রঙতুলির ক্যানভাস পর্ব-০৯

0
289

#রঙতুলির_ক্যানভাস

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পর্ব_০৯

উদাস মনে বাড়ির সামনে পার্কের বেঞ্চে বসলো রোদেলা।মনটা তার ভীষণ খারাপ।আজ কোর্টে যেতে হবে।সেদিনের পর কেঁটে গেছে এক সপ্তাহ ।ডিভোর্সের হেয়ারিং পিছানো হয়েছে কারণ রোদেলার অসুস্থতা। জ্বর এ পরে ছিল এক সপ্তাহ!সবাই চিন্তা করছিল ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ দেয়ার পর কেনো রোদ সুস্থ হলো না।আজ যখন হলো রুবি নিজ দায়িত্বে সবাইকে কোর্টের কথা মনে করালো।নিজের উত্তর তো রোদেলা পেয়ে গেছে,কিন্তু রোদ্দুর? সেও কি ওকে চাইবে?ভাবতেই আরো উদাসীনতা ঘিরে ধরলো।পাশে কারোর বসার উপস্থিতি টের পেয়েও তাকালো না।জানে এটা রোদ্দুর!অজান্তেই ওর উপস্থিতি ওকে জানান দেয়!

“এখানে কি করছিস?”

“তুই এখন খুব খুশি তাই না রে রোদ্দুর?”

রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে তাকালো।প্রশ্ন করলো ও,আর উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন?

“এটা কেন বলছিস?”

রোদেলা মলিন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,” বা রে!আমাদের আজ ডিভোর্স হবে ,আমরা আলাদা হব !খুশি হওয়ার কথা না?”

“তুই খুশি?”

নিরুত্তর রইলো রোদেলা!কি বলবে?বলবে না রোদ্দুর আমি খুশি না?জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত তোর সাথে থাকতে চাই?তোকে আমি…ভাবলো না আর কিছু ও।

রোদ্দুর ওর এক হাত নিজের মুঠোয় নিলো।

“এক সাথে থাকা যায় না রোদ?”

চমকে তাকালো রোদেলা।ভুল শুনলো কি ও?রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে রইলো ও।

“জানিস ছোট থেকে তোকে খেপানো,মারা,আবার আদর করা সবটার মাঝেই অদ্ভুত লাগতো!বুঝ হওয়ার পর তোর সাথে ঝগড়া ,আবার প্রয়োজনে কেয়ার দেওয়া সব কিছুই অদ্ভুত ফিল দিত।হয়তো কখনো এই ফিলিং কে পাত্তা বা ঘুটিয়ে দেখি নি।নোভা আপু প্রতিটা মুহূর্তে বুঝাতো,রোদ কে ছাড়া তুই ভালো থাকবি না।একটা সময় এটা নিজেই উপলব্ধি করলাম। হ্যাঁ!তোকে ছাড়া আমি ভালো থাকবো না!”

রোদ্দুর এর কণ্ঠ কাঁপা কাঁপা শুনালো!

“থাকবি রোদ আমার সাথে?কথা দিচ্ছি এক বিন্দু পরিমাণ কষ্ট পেতে দিবো না।আজ তোকে হারানোর ভয়টা বেশি রে রোদ!অন্য কারোর সাথে তোকে সহ্য করতে পারব না। সানিকেও পারতাম না বলেই ওকে তোর সামনে প্রকাশ করেছি!তোর পাশে কাউকে মানতে পারবো না রে রোদ!কাউকে না!থাকবি রোদ?আমার হয়ে?”

রোদেলা কি বলবে বুঝতে পারলো না।অতিরিক্ত আনন্দ যেমন ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!ওর হচ্ছে তেমন অবস্থা!ওকে অবাক রেখেই হুট করেই রোদ্দুর হেসে উঠলো।রোদেলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

“আরে সিরিয়াস হচ্ছিস কেন?মজা করছিলাম আমি!”

সদ্য ফুটে উঠা ফুটন্ত ফুল যেমন ছিঁড়লে সে কষ্ট পায় তেমনি ভেঙ্গে চুরমার হলো সদ্য আশার আলো!বুকের ভিতর তাণ্ডব শুরু হয়েছে ওর।

রোদ্দুর আবার বললো,”তুই আর আমি দুই মেরুর প্রাণী রে!এক থাকা অসম্ভব!”

