যদি হঠাৎ ইচ্ছে হয় পর্ব-০৭

0
64

#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_৭
#Saji_Afroz

সারা রাস্তায় ডাক্তার কী বলেছেন জানতে চাইলেও কোনো জবাব দিলো না আইরা। অবিবাহিতা মেয়ে প্রেগন্যান্ট শুনে মা এর কী হাল হবে ভাবতেই ভয়ে গা শিউরে উঠছে। নিজের ভুল ও অসাবধানতার কারণেই আজ এই দশা ওর। ডাক্তার রিপোর্টে প্রেগ্ন্যাসির টেস্ট এর কথা লিখেছে। তাই রিপোর্টটা ও ব্যাগের মাঝে দুমড়েমুচড়ে রেখে দিয়েছে যাতে কারো হাতে না পড়ে।
বাসার কাছাকাছি চলে আসে ও। একটা ফার্মেসি দেখে নেমে পড়ে৷ মা কে বলল, বাসায় যাও। মেডিসিন নিয়ে আসি।
-ডাক্তার কী বললেন?
-শরীর ভীষণ দূর্বল আমার। ভিটামিন দিয়েছে। সেসবই নিয়ে আসছি।

তিনি মেয়ের কথায় চলে যান। আইরা মুখে মাস্ক লাগিয়ে ফার্মেসিতে আসলো। ডাক্তার টেস্ট করতে বলেছে। এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। হতে পারে যা ভাবছে এমন কিছুই নয়। আইরা প্রেগ্ন্যাসি টেস্ট কিট কিনে নেয়। বাসায় এসে সোজা ওয়াশরুমে আসে ও। টেস্ট করে রেজাল্ট এর অপেক্ষা করতে থাকে। রেজাল্ট দেখে হতাশ হয়ে যায় ও। রেজাল্ট পজিটিভ!

-এই রাইদা পেটে কথা রাখতে পারে না মোটেও! এইজন্যই ওকে কিছু বলতে চাই না আমি।

রাদিনের কথা শুনে হেসে হাসিনা খান বললেন, আমিই চেপে বের করেছি। আর ও না বললে সানজুর সাথে বিয়ের কথা উঠতো তোর৷ তখন আরও ভেজাল হত না বল?

রাদিন মা কে দিশার ছবি দেখিয়ে বলল, কে বেস্ট? সানজু নাকি দিশা?

দিশার ছবি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় তার। তিনি বললেন, অবশ্যই দিশা!
-এইজন্যই তো এত পাগল হলাম মা।
-মেয়ে নিশ্চয় আমাদের মতো বড়ো ফ্যামিলির?
-সবকিছু কী একসঙ্গে পাওয়া যায়?
-মানে?
-ওরা মধ্যবিত্ত পরিবারের। ওর বাবা ইয়ামিন জুট মিল এ কাজ করেন।
-এসব কী বলছিস! তোর বাবা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের একজন সামান্য কর্মচারীর মেয়েকে পুত্রবধূ মানবে? আমি নিজেই মানতে পারছি না।
-কেন নয় বলো? আমাদের ধন সম্পদ কী কম আছে! অন্যদের দিয়ে কী হবে আমাদের? তাছাড়া ও বাড়িতে গিয়ে আমি থাকবা না। দিশাকে আনব এই বাড়িতে। তবে অসুবিধে কোথায়?
– স্ট্যাটাস! সমাজে আমাদের সবাই আলাদা চোখে দেখেন। সেইজন্য আমাদের সঙ্গে মানাবে এমন কাউকেই দরকার।
-তবে থাকো তোমরা এসব মানানসই নিয়েই। আমি দিশাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব।

এই বলে রুমের বাইরে চলে যায় রাদিন। হাসিনা খান চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ছেলে এমন একটা কাণ্ড ঘটাবেন কল্পনাও করেননি তিনি। সারা জীবন কাদের সাথে উঠাবসা করলো আর এখন কোন বাড়ির মেয়েজে বউ করে আনতে চায়! খান সাহেব কেন, তিনি নিজেই এটা মানতে পারছেন না! বিষয়টা দ্রুত ওর বাবাকে জানানো উচিত।

