যদি হঠাৎ ইচ্ছে হয় পর্ব-০৬

0
74

#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_৬
#Saji_Afroz

কয়েকদিন যাবত আইরার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। কেমন যেন লাগে ওর। কোনো কাজ করার শক্তি পায় না। মাথা ঘোরায়। বমি পায়। আজ রান্না করতে এসে একটা পেঁয়াজ কেটেই ক্লান্ত অনুভব করছে ও। অথচ ওর জন্য রান্নাবান্না কোনো ব্যাপারই না। বোনদের বিয়ের পর ঘরের প্রায় সব কাজই আইরা একা করে। এই কয়েকদিন কী যে হলো ওর! নিজের রুমে ফিরে আসে আইরা। আরাম করার জন্য বিছানায় বসতেই ছোটো ভাই এর ফোন আসে। আইরার ছোটো ভাই সদ্য কাতারে গেছে। সংসারের টানাপোড়েনের জন্য পড়াশোনা আর চালানো সম্ভব হয়নি। একমাত্র ছেলে বলে কত দায়িত্বই রয়েছে আসাদের উপরে! যদিও আইরা মোটেও চায়নি ছোটো ভাই পড়াশোনা ছেড়ে দিক। কিন্তু সেও কী করবে! দুই বোনের বিয়ের পর বাবার জমানো টাকাও শেষ হয়ে যায়। একটা ছোটোখাটো দোকান রয়েছে। সেটা দিয়ে কী সংসার চালানো সম্ভব? দুই বোনের শশুর বাড়িতে ক’দিন পর পর এটা সেটা পাঠাতে হয়। এটাও যেন একটা বড়ো মাথা ব্যথার কারণ ওদের জন্যে।
আসাদের ফোন রিসিভ করে আইরা। ওর কণ্ঠ শুনেই আসাদ বলল, হাপাচ্ছ কেন আপু? শরীর খারাপ?
-না রে। ক্লান্ত লাগছে।
-কণ্ঠ শুনে কেমন যেন লাগছে। ডাক্তারের কাছে যাও।
-এই সামান্য কারণে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।
-বেশ হবে! তুমি ভালো না থাকলে মা বাবাকে কে দেখবে বলো! আমি টাকা পাঠাচ্ছি, দ্রুত একটা ডাক্তার দেখাও।

ভাই এর কথাতে ডাক্তার দেখাতে রাজি হলো আইরা। আসলেই তো! পরিবারের জন্য হলেও ওর সুস্থ থাকা প্রয়োজন।

-তোমার একটা বান্ধবী আছে না? কী যেন নাম!

রাহাত খানের কথা শুনে তার মেয়ে রাইদা বলল, জেবা?
-উহু! শরীফ এন্ড হক গার্মেন্টস এর মালিকের মেয়ের কথা বলছি।
-সানজু?
-হু সে। তার কী কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?

এই বলে হাসেন রাহাত খান। রাইদাও হেসে বলল, কেন বলো তো বাবা?
-সে তোমার ভালো বান্ধবী। ভাবছিলাম ওকে বউ করে আনলে আমাদের সাথে ভালোই এডজাস্ট করতে পারতো।

রাহাত খান ভেবেছিলেন, একথা শুনে খুশি হবে রাইদা। কিন্তু ওর কপালে চিন্তার ভাজ দেখে তিনি বললেন, কী হলো?
-আসলে বাবা ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
-তাই!
-জি।

একটু ভেবে তিনি বললেন, আমি কী ওর বাবার সাথে একবার কথা বলে দেখব?

