মেঘের পালক চাঁদের নোলক পর্ব-২+৩

0
264

#মেঘের_পালক_চাঁদের_নোলক
#পর্ব_০২
#অধির_রায়

মেয়েদের জীবন খুবই অদ্ভুত। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না৷ পরিবারে থাকা অবস্থায় মেয়েদের সিদ্ধান্ত পরিবারের লোকজন নিবে। বিয়ের পর স্বামী৷ অর্ধেক কষ্ট পরিবার থেকেই পেয়ে আসে৷ বাকী অর্ধেক কষ্ট প্রাণপ্রিয় ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকে পায়৷ তবুও হাসিমুখে সব মেনে নিচ্ছে৷ সৃষ্টিকর্তা মেয়ে জাতীকে অসীম ধৈর্য শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন৷ ধৈর্যের সীমা কখনও লঙ্ঘন করেন না৷ সেজন্য সৃষ্টিকর্তা মেয়ে জাতীকে মা হবার ক্ষমতা দান করেছেন৷ নিধি জীবনের সম্পুর্ন কষ্ট পরিবার থেকেই পেয়েছে৷ কেমন বাবা! এক মেয়ের ভালোর জন্য অন্য মেয়েকে নরকে পাঠান৷ বাবা নিরব মাহমুদের প্রতি ক্ষোভ, ঘৃণা ঝলঝল করছে৷ একই রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন দুই বোন নিধি, তিতিরকে৷ দু’জনকে বরাবর দুই চোখে দেখে হচ্ছে৷ নিধির চোখের জল বাঁধা মানছে না৷ অনবরত ঘৃণার অশ্রু হয়ে ঝড়ে যাচ্ছে৷ নিধি চোখের জল মুছে শ্যামলীকে বলল,

“আমি যখন এই নিষিদ্ধ পল্লীতে এসেছি তখন এ নিষিদ্ধ পল্লীকে ধ্বংস করব৷ আর কোন অসহায় মেয়ের স্বপ্ন ভাঙতে দিব না৷ কোন অসহায় মেয়ের স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিব না৷”

চোখে অগ্নি, ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর এখনই জ্বালিয়ে দিবে সবকিছু। মস্তিষ্কের নিউরন জানান দিচ্ছে সবকিছু তছনছ করতে৷ কাল বৈশাখী ঝঁড়ের মতো সবত্র ছিন্নভিন্ন করতে৷ শ্যামলীর মুখে উজ্জ্বল হাসির রেখা ফুটে উঠল। নিধির কাঁধে হাত রেখে উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,

“আমাকে তোর যুদ্ধে পাশে পাবি বোন। আমি নিজের জীবন বাজি রেখে তোকে পালাতে সাহায্য করব৷”

নিধি মুগ্ধ নয়নে শ্যামলীর দিকে তাকাল৷ অজানা অচেনা এ নিষিদ্ধ পল্লীতে কেউ তার সঙ্গ দিল৷ সৎমায়ের কথা মনে পড়তেই রাগে দেহ কেঁপে উঠল। গম্ভীর রাগী গলায় বলল,

“এখন থেকে আমরা কখনও নিজের জীবন উৎসর্গ করব না৷ অন্যের জন্য কতো নিজের জীবন উৎসর্গ করব৷ নিজের জীবনকে ভালোবাসতে শিখেন৷ উৎসর্গ করবে সেই পাপী মানুষগুলো।”

শ্যামলী মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন কপাটে হাঁক পড়ল৷ পুরুষালী কন্ঠে ভেসে আসে কর্ণধারে। দুয়ারের অপর পাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“শাওন চৌধুরী চলে এসেছে৷ বাইজী নতুন মেয়েকে শাওন চৌধুরীর রুমে পাঠাতে বলল।”

নিধির আত্নবিশ্বাসী এবং ভালোবাসা দেখে শ্যমলীর চোখে জল এসে পড়েছে৷ চোখের জল মুছে বলল,

“এইতো কাজ শেষ৷ পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমি নিধিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি৷”

“দেরী বাইজী পছন্দ করেন না৷ যেতে না চাইলে জোর করে ঘরে দিয়ে আসবি৷ আজই ওই মেয়ের ডানা কাটবে বাইজী৷”

শ্যামলী দীর্ঘ শ্বাস ফেলল৷ বুকের শূন্যতায় চিনচিন ব্যথা অনুভব করল। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

“দেরী হবে না মাসুদ ভাই৷ আমি এখনই নিয়ে যাচ্ছি৷”

মাসুদ নামটা শুনে নিধির কোমল নিষ্পাপ মনটা কেঁপে উঠল। মাসুদ আর হাফিজ নামেই লোক দু’টো তাকে নিয়ে এসেছে৷ ভয়ে ঠোঁট শুকিয়ে গেল নিধির৷ জিহ্ব দিয়ে ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে নিল। নামটা যেন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াল৷ মুহুর্তেই ভয়টা ক্ষোভ, রাগ, ঘৃণায় পরিণত হলো৷ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতেও দু’বার চিন্তা করবে না৷ শ্যামলী নিধির দিকে তাকাতেই নিধি বলল,