বাড়ির সবাইকে এক বান্ধবীর বিয়ে বলে দু’দিন এর জন্য কক্সবাজার চলে আসে আইরা। সাথে রয়েছে ওর ভালোবাসার মানুষ৷ যাকে ভালোবেসে ও ডাকে প্রিন্স! এই নাম দেবেই না কেন! আইরাকেও যে ও রানীর মতো করে রেখেছে। তাছাড়া ও দেখতেও বেশ সুদর্শন। প্রথম দেখাতেই ওর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিল আইরা। কখনো ভাবেনি ওকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে। ভালোবাসা কত অদ্ভুত! যে আইরা বাসায় কারো সঙ্গে মিথ্যে বলতো না, আজ একটার পর একটা মিথ্যে বলেই যাচ্ছে। শুধুমাত্র ওর ভালোবাসার মানুষটির জন্য! মাঝেমধ্যে বাসার মানুষজন কে ঠকাচ্ছে ভেবে মন খারাপ হয়। যেমন এখনটা হচ্ছে। কখনো ও এভাবে না বলে এতদূর আসেনি।
-কী ভাবছ?

প্রিন্সকে দেখে বসা থেকে উঠলো আইরা। বাড়ির লোকের কথা বলতেই ও হেসে বলল, আমিও কিন্তু মিথ্যে বলেছি। বন্ধুদের নিয়ে এসেছি বলেছি। অথচ আসলাম তোমায় নিয়ে।
-এটা কী ঠিক করছি আমরা?
-কটা দিনই। এরপর সবাই জানবে।
-হুম।
-রাত হলো। আজ অনেক ঘুরাঘুরিও হলো। শুয়ে পড়ো।

বিছানার দিকে তাকিয়ে আইরা বলল, কিন্তু বিছানা তো একটা।
-ও হ্যালো? আমি কে তোমার? আমায় ছেড়ে আলাদা বিছানা খুঁজছ?
-তবুও! সবাই যেদিন থেকে জানবে সেদিন থেকেই একসঙ্গে থাকা হবে।

এই বলে আইরা সোফার দিকে যেতে চাইলে ওর পথ আঁটকায় প্রিন্স। আইরাকে কাছে টেনে বলল, সবাই জানলেও তুমি আমার বউ না জানলেও বউ।
-তাই না?
-খুব তাই।

আইরাকে কাছে পেয়ে ওর দিকে অপলকভাবে তাকায় প্রিন্স। আইরা তা বুঝে বলল, এই ছাড়ো। চলো ঘুমাই।
-নাহ।
-না মানে?
-ঘুমানোর প্লান বাদ।
-তবে?
-অন্য প্লান ঘুরছে মাথায়।
-কী?

আচমকা আইরার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দেয় প্রিন্স। আইরা প্রথমে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও এক সময় হাল ছেড়ে দেয়। ভালো লাগার সাগরে ভাসতে থাকে সেও। মুষ্টিমেয় করে নেয় প্রিন্সের চুল। আইরার কামনা বুঝতে পেরে ওকে কোলে তুলে নেয় প্রিন্স। বিছানায় শুইয়ে নিজের শরীর ভার ছেড়ে দেয় ওর উপরে। উত্তেজনায় গোঙাতে শুরু করে আইরা। যা শুনে আরও মাতাল হয়ে যায় প্রিন্স। আইরাকেও করে তুলে মাতাল। এই ভালোবাসার মাতলামি চলতে থাকে রাতভর।

আগের কথা ভেবে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠে আইরা। সেদিন কেনো! এভাবে যে কতবার বাড়িতে মিথ্যে বলে বাইরে প্রিন্সের সাথে সময় কাটিয়েছে তার হিসাব নেই৷ সম্পর্ক শেষ হওয়ার পরেই কেন এই সংবাদটা পেল ও! অবশ্য আগে পেলেও ওদের মধ্যে কী সব ঠিক হত আবার!