আমতাআমতা করে রাইদা বলল, কী দরকার বলো! মেয়ের কী অভাব চারদিকে? তাছাড়া ভাইয়ার মত ছাড়া কথা বলাও ঠিক হবে না।
-তোমার ভাইয়ার জন্য কী আমরা মেয়ে চয়েজ করতে পারি না? এমন না যে ওর মত নেব না। সে কিছু বলছে না। তাই আমরা এগুতে চাচ্ছি।
-বুঝলাম। অন্য মেয়ে দেখো তবে। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।

এই বলে সেখান থেকে প্রস্থান নেয় রাইদা। কিছুদূর যেতেই কারো হ্যাচকা টানে থেমে যায় ও। পাশ ফিরে মা হাসিনা খানকে দেখে বলল, মা তুমি?
-তোমার আর খান সাহেবের সব কথাই আমি শুনলাম। উনাকে মিথ্যে কেন বললে? সানজুর বিয়ে ঠিক নেই আমি জানি। আর আমি এটাও বুঝি, ওর মা এর ইচ্ছে এই বাড়িতে ও বউ হয়ে আসুক। আকার ইঙ্গিতে আমাকে সেটা বুঝিয়েছেন। আমাদেরও সানজুকে পছন্দ। তবে কী সমস্যা তোমার?
-সমস্যা আমার নয়।
-তবে? সানজুকে নিয়ে কিছু বলো না। ও বেশ ভালো মেয়ে। আমি এটাও বুঝি, তোমার ভাইয়াকেও ও পছন্দ করে।
-এ কথা আমার অজানা নয়।

মুখ ফোসকে কথাটি বলে জিভে কামড় বসায় রাইদা। হাসিনা বললেন, তবে সমস্যা রাদিনের। ওর পছন্দ আছে। এই তো?

নিশ্চুপ রাইদাকে একই প্রশ্ন আবারও করলে ও বলল, হ্যাঁ!

হাসিনা হাসিমুখে বললেন, মেয়ের ছবি আছে?
-আমার কাছে নেই। পেটে কথা রাখতে পারব না জেনে ভাইয়া তেমন কিছু শেয়ার করেনি। আমি একবার ভাইয়াকে সানজুর জন্য জোরাজোরি করছিলাম। তখন বলেছিল মেয়েটির কথা।
-নাম, বাবা কী করে, কোথায় থাকে?
-জানিনা। শুধু ছবি দেখেছিলাম। অনেক সুন্দরী।
-তাই! এটাতেই আমার চলবে।
-সত্যি?
-হু। রাদিনের সঙ্গে কথা বলব আমি। ঘরের মেয়েকে ঘরে নিয়ে আসতে হবে না!

ফুয়াদের ফোন আসে দিশার কাছে। হঠাৎ ওর ফোন পেয়ে সাথে সাথেই রিসিভ করে ও। একে অপরের খবরাখবর নেয়। ফুয়াদ একটু থেমে বলল, আজ তোমাকে দেখেছিলাম। কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু রাদিন থাকায় বলিনি।
-আরে বলতেন! ও এসবে মাইন্ড করে না।

কথাটি বলে থেমে যায় দিশা। ফুয়াদ আঁতকে উঠে। তার মানে ও যেটা ভেবেছিল সেটাই হয়েছে! ফুয়াদ মুখে হাসির শব্দ বুঝিয়ে বলল, ও বলতে?

দিশা হেসে ফেলে। ও বলল, আসলে রাদিন ও আমি রিলেশনশিপ এ আছি।

পা এর নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায় ফুয়াদের। মুখ থেকে কথা বেরুচ্ছে না ওর। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল ও, অভিনন্দন। কিন্তু কখন কীভাবে হলো এসব?
-হুট করেই। ভালোবাসা যে হুট করে হয়ে যায় নিজের মাধ্যমেই প্রমাণ পেলাম।

বেশি কথা বলতে পারলো না ফুয়াদ। ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেয় ও। ওর মন ভাঙার শব্দ যেন নিজেরই কানে বাজছে। ঝাপসা দেখছে চোখে চারপাশ। মনে হচ্ছে নিজের ভুলেই দিশাকে হারিয়েছে। কেন আরও আগে নিজের মনের কথা ওকে জানালো না ও! দিশা ওর প্রস্তাবে রাজি না হত, তবুও জানতো। অন্তত দিশাকে না জানানোর জন্য আফসোস ওর করতে হত না।

