যদি তুমি চাও পর্ব-০৭

0
373

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

৭.
মিসেস রুবি খান এই মুহুর্তে ‘মেঘকুঞ্জ’ নামের বিশাল বাড়িটির মাঝে বসার ঘরে সোফায় বসে অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষা বখতিয়ারুজ্জামান খানের সাথে দেখা করার। ঘড়ি দেখলেন রুবি, পুরো সতেরো মিনিট পেয়েরি গেছে একজন সার্ভেন্ট তাকে অপেক্ষা করতে বলে সেই যে গেছে আসার আর নাম নেই। এতোটা সময় লাগে একজন মানুষকে ডেকে নিয়ে আসতে! রুবি বুঝতে পারেন ইচ্ছাকৃত ভাবেই তাকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এদিকে মেয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তিনি তার চিন্তা তারপর এইসব আর নিতে পারছেন না তিনি। এছাড়া আর কোনো পথও নেই তার কাছে। তার মন বলছে এই ব্যক্তির কাছেই তার মেয়ের খোঁজ আছে।

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে একেবারে শেষ মাথায় থাকা ঘরটি পেরিয়ে তারই পেছনে আরও একটি ঘর রয়েছে। সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে সার্ভেন্ট শফিক। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বললো,
-স্যার উনি অপেক্ষা করছেন।
-করতে দাও।
জুতোর ফিতে বাঁধতে বাঁধতে বললো সে। তার বেশ ভালোই লাগছে মিসেস রুবি খান তার অপেক্ষায় বসে আছে। ব্যাপারটা বেশ লাগছে তার কাছে। জুতোর ফিতে বাঁধার পরে ব্যালকনিতে গিয়ে গ্লাসের পানি দিয়ে হাতটা ধুয়ে ঘরে এসে গ্লাস রেখে টিস্যু দিয়ে হাত মুছে একটা আপেল তুলো নেয় সেই হাতে। মুখের কাছে নিয়ে হা কারতেই চোখ যায় সার্ভেন্ট এর দিকে। আপেলটা অন্য হাতে নিয়ে আরেকটা আপেল তুলে তার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে,
-ক্যাচ।
ক্যাচটা খুব সুন্দরভাবেই ধরে ফেললো শফিক তা দেখে সে বললো,
-গুড ক্যাচ। আই এম ইমপ্রেস। এবার ভাবছি বিসিএল শুরু করবো। বিজনেস ওয়াল্ড ক্রিকেট লিগ। সেখানে তোমাকে রাখবো ক্যাচটা ভালোই নিতে পারবে। আচ্ছা ব্যাটিং পারো তো?
শফিক হাত মেল করে হেসে বলে,
-কী যে বলেন না স্যার!
-আরে শফিক বাবু লজ্জা পাচ্ছো কেনো? বসো এখানে।
শফিককে সোফা টেনে বসতে বললো সে এবং নিজে বিছানায় বসলো। আপেলে একটা কামড় দিয়ে বললো,
-আরে আরে খাচ্ছো না যে! খাও খাও লজ্জা পেও না।
দু’জনে আপেল খাচ্ছে সারা দুনিয়ার কথা তাদের মাঝে এসে ঢুকতে থাকলো এদিকে যে রুবি অপেক্ষা করছেন বলে স্যারকে ডাকতে এসেছিল সেই কথাটা ভুলেই গেল শফিক। এতে অবশ্য তার স্যার মুচকি হাসলো। হাসবে না কেনো? সে তো এটাই চাইছিল।

