ম্লান সন্ধ্যায় পর্ব-০৫

0
307

#ম্লান_সন্ধ্যায় (০৫)

মাঝরাতে বাবা ছেলের বাকবিতন্ডায় ঘরটা গমগমে হয়ে উঠলো। কারণটা ওর কক্ষে কোয়েলিয়ার যাওয়া নিয়ে । তখন অনিক নিজেকে ধাতস্থ করে নিচে নেমেই বলেছিল,
‘তোমার জন্য মেয়েটা বারবার অপমানিত হচ্ছে।ও একটা রক্তমাংসের মানুষ, বারবার ওকে এসবের দিকে ঠেলছো কেন? এমনিতেই ওর সাথে অন্যায় করেছো।’
আফসার শিকদার ও কম যায় না।তিনিও বললেন,
‘কোনো স্ত্রীকে দেখেছো বিয়ের পর স্বামী ছাড়া আলাদা ঘরে থাকতে? অপছন্দের মানুষের সাথেও তো কতজন জীবন পার করছে।’
‘তুমি ভালো করেই জানো,কারো সাথে কম্পেয়ার করা আমার পছন্দ না । ভালোবাসা, অনুভূতি ছাড়া কারো সাথে একঘরে থাকার মতো, মানসিকতা আমার নেই। আপাতত আমি একা থাকতে চাই,শান্তি চাই। সেদিন বলেছিলাম,আজও বলছি, আমাকে জোর করবে না।’
অনিক হনহন করে বাইরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর গাড়ির আওয়াজ শুনে বুঝলেন ছেলে কোথায় যাচ্ছে। ভদ্রলোক হতাশ হয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।যে বয়সে নাতি-নাতনির সাথে কাটানোর কথা,সে বয়সে ছেলের চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হচ্ছে।একা মানুষ হয়ে এতকিছু সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাবার যোগাড়। এদিকে বয়সটাও কেমন দৌড়াচ্ছে!মরার আগে ছেলেকে কি ভালো অবস্থানে দাড় করিয়ে যেতে পারবে না। ইদানিং শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। হাতে পায়ে জোর কমে যাচ্ছে। আফসার শিকদারের বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

কোয়েলিয়া একপাশে দাঁড়িয়ে সব শুনেছে।ওর আর ভাবাভাবির কিছু নেই।একদিনে এতো ঘটনার সম্মুখীন হয়ে,মনে হচ্ছে টাইম ট্রাভেল করে এমন একটা জায়গায় এসে পড়েছে যেখানে ৭২০ ঘন্টায় এক দিন হয়।ও কিছু না ভেবেই গেস্ট রুমের দিকে গেল। আপাতত ও ঘুমাবে। বেঁচে থাকলে আরও বহু ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে।

*
বারের এক কোণে ও একা বসেছে। উচ্চশব্দে গান বাজছে, বিভিন্ন রঙের লাইটের আলোয় একদল নারী-পুরুষ তার সাথে তাল মেলাচ্ছে। অনিকের সেদিকে খেয়াল নেই। বন্ধুবান্ধবসহ সাধারণত সপ্তাহে দুদিন এখানে আড্ডা বসে।তবে তার সময়সীমা ১২টা পর্যন্ত।এত রাতে ও কখনো এখানে আসে না। কেননা এই সময়টাতে যারা আসে তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন।মাতালদের নারীসঙ্গ প্রয়োজন,ও তো মাতাল ই হয় না। বন্ধুরা মাঝেমাঝে বেশি খেয়ে মাতলামো করে। কিন্তু ওর মতো যারা প্রতিদিন অ্যালকোহলে আসক্ত তাদের ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা ক্ষীণ। বরং ক্রমে তারা আরও বেশি বিষন্ন হয়ে পড়ে‌।মদে কখনো শান্তি আনে না, বরং এটা মানুষকে আরও একা করে দেয়।যতদিনে তারা এটা বুঝতে পারে, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।এজগতে প্রবেশ সহজ,বেরোনো কঠিন।

