রহস্যময়ী লেডি কিলার পর্ব-৩+৪

0
303

#রহস্যময়ী_লেডি_কিলার
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৩

“আকাশ যে মাঝেমধ্যে তার মানুষের রূপ পাল্টে ভয়ানক ভ্যাম্পায়ারের রূপ ধারণ করে, সেটা কেউ জানুক আর না জানুক, রাজ কিন্তু সেটা ভালো করেই জানে। আই মিন আকাশের হিংস্রতা একবার জেগে উঠলে সে একাধিক মানুষের প্রাণ নিতেও একবার ভাববে না। তাই রাজ মুচকি একটা হাসি দিয়ে আকাশের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। “অন্যদিকে আকাশ ও রাজের হাসি দেখে মুচকি একটা হাসি দেয়। যেই হাসির রহস্য কিনা আকাশের ভিতরেই লুকিয়ে আছে। তবে সেটা সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। হয়তো আকাশ ও ভিতরে ভিতরে কিছু একটা প্ল্যান করছে। সেকেন্ড কয়েক যেতেই হাসি থামিয়ে দিয়ে সিসিটিভি ফুটেজটা হাতে তুলে নেয় দেখার জন্য। পুলিশ অফিসার মেমোরি কার্ডে করে সিসিটিভি ফুটেজ টা মুজাহিদদের কাছে পৌঁছেছে। আর মুজাহিদ সেটা আকাশের হাতে তুলে দেয়। আকাশ মেমোরি কার্ডটা ফোনের মধ্যে লাগিয়ে প্লে করবে, কিন্তু তার আগ মুহূর্তেই সে বলে উঠে,

–লেডি কিলার দেখি তুই আসলেই কে। আর তুই কোন জ্বলের মাছ। তুই যেহেতু আমার শরীরের জামা ধরে টান দিয়েই ফেলেছিস, তাহলে অবশ্যই মাঠঘাট বেঁধেই নেমেছিস খেলা করার জন্য। তাই আমিও একটু প্রিপারেশন নিয়ে নেই তোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য। অবশ্য আশা করি তোর সাথে পাঞ্জা লড়তে প্রিপারেশনের দরকার পড়বে না। তবে তারপরেও আমি ওভার কনফিডেন্স হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো না। কারন বিপরীত পক্ষের লোককে সব সময়’ই আমি সিরিয়াস নেই। যার কারনে আমার মধ্যেও সিরিয়াস ভাবটা থাকে। আর সেই সিরিয়াস ভাবটাই আমাকে বিজয়ের লক্ষ্যে পৌঁছায়। তারপর সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে শুরু করলাম। সিসিটিভি ফুটেজটা প্রথম থেকে নিয়ে শুরু করে শেষ পর্যন্ত শান্ত মন মেজাজ নিয়ে দেখেছি। কিন্তু ভিডিওটা শেষ হতেই আমার গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠেছে! কারন ভিডিওটাতে যা দেখলাম, তারপর কিছু বলার মতন অবস্থাতে নেই আমি! মাথা ঘুরতে আরম্ভ করেছে মেয়েটার এমন অদ্ভুত কর্মকান্ডে! কি করে সম্ভব এটা! একটা মেয়ে কি করে এমন অদ্ভুত কান্ড করতে পারে! কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে এমন কর্মকান্ড করা কখনোই পসিবল না! নাহ এই মেয়ের মধ্যে হয়তো কোনো অলৌকিক শক্তি আছে। হুম আমি শিওর এই মেয়ে কোনো সাধারণ মানুষ না। মেয়ে টাকে নিয়ে গভীর এক চিন্তা-ভাবনায় পড়ে গেলাম। বেশ কিছুক্ষণ মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা করেছি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হলো না। মনের ভিতরে সেই মেয়েকে নিয়ে জন্মানো অজানা প্রশ্নের উত্তর গুলো এখনো প্রশ্নই রয়ে গেছে। মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে মাথা জ্যাম খেয়ে গেছে। নাহ এখন আর ভাবা যাবে না মেয়েটাকে নিয়ে। না হয়তো শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বে। তবে ছেলেপেলেকে তার তালাশ করতে বলে দেই।
চিন্তা-ভাবনা মতন রুম থেকে বেরিয়ে এসে রাজ এবং বাকি সবাইকে বললাম, এই তোরা সবাই লেডি কিলারের তালাশ করতে বের হ। তখনি আমার দলের রিফাত নামক একজন ছেলে বলে উঠলো,

–ভাই কি ভাবে তালাশ করবো এই মেয়ের?
মেয়ের ব্যাপারে কিছুই আমরা জানি না! না আছে মেয়ের কোনো ছবি বা আইডেন্টিটি। আর না আছে মেয়ের কোনো সঠিক লোকেশন। তার উপরে
রাজ ভাই যেই ভাবে বর্ণনা দিলো সেই মেয়ের, তাতে করে কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না!

