রঙীন ফানুস পর্ব-০৪

0
2074

#রঙীন ফানুস
#পর্ব-০৪
#আফরিন ইভা

–“নিঃশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে পরীর।
পরী পারছে না জোরে চিৎকার দিতে।
পরী আর সহ্য করতে না পেরে
চেঁচিয়ে উঠলো , ” কে আপনি, আর এভাবে চেপে ধরেছেন কেন? প্লিজ ছাড়ুন নয় তো এখন জোরে চিৎকার দেবো।

“পেয়ারি ভাবি জী এতো রাগ করছেন কেনো? এতো অবাক হওয়ার কি আছে,আমিনআপনার দেবর জী। ”

“পরী পেছনে তাকিয়ে যেনো আকাশ থেকে পরলো। লম্বা সুঠাম দেহের এক ছেলে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে হেসে কথাগুলো বলছে।
একে তো পরী এই ছেলে কে চেনে না, তাঁর উপর আবার চোখ চেপে ধরেছে তাও অন্যের বিবাহিত স্ত্রীর। ”

–“ছিহ!”

“লোকটা আসলেই নির্লজ্জ বটে।
পরীর তো রাগে গাঁ গুলিয়ে যাচ্ছে।
শ্বশুরবাড়ি না হয়ে যদি অন্য জায়গা হতো এতোক্ষণে কানের নিচে দু’একটা দিয়ে দিতো। ”

“পেয়ারি ভাবী জি আপনি এখানে?
আর আমি আপনাকে খুঁজে খুঁজে পাগল হয়ে যাচ্ছি।
আপনার রূপের এ-তো এ-তো প্রশংসা শুনেছি যে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছুটেই চলে এসেছি । এসে তো দেখছি সত্যি সত্যি পরী আপনি। চোখের দেখা না দেখলে বিশ্বাসই হতো না।
আপনার রূপে যেনো আগুন জ্বলে।
প্রতিটি পুরুষের মনের চোখে আপনি অনিন্দনীয়, অতুলনীয়, আগুনের ফল বিশেষ। যাকে মনের পিঞ্জিরায় জায়গা দিতে মহাপুরুষেরা প্রস্তুত।”

“কথাগুলো শুনে পরীর তো খুব ইচ্ছে করছে এই লোককে এখুনি আগুনে পুড়িয়ে ছাই করতে।
লোকটা কেমন দুষ্টু দুষ্টু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।পরীর পুরো শরীরে যেনো কেউ মরিচ বাঁটা লাগিয়ে দিয়েছে।”

“লোকটা আবার বলতে শুরু করলো, ভাবি জী আমি রাফি।”
“আপনি হয়তো আমাকে চেনেন না, তাই-না? ”
“আমি রাজের কাজিন। ”
“আমরা একসাথেই লন্ডনে পড়াশোনা করেছি। ”
“ভাবি আমি কিন্তু আপনার দেবর।
বলেন দেখি ভাবি কার বেশি দাবী? ”

“পরী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,আমার একটু কাজ আছে নিচে চলুন মা নিচেই আছে।”

পরী অনেক দ্বিধান্বিত মনে নিচে গেলো। গিয়ে দেখলো রাজ সোফায় বসে বসে কফি খাচ্ছে। কফিতে এক চুমুক দিচ্ছে আরেক নজর ল্যাপটপে রেখে গভীর মনোযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ”
“কেউ যে সামনে আছে সে দিকে কোনো খেয়ালই নেই। ”

“রাফি, রাজ বলে যেই চিৎকার দিলো, রাজ ভয় পেয়ে ল্যাপটপ ছেড়ে দিতে গিয়েও ধরে ফেললো।”
“রাফি রাজ কে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।”
“জড়িয়ে ধরে অনেক গুলো কিস দিয়ে দিলো। ”

“রাজ পকেট থেকে টিস্যু বের করে গাল মুছতে লাগলো।”

“এদিকে পরী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো,ছেলে হয়ে ছেলে কে কিভাবে এতোটা গভীর চুম্বন করে।
—ছিহ!
লোকটা দেখছি সত্যি লুচু।
পরী যেনো এখান থেকে গেলেই বাঁচে।
পরী চলে যেতে লাগলে,রাজ পরী বলে ডাকলো।”

“রাজের ডাকে পরীর বুক টা কেঁপে উঠলো। বুকে যেনো প্রশান্তির ছোঁয়া দিতে শুরু করলো।
পরী কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো, ”
আপনাদের কী কিছু লাগবে? ”

রাজ একটু রাগান্বিত স্বরে জবাব দিলো,” পরী তোমাকে না বললাম রেডি হতে।
তুমি তো দেখছি রেডি হওনি।
রাজ পরী কে আদেশের স্বরে বললো,” এখুনি যাও তারাতাড়ি রেডি হয়ে আসো।”
আর হ্যাঁ আমাদের কিছু লাগবে না, কিছু লাগলে বাসায় অন্যরা আছে ওদের ডেকে নিবো।”