ফুয়াদের মুখে পুরো একটি মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয় ফানজিয়া। ফুয়াদ জেনে খুশি হয় যে, ওর ছোটো বোনটা মা হতে চলেছে। ও বলল, আগে জানলে মিষ্টি আমিই নিয়ে আসতাম।
-আমি এনেছি আরেকটি খুশিতে।
-কী?
-ভাবী আনার খুশিতে।
-মানে?

হাসপাতালে আইরাকে দেখার সব কথা ভাইকে জানায় ফানজিয়া। ও সবটা শুনে কোনো মতেই রাজি হয় না।
ফাতেমা বেগম এসে কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন, রাজি তো হবে না। কেন হবে! আমরা কে ওর!

যা শুনে ফুয়াদ বলল, এসব কী বলছ মা? তোমরাই তো আমার সব।
-তাহলে কেন আমাদের কথা শুনছিস না? পছন্দ থাকলে বল। সেটাও না!

দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে ফুয়াদ বলল, আমি মেয়েটিকে দেখতে রাজি।

একথা শুনে খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরেন ফাতেমা বেগম। তিনি দেরী না করে চটজলদি ফোন দেন আলেয়া খাতুনকে। তিনিও ফুয়াদের কথা শুনে খুশি হোন।
এদিকে ফুয়াদ রুমের মাঝে এসে বিষন্ন হয়ে বসে থাকে। দিশার জন্য নিজেকে ও পরিবারকে কষ্ট ও দিতে পারে না। দিশাকে ভুলে ওকে এগুতে হবে সামনের দিকে। ভুলে যেতে চায় ওকে ফুয়াদ!

চাইলেও প্রিন্সকে ভোলা সম্ভব না আইরার। এখন তো ওর অংশ নিজের শরীরে! আইরার কী করা উচিত!
ও ভীষণ ঘাবড়ে যায়। কাপা হাতে ফোন দেয় প্রিয় বান্ধবী অর্নাকে। ওকে সব খুলে বলে। বান্ধবী ওকে পরামর্শ দেয়,
এবরশন এর। ফোন রেখে বান্ধবীর কথা ভাবে আইরা। রাজি হলেও পরমুহূর্তেই
ভেতরের ছোট্ট জানটির জন্য মন কেমন করে উঠে৷
প্রিন্স ওর সাথে সম্পর্ক শেষ করেছে। এখন বাচ্চার কথা শুনে ওকে মেনে নেবে এটা ভাবাও বোকামি। তাছাড়া ও জানাতেও চায় না।
আইরা কী করবে ভেবে পায় না। মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়েছে ওর৷
আলেয়া খাতুনকে দেখে আইরা বলল, তুমি?

উনি দরজার পাশে দাঁড়িয়েই বললেন, আজ তৈরী হয়ে থাকবি সন্ধ্যায়। ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে তোকে।
-ছেলে পক্ষ?
-আজ হাসপাতালের ফানজিয়ার সঙ্গে দেখা হলো না? ওর ভাই।
-কিন্তু মা আমি এখন…
-আমি জিজ্ঞেস করতে আসিনি। জানালাম। আর ওদের ভালো লাগলে ও বাড়িতেই তোর বিয়ে হবে।

এই বলে তিনি হনহনিয়ে চলে গেলেন।
আইরার মাথার যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। এখুনি ওর মা এর বিয়ের জন্য জোরাজোরি করতে হলো! একদিকে ও প্রিন্সের সন্তান গর্ভে ধারণ করেছে, অন্যদিকে মা অন্য কারো সাথে বিয়ের জন্য জোরাজোরি করছে। করবে টা কী ও!
.
চলবে