“আমি সব বুঝতে পেরেছি৷ আমায় নিয়ে চিন্তা করবেন না৷ আমার জীবনে নতুন পথ চলা শুরু হবে আজ থেকে৷”

শ্যামলী নিধির হাত আলতো করে ধরল৷ নিধিকে নিয়ে গেল বাঈজীর রুমে৷ গম্ভীর রাগী গলায় বলল,

“বাইজী এই মেয়ে কিছুতেই সাজতে চাচ্ছে না৷ এমনি ধরে নিয়ে আসলাম৷ শাওন চৌধুরী তাকে এমনি পছন্দ করবে৷ উনি বুঝতে পারবেন নিধিকে এই রুপে দেখে।”

বাইজী নিধিকে মাথা থেকে পা পছন্দ প্রখর করে দেখল৷ নিধি ভয়ে চুপসে গেছে৷ বাঈজীর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল। নিধির চারপাশে একবার ঘুরে বলল,

“কিছুই লাগবে না৷ একে দেখে শাওন চৌধুরীর মাথা এমনিতেই ঘুরে যাবে।”

বাইজী ঠোঁটের কোণে বিশ্ব জয়ের হাসি৷ নিধি কিছু একটা ভেবে ভেজা গলায় বলল,

“আমি এসব কাজ করতে পারব না৷ আমাকে যে কাজ দিবেন আমি সেই কাজই করব। দয়া করে আমাকে দিয়ে জঘন্য কাজ করাবেন না৷”

বাইজী অসহায় কন্ঠে বলল,

“মামুনি তোমাকে এই কাজ করতে হবে৷ কাজটা মন দিয়ে করো৷ ভালো কাজ করতে পারলে নিজের মতো চলতে পারবে৷ তবে চার দেয়ালের ভিতর৷”

নিধি অসহায় দৃষ্টিতে বাঈজীর দিকে তাকাল৷ বাইজী শ্যামলীকে চোখের ইশারায় বলল, ‘নিধিকে রুমে দিয়ে আসতে৷’ শ্যামলী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল৷ কোন কিছু নিধির দৃষ্টির আড়াল হলো না৷ শ্যামলী বেশ শক্ত করেই নিধির বাহু ধরল৷ নিধির নিষ্পাপ মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে শাওনের ঘরের দিকে পা বাড়াল৷ শাওনের ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল শ্যামলী৷ ফিসফিস করে বলল,

“বাহিরে প্রায় সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে৷ এখানে কোথাও কোন সিসি ক্যামেরা নেই৷ যেখানে গাড়ি পার্ক করে সেদিকেও ক্যামেরা নেই৷ তুমি চাইলে কারোর গাড়ির ডিপিতে করে যেতে পারো৷”

গাড়ির ডিপি কথার বুঝতে পারল না৷ প্রশ্নবোধন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্যামলীর দিকে৷ শ্যামলী নিধির দৃষ্টি মুহুর্তেই পড়ে নিল। সাথে সাথে নিধিকে সবকিছু বুঝিয়ে দিল৷ নিধি আল্লাহর নাম নিয়ে শাওন চৌধুরীর রুমে ঢুকল৷ রুমে অ্যালকোহলের বিশ্রী গন্ধ মৌ মৌ করছে৷ নিধির বমি আসার উপক্রম। হাতে অ্যালকোহলের গ্লাস নিয়ে বাজে দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকায়৷ সামনের চুলগুলো চোখ অব্দি। দেখে মনে হচ্ছে বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে৷ বয়স ২৮ হবে৷ ছিমছাম গঠনের অধিকারী। নিধি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে শাওনের দিকে তাকায়৷ নিধির থেকে হাজার গুণ ফর্সা৷ ঠোঁটের কোণে নেশাগ্রস্ত হাসি৷ গ্লাস টেবিলের উপর রেখে হেলেদুলে নিধির দিকে কদম ফেলে এগিয়ে আসে৷ নিধি ভয়ে দেয়ালের সাথে ল্যাপ্টে যায়৷ শাওন একদম নিধির কাছে চলে আসে৷ দূরত্ব নেই বললেই চলে৷ মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে৷ নিধির গালে আলতো করে স্পর্শ করে বলল,

“তোমার অপরুপ সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ। তুমি শাওন চৌধুরীর মন জয় করে নিয়েছো৷”