“পরী মুখটা ফ্যাকাসে করে, উপরে চলে গেলো। উপরে গিয়ে দরজাটা আটকে দিলো। আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।
বিধাতা তুমি কোন আগুনে আমাকে পুড়ছো, আমার সাথে সাথে উনিও যে পুড়ছেন। বিরহের আগুনে আমি যে আর পারছিনা সহ্য করতে।হয় তুমি আমাকে সহ্য করার ক্ষমতা দাও নয়তো আমাকে উঠিয়ে নাও।
এই অবলীলায় আমি যে দুয়োরানী হয়ে থাকতে পারছি না আর।
আমার প্রতি কী সামান্যতম মায়া নেই তোমার? আমার প্রাণ টা বিসর্জন দিতে পারি রাজের জন্য। উনি যে আমার দেওয়া বিরহের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছেন।”

“রাজ ওর মা’কে ডেকে রাফি থাকবার সব ব্যাবস্হা করে দিলো।”

“রাজ নিজেও ভালো নেই। পরী কে কষ্ট দিয়ে নিজেও ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট পাচ্ছে। রাজ অবলীলায় ভাবলো, যে করেই হোক পরী কে আর কষ্ট দিবে না। পরীর মতো সুন্দরী, নরম মনের মানুষকে চাইলেও কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়।
রাজ তরি গড়ি করে উপরে গেলো।”
.
.
.

“আর এদিকে পরী কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। ”

“রাজ ইতস্তত বোধ করে বেশ কিছুক্ষণ পর দরজায় নক করলো।”

“বেশ কিছুক্ষণ এভাবে দরজা নক করেই গেলো রাজ, কিন্তু দরজা খোলবার কোনো নাম নেই।”

“রাজ ভয় পেতে লাগলো।”
“রাজ ঘামছে ভীষণ ঘামছে, ঘেমে একদম একাকার।”
” পৃথিবীর সব গরম যেনো রাজের আজ লাগছে। ”
“রাজ মাথা টা চেপে ধরলো।”
“নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে রাজের।
রাজ কিভাবে এতো টা সেলফিশ হতে পারলো।”
“কিভাবে পারলো পরী কে এতো টা কষ্ট দিতে।”
“রাজের ইচ্ছে করছে নিজের চুলগুলো সব ছিঁড়ে ফেলতে।”
“হাত মুষ্টিবদ্ধ করে যে-ই আঘাত করতে যাবে এমন সময় বিকট শব্দে দরজা খুলে গেলো।”
“দরজা খোলার আওয়াজে রাজের কলিজায় পানি আসলো।”
“রাজ কোনো দিক চিন্তা না করে রুমে প্রবেশ করলো। ”
“রুমে গিয়ে চোখ বুলিয়ে পরী কে খুঁজতে লাগলো। ”
“ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে পরী।”
“মুখে ভয়ার্ত রেখা, দু’চোখে জল চিক চিক করছে, যে কোনো সময় গড়িয়ে পরবে জল।”
“পরীর বিষাদ ভরা মুখ দেখে রাজের বুক টা ফেটে যাচ্ছে। ”

“রাজ আস্তে করে পরীর কাছাকাছি এগিয়ে গেলো।”

“রাজ যতো এগোচ্ছে পরী ততো পিছচ্ছে। পরী পিছাতে পিছাতে দেয়ালে গিয়ে পিঠ ঠেকলো।
হাতগুলো পেছনে রেখে দেয়ালের সাথে গাঁ ঘেষে দাঁড়ালো পরী।”

“রাজ পরীর কাছাকাছি গেলো,খুব কাছে।
দু’জনের নিঃশ্বাস একে অপরের উপর পড়ছে। রাজের নিঃশ্বাসে পরীর মন উতলা হতে লাগলো,হৃদয়ে পরশপাথরের দোলা দিতে লাগলো।”

“রাজ আলতোভাবে পরীর গালে হাত রেখে ডাকলো”
” পরী—-”
“কষ্ট দিয়েছি তাই-না? ”
“রাজের স্পর্শে পরী দু-চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলো।”
“পরী মনে মনে বলতে লাগলো
রাজ আমি তো কষ্ট পাইনি আপনার কথায়, কষ্ট তো ভিন্ন কারণে।”
“আপনি যে আমার মাদকতা,যে মাদকের নেশায় আসক্ত আমি। ”
“যাকে না পারছি ছাড়তে, না পারছি পান করতে। ”
“আমি যে আপনার বুকের আগুনেও মরে যেতে যেতে রাজি, শিশির ভেজা কোনো এক সকালে দেখা দেবো আলোক রশ্মি হয়ে,নয় তো গোধূলির রঙিন আলো হয়ে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেবো আপনার দু’চোখে, ছুয়ে দেবো ললাট গভীর স্পর্শে।
আপনি আমাকে আরো কাছে টেনে নিন আড়ষ্ট ভালোবাসা দিয়ে। ”
“এই বিরহে আমি যে দগ্ধ, যা আমি চাই না আর। সহিতে পারবোনা আর, রহিতে দেবো না তীব্র পোড়া কষ্ট। ”