–হুম মেয়ের কোনো ছবি নেই। কারন সে কালো রেইনকোট পরিধান করে থাকে। তার উপরে মুখ ও ঢাকা থাকে। কিন্তু তাই বলে তো হাত গুটে বসে থাকলে চলবে না। মেয়ে আমাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। তো তোরা যদি তাকে খুঁজে বের না করিস, তাহলে আমার হার হবে।

–না ভাই আপনাকে হারতে দিব না আমরা। আমাদের যাই হবে হোক, আমরা সেই মেয়েকে খুঁজে বের করবোই।

–হুম কাজে লেগে পড় সবাই। আর রাজ মুজাহিদ কোথায়? তাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?

–ভাই মুজাহিদের মন খারাপ।

–ওমাহ কি হয়েছে ওর?

–ভাই সে নাকি পুলিশ অফিসারকে কথা দিয়েছিলো তার কিছু হবে না। আপনার বিষয়টা সে দেখবে। এবং তার পুরোপুরি জিম্মাদারী সে নিয়েছিলো। কিন্তু পুলিশ অফিসার আমাদেরকে লেডি কিলারের তথ্য দেওয়ায় লেডি কিলার তাকে মেরে ফেলেছে। তার জন্য সে নিজেকে দোষারোপ করছে। আর সাথে মন খারাপ করে বসে আছে।

–আরেহ এখানে মন খারাপ করার কি আছে। আমি তো তার কোনো ক্ষতি করিনি। মুজাহিদ হয়তো আমার উপরে ভিত্তি করে কথা দিয়েছিলো তাকে। কিন্তু পুলিশ অফিসারের খুন তো অন্যকেউ করেছে। তার জন্য সে নিজেকে দোষারোপ করে মন খারাপ করলে হবে নাকি। যা তাকে আমার সাথে এসে দেখা করতে বল।

–আচ্ছা ভাই।

–আমি আবার নিজের রুমে চলে আসলাম।
রুমে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই মুজাহিদ আমার রুমে এসেছে। কিরে মুজাহিদ তুই নাকি মন খারাপ করে বসে আছিস?

–ভাই কি করবো বলেন, পুলিশ অফিসারের জিম্মাদারী নিয়েছিলাম। কিন্তু বেচারা মারা গেলো।

–ঠিক আছে জিম্মাদারী নিয়েছিস। কিন্তু আমি তো তার কোনো ক্ষতি করিনি। তার ক্ষতি করেছে তো অন্যকেউ। তাহলে তোর কষ্ট পাওয়ার কারন কি?

–ভাই সেটা ঠিক আছে আপনার দিক থেকে কিছু হয়নি। কিন্তু এটা আমি শিওর যে সে আমার কারনেই মরেছে। সে আমাকে সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়ায় হয়তো লেডি কিলার তাকে মেরে ফেলেছে। তার মৃত্যুটা কিন্তু এই দিক থেকে আমার সাথে জড়িত।

–দেখ মুজাহিদ যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন এসব নিয়ে আফসোস করলেও সেটা ঠিক হবে না। তবে তুই চাইলে আফসোসের মাত্রা কমাতে পারিস সেই লেডি কিলারকে খুঁজে বের করে। বাকিদের মতন তুই ও তার খোঁজ লাগা। লেডি কিলারকে খালি একবার যাস্ট আমার কাছে এনে দে। না হয় তার ঠিকানা অন্তত খুঁজে বের কর। তারপর সেই মেয়ের ব্যবস্থা আমি করছি।

–ঠিক আছে ভাই আমি খোঁজ লাগাচ্ছি।

–হুম। আর শোন মন খারাপ করিস না।

–আচ্ছা ভাই।

–তারপর মুজাহিদ চলে গেলো। মুজাহিদ রুম থেকে বের হতেই রাজ তাড়াহুড়ো করে আমার রুমে ঢুকলো। রাজের এমন তাড়াহুড়ো দেখে তাকে জিজ্ঞাস করলাম, কিরে কি হয়েছে? তুই এমন তাড়াহুড়ো করছিস কেন?

