মেঘের ওপারে পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
264

#মেঘের_ওপারে
#পর্ব:১৩ ও শেষ
#DevjaNi

অদ্রি আকাশের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়।

আকাশের পশ্চিম দিকে লাল রঙের লাভ শেপের বেলুন দিয়ে লেখা “Sorry Adry”

অদ্রি তাকিয়ে আছে সেদিকে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার। ভুল দেখছে না তো! অদ্রি আয়ানের দিকে তাকায়।আয়ানো সেদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তার মানে ভুল দেখছে না সে। ঠিকই দেখছে। কিন্তু শ্রেয়ান কোথায়?

অদ্রি এদিক সেদিক তাকিয়ে শ্রেয়ানকে খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু পাচ্ছে না। অদ্রি আবারও আকাশের দিকে তাকালো।

অদ্রি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।লেখার মাঝখানে অবশ্য কয়েকটা বেলুন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে। বেলুন গুলো ধীরে ধীরে আকাশের উপরে দিকে উঠে যাচ্ছে।

হঠাৎ শ্রেয়ান পেছন থেকে অদ্রিকে জড়িয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীরে ধীরে বলে,তোকে আরও আগেই সরি বলে দিতাম। কিন্তু সেটা নরমাল হয়ে যেতো।আর তুইও ক্ষমা করতি না।আ’ম সো সরি বউ। ক্ষমা করে দে প্লিজ,,,,,

শ্রেয়ান অদ্রিকে ছোটবেলায় বউ বলে ডাকত।আজ অনেকদিন পর এই ডাক শুনছে সে। অদ্রি তো ভেবেছিল শ্রেয়ান হয়ত ভুলেই গেছে।

অদ্রি শ্রেয়ানের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। নিঃশব্দে কাঁদছে অদ্রি।
শ্রেয়ান আবেগী কন্ঠে বলে, ক্ষমা করেছিস তো বউ!!

অদ্রি কিছু বলে না। চুপ করে আছে। হাতের গোলাপ ফুলটা শ্রেয়ানের দিকে এগিয়ে দেয়। কিছু বলবে না সে।এই মুহূর্তে মুখ খুললেই হয়ত জোরে শব্দ করে কেঁদে দিবে।

শ্রেয়ান হাসে। হাত থেকে গোলাপ ফুলটা নেয়।
হঠাৎ শ্রেয়ান অদ্রিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। অদ্রিও জরিয়ে ধরে শ্রেয়ানকে। এবার বেশ জোরে জোরেই শব্দ করে কেঁদে দেয় অদ্রি।

☆☆☆

আয়ান শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, তুমি এসব জানতে?
শ্রেয়া জবাব দেয়, হুম, জানতাম!চলো আমরা অন্য কোথাও যাই।

— শ্রেয়ান জানে অদ্রির ব্রেন টিউমারের ব্যাপারটা?আয়ান প্রশ্ন করে আবারও।

— নাহ্!আমি জানাইনি।পরে জানাব।

— অদ্রির যা অবস্থা এই মুহূর্তে তাকে হসপিটালে থাকা উচিত। তুমি বলনি কেন?

— বলি নি।পরে বলব।পরে বললে তো আর কোনো প্রবলেম হবে না।

— কিন্তু,,,,,,

— কোনো কিন্তু না।পরে বলব বলেছি তো।এতো কথা বল কেন তুমি?চলো।

আয়ান চুপ হয়ে যায়। কিন্তু মনে হচ্ছে যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না।

☆☆☆

শ্রেয়ান এখনও আগলে রেখেছে অদ্রিকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বেলুন গুলো এলোমেলো হয়ে আকাশের অনেক উপরে উঠে গেছে। এখন অনেক ছোট লাগছে বেলুনগুলোকে।

অদ্রির কান্না এখন বন্ধ হয়ে গেছে।শ্রেয়ান অনুভব করছে অদ্রির দেহ ভারি হয়ে আসছে। অদ্রির হাতের বাঁধন আলগা হয়ে আসে।

এবার অদ্রির সম্পূর্ণ দেহের ভার শ্রেয়ানের উপর পড়ে।শ্রেয়ান টাল সামলাতে না পেরে খানিকটা পিছিয়ে যায়। সন্দেহ হয়।অদ্রিকে তুলার জন্য ছাড়তেই অদ্রির নিস্তেজ হয়ে যাওয়া দেহ ধপ করে নিচে পড়ে যায়।শ্রেয়ান ধরার সময়টাও পায় না।এক অজানা ভয় গ্রাস করেছে তাকে। সমস্ত শরীর কাঁপছে।শ্রেয়ান জোরে চেঁচিয়ে উঠে, অদ্রিইইইইইই!!

