভ করে।

— হ্যালো,আম্মু!

— কেমন আছিস? অদ্রি কেমন আছে?

— আছে ভালো আছে। আম্মু একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে পারবা?

— কেন? চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে রিহা রায়হান।

— আমি শ্রেয়ার সাথে একটু বাইরে যাব।

— কোথায়?

— শ্রেয়া বলছিল কক্সবাজার যাবে। অফিসের কাজের চাপ কম আছে তাই রাজি হয়ে গেলাম।

রিহা রায়হান খানিকটা রেগে যায়।বলে, এটা কক্সবাজার ঘুরার সময়! এই মুহূর্তে তোর অদ্রিকে,,,,,

— আমি জানি আম্মু।তাই তোমাকে বলছি তাড়াতাড়ি চলে আসো।

— আচ্ছা দেখি!তবে এক দুইদিন দেরি হবে।

— সমস্যা নাই। আচ্ছা আমি রাখি।

— হুম।

আয়ান ফোন কেটে স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়ে। অদ্রির একটা ব্যবস্থা করতে পারলো।এবার সে নিশ্চিন্ত।

☆☆☆

অদ্রি চুপচাপ বসে আছে রুমে। আজকাল নিজেকে তার বড্ড একা লাগে। পড়াশোনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে চায় সে। কিন্তু পারে না। কিভাবে পারবে সে? মাথায় এখন মাঝে মাঝে ব্যথা করে উঠে।মাথা ঘুরে।সময় যে ঘনিয়ে আসছে।চলে যাবে সবাইকে ছেড়ে।অনেক দূরে।যেখান থেকে কখনো ফিরে আসা যায় না।

ইসস,,,যদি শ্রেয়ানকে তার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারত! আফসোস,,,। পরক্ষনেই অদ্রি ভাবল শ্রেয়ান কেন তার সঙ্গে যাবে?শ্রেয়ানের তো সবাই আছে। শুধু তার কেউ নেই।কেউ আপনজন হতে চাইলেই তার ক্ষতি হয়।যেমনটা আয়ানের হয়েছে।

আর শ্রেয়ানের তো সবাই আছে।ও না থাকলে সবাই কষ্ট পাবে। কিন্তু অদ্রি না থাকলে কারো কষ্ট হবে না।হয়ত হবে! কিন্তু কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। অবশ্য সে চায়ও না তার জন্য কেউ কষ্ট পাক।

অদ্রি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বারান্দায় যাবে। ফোনটা নিয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়।

অদ্রির হাতে থাকা বেজে উঠে। অদ্রি ভ্রু কুঁচকে তাকায় ফোনের দিকে। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।শ্রেয়ান ফোন করেছে।মনে মনে বলে,বলেছিলাম না আমি ফোন করব না আর, তুমিই আমাকে ফোন করবে!শেষ পর্যন্ত করেই নিলে।

অদ্রি ফোন রিসিভ করবে নাকি কেটে দিবে ভেবে পাচ্ছে না।ফোন বাজতে বাজতে একসময় অফ হয়ে যায় নিজে থেকে।

অদ্রি ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে না ধরে ভুল করেছে।ধরলে ভালো হতো।

অদ্রির ভাবনার মাঝেই ফোনটা আবার বেজে উঠে। অদ্রি রিসিভ করে।বলে,এত রাতে কেন ফোন করেছো?

— তোর অসুবিধা হয়েছে।

— হুম।

শ্রেয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে, অদ্রি সত্যি করে বলত তোর কি হয়েছে?তোকে দেখে মনে হয় তুই ঠিক নেই।

অদ্রি তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।বলে,সেই,,,, ভুলে গেছো কিন্তু টান কমেনি।তাই না?

— জানি না।

অদ্রি রেগে যায়।রাগার রেশ ধরে বলে, জানি না মানে কি, হুম?

শ্রেয়ানও এবার রেগে যায়। অদ্রির প্রত্যুত্তরে বলে, কিছু বলি না বলে বেশি বাড়াবাড়ি করা শুরু করেছিস।

আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলার সাহস হয় কি করে তোর?আমি তোর বড় না ছোট?

অদ্রি মিনমিন করে বলে, যত্তসব,,,,

— কি বললি?রাগী গলায় বলে শ্রেয়ান।

— কিছু না।ফোন কেন করছো?দয়া দেখানোর জন্য?লাগবে না।

— এই তুই কি ঘুমের মধ্যে উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখেছিস নাকি। আবোল তাবোল কথা বলছিস যে!

