মেঘ বলেছে তুমি আমার পর্ব-০৪

0
223

#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৪
_______________

‘ এই মেয়ে, এই ওভাবে দাঁড়িয়ে কি করছো এখনই তো পড়ে যাবে?’

আচমকাই কঠিন গলায় এক পুরুষালির কণ্ঠ শুনে উত্তেজিত হয়ে পিছনে তাকাতেই ধপাস করে পড়ে যেতে নিলো অহনা। সঙ্গে সঙ্গে নীলয় দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেললো তাকে। আকস্মিক এমন কান্ডে অহনা নীলয় দুজনেই বেশ অপ্রস্তুত ছিল।’

খিঁচে চোখ বন্ধ করে আছে অহনা। ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে তার। নীলয় তাকিয়ে দেখলো অহনাকে। সে বুঝেছে মেয়েটি খুব ভয় পেয়েছে। নীলয় হাল্কা হেঁসে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

‘ ভয় পাওয়া বন্ধ হলে এবার চোখ খোলা হোক।’

অহনা চমকে উঠে চোখ খুললো দ্রুত। নীলয়ও কোল থেকে নামালো অহনাকে। তারপর বললো,

‘ এভাবে কেউ খাটের কর্ণারে টুল রাখে।’

অহনা মাথা নিচু করে বলে,

‘ আই এম সরি।’

ব্যস এতটুকু বলেই দৌড়ে ছুটে গেল অহনা আর নীলয় জাস্ট হা হয়ে গেল অহনার কান্ডে। মুখ থেকে অদ্ভুত শব্দ করে বললো,

‘ বিষয়টা কি হলো মেয়েটা এমন দৌড়ে পালালো কেন? তাকে ভয়ানক দেখাচ্ছে নাকি।’

নীলয় পুরো রুমটা একবার চোখ বুলালো খানিকটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বসলো খাটে।’

____

নিজের রুমে ঢুকে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো অহনা। মাত্রই কি ঘটলো ভাবতেই কেমন যেন লাগছে তার। ওই ছেলেটাই নীলয় ছিল। অহনা বুকে হাত পেতে নিঃশ্বাস ফেললো বার কয়েক। নীলা ছাঁদ থেকে নেমে ঢুকলো রুমে বোনকে হাঁপাতে দেখে বললো,

‘ কি আপু হাঁপাচ্ছিস কেন?’

মাথা ঘুরিয়ে তাকালো অহনা। বললো,

‘ না কিছু হয় নি অনেক দ্রুত দ্রুত কাজ করলাম না তাই একটু হাঁপিয়ে গেছি।’

‘ নীলয় ভাইয়াকে দেখেছিস আপু?’

মাথা নাড়িয়ে না বলে অহনা। বোনের ইশারা দেখে ক্ষীণ স্বরে বললো নীলা,

‘ কি দেখিস নি।’

আবারও মাথা নাড়ায় অহনা।’

‘ ভাইয়াকে খুব সুন্দর দেখতে আপু। কি ফর্সা, আহিয়ান ভাইয়ার থেকেও ফর্সা। মাথা ভর্তি সিল্কি চুল। ইস! কি সুন্দর?’

অহনা কিছু বলে না চুপ করে রয়। অহনার মা এসে দরজায় নক করলেন। অহনা নীলা দুজনেই ঘুরে তাকালো সেদিকে। দুই মেয়ে তাকাতেই বললেন অহনার মা,

‘ রুমে বসে কি করছিস দুজন দ্রুত আয় ওনারা তো এসে পড়েছে তোদের দুজনকে দেখতে চাইছে।’

অহনা নীলা দুজনেই একে অপরের দিকে চাওয়া চাইয়ি করে বললো,

‘ তুমি যাও আমরা আসছি মা।’

অহনার মা শুনলেন। মেয়েদের তাড়াতাড়ি আসতে বলে ছুটে গেলেন নিচে। মা যেতেই অহনা নীলা দুজনেই নিজেদের গায়ের ওড়নাটা মাথায় দিয়ে আস্তে আস্তে চললো নিচে।’
____

সিঁড়ি বেয়ে অহনা আর নীলা নিচে নামতেই নিচে বসে থাকা সবার দৃষ্টি আসলো ওদের দিকে। অহনা নীলাও হাল্কা মুচকি হাসলো তাতে। এগিয়ে গেল নীলয়ের বাবা মা দিকে। কাছাকাছি যেতেই অহনা নীলা দু’জনেই সালাম দিলো নীলয়ের বাবা মাকে। ওনারও সালামের জবাব দিয়ে মুচকি হাসলেন। নীলয়ের বাবা বললেন,

‘ মাশাআলাহ শরীফ তোর মেয়ে দুটোকে কিন্তু অনেক সুন্দর দেখতে।’

হাসলেন শরীফ। খানিকটা ভাব নিয়ে বললেন,

‘ দেখতে হবে না কার মেয়ে।’

হাসলেন আফজাল হোসেন। শরীফ আরো বললো,

‘ খালি আমার মেয়ে দুটোই সুন্দর তোর ছেলে কিন্তু আমার মেয়েদের থেকেও মাশাআল্লাহ দেখতে আরো সুন্দর। সেই কি পুঁচকে দেখেছিলাম সত্যি সময় কত দ্রুত ছুটে গেল তাই না।’

‘ তা আর বলতে তোর মেয়েকেও তো সেই পুচকে দেখেছিলাম নীলাকে তো দেখিই নি মনে হয়। তাও দেখ আজ তোর মেয়ের বিয়ের উপলক্ষে আসা হলো।’

