ম্লান সন্ধ্যায় পর্ব-০৬

0
311

#ম্লান_সন্ধ্যায় (০৬)

নাজমাকে কোয়েলিয়ার একটু অদ্ভুত মনে হয়। টুকটাক কাজের কথা ছাড়া কখনোই ওর সাথে কথা বলে না এটা ঠিক।তাই বলে ওকারণে হেনস্থা করে শাশুড়ি সুলভ পরিচয় দেবার কোন চেষ্টাই ওনার ভিতর দেখা যায় না। সবসময় গম্ভীরভাবে পাশে দাঁড়িয়ে ভুলগুলো শুধরে দেবেন, অথচো বাড়তি একটা কথাও খরচ করবেন না।আজ হঠাৎ ওর মনে হলো আস্তে আস্তে তিনি ওকে সংসারের সাথে একাত্ম করে দিচ্ছেন। কাজের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিচ্ছেন,এসব একসময় তাকেই সামলাতে হবে।

কোয়েলিয়া ঘড়ির দিকে তাকায়।রোজ এসময়ে সবাই খেতে বসে।আজ কেও আসেনি। অবশ্য ও ই বা কিভাবে জানবে এ বাড়িতে একেকজনের রুটিন একেকরকম। তবে সারাহ কে নামতে দেখা গেল। মেয়েটা মুচকি হেসে বলল,
‘গতকাল কেমন কাটলো? আজকে এতো ব্যস্ত ছিলাম,তাই তোমার সাথে দেখা হয়নি।’
কোয়েলিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘কিসের কথা বলছো?’
‘ভাইয়ার সাথে বাড়ি ফিরলে। বুঝতে পেরেছ?’
‘হ্যাঁ । নীরবতা উপভোগ করতে করতে বাসায় ফিরলাম।’
সারাহ হতাশার সুরে বললো,
‘ভেবেছিলাম, কতকিছু হবে।’
কোয়েলিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রসঙ্গ পাল্টায়। নয়তো একের পর এক কথা উঠতে থাকবে।ও সারাহকে শুধোয়,
‘ফুফু খেতে আসবে না?’
‘কি জানি।’
কোয়েলিয়া কিছু না বলে ওপরের দিকে গেল।যত যাই হোক বিয়ে যখন হয়েছে,এটা শশুরবাড়ি। স্বামীর সান্নিধ্য ভালোবাসা,নাই বা পেল, নিজের কর্তব্য তো পালন করতে হবে।
নাজমা পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। দরজায় করাঘাতের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ঘড়িতে সময় দেখে। তারপর গম্ভীর গলায় বললো,
‘ভেতরে এসো।’
ধীরপায়ে ইতস্ততভাবে কোয়েলিয়া ভেতরে ঢুকলো। নাজমা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে ওর দিকে তাকালে,কোয়েলিয়া মৃদুস্বরে সালাম দিয়ে বললো,
‘রাতের খাবারের সময় পেরিয়ে গেছে।তাই.’
‘দাদাভাই এসেছে?’
‘না।’
‘ঠিক আছে। তুমি যাও।’
কোয়েলিয়া চলেই যাচ্ছিল। নাজমা ওকে থামায়।
‘অনিককে ডেকে নিয়ে এসো। না আসলে আমার কথা বলবে।’
কোয়েলিয়া মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। নাজমার সামনে দাঁড়ালে ওর খুব অস্বস্তি লাগে। কিন্তু কারণটা হাতড়ে খুঁজে পায় না।

