যদি হঠাৎ ইচ্ছে হয় পর্ব-০৪

0
79

#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_৪
#Saji_Afroz

ফুয়াদকে ধন্যবাদ জানাতে ফোনকল দেয় দিশা। সাথে সাথেই রিসিভ করে ফুয়াদ। দিশা ধন্যবাদ জানালে ও বলল, ট্রিট তুমি প্রাপ্য। আরও আগে দেওয়া প্রয়োজন ছিল।
-এটার ধন্যবাদ আমি আগে দিয়েছি। কিন্তু এখন জানাচ্ছি পোস্টের জন্যে।
-ও আচ্ছা! সেইটাও তুমি প্রাপ্য।
-আপনি আমার কথা এত ভেবেছেন জেনে ভালো লাগছে। প্রমাণ করলেন, সবাই স্বার্থ চেনে না।
-না না। আমিও স্বার্থের জন্যই করেছি।
-তাই?
-হু। এইবার আমায় ট্রিট দাও?
-বলুন কী খাবেন?
-কফি হলেই চলবে।
-আচ্ছা তবে কাল একই রেস্টুরেন্টে একই সময়ে আমি আপনাকে ট্রিট দেব।

ফুয়াদের সঙ্গে কথা বলা শেষে রাদিনকে মেসেজ করলো দিশা। রাদিন অনলাইনে নেই। হয়তো ব্যস্ত!

-একজন সাকসেসফুল বিজনেস ম্যান আমি। তবে আমি এতদূর আসার পেছনে আমার পরিবারের সঙ্গে আরও একজনের অবদান রয়েছে।

রাহাত সাহেবের কথা শুনে রাদিন বলল, সেই একজন কে?
-তোমার মা। সঠিক জীবন সাথী লাইফে থাকলে সফলতা অর্জন করা খুব বেশি কষ্টসাধ্য হয় না। তাই বলছি তোমারও এইবার বিয়েটা করা প্রয়োজন।

রাদিন হেসে বলল, কিন্তু তুমিই তো বলো বাবা তোমার সবকিছু আমার।
-সব পেয়েও মানুষ হারিয়ে ফেলে। কথাটা শুনেছ নিশ্চয়?
-হু।
-তোমাকে আমি দিলেই যে সব তোমার হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। তোমায় সব মেইনটেইন করতে হবে। আর এসব করতে গিয়ে তোমার লাইফে ঝড় তুফানও আসতে পারে। সাথে আসবে বিরক্তি। আর এই সময়ে রিলাক্স এর জন্য হলেও একজন সঙ্গী প্রয়োজন।
-বুঝলাম।
-তা মেয়ে আমরা দেখব নাকি আছে কোনো পছন্দের?

রাদিন মুচকি হেসে বলল, একটু সময় এর প্রয়োজন। আজই তো বললে বিয়ের কথা।

ওর এমন রহস্যময় হাসি দেখে তিনি বললেন, একটা কথা মাথায় রেখো শুধু।
-কী?
-আমাদের সাথে মিলবে এমন ফ্যামিলির মেয়ে হতে হবে। সমাজে একটা আলাদা স্থান রয়েছে আমাদের। আশাকরি এই বিষয়ে তুমি আমায় নিরাশ করবে না।

কপালে চিন্তার ভাজ পড়লেও মুখে হাসি রেখে রাদিন বলল- সবাই দেখে যেন বলে, রাদিনের বউ সেরা। এমন কাউকেই ঘরে আনব ইনশাআল্লাহ।

রাদিনের বিশ্বাস, দিশাকে দেখেই ওদের মন ভরে যাবে। এসব স্ট্যাটাস এর কথা মাথায়ই থাকবে না।

রুমে এসে দিশার মেসেজ দেখে রাদিন। ও রিপ্লাই করে। খানিকবাদে দিশাও রিপ্লাই দেয়। জানতে চায় গাড়ি কেন পাঠিয়েছিল।
রাদিন লিখলো-
ভাবলাম তোমায় সারপ্রাইজ দিই। কেমন লাগলো?
-আপনি আসলে আরও ভালো লাগতো।
-তাই! তবে চলো দেখা করি কাল?
-উহু! কাল যে ফুয়াদ ভাইয়াকে ট্রিট দিতে হবে।
-কিসের?
-উনার পোস্ট দেখেননি বিদ্যালয়ের গ্রুপে?

রাদিন চটজলদি ফেইসবুক ঘেটে ফুয়াদের পোস্ট দেখে। তবে এই নিয়ে আর দিশাকে কিছু বলল না ও। ঠিক করলো দ্রুত দিশাকে মনের কথা জানানোর। ফুয়াদের উদ্দেশ্যও খুব একটা ভালো না। কিন্তু কাল যদি ওর আগেই দিশাকে প্রেমের প্রস্তাব পাঠায় ফুয়াদ?
এই ভেবে রাদিন লিখলো-
ফুয়াদকে পরশু ট্রিট দেওয়া যায় না? আসলে আমি কিছুদিনের জন্য বাইরে যাব বিজনেসের কাজে। এর আগেই দেখা করতে চাচ্ছিলাম।

একটু ভেবে দিশা লিখলো-
আচ্ছা। উনাকে আমি ম্যানেজ করে নিচ্ছি।

ফুয়াদকে ম্যাসেজ করে কালকের প্ল্যান বাতিল করে ও। ফুয়াদ আপনমনে বলল, আবারও তোমায় দেখার অপেক্ষায় কাটবে এই দিন আমার।

ফুয়াদ দিশাকে ওর প্রাপ্য সম্মান দিয়েছে বলে ধন্যবাদ স্বরূপ দেখা করতে রাজি হয় দিশা। কিন্তু রাদিনের সঙ্গে কেন ও দেখা করছে! কেন ওর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে ওর! তবে কী ওকে ভালো লাগতে শুরু করেছে দিশার?

