যদি তুমি চাও পর্ব-৩০

0
364

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

৩০.
অন্তির এই প্রশ্নের মাঝে পয়েন্ট তো আছেই যা আবিরকেও ভাবার জন্য বাধ্য করছে তবে কী…. না না একটু বেশীই ভেবে ফেলছে সে।
-শোনো অন্তরা যে ছেলেটা এতোগুলো মানুষের সাথে প্রতারণা করতে পারে সে সামান্য ভুল ইনফরমেশন দিতে পারবে না! হয়তো তোমার মা যাকে দিয়ে কাজ করেয়েছিল তাকে ছেলেটা হাত করে নিয়েছিল।
-হতে পারে।
-ওসব ভেবো না এখন।
-আমি নিজের কথা ভাবি না আবির, রিধি কথা ভাবছি।
-ও দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে একটুখানি মেন্টাল সাপোর্ট দিলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
-তাই যেনো হয়।
-আচ্ছা ছেলেটা এখন কোথায় আছে?
-পুলিশ কাস্টেডিতে।
সবকিছু শুনে আবির দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আর সে সব মেয়েদের কথা ভাবে যারা কোনো কিছু না ভেবেই এমন ছেলেদের ফাঁদে পা দেয় আর ফেঁসে যায়। ভাবতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলে না উত্তরে। সে আর ভাবতেও চায় না, অন্তিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে বসে থাকে। আজ আর এখান থেকে নড়া যাবে না, বাবাকে জানিয়ে দিতে হবে মা’কে যেনো যে কোনো ভাবে ম্যানেজ করে নেন তিনি।