— তুমি কি ভাবো আমি কিছু বুঝি না?আমি সব বুঝি।আর তোমার না আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না,তাহলে ফোন কেন করেছো? আমি আন্টিকে সব বলে দিব। আন্টিকে ফোন দাও।

শ্রেয়ান বলতে গিয়েও থেমে গেল। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
অদ্রি আবার জিজ্ঞেস করে, দাও!

শ্রেয়ান বলে,মা,,,,,,মাহ,,,তো আকাশের তারা হয়ে গেছে কত আগে!

অদ্রি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল।অনেকদিন পর শ্রেয়ানের মায়ের সাথে কথা বলবে বলে। ছোটবেলায় অনেক ভালোবাসত তাকে। কিন্তু শ্রেয়ানের এই ধরনের উত্তর সে আশা করেনি।মনটা খারাপ হয়ে যায়। মায়ের অনুপস্থিতির যন্ত্রণা বুঝে সে। অনুভব করেছে এই কষ্ট।

মা না থাকার কষ্ট সবার একই।তাই শ্রেয়ানও একই। অদ্রির খারাপ লাগে। মায়ের কথাটা না তুললেই পারতো। অবশ্য তার কি দোষ!সে তো জানতো না শ্রেয়ানের মা নেই।

অদ্রি কথা এগোতে চায়। কিন্তু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।শ্রেয়ানও কিছু বলছে না। চুপ করে আছে।
অদ্রি বলে,রাখি!

শ্রেয়ান এবারও কিছু বলল না।
অদ্রি ফোন কেটে দেয়।
রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

☆☆☆

সোফায় বসে টিভি দেখছে অদ্রি।হাতে চিপসের প্যাকেট।এর আগে আরও তিনটা খেয়েছে।এটা চতুর্থ নাম্বার চিপস।আয়ান সকালে বেরিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় অদ্রিকে অনেকগুলো চিপস চকলেট কিনে দিয়ে গেছে। অদ্রির প্রিয় খাবার।

অদ্রির প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগে। কিন্তু এই মুহূর্তে সে এই পরিবেশটা এনজয় করছে।ইসস,,,কি সুন্দর পরিবেশ!এখন একটানা টিভি দেখলেও কেউ কিছু বলবে না।তার চিপস খাওয়াতেও কেউ বাধা দিবে না।আয়ান বা তার বড় আম্মু ঘরে থাকলে এতগুলো চিপস একসাথে খাওয়ার জন্য নিশ্চিত বকা দিত।

অদ্রির বেশ মজা লাগছে।এই প্যাকেট চিপস খাওয়াও শেষ।খালি প্যাকেট মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দেয়।কেউ আসার আগেই সরিয়ে ফেলবে।এখন ঘুমাবে।আয়ান অবশ্য কড়া নির্দেশ দিয়ে গেছে পড়তে বসতে। কিন্তু এখন পড়বে না। প্রচুর ঘুম আসছে তার। অদ্রি সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

প্রায় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঘুম ভাঙ্গে অদ্রির।ঘুম থেকে উঠেই ভয় পেয়ে যায় সে।সারা ঘর অন্ধকার।জানালা ভেদ করে আসা আলোয় অন্ধকারটা যেন স্পষ্ট।
এই মুহূর্তে অদ্রির গিয়ে লাইট অন করা অসম্ভব। অদ্রি একপ্রকার ভয়ে জোড়সোড় হয়ে যায়।
কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকে,আয়ান ভাইয়া!লাইটটা অন কর!আমার ভয় লাগছে।

কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ আসছে না। অদ্রি আবার ডাকতে গিয়েও থেমে যায়।উফ,,, ভুলেই গিয়েছিল বাসায় কেউ নেই। অদ্রি ভেবে পাচ্ছে না কি করবে। এদিকে ভয়ও লাগছে খুব। সাথে মাথা ব্যথাও আছে।

অদ্রি উঠে দাঁড়ায়। সামনে দিকে এগোতে থাকে। হঠাৎ নিজের খেয়ে ফেলে রাখা চিপসের প্যাকেটে পা পড়তেই কড়মড়ে আওয়াজে অদ্রি চিৎকার করে উঠে। পিছিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।

ফোনটা বেজে উঠে। প্রথমে শিউড়ে উঠলেও পরবর্তীতে যেন খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়।ফোন তুলে নেয়।আয়ান ফোন করেছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অদ্রি কেটে দেয়। ফোনের ফ্লাসলাইট অন‌ করে লাইটটা তাড়াতাড়ি জ্বালায়।

কিন্তু মাথা ব্যথা তীব্র বেড়ে গেছে। সাথে মাথাও ঘুরছে তার। নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না।ধপ করে মেঝেতে পড়ে যায়।

চলবে,