যদি তুমি চাও পর্ব-২৯

0
381

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

২৯.
রুবির সামনে এই মুহুর্তে রয়েছে বখতিয়ারুজ্জামান খান। এই সেই ব্যক্তি যে কি-না রুবিকে এতগুলো দিন পেরেশানির মাঝে রেখে তবে আজ সে কী কারণে এসে দাঁড়িয়েছে তা রুবির খুব ভালো ভাবেই জানা আছে তাই তো তিনি পায়ের উপর পা তুলে একের পর এক কাজু বাদাম মুখে পুরছেন আর সামনে থাকা বিশাল মনিটরে একটা মুভি দেখছেন। রুবি বললেন,
-এই মুভিটা দেখছেন মিস্টার খান, এই মুভির কোনো কিছুর সাথেই আপনার অবস্থার মিল না থাকলেও মুভির নামের সাথে খুব মিলে যায়। ‘ম্যায়নে পেয়ার কিউ কিয়া’ সত্যিই বিশ্বাস হয় না বখতিয়ারুজ্জামান খান প্রেমে পড়েছে তবে কেনো পড়েছে?
মেঘের মাথা গরম হয়ে আসছে ক্রমশ তবুও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা সে চালিয়ে যায়। রুবি আবার বলেন,
-লেট মি টেল ইউ সামথিং। আ গুড নিউজ ফর ইউ, ছায়ার জন্য একটা সম্বন্ধ খুঁজে এনেছি আমি। আহা খোঁজায় ছিল তবে মেয়েটা পাল্টে গেছে বলতে পারো।
-কী বলতে চাইছেন?
-নিহাল, নিহালকে ঠিক করেছি তোমার ছায়ার জন্য।
এই বলে রুবি হাসেন। মেঘের চেহারা রক্তবর্ন ধারণ করে তা দেখে রুবি বলেন,
-কেমন লাগছে বলো তো, ঠিক এই অনুভূতিটাই আমার হয়েছিল যখন অন্তিকে জোর করে তোমার পছন্দের পাত্রের হাতে তুলে দিতে হয়েছিল আমাকে।
-আমি মোটেও জোর করিনি আপনাকে। আপনি নিজেই সেই পথ বেছে নিয়েছিলেন।
-তো আমি কী আমার মেয়েকে ওই অবস্থায় বন্দি হয়ে থাকতে দেখতাম!
-হা হা হা….
মেঘ অদ্ভুতভাবে হাসতে থাকে তারপর বলে,
-মেয়ে মেয়ে করে জীবন তো শেষ করলেন মিসেস খান, ছেলের খবর রাখেন?
-কী বলতে চাইছো তুমি!
-আপনার ছেলে মানে রাফিদ সে কী কী করে বেড়াচ্ছে তার কোনো আইডিয়া আছে আপনার?
-তুমি কী আমায় চিন্তায় ফেলার চেষ্টা করছো?
মেঘ বসে রুবির সামনে থেকে কাজুবাদামের বাটিটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললো,
-আপনার ছেলে একবার দশ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল না!
-তুমি জানলে কী করে?
-আমার একাউন্টের খবর আমি জানবো না সে কী করে সম্ভব মিসেস খান। ওসব কথা আজ থাক একটা কথ বলি শুনুন সারাক্ষণ মেয়েদের দিকে নজর না দিয়ে একটু ছেলের দিকেও নজর দিতে পারতেন তাহলে অন্তত এই বয়সে এতো খাটুনি টানতে হতো না আপনাকে।
-মানে?
-আহা, সবুর করুন। দেখছেন আমার হাতে সময় নেই তারপরেও আমি আপনাকে বোঝানোর জন্য ডিটেইলস এ ঢুকছি আর আপনি এইভাবে ডেস্পারেট হয়ে উঠছেন, নট ফেয়ার মিসেস খান। দ্যাট’স এবসেলিউটলি নট ফেয়ার। আমার ব্যবস্থা, আপনার কাজ আপনার বাচ্চার ভবিষ্যৎ এসব না ভেবে যদি একটু চেষ্টা করতেন নিজের বাচ্চাকে কর্মঠ করে তোলার তবেই আপনি শ্রেষ্ঠ মা হতে পারতেন কিন্তু আফসোস আপনার মতোই কিছু মা-বাবার কারণে ছেলে-মেয়ের অধঃপতন ঘটে। ভাগ্যিস আপনার মেয়েটা এমন হয়নি আর হ্যা একটা গুড নিউজ দেই? চলুন উত্তরের অপেক্ষা না করে বলেই ফেলি, আপনার ছেলে যতটুকু বিপথে হেঁটেছিল তাকে তার থেকেও হাজার ডিগ্রী অপজিটে ফিরিয়ে সুপথে নিয়ে এসেছি আমি। এর জন্য একটা থ্যাংকস তো আমার প্রাপ্য তাই না মিসেস খান। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ থ্যাংকস বলুন না।
রুবির চেহারায় রাগের ছাপ স্পষ্ট সেই রাগটা আরও বৃষ্টি পায় যখন মেঘ তার ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা সদ্য আসা একটা মেসেজ রুবির চোখের সামনে তুলে ধরে। রুবির অবস্থা এই মুহুর্তে ঠিক কেমন তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

