মেঘের পালক চাঁদের নোলক পর্ব-৪+৫

0
257

#মেঘের_পালক_চাঁদের_নোলক
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়

বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে সম্পর্ক। সম্পর্কে বিশ্বাস চূর্ণ হলে সম্পর্কের বাঁধন ছিন্ন হয়ে যায়৷ নিধির বিশ্বাস আছে মুগ্ধ তার সাথে খারাপ কিছু করবে না৷ নিধি রুমে প্রবেশ করে মুগ্ধকে দেখতে পেল না৷ মুগ্ধর রুম সুন্দরভাবে সাজানো গুছানো দেখে নিধির চোখ আকাশ প্রাণে৷ এতোদিন যা টিভির পর্দায় দেখে এসেছে আজ নিজ চোখে দেখছে৷ মুগ্ধ নয়নে রুমের প্রতিটি সামগ্রী দেখতে ব্যস্ত। ভুলেই গেছে মুগ্ধর সাথে দেখা করতে এসেছে৷ মুগ্ধর ধ্বনি কানে আসতেই নিজ ভাবনা থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসে৷ মুগ্ধ বারান্দায় কারো সাথে যেন ফোনে কথা বলছে৷ নিধির অবাধ্য পা বারান্দায় রাখল৷ নিধির উপস্থিতি বুঝতে পেরে মুগ্ধ ফোন রেখে নিধির দিকে তাকাল৷ মুচকি হেঁসে বলল,

“দাঁড়িয়ে আছো কেন? এখানে এসে বসো।”

বারান্দায় বসার জন্য ছোটখাটো বসার ব্যবস্থা করেছে৷ মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিল৷ মুগ্ধর গায়ে কোন শার্ট বা টিশার্ট নেই৷ টু কোয়ান্টার প্যান্ট পরিহিত৷ খালি গায়ে গ্রামে অনেক মানুষকে দেখেছে তবে খারাপ লাগেনি৷ মুগ্ধকে কেন জানি খারাপ লাগছে? নিধি বিনয়ের সাথে বলল,

“আমি এখানে ঠিক আছি। আমাকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আসতে বলছিলেন। আমায় কি কাজ করতে হবে?”

মুগ্ধ নিধির দিকে তাকালে অন্য জগতে হারিয়ে যায়৷ নিজেকে সংযত করল এদিক ওদিক তাকিয়ে। গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও কেন বাঁধা পড়ছে নিধির উপর? মনের মাঝে তুমুল ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷ মুগ্ধ কিছু বলছে না বলে নিধি নিজে থেকেই ভাইয়া বলে সম্মোধন করল৷ মুগ্ধ মাথায় ব/জ্র/পা/ত পড়ল৷ চকিত গলায় বলল,

“তুমি আমায় কি বলে ডাকলে! আমাকে ভাইয়া বলে ডাকল!”

মুগ্ধ নিজের কর্ণকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ নেত্রদ্বয়ে হাজারো প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে৷ মুখ হালকা হা করে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে৷ মুগ্ধর চাহনি নিধি বুঝতে পারল না৷ পুনরায় বিনয়ী স্বরে বলল,

“আমি আপনাকে ভাইয়া বলেই ডাকব৷ আপনি মানা করলেও আমি ভাইয়া বলে ডাকব৷ এখন মুখটা বন্ধ করেন, নয়ত মুখে মশা ঢুকবে৷”

মুগ্ধ নিজের বোকামি বুঝতে পেরে হেঁসে উঠে৷ একটু আগে যতটা খারাপ লাগছিল এখন খারাপ লাগছে না৷ কতো মধুর কন্ঠে ভাইয়া ডাক শুনতে পারল৷ ভাইয়া ডাকটা কি মুগ্ধর বাজে ভাবনাকে আড়াল করল? নেশাগ্রস্ত হচ্ছে না নিধিকে দেখে৷ অদ্ভুত ভালোবাসার টান অনুভব করল৷ মুগ্ধও চেয়েছিল তার ছোট পুতুলের মতো একটা বোন থাকবে৷ তার কি সেই আশা পূর্ণ হবে এবার? মুগ্ধ ঠোঁট প্রসারিত করে মুচকি হেঁসে বলল,

“তুমি আমাকে ভাইয়া বলেই ডাকতে পারবে৷ আমার কোন সমস্যা নেই৷ আমিও তোমাকে আজ থেকে বোনের নজরে দেখব৷ এখন কাজের কথায় আসি।”

“হুম ভাইয়া৷ আপনি আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আমাকে কি কি কাজ করতে হবে?”