কোয়েলিয়া অনিকের কক্ষের সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। তারপর বাইরে থেকে বলে,
‘আপনাকে ফুফু ডাকছে।নিচে আসুন।’
ভেতর থেকে সাড়াশব্দ আসে না। কোয়েলিয়া কৌতুহল নিয়ে ভেতরে ঢোকে।অনিক ডিভানে পড়ে রয়েছে। ঘুমিয়ে গেছে নাকি জেগে আছে বুঝতে পারছে না। টেবিলের উপর গ্লাসে বরফ কুচি, পাশেই বোতল।বুঝলো এখানে কি চলছিল। কোয়েলিয়া কিভাবে তুলবে বুঝতে না পেরে, গ্লাস দিয়ে বোতলের সংঘর্ষে আওয়াজ তোলে।
অনিক ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ শব্দে ও চমকে উঠলো।চোখ খুলে কোয়েলিয়াকে দেখে ওর রাগ তরতর করে বাড়লো। কোয়েলিয়ার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে ছুড়ে ফেলতেই সেটা বিকট শব্দে ভেঙ্গে গেল। একরকম চেঁচিয়ে বললো,
‘আমার আশেপাশে আসতে নিষেধ করেছিলাম না। তারপরও কেন এসেছেন। একটু লজ্জা থাকা উচিত।যেটা হবার নয়,তার জন্য বেহায়া সেজে কেন নিজেকে ছোট করছেন? আপনি জানেন না, আপনাকে দেখলে আমার রাগ হয়। সবকিছু অসহ্য লাগে। এখানে আসার পর থেকেই আমার জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলেছেন। এক্ষুনি বেরিয়ে যান, কখনো আমার সামনে আসবেন না।’
অনিক জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। কোয়েলিয়া পানির বোতল খুলে ওর দিকে বাড়িয়ে দিল।অনিক তখনও বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছে, খেয়াল না করেই ওর দিকে বাড়িয়ে দেওয়া বোতলটা নিয়ে পানি পান করলো।
মূহুর্তের মধ্যে এমন ঘটে যাবে,তা হয়তো ওর ধারণাতেই ছিল না।লজ্জায় অপমানে কোয়েলিয়ার চোখে পানি এলেও ,ও নিজেকে সামলে বললো,
‘ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আপনাকে ফুফু নিচে ডেকেছেন।’
অনিক তখনও জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।যখন ও প্রকৃতিস্থ হলো ততক্ষনে কোয়েলিয়া চলে গেছে। কিছুক্ষণ আগের করা আচরণের জন্য অনুশোচনার শেষ থাকলো না। কিন্তু পুনরায় ক্ষমা চাওয়ার মতো ব্যক্তি ও না।

*
অপমানে জর্জরিত হয়ে কোয়েলিয়া যখন নিচে এলো,ওর চোখ নতুন একজন লোকের ওপর পড়লো।উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, গোঁফ দাড়ি কামানো সুঠামদেহী একজন যুবক। লম্বায় অনিকের থেকে বেশি।সারাহর সাথে কথা বলছে।সারাহ কোয়েলিয়াকে দেখতে পেয়ে বললো,
‘ভাবী, আমার বড় ভাইয়া সরফরাজ।’
সরফরাজ চকিতে কোয়েলিয়ার দিকে ফিরলো। মায়ের কাছে শুনেছে অনিক আবার বিয়ে করেছে এবং সে দেখতেও ভালো না। কিন্তু ওর কাছে তো কুৎসিত ঠেকলো না। বরঞ্চ মুখখানা কে বড় সুন্দর লাগছে, সর্বত্র নির্মলতার ছোঁয়া।এমেয়ে তো প্রকৃতির সাথে মিশে যাবার মতো। সরফরাজ নিজের চোখ নামায়। ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে ওভাবে তাকানো লজ্জাজনক ব্যাপার।

কোয়েলিয়া ইতস্তত করলেও সালাম বিনিময় করলো। ভাইবোন অপেক্ষা করছিল তাদের মায়ের আসার। নাজমা সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসতেই,সরফরাজ কাছাকাছি গিয়ে বললো,
‘এত দেরি হলো কেন?’
নাজমা প্রথমে চমকে গেলেও,পরক্ষণে হেসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। কোয়েলিয়া এই প্রথম ওনাকে হাসতে দেখলো। গাম্ভীর্য মুখখানি হাসির ছোঁয়ায় বড্ড সরল দেখাচ্ছে। নাজমা অনুযোগের সুরে বললো,
‘কতদিন পরে আসলি?’
‘কাজের জন্যই তো আটকে গেলাম। বাড়ির কাজ প্রায় শেষ। নতুন বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেও।’
নাজমা হাসলো।মা ছেলের এমন সুন্দর মূহুর্তের সাক্ষী হলো কোয়েলিয়া।
‘বাহ, ছেলেকে পেয়ে খুশি আর ধরেনা। অথচো আমার আসায় কেউ খুশি না।’
নাজমা মেয়ের পিঠে চাপড় মেরে বললো,
‘সকালে কার হাতে খেয়েছিলি। অকৃতজ্ঞ মেয়ে।’
কি চমৎকার একটা মূহুর্ত। কোয়েলিয়ার নিজের পরিবারের কথা মনে হলো।কত আনন্দের মূহুর্ত ওদের জীবনে এসেছে।আজ কোয়েলিয়া দূর থেকে অন্যদের মূহুর্তের সাক্ষী হচ্ছে।সে উপেক্ষিত মানবী।যাকে কিছুক্ষণ আগে তার স্বামী অপমান করেছে।ও সবার অলক্ষ্যে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। এখন ওকে কারোর প্রয়োজন নেই।সব কাজ বহু আগেই সেরে রেখেছে।

