মেঘ বলেছে তুমি আমার পর্ব-০৬

0
217

#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৬
_______________

হুট করেই কোনো মেইলি কণ্ঠ কানে বাজতেই পিছন ঘুরে তাকালো নীলয়। পাশেই অহনাকে দেখে নীবিড় গলায় বললো,

‘ তুমি?’

অহনা দু’কদম এগিয়ে এসে বললো,

‘ হুম আমি। কতক্ষণ আগে কি নিয়ে কি বলছিলেন নীলয় সাহেব?’

নীলয় হাল্কা হাসে। মাথা চুলকে বলে,

‘ তেমন কিছু নয় এমনি মুখ দিয়ে কিছু একটা বেরিয়ে গিয়েছিল।’

‘ এমনি এমনি মানুষ কিছু বলে নাকি। আপনার কেন মনে হলো আপনার সব থেকেও অনেক কিছু নেই।’

নীলয় আর চেপে রাখতে পারলো না। মৃদু হেসে বললো,

‘ সবটায় শুনে ফেলেছো।’

মাথা নাড়িয়ে হা বলে অহনা। নীলয় বেশি না ভেবেই সামনেই সেই মা আর ছেলে মেয়েদের ঘরটি ইশারা করে বললো,

‘ ওদিকে কিছু দেখতে পাচ্ছো তুমি?’

অহনা সামনে তাকালো খানিকটা অবাক স্বরে বললো,

‘ হুম রীতা চাচি তার দুই ছেলে মেয়েকে পড়াচ্ছেন সাথে হাতমাখা দিয়ে বাতাস করছেন। এ আর নতুন কি এটা তো উনি রোজই করেন।’

‘ বিষয়টা কতটা মুগ্ধনীয় তা দেখছো তুমি?’

‘ আমি তো রোজই দেখি তাই।’

নীলয় আর কিছু বলতে দেয় না অহনাকে সে নিজেই বলে,

‘ আমি যখন ছোট ছিলাম। মানে আমেরিকাতে তখন মম ড্যাড দুজনেই অফিসে কাজ করতো আমি স্কুল থেকে ফিরে একা থাকতাম, সন্ধ্যার সময়ও একা থাকতাম মাঝে মধ্যে কাজের নানু থাকতো কিন্তু তাও আমার সবসময় নিজেকে একা ফিল হতো। মম সে কোনোদিনও আমায় এভাবে আয়েশ করে পড়াতেই বসান নি। তাই তখন ওই কথাটা বললাম। তুমি ভাবতেই পারো আমার মন খারাপ ছিল। হা ছিল একটু কিন্তু এখন ঠিক আছি কারণ মম এখন আমার সঙ্গেই থাকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি কি না। তাও শৈশব কালটা একা একা গেল তাই আর কি।’

অহনা নীরব রইলো সে সত্যি এমনভাবে কিছু ভাবে নি। অহনা কিছু বলতে নিবে এরই মাঝে কারেন্ট চলে আসলো। পুরো উঠান হলো আলোকিত। নীলয় কারেন্ট এসেছে বুঝতে পেরেই আয়েশি ভঙ্গিতে মাথা চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,

‘ থ্যাং গড ফাইনালি কারেন্ট চলে আসলো, এসো ভিতরে যাই।’

উত্তরে শুধু এতটুকুই বলে অহনা,

‘ আপনি যান আমি আসছি।’

নীলয় শুনলো সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

‘ ঠিক আছে এসো তুমি।’

নীলয় চলে গেল। হাঁটতে হাঁটতে ভিতরে ঢুকে পড়লো নীলয়। নীলয় যতক্ষণ না দৃষ্টির বাহিরে যাচ্ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত অহনা চেয়েই রইলো নীলয়ের যাওয়ার পানে। তার কেন যেন মনে হলো, ‘ছেলেটার বুকের মাঝে কোথাও কোনো কষ্ট বা মন খারাপ আছে।’

অহনা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভিতরে ঢুকতে নিলো তখনই নীলা দৌড়ে এসে বললো তাকে,

‘ আপু দ্রুত উপরে যাও আহিয়ান ভাইয়া কল করেছে।’

