ম্লান সন্ধ্যায় পর্ব-০৭

0
313

#ম্লান_সন্ধ্যায় (০৭)

সরফরাজ আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। কোয়েলিয়ার চা পছন্দ না। কিন্তু সরফরাজকে পান করতে দেখে মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে অমৃত পানীয় পান করছে‌। অনিকের কফি খাওয়া দেখতে দেখতে কয়েকদিনে মনে ধারণা জন্মেছিল এ বয়সী ছেলেরা চায়ের থেকে কফিকে বেশি প্রাধান্য দেয়। কিন্তু সরফরাজ সে ভ্রান্তি নিমিষেই দূর করে দিলো।
যদিও সরফরাজের সামনে এভাবে বসে থাকতে ওর খুব বিরক্ত লাগছে। কিন্তু ও মুখের ওপর উঠে যেতে পারছে না। সকাল সকাল দেখা হতেই বলেছিল,
‘আমাকে এক কাপ আদা-চা দিতে পারবেন?’
এধরনের চাওয়া উপেক্ষা করা যায় না।ও ভালো করেই চা বানিয়েছিল। এবং সরফরাজকে দিতেই ও বলেছিল,
‘বসুন, একটু গল্প করি।আজ অফিস নেই,সময় কাটছে না।’
অগত্যা ওকে বসতে হলো। কিন্তু সরফরাজ অনেকক্ষণ ধরে একটি কথাও বললো না।ওর মুখ দেখেও মনে কি চলছে , কিছুই ঠাহর করা যাচ্ছে না।টেবিলের ওপর থেকে ইংরেজি ম্যাগাজিনটা কোয়েলিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সরফরাজ বললো,
‘এটা আপনার বিরক্তি কাটাতে সাহায্য করবে।’
কোয়েলিয়ার ইচ্ছে করছিল, ওকে কয়েকটা কড়া কথা শোনায়। কিন্তু তাতে যে ওর বিপদ এগিয়ে আসবে। সরফরাজ হাসলো।শ্যামলা মুখখানা খুব সরল দেখালো।ও বললো,
‘আপনি কি ভাবছেন বলে দিতে পারি।’
কোয়েলিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। সরফরাজ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
‘আপনি এখান থেকে উঠে যেতে চাইছেন, কিন্তু ভয় পাচ্ছেন যদি আমি আপনার ব্যাপারে মা’কে কিছু বলি।’
কোয়েলিয়া চমকে উঠলো। কিছু একটা বলতে গিয়ে খেই হারালো। সরফরাজ বলে,
‘বিস্মিত হবার কিছু নেই। আপনার মুখ দেখে অনুমান করলাম। জানেন তো মুখ হচ্ছে মনের আয়না।’
‘ওহ।’
‘এইযে আপনি আমার সাথে কথা বলতে বিব্রত হচ্ছেন,কারণ অনিকের সাথে আপনার সম্পর্ক স্বাভাবিক না।তাই আমাকেও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না।’
কোয়েলিয়া মুখে না বললেও কথাটা সত্যি তা ওর মুখ দেখে বোঝা যায়।
‘আপনি কি ঠিক করেছেন, আমার সাথে কথা বলবেন না।’
‘আসলে কি বলবো বুঝতে পারছি না।’
‘দাবা খেলতে পারেন?’
‘অল্পসল্প।’
‘শিখিয়ে দেব একদিন।’

কোয়েলিয়ার বিরক্তি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।ওর জায়গায় রেণু হলে সোজাসুজি বলতো,’আপনাকে আমার বিরক্ত লাগছে। আপনি দয়া করে কথা বলবেন না।’ কিন্তু কোয়েলিয়া একথা কন্ঠনালিতেও আনতে পারবে না।আনতে পারলেও ওর ভোকাল কর্ড অকেজো হয়ে যাবে,আর বের হবে না।রাগ করা ওর ধাতে নেই। কারণ ওর রাগকে পাত্তা দেবার কেউ নেই।রাগ তারাই করে যাদের রাগকে প্রাধান্য দেবার মতো কেউ না কেউ আছে‌।এক্ষেত্রে রেণুর রাগ করা দোষের নয়। কারণ ওদের ভাইবোনের মধ্যে রেণু দেখতে সুন্দর। শুধু সুন্দর নয়,ওর কথাবার্তার ভঙ্গি যে কারো মনোযোগ আকর্ষণ করবে।সে হিসেবে কোয়েলিয়া নিতান্তই সাদামাটা এক মেয়ে। তবে ও কেন সরফরাজের সামনে কথা না বলে নিজেকে বিশেষ কেউ প্রমাণ করছে?দেওর হিসেবে ও তো কথা বলতেই পারে।নেহাৎ ভাইয়ের স্ত্রী,তাই কথা বলছে‌। কোন সম্পর্ক না থাকলে তো পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও সরফরাজ ওকে খেয়াল করতো না। ও তো দশজনের আকর্ষণ পাবার মতো মেয়ে নয়?ও কি নিজেকে বিশেষ কেউ মনে করছে?