–ভাই মিনিস্টার সাহেব আপনার জিমেইলে একটা ভয়েস মেইল পাঠিয়েছে। তার ঘনিষ্ঠ লোকদেরকে নাকি কেউ একজন গায়েব করে ফেলছে। মিনিস্টার সাহেবের মেইল দেখে আমি তিনাকে জিজ্ঞাস করি, কে এমন করছে তার ব্যাপারে কিছু জেনে থাকলে আমাকে ইনফর্ম করতে। তখন তিনি বলে তিনারা নাকি একটা সমাবেশে গিয়েছিলো। সেখান থেকে তিনার শুভাকাঙ্ক্ষীরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় মাঝপথে বিদ্যুৎ এর গতিতে কেউ একজন দৌড়ে এসে তাঁদের সবাইকে একত্রে নিয়ে ধোঁয়ার মতন বাতাসের সাথে মিশে গেছে। তারপর যেই রাস্তা থেকে উনার শুভাকাঙ্ক্ষীদের গায়েব করা হয়েছে, সেই রাস্তার ধারের একটা সিসিটিভি ফুটেজ তিনি আমাদেরকে পাঠিয়েছে।

–কিরে কি বলিস এসব!

–ভাই আপনি নিজের চোখেই দেখেন। এই যে আমি আমাদের কম্পিউটার থেকে মিনিস্টার সাহেবের মেইলের ছবি তুলে নিয়ে এসেছি। তার সাথে সাথে উনার পাঠানো সিসিটিভি ফুটেজ টাও নিয়ে এসেছি।

–দেখি সিসিটিভি ফুটেজটা প্লে কর।
রাজ আমার কথা মতন মোবাইল দিয়ে মিনিস্টার সাহেবের পাঠানো ভিডিওটা প্লে করলো। সেটা প্লে করতেই দেখি মিনিস্টার সাহেবের কয়েকজন লোক গাড়ি করে বাড়ি ফিরছিলো। কিন্তু মাঝ পথেই তাঁদের গাড়ি থামিয়ে কেউ একজন তাঁদের সবাইকে একসাথে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। আর যে তাঁদেরকে উঠিয়েছে, সেও সেই লেডি কিলারের মতন কালো রেইনকোট পরিধান করে আছে। তবে সে ছেলে। আর তার রেইনকোট টা কালো হলেও তার শরীর এক জাতীয় বৈদ্যুতিক আলো দেখা যাচ্ছে। যেটা কিনা তার তার সারা শরীরে জ্বলজ্বল করছে। তাকে সেকেন্ডের মধ্যে তড়িৎগতিতে দৌড়ে আসতে দেখলাম গাড়ির সামনে। তারপর গাড়ি থামিয়ে সবাইকে একত্রে উঠিয়ে নিয়ে বাতাসের আগে গায়েব হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেনো পৃথিবীর সব চাইতে তীব্র গতির বিমান তার যাত্রা শুরু করছে। এসব দেখে আমার মাথার সেন্স পুরোপুরি নড়ে গেছে! কারন কি করে সম্ভব এটা! একটা মানুষ কি করে বুলেট গতিতে দৌড়ে গায়েব হয়ে যেতে পারে! যার কদম মাটিতে পড়ার আগেই সে গায়েব হয়ে গেছে! আমি এসব দেখে চমকে আছি! তখনি পাশ থেকে রাজ বলে উঠলো,

–ভাই এবার বিশ্বাস হয়েছে আপনার? আপনি তো সব কিছুই নিজের চোখে দেখেছেন। গতকাল আর আজ মিলে দুইটা সিনক্রিয়েট হয়েছে। ভাই বিশ্বাস করেন এসব দেখে আমার নিজের উপর থেকে আস্থা উঠে গেছে। আমার মনে হচ্ছে যেনো পৃথিবীতে মানুষের সাথে ভিন গ্রহের এলিয়েনরাও বসবাস করতে শুরু করেছে। না হয়তো বান্দরের বাচ্চাটা চোখের পলক পড়ার আগেই কি করে গায়েব হয়ে যায়।

–রাজ কিছু একটা তো ঘটতেছে আমাদের অগোচরে। তোরা সবাই সাবধানে থাক। আর তাঁদের খোঁজ লাগা। পরে বাকিটা আমি দেখবো।

–ঠিক আছে ভাই।

–হুম এবার নিচে চলে যা। আমি একটু শুয়ে রেস্ট করবো। আমার মাথা কেমন যেনো ভাড় হয়ে আছে।