*
পৌষ মাস আসতে দেরী নেই।তার পূর্বাভাস জানাতেই বোধহয় রাতে বেশ শীত পড়েছে। মাঝেমাঝে টুপটাপ করে দুএক ফোটা শিশির ঝরছে।তার সাথে যুক্ত হয়েছে বাতাস। প্রকৃতিতে বিরাজ করছে নীরবতা। এধরনের আবহাওয়া অসুস্থতা নিয়ে আসে। কোয়েলিয়া প্রায় প্রতিবছরই এসময়ে জ্বরে ভোগে। কিন্তু আজ ওর সে খেয়াল নেই।ওর মনটা যে বড্ড পুড়ছে।
বিয়ে,স্বামী সংসার এসব নিয়ে বেশিরভাগ মেয়েরই আগ্রহের শেষ থাকে না।সবাই চায় কেউ একজন আসুক যে তাকে আগলে রাখুক ,মন খারাপের সময় বুকে জড়িয়ে ধরে বলুক,’আমি তো আছি।’কোয়েলিয়া তাদেরই একজন।সে কল্পনাবিলাসী এবং মনে মনে এসব ভেবে মানসিক শান্তি খুঁজতো। সেই দিনটা যখন চলেই এলো। কোন পুরুষ ওর জন্য যখন বৈধ হলো, তখন দেখা গেল লোকটা ওকে মেনে নিতেই পারছে না।এ কি একটা মেয়ের কাছে সবথেকে বড় কষ্ট নয়?ওর কি ইচ্ছে করে না, সুন্দর একটা পরিবার হোক,মানুষটা ওকে ভালোবাসুক?

কোয়েলিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। না এতকিছু ও ভাববে না।এসব ভাবা মানে কষ্টের বোঝা আরও বাড়ানো।জীবনতো একটাই, বিষন্নতায় দিন পার করলে, কিছুই উপভোগের জন্য অবশিষ্ট থাকবে না।ওর জন্মের কিছুক্ষণ পর ওর মা মারা যায়। হয়তো একপলক দেখেছিল ওকে।সবাই যখন ওর বেঁচে থাকা নিয়ে আশঙ্কায় ছিল, সৃষ্টিকর্তা কিন্তু ঠিক তখনই ওকে বাঁচিয়ে নেয় ওর বড় খালার কোলে তুলে দিয়ে। তাছাড়া আরও বহু সংকটের সময় এসেছে, মনে হয়েছে ও আর বাঁচবে না। তবুও কিন্তু পরদিন ভোরের সূর্য ঠিকই দেখেছে।ও তেমনি ধৈর্য্য ধরে থাকবে।কারো ভালোবাসা ওর প্রয়োজন নেই।সময় হলে আফসার শিকদার ই অধৈর্য হয়ে ওকে মুক্ত করে দেবে। চোখের সামনে অকেজো মেয়েটাকে ঘুরতে দেখে ভদ্রলোকের সহ্য নাও হতে পারে।

