রঙতুলির ক্যানভাস পর্ব-০৭

0
259

#রঙতুলির_ক্যানভাস

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পর্ব_০৭

“দেখ নিশু তুই কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছিস!আমি মোটেও ওই লোকের সাথে দেখা করতে চাই না।”

নিশাত বিরক্ত হয়ে বলল ,”হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে।রাত জেগে তার আইডি তে ঘুর ঘুর করো আর বলো দেখা করতে চাও না।”

“আমি বললাম..”

আর কিছু বলার আগেই কাকলী হাজির।তিনি ভ্রু কুচকে বললে,”তোমরা এই সকাল বেলা আমাদের বাড়িতে কি করো?”

নিশাত বলে উঠলো,”রোদেলার সাথে দেখা করতাম আরকি আন্টি!”

কাকলি ভেংচি কেঁটে বললো,”বড়লোক বান্ধবীর থেকে কয় টাকা হাতাও শুনি!”

নিশাত ভ্রু কুঁচকে বললো,”সরি?”

“এত অবুঝ সেজো না।তোমাদের মত মেয়েকে ভালো মত চেনা আছে আমার।আর রোদেলা! ওর মা তো ওর বাবার ঘাড়ে ওকে চাপিয়ে দিয়ে গেলো,এখন তোমাদের কেও এ বাড়ির সম্পদ বিলাচ্ছে।”

তুলি এবার মুখ খুললো,দাত কেলিয়ে বললো,”আন্টি আপনি বিজনেস ম্যান আকবর আলীর নাম শুনেছেন?”

“তার নাম কে না শুনবে!এত বড় লোক!তোমরা হয়তো না শুনে থাকতে পারো ”

তুলি আবারও দাত কেলিয়ে বললো,”ও তারই মেয়ে!”

কাকলি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল।

“আর আমি তুলি,এস এ পি ফাহিমের মেয়ে!”

কাকলি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।

তুলি আবার বললো,”কারোর বাইরের অংশ দেখে তাকে জাজ করবেন না!আর বড় লোক মানে এই নয় যে গরীব ফ্রেন্ড থাকতে পারবে না,আর থাকলেও তার টাকা খাবে!”

বলেই নিশাত কে নিয়ে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেলো।নিশাত এগিয়ে যেতে যেতে বলল,”দামে কম কিন্তু ভাবছিলাম মানে ভালো হবে।কিন্তু এ দেখছি দামেও কম মানেও কম…কাকলী ফার্নিচার!”

কাকলি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।মেয়েগুলো এভাবে অপমান করলো।
সিড়ি দিয়ে উঠতেই দেখলো ঋদ্ধ বুকে হাত গুজে দেয়ালে হেলান দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।নিশাত তুলির কানে ফিস ফিস করে বললো,”আমি আগে গেলাম!হ্যাপি কথা!”
বলেই আগে দৌড় দিল।তুলি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল।তারপর মাথা নিচু করে যেতে নিতেই ঋদ্ধ পথ আটকে দাড়ালো!

“সামনে খাম্বার মত দাড়িয়ে আছেন কেনো?”

“তোমার মুখে যে কথা ফুটে তাতো আগে জানতাম না!”

“আপনার কি আমাকে বোবা মনে হয়?”

“এক কালে তাই ই ভাবতাম!”

“কি বললেন?”

ঋদ্ধ ওর দিকে ঝুঁকে গেল।এতে ও নিজেও কিছুটা পিছে ঝুকলো!

“মা কে উচিত জবাব দেয়ার জন্য থ্যাংকস তুলা!”

বলে চলে গেলো।

তুলি আনমনে বললো,”তুলা?”

_______

“তুই আবার আমার ফোন নিয়েছিস রাস্তা!”

“আরে একটু গেম খেলবো!”

“নিজের ফোনে খেল,আমারটা দে।”

“কেন?তুই যে পর’কীয়া করস ওটা জেনে যাবো নাকি!”