পুরোটা সময় জুড়ে ওর সামনে ভীরু চোখদুটো ভাসছিল।স্পষ্ট যেন চোখের আকুতি বুঝতে পারছিল। হয়তো বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকার ফল। চোখদুটো ভোলার জন্য ও কয়েক পেগ খেল। কিন্তু এরপর আরও বেশি করে মেয়েটার চোখদুটো ওকে টানছিল।এটা কি নারীতে আসক্ত হবার প্রথম ধাপ?নাহ,ওই মেয়ের দিকে আর তাকানো যাবে না। এতকিছুর পর ও একই ভুল কিভাবে করে! অবশ্য বিভার কি দোষ।প্রেমিক এবং স্বামী দুটোতেই রিফাত ওর থেকে কয়েকধাপ এগিয়ে।ও কাওকে দোষ দেয় না,কারো ওপর ওর ক্ষোভ নেই।ওর কাছে ও নিজেই অপরাধী।

অনিকের আজ এই তরলটা ভালো লাগছে না।এমনটা ওর প্রায়ই হয়।হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়ে ও কেন এই জিনিসটা পান করছে,এটাতো ওর মৃত্যু সমান। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওর পেটে তরলটা না গেলে, শুরু হয় মাথাধরা।চারপাশটা তখন অসহ্য মনে হয়,সবকিছু তছনছ করে ফেলতে ইচ্ছে করে।এরকম হবার জন্য একবার ও এক সার্ভেন্টকে খুব মেরেছিল। বেচারার অন্যায় ছিল,ওর সামনে পড়া।ও মরেই যেত, আফসার শিকদারের পিএ তুহিন ওকে বাঁচিয়ে নেয়।
অনিক বোতল নিয়ে বেরিয়ে গেল। এখানে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। নিরিবিলি কোথাও একটু বসবে,তার উপায় নেই।এই শহরে নিরিবিলি জায়গা অবশ্য আছে, কিন্তু সেখানে গেলে গুন্ডাদের হাতে পড়ার সম্ভাবনা আছে।

ও দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাচ্ছে।এতরাতে ট্রাফিকের ঝামেলা নেই,এই যা শান্তি। মাঝেমাঝে ও গাড়ি নিয়ে লাপাত্তা হয়ে সাময়িক হলেও আনন্দ পায়। একাকিত্বে সত্যিকার সুখ নেই। এদিকে কারো সাথে দুটো কথা বলতেও ওর বিরক্ত লাগে।
একটা সময় ছিল যখন বিভা ওর মনখারাপের সঙ্গী ছিল।ও নিজের জমানো কথা উজাড় করতো বিভার সামনে।এইযে ও হঠাৎ বিভার কথা ভাবছে কেন?বিভা এখন ওর কাছে অপরিচিত নারী মাত্র। তাকে ভাবা অন্যায়। আচ্ছা ও ওর মায়ের কথা তো ভাবতে পারে।সবাই বলে দেখতে ও পুরো ওর মায়ের মতো। এমনকি মায়ের মতো ওর বাম চোখের নিচে একটা তিল আছে। আচ্ছা,মৃত্যুর আগে ওর মা কি ওকে সাথে নিয়ে যেতে পারতো না?একে কি বেঁচে থাকা বলে।

ও নেশা থেকে দূরে সরতে চেয়েছিল, কিন্তু ও তো পারে না বেশিক্ষণ এসব থেকে দূরে থাকতে।কাজে ওর মন বসে না, তাহলে কাজটা করবে কিভাবে। মানুষের ভীড়ে ওর এক এক করে পূর্বের কথা মনে পড়ে যায়।তাইতো একটু শান্তির খোঁজে সবার সান্নিধ্য থেকে দূরে বদ্ধ কক্ষে প্রিয় সঙ্গীকে নিয়ে পড়ে থাকে। কোনোদিন প্রচুর খেয়ে উল্টোপাল্টা দেখে, তবে তা ওই বদ্ধ ঘরে।আড্ডায় ও কখনো মাতাল হতে চায় না,চায় না কেউ জানুক ওর ভেতরে জমে থাকা কষ্ট।সবাই জানুক অনিক আহসান একজন রগচটা হিংস্র স্বভাবের মানুষ। কিন্তু আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিষাদে ভরা অনিককে কেউ চিনতে পেরে করুনা না করুক। চারদেয়ালের ভেতরে লুকিয়ে থাকুক ওর গোপন সব কাহিনী।

