যদি হঠাৎ ইচ্ছে হয় পর্ব-০৩

0
72

#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_৩
#Saji_Afroz

স্টেজ থেকে নেমে অনেক খুঁজে কোথাও দিশাকে পেল না ফুয়াদ। অনুষ্টান শেষ হলেও ওর দায়িত্ব শেষ হয়নি। সবকিছু মিটমাট করে বেরুতে হবে ওকে। তাই ও খুব বেশি ছুটাছুটি আর করলো না। তবে ও সাকিবের কাছে আসে। জানতে চায়, কেন ও সিনথিয়ার নাম বলেছে। ওকে দিশার নাম বলা হয়েছিল। সাকিব বলল, সিনথি ওর সিনিয়র। দায়িত্বে সিনথিয়াই ছিল মূলত। শিখিয়েছে দিশা। কিন্তু নির্দেশনা সে দিয়েছে।
-এসব তোকে কে বলেছে?
-সিনথি বলেছে।

নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে ঠান্ডা মাথায় ফুয়াদ বলল, মিথ্যে বলেছে।
-মিথ্যে কেন বলবে?
-এই যে ক্রেডিট পেল। এটার জন্য। এটা সিনথিয়া ভালো করলো না।

এই বলে ফুয়াদ ওর কাজে চলে যায়। সাকিব নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আসলেই কী সিনথিয়া মিথ্যে বলল!

বাসায় এসে সিনথিয়ার কাছে সত্যটা জানতে চায় সাকিব। সিনথিয়া ভাবলো, যদি ও বলে এসব মিথ্যে নয় তবে ওর ভাই ফুয়াদকে ভুল বুঝবে। তাই সবটা মুহুর্তেই সব স্বীকার করে নেয়। এবং ভাইকে দু:খিত জানায়। সাকিব এটা শুনে বেশ রেগে যায়। খুব বেশি রাগ হলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না ও৷ তাই রাগ সংযত করার জন্য সেখান থেকে প্রস্থান নেয় সাকিব। এদিকে সিনথিয়া এটা ভেবে অবাক হয় যে, দিশার জন্য সাকিবকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো ফুয়াদ!

এদিকে রাত পার হতে থাকলেও ঘুম নেই ফুয়াদের দুচোখে। দিশা ওকে নিয়ে কী ভাবছে! নিশ্চয় খারাপ কিছু। যেটা খুবই স্বাভাবিক। ফোনটা অভিমানে বন্ধ করে রেখেছে মেয়েটা। কথা বলতে না পারলে কীভাবে ওর রাগ ভাঙাবে? রাত্রীর ফোন নাম্বারও যে নেই ওর কাছে। কী করা যায় এখন!

নির্ঘুম রাত পার করে সকাল সকাল নিজের ফোনটা চালু করলো দিশা। ফেইসবুক ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ ওর চোখ গিয়ে আঁটকায় রাদিন নামের আইডি থেকে আসা মেসেজে। ও অবাক হয়ে মেসেজ দেখলো৷ অনেকবার হাই, হ্যালো দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দিশা আইডি ঘেটে দেখলো, আইডিটা পুরো ফাঁকা। ও ভাবলো, কেউ হয়তো মজা করছে ওর সঙ্গে। এই ভেবে আইডি ব্লক করে দেয়। কিন্তু ওকে অবাক করে ঘন্টা খানেক পর, রাদিনের আইডি থেকেই মেসেজ আসে। এই আইডিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এটা আসল। দিশা কৌতুহল বশত রিপ্লাই করে দেয়-
জি বলুন?
-আমাকে চিনেছেন?
-কেন নয়! রাদিন ভাইয়া।
-জি।
-এর আগেও একটা আইডি থেকে মেসেজ আসে।
-আমিই ছিলাম।
-ফেইক আইডি থেকে কেন নক করেছিলেন?
-দেখলাম তুমি রিপ্লাই করো কিনা।
-এটা দেখার কারণ?
-মজার ছলে।
-এটা আবার কেমন মজা!
-হা হা। আসলে আমি এখন মজা করছি। আমার দু’টো আইডি। ভুলে ওটা থেকেই নক করে ফেলেছিলাম।
-তাই বলুন!
-আমি কী তোমার সঙ্গে একটু ফোনে কথা বলতে পারি?
-এখানেই বলুন না?
-ওকে ফাইন। আসলে কালকের বিষয়টা আমারও ভালো লাগেনি। তাই তোমাকে নক করা।
-কোন বিষয়?
-নাচের ক্রেডিট অন্য কেউ পেল। অথচ সবটা তুমি করেছ।
-আপনি জানেন?
-হু।
-কীভাবে?
-শুনেছি। তোমার সাথে খারাপ হলো। এইজন্য আমারও খারাপ লাগছে।
-আপনার কিছু করার ছিল না বা নেই। তবুও আমাকে নিয়ে ভেবেছেন তাই ধন্যবাদ।
-আমার এমন খারাপ লাগছে। না জানি তোমার কেমন লাগছে।
-সত্যি বলতে অনেক খারাপ।