“আমি তোমাকে কাজ দেওয়ার জন্য ডাকিনি৷ তোমার বাসা কোথায়? তোমার মা বাবা কি করেন? তোমাকে নিয়ে তাদের নিশ্চয় চিন্তা হচ্ছে। আমাকে তোমার বাসার ঠিকানা দাও। আমি তোমাকে সাবধানে পৌঁছে দিব৷”

নিধির চোখের কোণায় অশ্রু ঝলমল করে উঠল৷ চোখের পাতা বন্ধ করলেই টুপ করে গড়িয়ে পড়বে অশ্রু। ঘন ভারী পাপড়ি দ্বয় ভিজে উঠে৷ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসল৷ হুট করেই দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। নিজেকে শান্ত রেখে বলল,

“আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই৷ আমাকে যদি বের করে দেন তাহলে আমায় রাস্তায় থাকতে হবে৷ আবার বাজে লোকগুলো ধরে নিয়ে যাবে৷ আমার বাবা পৃথিবীতে থেকেও আমার কাছে মৃত৷ বাবার হওয়ার কোন দায়িত্ব পালন করেননি৷”

মুগ্ধ নিধির চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,

“তোমাকে কোথাও যেতে হবে না৷ তুমি তোমার ভাইয়ার বাসায় থাকবে৷ তবে আমার হয়ে তোমার একটা কাজ করে দিবে৷”

নিধি উৎফুল্ল উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“আমি সব কাজ করে দিব৷ বলেন, আমায় কি কাজ করতে হবে?”

মুগ্ধ নিজের ফোনের ওয়ালপেপারে একটা মেয়ের পিক দেখিয়ে বলল,

“আমার গার্লফ্রেন্ড। আমি কিছুতেই মাকে আমার বিয়ের কথা বলতে পারছি না৷ কিছু বলতে গেলেই শাওনের কথা বলেন৷ আমার থেকে কিছু মুহুর্তের বড় শাওন৷ সে বিয়ে করার পর আমায় বিয়ে করাবে৷ ৩০ বছর হয়ে গেল৷ শাওন বিয়ে করতে রাজি নয়৷ আমার একাকিত্ব ভালো লাগে না৷ আমার হয়ে তুমি মা’কে বুঝাব৷”

মুগ্ধকে আশ্বাস দিয়ে বলল,

“কোন চিন্তা করতে হবে না৷ নিধির কাছে এসব কাজ কিছুই না৷ আমাকে আপনার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন৷ কিভাবে সফল হয় দেখে যান?”

মুগ্ধ নিধিকে তার মায়ের রুমে নিয়ে আসল৷ শায়লা চৌধুরী বিছানায় শুয়ে আছেন৷ মুগ্ধর দিকে না তাকিয়ে বলল,

“মুগ্ধ আজ অফিসে যাওনি কেন? অনেক বেলা হয়ে গেছে৷ শাওন একা একা সব কাজ করছে৷”

মুগ্ধ ভয়ে ভয়ে বলল,

“মা নিধি আসছে৷ আজ থেকে নিধি আমাদের সাথে থাকবে৷ নিধি আমার ছোট বোন হয়ে এ বাসায় থাকবে৷”

এক নিঃশ্বাসে চোখ বন্ধ করে মুগ্ধ কথাগুলো বলল। মায়ের চোখের উপর কথা বলার সাহস নেই৷ শায়লা চৌধুরী ছেলের দিকে দৃষ্টি মেলে তাকান৷ নেত্রদ্বয় বন্ধ। ওষ্ঠ কাঁপছে। আরও অনেক কথা বলার আছে৷ কিন্তু বলতে পারছে না৷ শায়লা চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“দুই মিনিটের মধ্যে অফিসে যাবে৷ এ নিয়ে তোমার সাথে পরে কথা বলব৷ তুমি এখান থেকে যেতে পারো৷”

মুগ্ধ নিধির দিকে তাকিয়ে শুকনো ঠুক নিল৷ চোখের ইশারায় চলে যেতে বলে৷ যেন সিংহের খাঁচায় তারা ধরা পড়েছে৷ দু’জনে চলে যাওয়ার জন্য কদম ফেলতেই রাগী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“এই মেয়ে আমি কি তোমাকে যেতে বলছি? শুধু মুগ্ধকে যেতে বলছি৷ ইশারায় অনেক কথা বলতে পারা সৃজনশীলতা৷ মুগ্ধ আমি তোমার সৃজনশীলতাকে রেসপেক্ট করি৷ এখন নিজের সৃজনশীল বুদ্ধি অফিসের কাজে লাগাও৷”

মুগ্ধ ধরা পড়া চু/রে/র মতো শায়লা চৌধুরীর দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায়। প্রতিটি মা তার সন্তানকে শাসনে রাখতে ভালোবাসেন৷ শাসনে রাখলে সন্তানরা ঠিক ভুলের বিচার করতে পারে৷ শায়লা চৌধুরী নিধিকে ভালোভাবে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

“এই মেয়ে! এভাবে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে কেন? আমার কাছে এসে বসো৷ আমি দেখতে চাই মুগ্ধর বোন কেমন?”