শ্রেয়ানের চিৎকারে আয়ান পিছন ফিরে তাকায়। অদ্রিকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে ঘাবড়ে যায়। দৌড়ে যায় অদ্রির কাছে। অদ্রির মাথাটা নিজের কোলের উপর উঠিয়ে নেয়। হাতের পালস্ চেক করে।

আয়ান শ্রেয়ানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।শ্রেয়ান উদ্ভ্রান্তের ন্যায় তাকিয়ে আছে তার দিকে।আয়ান কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা। নিচের দিকে তাকিয়ে মৃদু আওয়াজে বলে,অদ্রির পালস্ রেড পাচ্ছি না।

শ্রেয়ান “না” চিৎকার করে বসে পড়ে।মাথা জ্যাম হয়ে আসে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।

শ্রেয়া বলে,ভাইয়া তুমি চিন্তা কোরো না।আয়ান তুমি আবার দেখ।হতেও পারে আস্তে হচ্ছে তাই টের পাচ্ছ না। তুমি তো আর প্রফেশনাল ডাক্তার নও।

— আমি প্রফেশনাল ডাক্তার নই। কিন্তু বোঝার মতো ক্ষমতা আমার আছে।

আয়ান অদ্রির মুখের দিকে তাকায়। ঠোঁটের কোণে যেন এক চিলতে হাসি এখনো লেগে আছে।

হঠাৎ অদ্রির মাথাটা উল্টোদিকে ঘুরে সমস্ত দেহ আয়ানের কোলের উপর থেকে নিচে পড়ে যায়।
অদ্রি জীবনের চরম বাস্তবতা গ্রহণ করেছে।




দেখতে দেখতে তিন বছর হলো অদ্রি মারা গেছে। অদ্রির তিন বছর আগের কথা সত্য প্রমাণ হয়েছে। কেউ তাকে মনে রাখেনি। অদ্রির সাময়িক শোক কাটিয়ে সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আয়ান শ্রেয়াকে নিয়ে লন্ডন সেটেল হয়ে গেছে। অদ্রিকে হয়ত এখন আর তার মনে পড়ে না।হয়ত পড়ে। কিন্তু নিজের ব্যস্ত জীবনের মাঝে অদ্রিকে নিয়ে ততবেশি মাথা ঘামায় না সে।হয়ত এটাই বাস্তবতা!

শ্রেয়ান পড়াশোনা শেষ করে এখন তার বাবার বিজনেসের হাল ধরেছে।শ্রেয়ান এখন বেশ ব্যস্ত। হাসতে ভুলে গেছে সে।বিসন্নতা তাকে সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করছে।শ্রেয়া এর মধ্যেই অনেকবার চেষ্টা করেছে শ্রেয়ানের জীবনটা নতুন করে সাজিয়ে দিতে।তার জীবনে নতুন কাউকে আনতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে সে।

ব্যস্ত জীবনের মাঝে সবাই অদ্রিকে ভুলে গেলেও একজন ভুলতে পারেননি অদ্রিকে।শ্রেয়ান!শ্রেয়ান আজো ভুলতে পারেননি অদ্রিকে। দিনের বেলায় ব্যস্ততার মাঝে অদ্রিকে ভুলে থাকলেও দিন শেষ অদ্রির কথা খুব মনে পড়ে তার। অদ্রির কথা মনে পড়লেই খুব কষ্ট হয় তার। কিন্তু কাঁদতে পারে না। কিন্তু ভিতরটা যেন কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করে।

প্রিয় মানুষটার চোখের সামনে মৃত্যু!শ্রেয়ানের আজো মনে হয় অদ্রি হয়ত তাকে ছেড়ে যায়নি।এখনি হয়ত এসে বলবে, তুমি কষ্ট পাচ্ছ শান ভাইয়া?আর কষ্ট পেয়ো না।দেখো আমি কোথাও যাইনি!
কিন্তু এটা তো অসম্ভব।ইসস,,,যদি সম্ভব হতো!

ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে শ্রেয়ান। চোখের দৃষ্টি আকাশের দিকে স্থির।হাতে অদ্রির দেওয়া সেই গোলাপ ফুলটা। শুকিয়ে গেছে। একটুখানি ঘষা লাগলেই হয়ত সবগুলো পাপড়ি খুলে পড়বে। কিন্তু শ্রেয়ান অতি যত্নে আগলে রেখেছে ফুলটাকে।হয়ত সারাজীবন রাখবে।

শ্রেয়ান রাতের আকাশের তারাগুলোকে খুঁজছে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছে না।তার মা তো আকাশের তারা হয়ে গেছে সেই কবে। অদ্রিও হয়ত এখন আকাশের তারা হয়ে গেছে।আজ আকাশে মেঘ জমেছে। চাঁদের আলোয় মেঘরাশি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তারাগুলো কি তবে উঠেনি আজ?তবে কি আজ অদ্রির সাথে দেখা হবে না? তারাগুলো উঠেছে হয়ত #মেঘের_ওপারে।

(সমাপ্ত)