পদশব্দে কোয়েলিয়া পেছন ফিরে সরফরাজকে দেখে বিব্রত হয়। এখানে নির্জনতা উপভোগ করতে এসেছিল। কোনো মানবের উপস্থিতি কাম্য ছিল না। কোয়েলিয়া সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সরফরাজ ছাদে রাখা বেঞ্চিতে বসে বললো,
‘আশা করছি, আমার উপস্থিতিতে বিব্রত হলেও কিছু মনে করবেন না।’
কোয়েলিয়া যাবার উপক্রম করতেই ও বললো,
‘যাচ্ছেন কেন? আপনার সাথেই তো কথা বলতে এলাম।’
কোয়েলিয়ার কপালে ভাঁজ পড়ে।ও ছাদের প্রাচীরে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। অপেক্ষা করতে থাকে ওর কথা বলার। সরফরাজ তৎক্ষণাৎ কিছু বলে না। অনেকটা সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেয়। তারপর হঠাৎ বলে,
‘আপনি কথা কম বলেন নাকি!’
কোয়েলিয়া জবাব দিতে ইচ্ছে করছিল না। তবুও বললো,
‘সেরকম কিছু নয়।’
‘যাহোক,অনিক আমার থেকে বছর দুয়েকের বড়,সে হিসেবে সম্পর্কে আমি দেওর হই। বিব্রত হবার কিছু নেই।’

কোয়েলিয়া কিছু বলে না।ওর এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া আত্মীয় বা স্কুল কলেজের কোন ছেলের সাথে ও খুব একটা কথা বলেনি। এজন্য সরফরাজের উপস্থিতিতে ও স্বস্তি পাচ্ছেনা। সরফরাজ হয়তো বুঝলো।বললো,
‘ঠিক আছে।পরে কথা হবে।আসছি।’
সরফরাজ চলে যেতেই ও বড় শ্বাস ফেলে। এতক্ষণ সবকিছু কেমন গুমোট ধরে ছিল।কই গতকাল অনিকের পাশে বসে থেকেও এতো অস্বস্তি লাগেনি যতটা সরফরাজের উপস্থিতিতে ছিল ।
এরপর আর ছাদে থাকতে ভালো লাগলো না।আস্তে আস্তে বেশি শীত পড়ছে।রেণু সিজুর সাথে কতদিন কথা হয় না। নিজের ব্যক্তিগত কোনো ফোন নেই,যার দ্বারা যোগাযোগ করবে।নিজেরটাতো ও বাড়িতে ফেলে এসেছে।

*
কোয়েলিয়া ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল। দরজায় অবিরাম শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।ও দ্রুত উঠে গিয়ে দরজা খুলে চমকে গেল। অনিকের পরণে টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, চুলগুলো উস্কো খুস্কো, চোখদুটো টকটকে লাল। চোখেমুখে কেমন বিষন্নতার ছাপ। কোয়েলিয়া বললো,
‘কিছু বলবেন?’
অনিক ইতস্তত করে বলে,
‘কি করছিলেন আপনি?’
‘ঘুমিয়েছিলাম। আপনি দরজায় শব্দ করায় ঘুম ভেঙ্গে গেল।’
‘ওহ সরি। আচ্ছা ঘুমান।’
‘আপনি মনে হয়, কিছু বলতে এসেছিলেন।’
‘থাক। পরে বলবো।’
‘ঘুম যখন ভেঙে দিয়েছেন, তখন আপনার কথা শুনতে আপত্তি নেই।’

অনিক হাঁসফাঁস করে। কোয়েলিয়া স্পষ্ট বুঝেছে অনিক এমন কিছু বলতে চায় যা বলতে ওর আত্মসম্মানে ঠেকছে।ও বেশি জোরাজুরি করলো না। এমনিতেই মহাশয়ের রাগটা নাকের ডগায় থাকে।কখন কি বলে বসবে।ও বললো,
‘তাহলে আপনি বোধহয় ঘুমের ঘোরে হেঁটে এসেছেন, স্লিপিং ওয়াক। সমস্যা নেই, আমি কিছু মনে করিনি। এখন ঘুমাতে যান,শুভ রাত্রি।’
কোয়েলিয়া দরজা বন্ধ করতে উপক্রম হলে বললো,
‘শুনুন। আমার সাথে একটু বাগানে গিয়ে বসবেন।’
কোয়েলিয়া অবাক হয়ে অনিকের দিকে তাকালো।আজ বোধহয় বেশি খেয়ে ফেলেছে। এখন কি ওর যাওয়া উচিত?অনিক হয়তো কোয়েলিয়ার চোখ মুখ দেখে কিছু ঠাওরালো।বললো,
‘ভয় পাবেন না। আমি অ্যালকোহলে এডিক্টেড হলেও, ভুলভাল বকিনা।আজ সামান্যই খেয়েছি।’
কোয়েলিয়া হেসে বলল,
‘আপনি গিয়ে বসুন। আমি আসছি।’