নিহালের বাবা-মা উপস্থিত আছেন ছায়াদের বাড়িতে। এই সময় ছায়া তাদের সামনেই বসে আছে, মেয়েটা কাঁদছে দেখে যখন তারা কারণ জানতে চান তখন ছায়ার মা বলেন,
-এমন হুট করেই বিয়ের কথা হয়ে গেল যে আমার মেয়েটা নিজেকে প্রস্তুত করার সময়টুকুও পেলো না। তাই কাঁদছে।
-ওহ।
নিহালের মা ছোট্ট করে উত্তর দিলেন। তিনি চিন্তিত তার ছেলে এখনও এসে উপস্থিত হতে পারেনি বলে। এমন সময় মেঘ এসে উপস্থিত হয় সেখানে আর বলে,
-আপনাদের ছেলের অপেক্ষা করছেন?
-হ্যা, কিন্তু তুমি কে?
নিহালের বাবা প্রশ্ন। মেঘ উত্তর দেয়,
-আমি কে? ছায়া বলো তো আমি কে?
ছায়ার বাবা মেঘকে দেখে এবং তার কথা শুনেই বুঝতে পেরেছেন আসলে সে কে তাই তিনি এগিয়ে এসে একটা হাত বাড়িয়ে মেঘের বুকে রেখে ধাক্কা দেন। মেঘ কয়েক কদম পেছনে সরে যায় তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ছায়ার বাবা বলেন,
-তুমি যেই হয়ে থাকো না কেনো এইখানে তোমার কোনো কাজ নেই। আসতে পারো এখন।
সদর দরজার দিকে রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া হলো মেঘকে। মেঘ নাছোড়বান্দা, সে তো নড়বে না আর তা দেখেই বিরক্ত হয়ে ছায়ার বাবা প্রশ্ন করেন,
-আপনাদের ছেলে কোথায়? আমার মেয়ে আর কতক্ষণ এইভাবে বসে থাকবে?
এই প্রশ্নের উত্তরটা মেঘই দিলো,
-ছেলে এখন পুলিশের হেফাজতে।
মেঘের কথা শুনে সকলেই তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রয়। নিহালের বাবা রেগে গিয়ে এগিয়ে এসে মেঘের কলার চেপে ধরে বলেন,
-এই ছেলে তুমি জানো তুমি কার সম্পর্কে কথা বলছো? ও আমার ছেলে, ও কোনো অপরাধী নয়।
-সে তো আপনি থানায় গিয়েই জানতে পারবেন তাই দাঁড়িয়ে না থেকে যান, প্লিজ।
নিহালের বাবা নিহালের ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন পেলেন না তখন স্ত্রীকে নিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন। ছায়ার বাবা মেঘের উপর রেগে যান তারপর তাকে বলেন,
-এবার তুমিও বেরোও।
মেঘ ছায়ার দিকে চেয়ে থাকে। ইশ! মেয়েটা মার খেয়েছে অনেক গালে দাগ বসে আছে। হয়তো এক নাগাড়ে থাপ্পড় মারা হয়েছে তাকে যার দরুন আঙুলের ছাপ পড়লেও তা আলাদা করা যাচ্ছে না এতোটাই ঘন হয়ে ছাপ বসেছে একেকটা আঙুলের।
-কী হলো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? বেরিয়ে যাও এখান থেকে।
-যাওয়ার জন্য তো আসিনি।
-হ্যা সেটাই তো দেখছি। তোমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
এরপর উনি নিজের বড় জামাইয়ের দিকে চেয়ে বলেন,
-একে বের করে যাও গিয়ে একবার দেখে এসো ছেলেটাকে কোন কেসে ফাসিয়ে এসেছে। আমি নিশ্চিত টাকা দিয়ে পুলিশকে হাত করেছে এই ছেলেটা।
মেঘ এবার রেগে যায়।
-দূর মিয়া, আপনার সাথে আমি ভালোভাবে ধৈর্যের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি আর আপনি কি না, যাই হোক সরুন ছায়ার সাথে কিছু কথা আছে আমার।
মেঘ এগোতে গেলে উনি আবার বাধা দিয়ে বলেন,
-ছায়া, ভেতরে যাও।
ছায়া তবুও দাঁড়িয়ে থাকে দেখে উনি ধমকে বলেন,
-কী হলো কথা কানে যায়নি?
ছায়া নড়লো না এবারও তা দেখে ওর মা’ই এগিয়ে এলেন। ওকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন তখন ছায়া বললো,
-বাবা একবার শোনো না উনি কি বলছেন।
-তোমার শিক্ষা এখনো হয়নি দেখছি, ভেতরে যাও ছায়া।
ছায়া এবার করুন দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকায়। মেঘ কারো বাধা মানে না। সে এগিয়ে যায় ছায়ার দিকে। ছায়া’কে টেনে নিয়ে বসায় একটা চেয়ারে তারপর তার সামনে বসে তার হাত দুটো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বলে,
-ছায়া, তুমি কী আমায় চাও? আই মিন এখন সবকিছু তোমার উপর আছে।
-ও কিছু বলবে না।
ছায়ার বাবা মেঘকে বাধা দেওয়ার জন্য এগোন আর তখনই ছায়ার দুলাভাই এগিয়ে এসে শ্বশুরমশাই’কে আটকে নিয়ে বলে,
-বাবা, আমার মনে হয় কী ছেলেটাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।
-তুমি এই কথা বলছো! এই ছেলেটা ছায়া’কে ব্যবহার করতে চেয়েছে ভুলে গেলে আমি তোমায় বলেছিলাম সেদিন যে অন্তরার মা এসে….
-আমি মানছি বাবা উনি যা বলেছেন তা হয়তো সত্য আবার এখন আমি যা দেখতে পারছি সেটাও তো মিথ্যে নয়।
-এসব নাটক দেখে গলে যেও না।
-নাটক কী না বোঝার একটা পথ আছে, বাবা।
-কী?
-ছেলেটিকে বলুন এখুনি এই মুহুর্তে ছায়া’কে বিয়ে করতে। রাজি হয়ে গেলে বুঝবেন….
-কিন্তু…
-বাবা এইদিকে আসুন আমার সাথে।
তারা সরে গেলে এইদিকে মেঘ ছায়া’কে বলে,
-ছায়া, ডু ইউ লাভ মি?
ছায়া কেঁদে মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মেঘ হেসে বলে,
-ভালো না বাসলেও কোনো প্রবলেম ছিল না। আমি ঠিক মানিয়ে নিতাম, আমার ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে আড়াল করে রাখতাম তোমায়। ইউ নো ছায়া, তোমাকে আমার প্রয়োজন। খুব প্রয়োজন। এমন নয় যে তুমি আমার প্রয়োজন বলেই তোমাকে আমার প্রয়োজন বরং তোমাকে আমার প্রয়োজন কারণ তুমি আমার প্রিয়জন। ভেবেছিলাম জীবনটা হয়তো একাই কাটাতে হবে কিন্তু তুমি এসে সব এলোমেলো করে দিলে। এখনোও তোমায় অনেক কিছু বলা বাকি তবে মনে হয় না সময় পাবো। শোনো, তুমি চাইলে আর কোনো কিছুর পরোয়া করবো না আমি। প্রয়োজনে তোমায় ভাগিয়ে নিয়ে যাব।
বলেই হাসে মেঘ তারপর আবার বলে,
-অবভিয়াসলি, যদি তুমি চাও।
মেঘ একটা হাত বাড়িয়ে ছায়ার চোখ মুছে নিয়ে বলে,
-উমমম, আর নয় কান্নাকাটি আগে দেখি তোমার বাবাকে রাজি করাতে পারি কি-না তারপর.. আচ্ছা তোমার স্পিড কেমন?
ছায়ার কপালে ভাঁজ দেখা যায় তখন মেঘ বলে,
-দৌঁড়োনোর স্পিড, তোমার বাবা না মানলে পালাতে হবে তো।
ছায়া কাঁদতে কাঁদতেই হেসে দিয়ে বলে,
-দৌঁড়োতে হবে কেনো, তুমি তোমার গাড়ি নিয়ে আসোনি?
-আরে হ্যা। দেখেছো আমার মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিল।
ছায়া চুপ করে যায় ওর বাবা’কে দেখে আর ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে মেঘও ফিরে তাকায়।

