মেঘের ওপারে পর্ব-১২

0
191

#মেঘের_ওপারে
#পর্ব:১২
#DevjaNi

ধীরে ধীরে চোখ খুলে অদ্রি। সকালের তীব্র আলো ঘরটাকে আলোকিত করে তুলেছে। অদ্রির মাথা প্রচন্ড ঝিমঝিম করছে। জানালার দিকে চোখ যেতেই আঁতকে উঠে সে।একি!জানালা পুরো ভাঙ্গা।ঘরে কি তবে ভুত এলো!
অদ্রি একি চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়। অদ্রি ভয়ে কান্না করে দেয়।সে নিজের রুমে আছে। তাও নিজের বিছানায়। কিন্তু কে আনলো তাকে এখানে!

— উঠে গেছিস।
পেছন থেকে কারো গম্ভীর গলার আওয়াজ শুনে অদ্রি ভয় পেয়ে যায়। পেছনে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।
আবার শব্দ এলো, কি হলো কথা বলতে পারিস না?
অদ্রি ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকাতেই চিৎকার করে উঠে।
— আহ্,,,,,,,,,,, ভূত!!

— চুপ! আমাকে তোর ভূত মনে হয়?

ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যায় অদ্রি।
অদ্রি চুপ করে আছে আর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।একি!শ্রেয়ান। কিন্তু এখানে এলো কি করে?
শ্রেয়ান এসে তার পাশে বসে। ছোট ছোট চোখ করে বলে,আমি ভূত?

অদ্রি এখনো তাকিয়ে আছে।
হাত বাড়িয়ে শ্রেয়ানের কপালে হাত ছোঁয়ায়।একি স্পর্শ করা যাচ্ছে!তার মানে স্বপ্ন নয়,,, সত্যি। কিন্তু শ্রেয়ান এখানে এলো কি করে?

— তোর ফোন দেখ।

অদ্রি ফোন নেয়। কায়েসের দশটা মিসড কল। কিন্তু কায়েসের কলের সাথে শ্রেয়ানের কি সম্পর্ক? অদ্রি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় শ্রেয়ানের দিকে।

শ্রেয়ান বলে, কায়েস তোকে ফোনে পাচ্ছিল না।বাধ্য হয়ে আমাকে জানায়। আমি তোর বাসা চিনি তাই চলে এলাম।

অদ্রি প্রশ্ন করে,কিভাবে?

— জানালা দিয়ে।

— কেন? ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে অদ্রি।

— তুই আমার জন্য দরজা খুলে রেখেছিলি যে তাই।

অদ্রি মুখ ভেংচি কাটে।

শ্রেয়ান আবার বলে,চল।

— কোথায়?

— ডাক্তারের কাছে।

অদ্রি ডাক্তারের কথা শুনে চুপসে যায়। কিছুতেই যাবে না ডাক্তারের কাছে। অসম্ভব!

রাগি গলায় বলে,আপনি আসছেন যখন এবার চলে যান।আমার কারো দয়া চাই না।

শ্রেয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে,তোর মনে হয় আমি তোকে দয়া করছি?

— হ্যাঁ।আমি আরও ঘুমাবো চলে যাও।প্লিজ!

— বেশি বড় বড় কথা শিখেছিস।

শ্রেয়ান আরও কথা বলতে যায়। কিন্তু ফোনটা বেজে উঠে।

শ্রেয়া ফোন করেছে।শ্রেয়ান অদ্রির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। ফোন রিসিভ করে বাইরে চলে যায়।
কি কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে অদ্রি জানে না।জানতেও চায় না। কিন্তু শ্রেয়ানের চিৎকার চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে। অদ্রি বুঝতে পারছে এই চেঁচামেচির কারণ অদ্রি নিজে।

শ্রেয়ান ফোন কেটে রুমে আসে। অদ্রি চুপ করে বসে আছে। অদ্রির কাছে গিয়ে বসে। অসহায় মুখ করে বলে,চল না অদ্রি!

শ্রেয়ানের চোখ পানিতে চিকচিক করছে।
অদ্রি চোখ ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু পারছে না। শুধু বলে, তুমি চলে যাও।

— প্লিজ হসপিটালে চল!

— যাব না তোমার সাথে।

— অন্য কেউ আসলে যাবি!

— হুম। কিন্তু তোমার সাথে না!

শ্রেয়ান আঘাত পায়।বলে, ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।আয়ান আসছে। চিন্তা করিস না।

শ্রেয়ান উঠে দাঁড়ায়।চলে যাবে। অদ্রি যখন চায় না তখন এখানে থেকে অদ্রিকে বিরক্ত করবে না।তবে পেছন ঘুরতেই হাতে টান পরে। পেছনে তাকিয়ে দেখে অদ্রি হাত টান দিয়ে ধরেছে। অদ্রি করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।শ্রেয়ান বলে, কিছু বলবি?

অদ্রি আমতা আমতা করে বলে, যা বলেছি তা ফিরিয়ে নিলাম। হসপিটালে যাব না। কিন্তু আর কিছুক্ষণ থাকো, প্লিজ!

শ্রেয়ান মলিন হাসে।বলে, কেন?

— কেন জানি ভয় লাগছে।মনে হয় আর কোনো দিন হয়ত দেখা হবে না আমাদের।

শ্রেয়ান রেগে যায়। অদ্রির চুল টেনে ধরে।বলে,বেশি পাকা পাকা কথা শিখেছিস,তাই না?

— তা বলছি না।বলছি যে,,,

— কষিয়ে চড় মাড়বো।বেশি কথা বলিস আজকাল।

— থাকবে?

