যদি তুমি চাও পর্ব-০৬

0
411

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

৬.
অন্তি এখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কিছুদিন বাদেই হয়তো পরীক্ষা শুরু হবে কিন্তু পড়াশোনায় তার মন নেই। সব সময় নিহালের সাথে কথা বলা চায় তার। নিহাল বিষয়টা নিয়ে আগে কিছু বলতে না পারলেও এখন তাকে বলতেই হবে। অন্তির জন্য বলতে হবে। কথা অনুযায়ী দু’জনে তাদের প্রিয় রেস্টুরেন্টে পৌঁছেও যায়। কথা হয় অনেক এরপর একটা সময় নিহাল বলে,
-অন্তু।
-কিছু বলবে?
-তোমার ইনকোর্স এক্সাম কখন থেকে শুরু হবে?
-আগামী মাস থেকে। কেনো?
-কিছু কথা বলবো তোমায় তবে কথাগুলো শুনে অভিমান করে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না।
-আচ্ছা করবো না এবার বলো।
-তুমি যে দিনের বেশির ভাগ সময় আমার সাথে কাটিয়ে দিচ্ছ তাতে উত্তরপত্রে কী লিখে আসবে?
-বেশির ভাগ সময় কোথায়! আমি তো জাস্ট বিকেল টাইমে দেখা করি তোমার সাথে তাও অনলি থার্টি মিনিটস এর জন্য।
নিহাল হাসে তারপর বলে,
-ঘণ্টায় ঘণ্টায় কল দিয়ে কখনো ত্রিশ মিনিট কখনো চল্লিশ আবার কখনো পঞ্চান্ন মিনিট কথা বলো সেটা কী হবে? রাতে আমি তোমায় ঘুমোতে বললে তুমি আর পাঁচ মিনিট, আর পাঁচ মিনিট বলে বলে ঘণ্টা পার করে দাও। তোমার পড়াশোনা কখন হয়? এরপর তো দেখা যাবে তোমার মা আমাকে এই অপরাধে কিক মেরে তোমার লাইফ থেকে বের করে দেবে। তখন কী করবে?
অন্তি মুখটা গোমড়া করে বসে থাকে। নিহাল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। যা ভেবেছিল তাই হচ্ছে, অন্তি কিছুই বুঝার চেষ্টা করছে না আর করবে বলে মনেও হচ্ছে না।

অন্তির একটা হাত নিহাল নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
-আগেই বলেছিলাম অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া চলবে না।
অন্তি নিহালের দিকে ফিরে বললো,
-এখনো সতেরো দিন বাকি আছে নিহাল। চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি, পরীক্ষার আগে বিয়ে করলে মা পরে আর সুযোগই পাবে না তোমায় কিক করার।
-পাগল হয়েছ অন্তি, এখনই বিয়ে নিয়ে কথা বললে তোমার মা আমায় ঝ্যাটা পেটা করে তাড়াবে।
-তাহলে উপায়?
-পড়াশোনায় মন দাও।
-ধ্যাত পড়তে আর ভালো লাগে না। বিয়ে করবো মানে বিয়ে করবো ব্যস।
নিহাল কিছু বলতে নিলে পাশে থেকে কেউ বলে,
-ভুলে যান মিস অন্তরা, এই ছেলে আপনাকে বিয়ে করবে না।
হঠাৎ করে আগন্তুক কণ্ঠে এমন কিছু শুনে অন্তি ও নিহাল দু’জনেই পাশ ফিরে দেখে। ওদের পাশের টেবিলেই একজন বসে আছে। দেখে বয়সটা বলা যাচ্ছে না তবে খুব বেশি হবে বলেও মনে হচ্ছে না। সেই ব্যক্তি হাতের ইশারায় কাউকে কিছু বোঝালো আর তখনই একজন ওয়েটার এসে হাজির হলো তার সামনে। বিল এগিয়ে দিয়ে বললো,
-ইওর বিল স্যার।
নিয়েছে তো শুধুমাত্র একটা কফি তাতেই হাজার টাকার একটা নোট বিলবুকে রেখে উঠে দাঁড়ালো সে। অন্তি ভেবেছিল হয়তো বেরিয়ে যাবে সে কিন্তু না, গেল না। উল্টো অন্তির সামনে এসে দাঁড়িয়ে এক মুহুর্ত সময় ব্যয় না করে ওর হাতটা শক্ত হাতে ধরে টেনে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। ঘটনা যা ঘটে গেল সেটা বুঝতে নিহালের কিছুটা সময় লাগে তবে বুঝতে পারার সাথে সাথে সেও তাদের পিছু ছুটে।