আবিরের ফোন রিং হয়ে যাচ্ছে অনেকক্ষণ যাবত কিন্তু সে রিসিভ করার অবস্থাতে নেই এই মুহুর্তে। একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ নিয়ে ডিসকাশন চলতে তার। যাওয়ার আগে সে তার প্রজেক্টটা শেষ করে তবেই যাবে বলে ঠিক করেছে তাই তো এতো ব্যস্ততা। আবির কাজের ফাঁকে একবার স্ক্রিনে নামটা দেখে নেয় ‘Aantara’। মেয়েটা তাকে প্রায়ই ফোন করে খোঁজ খবর নিতে থাকে তাই ওদিকটায় গুরুত্ব না দিয়ে কাজের মাঝেই ব্যস্ত রাখে নিজেকে এরপরেই কল আসা বন্ধ হয় না। এই নিয়ে দশ বারের উপরে ফোন রিং করেছে সেটা খেয়াল হতেই আবির বাধ্য হয়ে ফোন রিসিভ করে আর সাথে সাথেই সব কাজ ফেলে ছুঁটে যায় সে।

আবির অন্তির কাছে পৌঁছে যখন তার পাশে বসেছে সে সাথে সাথে আবিরের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করেছে। আবির তাকে অনেক চেষ্টা করেও যখন শান্ত করতে পারলো না তখন ওভাবেই বুকে রেখে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কান্নাটা পূর্ণ হলেই হয়তো অন্তি শান্তি পাবে।
-অন্তরা।
অন্তি কোনো উত্তর তো দিলোই না উল্টো নিজের নামটা পরম মায়ার জড়ানো কণ্ঠে শুনে কান্নার বেগটা বেড়ে গেল। আবির তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে আর বলে,
-এই পাগলি কাঁদছো কেনো তুমি?
কান্নার রেশ কাটিয়ে উঠে যে কথা বলবে সেই শক্তি টুকুও নেই মেয়েটার মাঝে। আবির তাকে মেঝে থেকে তুলে সোফাতে নিয়ে বসিয়ে পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,
-রিল্যাক্স, পানি নাও। দেখো আমি আছি তো। কী হয়েছে বলো আমায়। কেউ কিছু বলেছে?
অন্তি মাথা নাড়িয়ে না করে তারপর বলে,
-ওই আমার ফ্রেন্ড আছে না রিধি….
-হ্যা, সেকি কিছু….
-উহু, ও আমায় কিছু বলেনি কিন্তু….
অন্তি ডুকরে কেঁদে উঠে। আবির ওকে বুকে জড়িয়ে নেয় আবারও। কিছুক্ষণ শান্ত থাকার পরে অন্তি বলে,
-রিধি সুইসাইড এটেম্পট নিছে, আবির।
-সেকিই!
আবির অবাক হয়ে জানতে চায়,
-এমন একটা স্টেপ কেনো নিলো মেয়েটি?
অন্তি এতক্ষণ এই কথাটাই বলার চেষ্টা করেও পারেনি। তার নিজেকে কেমন যেনো উদ্ভট বলে মনে হচ্ছে। আবির ডাকে,
-অন্তরা।
-হু।
-কী হয়েছে?
-রিধি সুইসাইড এটেম্পট নিছে কারণ কেউ ওকে ঠকিয়েছে, বলতে পারো ব্যবহার করে ছেড়ে দিয়েছে।
-তুমি জানলে কী করে? আই মিন রিধি এখন ঠিক আছে তো?
