যদি আমার হতে পর্ব-২১+২২

0
607

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ২১
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

মুগ্ধর কথা শুনে আদ্রিশায় মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো! কিছুই বুঝতে পারছে না সে। কি এমন হয়েছে যে মুগ্ধ এমন অদ্ভুত আচরন করছে? মুগ্ধ তো আদ্রিশার না চাওয়াতেও বিয়েতে মত দিয়েছিলো! সবকিছুই মিথ্যে!? কিন্তু কেনো? কিসের তাড়নায় মুগ্ধ এসব করেছে? কোন সার্থ্যের কথাই বা বলছে মুগ্ধ? যে বিয়েটা করার জন্য আদ্রিশার আবদার, কান্না, মিনতি কিছুই আটকাতে পারে নি মুগ্ধকে, সেই বিয়েই কেনো আজ বোঝা মুগ্ধর জন্য? আকাশ পাতাল ভেবে মুগ্ধর দিকে প্রশ্ন ছুড়লো আদ্রিশা,

“এসব কি বলছেন আপনি? কেনো বলছেন? আপনি, আপনি সেলফিশ কেনো হতে যাবেন? আর আমাকে ইউজ করার কথাই বা কেনো বলছেন? ‌ওয়েট , ওয়েট আপনি কি আমার সাথে কোনো প্র‌্যাঙ্ক করছেন!? দেখুন মুগ্ধ, আমার এসব মজা একদম ভালো লাগে না তাই দয়া করে বন্ধ করুন!”

মুগ্ধ হাত মুঠো করে দেয়ালে বারি মেরে চোখের পানি মুছলো। আদ্রিশার এতোক্ষনে খেয়াল হলো মুগ্ধ কাঁদছে! মুগ্ধর আচরণে অবাক হয়ে আছে আদ্রিশা। তার মনে অজানা ভয় জায়গা করে নিচ্ছে। হুট করে এসব বলা আর কান্না করা, এসব প্র‌্যাঙ্ক হতে পারে না। তবে কি মুগ্ধ সত্যিই কিছু লুকিয়েছে? আদ্রিশা আবার‌ও বললো, “মুগ্ধ প্লিজ আপনি যা বলার সরাসরি বলুন! আপনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি!”

মুগ্ধ দু হাত মুখ ঢেকে মাটিতে হাটু গেড়ে বসলো। তারপর পায়ের উড়ুতে হাত রেখে বললো, “আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি আদ্রিশা!”

আদ্রিশা কোনো প্রতিক্রিয়া না করে ঠাই দাড়িয়ে আছে! মুগ্ধ আবার‌ও বললো,”আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি আদ্রিশা আর তাকেই বিয়ে করতে চাই!” এবার যেনো মুগ্ধর কথা আদ্রিশার কানে গেলো। চমকে উঠে পিছিয়ে গিয়ে বিছানায় বসে পড়লো সে! মাথাটা ঝিমঝিম করছে খুব! মনে মনে ভাবছে, মুগ্ধ যদি অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকে তবে তাকে কেনো বিয়ে করলো? এখানে কার কি সার্থ হাসিল হবে? ভেজা চোখ নিয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো, ” আপনি যদি অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসেন, তবে আমি! আমায় বিয়ে করার মানে কি? আমি যেমন বিয়ের আগেই আপনাকে সব জানিয়েছিলাম আপনি কেনো আমার থেকে লুকিয়েছেন মুগ্ধ? ‌ওহহহ,,,, আপনার মা নিশ্চয় সেই মেয়েকে পছন্দ করে না আর তাই এতোকিছুর পর‌ও আমাকে ঘরের ব‌উ করেছেন!কিন্তু, ‌আমিই কেনো মুগ্ধ? ‌এখন নিশ্চয় আমায় ছুড়ে ফেলে দেবেন! ‌তাহলে এই বিয়ে করার, একটা পবিত্র সম্পর্কে জড়ানোর মানে কি? আপনি , আপনি আগেই তো, আ,,,,,মা,,, দে,,,র,,”
আদ্রিশার গলায় কথা আটকাচ্ছে। কান্না ভারি হচ্ছে। নিজেকে সামলাতে না পেরে ফুঁপাচ্ছে । মুগ্ধ মেঝে থেকে উঠে আদ্রিশার সামনে এসে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। আদ্রিশা মুগ্ধর দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে চেয়ে আছে। আর একা একা কথা বলছে। সব কথা শুনা বা বুঝাও যাচ্ছে না। মুগ্ধ বুঝলো অনাকাঙ্খিত ঘটনায় হাইপার হয়ে উঠেছে সে! আদ্রিশার কাধ ধরে ঝাকিয়ে ওকে স্থির করলো মুগ্ধ । আদ্রিশার পাশে বিছানায় বসে আদ্রিশার হাত তার হাতের মুঠোয় নিয়ে আদ্রিশাকে তার দিকে ফিরালো। আদ্রিশা স্থির দৃষ্টিতে মুগ্ধকে দেখছে। চোখে তার হাজার‌ও প্রশ্ন! মুগ্ধ নিশ্বাস টেনে বললো, “আদ্রিশা, আই নো আপনি এখন অনেক হাইপার হয়ে গেছেন, বুঝতে পারছেন না কি হচ্ছে! বাট, প্লিজ আমার কথাটা শুনুন। আমাকে বুঝিয়ে বলতে দিন। তারপর যা হয় হবে!”