দিশা একাই আজ রেস্টুরেন্টে এসেছে। ওর কলেজের পাশে থাকা নামি-দামি এক রেস্টুরেন্ট। রাদিন এখানে অপেক্ষা করতে বলেছে ক্লাস শেষে। খানিকক্ষণ বসার পর রাদিনের দেখা পায় ও। হাতে ফুলের তোড়া ও একটি প্যাকেট। দিশার দিকে এগিয়ে এসে এগুলা দেয় ওকে। দিশা হাসিমুখে বলল, এসবের প্রয়োজন ছিল না।
-আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন ছিল।
-মানে?
-বাসায় যাও। বুঝবে।

দিশা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাদিনের দিকে। ও খাবার অর্ডার করে। দিশা লজ্জায় তেমন একটা খেতে না পারলে ওর জন্য প্যাকেট করে আনতে বলে। সাথে আরও অনেককিছু অর্ডার দেয়। কিছুক্ষণ গল্প করে রাদিন দিশাকে একটি কার ঠিক করে দেয়। যদিও ও নিজের গাড়িতে করে ড্রপ করতে চেয়েছিল। কিন্তু দিশা রাজি হয়নি।

দিশা বাসায় আসে। ফুল ও খাবার দেখে ওর মা জানতে চায় কে দিয়েছে। মিথ্যে জানায় মা কে। বলে পূর্ণমিলনীর অনুষ্টানে সাহায্য করার কারণে ওকে সম্মানিত করা হয়েছে। সব মা কে দেখালেও উপহারটি নিজের ব্যাগে লুকিয়ে রাখে ও। সেটি নিয়ে চলে আসে রুমে। বাক্সটা খুলে তাতে একটি রিং পায় ও। সম্ভবত ডায়মন্ড এর। সাথে রয়েছে একটি কার্ড।
তাতে লেখা-
রিংটি পরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল খুব। কিন্তু আমাকে নিয়ে তুমি কী ভাবো তা জানি না। তাই সরাসরি এমনটা করলাম না। এভাবে দিতে হলো৷ আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি দিশা। যদি তুমিও আমায় ভালোবাসো তবে রিংটি হাতে পরে আমায় একটি ছবি দিও। তোমার মনে হতে পারে এটা পাগলামি। কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমার সরলতার প্রেমে পড়েছি আমি। আর পড়েছি মায়াবী ওই মুখের। পুরো তুমি টাকে আমার চাই। তুমি কী পারো আমায় তোমার করে নিতে?
…….তোমার ছবির অপেক্ষায় রাদিন!

এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ও ছিল না। তবে রাদিনের ওকে ভালো লাগে জেনে মনের মাঝে অন্য রকম প্রশান্তি অনুভব করছে ও। এটা কী ভালোবাসার প্রশান্তি?

সাকিবের সঙ্গে আজ ফোনে তর্ক হচ্ছে ফুয়াদের। পোস্ট ডিলিট করার কথা ও বলেছে। কিন্তু ফুয়াদ করতে নারাজ। তাই সাকিব বলল, মানলাম সিনথি ভুল করেছে। ও তোর কাছে ক্ষমা চাইতেও প্রস্তুত। কিন্তু তোর এই পোস্টের জন্য আমাদের সম্মান হানী হচ্ছে। প্লিজ এটা ডিলিট করে দে তুই।
-ও ক্ষমা চাইলে কী দিশা ওর প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছে? ক্ষমা ওকে পাবলিকের সামনে চাইতে হবে।
-দিশা তোর কাছে আমার চেয়ে আপন হলো?
-এমন কিছু নয় সাকিব। আমি শুধু মেয়েটাকে ওর প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছি।
-ফাইন! তোর থেকে পাওয়ার আমার বেশি। তোর ডিলিট করার প্রয়োজন নেই। পোস্ট এমনিতেই ডিলিট হবে।

এই বলে ফোন রাখে সাকিব। ফুয়াদ পড়ে চিন্তায়। সাকিব কখনো এইভাবে ওর সঙ্গে কথা বলেনি। সাকিব অভিমান করেছে। কিন্তু সাকিবের মন রাখতে ও দিশার মন ভাঙতে পারে না। সাকিব পোস্ট ডিলিট যখন করাবে বলেছে নিশ্চয় করাবে। কিন্তু এতে যে আবার দিশাও অভিমান করে বসবে। কোনদিক টা যে সামাল দেবে ও!
.
চলবে