মেঘ বলেছে তুমি আমার পর্ব-০৫

0
233

#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৫
_______________

ঘড়িয়ে তখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে। গ্রামে কারেন্ট নেই। অহনাদের গ্রামের এক অন্যতম সমস্যা হলো এখানে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই রোজ কারেন্ট যাবে আর আসতে আসতে প্রায় আটটা সাড়ে আটটা বাজবে। আজও তার ব্যতিক্রম কিছু হলো না৷ গ্রামে কারেন্ট নেই। প্রচন্ড গরমে অস্থির নীলয়। এভাবে এত গরম সে মনে হয় কখনোই ফিল করে নি। শরীরে ঘামে ভীড় করতে শুরু করছে নীলয়ের। নিজের বিছানা থেকে উঠে বসলো নীলয়। পুরো রুমটায় অন্ধকারে ভীড় করছে। নীলয় গিয়ে জানালার ধারে দাঁড়ালো খানিকটা বাতাস লাগলো গায়ে। দরজায় নক পড়লো। নীলয় জানালার ধারে দাঁড়িয়েই বললো,

‘ কে?’

নীলয়ের কথার পিটে জবাব দিলো অহনা,

‘ আমি অহনা আসবো?’

নীলয় বেশি না ভেবেই বললো,

‘ হুম।’

অহনা ঠেলে দরজা খুললো। গায়ে পেস্ট কালার থ্রি-পিচ আর মাথায় পেস্ট কালার ওড়নাটা মুড়িয়ে হাতে হেরিকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অহনা। নীলয় দেখলো তাকে, এমন গোমটা মুড়ি দিয়ে হেরিকেন হাতে এই প্রথম কোনো মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো নীলয়। যদিও অহনার হাতের ওই হাল্কা আগুন দেওয়া আলো বিশিষ্ট জিনিসটা কি সে ধরতে পারে নি। নীলয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

‘ হুম বলো কিছু বলবে?’

অহনা মাথা নুড়িয়ে স্বল্প স্বরে বললো,

‘ মা পাঠালেন আপনার রুমে তো অন্ধকার তাই হেরিকেন দিয়ে যেতে বললেন।’

‘হেরিকেন’ জাতীয় শব্দটা যেন প্রথম শুনলো নীলয় তবে সে বুঝেছে অহনার হাতে থাকা জিনিসটার নামই হচ্ছে হেরিকেন। অহনা আলতো পায়ে ভিতরে ঢুকলো সামনের টেবিলটার ওপর হেরিকেনটা রেখে বললো,

‘ আমাদের এখানে একটু সমস্যা হলো সন্ধ্যার পড়ে কারেন্ট থাকে না। আপনার নিশ্চয়ই গরম লাগছে অনেক?’

নীলয় তার ঘামে ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,

‘ তা একটু লাগছে।’

‘ আপনি চাইলে ছাঁদে গিয়ে দাঁড়াতে পারেন ওখানে এখন অনেক বাতাস। আপনার ভালো লাগবে।’

অহনার কথার জবাবে শুধু এতটুকু বলে নীলয়,

‘ ওহ আচ্ছা।’

‘ জি।’

আর কথা বাড়ালো না অহনা আস্তে করে চলে আসলো নীলয়ের রুম থেকে। নীলয় তাকিয়ে রইলো একটু। কেন যেন তার মনে হয় এই অহনা মেয়েটা খুব চুপচাপ আর নীরব পদের। হাটেও আস্তে আস্তে যেন জোরে হাঁটলে নিচের রাস্তাটা ব্যাথা পাবে এমন, কথাও বলে আস্তে করে তবে শুনতে ভালো লাগে। কেন যেন হেঁসে উঠলো নীলয় সে তাকিয়ে রইলো টেবিলের উপরে থাকা হেরিকেনটার দিকে।’

