রঙীন ফানুস (থ্রিলার সিরিজ) পর্ব-০২

0
2500

#রঙীন ফানুস (থ্রিলার সিরিজ)

#২

“দু-হাত মুঠো করে বিছানার চাদর খামচে ধরলো পরী।”

ঘোমটার ফাঁকে উনাকে দেখলো, দুচোখ যেনো আজ সার্থক পরীর।
শুভ্র পাঞ্জাবিতে উনাকে আরো বেশি চমৎকার লাগছে। উনার পরিহিত শুভ্র রঙটা ‘ই’ যেনো নিজেকে আজ সার্থক মনে করছে। শুভ্র রঙে উনাকে শুভ্র দেবতুল্য মনে হচ্ছে।

“পরীর আজ ইচ্ছে করছে, ভীষণ ইচ্ছে করছে নিজেকে নতুন রঙে রাঙাতে।দু-হাত ভরে কাউকে আজ ভালোবাসতে,ভালোবাসায় নিজেকে নিয়ে হারিয়ে যেতে অজানা পথে।”

রাজ গুটি গুটি পায়ে পরীর পাশে এসে বসলো।
“কোমল স্পর্শে পরীর ঘোমটা টা সরালো।
সরিয়ে মাশাআল্লাহ বললো।”

“কোমল স্পর্শ পেয়ে পরী কেঁপে উঠলো।
পরীর আজ ভীষণ রকম অনূভুতি হচ্ছে রাজের বুকে মাথা রেখে একটু কোমল স্পর্শ পেতে।”

“রাজের মুখের দিকে তাকালেই বুঝা যায়, উনি কতো টা অমায়িক, কতো টা বাধ্যগত মা-বাবার।
রাজকে স্বামী হিসেবে পেয়ে জীবন যেনো আজ ষোলো আনায় পূর্ণ হলো।”

“রাজ পরীর হাত ধরে নিজের হাতে রাখলো। ”

পরী কিছুটা কাঁপতে লাগলো।

“রাজ পরী কে অভয় দিয়ে বললো,” এতো কাঁপা-কাঁপি করছো কেনো তোমার কাঁপা-কাঁপিতে হয়তো পুরো পৃথিবী নড়েচড়ে উঠেছে। ”

“পরী রাজের কথা শুনে লজ্জায় হাতগুলো মুষ্টি বদ্ধ করে রাখলো।”

“রাজ মুচকি হেসে বললো, ” আহা আমার বউ তো এমনি সুন্দরী, লজ্জা পেয়ে দেখছি দ্বিগুণ সুন্দরী হয়ে যাচ্ছে।”

বধূ এতো টা লজ্জা পেলে কী হবে। পরে কিন্তু বাধা মানবো না।
স্বামী স্ত্রী হলো আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাবো। সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে থাকবো।
তোমার দু’চোখে কখনো অশ্রু আসতে দেবো না।
যদিও আসে আমার শীতল চুম্বনে সব ভুলিয়ে দেবো।
.
.

“কথাগুলো পরীর বুকে এসে লাগছে।
কথাগুলো তে যেনো মধুর স্পর্শের ছোঁয়া লেগে আছে। না চাইতেও যেনো জল এসে দু’চোখে ভীড় জমাতে লাগলো।
পরীর ইচ্ছে করছে ভালোবাসার অতলে ডুবে যেতে।
যেখানে থাকবে একে অপরের জন্য মায়া,থাকবে রাশি রাশি প্রেম, ভালোবাসা।
.
.

“রাজ পরীর হাত ধরে আরো কাছে গেলো।
পরীর বুক টার ধুকপুক যেনো বাড়তে লাগলো।
রাজ মুখ টা কানের কাছে নিয়ে বলতে লাগলো, পরী তুমি সত্যি পরীর চেয়েও সুন্দরী। তোমার মতো পরীর জন্য সাত বার জন্ম নিতে রাজি।
তোমার হাত ধরে আমার এ মন আজ বাকরুদ্ধ।
জানি না কেনো এতো টানছো তোমারি মায়াতে।
তোমার স্বপ্নকে চাই আমি দেখতে।
শিউলি ফুলের মালা দিয়ে ভালোবাসা এঁকে দেবো তোমার ললাটে,তোমার মায়া ভরা কেশে, তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যাবো আমার মেঘডুবি ছোট্ট নৌকোতে।”

“তারার দেশে খেলবো দু’জন লুকোচুরি, ভালোবেসে গেঁথে দেবো ইতিহাস।
ইতিহাসের পাতায় লেখবো দু’জনার নাম।”

“থাকবে বলো প্রিয়তমা আমার পাশে সারাটি জীবনভর।”
.
.
পরী কি বলবে, কি ভাববে কিছুই বুঝতে পারছে না।
মন কেও কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছে না, রাজ কী সত্যি সত্যি কথাগুলো বলছে?
না-কি এক নারী দেহ ভোগের জন্য এই প্রেম গাঁথা কথাগুলো প্রকাশ করছে।

নাহ…!