অন্তি চোখ খোলে তখন ঘরে আলো ছিল চারিদিকে তাকিয়ে দেখে এখানে শুধুমাত্র একটা লাইট আছে যার থেকে আলো ছড়িয়ে এই ঘরটা আলোকিত হচ্ছে। আর কিছু দেখতে পাওয়া গেল না ঘরের মাঝে, সুইচবোর্ডটাও মনে হয় এই ঘরের বাইরে রাখা হয়েছে। দরজা খুলে একটি মেয়ে প্রবেশ করে। মুখ তার ঢেকে রাখা আছে। অন্তির জন্য খাবার নিয়ে এসেছে সে, তার হাতের খাবারের প্লেট দেখেই বুঝলো অন্তি। সাথে সাথেই জবাব দিলো,
-আমি খাবো না।
মেয়েটি তার কথা শুনে প্লেটটা তারই সামনে একটু সাইড করে রেখে দিলো তারপর জ্যাকেটের ভেতর পকেট থেকে একটা পানির বোতল বের করে সেটাও রাখে প্লেটের পাসে তারপর বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। অন্তি উঠে দাঁড়িয়ে দরজায় ধাক্কা দিলো কয়েকবার। বুঝলো লক করে তারপর গেছে মেয়েটি। অন্তির চোখ যায় খাবারের দিকে। ও খাবে না বললেও সত্যি তো এইটাই যে ওর খুব খিদে পেয়েছে। ও না খেলেও এখানেই পড়ে থাকতে হবে খেলেও পড়ে থাকতে হবে। বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে যদি ও খাবারটা খেয়ে এখানে পড়ে থাকে, অন্তত শরীরটা দূর্বল হয়ে পড়বে না তার। খুব ভালোভাবেই খাবারটা খেয়ে শেষ করে সে এরপর পানি খেয়ে বসে থাকে চুপচাপ। আস্তে আস্তে চোখ দু’টো লেগে আসে তার। ঘুমিয়ে পড়ে সে।

পুরোপুরি এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে রুবি খেয়াল করেন বখতিয়ারুজ্জামান খান সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে তার পেছনেই আছে সেই সার্ভেন্ট যে গিয়েছিল তাকে ডেকে আনার জন্য। দু’জনে খুব হাসতে হাসতে কথা বলছে আর নেমে আসছে। রুবির মেজাজ খারাপ হয়ে আসছে এসব দেখে। সে নেমে আসলো সাথে সেই সার্ভেন্টও। রুবি সার্ভেন্টের দিকে নজর দিলে সে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়।
-তোমায় বলেছিলাম গিয়ে তোমার স্যারকে ডেকে আনো আর তুমি কী করলে! গিয়ে সেখানেই রয়ে গেলে। ব্লাডি কামচোর।
-হ্যালো মিসেস খান, ও আমার সার্ভেন্ট সো ওর কাজ আমার অর্ডারস ফলো করা আপনার নয়।
রুবি ফিরে দেখে। সে সাহেবী ভঙ্গিতে বসে আছে। রুবি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে প্রশ্ন করে,
-আমার মেয়ে কোথায়?
-আস্তে কথা বলুন মিসেস খান আমি শুনছি তো।
কানে হাত দিয়ে চোখ খিঁচে বলে কথাটা। রুবি আরও রেগে যান। বলেন,
-আমার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
-আচ্ছা, তাই নাকি! মিসেস খান মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারেননি ঠিকঠাক? শেষমেশ পালিয়ে গিয়ে আপনার নাম ডোবালো।
রুবি এই কথা শুনে আরও রেখে যান। রুবির রাগ দেখে সামনে বসে থাকা ব্যক্তির চেহারায় হাসির রেখা ফুটে ওঠে। এমন একটা ভাব করে বসে আছে যেনো রুবি কোনো জোকস শুনিয়েছেন আর সে অনেক কষ্টে হাসি চেপে বসে আছে। রুবি বলেন,
-তামাশা করবে না বখতিয়ার, বলো আমার মেয়ে কোথায়?
-মেয়ের মায়ের বুঝি খুব চিন্তা হচ্ছে! চুক চুক চুক, আফসোস মেয়ে তার মায়ের কথা ভাবলো না। শেষমেশ বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পালিয়ে গেল।
-তুমি কিন্তু নিজের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো।
রুবির কথায় যেনো তার উপর কোনো প্রভাব পড়লো না সে ঘড়ি দেখলো তারপর বললো,
-আমার ইম্পর্ট্যান্ট একটা মিটিং আছে। আমি খুবই দুঃখিত মিসেস খান আপনাকে আর সময় দিতে পারছি না আমি।
-তুমি কোথাও যেতে পারো না, আমার মেয়ে কোথায় না জানিয়ে তুমি চলে যেতে পারো না।
-আমি পারি মিসেস খান। ইয়েস, আই ক্যান। তবে আপনি পারেন বা না পারেন, চান বা না চান আপনাকে যে এখান থেকে এই মুহুর্তে বেরিয়ে যেতে হবে।
রুবি আর কিছু বলার সুযোগ পেলেন না। রাফিদের কল এলো তার কাছে। রুবি হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন।