কোয়েলিয়া বিরক্তি উবে গিয়ে চেহারা জুড়ে বিষন্নতা নেমে এলো। সরফরাজের ততক্ষনে চা শেষ হয়ে গেছে। কোয়েলিয়া বললো,
‘আপনাকে কি আরেক কাপ চা দেব।’
‘ধন্যবাদ,তার দরকার নেই।’
কোয়েলিয়া ইতস্ততভাবে বললো,
‘কিছু মনে করবেন না। আপনার সাথে প্রথম পরিচয় তাই স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে।’
সরফরাজ হাসলো।বললো,
‘এতক্ষণ কিছু মনে করিনি। কিন্তু আপনি জোর করে কথা বলার চেষ্টা করছেন,এটা খারাপ দেখাচ্ছে। আপনার সাথে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করছি কেন জানেন?’
‘কেন?’
‘কারণ আপনি উত্তর দিচ্ছেন না। কেউ আমার কথার মাঝখানে কথা বললে আমার বিরক্ত লাগে। আমি বলতে পছন্দ করি কিন্তু শোনার অপেক্ষা করিনা।’
‘আচ্ছা।’
‘আজ আসি।দাদী অসুস্থ, মা’কে সেখানে নিয়ে যেতে হবে।’
সরফরাজ উঠে দাঁড়ালো। বললো,
‘কাওকে বিরক্ত করেও আনন্দ পাওয়া যায়,আজ বুঝলাম।আর নিজেকে ছোট মনে করার কিছু নেই। আপনাকে আমাকে,এই সবকিছুকেই একজনই তৈরি করেছেন।নিজেকে নিয়ে মনে মনে সামান্য অহমিকা থাকা ভালো। আবার কথা হবে।’
কোয়েলিয়া বিস্ময়ে হতবাক। মানুষের ভেতর এতো বৈচিত্র্য রয়েছে আগে জানতো না। সরফরাজকে নিতান্তই গায়ে পড়া মানুষ ভেবেছিল।কিন্তু এতো বাকিদের তুলনায় বেশি অদ্ভুতুড়ে।এ বাড়িকে বিচিত্র মানুষদের নিবাস হিসেবে আখ্যা দেওয়াই যেতে পারে। এদের ভেতর সারাহ যা একটু সহজ।

*
বেলা ১১টার দিকে নাজমা ছেলেমেয়ের সাথে চলে গেল।যাওয়ার আগে কোয়েলিয়াকে ডেকে বললো,
‘আমি কয়েকদিন পর আসবো। ততদিন নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ থেকো। অনিকের খেয়াল রেখো।’
কোয়েলিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তবে অনিকের মতো আস্ত একটা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের খেয়াল কিভাবে রাখতে হবে তা বুঝলো না।সে তো আর দৌড়ে বাসা থেকে বেরোবে না বা পড়ে গিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদবে না। বরঞ্চ রাতভর জেগে মদিরাবিলাস করবে।

নাজমা চলে যাওয়ার পর ও রান্নাঘরে গেল দুপুরের খাবার তৈরি করতে। রুবিনা ওকে হাতে হাতে সাহায্য করলো।দুজনে গল্প করতে করতে রান্নার কাজ এগোলে। গল্পের বিষয়বস্তু খুবই সাধারণ।এর মাঝে রুবিনা একবার বললো,
‘বৌ, তোমার চোখমুখ দেহি শুকায় গেছে।জ্বর আইবো মনে হয়, ঔষধ খাইয়া লইয়ো।’
‘কই আমার সেরকম কিছু মনে হচ্ছে না।’
‘তাও সাবধানে থাইকো।’