এবার অহনার দাদু বললেন,

‘ এবার না আসলে আমেরিকা গিয়ে তোর পিঠের চামড়া উঠিয়ে দিতাম। আমার আগের দুই নাতনির বিয়েতে আসিস নি এবার না আসলে।’

আফজাল হোসেন হাসলেন। বললো,

‘ কি আর বললো চাচাজান নীলয়টা একগুঁয়ে টাইপের কোথাও যেতে চায় না আর ওকে ছেড়ে আমরাও আসতে পারি না এবারও তো আসতে চায় নি ওর মাই একটু জোর করায় আসলো।’

এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো নীলয় পড়নে তার চকলেট কালার টিশার্ট আর এস কালার জিন্স, চুলগুলো হাত দিয়ে একবার ঠিক করেই সে বলে উঠল,

‘ এখানে নিশ্চয়ই আমায় নিয়েই কথা হচ্ছিল।’

অহনার দাদু হাসলেন। নীলয়কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘ তা একটু হচ্ছে এদিকে আসো দাদুভাই তোমায় একটু ভালোমতো দেখি তখন তো ভালো মতো দেখাই হলো না।’

নীলয় গেল, তার নজরে আসলো তখনকার সেই মেয়েটা মানে অহনার দিকে। তবে বেশিক্ষণ না তাকিয়ে গিয়ে বসলো দাদুর পাশ দিয়ে। দাদু নীলয়কে দেখে বললো,

‘ তা দাদুভাই আমাদের কথা কি মনে আছে মটেও?’

নীলয় কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার তো সত্যিই এদের কারো কথা মনে নেই। নীলয়ের অবস্থাটা যেন বুঝলেন দাদু মৃদুস্বরে বললেন,

‘ এত ভাবার কিছু নেই আমি জানি তোমার কিছু মনে নেই দাদুভাই।’

নীলয় এবার মুখ খুললো। বেশি না ভেবেই বললো,

‘ আমার সত্যি কিছু মনে নেই।’

‘ যাক গা চলো তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।’

এই বলেই একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে শেষে অহনা আর নীলাকে দেখিয়ে বললো,

‘ ও হলো আমার মেজো ছেলের বড় নাতনি অহনা যার বিয়েতে তোমরা এসেছো। আর ওর পাশের জন হলো নীলা ওর ছোট বোন এবার সেভেনে পড়ছে। আর অহনা অর্নাস সেকেন্ড বর্ষে আছে।’

অহনা সালাম দিল নীলয়কে নীলয়ও সালামের উত্তর দিলো। আর নীলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো শুধু।’
____

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা এলো। লাল লাল রঙে রাঙিত হচ্ছিল প্রকৃতি। বাড়ির ছাঁদে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে অহনা কেমন যেন লাগছে তার। হুট করে বিয়েটা ঠিক না হলে কি হতো না। সে চেয়েছিল মাস্টার্স কমপ্লিট করে চাকরি করবে তারপর বিয়ে। কিন্তু কি হলো? মাঝে মাঝে মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াতে বেশ খারাপ লাগে অহনার। আজ ছেলে হলে সে ঠিক চাকরির করার একটা সুযোগ পেতোই। অহনা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো পশ্চিমা আকাশটায় সূর্য ডুবছে, গ্রামের দূর কোলার মাঝ দিয়ে রাখাল গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছে, ফারুক চাচাও তার ট্রাক্টর চালানো শেষ করে কাঁদায় মাখোঁ মাখোঁ হয়ে বাড়ি ফিরছেন চাচি আজও নির্ঘাত চাচার সঙ্গে চেঁচাবে। বাড়ির পিছনের পুকুরটায় গিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা খেলা ধুলা শেষে হাত পা ধুয়ে বাড়ি ঢুকছে এদের মধ্যে নীলা আর জহিরও আছে। আকাশ পথ বেয়ে পাখিরা ছুটে যাচ্ছে মাগরিবের আজান দেওয়াও শেষ হলো মাত্র। অহনাকে ঘরে যেতে হবে নামাজটা সেরে ফেলতে আগে। নয়তো মা বকবে।’

অহনা রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা রাখতেই। এক ভাড়ি কণ্ঠ কানে এলো তার। কেউ বললো,

‘ তুমি তখন ওইভাবে দৌড়ে পালালে কেন? আমার চেহারা দেখে ভয় পেলে নাকি।’

অহনার পা আঁটকে যায়, দৃষ্টি গিয়ে থামে নীলয়ে মুখের দিকে। পরমুহূর্তেই দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নিচু করে খানিকটা কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,

‘ না ভয় পাবো কেন?’

‘ তাহলে দৌড়ে গেলে যে।’

‘ না মানে,

‘ বুঝেছি আমি লজ্জায় পেয়েছিলে নিশ্চয়ই।’

অহনার গাল লাল হয়ে উঠলো তখনকার থেকে এখন বেশি লজ্জা লাগছে তার। এভাবে কেউ বলে অহনা কথা বেশি না বাড়িয়ে বললো,

‘ আমাকে যেতে হবে।’

‘ ঠিক আছে যাও।’

অহনা দাঁড়ালো না। দ্রুত চলে এলো ওখান থেকে। নীলয়ের কেন যেন অহনার কান্ডটায় বেশ হাসি পেল। সে হেসেও উঠলো। সে বুঝেছে অহনা বেশ লজ্জাবতী মেয়ে। বিদেশি মেয়ে আর দেশিও মেয়েদের মাঝে বোধহয় এখানেই তফাৎ। নীলয়ের বিষয়টা বেশ ভালো লাগলো। সে আনমনেই ফট করে বলে ফেললো,

‘ রমনীদের লজ্জা হওয়ার বিষয়টা যেন চমৎকার!’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️