নিধির মুখের একদম কাছে কথাগুলো বলল৷ ঘৃণার নিধির গা ঘিনঘিন করছে৷ দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে শাওনকে ধাক্কা দিল৷ শাওন নিজেকে সামলাতে পারল না৷ ভাগ্য ভালো বিছানার উপর পড়ছে৷ নিধির মনে পড়ে যায়৷ তার কাছে ঘুমের মেডিসিন আছে৷ বিগড়ে যাওয়া শাওনকে ঘুমের দেশে পাঠিয়ে নিজের কাজ করবে৷ শাওনের খুব রাগ হয়৷ তেড়ে নিধির দিকে আসতেই নিধি শাওনের বুকে হাত রেখে বলল,

“এখনই এমন অবস্থা। সারারাত আমার সাথে যুদ্ধ করবেন কিভাবে? সামান্য ধাক্কা সহ্য করতে পারেন না৷”

নিধির কথাগুলো কি আধও শাওনের উপর কোন প্রভাব ফেলছে? এক দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। শাওনের দৃষ্টি নিধির দিকে আবদ্ধ। নিধি শাওনের হাত টেনে বিছানায় বসিয়ে দিল৷ শাওন রীতিমতো একটা ঘোরে যাচ্ছে৷ নিজের লোভ সামলাতে পারছে না৷ অ্যালকোহলের গ্লাস হাতে নিয়ে খুব সাবধানে ঘুমের মেডিসিন মিশিয়ে দিল৷ মনের হাজারও ভয় হানা দিচ্ছে৷ নিধি শাওনের কাঁধে হাত রেখে ডিংক্সের গ্লাসটা হাতে দিল৷ মুচকি হেঁসে বলল,

“চোখের তৃপ্তি, মনের তৃপ্তি, শারীরিক চাহিদা সবই তো মিটাতে হবে৷ সেজন্য ডিংক্স অতীব গুরুত্বপূর্ন।”

শাওনের দৃষ্টি নিধির দিকে৷ একদম নিষ্পাপ একজন কিশোরী। ডাগর ডাগর আঁখি মেলে তাকায়৷ ঠোঁটের কোণে ঝর্ণার ঝলমল হাসি৷ কান্না করায় চোখ দু’টো ফুলে ফেঁপে উঠছে। নিধিকে দেখে একটু মায়া হলো৷ পরক্ষণেই মস্তিষ্কের নিউরনের প্রতিটি স্নায়ু অন্য কিছু নাড়া দিল৷ কোমল হৃদয়ের মানুষ কঠিন মানুষে পরিণত হলো৷ একের পর গ্লাস ডিংক্স করতে থাকল৷ উম্মাতের মতো অ্যালকোহল সেবন করতে দেখে নিধির ঠোঁট প্রসারিত হলো৷ পরক্ষণেই গালে থাপ্পড় পড়ল৷ নিধি ছিঁটকে বিছানায় লুটে পড়ে৷ হেঁচকা টান দিয়ে বিছানা থেকে নিধিকে তুলে৷ টান সামলে না পেরে শাওনের বুকে মাথা ঠেকে৷ মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে৷ আরও একটা থাপ্পড় পড়ল নিধির গালে৷ নিধির গালে রক্ত টকবক করছে৷ চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ ঘুমের মেডিসিনের কোন প্রভাব পড়ল না শাওনের উপর? নিধিকে বিছানায় চেপে ধরে নিধির পাতলা গোলাপি রঙের ওষ্ঠে শাওনের ওষ্ঠ মিলিয়ে দিল৷ কথা বলার শক্তিটুকু পাচ্ছে না৷ নিধির জীবনের আলো কি এখানেই নিভে যাবে? মিনিট দুয়েকের মাঝে শাওন নিধির উপর সমস্ত ভর ছেড়ে দিল৷ ওষ্ঠদ্বয় সরিয়ে নিয়েছে৷ নিধি বুঝতে পারল শাওন চৌধুরী ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে৷ কিছুক্ষণের আগের ঘটনা চোখের সামনে বার বার প্রতিচ্ছবি হচ্ছে৷ নিধি শাওনকে দূরে ঠেলে উঠে পড়ল৷

কপাট খুলে বাহিরে উঁকি দিতেই মাসুদকে দেখতে পেল৷ অন্যদিকে ঘুরে থাকায় নিধিকে দেখতে পাইনি৷ নিধি বুঝতে পারছে না কি করবে? মাসুদের চোখ জ’হু’রি’র মতো। ফাঁকি দিয়ে কিভাবে যাবে? হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ কেঁপে উঠে৷ চিৎকার করতে নিলেই নিধির মুখ চেপে ধরে৷ সপাং করে রুমের ভিতরে নিয়ে যায়৷ চোখ মেলে সামনের মানুষকে দেখে নিধির অন্তর আত্মায় পানি আসল৷ হাফ ছেড়ে জড়িয়ে ধরল৷ শ্যামলী আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তোর জন্য পোশাক সংগ্রহ করেছি৷ তোকে এখান থেকে বের হতে হলে ছেলেদের পোশাক পড়েই বের হতে হবে৷ শাওনকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে খুব ভালো করছিস৷”