দেড়টার দিকে কোয়েলিয়া অনিককে ডাকতে গেল।যদিও ও জানতো অনিক ঘুমুচ্ছে।সে আবার নিশাচর কিনা। কোয়েলিয়া বারকয়েক দরজায় আওয়াজ তোলার পর দরজা খুলে যায়। অনিকের বিরক্তিতে নাকমুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। কোয়েলিয়া যে ওর ঘুম ভাঙিয়ে দুঃসাহস করেছে তা বুঝলো। জড়তা নিয়ে বললো,
‘আপনি কি রেগে আছেন?’
‘কি বলতে এসেছেন বলুন। নয়তো রাগ বাড়তে পারে।’
‘টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে,খেতে আসুন।’
‘আধঘন্টা পর তালেবকে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দেবেন।’
অনিক একরকম মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিল। কোয়েলিয়া রাগ হলো, বিড়বিড় করে বললো,’পাগল-ছাগলের সর্দার।’

তালেবকে পাওয়া গেল না। রুবিনাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো,
‘একদিন ফাঁক পাইসে।দেহোগে কোনহানে বইসে বিড়ি টানতিসে।’
‘তুমি গিয়ে খাবারটা দিয়ে এসো না খালা।’
‘একাজ আমি পারুম না।ওইঘরে খালি তালেবের ঢুকার পারমিশন আছে। তুমি দিয়া আসো গে।’

কোয়েলিয়া খাবার ট্রে নিয়ে অনিকের দরজার সামনে দাঁড়ালো। মনে মনে সাহস নিয়ে বললো,
‘ভেতরে আসবো।’
ভেতর থেকে গম্ভীর গলায় অনিক বললো,
‘তালেব কোথায়?’
‘দোকানে গিয়েছে।’
‘আসুন।’
অনিক ডিভানে বসে একমনে ল্যাপটপে কিছু করছিল। মেঝেতে তোয়ালে ফেলা, বিছানার মাঝখানে একটা বালিশ,অপরটা আপাতত চোখে পড়ছে না। কোয়েলিয়া টেবিলে খাবার রেখে তোয়ালেটা তুলে বাথরুমে রেখে এলো।বালিশটা অবশ্য আলমারির পাশে পড়ে ছিল। তারপর অনিকের সামনে এসে বললো,
‘আপনাকে কিছু বলার ছিল। তবে আপনার রাগটা এখন কোন পর্যায়ে আছে সেটা আগে জানা দরকার।’
অনিক ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো।পরিবর্তে কোয়েলিয়া হাসলো,যার ফলে অনিকের ভ্রু প্রসারিত হলো।যদিও তা সাময়িক, কিছুক্ষণ পর কপালে ভাঁজ ফেলে বললো,
‘রেগে যাওয়ার মতো কথা বললে,রাগ আসবেই।’
‘আপনি সামান্য কথায় ও রেগে যান,যার প্রমাণ আগে পেয়েছি।’
‘ভূমিকা বাদ দিয়ে বলুন।’
‘বিকেলে একটু বাইরে যেতে পারবেন।’
‘মানে?’
‘কোথাও বেড়াতে যাব।’
‘আমি যাচ্ছি না। আপনি এখন এখান থেকে যান। আমার বিরক্ত লাগছে।’
এরপর আর অনিকের সামনে দাঁড়ানোর মানে হয়না। কোয়েলিয়া পরাজিত সৈনিকের মতো মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেল।যদিও সে নাজমার দেওয়া দায়িত্ব পালন করেছে এবং জানতো যে অনিক এই উত্তর দেবে, তারপরও ওর মন খারাপ হলো। অনিক খেয়াল করলেও, ওকে পিছু ডাকলো না। এমনিতেই গতরাতে ঝোঁকের বশে ওভাবে ডেকে নিয়ে কথা বলার জন্য নিজেই নিজের ওপর ক্ষেপে আছে। মেয়েটা কি ভেবেছে কে জানে!রাতে ওর সামনে থেকে একরকম পালিয়ে এসেছে। তারপর বাকিটা সময় নিজেই নিজের সাথে তর্কে মেতে কোন সদুত্তর পায়নি।তাইতো ঠিক করেছে মেয়েটার সাথে কম কথা বলবে।