হাসপাতালে ডাক্তার শাহানা আলমের চেম্বারের সামনে বসে আছে আইরা ওর মা এর সঙ্গে। ওর পাশে রয়েছে ফাতেমা বেগম। সাথে রয়েছে তার মেয়ে ফানজিয়া। আইরার দিকে চোখ পড়তেই ফানজিয়ার ওকে ভালো লাগে। কী মায়াবী মেয়েটার মুখটা! তবে ওকে দেখতে কিছুটা অসুস্থ দেখাচ্ছে। ফানজিয়া বলে বসলো, আপনি কী অসুস্থ?

আইরা বলল, হ্যাঁ।
-কী হয়েছে?
-শরীর দূর্বল। তাই আসলাম।
-ওহ। আমিও মা কে নিয়ে আসলাম। আমারও একই অবস্থা। শাহানা আলম মেয়েদের শারীরিক বিষয়ক ডাক্তার শুনে এসেছি।
-ওহ! আগেও আমার আসা হয়েছে। উনি আসলেই বেশ ভালো ডাক্তার।

ফানজিয়ার সঙ্গে কথা হতে থাকে আইরার। ফাতেমা বেগমও আইরাকে ভালোভাবে দেখছেন। ওদের দু’জনের কথাবার্তার মাধ্যমে মায়েদেরও আলাপ শুরু হয়। এক পর্যায়ে ফাতেমা বেগমকে একপাশে নিয়ে এসে ফানজিয়া বলল, আইরা মেয়েটা কী সুন্দর তাইনা?
-হুম।
-ফুয়াদ ভাইয়ার সঙ্গে বেশ মানাবে বলো?
-আমার মনের কথা বললি একেবারে।
-প্রস্তাব দিয়ে দাও? সবই তো জানলাম।
-কিন্তু ফুয়াদ…
-ওসব পরের বিষয়। আগে কথা তো বলো? আমরা না এগুলে ভাইয়া এগুবে না।
-বেশ।

ওরা আইরার পাশে আসে। ওর সিরিয়াল চলে আসায় ভেতরে যাচ্ছে। ফাতেমা বেগম ওর মা কে থাকতে বললেন। আইরা একাই ভেতরে যায়। তিনি আইরার জন্য ফুয়াদের প্রস্তাব দেন।
সবকিছু শুনে ও ফুয়াদের ছবি দেখে ওকে ভালো লেগে যায়
দু’জনে দু’জনের ফোন নাম্বার নেন। এদিকে আইরা চেম্বার থেকে বের হয়। ওকে দেখে ওরা কথা থামিয়ে ফেলে। এর পরেই ফানজিয়া গেল চেম্বারে। আইরার মা ওয়াশরুমে যাওয়াই ও চেয়ারে এসে বসে আবারও। ফাতেমা বেগম ওর চিন্তিত মুখ দেখে বললেন, সব ঠিক আছে তো মা?

আইরা হ্যাঁ সূচক ভাবে মাথাটা নাড়ে। কিন্তু কোনো কথা বলে না। খানিকবাদে ফানজিয়া বেরিয়ে আসে। ও হাসিমুখে জানায়, ডাক্তার বলেছে ও গর্ভবতী। টেস্ট দিয়েছে বিষয়টা নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্যে। এখন সেসবই করাতে হবে।

একথা শুনে ফাতেমা বেগম খুশিতে জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে। ফোন হাতে নিয়ে নানান জনকে এই খুশির সংবাদ জানাতে শুরু করলেন। এদিকে একই কথা ডাক্তার আইরাকেও বলেছেন। যা শুনে ওর কী করা উচিত বুঝছে না। একই সংবাদ দু’দিকে পেল। একদিকে আনন্দ আরেক দিকে হতাশা।
স্তব্ধ হয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগলো আইরা। কী হয়ে গেল ওর সঙ্গে!
.
চলবে