শাওয়ার চৌধুরীর চোখের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখের পাতা নিচু করে ফেলল৷ সামনের দিকে কদম যাচ্ছে না৷ এক একটা কদম যেন এভারেস্ট জয়ের সমান। কাঁপা কাঁপা পায়ে শায়লা চৌধুরীর সামনে দাঁড়াল। ভীতু কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

“আসসালামু আলাইকুম ম্যাম৷”

শায়লা চৌধুরী সালামের জবাব দিয়ে বলল,

“তোমার নাম কি? তোমার বাসা কোথায়? মুগ্ধর সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে?”

মাথা নিচু করে ভীত কন্ঠে জবাব দিল,

“আমার নাম তাসফিয়া নিধি। আমি গ্রাম থেকে এসেছি৷ আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান মুগ্ধ ভাইয়া৷ উনার সাথে আমার পরিচয় অল্প সময়ের৷”

“তোমার মা বাবা কি করেন? দেখে মনে হচ্ছে বয়স তেমন হয়নি৷ বাচ্চা মেয়েকে কিভাবে একা ছাড়েন?”

নিধি মলিন কন্ঠে জবাব দিল,

“আমার মা বেঁচে নেই৷ বাবা পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও আমার কাছে মৃত৷ কোনদিন বাবার কর্তব্য পালন করেননি৷ যত ভালোবাসা সবই ছিল আমার বোন তিতিরের জন্য৷”

“তোমার বাবা কোথায়? উনাকে আমাদের বাসায় আসতে বল।”

শায়লা চৌধুরীর কন্ঠ স্বাভাবিক৷ কিন্তু সেই কন্ঠে হাজারো প্রশ্ন। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনার সামনে মিথ্যা বলা যাবে না৷ নিধি ভেজা গলায় বলল,

“আমার বাবা খুঁজ নিতে কখনও আসবেন না৷ আমাকে বাবা এবং সৎমা মিলে বিক্রি করে দিয়েছেন নিষিদ্ধ পল্লীতে৷ তিতির আপুর বিয়ের যৌতুকের টাকার জন্য। গতকালই আমি গ্রাম থেকে ঢাকায় আসি৷ আমাকে বলা হয় আমার লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছে৷ পড়ার নামে জায়গা হলো নিষিদ্ধ পল্লীতে। আমার উপর দিয়ে ভয়ে গেলে কাল বৈশাখীর ঝড়৷ নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছিল৷ আত্মহত্যা মহাপাপ। সেখানে আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে শ্যামলী নামের একটা মেয়ে৷ উনার সাহায্যে আমি পুরুষের পোশাক পড়ে বের হতে পেরেছি। আমি গাড়ির ডিপিতে আশ্রয় নেয়৷ আর সে গাড়িটা ছিল মুগ্ধ ভাইয়ার৷ আমি এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে পারিনি৷ আমি এখন গ্রামে ফিরে গেলে আমায় আবার বিক্রি করে দিবে৷ সৎমা আমায় একদম সহ্য করতে পারে না৷”

নিধি কান্নায় ভেঙে পড়ল৷ নিধির কথাগুলো সন্দেহজনক মনে হলো বোনকে নিয়ে৷ নিজের জল্পনা কল্পনা বাদ দিয়ে প্রশ্ন করলেন,

“তোমার সৎ বোন তোমার থেকে বড়! তোমার সৎ বোন তোমার থেকে কিভাবে বড় হয়?”