নীলার কথা শুনে অহনা বিরক্ত হলো কিনা বোঝা গেল না সে নিশ্চুপে ছুটে গেল উপরে।’
____

ভোরের পূর্বাভাস তখন। গ্রাম জুড়ে ধীরে ধীরে শোনা গেল মুয়াজ্জিন সাহেবের সু’মধুর কণ্ঠে বলা ধ্বনি ‘আল্লাহু আকবার’। গ্রাম জুড়ে সেই সুমধুর আযানের ধ্বনিতে পুরো গ্রাম হচ্ছিল সতেজ। গাছের পাতা ডলে ডলে পড়ছিল নিচে। অহনাদের বাড়ি থেকে অনেকটাই কাছে ছিল মসজিদটা। যার দরুন খুব নিকটেই শোনা যাচ্ছিল আযান। বরাবরের মতোই আযানের শব্দ কানে আসতেই ঘুম ভাঙলো অহনার টেবিলের পাশ থেকে ওড়নাটা নিয়ে মাথায় জড়িয়ে নিলো মুহুর্তেই তারপর ডাকলো নীলাকে। সেও বোনের ডাক পেতেই উঠে বসলো। ধীরে ধীরে আযান শেষ হলো দু’বোন বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁত মাজতে মাজতে ছুটে গেল পুকুরের দিকে। তার মা চাচিরা ততক্ষণে হাজির সবাই মিলে মুখ ধুয়ে নামাজ পড়তে যাবেন। বাড়ির আশেপাশের কিছু মহিলাদের ডাকলেন অহনা মা আর চাচি। অহনাও ডাকলো যারা দরজা খোলে নি তাদের। একে একে পাড়া শুদ্ধ সবাই একসাথে ছুটে গেল পুকুরপাড়ে। ছোটখাটো শোরগোল হলো সেখানে। অহনাদের গ্রামের পুকুরটা বিশাল বড়। আর পুকুর চারদিকের কয়েকটা অংশতে বাঁশ দিয়ে বানানো হয়েছে সিঁড়ি। সবাই দ্রুত দ্রুত মুখ ধুয়ে উযু করে ছুটে গেল রুমে। এদের মাঝে নীলয়ের মাও ছিলেন।’

.
নিজের রুমের বিছানায় শুয়ে শুয়ে আযানের ধ্বনি শুনছিল নীলয় বেশ ভালো লাগছিল তার বাহিরের খোলা জানালা বেয়ে ছুটে আসছিল শীতল বাতাস তাকে নাড়িয়ে দিচ্ছিল খুব, সাথে পাখিদের টুকিটাকি আওয়াজ যেন আরো বেশি সুন্দর আর মুগ্ধনীয় । নীলয়ের দরজায় নক পড়লো। আহির এসেছে তার দরজা সামনে। আহির দরজার সামনে নক করেই বললো,

‘ নীলয় ভাইয়া তুমি কি উঠেছো?’

নীলয় সজাগ ছিল বিধায় সাড়া দিলো। বললো,

‘ হুম কিছু বলবে?’

‘ নামাজে যাবে না ভাইয়া।’

নীলয় কতক্ষণ চুপ থেকে বললো,

‘ হুম যাবো তুমি নিচে যাও আমি আসছি।’

আহিরও খুশি হয়ে বললো ‘আচ্ছা ভাইয়া’!
____

সময়ের ঢাকা ঘুরলো একটু নামাজ শেষ করে বাড়ির ফেরার উদ্দেশ্য হাঁটছে আহির, জহির, অহনার বাবা, দাদা,দুই চাচা সঙ্গে নীলয় আর নীলয়ের বাবা। নীলয় কখনোই এত সকালে খুব থেকে ওঠে নি। এই প্রথমই যেন এত ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তে এসেছে সে। গ্রামে তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি পুরোপুরি। ধীরে ধীরে ফর্সা হচ্ছে চারপাশ। নীলয়ের বাবা বললো,

‘ শরীফ ওদিকে একটা টংয়ের দোকান ছিল না।’

উত্তরে অহনার বাবাও বললেন,

‘ হুম ছিল তো এখনও আছে তবে একটু দূরে যাবি।’

‘ চল যাই।’

অহনার বাবাও রাজি হলেন। তবে নীলয় যাবে না বললো। তারা শুনলেন। নীলয় একা জহিরকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো আর বাকিরা একসাথে ছুটলেন টংয়ের দোকানে চা খেতে।’