এরইমধ্যে ফুয়াদের ফোন আসে। দিশা রিসিভ করে না। ও চ্যাট করতে থাকে রাদিনের সঙ্গে। কিন্তু বারবার ফুয়াদের ফোন পেয়ে রিসিভ করতে বাধ্য হয় ও।
ফুয়াদ সঙ্গে সঙ্গেই বলল, প্লিজ আমার কথা শোনো। আমি তোমার নামই বলেছিলাম। কিন্তু সিনথিয়া সাকিবকে অন্যকথা বলেছে।
-কী বলেছে?

সিনথিয়ার সবকিছু দিশাকে জানায় ফুয়াদ।
দিশা সব শুনে শান্ত হয়। সিনথিয়া মেয়েটার স্বভাব ওর ভালো লাগেনি। কেমন যেন মেয়েটা। সবসময় দিশার সঙ্গে কর্কশভাবে কথা বলতো। আর নিজেকে বড়ো বলে জাহির করে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইতো। ও এমনটা করতেই পারে। এই ভেবে দিশা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। এই নিয়ে আপনি আর স্যরি বলবেন না প্লিজ।
-সত্যি রাগ ভেঙেছে তোমার?
-হু। তবে আমি প্রচণ্ড রাগ করেছিলাম।

কথা শেষে প্রশান্তির এক নি:শ্বাস ছাড়ে ফুয়াদ। এদিকে দিশা মেসেজে সবটা জানালো রাদিনকে।
ও সব শুনে বলল-
এখন তো এসব বলবেই। তোমাকে খাটিয়ে নাম দিলো সিনথিয়ার। মানলাম উনি এসব করতে বলেননি। কিন্তু যখন এটা হয়ে গেছে তখন এগিয়ে এসে তোমার নামটাও তো বলতে পারতো। তাইনা?

দিশা আবারও ভাবলো, রাদিনের কথা ফেলে দেওয়ার মতোও নয়। সিনথিয়া ফুয়াদের বন্ধুর বোন। সে কিছু হয় না। স্বার্থের জন্য এমনটা ও করতেই পারে। তবে এটা ভেবে মন খারাপ হলো দিশার, ফুয়াদ এতদিন কত আপন হয়ে ছিল ওর৷ মুহুর্তেই এমন পর আচরণ ও আশা করেনি।

বেশ কয়েকটা দিন কেটে যায়। দিশা ও রাদিন প্রায় চ্যাটে কথা বলে। দিশারও রাদিনের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। এদিকে ফুয়াদ দিশাকে আর ফোন করে না। করবেই না কেন বা কী বলে! আগে নাহয় অনুষ্ঠানের বাহানায় ফোন করতে পারতো। কিন্তু এখন কোনো কারণ ছাড়া ফোন করে কিইবা বলবে! এই ভেবে ভেবে ফোন করা হয় না। আবার মনের মাঝের অস্থিরতাও কমে না। কোনো একটা বাহানা দরকার দিশার সঙ্গে কথা বলার। এই ভেবে একটা বুদ্ধি ও বের করলো। সাথে সাথেই দিশাকে ফোন করে। ও রিসিভ করলে খবরাখবর নিয়ে বলল, তোমরা যারা নাচের সদস্য ছিলে সবাইকে স্যরি স্বরুপ আমার তরফ থেকে একটা ট্রিট দিতে চাই।
-তার প্রয়োজন নেই!
-আরে খুব আছে। কাছে কোথাও বসি চলো?

ফুয়াদের জোরাজোরিতে দিশা রাজি হয়। সবাইকে নিয়ে ও আসবে জানায়। ফুয়াদ এখনো স্যালারি পায়নি। জমানো থেকে কিছু টাকা খরচা হলেও মনের শান্তি তো বজায় থাকবে। এই ভেবে কালকের দিনের জন্য ও অপেক্ষা করতে থাকে।