*
বেশি রাত করে ঘুমিয়েও কোয়েলিয়া অভ্যাসবশত ভোরে উঠলো। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বারবার বললো,
‘আমি নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চিত কিন্তু কিছু ভাবতে চাই না,চাই না,চাই না।’
তখন ও সূর্য ওঠেনি।দু একটা পাখি জেগে উঠেছে।কাকগুলো অবশ্য এখন থেকেই চেঁচানো শুরু করেছে। একটা মৃদুমন্দ হাওয়া জানালা দিয়ে ওকে ছুঁয়ে গেল। সকালের এই মনোরম পরিবেশে ওর নিজেকে হালকা লাগলো।গতকালকে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত হয়েছিল। এখন নাজমার নির্দেশনার অপেক্ষা।
হঠাৎ মাঝরাতে অনিকের বেরিয়ে যাবার খেয়াল হতেই ও ওপরে গেল।দরজা কোনোরকমে ভেজানো।আস্তে করে খুলে উকি মেরে অনিককে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে দ্রুতপায়ে নিচে নেমে এলো।

নাশতা শেষে আফসার শিকদার ওর দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘তোমার বাবা যাওয়ার জন্য কল করছে। তুমি যেতে পারছো না,এটা বুঝিয়ে বলো।’
কিছুক্ষণ রিং হবার পর, ওপাশ থেকে কল ধরতেই কোয়েলিয়া একপাশে সরে গিয়ে সালাম দিলো।
‘কোয়েলিয়া,মা, তুই কেমন আছিস?’
মোতালেবের কন্ঠে উদ্বেগ। গতকাল থেকে ও যোগাযোগের চেষ্টা করছে, কিন্তু মাকসুদ ছাড়া কাওকে পাওয়া যায়নি। কোয়েলিয়া শান্তভাবে কুশল সংবাদ দেয়।

‘তুরা কহন আসতিছিস?কাইলকে ফোন ধরলি না ক্যা?’
‘আব্বা,এনারা সবাই ব্যবসায়ীক কাজে ব্যস্ত।তাই আজকে যেতে পারবো না। মাসখানেক পর আসবো।’
‘সত্যি করে ক তো,ওহানের সব ঠিকঠাক তো। ওরা দুই নাম্বার লোক না তো।যদি কিছু হয় মেম্বারের ভাইর বিটারে মাইরে ফেলাবো,যা হয় হবে।’
কোয়েলিয়া বুঝলো মোতালেব উত্তেজিত হয়ে গেছে।ও শান্ত করার জন্য বললো,
‘আব্বা, শুধু শুধু টেনশন করো না।এনারা সবাই ভালো। কিন্তু ব্যবসা নিয়ে আপাতত ব্যস্ত।আর শোন এত চিন্তার কিছু নাই। তোমার দোয়া থাকলে আমার কিছুই হবে না।’
‘ভালো হলিই ভালো। তুই সত্যি কচ্ছিস তো?’
‘আমি কখনো মিথ্যা বলি?’
‘না,তা না।তয় আমার সন্দেহ লাগতেছিল।’
‘আচ্ছা রেণু সিজুর কাছে দেও। ওদের সাথে কথা বলি।’
রেণুর ঘুম গাঢ়। ওকে তোলা গেল না। কোয়েলিয়া সিজুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখলো।ওর মনটা এখন বেশ ফুরফুরে। আফসার শিকদার একবার ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে পুনরায় ওর কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরোয়।

*
পাঁচটা দিন কি অবলীলায় কেটে গেল।এর মাঝে বিশেষ কিছু ঘটেনি।সেদিন রাতের শেষভাগে অনিক টলতে টলতে বাসায় ফেরা ভদ্রলোককে রীতিমতো আতঙ্কিত করেছিল। ওরকম অবস্থায় যদি গাড়ি এক্সিডেন্ট করতো!সে কারণে আর বেশি বাড়াবাড়ি করেনি।তবে নানাভাবে কোয়েলিয়া কে ওর দৈনন্দিন জীবনের ভেতর ঢোকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।এসব দেখে কোয়েলিয়ার হাসি পায়।ছেলে পণ করেছে ভালো হবে না,বাবা পণ করেছে ভালো করেই ছাড়বে। কোয়েলিয়া যথাসম্ভব নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করছে।