____

বাড়ির শেষ প্রান্তে রয়েছে অহনাদের রান্নাঘর বা রন্ধনশালা। মাটির তৈরি রান্নাঘর। রান্নাঘরের বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নারিকেল গাছ ‘বাইল’ মানে নারিকেল গাছের বড় শুঁকনো সম্পূর্ন পাতাটা এছাড়া দু’একটা সুপারি গাছের পাতাও আছে। মাথা উপর কোনো ছাউনি নেই। উপরে তাকালেই পরিষ্কার আকাশটা পুরো দেখা যায়। নিচের মাটির সাথেই এডজাস্ট করা চুলা। বর্তমানে শুঁকনো পাতা দিয়েই সেই চুলায় রান্না করছে অহনার মা চাচিরা ওনাদের সাথে নীলয়ের মাও আছে। বহুবছর পর সেই ছোট বেলার কথা মনে পড়লো ওনার তার মাও গ্রামীণ এই মাটির চুলায় রান্না করতেন। টুকিটাকি গল্প গুজব সাথে সন্ধ্যার নাস্তা তৈরি করছেন ওনারা। নাস্তার রেসিপি হলো চা আর চাল ভাজা সঙ্গে নীলয়ের জন্য নুডলস। ছেলেটা হয়তো চায়ের সাথে চাল ভাজা এসব হয়তো কখনো খায় নি তাই ওর জন্য আলাদা করে নুডলস তৈরি করছেন অহনার মা। অহনা রান্না ঘরের দরজা সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল মা চাচিদের কার্যকলাপ। হঠাৎই তার মা বললেন,

‘ অহনা ভিতর ঘর থেকে চাপাতি টা নিয়ে আয় তো।’

অহনা শুনলো দ্রুত পায়ে ছুটে গেল ভিতরের ঘরে।’

গায়ে ফতুয়া আর লুঙ্গি পড়ে বাহিরে হাঁটাহাটি করছে অহনার বাবা আর নীলয়ের বাবা। গলায় গলায় ভাব তাদের অহনার বাকি দুই চাচা এখনো কাজ থেকে ফেরেনি।’

.
প্রচন্ড গরমে অস্থির হয়ে আর রুমে থাকতে না পেরে নীলয় ছুটে আসলো ছাঁদে। দাঁড়ালো এক পাশ দিয়ে ছাঁদে উঠতেই মনটা বাতাসে নড়ে উঠলো, শরীর হলো সতেজ এবার বেশ ভালো লাগছে তার। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অহনার কথা শুনে আরো অাগে আসলেই ভালো হতো। নীলয় চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো, আকাশটা পুরো সাদা হয়ে আছে বাড়ির সামনের উঠানটা পুরো দেখা যাচ্ছে। সাথে নীলয় এটাও দেখলো তার বাপ ফতুয়া আর লুঙ্গি পড়ে উঠোনে অহনার বাবার গলা ধরে হাঁটছে। বিষয়টা বড্ড নড়বড়ে লাগলো তার। তার বাবা লুঙ্গি পড়েছে ভাবা যায়।’

নীলয় উল্টো দিক ঘুরে তাকালো পুরো ছাঁদটাও চোখ বুলালো একবার খুব বেশি বড় নয় ছাঁদটা তবে ছাঁদের একপাশে অনেক ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বোধহয়। সন্ধ্যায় যখন ছাঁদে এসেছিল তখন হাল্কা পাতলা দেখেছিল চারপাশটা। এখনও দেখা যাচ্ছে তবে অল্প স্বল্প। নীলয় তার মোবাইলটা খুললো বাংলাদেশি সিমটা মোবাইলে ভরার পর আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢোকা হয় নি তার। নীলয় গ্রামীণ প্রকৃতির একদম শুদ্ধ বাতাস নিচ্ছিল আর মোবাইল দেখছিল। প্রকৃতি জুড়ে থাকা বাতাসটা কতক্ষণ পর পর যতবার বাতাসের তীব্র ছোঁয়া গায়ে লাগছিল নীলয়ের ততবারই মুচকি হাসছিল সে। বাতাস তার চুলগুলোও ছুঁচ্ছিল বার বার।’

প্রায় আধ ঘন্টার মতো ওভাবে কাটালো নীলয় মোবাইলে টাইমটা দেখলো সাতটা পঞ্চান্ন বাজে। নীলয় মোবাইলটা বন্ধ করে বুকে হাত বেঁধে রেলিংয়ে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। এমন সময় মাথায় ওড়না মুড়িয়ে হাজির হলো নীলা। বললো,

‘ নীলয় ভাইয়া তুমি এখানে আর আমি তোমায় সারাবাড়ি খুজচ্ছি।’

নীলয় বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ কেন কি হয়েছে লিটেল গার্ল?’

‘ আরে নিচে সবাই নাস্তা করছে তোমাকেও খুজচ্ছে তো। এতক্ষণে সবার খাওয়াও শেষ হয়তো। এখন দ্রুত চলো,,

নীলয়ও আর দাঁড়ালো না। হয়তো এই মুহূর্তে খেতে ইচ্ছে করছে না বা যাবো না এটা বলা ঠিক হবে না। নীলয় বেশি না ভেবেই বললো,

‘ ঠিক আছে চলো।’
____

বাড়ির মাঝের রুমে বড় পাটি বিছিয়ে মাঝে ল্যাম রেখে গোল হয়ে বসে আছে সবাই। সবার হাতেই চায়ের কাপ। নীলয়কে দেখে সবাই হাসলো। নীলয়ের বাবা বললেন,

‘ এতক্ষণে তোমার আসার সময় হলো নীলয়?’