বলে আবারও হাসলো।রোদেলা হাসার চেষ্টা করে বললো, “যাই,তৈরি হতে হবে!”

বলেই উঠে হাঁটা লাগালো!রোদ্দুর ছল ছল চোখে তাকিয়ে রইলো।না একটা কথাও ও মজা করে বলেনি। ও নিজের অনুভূতি বুঝলেও রোদের অনুভূতি জানে না!রোদ কি ওকে চায়?তাই মজা হিসেবে চালিয়ে দিল।

“আমি তোর সাথে থাকতে চাইলেও তুই কি চাস রোদ আমার সাথে থাকতে?থাকলে প্লিজ একবার ঘুরে তাকা রোদ।প্লিজ!”

রোদ হাঁটতে হাঁটতে থেমে গেলো।পিছনের ব্যাক্তিকে দেখার একবার ইচ্ছে জাগলো ওর!কিন্তু না!তাকালো না!আবারও হাঁটা শুরু করে থেমে গেলো।রোদ্দুর ওকে পরখ করছে।রোদেলার মনে থেকে একটাই আওয়াজ আসলো,”সব সত্যি রোদ। ও মজা করেনি, ও মজা করেনি রোদ”

হ্যাঁ!ঘুরেছে রোদ!তাকিয়েছে ওর দিকে! তাই দেখে রোদ্দুরের মুখে হাসি ফুটলো।উত্তর পেয়ে গেছে ওর!রোদেলা ছল ছল চোখেই আশে পাশে খুঁজে একটা চিকন গাছের ডাল নিয়ে তেড়ে গেলো ওর দিকে। ডাল দিয়ে ওকে মারতে মারতে বললো,”কু’ত্তা, বা’ন্দর,ফা’জিল!”

রোদ্দুর নিজেকে বাঁচাতে বাঁচাতে বললো,”মার’ছিস কেনো?”

রোদেলা ওকে উঠে দাড় করিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,”নিজের অনুভূতি গুলো বুঝতে দেরি করেছি!আমার তোকে লাগবে রোদ্দুর!তুই হীনা কাউকে আমার চাই না!তোকে চাই শুধু!ডিভোর্সের হেয়ারিং ডেট যাতে পিছায় তাই অসুস্থ থাকার জন্য একটা ওষুধ ও আমি খাই নী!ওষুধ ছাড়া সুস্থ হয়ে গেছি!থাকবি আমার সাথে?কথা দিচ্ছি এক বিন্দু পরিমাণ কষ্ট পেতে দিবো না।আজ তোকে হারানোর ভয়টা বেশি !অন্য কারোর সাথে তোকে সহ্য করতে পারব না। রুবিকেও সহ্য হয় না তোর সাথে!থাকবি আমার সাথে?শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত?আমার হয়ে?ভালবাসবি আমায়?সবার বেশি!অনেক বেশি!আমার হয়ে থাকবি তুই রোদ্দুর?”

রোদ্দুর নিরুত্তর,মুখে প্রাপ্তির হাসি।রোদেলা মুহূর্তেই ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।রোদ্দুর ভরকে গেল।রোদেলা বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে বললো,”আমিও মজা করছি! হুহ!রোদ্দুর কোমরে হাত দিয়ে দাড়ালো!

“তবে রে,দাড়া তুই!”

রোদেলা তার আগেই বাড়ির দিকে ছুটলো!

“রোদ দাড়া আজ তোর একদিন আমার যতদিন লাগে!”

রোদেলা দৌড়ে মেইন গেটে ঢুকতে গিয়ে কারো পিঠের সাথে বাড়ি খেয়ে পরে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো।কিন্তু সামনে থাকা ব্যাক্তির পরে গিয়ে মুখে কাদায় মাখা মাখি!তুষার কাঁদো স্বরে বলল,”তুমি কি আমাকে ছাড়া কাউকে দেখো না ধাক্কা খেতে?”

“সিক্স প্যাক ওয়ালা বডি যদি আমার মত মেয়ে মানুষের ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় ,তাহলে কেমন পুরুষ আপনি?যাক গে আমার টাইম নেই!”

বলেই ছুটলো!