নিধি মাথা নিচু করে ভেজা গলায় বলল,

“স্বার্থ ছাড়া কেউ কদম ফেলে না৷ আমার বাবাও স্বার্থ ছাড়া কদম ফেলেন না৷ যখন তিতিরের জন্ম হয় তখন সৎ মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ আমার মা ছিল একদম গরিব ঘরের মেয়ে৷ এক বেলা খেতে পারলে অন্য বেলা খেতে পারত না৷ তখন মায়ের উপর চোখ পড়ে বাবার৷ সৎমাকে দেখা শোনা করার জন্য মাকে বিয়ে করেন৷ মা রাজি হয়ে যান দু’বেলা দু’মুটো খাবারের জন্য। গ্রামে কারো কাছে কাজের জন্য গেলে সবাই খারাপ নজরে দেখত৷ এক প্রকার বাধ্য হয়েই স’তী’নে’র সাথে ঘর করতে রাজি হয়ে যান৷ দুই বছর পর মায়ের কোল আলো করে আমি আসি৷ আমাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারলেও তিনি আর পৃথিবীর আলো দেখতে পারলেন না৷ জন্ম দিয়েই মারা গেলেন। আমার স্থান হলো নানীর বাসায়৷ অনেক কষ্টে আমায় মানুষ করেন৷ একদিন মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকেও নিয়ে গেলেন৷ স্থান হলো সৎ মায়ের ঘরে। শুরু হলো শারীরিক মানসিক অত্যচার৷ তবুও সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করে নিয়েছি৷ সব সীমা অতিক্রম করে আমাকে শেষ পর্যন্ত বিক্রি করে দিলেন নিষিদ্ধ পল্লীতে৷”

নিধি আর কিছু বলতে পারল না৷ চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ কোন বাঁধা মানছে না৷ হাসিখুশি মেয়েটার জীবনের উপর দিয়ে অনেক কাল বৈশাখীর ঝড় বয়ে গেছে৷ প্রতিবারই ভেঙে পড়েছে। ঠিক তখন মহান সৃষ্টিকর্তা কারোর মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ নিধি কান্না করতে হিঁচকি উঠে যায়৷ পুরানো কথাগুলো গায়ে কাঁটা দিল৷ শায়লা চৌধুরী আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললেন,

“এখানে তোমার কোন ভয় নেই৷ তুমি এখানে মুগ্ধর বোন এবং আমার মেয়ে হয়ে থাকবে৷ তোমার স্বপ্ন হলো নিজেকে গড়ে তোলা। মানুষকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে হবে৷ পাপীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷”

নিধি কোন কথা বলতে পারছে না৷ একটা ঘোরের মধ্যে রয়ে গেছে৷ ভয়ে সব সত্য কথা বলে দিয়েছে৷ সত্য যতই তিক্ত হোক মেনে নেওয়া উচিত৷ মিথ্যার মায়াজালে সত্যকে ঢেকে রাখে যায় না৷ একদিন না একদিন সামনে আসতেই হলো৷ প/তি/তা বলে দূরে ঠেলে দিবে কি? নিষিদ্ধ পল্লীতে কারো সাথে বিছানা শেয়ার করেনি৷ তবু্ও কি তার গায়ে ক’ল’ঙ্কে কালী লাগবে? মানব সমাজ মানুষকে টেনে নিচে নামাতে পারে৷ যদি হয় মেয়ে তাহলে কোন কথা নেই। কখনও কাউকে ভালোর নজরে দেখতে পারে না৷ নিধি এখনও কান্না করে যাচ্ছে৷ শায়লা চৌধুরী কি বলবে বুঝতে পারছেন না? একটা নিষ্পাপ মেয়ের সাথে কত বড় দূর ঘটনা ঘটে গেছে। ভাবতেই নিজের চোখের পাতা ভিজে এলো৷ ইচ্ছা করছে শক্ত করে বুকের মধ্যে আগলে রাখতে৷ মায়ের কোমলতা লুকিয়ে গম্ভীর রাগী গলায় বলল,

“কান্না বন্ধ করো৷ আমার সামনে অহেতুক চোখের জল ফেলবে না৷ পাপীদের যদি শাস্তি দিতে চাইলে চোখের চোখের জল মুছে ফেলো৷ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও৷ হাতে তুলে নিতে হবে ধ্বংসের হাতিয়ার৷”

নিধি চোখের অশ্রু মুছে ফেলল৷ তবুও অশ্রু বাঁধা মানছে না৷ সবকিছু যেন কিশোরীর মনে প্রতিচ্ছবি হচ্ছে৷ মেয়েদের দুর্বলতা চোখের অশ্রু। আর সে কান্না করবে না৷ ভেজা গলায় বলল,

“আমাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিবেন না৷ আমি বাসার সব কাজ করে দিব৷ তার বিনিময়ে আমাকে এক কোণায় ঠায় দেন৷ গ্রামে ফিরে গেলে আমার নামে ক’ল’ঙ্ক ছড়িয়ে দিবে৷ আমার এত বড় ক্ষতি করবেন না৷”