মিটমিটে আলোয় নিধির গাল দেখে চমকে উঠল শ্যামলী৷ অজান্তেই চোখের কোণে অশ্রু চলে আসল৷ ঠোঁটও যেন ফুলে গেছে৷ কিছু বলল না৷ নিধির হাতে ছেলেদের পোশাক দিয়ে বলল,

“জলদি শার্ট প্যান্ট পড়ে নে৷ আমি একটা ব্যবস্থা করছি৷”

নিধি মাথা নাড়িয়ে শার্ট প্যান্ট নিয়ে ওয়াসরুমে গেল৷ শ্যামলী শাওন চৌধুরীর প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেট সংগ্রহ করল৷ বেশ ভালোই টাকা ছিল৷ ততক্ষণে নিধি পোশাক চেঞ্জ করে চলে আসছে৷ নিধির হাতে টাকাগুলো দিয়ে বলল,

“এখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যা৷ এখন সবাই নারীর প্রতি আসক্তে মেতে আছে৷ মাসুদ, হাফিজ এখন নারীদের দখলে৷ আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলছি৷ তোকে কেউ চিনতে পারবে না ৷ সাবধানে থাকবি৷”

নিধি শ্যামলীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল৷ কি বলে ধন্যবাদ দিবে জানা নেই? নিষিদ্ধ পল্লীতে যে ভালো মানুষের বাস আছে তা শ্যামলীকে দেখে বুঝা যায়। শ্যামলীও নিধির মতো চক্রান্তের স্বীকার হয়ে নিষিদ্ধ পল্লীতে এসেছে৷ শ্যামলী চোখের জল মুছিয়ে বলল,

“আর কোন কান্না নয়৷ আল্লাহ যেন তোকে এখান থেকে বের হতে সাহায্য করে৷ জানিনা আল্লাহ এই পতিতার দোয়া কবুল করবে কিনা৷ আমি তোর জন্য আল্লাহ কাছে এখনই মুনাজাত করব৷”

শ্যামলীকে দেখে বুঝা যায় কতোটা কষ্ট স্বীকার করে নিষিদ্ধ পল্লীকে আপন করে নিয়েছে৷ নিধি শ্যামলীকে প্রতিজ্ঞা করে বলল,

“আমার জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু থাকতে আমি আপনাকে এখান থেকে নিয়ে যাব৷ আপনাকে নরক থেকে বের করা আমার দায়িত্ব।”

কথা না বাড়িয়ে শ্যামলী নিধিকে মূল দরজায় নিয়ে আসে৷ দরজায় এনে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় লোক চক্ষুর আড়ালে। নিধির দিকে ছোট একটা ছু’রি ছুঁড়ে দিয়ে বলল,

“তোর পথে কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিবি৷ এখানে কেউ মারা গেলে কেউ কিছুই জানতে পারবে না৷”

নিধিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিল৷ নিধি ছু’রি হাতে নিয়ে দেখল চিকচিক করছে৷ কাউকে স্বর্গে পাঠানোর জন্য যথেষ্ট। ভয়ে ভয়ে অন্ধকার পথে হাটা ধরল। কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল৷ লোকটি ভদ্রতার খাতিরে বলল,

“সরি৷ দেখতে পারিনি৷”

নিধির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল৷ নিধির ক্যাপ মাটিতে পড়ে যাওয়ায় খুব দ্রুত পড়ে নিল৷ যার জন্য অপর দিকের লোকটা কিছুই বুঝতে পারল না৷ একটু আগেই গাড়ি পার্ক করেছে লোকটি৷ নিধি সাহায্য ছাড়াই উঠে পড়ল৷ লোকটি চকিত নজরে নিধির দিকে তাকিয়ে অন্ধর মহলে পা বাড়াল৷ নিধি একে একে সকল গাড়ির ডিপি দেখতে লাগল৷ দুই তিনটা গাড়ির ডিপি দেখার অন্য একটা গাড়ির ডিপি আনলক দেখে সুযোগ বুঝে উঠে পড়ল৷ হাত তুলে আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া আদায় করল৷

চোখের পাতায় কখন তন্দ্রা হানা দিয়েছে বুঝতে পারেনি নিধি? ক্লান্ত দেহে তন্দ্রা নিমিষেই চলে আসে৷ আঁখি মেলে নিজেকে অন্ধকারে আবিষ্কার করে। জড়ো হয়ে শুয়ে আছে গাড়ির ডিপিতে৷ রাতের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠল৷ সাথে সাথে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। ডিপি থেকে বের হওয়ার জন্য হাত উঁচু করতেই বুঝতে পারল ডিপি লক করা৷ নিধির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল৷ এখান থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে? আধও কি কেউ এখানে আসবে? ভাবতে পারছে না৷ মাথা ধরে আসছে৷ কিছু দিনেই ক্লান্ত হয়ে গেছে ছোট কিশোরীর মন। যেন মৃত্যু নিধির দুয়ারে হানা দিচ্ছে৷ উপায়ন্তর না দেখে ডিপিতে আঘাত করতে লাগল।