আদ্রিশা হালকা মাথা নাড়লো। মুগ্ধ আদ্রিশার হাত ছেড়ে দাড়িয়ে বললো, ” তিথি, আমার ভালোবাসা! ভার্সিটি লাইফের শুরু থেকেই আমি ওকে পছন্দ করতাম।তবে,ভালোবাসাটা হয়, ফাইনাল ইয়ারের দিকে! ‌আমি ওর সিনিয়ার ছিলাম। এক‌ই ভার্সিটিতে পড়েও ওর সাথে কখনো দেখা হয় নি আমার। স্টাডি ট্যুরে কক্সবাজারে যাওয়ার সময় ও আর আমি পাশাপাশি সিটে বসি! যেহেতু আমি ওর সিনিয়র তাই তেমন মিশে নি আমার সাথে! কিন্তু আমি চাইতাম ও আমার সাথে কথা বলুক, বন্ধুত্ব হোক! ট্যুরে তেমন কথা না হলেও, ভার্সিটি ক্যাম্পাসে কথা বলার হাজার‌ও ছুতো খুজে নিতাম আমি! বুঝতে পারি ভালোবাসি ওকে! ভয় পেতাম ওকে হারিয়ে না ফেলি তাই হুট করেই একদিন প্রপোজ করে বসি। ও আমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করে নি তখন! ফাইনাল এক্সামের কিছু দিন আগেই প্রকাশ পায় তার ভালোবাসা। আসলে পড়াশুনার জন্য ওকে লন্ডনে যেতে হচ্ছিলো তাই আমার থেকে দূরে যাওয়ার কষ্টে স্বীকার করে নেয় ! এখনো ও বিদেশেই আছে। সামনেই এক্সাম আর তারপর দেশে এলেই বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলাম আমরা!”

আদ্রিশা মুগ্ধকে জিগ্যেস করলো, “ও আপনাকে ভালোবাসে আপনি ওকে ভালোবাসেন, তাহলে মাঝখানে আমি এলাম কোথা থেকে? আর যদি ওর সাথে বিয়ের পরিকল্পনা থেকে থাকে, তবে আমায় কেনো বিয়ে করলেন আপনি?”

মুগ্ধ ডান হাত দিয়ে চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বললো, “বলছি! আমরা কেউই একে অন্যের পরিবারের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। ও বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন পর যখন আমি মাস্টার্স করছিলাম তখন বাবার বিজন্যাসের অনেক লস হয়ে যায়। একটা মাইনোর এট্যাক‌ও হয়েছিলো বাবার! বাধ্য হয়ে অনেক কিছু আমাকে সামলাতে হয়। জানতে পারি আমাদের বিজন্যাস রাইভেল ,যার সাথে ২৬ বছরের পারিবারিক শত্রুতা রয়েছে তিনি আর কেউ না মিস্টার আসরাফ খান! আর এই আসরাফ খান‌ই তিথির বাবা! বাবাকে যখন তার সম্পর্কে কিছু জিগ্যেস করতে যাই তখন‌ই কথা থামিয়ে দিয়ে বলেছেন, ওনার নাম শুনতেও ইচ্ছুক নন তিনি! যে ব্যাক্তির নামটাও এ বাড়িতে উচ্চারন করা হয় না তার মেয়েকে কি কেউ মেনে নেবে আদ্রিশা?”