-হু। ওই সব বললো আমায়। আজ সকালে ভার্সিটি গিয়েই কয়েকজনের কাছে জানতে পারি রিধির কথা আমি হাসপাতালে যাই। আমার এতোটা রাগ উঠছিল না ওর উপর যে কী বলবো। কিন্তু ও যখন বললো ওর সাথে এমন কিছু ঘটেছে তখন আমি একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি কী বলবো কী করবো সেটাই ভেবে উঠতে পারছিলাম না আর তখনই ও বলে, “অন্তি, জানতে চাইবি না এসব কে করেছে?” আমি বলি, “কে?” এরপর ও যার নাম নিলো….
-কার নাম, অন্তরা।
অন্তি আবারও কেঁদে উঠে বলে,
-নিহাল।
আবিরেরও নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না। এই তো সেই ছেলে যাকে অন্তি বিয়ের আগে…. ছেলেটা এমন বেরোবে সে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। অন্তি কাঁদছে এবং কাঁদতে কাঁদতেই বলছে,
-তোমার মনে আছে আবির, সেইদিন আমি তোমার পিছু নিয়ে হাসপাতালে গেছিলাম।
-হুম।
-ওইদিন নিহাল আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল, আমি আশেপাশে কয়েকজন পাহাড়াদার দেখে সেখান থেকে বেরিয়ে আসি, ভয় ছিল কোথাও নিহালের ক্ষতি না করে বসে কেউ। এখানে তো ওর কোনো দোষ ছিল না। ব্লাডি হেল…
চিৎকার করে উঠে অন্তি। আবির ওকে আবারও শান্ত করতে চায় কিন্তু ও রাগে কাঁপতে কাঁপতেই বলে,
-আমি ওইদিন তোমার পিছু না নিয়ে যদি নিহালের পিছু নিতাম তাহলেই হয়তো এসবের প্রয়োজন হতো না। আমার আর নিহালের সম্পর্কের কথ আমার পরিবার আর ছায়া ছাড়া কেউই জানতো না আর সেটার সুযোগ নিয়েছে সে। একদিকে আমি আর অন্যদিকে রিধি, দুদিকেই পা রেখে চলছিল সে। আহহহহ, আমার এখন নিজেকেই থাপড়াতে ইচ্ছে করছে জানো। মা আমায় মানা করেছিল কোনো প্রকার সম্পর্কে জড়াতে আর আমি কিনা…. ওই ছেলেটা একের পর এক শহর বদল করেছে শুধু ওর এই কুকীর্তি লুকোনোর জন্য জানো তুমি। উফফফ, আর আমি ওর কথায় ভুলে…
আবির পানি এগিয়ে দেয় আবারও, এখন অন্তির মনে যত যা আছে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন নয়তো মেয়েটা ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাবে তাই ওকে সামলে রাখলেও কথা বলতে না করছে না। অন্তি আবারও বলে,
-আবির আমার না একটা বিষয় কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না।
-কী?
-মা তো লোক লাগিয়েছিল নিহালের সম্পর্কে জানার জন্য তবে তারা এইসব ইনফরমেশন পায়নি কেনো?
অন্তির এই প্রশ্নের মাঝে পয়েন্ট তো আছেই যা আবিরকেও ভাবার জন্য বাধ্য করছে তবে কী….

চলবে……….