চলবে……

#মেঘের_পালক_চাঁদের_নোলক
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়

মহান আল্লাহ তায়ালা সবত্র ধৈর্যশীলদের পাশে থাকেন৷ বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে৷ কন্ঠে আল্লাহর পবিত্র বাণী ধ্বনিত্ব হচ্ছে। ❝ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।❞ বিপদের সময় এই আয়াত পড়তে হয়৷ যখন নিধি সকাল বেলায় কুরআন পড়ার জন্য মাদ্রাসায় যেত তখন হুজুর বলেছিলেন বিপদে ইউনুস সূরা পাঠ করতে৷ আল্লাহর নাম নিয়ে নিধি ইউনুস সূরা পাঠ করতে থাকল৷ কন্ঠে ধ্বনিত্ব হচ্ছে আল্লাহর পবিত্র বাণী আর পা দিয়ে গাড়ির ডিপিতে আঘাত করছে৷ এক সময় ক্লান্ত হয়ে আঘাত করা বন্ধ করে৷ যেখানে শেষ সেখান থেকেই শুরু৷ শেষ বারের মতো নিধি ডিপিতে আঘাত করল৷ সাথে সাথে ডিপি খুলে গেল৷ আঁখি বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নিল৷ আল্লাহকে হাজার হাজার শুকরিয়া জানাল৷ আঁখি মেলে তাকাতেই চকিত হয়ে যায়৷ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাতের সেই ধাক্কা দেওয়া লোকটি৷ লোকটি তাকে চিনে ফেলেনি তো৷ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে। নিধির প্রান যায় যায় অবস্থা। তবে অন্তরে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে৷ সে নিষিদ্ধ পল্লীর বাহিরে৷ ডিপি থেকে নেমে বলল,

“আমাকে সাহায্য করার জন্য আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”

নিধির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নেত্রদ্বয় লাল বর্ণ ধারণ না করলেও বুঝা যাচ্ছে ভীষণ রেগে আছে৷ আঁখি ছুঁই ছুঁই কিছু চুল৷ খুঁচা খুঁচা দাঁড়ি৷ তবে ভয়ে নিধি উনার দিকে তাকাতে পারছে না৷ লোকটি নিধির দিকে এক কদম এগিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“এই মেয়ে! তুমি আমার গাড়িতে কি করছো? আমি গাড়ি ভেঙে ফেলবে নাকি?”

নিধির কান্না পাচ্ছে। ছোট্ট কিশোরী মন কোন উত্তর পাচ্ছে না৷ উনি কি আমায় চিনতে পারছে না? রাতেই তো উনার সাথে নিষিদ্ধ পল্লীতে ধাক্কা লাগল৷ নিষিদ্ধ পল্লীর কথা মনে পড়তেই ঘৃণায় গা ঘিনঘিন করে উঠল৷ ঘৃণায়, ভয়ে কান্না করে দিল৷ লোকটি ঘাবড়ে যায়৷ চকিত হয়ে বলল,

“কান্না করার কি আছে? তুমি আমার গাড়িতে কি করছিলে? ওকে বলতে হবে না৷ এটা বলো তোমার বাসা কই?”

এবার আরও কান্নায় ভেঙে পড়ে নিধি৷ দু’দিন নিধির উপর দিয়ে যা বয়ে গেছে তার মনে করতে চাচ্ছে না৷ তবুও ভেজা গলায় বলল,

“আমার নাম তাসফিয়া নিধি৷ আমার গ্রাম থেকে এসেছি৷ আমাকে খারাপ লোকদের কাছে বিক্রি করে দেয়৷ আমি তাদের কাছ থেকে কোন রকম পালিয়ে চলে আসি৷ বিশ্বাস করেন আমি চু’র নয়৷”

নিধি অঝোরে কান্না করতে থাকে৷ নিধির প্রতি লোকটির খুব মায়া হয়৷ শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করল,

“ঢাকায় তোমার কোন রিলেটিভ আছে?”

নিধি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল, ঢাকায় তার কোন রিলেটিভ নেই৷ নিধির মাথা নিচু করে আছে৷ কোথায় যাবে জানা নেই৷ লোকটি নিধির মাথা তুলে বলল,

“আমার নাম মাহির আহমেদ মুগ্ধ। তুমি আমাদের বাসায় থাকতে পারবে তবে একটা শর্তে?”