*
লিমা বেগমের বয়স একশোর আশেপাশে। কিন্তু দেখে তাকে ষাটোর্ধ্ব মনে হয়। তিনি এখনও কুঁজো হননি এবং গলার আওয়াজ খরখরে। ছেলের বৌদের সাথে জোর গলায় কথাকাটাকাটি করে তারপর হাঁপাতে থাকেন। এমন দৃঢ় মানুষটা মাঝেমাঝে অসুখে পড়েন।গত পরশু থেকে তিনি বিছানার সাথে লেপ্টে আছেন।এ বয়সে ডায়রিয়াটা ওনাকে ভালোমতো জব্দ করেছে। লিমা বেগম তার ডানহাত সাদ্দামকে দিয়ে সকলের কাছে খবর পাঠিয়েছেন যে তার সময় শেষ। একারণেই ছেলেমেয়ে সবাই উপস্থিত হয়েছে।প্রতিবার অসুখে পড়লে তিনি একই কাজ করেন। নাজমা চোখমুখ শক্ত করে ওনার পাশে বসে আছে।ওর অপছন্দের তালিকায় সবার ওপরে এই মহিলাটি।

লিমা বেগম তীক্ষ্ণ গলায় বললো,
‘গতকাল রাতে খবর পেয়ে আজ আসলে কেন?ভেবেছ একেবারে লা’শ দেখবে।’
নাজমার গোলগাল মুখটা রাগের প্রকোপে লম্বা দেখালো। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
‘কে বলতে পারে। আপনার আগে আমি লা’শ হয়ে যেতে পারি।’
‘তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?’
‘আপনাকে দেখলে এর থেকে ভালো কথা বেরোয় না।’
‘আমি এমন কোন খারাপ কাজ করিনি। আগেরকার রাজা বাদশারা এমন অনেক করেছে।’
‘আপনার ছেলে কোন রাজা বাদশা না।যা অর্জন করেছে, সবটাতেই আমার দাদাভাইয়ের অবদান।’
লিমা বেগম ফ্যাচফ্যাচ কেঁদে উঠলেন। নাজমার উপস্থিতিতে সবাই ঘরখালি করে দিয়েছিল। নাজমা কড়া গলায় বলল,
‘ন্যাকা কান্না কাঁদবেন না। রোজরোজ এমন ডাকাডাকির প্রহসন না করে যেদিন আজরাঈল আপনার সামনে আসবে, তখন ফোন করে বলবেন নাজমা তুমি দ্রুত চলে এসো,আজরাঈল আমার থেকে তিনহাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে।’

লিমা বেগমের কান্নার বেগ বেড়ে গেল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললেন,
‘তুমি এরকম বলতে পারলে।’
‘আপনি যা করেছেন,তাতে এবাড়িতে পা রাখতেও আমার ঘৃণা করে। আপনার কৃতকর্ম সারাহ কে বলতে বাধ্য করবেন না।আর আমার ভাইয়ের ঘরের গোপন খবর প্রচার করার দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়নি। কয়েকদিনের ভেতর এমনিতেই সেরে উঠবেন। এখন আসি।’
নাজমা বেরিয়ে গেল।ও জানে লিমা বেগম এখন সবাইকে ডেকে ইনিয়ে বিনিয়ে সত্যি-মিথ্যে মিশিয়ে বলবে।ও অবশ্য এসবে মাথা ঘামায় না।ড্রয়িংরুমে অনেকেই বসা ছিল।তারা নাজমাকে দেখে কথা বন্ধ করে তাকিয়ে রইল।ওর ছোট জা ওর দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ভাবী আজকে থেকে যাও।’
নাজমা সে কথার উত্তর না দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। সরফরাজ এবাড়িতে কখনোই ঢোকে না। যেখানে মায়ের অনাদর সেখানকার ছায়াও ও মাড়ায় না। সরফরাজ সবেমাত্র গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে, ওমনি সারাহকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখা গেল। অনুযোগের সুরে বললো,
‘মা ছেলে আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছিলে।কি স্বার্থপর তোমরা!’