“তোমাকে গ্রামে যেতে হবে না৷ তুমি এখানেই থাকবে৷ তোমার কাজের বিষয়ে তোমার সাথে পরে কথা হবে৷ এখন তুমি আসতে পারো৷”

নিধি কথা না বাড়িয়ে চলে গেল৷ তিথি আপুর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে শায়লা চৌধুরীর জন্য গরম তেল নিয়ে আসল৷ গরম তেল মালিশ করলে ভাঙা পায়ের অবস্থা উন্নতি হবে৷ শায়লা চৌধুরী চোখা পাতা বন্ধ করে শুয়ে আছেন৷ নিধি ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে বলল,

“আমি আপনার পায়ে তেল মালিশ করে দিব ম্যাম৷ তেল মালিশ করলে অনেকটা উন্নতি হবে৷ আপনার পা ঠিক করার দায়িত্ব আজ থেকে আমার৷”

শায়লা চৌধুরী কিছু বলতে নিয়েও বলল না৷ তিনি তো জানেন পা নিয়ে কত কষ্টে আছেন৷ অবশ্য নিজের অলসতার জন্য ঠিক হয়নি৷ কাউকে সঙ্গী হিসেবে পাইনি হাঁটার জন্য। কেউ সাহস জোগায়নি৷ শায়লা চৌধুরীর সম্মতি পেয়ে নিধি পরম সুখে পায়ে তেল মালিশ করে দিল৷ ব্যথা পেলেও সহ্য করে নিল৷

শাওন অফিস থেকে ফিরে নিধিকে ডাইনিং রুমে দেখতে পেলে৷ বাচ্চাদের মতো কার্টুন সিরিজ দেখছে৷ নিধির দিকে তাকিয়ে দেখল সে এখনও শার্ট প্যান্ট পরিধান করে আছে৷ বুঝতে বাকী রইল না তার পড়ার জন্য কিছুই নেই৷ শাওন চৌধুরী নিধির সামনে দেয়ালের মতো দাঁড়াল৷ নিধিকে কিছু বলার সু্যোগ না দিয়ে রিমোট নিয়ে টিভি বন্ধ করে দিল৷ নিধি কিছু বলার আগে শাওন বলল,

“আমার সাথে চলো৷ তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাব৷”

শাওনের কথা শুনে নিধির অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। তার সাথে খারাপ কিছু করবে না তো? নিধির উত্তরের পরোয়া না করেই নিধির হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসে৷ ভয়ে নিধি কথা বলতে পারছে না৷ কাঁপা কাঁপা ওষ্ঠে অস্পষ্টভাবে বলল,

“আমি আপনার সাথে যাব না স্যার৷ আমাকে আপনি… ”

নিধিকে থামিয়ে চোখ বড় করে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“কোন কথা নয়৷ চুপচাপ বসো৷”

নিধি গাড়িতে বসে আল্লাহর নাম স্মরণ করছে৷ বিপদে একমাত্র ভরসা মহাল আল্লাহ তায়ালা৷

চলবে…..

#মেঘের_পালক_চাঁদের_নোলক
#পর্ব_০৫
#অধির_রায়

শাওন চৌধুরীকে কিছু বলার সাহস হচ্ছে না৷ নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে৷ আর কি কোন গাড়ি ছিল? শেষে কিনা শাওন চৌধুরীর বাড়ির গাড়িতে জায়গা হলো৷ শুধু গাড়িতে নয়৷ বাড়িতে জায়গা হয়ে গেছে৷ নিধি উদাস মন নিয়ে আকাশ পাতাল এক করে ভেবে যাচ্ছে৷ তার প্রশ্নের উত্তর মাথায় আসছে না৷ শাওন চৌধুরী তাকে কোথায় নিয়ে যাবে? নিধির মাথায় দু’ষ্টু বুদ্ধি উঁকি দিল। শাওনকে ভাইয়া বলে ডাকতে পারে৷ শাওনের রিয়েক্ট দেখার জন্য নিধি মলিন কন্ঠে বলল,

“ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

ভাইয়া শব্দটা শাওনের কর্ণধারে পৌঁছাতেই গাড়ির ব্রেক ক’ষে৷ নিধি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে৷ গাড়িতে মাথা ঠেকার আগেই শাওনের হাতে মাথা ঠেকে। নিধি ভয়ে ভয়ে বলল,

“এভাবে মাঝ রাস্তায় কেউ ব্রেক করে৷ পা/গ’ল হয়েছেন।”

নিধির কন্ঠে ভয়ের ছাপ দেখাচ্ছে। কিন্তু এমন ভাব দেখাচ্ছে সে বিরল পরিমাণ ভয় পাইনি৷ শাওন কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিল৷ রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,

“তুমি আমার বাবার কত নাম্বার সন্তান৷ তুমি আমার বাবার বংশধর কবে হলে? আমাকে তোমার ভাইয়া মনে হয়!”