রেস্টুরেন্টের বাইরে আসা মাত্রই অন্তি এক ঝটকায় নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। বিরক্তি নিয়ে বলে,
-কে আপনি? আপনার সাহস কী করে হয় আমার হাত ধরার, আমায় এইভাবে টেনে আনার?
-তোমার সাথের ছেলেটি কে ছিল?
-আপনি কে বলুন তো, আপনাকে কেনো উত্তর দেবো আমি! একে তো আমার পার্সোনাল লাইফে ঢোকার চেষ্টা করছেন তার উপর আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করছেন। আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবো কেনো? বলুন কেনো দেবো উত্তর?
-কথা বাড়িও না অন্তরা আমার সাথে চলো।
-আপনার সাথে যেতে হবে মানে কী? আমি যেখানে আপনাকে চিনি না সেখানে আপনার কথা শোনার প্রয়োজনও বোধ করছি না। দেখুন এটা পাবলিক প্লেস এখানে তামাসা করবেন না। আপনাকে দেখলে তো মনে হয় না আপনি এতোটা খারাপ হতে পারেন তারপরেও কী করা যেতে পারে শয়তান দেখতে তো মানুষের মতোই হয়।
-ওকে স্টপ নাও। তুমি কিন্তু এখন আমাকে ইনসাল্ট করছো।
অন্তি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
-দেখুন আপনি প্লিজ চলে যান এখান থেকে।
-আমি যাবো তবে তুমিও আমার সাথে যাবে।
এমন সময় নিহাল এসে বলে,
-কে বে তুই, ওকে এইভাবে টেনে আনার সাহস কী করে হয় তোর?
-আমি কে? কে আমি? আমি কে তাই তো…
কথাটা ঘুরিয়ে পেচিয়ে রিপিট করতে করতেই এক সময় নিহালকে একটা ঘুষি মারে সে। হঠাৎ আঘাতে নিহাল দুই কদম পেছনে সরে যায় কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে আবার এগিয়েও আসে।
-তোর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আমি। অন্তু চেনো ওকে?
-না নিহাল, আমি চিনি না।
-বখতিয়ারুজ্জামান খান। অন্তরা তোমার মায়ের সামনে গিয়ে আমার নামটা বলবে, কেমন? উনিই উত্তর দেবেন আমি কে? আজকের মতো চলে যাচ্ছি ভবিষ্যতে দেখা হলে তুই বেঁচে ফিরবি না।
নিহালকে হুমকি দিয়ে চলে যায় সে। নিহাল অপমানিত বোধ করে তবুও অন্তির দিকে চেয়ে চুপ থাকে।

অন্তি তার মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রুবি নামটা শুনলেন তবে তার মুখভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল না কিন্তু যখন শুনলেন লোকটি নিহালকে মেরেছে সাথে অন্তির সাথেও বাজে ব্যবহার করেছে তখন তার চেহারায় রাগী ভাবটা দেখা যায়। অন্তিও রেগে আছে তার ইচ্ছে করছে এখুনি গিয়ে ওই লোকের একটা ব্যবস্থা করে আসার কিন্তু তা সম্ভব নয়। সম্ভব হলেও তো শুধু নাম ছাড়া তার সম্পর্কে কিছুই জানে না অন্তি। রাফিদ বলে,
-মা তুমি কিছু না করতে পারলে আমায় বলো আমি যা করার করবো।
-তোর এখন এসব করার বয়স নয় বাপ তুই যা গিয়ে পড়তে বোস।
-কীভাবে মা? আমার বোনের সাথে কেউ এইভাবে বাজে ব্যবহার করে যাবে আর আমি চুপ করে বসে থাকব?
-যা করার আমি করবো। অন্তি কী যেন বললে নামটা!
-বখতিয়ারুজ্জামান খান।
-নামটা ঠিক চিনতে পারছি না আমি তবে তোমার বাবার চেনা কিনা সেটা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। যেহেতু তোমার বাবা নেই তাই তার সাথে বহু বছর কাজ করেছেন এমন কিছু মানুষদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে আমাকে। একটু সময় দে আমি ব্যবস্থা করবো। এখন যাও গিয়ে এই জামা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে পরিষ্কার জামা পরে নাও।
-আচ্ছা মা।

মা বলেছিলেন ব্যবস্থা নেবেন, সেই লোককে খুঁজে বের করে তাকে সাবধানও করে এসেছিলেন তিনি। এরপর দুই মাস খুব ভালোই কাটে অন্তির। পরীক্ষাও হয় ভালোই। নিহালের সাথে যোগাযোগ কমে গিয়েছিল এই সময়টাতে তবে এখন আবারও আগের মতোই ঘণ্টায় ঘণ্টায় কল দিয়ে কথা বলা চায় ই চায় নইলে অন্তির দিন পার হতে চায় না।

ভালো সময়টা খুব দ্রুত চলে যেতে থাকে তারপর একটা সময় আবার সেই ঝড় এসে পথে বাঁধা সৃষ্টি করে। হ্যা সেই ঝড় বখতিয়ারুজ্জামান খান। সে এসে অন্তির জীবনে আবারও ঢোকার চেষ্টা করে। বার বার বলে নিহালের কাছে থেকে সরে আসতে নয়তো কীভাবে আঙুল বাঁকিয়ে কাজ হাসিল করতে হয় সেটা তার জানা আছে। অন্তিও জেদি, সে চ্যালেঞ্জ করে সে নিহালকে ছাড়বে না কখনোই না আর বিয়ে ওকেই করবে। তখন লোকটি বলেছিল, যেই ছেলের জন্য তার কথা অমান্য করছে সেই ছেলেই একদিন ধোঁকা দিয়ে পালাবে। অন্তির মনে ছিল নিহালের জন্য গভীর ভালোবাসা আর ভরসা। সে বলেছিল, বিশ্বাসের সাথেই বলেছিল এমন কিছুই ঘটবে না। তার কথাটা মিলেও গিয়েছিল। নিহাল তাকে প্রপোজও করলো বিয়ের জন্য কিন্তু এই এক লোক যে সবটা শেষ করে দিয়ে চলে গেল। অন্তি জানে না নিহাল এখন কোথায়? কী অবস্থায় আছে সে? জানবেই বা কি করে সে তো নিজেও বন্দি এক অন্ধকার ঘরে। যার মাঝে আলোর কোনো চিহ্ন নেই। অন্তি বুঝে উঠতে পারে না এই ব্যক্তির তার সাথে কীসের এতো শত্রুতা! প্রশ্ন রয়ে যায় মনে সাথে চিন্তাও এসে ভীড় জমায়। নিহালকেও কি ওর মতো করেই কোথাও আটকে রাখা হয়েছে? কিছুই বুঝে উঠতে পারে না অন্তি। তার মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছে সে। এমন অবস্থায় সে লড়বে কী করে?

চলবে….