যদি হঠাৎ ইচ্ছে হয় পর্ব-০৫

0
79

#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_৫
#Saji_Afroz

ফুয়াদের পোস্ট ডিলিট হয়ে গেছে দেখে দিশা আবারও রেগে যায়। কিন্তু পরে ফুয়াদের কাছে জানতে পারে, এতে ওর হাত নেই। গ্রুপের এডমিন এমনটা করেছে। ও আবারও পোস্ট করবে এবং ডিলিট করতে না করবে। দিশা একটু ভেবে ফুয়াদকে বলল, তার প্রয়োজন নেই আর।
-রাগ করে বলছ?
-নাহ। আপনি আমাকে আমার প্রাপ্য সম্মান দিয়েছেন। যারা জানার তারা জেনেছেও৷ এখন এটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করাই ভালো। তাছাড়া সাকিব ভাইয়া আপনার ফ্রেন্ড। আমি চাই না আমার জন্য আপনাদের মনোমালিন্য হোক।

দিশার কথা শুনে মনে শান্তি অনুভব করে ফুয়াদ। ওর সঙ্গে কথা শেষে সাকিবকে ফোন দেয় ফুয়াদ। সাকিব রিসিভ করতেই ও বলল, কাজটা ভালো করেছিস?
-তুই যেটা করেছিস ওটা ঠিক?
-আমি সত্যের পক্ষে ছিলাম।
-সেই জন্য আমাদের সম্মানহানি করলি?
-সিনথিয়া যে অন্যের ক্রেডিট কেড়ে নিলো?
-তোর যদি দিশাকে ক্রেডিট দিতেই হত আমাকে বলতি! পোস্টটা অন্যভাবেও দেওয়া যেত। সিনথিয়ার পাশাপাশি ওকেও ধন্যবাদ জানাতে পারতি না?
-সিনথিয়া যেখানে কিছু করেনি ওকে কেন ধন্যবাদ দেব আমি?
-আমার খাতিরে হলেও করতে পারতি।
-পারতাম না। তাই করিনি।
-বেশ! তোর যেটা ভালো মনে হয়েছিল করেছিস। আমার যা ভালো মনে হয়েছে করেছি। এই নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।

এই বলে সাকিব ফোনের লাইন কেটে দেয়।

রাদিনের বিষয়ে কী করবে এই নিয়েই ভেবে অস্থির দিশা। রাত্রীকে ফোনে একথা জানাতেই ও বলল, এত চিন্তা করছিস তুই! আমি হলে সঙ্গে সঙ্গেই হ্যাঁ বলতাম।
রাদিনের মতো ছেলে তোকে প্রপোজ করেছে! এমন স্বপ্ন পুরুষের প্রস্তাব পেয়েও তুই এত ভাবছিস?
-ভাবছি অন্য বিষয়ে।
-কী?
-ওদের সাথে আমাদের যায় বল? ধনী ওরা। কোথায় আমরা আর কোথায় রাদিন।
-আরেহ!
-কী?
-তোর ভাগ্যে ও আছে বলেই তো এসেছে তাই না? তুইও ধনী হতে চলেছিস। আমার কথা শোন, মেনে নে। পরে আমাকে একটা আইফোন গিফট করিস।

এই বলে হাসতে থাকে রাত্রী। দিশা ফোন রাখে। রাদিনকে ওর ভালো লাগে। তবুও কেন যেন এক অজানা ভয় কাজ করছে ওর মনে। কয়েকদিন পর ওর হাত ছেড়ে দেবে না তো রাদিন?

এভাবে কয়েক দিন পার হয়ে যায়। দিশা ও রাদিনের কোনো কথা হয় না। ভাবতে ভাবতে কীভাবে যে এ ক’টা দিন পার হয়ে গেল টেরই পায়নি। এদিকে রাদিনের কাছে মনে হচ্ছে সহস্র বছর চলে গেছে। দিশার উত্তরের অপেক্ষায় যেন দিন-ই কাটছে না ওর।
ধৈর্য্য না রাখতে পেরে দিশাকে মেসেজ দিয়ে বসে রাদিন।
-কেমন আছ?

দিশার হাতে ফোন ছিল। ও মেসেজ দেখে রিপ্লাই করলো-
ভালো। আপনি?
-কই ভালো রাখলে। মেডিসিন খেয়ে দিনে পার করছি।
-কিসের?
-মাথা ব্যথার। তোমার উত্তরের চিন্তায় মাথা ব্যথা করে। কিছু জানাওনি। এ ক’দিন কথাও হয়নি। আমার কী অবস্থা তুমি বুঝতে পারছ?
-আসলে আমি বুঝতে পারছি না কী বলা উচিত আমার।
-আমায় ভালো লাগে না?
-এমনটা নয়।
-কোনো বয়ফ্রেন্ডও নেই তোমার।
-তা নেই।
-তবে এত কী ভাবছ?
– সম্পর্কটা বিয়ে অবধি যাবে তো?
-তুমি কী বিয়েই করতে চাও? তবে আমি এটাতেও রাজি। যেকোনো শর্তে তোমাকে চাই আমি।
-কেন এত চান?
-প্রথম যেদিন বিদ্যালয়ে ফ্যাশন শো করাতে যাই, তোমার দেখা পাই। অন্যান্য মেয়েরা আমাকে দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। আর তুমি! তুমি সবার চেয়ে আলাদা। আমাকে সেভাবে গুরুত্বও দাওনি। বরং আমিই তোমার কাছে এসেছি। তোমার এই পারসোনালিটি আমার বেশ মনে ধরেছিল। আর কথা বলে ভালোও লেগেছে। পরমুহূর্তে বুঝতে পারি, আমার লাইফে এমন কাউকে প্রয়োজন। আর সেটা হলে তুমি। প্লিজ না বলে আমায় হতাশ করো না।
-কিন্তু…
-কী নিয়ে সংশয়? বলো আমায়?
-আপনার পরিবার রাজি হবে?
-আমি করাব।
-কোনো কারণে মাঝপথে ছেড়ে দেবেন না তো?
-একমাত্র মৃত্যু হলে।