শাওনের শান্ত রাগ দেখে নিধি ঘাবড়ে যায়৷ ভাইয়া শব্দে শাওন চৌধুরীর এলার্জি নেই তো৷ এলার্জি থাকলে মুগ্ধ ভাইয়া যখন শাওন চৌধুরীকে ভাইয়া বলে ডাকছিল তখন তো এমন রিয়েক্ট করেনি৷ নিধি আমতা আমতা করে বলল,

“মুসলমান পরস্পরের পরের ভাই৷ সে সূত্র ধরে আমি আপনাকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করেছি৷”

শাওন মুচকি হেঁসে বলল,

“আমি তো ভুলেই গেছি৷ মেয়ে মানুষ ছেলেদের পোশাক পড়লে ছেলে হয়ে যায়৷ তুমি এখন ছেলে তাহলে তুমি আমার সাথে ঘুমাতে পারো৷ আজ রাতে এক সাথে বিছানা শেয়ার করব৷ কারণ আমরা ভাই ভাই৷”

শাওনের ঠোঁটের কোণে দু’ষ্টু হাসির রেখা৷ লোকটা জীবনেও ভালো হবে না৷ মেয়ে মানুষ দেখলেই মাথায় বাজে চিন্তা আসে৷ নিধি রাগে লজ্জায় আর কথা বাড়াল না৷ সিটে হেলান দিয়ে আঁখি বুঝে রয়েছে নিধি৷ শাওন বারবার আড় চোখে নিধিকে দেখে যাচ্ছে৷ গাড়ি থামে শপিংমলের সামনে৷ নিধি চকিত হয়ে বলল,

“আমরা এখানে কেন এসেছি?” সামনে তাকিয়ে, “এত বড় শপিংমল!”

শাওন চৌধুরী নিধির হাত ধরে হেঁসে বলল,

“এখানে আমরা ড্যান্স করতে এসেছি৷ আমরা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে এসেছি। শপিংমলে মানুষ কিসের জন্য আসে?”

নিধি ক্ষোভ নিয়ে বলল,

“আপনি কি ভালোভাবে কথা বলতে পারেন না? একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, জানেন না?”

“মিস অপরিচিতা! আমি আপনাকে যুগান্তর থেকে চিনি৷ এখন কথা না বাড়িয়ে ভিতরে যাওয়া যাক৷”

শাওনের কথা নিধি বুঝতে পারল না৷ ছোট কিশোরীর মন বুঝতে পারল না যুগান্তর কি? মানে শাওন চৌধুরী অপরিচিতাকে অনেক আগে থেকে চিনে৷ আমি তো অপরিচিতা নয়৷ আমার নাম তাসফিয়া নিধি। প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে যায়৷ বিপদ ঘটে সিঁড়ি লিফ্টে৷ জীবনে প্রথম সিঁড়ি লিফ্ট দেখছে৷ কিভাবে উঠতে হবে বুঝতে পারছে না? মানুষ খুব সহজেই উঠে পড়ছে৷ নিধি পারছে না কেন? খুব ভয় লাগছে৷ নিধি সকল জল্পনা কল্পনা এক দিকে রেখে বলল,

“চলেন আমরা অন্য সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠব। এমন উড়ন্ত সিঁড়ি উঠব না৷”

শাওন বিষয়টা বুঝতে পারল৷ নিধি ভয় পাচ্ছে৷ কোন কিছু না ভেবে শাওন নিধিকে পাঁজা কোলা করে সিঁড়িতে উঠে পড়ে৷ নিধির চোখ কলকাতার রসে গোল্লার মতো রুপ নেয়৷ অসভ্য শাওন চৌধুরী ছলে বলে নিধিকে স্পর্শ করতে চাচ্ছে৷ এত মানুষের মধ্যে লজ্জা টুকুও নেই৷ একটা লোক তো বলেই ফেলল,

“ভাবীকে ভিষণ ভালোবাসেন৷ আপনার ভালোবাসা অমর হোক।”