আদ্রিশাও মুগ্ধর কথায় মাথা নেড়ে জানান দিলো যে মুগ্ধ ঠিক বলছে। আদ্রিশা বলার জন্য মুখ খুলা মাত্র‌ই মুগ্ধ বললো, “হুম আমি জানি আপনি জানতে চাচ্ছেন আপনি আমার সাথে কিভাবে জড়ালেন! বলছি , আপনার আগেও দু তিন জন মেয়েকে আমার মা পছন্দ করেছিলেন। কিন্তু আমি তো তিথিকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে বা বিয়ে করতে পারতাম না তাই মানা করে গেছি প্রতিবার। মা বাবার সন্দেহ‌ও হয়েছে আমার এভাবে বিয়ে থেকে দূরে থাকার জন্য! তারপর যখন আপনাকে দেখতে যাই, তখন আপনি বলেছিলেন আপনিও রবিন ছাড়া আর কাওকে বিয়ে করবেন না। আর পূর্বের পাত্রকে কিভাবে তাড়িয়েছেন সে বর্ণনাও আপনি দিয়েছেন। আমি ভাবলাম, এই সম্পর্কটা যদি ভাঙি তবে, কিছুদিন পর আবার‌ও আপনাকে দেখতে অন্য কেউ আসবে আর আমার জন্য‌ও বার বার পাত্রী দেখা হবে! না আপনি কাউকে এক্সেপ্ট করবেন আর না আমি! মাঝখান থেকে পরিবার জেনে গেলে, ব্যার্থ হতো ভালোবাসা। তাই দু পক্ষের তথা আপনার আর আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্ল্যান করেছিলাম আমি।”

আদ্রিশা চোখ ছোট ছোট করে বললো, “কি প্ল্যান?”

মুগ্ধ গলা ঝেড়ে বললো, “ভেবেছিলাম, আপনি আর আমি বিয়েটা করবো, আর কিছুদিন স্বামী স্ত্রীর নাটক‌ও করবো! তারপর কোনো এক বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে বা যেকোনো ভাবেই একে অন্যকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো! তখন আর যাই হোক আমাদের পরিবার নিশ্চয় আমাদের মতামত জেনেই ভবিষ্যৎ সাজাতে লাগতো। আর আমরা আমাদের ভালোবাসাকে নিজের করে পেয়ে যেতাম। আপনি আপনার রাস্তা আর আমি আমার রাস্তায়!”

আদ্রিশার এবার মনে হচ্ছে শুধু আকাশ‌ই না বরং মহাকাশ‌ও হয়তো ওর মাথায় ভেঙে পরছে। প্রচন্ড রাগে কটমট করে মুগ্ধকে বললো, “বাহ, আমার জীবনের ডিসিশন আপনি নিজেই নিয়ে নিলেন। আমার থেকে সাহায্য নাই বা নিলেন জানাতে পারেন নি? আর এই প্ল্যান! কখন ভাবলেন আপনার এই বাজে প্ল্যানের ব্যাপারে? আমাকে জানানোর , আমার মতামত নেয়ার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না নিশ্চয়,,,,”

মুগ্ধ আদ্রিশাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, “আরে, না না। আপনি ভুল ভাবছেন। আমি তোহ আপনাকে সবটা জানাতে চেয়েছিলাম!”

আদ্রিশা আবার‌ও কথার মাঝখানে বললো,”কখন? কখন বলতেন? বাসর রাতে বলার প্ল্যান ছিলো বুঝি!?”

মুগ্ধ মুখটা ছোট করে বললো, “আদ্রিশা, আপনি আমার সম্পূর্ণ কথা শুনছেন না কিন্তু! আমি প্ল্যানটা তখন‌ই করেছিলাম যখন আপনি ঐ বেচারা শান্তর সাথে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনা বলছিলেন। আর তখন‌ই আপনাকে জানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দরজার বাইরে আপনার ভাবিকে উকি মারতে দেখে আপনাকে কানে কানে ওসব বলে চলে গেছিলাম!”

আদ্রিশা মুগ্ধর কথায় জিবে কামর দিয়ে বললো, “তো,,, এর পর আর সুযোগ পান নি? আমি তো আপনার সাথে যতবার কথা হয়েছে ততবার‌ই আমার কথা বলেছি, ক‌ই আপনি তো কিছুই বলেন নি!?”