তা হতে যাবে কেনো?
উনি শিল্পপতি বাবা-র একমাত্র ছেলে বলে কথা, যে একজন সুদর্শন সুপুরুষ, তাঁর কি কখনো নারী দেহের অভাব থাকতে পারে।”

“হয়তো কথাগুলো উনি মন থেকেই বলছেন। আমিই হয়তো ভুল বুঝছি উনাকে।”

” হঠাৎ উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
আমি পুরোপুরি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
উনার স্পর্শে আমি চমকে উঠলাম।
কি করবো, না করবো ভেবে পাচ্ছি না।
আমার এখনো বিশ্বাস ‘ই’ হচ্ছে না যে, উনি কি কথাগুলো আদৌ মন থেকে বলেছেন, নাকি আমার রূপের আগুনে উতালপাতাল হয়ে নিজেকে পুড়তে চাইছেন।”

“কিছু একটা ভেবে ভীষণ ভয় হতে লাগলো। যদি সত্যিটা উনি জেনে যায়?
তাহলে তো আমার সেই পুরনো কপাল।
এবার হয়তো বাবা আর সহ্যই করতে পারবে না।
আমিও আমার হাত দিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমিও উনাকে কথা দিলাম, আপনি আমাকে যতোদিন আপনার পায়ের নিচে জায়গা দিবেন, আমিও ততোদিন আপনার সাথেই থাকবো।”

“পরীর কথাগুলো শুনে, গভীর ভালোবাসা পেতে চাইছে রাজের মন।”

“রাজ আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো পরী কে.।
রাজ পরীকে গভীরভাবে বললো,পরী তোমার জায়গা আমার পায়ে নয়,তোমার জায়গা আমার এই বুকে।”

“পরীর কেমন যেনো লাগছে, ভয়ে পাগুলো অবশ হ’য়ে আসছে,মনটা কেমন যেনো কু ডাকছে।পরীর সত্যটা জানলে রাজ যদি এখন বের করে দেয় তাহলে কী হবে পরীর?”
“পরী মনে মনে ভাবলো, রাজকে পরীর অবশ্যই থামাতে হবে।
নয়তো সব ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।”
.
.

“পরী আস্তে করে সরে আসতে চাইলো।
কিন্তু রাজ এতো এতো শক্ত করে ধরে রেখেছে যে, রাজ না চাইলে পরী ছুটাতে পারবে না।”

“তাই পরী নিজ থেকেই রাজ বলে ডেকে উঠলো। ”

“পরীর কথায় রাজ কোনো সাড়া দিলো না।
পরী আবারো রাজ কে বললো,রাজ আপনি কী আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন, আমি একটু পানি খাব,ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছে। ”

“রাজ পরীকে ছেড়ে দিয়ে পরীর মুখপানে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ”
রাজ নিজে নিজে কিছু টা লজ্জা পেয়ে পরী কে সরি বললো।”

“পরী পানি পান করে রাজের পাশে এসে বসলো।”

রাজ পরীর মুখ দেখে কিছু একটা ভেবে বললো, “ঘুমিয়ে পড়ো রাত্রি প্রায় শেষ হতে চললো। ”

“পরীও আর কথা বাড়ায় নি, শুয়ে পড়লো।শুয়ে শুয়ে এতোক্ষণ ঘটে যাওয়া সব কিছু নিয়ে ভাবছে।
পরী ভাবতেই পারছে না, এতোক্ষণ ঘটে যাওয়া সব কিছু কী সত্যি সত্যি, না-কি কোনো স্বপ্ন ছিলো।”

“আর রাজ, উনাকেই বা আমি কিভাবে বলবো,কয়দিনই বা নিজেকে এভাবে আড়ালে রাখবো।
সত্যিটা তো একদিন সবাই জেনে যাবে।
পরী এসব ভাবতে ভাবতে তন্দ্রা লেগে আসলো।”
.
.

“ফজরের আজান হলে,রাজ দু-চোখ খুলে পরীর দিকে তাকিয়ে রইলো।
বাহিরের আবছা আলোতে পরী কে মায়াবী পরীর মতো লাগছে।দু-হাত দিয়ে ছোঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
রাজ মুচকি হেসে পরী কে জাগালো।”

“পরী চোখ ঢ’লে রাজের মায়া ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,নামাজ পড়বেন না চলুন।”

“রাজ মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি জানিয়ে পরীর হাতে হাত রেখে দু’জন এগিয়ে গেলো।”

“দু’জন অজু করে ফজরের নামাজ আদায় করে নিলো। আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে শুকরিয়া জানালো।”

দু’জন বিছানায় গিয়ে বসলো।

“রাজ পরীর কোলে মাথা টা রেখে পরীর পানে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো। ”

“জানো পরী আমি খুব করে চাইতাম, আমি যখন বিয়ে করবো,আমার সদ্য বিবাহিত পরীর দিকে তাকিয়ে ভোর হওয়া দেখবো।
খুব ভোরে উঠে দু’জন হাঁটতে বের হবো।
পরী শুনতে পাচ্ছো, আমার কথাগুলো।”

“পরী হুম বলে সাড়া দিলো।”

“রাজ আবার বলতে শুরু করলো, আমি ভাবতেই পারি নি, আমার বউ সত্যি সত্যি পরী হবে। রাজ পরীর গালে হাত রাখলো।
রাজের ছোঁয়া পেয়ে পরী যেনো কেঁপে উঠলো। ”
“পরী বলো তো তোমার দু’চোখে কী জাদু আছে, শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।
যেনো পুরো পৃথিবীটাই এখানে।
আচ্ছা তুমি কী জাদু জানো,এই রাজ চৌধুরী কতো মেয়ে কে দেখেছে, কিন্তু কাউকে মনের চোখ দিয়ে ভালোবাসতে পারেনি।
আর তোমাকে এক দেখায় মনের পিঞ্জিরায় জায়গা দিয়ে দিয়েছি।”

“পরী লজ্জা পেয়ে মুখ লুকালো রাজের বুকে।”
এভাবে কিছুক্ষণ থেকে পরীর কিছু একটা মনে পড়ে। রাজ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড় দিলো।”

“ব্যাপারটা রাজ বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে পরীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।”

চলবে——