একথা শুনে কী রিপ্লাই দেবে খুঁজে পায় না দিশা। রাদিন লিখলো-
আচ্ছা ভাবো। তোমাকে জোর করার অধিকার আমার নেই। ভালোবাসা অন্তত জোর করে হয় না। কিন্তু এটা মনে রেখো, যে তোমাকে ভালোবাসে তার কাছে গেলেই কিন্তু জীবন সুন্দর হয়।

দিশা আরও ভাবে। রাদিনকেও যে তার ভালো লাগে। অন্য কারো জন্য এমনটা অনুভূতি ওর মনে কাজ করেনি। এটাই হয়তো ভালোবাসা! রিংটা পরে ও। ছবি তুলে পাঠায় রাদিনের কাছে। রাদিন ছবিটা দেখে শোয়া থেকে এক লাফে উঠে বসে। মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল, ইয়েস! আমি পেরেছি! আজ থেকে দিশা আমার!
মা বাবার ছোটো মেয়ে আইরা। কয়েকদিন যাবত বিয়ের কথা হচ্ছে বাসায়। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ও। তাই অনার্স শেষ না হওয়ার আগেই বিয়ের জন্য জোরাজোরি শুরু হয়ে গেল। মধ্যবিত্ত দের জীবনটাই অদ্ভুত। শখ আছে। কিন্তু পূরণ করার সামর্থ্য নেই। আইরার মনেহয়, এর চেয়ে গরীব রাই ভালো। খুব বেশি শখও এদের থাকে না দুই বেলা ভালো খাওয়া ছাড়া।

-এলাকায় এতবড়ো মুদি দোকান আছে এদের। ছেলেও শিক্ষিত। শিক্ষকতা করে। তবুও কেন তুই রাজি হচ্ছিস না বুঝি না।

বড়ো বোন আনতারার কথা শুনে আইরা বলল, এখুনি বিয়ে করার ইচ্ছে আমার নেই আপা।
-ইচ্ছে আমাদের ছিল? করেছি। করে সুখে আছি। অন্তত এখানে যে শখ গুলো পূরণ করতে পারিনি জামাই এর টাকাই করি এখন। বিয়েটা করে নে বোন। বয়স তো বাড়তে শুরু করছে।
-তোমাদের কাছে হয়তো মনেহচ্ছে। কিন্তু আমার এতও বয়স হয়নি!
-নিজেকে খুকি ভাবলে তো কিছু করার নেই।

আইরা আর কিছু না বলে চলে যায় রুমের বাইরে। ওদের মা আসলে আনতারা বলল, আইরার বিয়ে না করার কারণ অন্যকিছু।
-কী?
-কোনো ছেলের জন্য।
-কী বলিস!
-আমি পুরোপুরি শিওর না। কিন্তু এটাই মনেহয়।
-তবে কেন ও সবাইকে জানাচ্ছে না?
-সেটাই তো বুঝছি না।

আজ রাদিনের জোরাজুরিতে ওর সঙ্গে বাইরে বেরুতে রাজি হয় দিশা। একটা ক্লাস করেই কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়ে ও। কলেজ থেকে হেঁটে একটু দূরে এসে দাঁড়ায় যাতে করে কেউ ওকে খেয়াল না করে। রাদিন গাড়ি নিয়ে ওর সামনে থামলে ও উঠে বসে। ভেতরে এসেই ও চমকায়। গাড়ি ভর্তি ফুল, চকোলেট, বেলুন ও পুতুল। এসব দেখে দিশা বলল, এসব?
-তোমার জন্য।
-এসবের প্রয়োজন ছিল না।
-খুব আছে। যতবার আমার গাড়িতে তুমি উঠবে এভাবে পরিপূর্ণ পাবে।

রাদিন ওকে নিয়ে পার্কে আসে। দু’জনে ভালো একটা সময় পার করে। দুপুরের খাওয়া শেষে রাদিন ওকে বাসার একটু দূরে গিয়ে নামিয়ে দেয়। এদিকে এই দৃশ্য চোখে পড়ে ফুয়াদের। যদিও ও দিশার বাড়ির ঠিকানা জানে না। একটা কাজে এসেছিল এখানে। রাদিনের কার থেকে দিশাকে নামতে দেখে ও অবাক হয়। রাদিনের সঙ্গে দিশার তবে ভালোই যোগাযোগ রয়েছে। তাই বলে ওর গাড়িতে দিশা উঠেছে? দিশা তো এই টাইপের মেয়ে নয়। কেন রাদিনের গাড়িতে ও ছিল!
এই ভেবে মাথা ঘোরাতে শুরু করে ফুয়াদের।
.
চলবে