মুগ্ধ কোমরে হাত দিয়ে বললো, “সেই! আপনি বলতে দিলে তো ক্যাফেটারিয়াতে বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু প্রথমে আপনার কথার ঠ্যালা আর পরে আপনার ভাইয়ার জন্য বলতে পারি নি! আর ঐ শপিং মলে , ওখানেও আমার কথা বলার আগে আপনি ধমকি দিতে শুরু করেন। আমাকে কথা বলার সামান্য সুযোগ‌ও দেন নি! তাহলে বলতাম কখন! হলুদে বলতে চেয়েছিলাম, ওখানেও ঝগড়া লেগে গেলেন! আর আজকের কথা তো ছেড়েই দিন!”

মুগ্ধর কথায় আদ্রিশার মনে পরে গেলো সকালের পালিয়ে যাওয়া। ততক্ষনাত মুখ কালো করে কাঁদো কাঁদো চেহাড়ায় উপনীত হলো। মুগ্ধ আদ্রিশাকে ডিস্ট্রেক্ট করতে বললো, “সে যাই হোক! প্ল্যান না থাকলেও, বাসর রাতেই সব বললাম আপনাকে! বেশি দেরি হয় নি! কিছু ভাবলেন?” মুহুর্তেই আদ্রিশা কান্না কান্না ভাব থেকে অগ্নিরুপ ধারন করলো।চোখ রাঙিয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো, “যা করার সব তো করে ফেলেছেন। কিছু বাকি আছে কি? এমন ফালতু প্ল্যান ভাবেন কি করে? অসহ্য!!”

চলবে,,,,,,

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ২২
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

মুগ্ধ মুখ কাচুমাচু করে দাড়িয়ে র‌ইলো। আদ্রিশা কিছু একটা ভেবে মুগ্ধর একদম কাছে গিয়ে জিগ্যেস করলো, “পরিকল্পনা নাহয় বুঝলাম! কিন্তু আজকের ব্যাপারটা কি হলো? আপনি বিয়েটা না করে আটকাতেও তো পারতেন! আর আজকের মতো এতো ভালো একটা সুযোগ এভাবে হাতছাড়াই বা কি করে করলেন?”

মুগ্ধ আদ্রিশার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বললো, “কোন সুযোগের কথা বলছেন আপনি?”

আদ্রিশা হাত দিয়ে কপালে চাপর মেরে বললো, “বিয়ের কনে পালিয়েছিলো, বরের বাড়ির উচিত ছিলো এমন মেয়েকে ঘরে না তোলা। যেটা আপনার ফুপিও করছিলেন। কিন্তু সব ভেস্তে দিলেন আপনি। সবার মতো আমাকে অপমান নাই বা করলেন, চুপচাপ আসর থেকে চলে আসতেন। ব্যাস, মিটে যেতো!”

আদ্রিশা ঠোঁট কামরেই কথাটা বলেছিলো‌। নিজের অসম্মানের কথা কি আর বুক ফুলিয়ে বলা যায়! মুগ্ধ হাসলো। আদ্রিশা বোকার মতো চেয়ে আছে মুগ্ধর দিকে। হাসি পাওয়ার মতো তো সে কিছু বলে নি! মুগ্ধ আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বললো, “আপনার আমাকে এতোটা খারাপ মনে হয় আদ্রিশা!?” মুগ্ধর কথায় আদ্রিশা বেশ অবাক‌ই হলো! মুগ্ধর বলা সব কথা সে বুঝতে পারে না। মুগ্ধ আয়নার দিকে মুখ করেই বললো, “আপনাকে সবাই যা তা বলছিলো আর আপনি বলছেন, চুপচাপ সব শুনবো! একজন আত্মমর্যাদা বান ছেলে হয়ে এই কাজ করতে পারি বলুন? ‌ওখানে আপনার যায়গায় অন্য যে কেউ হলেও কিন্তু আমি প্রতিবাদ করতাম! আর বলছেন বিয়ের কথা! আমি তো শুধু প্রতিবাদটুকুই করেছিলাম, আমার কথায় আমার মায়ের মনে হয়েছে, আমি আপনাকে ভালোবাসি আর তাই তিনি প্রস্তাবটা রাখেন। আপনিও তো মত দিয়েছেন তখন! ‌আপনার মত দেয়ার পরে, আপনার আমার বাবা মায়ের চোখের সেই ঝলক, সেই খুশি, আমি কেড়ে নিতাম বলছেন? কিছুক্ষনের জন্য ব্ল্যাংক ছিলাম! পরে সব বুঝতে পেরেও কিছু করতে পারি নি, দেরি হয়ে গেছিলো অনেক।”