শ্রেয়ান বোঝে অদ্রি কথা ঘোরাতে চাইছে। ভালোই হলো!

শ্রেয়ান বলে,নাহ্!একটু কাজ আছে যেতে হবে।
— আমি কিন্তু এখনো তোমার উপর রাগ করে আছি। অভিমানী কন্ঠে বলে অদ্রি।

শ্রেয়ান হেসে বলে, জানি।তার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি।

— মানে?

— তোর মাথায় ঢুকবে না।হাত ছাড়।

শ্রেয়ানের কথায় অদ্রি আরও শক্ত করে ধরে হাত।ছাড়বে না এই হাত।আজ ভীষণ ভয় লাগছে তার। কেন জানে না সে।আর জানতেও চায় না। শুধু জানে শ্রেয়ানের হাত ছাড়বে না।

শ্রেয়ান অদ্রির অবস্থা দেখে হাসে।জোর করে ছাড়িয়ে নেয় হাত।চলে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বাড়ায়।তবে মনে মনে সেও কষ্ট পায়। এভাবে অদ্রিকে রেখে আসার জন্য।

শ্রেয়ান চোখের আড়াল হতেই অদ্রির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।মাথা হাত দিয়ে চেপে ধরে ছটফট করতে থাকে। প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে মাথায়।যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে।
ব্যথার চোটে ধীরে ধীরে অদ্রির দেহ নিস্তেজ হয়ে আসে। বিছানার উপর পড়ে যায় অদ্রির নিস্তেজ হয়ে যাওয়া শরীর।

☆☆☆

চোখের উপর কেউ পাথর রেখে দিয়েছে অদ্রির।চোখ খুলতে পারছে না। তবুও কষ্টে চোখ খুলে। তাকিয়ে চারপাশটা বোঝার চেষ্টা করে।

হসপিটালে আছে সে। কিন্তু এখানে কে আনলো তাকে?
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে।আয়ান একপাশে মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রেয়াও তার পাশে বসে আছে।তবে কাঁদছে। অদ্রি যে চোখ খুলেছে তাতে তাদের খেয়াল নেই। অদ্রি হাত বাড়িয়ে ডাকার চেষ্টা করে।

আয়ান দেখা মাত্র দৌড়ে যায় অদ্রির কাছে। শব্দ করে কেঁদে উঠে।বলে,আমি তো তোকে আমার নিজের বোন ভাবতাম।তাহলে কেন লুকালি এতো বড় কথাটা আমার থেকে?

কিন্তু অদ্রি শ্রেয়ানকে খুঁজছে।
আয়ান হয়ত বুঝতে পেরেছে।বলে,শ্রেয়ান তোকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে।তবে চলে গেছে।

অদ্রির কথা বলার শক্তি নেই। তবুও বলে,আমি যাব শান ভাইয়ার কাছে।নিয়ে চল প্লিজ!

— এই মুহূর্তে তা সম্ভব না অদ্রি!

— কেন সম্ভব না আমি যাব।

অদ্রি নিজের শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে রাখা চিকিৎসা সহায়ক যন্ত্রপাতিগুলো খুলতে চেষ্টা করে।

— কি করছিস অদ্রি? পাগলামি করিস না।

— না আমি যাব শান ভাইয়ার কাছে।

— ঠিক আছে নিয়ে যাব। কিন্তু এখন না পরে।
— না এখনি।

অদ্রি উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পড়ে যেতে নেয়। কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়। বাইরে চলে যায়। পেছন পেছন আয়ান আর শ্রেয়াও যাচ্ছে।আয়ান বারবার অদ্রিকে থামতে বলে যাচ্ছে। কিন্তু অদ্রি থামছে না।

অদ্রি আয়ানের গাড়ির সামনে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।শ্রেয়াও পাশে বসে পড়ে।
আয়ান রেগে শ্রেয়াকে বলে, তুমি কেন উঠলে? অদ্রিকে আটকালে না কেন?ও অসুস্থ। ডাক্তার কি বলেছে ভুলে গেছো?

শ্রেয়া বলে,দেখো আয়ান অদ্রি যখন যেতে চাইছে আমার মনে হয় যাওয়া উচিত।নাহলে বেশি দেরি হয়ে যাবে।

আয়ান কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে। চালানো শুরু করে।

হঠাৎ অদ্রি বলে, গাড়ি থামাও।

আয়ান সাথে সাথে ব্রেক কষে।
— কি ব্যাপার?

— ভাইয়া আমি আসছি।
অদ্রি গাড়ি‌ থেকে নেমে যায়।

তবে ফিরে আসে একটা তাজা গোলাপ ফুল নিয়ে।শ্রেয়ানকে দিবে আজ।

আয়ান শ্রেয়ানদের বাংলোর সামনে গাড়ি থামায়।
অদ্রি গাড়ি থেকে নেমে শ্রেয়ানের বাড়ির ভিতরে চলে যায়। কিন্তু সারা বাড়ি খুঁজেও শ্রেয়ানকে পায়নি। কোথায় শ্রেয়ান? অদ্রির শ্রেয়ানের উপর বেশ রাগ হচ্ছে। তবুও খোঁজা বন্ধ করেনি। খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে যায়।বিশাল বড় ছাদ শ্রেয়ানদের।ছাদে উঠেই দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে অদ্রি। শরীরের এই অবস্থা নিয়ে এসেছে।তার উপর বেশ ক্লান্ত।

মুখ ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই থমকে যায় অদ্রি।

চলবে,