নিধি আশার আলো দেখতে পেল৷ ঠোঁট কোণা কিঞ্চিৎ প্রসারিত হলো। চোখের জল মুছে বলল,

“আমি আপনার যেকোন শর্তে রাজি। আমি সব কাজই পারি৷ আমাকে যে কাজই দিবেন আমি সেই কাজ করব৷”

“আমার সাথে বাসায় আসো৷ দেখে মনে হচ্ছে উদরে কিছু পড়েনি৷ কিছু খেয়ে নাও৷ তারপর তোমার কাজ বুঝিয়ে দিব৷”

নিধি মুগ্ধকে অনুসরণ করে পিছু পিছু চলতে থাকে৷ বিশাল বড় এরিয়া জুড়ে মুগ্ধদের বাড়ি৷ তিনতলা বিশিষ্ট বাসাটা খুব সুন্দর। বাড়ির সামনে বাহারি রকমের ফুলের সমাহার। সেখানে দোলনার ব্যবস্থাও আছে৷ অন্যপাশে ছোট একটা সুইমিংপুল। নিধি প্রথম সুইমিং পুল দেখছে৷ ছবিতে দেখেছে সুইমিংপুলের পানি নীল৷ আজ বাস্তবে দেখল সুইমিংপুলের পানি নীল৷ আধও কি নীল তা বুঝতে পারছে? অবাধ্য হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করছে৷ নিজের অবুঝ ইচ্ছা ধমিয়ে রাখল৷ মুগ্ধ দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করল৷ সাথে নিধি ভিতরে প্রবেশ করল৷ নিধির চোখ আটকে যায় সিঁড়ির উপর৷ হুট করেই মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“ওই লোকটা এখানে কি করছে? লোকটা আমাকে মে’রে ফেলবে। আমাকে বাঁচান৷”

নিধি মুগ্ধকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে৷ মুগ্ধর মনে শীতল হাওয়া বয়ে গেল৷ লুকিয়ে থাকা সুপ্ত অনুভূতি জেগে উঠল মুগ্ধর মনে৷ মুগ্ধ সামনে তাকিয়ে দেখে শাওন সিঁড়ি দিয়ে নামছে৷ ততক্ষণে শাওন তাদের সামনে এসে দাঁড়াল৷ নিধি অনবরত ভেজা গলায় বলছে,

“শাওন চৌধুরী আমায় মে’রে ফেলবে৷”

শাওন চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“এই মেয়ে এসব কি বলছো? আমি তোমায় মা’র’তে যাব কেন?”

নিধিকে মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরেই বলল,

“আপনি দূরে যান৷ কাছে আসবেন না৷ আপনি খুব খারাপ। আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না৷”

মুগ্ধ নিধিকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

“নিধি ভয়ের কিছু নেই৷ শাওন তোমার কোন ক্ষতি করবে না৷ আমি আছি তোমার পাশে। তুমি শাওনকে কিভাবে চিনো?”

নিধি নিজেকে শান্ত করতে পারছে না৷ সেই থাপ্পড়ের কথা মনে পড়ছে বারং বার৷ সিংহের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল৷ আল্লাহ সহায় ছিল বলে বেঁচে গেছে৷ নিধি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল৷ যার অর্থ সে শাওন চৌধুরীকে চিনে৷ শাওন চকিত হয়ে বলল,

“তুমি আমায় কিভাবে চিন? তোমার সাথে কি আগে কখনও দেখা হয়েছে? আমার মনে পড়ছে তোমার সাথে দেখা হয়েছে৷”

নিধি এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করল৷ মুগ্ধ নিধির দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,

“শান্ত হয়ে বসো৷ তোমার সাথে কি খারাপ কিছু হয়েছে? শাওন আমার জমজ ভাই৷ এজন্য আমাদের চেহারার অনেক মিল আছে। অনেকে ভুল করে৷ কিন্তু তুমি চিনে ফেলছো৷ তোমার বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়৷”

নিধি ঠকঠক করে পানি শেষ করল৷ উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“শাওন চৌধুরী ডিংক্স সেবন করলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে৷ আমি উনাকে গতকাল রাতেই দেখেছি৷ গতকাল রাতে আমাকে মে’রে ফেলতে চেয়েছিলেন৷ আমি উনার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম বাঁচার জন্য৷ উনি আমাকে সাহায্য না করে আমাকে… ”

নিধি আর কিছু বলতে পারল না৷ কান্নায় ভেঙে পড়ল৷ নিধি উপলব্ধি করতে পারল সে অনবরত মিথ্যা বলে যাচ্ছে৷ তার মিথ্যা কেউ ধরতে পারছে না৷ একটা সময় সৎ মায়ের অত্যচার থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যা বলত৷ তবে কখন বাঁচতে পারেনি৷ বাঁচতে পেরেছে তিতিরের মাধ্যমে৷ তিতির তাকে বাঁচিয়েছে মায়ের অত্যচার থেকে৷ বাবা সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে ছিলেন৷ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পুরানো কথা স্মরণ করল৷ শাওন চৌধুরী নিধির কাছে মাথা নত করে বলল,