নীলয় জবাব দিলো না। তবে নীলা বললো,

‘ ভাইয়া আসলে ছাঁদে ছিল তাই তাকে খুঁজতে আমার একটু সময় লাগলো।’

নীলার কথা শুনে শরীফ উদ্দিন বললেন,

‘ যাক কোনো ব্যাপার না তুমি আসো নীলয় আমার পাশে বসো।’

শরীফ উদ্দিনের ডানপাশে বসা ছিল অহনা। তার দিকে নজর গেল নীলয়ের, অহনাও তাকালো। চোখাচোখি হতেই অহনা দ্রুত চোখ সরিয়ে ফেললো যা দেখে নীলয় মুচকি হাসলো। নীলয় গিয়ে বসলো অহনার বাবার বাম পাশ দিয়ে।’

হঠাৎই অহনার দাদু বলে উঠল,

‘ তা নীলয় দাদুভাই বিয়া সাদি কবে করছো? কোনো পছন্দ টছন্দ আছে নাকি।’

নীলয় দাদুর দিকে তাকায় এভাবে ভরা সমাজে এমন প্রশ্ন কেউ করে। নীলয়ের সংকোচ বোধ ফিল করার থাকলেও সে ফিল করলো না চায়ে চুমুক দিয়ে এক গাল হেসে বললো,

‘ আপনার বউয়ের মতো এত সুন্দর মেয়ে মানুষ আজও পাই নি দাদু তাই তো বিয়ে সাদি করা হয় নি।’

উপস্থিত সবাই নীলয়ের কথা শুনে থমকে গেল। আফজাল হোসেন নিজেও ভড়কে গেলেন। আশেপাশে সবার দিকে তাকালেন এরই মধ্যে দাদু আচমকাই হেঁসে উঠলেন তার দেখাদেখি সবাই হাসলো। অহনার দাদি খানিকটা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললেন,

‘ তুমি যদি রাজি থাকো দাদুভাই তাহলে আমি এখনো তোমায় বিয়ে করতে রাজি।’

উত্তরে শয়তানি হাসি দিয়ে মাথা চুলকে বললো নীলয়,

‘ দাদু রাজি হবে তো দাদিমা?’

এবার একটু ফিস ফিস করে বললো দাদিমা,

‘ একটা সিক্রেট কথা বলি দাদুভাই তুমি চাইলে আমি পালিয়ে গিয়েও বিয়ে করতে রাজি।’

সঙ্গে সঙ্গে সবাই হেঁসে উঠলো। নীলয় নিজেও হেঁসে ফেললো।’

নীলয়ের হাসিটা বেশ লক্ষ করলো অহনা। ছেলেটা মারাত্মক সুন্দর হাসে। হাসলে দু’গালে টোল পড়ে দেখতে বেশ দারুণ লাগে। অহনা চায়ের কাপে চুমুক দিলো।’
___

রাত সাড়ে আটটা ছাড়িয়ে গেছে। চারপাশ অন্ধকার। অন্ধকারের মাঝেই বাড়ির উঠানে পায়চারি করছে নীলয়। কারণ এখনো কারেন্ট আসে নি। বিরক্ত খানিকটা থাকলেও মস্ত বড় আকাশটা দেখে তার ভালো লাগছে। অহনাদের বাড়িটার চারদিকে আরো কয়েকটা ছোট ছোট বাড়ি আছে। সেসব ঘর দিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। একটা বাড়ির দিকে নজর গেল নীলয়ের যেখানে মাটিতে পাটি পেতে দুটো ছেলে-মেয়ে পড়ছে আর মা পাশে বসে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে। বিষয়টা বেশ ভালো লেগেছে নীলয়ের। হঠাৎই নীলয় কি ভেবে যেন বলে উঠল,

‘ রাতটা ছিল নির্ঘুম
আকাশ ছুঁয়ে উঠেছিল তাঁরা
আমার তো কতকিছু আছে
তাও যেন আজ আমি সর্বহারা।’

নীলয়ের বলা কথাটা শেষ হতে না হতেই কেউ একজন তার পাশে দাঁড়িয়ে খুব শীতল কণ্ঠে বললো,

‘ এ কথার মানে কি নীলয় সাহেব?’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️