বিকেলে কোয়েলিয়া স্টাডি রুমটায় ছিল।বইপড়ার আগ্রহ নেই, তবে বিভিন্নরকম বই দেখে চোখের যা শান্তি। বোনেদের ভিতর সিজু হচ্ছে পড়ুয়া স্বভাবের। সপ্তাহান্তে একদিন ওর সাথে পুরাতন লাইব্রেরীতে গিয়ে একগাদা বই কিনবে। কোয়েলিয়ার হাত খরচের টাকাগুলোর অধিকাংশই সিজুর পেছনে খরচ হতো। মাঝেমাঝে এমন হয়েছে,সিজুর কাছে এক টাকাও নেই, অথচো অনলাইনে বই অর্ডার করেছে। এদিকে কুরিয়ারের লোক ফোন দিচ্ছে।ও কেঁদেকেটে বাড়ি মাথায় তুলবে।শেষে রেণু অথবা কোয়েলিয়া কেই ওর কান্না থামাতে হতো। বোনেদের কথা মনে পড়তেই কোয়েলিয়া আনমনে হাসলো। এমন কতশত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।

‘ভাবী।’
সারাহ উচ্ছ্বসিত হয়ে ভেতরে ঢুকে কোয়েলিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। ভার্সিটি খোলা থাকায় এবং দাদীর তলবে পরদিনই ওকে চলে যেতে হয়েছিল। তবে আজ একেবারে অনেকদিন থাকার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।ও কোয়েলিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
‘তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেও। বাইরে যেতে হবে।’
‘কোথায়?’
‘কেনাকাটা করতে।’

অগত্যা ওকে নিজের কক্ষে যেতে হয়।সারাহ ওর হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে বললো,
‘মা,এটা তোমাকে পরতে বলেছে।’
শাড়িখানা চমৎকার।সাদা জমিনের ওপর বেগুনি ছাপের ফুল,পাড়টা বেগুনি রঙের। সাথে বেগুনি রঙা জামা এবং কানে গলায় পরার অলংকার।
কোয়েলিয়া তৈরি হয়ে নিলো।সারাহ চুলগুলো ছেড়ে রাখার কথা বললে কোয়েলিয়া আপত্তি জানায়।
‘চুল ছাড়লে আমাকে পুরো বয়াতির মতো দেখায়।বয়াতি চেনো তো,পালা গান করে।তার থেকে খোঁপা থাক।’
‘তাহলে তো ফুলের মালা প্রয়োজন। এখন কোথায় পাই বলো তো।’
‘সারাহ, এই না বললে শপিং এ যাবে। কিন্তু তোমার কাজ দেখে মনে হচ্ছে কোন অনুষ্ঠানে যাচ্ছি।’

কোয়েলিয়া বাম পাশে সিথি কেটে চুলগুলো খোপা করে তাতে কাঁটা গেথে দিলো। কপালে মাঝারি সাইজের কালো টিপ আর বড় চোখে হালকা কাজল আঁকলো।সারাহর পীড়াপীড়িতে ঠোঁটে খয়েরী রঙটা দিতেই হলো। দুহাতে দুটো চুড়ি,কানে ছোট দুটো দুল,গলায় ফুলের লকেট দেওয়া চেইন। ছিমছাম পরিপাটি সাজ।