“আমার মাথা ঠিক থাকে না৷ আমার তখন কি হয়ে যায় ভাবতেই পারিনা৷ ঠিক ভুলের পার্থক্য করতে পারিনা৷ আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করব৷ আমার দ্বারা পরবর্তীতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না৷”

নিধি ভয়ে শাওনের দিকে তাকাচ্ছে না৷ মুগ্ধর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা। যেন এখানে কোন সিনেমাটিক কথা চলছে৷ তবে নিধি বুঝে নিল দুই ভাই নারীর প্রতি আসক্ত। সেজন্য তাদের আনাগোনা লেগে থাকে নিষিদ্ধ পল্লীতে৷ আমার উপর হিংস্র পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে না তো? মুখ দেখে মানুষ চেনার উপায় নেই৷ মুখ দেখে তো বুঝতেই পারিনি হাফিজ, মাসুদকে৷ মুগ্ধ একজন সার্ভেন্টকে ডেকে বলল,

“নিধিকে খাবার দাও৷ নিধি খাবার শেষ করে আমার রুমে আসো৷ তোমাকে তোমার কাজ বুঝিয়ে দিব৷”

নিধি ছোট করে জবাব দিল,

“ঠিক আছে৷”

মুগ্ধ নিধির দিকে এক পলক তাকিয়ে উপরে চলে গেল৷ শাওন চৌধুরী নিধির দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে৷ দু নয়নের তৃপ্তি নিয়ে নিধিকে দেখতে ব্যস্ত৷ চোখের পলক ফেলছে না৷ নিধি নিজেকে গুটিয়ে নিল৷ আমতা আমতা করে বলল,

“কিছু বলবেন?”

নিধির কথায় শাওনের ঘোর কাটে৷ বুঝতে পারে সে বে’হা’য়া’র মতো নিধির দিকে তাকে ছিল৷ কি আছে এই ছোট মেয়ের মধ্যে? যার দিকে তাকালে সবকিছু ভুলে যায়৷ চোখের তৃপ্তি মিটবে না হাজার বছর তাকিয়ে থাকলেও৷ শাওনকে অফিসের পোশাকে দারুণ লাগছে৷ শাওন অপ্রস্তুতভাবে বলল,

“তোমায় দেখছি৷”

পরক্ষণেই বুঝতে পেয়ে বলল,

“আমি খুবই অনুতপ্ত। কিভাবে একটা নিষ্পাপ মেয়ের সাথে খারাপ আচরণ করলাম? যাকে দেখে মনের কোণে সুপ্ত অনুভূতি জেগে উঠে৷ শীতল হাওয়া বয়ে যায়৷ তার সাথে কিভাবে আমি খারাপ ব্যবহার করলাম?”

নিধি অবাক চোখ শাওনের দিকে তাকায়৷ মায়া জড়ানোর ভেজা গলায় বলল,

“আপনার কিছুই মনে নেই। আপনি রাতে আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছেন৷ আমি পর পর আমায় দুইটা থা’প্পড় দিছেন৷ আল্লাহ সহায় ছিল বলেই আমি বেঁচে ফিরতে পারছি৷”

বলেই নিধি কান্না করে দিল৷ শাওনের বুকের চিনচিন ব্যথা তীব্র ব্যথায় পরিণত হলো৷ বুঝতে পারল খুব খারাপ কাজ করতে চেয়েছিল মেয়েটার সাথে৷ নিধির দিকে তাকিয়ে অপরাধী কন্ঠে বলল,

“আমি তোমার সাথে কোন অন্যায় করে থাকলে আমায় ক্ষমা করে দাও৷ আমার দ্বারা তোমার কোন ক্ষতি হবে না৷”

শাওন চৌধুরীকে রাতে যতটা খারাপ ভাবছিল তিনি ততটা খারাপ নয়৷ একদম বাচ্চাদের মতো করে ক্ষমা চাচ্ছেন৷ যেন ক্ষমা না করলেই এখনই কান্না করবে৷ নিধির খুব মায়া হলো৷ ঠোঁটের কোণে হাসি নেই৷ তবুও বৃথা চেষ্টা করল ঠোঁট প্রসারিত করতে৷ কোমল কন্ঠে বলল,

“আপনাকে এক শর্তে আমি ক্ষমা করতে পারি। আমার শর্তে রাজি হলে আপনাকে ক্ষমা করে দিব৷”

“বাচ্চা মেয়ের আবার শর্ত! তোমার কি শর্ত থাকতে পারে? তবে কথা দিচ্ছি তোমার শর্ত মেনে নেওয়ার চেষ্টা করব৷”

নিধির মনে আরও একটা আশার আলো দেখা দিল৷ মুগ্ধ বিধিকে কি কাজ দিবে? কাজটার কথা মাথার রেখে বলল,