“পরী — ”
“এই পরী শুনতে পাচ্ছো? ”

“পরীর গালে আরেকটি হাত রেখে আদুরে গলায় ডাকলো ”
“পরী—”
কষ্ট দিয়েছি খুব,সরি লক্ষীটি আর কষ্ট পেতে দেবো না, এই দেখো কান ধরেছি।”

“ফিট ফিট করে তাকালো পরী।”
“রাজ কে মন ভরে দেখতে লাগলো।”
“আবছা আলোতে রাজের মুখের আদল খানা উজ্জ্বল নক্ষত্র ন্যায় মনে হচ্ছে। ”
“রাজ কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে পরীর, খুব করে করছে। এতো এতো কাঁদতে ইচ্ছে করছে, চোখের জলে যেনো সকল দুঃখ মুছন হয়। ”
“পরী এদিক ওদিক সাতপাঁচ না ভেবে রাজ কে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলো। ”
“আজ কোনো বাঁধা মানবেনা পরী।”

“পরী—-”
“এ-ই পরী আমাকে কী ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না তোমার বলো তো?
“জানো পরী তুমি আমার স্বপ্নের পরী। ”
“কাছে এসে তোমাকে নাই বা পারলাম ভালোবাসতে, না-ই বা দিলাম ছুঁয়ে দিতে। ”
“কিন্তু তোমার পাশাপাশি তো আছি, থাকবো সব সময়। ”

“পরী শুনছো আমার কথাগুলো?”

“হু”, “পরী আস্তে করে জবাব দিলো ”

“রাজ আবার বলতে শুরু করলো, পরী তোমাকে নিয়ে রোজ আকাশে ঘুরতে যাবো পাখি হয়ে, তাঁরা হয়ে চাঁদে যাবো, সারারাত চাঁদের বুড়ীর সাথে দুষ্টুমিষ্টি গল্প করবো। ”
“আমি ভাবছি কী জানো? ”
“চাঁদের বুড়ী কে তোমার সতীন বানাবো।”

“পরী অভিমানে রাজের পিঠে আলতো করে কিল বসালো।”

“রাজ মুচকি হেসে পরীর হাতো ঠোঁটের স্পর্শ ছোঁয়ালো। ”

“পরী লজ্জা পেয়ে মুখ লুকালো।”

“রাজ আবার গভীর অনুভূতি নিয়ে বলতে লাগলো,আমি চাইনি তোমাকে কষ্ট দিতে। তবুও কেনো যে দিয়ে ফেলি বুঝতে পারি না পরী।”
“তবে এখন কথা দিচ্ছি তোমার কাছে আসবো না যতোক্ষণ তুমি না চাইবে।
কাছে এসে ভালো বাসবো না, যতোক্ষণ তুমি না চাইবে।”
“শুধু বলো ছেড়ে যাবে না? ”
“একটু দুঃখ তোমায় পেতে দেবো না।
রাজ পরীর মাথাটা তুলে চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বললো।”

“পরীও গভীর দৃষ্টিতে রাজের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।”

“অনুভূতিরা আজ মুগ্ধ হয়ে একে অপরকে দেখছে,বিষন্নতার শহরে আজ আলোর পরশ লেগেছে, মাদকতার ছোঁয়ায় হৃদয় আজ দগ্ধ হয়েছে। ”

“রাজ পরী কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে পরীর হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে এসে দাঁড়ালো।”

“বাহ”!

“আমার বউকে তো একদম হলুদ পাখির মতো লাগছে। ”
“এই ভরদুপুরে হলুদ পাখিকে নিয়ে বের হলে তো যে কারো নজর লেগে যাবে।”
“তারচেয়ে ভালো আমি একটা নজর ফোঁটা দিয়ে দেই।”

“রাজের কথা শুনে পরী দু’হাতে চোখ ডাকলো।”

“রাজ পরীর হাত সরিয়ে পরীর হাতে গভীর স্পর্শে চুম্বন দিলো।
যা পরীর হৃদয়ে শিহরণ বয়ে গেলো। ”

“হলুদ পাখি চলো বলে যে-ই বের হতে যাবে, এমন সময় দরজায় কাউকে দেখতে পেলো দু’জন। রাজ পরী দু’জনই অবাক।”
“রাজ অবাক হয়ে শুধু ভাবছে, আর একে অপরের মুখপানে চেয়ে আছে।

চলবে——