শাওন চৌধুরী মুচকি হাঁসলেন। কোন জবাব দিলেন না৷ নিধি কিছু বলতে নিলে চোখ পাকিয়ে থামিয়ে দেন৷ নিধিকে একদম শপিংমলের ভিতরে নামিয়ে দেন৷ লোকটার গায়ে শক্তি আছে বলতে হবে৷ শাওন নিজে পছন্দ মতো নিধিকে ড্রেস কিনে দিলেন৷ নিধি লজ্জায় শাওনের দিকে তাকাতে পারছে না৷ শপিং শেষে খাবারের জন্য নিধিকে বললে জবাবে না বলে দেয়৷ শাওন আর জোড় করেনি৷ গাড়িতে উঠেই নিধি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠল,

“আপনার মতো অসভ্য লোক দু’টো নেই৷ আমার কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন৷ পরবর্তীতে আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করলে হাত কেটে দিব৷”

শাওন কোন জবাব দিল না৷ নিধির চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল দিল৷ এতে নিধির রাগ কয়েকগুণ বেড়ে গেল। মনে মনে শাওনের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে বাড়িতে ফিরে৷
_______________________

ছোট নিধি বাচ্চাদের মতো এলোমেলো হবে ঘুমিয়ে আছে৷ খোলা কেশগুলো সমস্ত মুখে ছড়িয়ে আছে৷ শাওন নিধির পাশে বসে সযত্নে কেশগুলো কানের কাছে গুঁজে দিচ্ছে৷ অপলক দৃষ্টিতে পলকহীন নয়নে দেখতে ব্যস্ত প্রিয় প্রেয়সীকে৷ ভালোবাসার বাঁধনে আটকা পড়ছে৷ প্রথম দেখায় এত ভালো লাগবে বুঝতে পারেনি। মিশে গেছে হৃদয়ের গহীনে৷ আবছা আলোয় মায়াবী লাগছে৷ নিধির কপালে ওষ্ঠ স্পর্শ করে শাওন শায়লা চৌধুরীর রুমে আসে৷ শায়লা চৌধুরী বসে বসে মীর মশাররফ হোসেনের বিখ্যাত উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু” পড়তে ব্যস্ত৷ মায়ের কাছে আসা হয়না শাওনের৷ দিনের বেলা কাজে ব্যস্ত থাকে। রাতের আলো পড়তেই নিষিদ্ধ পল্লী বা অকটেন পার্টিতে স্থান হয়৷ শাওনকে বাড়িতে দেখে অবাক হোন শায়লা চৌধুরী। চকিত গলায় বললেন,

“আজ তোমাকে বাড়িতে দেখতে পারব ভাবতেই পারিনি৷ তুমি বাহিরে যাওনি৷ তোমার পায়ে শিকল পড়িয়েও বাড়িতে রাখা যায়না৷ রাতের শেষ প্রহরে খুঁজে আনতে হয় মুগ্ধকে দিয়ে৷”

শাওন অপরাধী কন্ঠে জবাব দিল,

“মা আমি রাতে আর বাহিরে যাব না৷ যার ঘরে পূর্ণিমার আলো থাকে সে বাহিরে যাবে কেন? আমার ঘরে আমার পূর্ণিমার চাঁদ চলে এসেছে৷”

শায়লা চৌধুরী ব্রো কুঁচকে ছেলের দিকে তাকান৷ ছেলের কথা বুঝতে পারল না৷ শাওন মায়ের কোলে মাথা রেখে বলল,

“মা তোমার ছেলে পিচ্চি মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছে৷ তার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে৷ পিচ্চি মেয়েটা কি তোমার ছেলের মনের কথা বুঝতে পারবে? বাসবে কি ভালো আমায়?”

শায়লা চৌধুরী আরও অবাক হয়৷ তিনি নিজের কর্ণকে বিশ্বাস করতে পারছেন না৷ সত্যি শুনছেন তো৷ তার যে ছেলে মেয়েদের দু’চোখে দেখতে পারত না সেই ছেলে মেয়ের প্রেমে পড়েছে৷ তাও আমার বাচ্চা মেয়ের৷ তার কাছে মেয়ে মানুষ শুধু ভোগের বস্তু ছিল৷ শাওয়া চৌধুরী ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“মেয়েটা কে? যার প্রেমে আমার ছেলে হাবুডুবু খাচ্ছে৷ কে আমার ছেলের মনে ভালোবাসার বীজ রোপণ করল?”