“আমি সময় মতো বলব৷ আপনার লেট হয়ে যাচ্ছে৷”

তাদের কথা মধ্যেই সার্ভেন্ট নিধির জন্য খাবার নিয়ে আসে৷ শাওন বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,

“নিধির যা লাগে সবকিছুর ব্যবস্থা করো৷ নিধি আমাদের গেস্ট। তার যেন কোন প্রকার অযত্ন না হয়৷”

সার্ভেন্ট বিনয়ের সহিত বলল,

“জ্বি স্যার৷ কোন সমস্যা হবে না৷ ম্যাম খাবার খেয়ে নেন৷”

শাওন নিধির দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে গেল৷ নিধিকে রেখে যেতে ইচ্ছা করছে না৷ নিধির কাছেই মন রয়ে গেছে৷ ৩০ বছর মন ছোট নিধির কাছে আটকা পড়ে গেল৷ কখনও কেউ শাওনের মনে জায়গা করে নিতে পারেনি৷ শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য ছিল নিষিদ্ধ পল্লী৷ কিন্তু নিধিকে দেখে মনের ভালো বাসনা উঁকি দিল৷ মুচকি হেঁসে রুম থেকে চলে গেল৷

ক্ষুধায় পেট ইঁদুর দৌড়াচ্ছে৷ নিধি সামনে অনেক খারাব দেখে ইচ্ছা করছে সবকিছু একসাথে খেয়ে ফেলতে৷ কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখল৷ এক লোকমা খাবার মুখে দিয়ে সার্ভেন্টকে উদ্দেশ্যে করে বলল,

“আপু আপনার নাম কি? আপনি দেখতে অনেক সুন্দর।”

মুচকি হেঁসে জবাব দিল,

“আমার নাম তিথি৷ সবাই আমাকে তিথি বলেই ডাকে৷”

তিথি নাম শুনেই নিধি বিষম খেল৷ তিতির নামের সাথে মিল আছে৷ পানি পান করে বলল,

“আমি আপনাকে আপু বলে ডাকতে পারি? আমার নাম নিধি। আমি আপনাকে আপু বলেই ডাকব৷ আমার আপুর নামের সাথে আপনার নামের মিল আছে৷ আমার আপুর নাম তিতির৷”

তিথি হেঁসে জবাব দিল,

“আমার ছোট বোনের নাম তিতির৷ আমার নামের সাথে মিল রেখে বাবা তার নাম তিতির রেখেছেন৷ আমাকে আপু বলে ডাকলে কোন সমস্যা নেই। কেউ কিছু মনে করবে না৷”

“আপু এই বাসায় শাওন আর মুগ্ধ ছাড়া কেউ থাকে না৷ কাউকে তো দেখতে পারছি না৷”

তিথির মুখ চুপসে গেল৷ মলিন কন্ঠে বলল,

“শায়লা চৌধুরী থাকেন৷ শাওন স্যার, মুগ্ধ স্যারের মা৷ উনার পা ভেঙে গেছে৷ ডাক্তার উনাকে বেড রেস্টে থাকতে বলছেন৷ প্রায় ছয় মাস হলো এখনও হাঁটতে পারছেন না৷ ডাক্তার উনাকে হাঁটতে বলছেন৷ কিন্তু উনি হাঁটার চেষ্টা করে না৷”

“উনার বাবা কই?”

তিথি ফিসফিস করে বলল,

“বাবার কথা কখনও জানতে যাবে না৷ জানতে চাইলে দু’ভাই খুব রেগে যান৷ আমরাও কিছু জানি না৷”

কথা বলার মাঝেই নিধির খাবার শেষ হয়ে যায়৷ নিধিও শাওনের বাবা সম্পর্কে কিছু জানতে চাইল না৷ নিধি বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এসে বলল,

“মুগ্ধ রুমটা কোনদিকে৷ আমাকে মুগ্ধর রুমে একটু নিয়ে যাবে আপু৷ আমি এই বাড়িতে এর আগে কখনও আসিনি৷”

তিথি নিধিকে নিয়ে মুগ্ধর রুমের সামনে এসে বলল,

“তুমি মুগ্ধ স্যারের সাথে কথা বলো৷ আমি রুমে যেতে পারব না৷ অনুমতি ছাড়া উনার রুমে আমাদের যাওয়া নিষেধ।”

তিথি চলে গেল৷ নিধি চিন্তায় পড়ল৷ একটা পরপুরুষের ঘরে কিভাবে যাবে? একটা যেতে মন সাঁড়া দিচ্ছে না৷ কারুকাজ করা কপাটে হাত দিতেই কপাট খুলে গেল। যেন নিধির জন্য খুলে রেখেছে৷ উঁকি দিয়ে দেখল কেউ নেই৷ ধীর পায়ে মুগ্ধর রুমে প্রবেশ করল৷

চলবে…..