রাত নয়টা পয়তাল্লিশ মিনিট কেউ এসে কেবিনের গেটে নক করে বললো,
-স্যার, আসবো?
-আরে রহমান সাহেব আপনি বাসায় যাননি এখনও। আটটার সময়ই তো আপনার চলে যাওয়ার কথা। কোনো সমস্যা?
-স্যার আমার কিছু টাকার প্রয়োজন যদি লোনটা পাস করে দিতেন…
-হয়েছে কী বলুন তো!
-আমার স্ত্রী স্যার, তার দু’টো কিডনিই বিকল হয়ে গেছে। এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করার কথা বলছেন ডাক্তাররা। অনেক টাকার ব্যপার। যা জমি জায়গা আছে বেঁচে অর্ধেক টাকাই জোগাড় করতে পারবো বাকিটা এখনও ব্যবস্থা হয়নি স্যার।
-কাঁদবেন না প্লিজ। স্ত্রীকে খুব ভালো বাসেন তাই না?
সে মাথা নাড়ালো। হাসলো মিস্টার খান। বললো,
-চিন্তা করবেন না কাল আসুন অফিসে কালকেই টাকাটা পেয়ে যাবেন।
-অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার।
রহমান সাহেব যখন সেখান থেকে বেরিয়ে আসবেন তখন কী মনে করে যেনো তাকে আটকে নেয় মিস্টার খান।
-রহমান সাহেব শুনুন।
-জি, স্যার।
-ধরুন আপনাকে জমি বিক্রি করতে হলো না আবার লোনও নিতে হলো না। আপনার স্ত্রীর চিকিৎসার সব টাকা এমনিই পেয়ে গেলেন তখন কী করবেন?
-কে দেবে স্যার এতো টাকা?
-আমি দেবো।
-কেনো স্যার?
-শুধুই টাকাই নয় একটা ফ্ল্যাটও গিফট করবো।
-স্যার আপনি এমনি এমনি তো এতোকিছু করবেন না আমার জন্য। আপনি স্বার্থ ছাড়া কাউকে পানিও দেন না এটা সবাই জানে তবে আজ আমায় এতো কিছু দিতে চাইছেন কেনো স্যার? কী করতে হবে আমাকে?
-বিয়ে।
-স্যার আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন?
-বসুন না, এতো ভালো একটা ডিল হাত ছাড়া হয়ে যাবে কিন্তু।

রুবির সামনে একটা বক্স পড়ে আছে যা গিফট র‍্যাপ করা। রুবি বক্সটা হাতে নিয়ে বুঝলেন ভেতরটা খালি হবে আর নয়তো খুব হালকা কিছু আছে এর ভেতরে। খুব সাবধানতার সাথে বাক্সটা খুললেন বক্সটা। একটা চিরকুট বেরোলো সেইখান থেকে। যেখানে একটা জায়গার নাম আর তার রুট উল্লেখ করে দেওয়া আছে। পাশেই লিখা আছে, “মেয়েকে ফিরে পেতে চান? তবে চলে আসুন।” রুবি কিছু না ভেবে একাই বেরিয়ে পড়লেন আবার পৌঁছেও গেলেন। একটা ঘর যার মাঝে রাখা আছে একটা টেবিল ও দুইপাশে দুটি চেয়ার। রুবি এগিয়ে গেলেন সেখানে।

রাত বারোটা রুবি গাড়িটা ছুটে চলেছে গন্তব্য বাড়ি এই সময় রাফিদ কল দেয়। রিসিভ করেন রুবি।
-মা বাড়ির সামনে একটা বাক্স রেখে গেছে কেউ। এই বাক্স আগেরটার থেকে অনেক বড়। যেমন ফ্রীজারের বাক্স হয় ঠিক তেমন।
-তুমি দারোয়ানকে বলো বাক্সটা বাড়ির ভেতরে নিয়ে রাখতে আমি দশ মিনিটের মধ্যেই আসছি।

চলবে…….