আদ্রিশা ভাঙা গলায় বললো, “আমি তো অপরাধ করেছিলাম মুগ্ধ। আর আপনি আমার পাপের ভাগিদার হলেন, সত্যিকার অর্থে,,,,,”

মুগ্ধ আদ্রিশাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, “কিসের অপরাধের কথা বলছেন আদ্রিশা! আমার চোখে তো আপনি অপরাধী নন! বরং আমি অপরাধ করেছি। আপনার সাথে, পরিবারের সাথে, তিথির সাথে এমনকি নিজের সাথেও! আমার পাপের ভাগিদার কে হবে!”

মুগ্ধর কথার পিঠে কিছু বললো না আদ্রিশা! মুগ্ধ আবার‌ও বললো, “আপনি তো আপনার সম্পর্কের কথা আমায় জানিয়েছেন, কিন্তু আমি, আমি তার ভ্যালু না দিয়ে উল্টো একাই চারটে জীবনের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে বসে পরলাম! আমার উচিত ছিলো আপনার সাথে কথা বলা। যদিও সম্ভব হয় নি, তবুও আপনার থেকে লুকিয়ে এতবড় ডিসিশন নেয়া উচিত হয় নি!”

আদ্রিশার চোখ আবার‌ও ভিজে যাচ্ছে। আদ্রিশা মাথা নিচু করে বললো, “হুম ! আজ যদি না পালাতাম তবে হয়তো আপনাকে জানাই হতো না! আর রবিন! ‌আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে তা জানতাম‌ও না! সব ঠিক থাকলে, এখন হয়তো আমি রবিনকে বিয়ে করার প্ল্যান করতাম আর আপনি তিথিকে !” আদ্রিশার কথায় মুগ্ধ মুখ টা গম্ভীর করে রাইলো আর আদ্রিশা, ভালোবাসা হারানোর শোকে দু ফোটা চোখের পানি ফেললো!

___________________

দরজায় খট খট আওয়াজে ঘুম ভাঙে আদ্রিশার। দেয়াল ঘরিতে ৮ বাজে। মাথা ঘুরিয়ে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিলো আদ্রিশা। এটা যে মুগ্ধর ঘর আর ও যে নিজের শ্বশুড় বাড়ি আছে , সেটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লেগেছে তার! বাইরে থেকে কেউ ডাকছে! লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে সোফায় ঘুমন্ত মুগ্ধকে ধাক্কা দিতে থাকে। মুগ্ধ চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে চোখের সামনে আদ্রিশাকে দেখে, ধরফরিয়ে উঠে। আদ্রিশা ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে দরজার দিকে আঙুল দিয়ে মুগ্ধ কে ইশারা করলো। মুগ্ধ দরজার দিকে একপলক দেখে আদ্রিশার দিকে ফিরে বললো, “কাম অন আদ্রিশা! কেউ ডাকছে যখন খুলছেন না কেনো দরজাটা?”

মুগ্ধ দরজাটা খুলতে যেতেই আদ্রিশা তার হাত ধরে আটকে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো, “দরজাটা খুললেই যদি কেউ ঘরে ঢুকে, তখন কি হবে?”

মুগ্ধ ফুস করে শ্বাস ছেড়ে বললো, “ঘরে ঢুকলে ঢুকবে, আমরা চুরি করেছি না কি?”

আদ্রিশা মাথা নেড়ে বললো, “ডাকাতি!”

মুগ্ধ গোল গোল চোখে আদ্রিশার দিকে তাকালো। দরজায় আওয়াজ তীব্র হতে থাকলো।আদ্রিশা মুগ্ধর হাতে সোফা থেকে বালিস আর কাথা ধরিয়ে দিয়ে বললো, “তাড়াতাড়ি বিছানায় এগুলো রাখুন! কেউ দেখলে যাতে বুঝে আমরা রাতে এক বিছানাতেই শুয়েছি! আমি গোসলে গেলাম। বলে দিবেন, আমি ওয়াশরুমে আর আপনি ঘুমে তাই খুলতে দেরি হলো!”