ওরা তৈরি হয়ে গাড়ির কাছে এলো। অনিক ড্রাইভিং সিটে বসা। তাকে এদের সাথে পাঠানোর জন্য যেরকম বাকবিতন্ডা চলেছে,তা লিখলে শুধুমাত্র শব্দসংখ্যা বৃদ্ধিই হবে। তবে শেষে নাজমার কাছে হার মেনে এই দুই রমনীকে নিয়ে এখন তাকে বেরোতে হচ্ছে।যার ফলে ওর বিরক্তির শেষ নেই।সারাহ ঠেলেঠুলে কোয়েলিয়াকে সামনে বসালো।অনিক বিরক্তি নিয়ে বললো,
‘এটা কি হলো?’
সারাহ গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো,
‘আমি ওরকম ননদ নই যে কাবাব মে হাড্ডি হব। এখন তাড়াতাড়ি চলো, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।’
সারাহ পেছনে বসলো।অনিক সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আমি যেভাবে সিটবেল্ট বাধবো, ওভাবে নিজেরটা করুন।’
সিটবেল্ট বাঁধা এমন কোন কঠিন কাজ নয়।অনিক না দেখালেও পারতো। তবুও সাহায্য করেছে তাই মৃদু স্বরে বলল,
‘ধন্যবাদ।’

*
অনেকদিন পর অনিক বিকেলে বের হলো।যার কারণে রাস্তায় গাড়ির আনাগোনা দেখে ওর মাথা ধরে গেল। তাছাড়া ওকে সাবধানে ড্রাইভিং করতে হচ্ছিল।
টানা পাঁচদিন পর বদ্ধ ঘর থেকে বেরিয়ে কোয়েলিয়ার এখন ভালো লাগছে। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নামবে, রাস্তায় মানুষের ভীড়। তারপরও ওর ভালো লাগছে। ভাঙ্গা দেয়াল কিংবা রাস্তার দৃষ্টিনন্দন গাছগুলো ও খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করছে।

শপিংমলের সামনে গাড়ি পার্ক করে অনিক ওদের নামতে বললো। অনিকের ইচ্ছে ছিল না, ওদের সাথে যাওয়ার।সারাহ বললো,
‘আমার ফ্রেন্ডরা অপেক্ষা করছে।আজ আমাদের পার্টি আছে। ভাবীকে একা ছেড়ে দিলে যদি হারিয়ে যায়?’
‘হারিয়ে গেলে তুমি খুঁজে আনবে।’
‘তুমি এত স্বার্থপর কেন ভাইয়া। জলদি নেমে আসো। তুমি ভাবীর সাথে খুব বাজে ট্রিট করছো।’
অনিক কথা না বাড়িয়ে ওদের সাথে গেল। সেখানে বাঁধল আরেক ঝামেলা।সারাহ বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরে শাড়ি, আনুষঙ্গিক জিনিস কিনলো।অনিক বুঝলো, ওকে জব্দ করার চেষ্টা চলছে।কেনাকাটা শেষ হতেই ও কোয়েলিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে অনিকের উদ্দেশ্যে বললো,
‘বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে,যেখানে খুশি যেও।’

শহরজুড়ে রাত নেমে এসেছে। রাস্তায় অবিরাম গাড়ি চলছে।অনিক হাতঘড়িতে সময় দেখলো।দশটা বাজে।এতটা সময় মানুষের ভীড়ে থেকে ওর মেজাজ বিক্ষিপ্ত।ও বিরক্ত কাটাতে একটা সিগারেট ধরালো। কোয়েলিয়া বিরক্তি নিয়ে অনিকের দিকে তাকালে ও বললো,
‘কিছু মনে করবেন না।রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য এটা আমাকে করতেই হলো।’
‘আপনি কোন সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে পারেন।এত রাগ থাকা ভালো না।’
অনিক কিন্তু রেগে গেল না। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
‘তাহলে বলতে হয়, এতো ধৈর্য্য থাকাও ভালো না।’
কোয়েলিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
‘আপনার জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার পরিস্থিতি বিবেচনা করা নিতান্তই বোকামি।’
অনিক চকিতেই কোয়েলিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটার দৃষ্টি সামনে নিবদ্ধ।গাড়ির মৃদু আলোয় মেয়েটাকে বড় রহস্যময় মনে হচ্ছে।অনিক তাড়াতাড়ি নিজের দৃষ্টি সংযত করলো।নাহ্,ও এভাবে নিজেকে হারিয়ে যেতে দেবে না। সিগারেট ফেলে দিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
‘ঠান্ডা হাওয়া আসছে। কিছু মনে করবেন না জানালা বন্ধ করে দিলাম।’

চলবে…
®️ সুমি খানম