*
রাত ১১টা বেজেছে অথচো কোয়েলিয়া ওকে একেবারের জন্য ডাকতে আসেনি দেখে অবাক হলো। আচ্ছা মেয়েটা কি ওর কথায় বেশি কষ্ট পেয়েছে? এমনিতেই ও নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত। ভেবেছিল কোয়েলিয়া ওকে ডাকতে এলে ওর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলবে। কিন্তু আজ ও এখন অব্দি এলো না।অনিক আজকে বাইরে যায়নি। প্রথমে ফুফু পরে বাবা দুজনেই কল করে ওকে অনুরোধ করেছে,আজ রাতটাতে ও যেন বাইরে না যায়। মেয়েটা একা থাকবে বাড়িতে।
অনিক প্রথমে বিরক্ত হলেও পরে আর যায়নি। কিন্তু এদ কোয়েলিয়ার দেখা নেই।ও অস্বস্তিতে ঘরময় পায়চারী করলো, বারান্দায় গেল।অ্যালকোহলের বোতলটা অসহায়ের মতো ওর কার্যকলাপ খেয়াল করছিল, কিন্তু অনিকের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। দরজায় করাঘাত পড়তে ও দ্রুতপায়ে এগিয়ে দরজা খুললো। কিন্তু সামনে তালেবকে দেখে রাগ হলো। কয়েকটা কড়া কথা শোনাতে উদ্যত হলে,তালেব হড়বড় করে বললো,
‘স্যার জলদি চলেন।ম্যাডাম জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।’
অনিক প্রথমে না বুঝলেও যখন খেয়াল হলো ও আর কোয়েলিয়া ছাড়া আর কেউ নেই ও দ্রুতপদে নিচে গেল।

কোয়েলিয়া জ্বরে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। রুবিনা জলপট্টি দেবার ব্যবস্থা করছিল।এর মাঝে অনিক হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকলো। কোয়েলিয়ার কপালে হাত ঠেকিয়ে বুঝলো জ্বর মাত্রাতিরিক্ত উঠেছে। তালেবের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আরো আগে বলতে কি হয়েছিল।তালেব তুই জলদি গিয়ে ডাক্তার ডেকে আনবি। বাবার বন্ধুকে কল করার দরকার নেই, দেরী করবে।বাইক নিয়ে যাবি,কুড়ি মিনিটের ভেতর তোকে যেন এখানে পাই।’
তালেব তাড়াতাড়ি বের হলো। ছোট থেকেই এ বাড়িতে কাজকর্ম করে বড় হয়েছে। অনিকের রাগ সমন্ধে এই ঊনবিংশ বয়সী ছেলেটা ভালো ভাবেই অবগত।

রুবিনা কৈফিয়তের ভঙ্গিতে জানায়, রাতের খাবারের সময় পেরিয়ে গেলেও সে যখন ওকে ডাকেনি, তখন ও এঘরে এসে দেখা মাত্রই তালেবকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে।অনিক রুবিনার হাত থেকে ভেজা কাপড়টা একরকম ছিনিয়ে নিয়ে আলতো করে কোয়েলিয়ার কপালে চেপে ধরলো। অপরাধী মন এতটুকু করে একটু শান্ত হতে চাইলো।

ডাক্তার ভেবেছিল রোগী গুরুতর অসুস্থ। অন্ততঃ তালেব যেভাবে ওনাকে নিয়ে এসেছে।জ্বরের কথা শুনে বসতে বসতে বলল,
‘এসময়ে এরকম জ্বর হওয়া অস্বাভাবিক নয়।ওয়েদার চেঞ্জের কারণে..’
অনিক ওকে কথা শেষ করতে দিলো না। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘আপনাকে জ্বরের উৎপত্তি বলার জন্য আনা হয়নি।’
ডাক্তার দমে গেল। তাপমাত্রা মেপে প্রেসক্রিপশন লিখে অনিকের হাতে দিয়ে বললো,
‘ঔষধগুলো এনে খাইয়ে দেবেন।’
অনিক তালেবের হাতে কাগজটা দিলে ও ডাক্তারকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

চলবে..
®️ সুমি খানম