“ওই,ফা’জিল!কি বলস!”

“তাইলে ফোন থাকলে প্রবলেম কি?”

“তুই দে!”

“না”

এক পর্যায়ে দুইজন দৌড়া দৌড়ি শুরু করলো।রোদেলা দৌড়ে বের হতে হবে তখনই নিশাতের সাথে ধাক্কা গেলো।কেউ ই এটার জন্য প্রস্তুত ছিল।আর অসাবধানতায় পরে গিয়ে রোদেলার পা মচকে গেছে।

“আম্মু!”

রোদ্দুর ফোঁস করে শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো,”এইজন্য বলি কম দৌড়াদৌড়ি কর।”

“নিশুর বাচ্চা,দেখে চলতে পারিস না?”

“আমি কি জানি নাকি,তুই রুমের মধ্যে ম্যারাথন দৌড় প্রাকটিস করছিস!”

“বেশি ব্যাথা পেয়েছিস?”

রোদেলা কাঁদো কাঁদো ফেস করে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বললো,”পা মচকে গেছে!”

রোদ্দুর ওকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসালো!

“সরি,আমি দেখি নী রে!”

“তুমি সরি কেন বলো,পাগলের মত বিহেভ করলে এই অবস্থাই হবে!”

“পাগল কাকে বলিস তুই?”

“তোকে!”

“আমি মোটেও পাগল না!”

রোদ্দুর কথা বাড়ালো না।উঠে গিয়ে ব্যাথার স্প্রে এনে ওর পায়ে দিলো।

“সেরে যাবে!”

________

“মা তুমি জানতে ওদের আগে থেকে বিয়ে ঠিক করা?”

“সেটা তো জানতাম,কিন্তু কে জানত এমন হুট করে দিবে!”

“আমার রোদ্দুরকে লাগবে মা!দরকার পড়লে রোদেলাকে সরিয়ে দিবো”

“এসব কেমন কথা রুবি?”

ঋদ্ধর কথা চমকে উঠলো রুবি আর কাকলি!

“আর মা তুমি ওর কথা শুনছো কেনো?”

“শুনবো না মানে?আমার মেয়ে ওরে পছন্দ করে!”

“কিন্তু ও বিবাহিত এখন!”

রুবি জোর গলায় বললো,”আমি মানি না!”

“দেখ রুবি,তোর সব আবদার মানি বলে এটা মানব এমন বোকা নই! বেড়াতে এসেছিস!চুপচাপ ঘুর!”

বলেই বেরিয়ে গেলো।

“মা দেখলে?”

“ওই রোদেলা আমার ছেলের ব্রেইন ওয়াশ করছে।তুই চিন্তা করিস না,ব্যাবস্থা একটা হবেই!”

________
“তোরে ভুলে যাওয়ার লেগি আমি ভালোবাসি নী!সব ভেঙ্গে যাবে এভাবে হায় ভাবতে পারিনি!”

“তোর ফাটা গলার গান থামাবি নিশু!”

“তুই আমার গলাকে ফাটা গলা বললি তুলি!”

“তা নয়তো কি,রাস্তা ঘাটের কুকুর ও কানে হাত দিয়ে হাঁটছে!”

“আমার এই শিল্পী কণ্ঠ তোরা বুঝবি না রে পাগলা!”

“একদম কি দারুন কণ্ঠ,যে কাকের আওয়াজ ও এর থেকে ভালো লাগে!”

তুষার এর কথায় ভ্রু কুচকে তাকালো নিশাত!

“কি কইলেন?”

“কাকের কাকা শব্দ ও তোমার গলার থেকে সুন্দর!বলি রাস্তা ঘাটে এমন শব্দ দূষণ কেনো করছো?”

“আমার বাপের রাস্তা এটা!”

“নাম লিখা আছে?”

নিশাত আশে পাশে খুঁজে একটা ইট নিলো।রাস্তায় বড় বড় করে ওর বাবার নাম লিখে বললো,”দেখলেন?”