মুগ্ধ ঘুমু ঘুমু চোখে বললো,” কি খুলতে দেরি হলো?” আদ্রিশা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়ে থেমে পেছনে তাকালো। দাঁত কড়মড় করে বললো, “দরজা!” মুগ্ধর হুশ হলো সে কি বলছে!

______________

ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন পরিবারের অনেক সদস্যরা। ছোটরা আগেই ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছে। মুগ্ধ আর আদ্রিশা পাশাপাশি চেয়ারে বসা। তাদের ঠিক সামনেই মুগ্ধর ফুফু মনোয়ারা বেগম বিরক্তি ভাব নিয়ে বসেছেন। গলা দিয়ে খাবার নামছে না তার। আদ্রিশাকে দেখেই তার এমন বিরক্তিভাব! ‌আদ্রিশার‌ও বেশ অস্বস্তি হচ্ছে! তাই মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে। স্নিগ্ধ মুগ্ধর চেয়ারের উপর হাত দিয়ে মুগ্ধর দিকে ঝুঁকে বললো,

“ভাই, তোকে এমন লাগছে কেনো? চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আছে!”

মুগ্ধর মনোযোগ খাওয়ায় ছিলো। কোনো কিছু না ভেবেই বলে দিলো, “রাতে ঘুম হয় নি তো তাই!”

মুগ্ধ কথাটা একটু জোড়েই ‌‌‌‌‌বলেছিলো, বিধায় ডাইনিংএর আশেপাশে থাকা সবাই শুনতে পায়। স্নিগ্ধ চোখ একবার খুলে বন্ধ করছে আর আদ্রিশার দিকে আড়চোখে দেখছে। আদ্রিশা খেয়াল না করে খেয়ে যাচ্ছে। মুগ্ধর কাজিনরা হাসাহাসি করছে। মুগ্ধর কথায় রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে মনোয়ারা বেগমের।

স্নিগ্ধ এবার মজার ছলে বললো, “ভাই, ঘুম না হ‌ওয়ার কি কোনো স্পেসিফিক রিজন আছে?”

মুগ্ধ খেতে খেতেই বললো, “রাতে না ঘুমানোর কোনো কারন থাকা লাগে না কি?থাকলে আদ্রিশাকে জিগ্যেস ও ও তো ঘুমায় নি!”

স্নিগ্ধ খুব জোড়ে হেসেই বললো, “কাল যে রাত ছিলো, না ঘুমানোর‌ই তো কথা। তাই না ভাবি!?”

মুগ্ধ খাওয়া থামিয়ে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো, “ঐ কাল কি রাত ছিলো?”

আদ্রিশা বিষম খেয়ে মুগ্ধর দিকে রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। স্নিগ্ধ সহ উপস্থিত কাজিনরা উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। মুগ্ধ মাথা ঘুরিয়ে বাবার দিকে তাকাতেই তিনি অপ্রস্তুত হয়ে খাবার টেবিল থেকে উঠে চলেগেলেন। মনোয়ারা বেগম‌ও মুখ ফুলিয়ে চেয়ার ছাড়লেন। মুগ্ধর চোখ আদ্রিশার দিকে। আদ্রিশাকে দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুনি চিবিয়ে খেয়ে নিবে মুগ্ধকে। স্নিগ্ধ মুগ্ধর কানে কানে বললো, “রাতের কথা সকালেই ভুলে গেলে! বাসর বলেও তো,,,,,,” কথাটা শেষ হ‌ওয়ার আগেই মুগ্ধর চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম! শুকনো ঢোক গিলে ইশারায় আদ্রিশাকে স্যরি বলতে নিলেই ও উঠে ঘরে চলে যায়। ইশশশশ,,,, কি লজ্জাটাই না পেলো আজ দুজনে! বড় আর ছোটদের সামনে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেলো। আর মুগ্ধ গাধার মতো, উল্টো পাল্টা বকছিলো!! ছি ছি, আদ্রিশা তো ভিষন রেগে গেছে, আর এদিকে বাবা আর ফুফু কি ভাবছে কে জানে। মুগ্ধর ইচ্ছে করছে, গুণধর ভাই স্নিগ্ধকে আচ্ছামতো ধুলাই দিতে! কিন্তু স্নিগ্ধ সে সুযোগ না দিয়েই দৌড় দিলো‌ । খাওয়ার টেবিলে অসহায় মুখে বসে র‌ইলো মুগ্ধ। খাওয়ার মুডটাও নষ্ট হয়ে গেলো তার!

চলবে,,,,,