তুষার এর প্রেস্টিজ এ লাগলো।সে উঠে দাঁড়াতেই আবার কারোর সাথে ধাক্কা লাগলো।আবার পরে গেলো কাঁদায়।বৃষ্টির মৌসুম!একটু তো কাদা থাকবেই!

“রোদ্দুরের বাচ্চা!”

“হয় নি হবে ভবিষ্যতে!সর আমার কাজ আছে!”

বলে ওকে না তুলেই দৌড়!

তুষার আস্তে করে উঠে দাড়ালো।সামনে নিশাত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

“দারোয়ান চাচা, এই ফকির কে?”

দারোয়ান উত্তর দিল ,”ঐটা তুষার বাবাজি মা!”

তুষার শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হুট করেই হাসতে লাগলো ও।

“একদম পারফেক্ট লাগছে আপনাকে!”

তুষার রেগে ওকেও কাদায় ফেলে দিল।তারপর হেসে বললো,”তোমায় ও এবার পারফেক্ট লাগছে!”

“আপনাকে আমি,…”

বলেই কাদা ছুড়ে মারলো।তুষার ও মারলো।শুরু হলো এদের কাদা ফাইট।

রোদ্দুর বাড়িতে দৌড়ে ঢুকেই নোভাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,”রোদ কই?”

“রুমে গেলো!”

রোদ্দুর কিছু না বলে দৌড়ে উপরে উঠতে নিতেই নোভা বললো,”তোরা এমন ছোটাছুটি করছিস কেন? কোর্টে যাবি না?”

“রাখো তোমার কোর্ট! ওরে আমি আমার কাছেই রেখে দিবো।নো ছাড়াছাড়ি!”

বলেই রুমে গেলো ।

সবাই বিস্মিত হয়ে রুবি আর কাকলি বাদে সবাই বলে উঠলো,”আলহামদুলিল্লাহ!”

“রোদের বাচ্চা দাড়া!”

“আমার পা,আমি দৌড়াচ্ছি তোর কি?”

বলেই ছুটছে রুমের এদিক ওদিক!

রোদ্দুর ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসলো!

“যা এবারের মত ছাড় দিলাম। রোদেলাও পাশে বসলো। সেও হাপিয়ে গেছে!কিছুটা সময় যেতেই রোদ্দুর বলে উঠলো,”থাকবি?”

রোদেলাও বলে উঠলো,”থাকবি?”

রোদ্দুর মুচকি হেসে বলল,”জি মহারানী!”

“তথাস্তু মহারাজ!”

দুইজনই হেসে উঠলো।রোদ্দুর ওকে জড়িয়ে ধরলো! রোদেলাও শক্ত করে ওকে আকড়ে নিলো।

বাইরে তুলি আর ঋদ্ধ ওদের উকি মেরে দেখছে!

“হাউ কিউট!”

“প্রশূর”

“চলেন ওদের একা থাকতে দেই!”

“হয় ,আমাদেরও একান্ত টাইম দরকার!!”

তুলি হাসলো!লোকটা আসলেও পাগল।ওরা চলে যেতেই রোদেলা বলে উঠলো,”নোভা আপু ঠিক বলতো! রঙ তুলির ক্যানভাস এই আমাদের সূচনা!”

“হুমম…!”

আনমনে আওরালো রোদেলা!

“নাই বা হলো আবার দেখা,
বাক্সবন্দী থাক গল্পকথা;
নাই বা হলো স্বপ্ন পূরণ,
থাক না কিছু অকথিত রমণ।
বাস্তব আজ বড়ই জটিল,
সব যে মিথ্যে ভরা;
রঙ তুলির চিত্রতে আজ,
কল্পনা পাক আশকারা।
আঘাত প্রাপ্ত এই হৃদয় কেন আজ,
নতুন করে ভাঙ্গে?
মনের ক্যানভাসে রঙ তুলি কেন রাঙায়,
কষ্টের নীল রঙে?
চেয়েছিলাম এই ক্যানভাসে আজ,
তোমায় ধরে রাখতে….
কিন্তু রঙ তুলি যে করছে বিদ্রোহ,
তোমার ছবি আঁকতে!!
রঙ তুলির ক্যানভাস আজ সূচিত হলো
নতুন কাব্যে বহাল!!”

{~সাবরিন জাহান~}

#চলবে….