দিশা আজ নীল রঙের একটি সুতি সালোয়ার কামিজ পরেছে। চুল গুলো কাটা দিয়ে খোপা করেছে। সামনে কিছু চুল বের করে দিয়েছে। এরপর মাথায় ওড়না দিয়ে বেরিয়ে পড়ে ও। ওর বাসা থেকে কিছুদূর হেঁটে রাস্তায় যেতে হয়।
তাই হেঁটে এসে রাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পাশাপাশি এলাকায় ওদের বাড়ি। রাত্রী আসলে রিকশা ঠিক করতে যাবে ঠিক তখনি একটি কার এসে থামে ওর সামনে। ড্রাইভার গাড়িতে উঠতে বললে ও অবাক হয়। বলল, কার ভাড়া করবে না ও। কিন্তু ড্রাইভার ওকে অবাক করে জানায়, কেউ ওকে পোঁছে দিতে বলল। দিশা নির্বাক হয়ে ভাবে, এই কাজ কী ফুয়াদের? এদিকে রাত্রী নানা কথা বলে ওর সঙ্গে দুষ্টুমি শুরু করে।
ড্রাইভার তাড়া দিলে ও বলল, অপরিচিত কারো গাড়িতে আমি উঠতে পারি না।
-তাহলে আমি স্যারের সাথে কথা বলিয়ে দিই।

এই বলে ড্রাইভার নিজের ফোনটা দিশার দিকে এগিয়ে দেয়। কৌতুহল বশত ফোন হাতে নেয় দিশা। ফোনের ওপাশে রাদিনের কণ্ঠ শুনে অনেক বেশি অবাক হয়ে বলল, আপনি?
-হু। তোমার নাম্বার জানা নেই। তাই ড্রাইভারের ফোন থেকে কথা বলছি। গাড়িতে উঠে বসো। গন্তব্যে দিয়ে আসবে তোমায়।

গতকাল রাদিনকে জানিয়েছিল দিশা, আজ ফুয়াদের সাথে দেখা করার কথা। কিন্তু রাদিন ওর বাসার ঠিকানা কীভাবে পেল! এতসব কিছু আর ফোন জিজ্ঞাসা না করে রাত্রীকে নিয়ে গাড়িতে বসে ও। রাত্রী বলল, কে পাঠালো?
-রাদিন।
-কী বলিস! দু’দিন চ্যাট হতেই এত ক্লোজ হয়ে গেলি?
-সেটা তো আমিও ভাবছি যে, গাড়ি পাঠানোর মতো ক্লোজ হইনি।
-তবে কী রাদিন তোকে পটাতে চায়?

ওরা রেস্টুরেন্টে চলে আসে। ফুয়াদ অনেক আগেই চলে এসেছে। সাথে নাচের আরও সদস্যরাও আছে। দিশাকে দেখে ওর কাছে এগিয়ে আসে ফুয়াদ। ও বলল, তুমি এসেছ বলে অনেক খুশি হলাম। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আর কখনোই আমার সঙ্গে কথা তুমি বলবে না।
-ইচ্ছে তো এমনি হয়েছিল।

এই বলে হেসে উঠে দিশা। কী স্নিগ্ধ সেই হাসি! ফুয়াদ অপলকভাবে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। রাত্রীর কথায় ঘোর কাটে ওর।
-কী অর্ডার করব ভাইয়া?
-দিশা যেটা চায়। না মানে ওর জন্যই আজকের এই আয়োজন। রাগ করেছিল বলে।

দিশা বলল, সবাই যেটা পছন্দ করে।

ওরা খাবার অর্ডার করে সবাই আড্ডা দিতে থাকে। কিছু ছবিও তোলে। ফুয়াদ একটি ছবি বিদ্যালয়ের ফেইসবুক গ্রুপে পোস্ট করে দেয়। ক্যাপশনে লেখে-
আজকের ছোটো এই পার্টিটা দিশার জন্য। যে কিনা পা এ ব্যথা নিয়েও নিজের দায়িত্ব পালন করেছে। সবাইকে নাচ শেখানোর সাথে সাথে নিজের নাচটাও ভালোভাবে সেরেছে। ওকে ধন্যবাদ দিতেই এই ছোট্ট আয়োজন।

সেই পোস্টে নানারকম কমেন্ট আসতে থাকে।
-নাচের দায়িত্বে না অন্যজন ছিল?
-তবে সেদিন সিনথিয়ার নাম কেন নেওয়া হয়েছিল?
-ইয়েস! দিশাই প্রাপ্য এই সম্মানের। সেদিন অহেতুক সিনথিয়ার নাম নেওয়া হয়েছিল বলে অবাক হয়েছিলাম।
-সঠিক মানুষ এইবার ক্রেডিট পেল।

এই পোস্ট আর এসব কমেন্ট দেখে রাগে ফোসফাস করতে থাকে সিনথিয়া। দিশাকে ওর প্রাপ্য সম্মান দিয়েই দিলো ফুয়াদ। কিন্তু এটা করে ও সিনথিয়া কে অপমান করলো। ইচ্ছেকৃত ভাবে এমন করলো। এটা কীভাবে করতে পারলো ও!

এদিকে রেস্টুরেন্টে পোস্টটা দেখেনি দিশা। বাসায় এসে দেখে মুখে এক চিলতে হাসি ফোটে ওর। তার মানে আসলেই সেদিন এসবে হাত ছিল না ফুয়াদের!
.
চলবে