“তোমার সাথে পরিচয় করানো হয়নি৷ আজ আমাদের বাড়িতে নিধি নামের একটা মেয়ে আসছে৷ সেই বাচ্চা মেয়েটা তোমার ছেলের মনকে জয় করে নিয়েছে৷ এক পলক দেখায় তোমার ছেলের মনে কাল বৈশালীর ঝড় বয়ে গেছে৷ সবকিছু তছনছ করে দিছে৷ তার প্রতি তোমার ছেলের মোহ নয়৷ বরং ভালোবাসা কাজ করে৷”

শায়লা চৌধুরী ছেলের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না৷ নিধি ছাড়া অন্য কেউ এখনই বিয়ের ব্যবস্থা করতেন৷ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“আমার সাথে পরিচিত হয়েছে৷ তোমার থেকে মিনিমাম পনেরো বছরের ছোট হবে নিধি৷ তোমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে অনেক বছর লেগে যাবে৷ ততদিনে নিধি তোমার জন্য অপেক্ষা করবে না৷ তোমার বয়স থেমে থাকবে না৷ আমি চাই তুমি নিধিকে ভুলে যাও৷”

শায়লা চৌধুরীর কথায় শাওনের রক্ত গরম হয়ে গেল৷ মাথা তুলে কঠিন কন্ঠে জবাব দিল,

“আমি বিয়ে করলে নিধিকেই করব৷ নিধিকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করব না৷ কেউ আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না৷ তুমিও পারবে না৷ আমার ভালোবাসার জন্য আমি সারাজীবন অপেক্ষা করব৷ নিজেকে তার যোগ্য করে তুলব। তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি৷”

শায়লা চৌধুরী কোমল কন্ঠে বলল,

“শাওন আমি তোমাকে তেমনভাবে বলতে চাইনি৷ আমি জানি নিধি খুব ভালো মেয়ে৷ আমি মানুষ চিনতে ভুল করিনা৷ তোমাদের বয়সের পার্থক্য দেখছো৷ তোমার হাঁটুর বয়সী নিধি৷ নিধিকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে আমার কোন আপত্তি নেই৷ আমারও তাকে অনেক ভালো লেগেছে৷”

“কোন কথা নয়৷ মা তুমি ভালো করেই জানো আমার চাওয়া কতোটা খারাপ। আমার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে আমি কাউকে পরোয়া করিনা। তার থেকে বরং তোমরা নিধিকে মেনে নাও৷ আমি কাল নিধিকে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যাব৷ কাউকে আমার নিধিকে ছোট করার সুযোগ দিব না৷ আর হ্যাঁ তার পরিচয় আমার কাছে বড় কিছু নয়৷ কোন আপত্তি থাকলে আমি নিধিকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব৷”

শাওন কথা না বাড়িয়ে হনহনিয়ে শায়লা চৌধুরীর রুম থেকে প্রস্থান করে৷ শায়লা চৌধুরী ছেলের সামনে কঠোর হলেও মনে মনে অনেক খুশি৷ তার ছেলেটা ভালোবাসার বাঁধনে আটকা পড়েছে৷ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন যেন নিধি তার ছেলের ভালোবাসা বুঝতে পারে।
_______________________

নিধি চোখ মেলে শাওনকে দেখতে পেল৷ তার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে৷ নিধির চোখ আটকে যায় শাওনকে দেখে৷ মুগ্ধ নয়নে শাওনকে দেখে৷ ঠোঁট কোণে সব সময় হাসি লেগে থাকে৷ যা নিধির খুব ভালো লাগে৷ কিন্তু শাওন চৌধুরী রুমে কি করছে? নিধি বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে কঠিন গলায় বলল,

“আপনি এখানে কি করছেন? রুমে আসলেন কিভাবে?”

শাওন নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,

“ফ্রেশ হয়ে আসো৷ তোমার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছি৷ তোমার তন্দ্রা কাটলে তাড়াতাড়ি করো৷ তোমাকে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যাব৷”

নিধি যেন নিজের হাতে চাঁদ পেল৷ এক দৌড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল৷ অনেক স্বপ্ন লেখাপড়া করে ডাক্তার হবে৷ গরিব মানুষকে বিনা টাকায় চিকিৎসায় করবে৷ তার স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে৷ শাওন নিধির পা’গ/লা/মি দেখে মুচকি হেঁসে মনে মনে বলল,

“তোমার প্রেমে পা”গ”ল আমি৷ তুমি না চাইলেও তোমার কাছে আসবো৷ তুমি না চাইলেও তোমায় ভালো বাসবো৷ যত্নে আগলে রাখব তোমায়৷ আমার সবটুকু ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য৷ খুব ভালোবাসি পিচ্চি৷”

চলবে…..