জহির বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দৌড়ে ছুটে গেল ভিতরে আর নীলয় ধীরে ধীরে যাচ্ছিল। হঠাৎই ডানদিকের মুরগীর খোপ বা বাসা থেকে চেঁচিয়ে ডাকছিল মোরগ কুককুরুকু’ শব্দ করে। পাখিরা ডাকছিল কিচিমিচির শব্দে। নীলয় শুনলো সেগুলো তবে দাঁড়ালো না এগিয়ে গেল রুমের দিকে তার প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে। নীলয় ঘরের ভিতরে ঢোকার জন্য পা বাড়াতেই দরজার ওদিক দিয়ে দৌড়ে আসছিল অহনা। আকাশটা তখন পুরো পরিষ্কার হয়ে সকালের আলো ফুটেছে। নীলয় অহনাকে দেখে কিছু বললো না তবে দাঁড়িয়ে পিছন ঘুরে তাকালো। অহনা এগিয়ে এসে তাদের মুরগীর খোপ বা বাসাটা খুলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে মোরগ বেরিয়ে আসলো বাহিরে উঠে পড়লো খোপের ওপর চেঁচাতে লাগলো আরো উচ্চস্বরে জেনো এই মুহূর্তে গ্রাম শুদ্ধ সবাইকে জাগানোই তার প্রথম কাজ। মোরগের দেখাদেখি মুরগী আর তাদের ছানাপোনাগুলো বের হলো, অহনা খাবার দিলো ওদের। এটা হলো সকালে সূর্যের আলো ফোটার পর তার প্রথম কাজ। অহনা খুব যত্ন নিয়ে কাজটা করছে। মাঝে মাঝে বাতাসের ধাক্কায় তার মাথার ওড়না ছুটে যাচ্ছে আবার সে ঠিকভাবে পড়ে নিচ্ছে। নীলয় দু মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল, ঘুমদায়ক আরাম দায়ক জিনিসটা খুব তীব্রভাবে ঘিরে ধরেছে তাকে।’

নীলয় যেতেই আঁড়চোখে নীলয়কে একবার দেখে আবার কাজে মনোযোগ দিল অহনা।’

সকাল_৯ঃ০০টা,,
কফি হাতে নীলয়ের ঘরে প্রবেশ করলো নীলয়ের মা। নীলয় তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। নীলয়ের মা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। কফির মগটা সামনের বিছানার পাশের টেবিলটার ওপর রেখে ছেলে মাথায় হাত বুলালেন। বললেন,

‘ নীলয় ওঠ বাবা চা নাস্তা করবি না কিছু।’

নীলয়ের হেলদোল শোনা গেল না যা দেখে আবারও ডাকলো নীলয়ের মা। এবার নীলয় বেশ বিরক্তির স্বরে বললো,

‘ কি হয়েছে মম এত সকালে ডাকছো কেন?’

নীলয়ের মা মুচকি হেঁসে বললো,

‘ ন’টা বাজে তাড়াতাড়ি উঠ নাস্তা করে বাহিরে একটু হাটাহাটি কর তোর ভালো লাগবে।’

নীলয় বিরক্ত নিয়ে চোখ খুললো শোয়া থেকে উঠে বসলো মুহূর্তেই। যা দেখে নীলয়ের মা বললেন,

‘ তোর জন্য কফি এনেছি খেয়ে দেখ।’

নীলয় টেবিলের দিকে চাইলো কফিটা দেখে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো কতক্ষণ পর কফি হাতে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। নীলয়ের মা তখন ছেলের বিছানা গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। নীলয় জানালার পাশে দাঁড়ালো সামনে টিনের ওপর কবুতর ডাকছে। নীলয় কফির কাপে চুমুক দিলো। মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ মম এখানের কালচার আর বিদেশের কালচার কতটা ভিন্ন দেখেছো মম।’

নীলয়ের মা মৃদু হেসে কাঁথা ভাজ করতে করতে বললেন,

‘ ভিন্ন তো হবেই। এখানে সবকিছুই আলাদা নীলয়। আমার তো ইচ্ছে আছে এই বাংলাদেশেরই কোনো মেয়েকে তোর জন্য বউ বানিয়ে নিয়ে যাবো।’

নীলয় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো মায়ের কথা শুনে। বললো,

‘ আর ইউ ক্রেজি মম?’

নীলয়ের মা হাসলেন। বললেন,

‘ আমি জাস্ট মজা করেছি নীলয়। আচ্ছা ওসব বাদ দে কফি খেয়ে নিচে আয় আমি তোর নাস্তার ব্যবস্থা করছি।’

বিনিময়ে নীলয় কিছু বলে না। নীলয়ের মা চলে যান। নীলয় জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কফিতে চুমুক দিতে থাকে। হঠাৎই দৃষ্টি আঁটকায় তার উঠান পেরিয়ে যাওয়া দুটো মেয়ে আর একটা ছেলের দিকে। স্কুল ইউনিফর্ম পরে জহির আর নীলা যাচ্ছে স্কুলে সঙ্গে যাচ্ছে অহনা মাথায় লম্বা করে ঘোমটা দেওয়া তার। হয়তো ওদের এগিয়ে দিতে যাচ্ছে। নীলয় অহনা ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

‘ তোমাদের কিন্তু খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে মেয়ে।’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️