ছায়ার বাবা ভেবেছিলেন মেঘের সামনে বিয়ের কথা বলতেই হয়তো সে না করে দিয়ে চলে যাবে আর ছায়াও বুঝতে পারবে ও কতটা ভুল মানুষের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিল কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে মেঘ বললো সে এই মুহুর্তেই ছায়াকে বিয়ে করে নিতে চায়। নিজের ধারণা ভুল প্রমাণিত হওয়ায় আর মেয়ের মন না ভাঙায় স্বস্তিই পেলেন ছায়ার বাবা। ঠিক করা হলো যেই কাজী সাহেবকে নিহাল ও ছায়ার বিয়ে পড়ানোর জন্য ডাকা হয়েছিল তার হাতেই আজ মেঘ-ছায়ার বিয়েটা সুসম্পন্ন করা হবে। উনি হয়তো এসে পড়বেন কিছুক্ষণের মাঝেই। ছায়ার দুলাভাই ছায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেল মেঘকে নিয়ে। ছায়া যেনো নতুন করে চিনলো এই মানুষটাকে।

কাজি সাহেব আগে মেঘের কাছে আসলেন বয়ান লিখতে হবে যে। এরপর তার কাছে সই নিয়ে বিয়ে পড়ানো শুরু হলো। মেঘের সম্মতি নিয়ে এবার ছায়ার কাছে যান উনি। ছায়ার চেহারায় খুশির ভাবটা কেটে যায় যখন সে সই করতে গিয়ে মেঘের নামটা দেখে। ‘বখতিয়ারুজ্জামান খান’। ছায়ার মনে পড়ে এই নামটা সে অন্তির কাছে শুনেছিল। অন্তির লাইফের এক মাত্র ভিলেইন তবে ‘মেঘ’!

চলবে…..