তুষার মিন মিন করে বললো,”ফা’জিল মেয়ে”

তুলি এদের থামাতে বলে উঠলো,”কোথাও যাচ্ছিলেন তুষার ভাই?”

“হুমম,বাজারের দিকে!”

“ওহ তাহলে যান,আল্লাহ্ হাফেজ।” বলেই নিশাত কে নিয়ে কেঁটে পড়লো ।

______
“এই চম্পা,আমার চা দিয়ে যা!”

নিচ থেকে চম্পা জবাব দিল ,”আইতাছি রোদ আফামুণী!”

“ময়দা আর্টিস্ট এর বাচ্চা!কখন থেকে এটাই শুনছি!”

“এই লন আফা চা!”

“এতক্ষণ লাগে!”

“কাম করতেছিলাম!”

“তোর কাজ মানেই শাহরুখ খানের মুভি দেখা!”

চম্পা লজ্জিত ভঙ্গিমায় বললো,”হেরে মোর মেলা ভাল্লাগে !”

“হো ভালা!বিদায় হো এখন!”

“আপনার আর কিছু লাগবো আফামুনী?”

“লাগলে ডেকে দিবো!”

“আইচ্ছা!”

চম্পা চলে গেলো।রোদ পায়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এই পা নিয়ে এখন বেড রেস্ট এ রেখে গেছে রোদ্দুর।উঠলেই বলেছে পা ভেঙে দিবে।উফ কি বিরক্ত!

হাসি মজা খুনসুটিতে কেঁটে গেলো ছয়টা মাস।এর মাঝে যেমন রুবির কুট’নামি ছিল তেমনই ছিল বিনোদন।রোদেলা রোদ্দুরের একে অপরের প্রতি অনুভূতিও গাঢ় হয়েছে।কিন্তু হয়তো এখনও দুইজনেরই তা অজানা!

সকাল বেলা রোদ্দুরের রুম ঝাড়ু দিচ্ছে চম্পা আর মনের সুখে গান গাচ্ছে।

“আমি চিকনি চামেলী,চিকনি চামেলি!”

রোদ্দুর ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,”ওয় ময়দা আর্টিস্ট ভালো করে রুম গুছিয়ে রাখ!”

“আইচ্ছা!”

রোদ্দুর ঢুকে গেলো রোদেলা আপাতত রুমে নেই।রুম পরিস্কার করতে গিয়ে চম্পা ওয়াল ক্লথ এর নিচে কিছু কাগজ নিচে ফেলে দিল।তখনই নোভা এলো।

“চম্পা!কাগজ গুলো ফেললি কেনো?”

“ভুলে পইড়া গেছে!”

“তুই ও না!”

বলে উঠিয়ে চোখ রাখতেই ও স্তব্ধ!কাগজ গুলো হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালো ও!অশ্রু নয়নে তাকিয়ে আছে!তখন রোদ্দুর বেরিয়ে এলো।নোভার হতে ডিভোর্স পেপার দেখে থমকে গেলো ও! আস্তে করে নোভার কাছে গেলো!

“আপু!”

নোভা সজোরে ওর গালে থা’প্পড় মারলো। রোদেলা ও তখনই রুমে আসলো।

হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,” আরে নোভা আপু তুমি এখানে?”

নোভা ওর দিকে তাকিয়ে ওকেও থা’প্পড় মারলো।রোদ স্তব্ধ!এই প্রথম নোভা ওর গায়ে হাত তুললো! ছল ছল চোখে তাকাতেই নজর পড়ল ডিভোর্স পেপারের দিকে ! যা বুঝার বুঝে গেলো ও!নোভা কিছু না বলে পেপার হাতে বেরিয়ে গেলো।রোদেলা রোদ্দুর দুই জনেরই নজর নিচে! ঝড় উঠবে আজ! তুফানও হতে পারে।তবে বাইরে নয় বাড়িতে!

রোদ্দুর রোদেলার এখন কার পরিস্থিতি,”চমলককো!”

#চলবে