অনিক অনেকক্ষণ বসে থেকে অধৈর্য হয়ে উঠলো।ঠিক তখনই ও কোয়েলিয়াকে আসতে দেখলো।ওর দৃষ্টি আটকে গেল শাড়িতে আবৃত রমনীর দিকে।মনে হলো কোন চিত্রকরের আঁকা সবচেয়ে সুন্দর ছবিটি ওর সামনে । তবে কি অজান্তেই সাধারণ মেয়েটিকে অপরূপ ভাবে দেখার জন্য রাত-বিরেতে ডেকে তুলেছিল!ও মোহাবিষ্ট হয়ে পড়লো,এতো সতর্কতা এতো প্রতিজ্ঞা ওকে বাঁধা দেবার সুযোগ পেল না। কোয়েলিয়া এসে ওর মুখোমুখি বসলো।কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘শীত শীত পড়েছে। আশা করছি আপনার ভালো লাগবে।’
অনিকের ধ্যান ভাঙল। মনে মনে নিজেই নিজেকে শাসালো।হাত বাড়িয়ে কফির মগটা নিলো,কিন্তু বলার মতো কিছুই খুঁজে পেল না। কোয়েলিয়া পরিস্থিতি সহজ করার জন্য বললো,
‘আপনি হয়তো কিছু বলতে চান?’
‘মনে করতে পারছি না।’
‘ঠিক আছে।কফি শেষ করে, তারপর মনে করুন।’
‘আপনার জানার এতো আগ্রহের কারণ?’
‘আপনি হঠাৎ আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছেন,এটা আশ্চর্যের নয় কি?’
অনিক উত্তর দিলো না।ও কিভাবে কথাটা বলবে বুঝতে পারছে না। এদিকে কথাটা না বলা অব্দি শান্তি নেই। তবে কথাটা এমন ধরনের যা গত চার বছরে কাওকে বলেনি।অনিক আড়চোখে কোয়েলিয়ার দিকে তাকালো। বললো,
‘আপনার নামটা যেন কি?’
কোয়েলিয়া হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলো না। এতদিন পর জিজ্ঞেস করছে ওর নাম কি!ও কৌতুক বোধ করলো। বললো,
‘আপনি আমার নাম জানতেন না! বিয়ের সময় তো কাজী বেশ জোরে জোরেই বলেছিল।’
‘তখন খেয়াল করিনি।’
‘কোয়েলিয়া। আগে পিছনে কিছুই নেই।’
‘কোয়েলিয়া,অর্থাৎ কোকিল। শুনুন কোয়েলিয়া…’
অনিক থেমে গেল। কোয়েলিয়া চুপ করে ওর পরবর্তী কথা শোনার অপেক্ষায় থাকলো।অনিক বললো,
‘আমি একটা সিগারেট ধরাবো?’
‘এটা আপনার কথা?রাত দুপুরে সিগারেট খাওয়ার কৌশল দেখাতে আমাকে ডেকে তুলেছেন?’
কোয়েলিয়া হাসতে হাসতে বলল,
‘আচ্ছা ধরান।’
অনিক সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ওড়ালো। এবার ওকে সহজ দেখায়।বললো,
‘শুনুন কোয়েলিয়া। আমি তখনকার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।অ্যা’ম রিয়্যেলি সরি।’
‘মানে?’
অনিক বিরক্তি নিয়ে বললো,
‘আপনি তো বাচ্চা নন।ঘুম ভাঙ্গার পর আমার মেজাজ বিক্ষিপ্ত থাকে,তাই খারাপ আচরণ করেছি। এজন্য ক্ষমা চেয়েছি। ইচ্ছে হলে ক্ষমা করবেন।’
কোয়েলিয়া খিলখিল করে হাসলো।অনিক মুখ তুলে কোয়েলিয়ার দিকে তাকালো। দুজনে চোখাচোখি হতেই অনিক চোখ নামায়।কোয়েলিয়া হাসি থামিয়ে বললো,
‘আপনার ভেতরে এতো আশ্চর্য লুকিয়ে ছিল, বুঝতে পারিনি।’

চলবে..
®️ সুমি খানম