–ওকেহ ভাই।

–রাজ নিচে চলে গেলো। আর আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসব কিছু নিয়ে ভাবতে আরম্ভ করলাম। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে গেছি। এক ঘুমে চোখ খুলেছে সকাল বেলায়। মাথা এখন প্রচন্ড হালকা লাগছে। তবে রাতের ব্যাপার গুলো এখনো আমার ভিতর থেকে পুরোপুরি বের হয়নি। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা পানি করে নিলাম। তারপর শান্ত মেজাজে গতকালের বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ভাবতে কলেজে চলে এলাম। প্রতিদিনের ন্যায় গার্ডরা আজো সাথে এসেছে। আমি আমার মতন গাড়ি থেকে নেমে কলেজের ভিতরে প্রবেশ করলাম। কলেজের ভিতরে প্রবেশ করতেই প্রথম বর্ষের সেই মেয়েটা আমার সামনে এসে বললো,

–এই যে মিস্টার, আপনাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? কি নিয়ে এতো চিন্তা করছেন যে আপনার চোখে মুখে তা ফুটে উঠেছে।

–এই মেয়ে আমি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত না। সো তুমি গিয়ে নিজের কাজ করো।

–আমি তো নিজের কাজই করছি। আর দেখুন আপনি যে কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত সেটা আপনি অস্বীকার করলেও আমার বুঝতে বাকি নেই।

–আচ্ছা আমি চিন্তিত হই আর যাই হই না কেন, তা দিয়ে তোমার কাজ টা কি?

–আমার অনেক কাজ।

–এই মেয়ে অনেক কাজ মানে?

–এতো কিছু তো বলা যাবে না। তবে এটুকু বলতে পারি আপনার চিন্তিত ভাবটা আমি দূর করতে পারবো।

–কি ভাবে দূর করবা শুনি?

–আপনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কোষে একটা চুমু দিব। যার ফলে আপনার মাথা সারাদিন বিটিভির মতন ঝিরঝির করবে। ইউ ব্লাডি কিউট মাই সুইটহার্ট। তখন দেখবেন আমি ছাড়া আর কোনো চিন্তাই আপনার মাথায় আসবে না। তখন বিটিভির মতন সারাদিন ঝিরঝির করবেন, আর আমার কথা ভাববেন। হি হি…

নতুন বর্ষের মেয়েটা আকাশকে এই কথা বলেই ভো করে একটা দৌড় দিয়ে আকাশের সামনে থেকে পালিয়ে যায়। আর অন্যদিকে আকাশ মেয়েটার কথা শুনে হাবলার মতন সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে!
সে যেনো পুরোপুরি বোবা হয়ে গেছে! আর মেয়েটা তাকে গাধা বানিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে।

চলবে….

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।

#রহস্যময়ী_লেডি_কিলার
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৪

–“ইউ ব্লাডি কিউট মাই সুইটহার্ট। তখন দেখবেন আমি ছাড়া আর কোনো চিন্তাই আপনার মাথায় আসবে না। তখন বিটিভির মতন সারাদিন ঝিরঝির করবেন, আর আমার কথা ভাববেন। হি হি…

নতুন বর্ষের মেয়েটা আকাশকে এই কথা বলেই ভো করে একটা দৌড় দিয়ে আকাশের সামনে থেকে পালিয়ে যায়। আর অন্যদিকে আকাশ মেয়েটার কথা শুনে হাবলার মতন সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে!
সে যেনো পুরোপুরি বোবা হয়ে গেছে! আর মেয়েটা তাকে গাধা বানিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে। মেয়েটা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আকাশ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

–কিরে ভাই কি হলো এটা! মেয়েটা হটাৎ আমার সামনে এমন আচরণ করলো কেন! ওর মাথায় কি সিট টিট আছে নাকি কোনো আল্লাহ জানে! নাহ ওকে কলেজ শেষ ধরে জিজ্ঞাস করবো কাহিনী টা কি। তারপর উল্টা পাল্টা কিছু হলে থাপড়ে কান পট্টি গরম করে দিব একদম। বেত্তুমিজ মেয়ে কোথাকার। ওর কতো বড় সাহস, যে সে আমাকে গাধা বানিয়ে দিয়ে চলে গেলো। দ্বারা কলেজ টাইম টা শেষ হোক খালি। তারপর তোকে দেখছি। তারপর সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে ক্লাসরুমে চলে গেলাম। কিন্তু মাথার মধ্যে এখনো সেই মেয়ের সিনটা ঘুরপাক খাচ্ছে। এরমধ্যে স্যার এসে ক্লাস শুরু করেছে। কিন্তু স্যারের দিকে আমার কোনো খেয়াল এই নেই। মাইন্ড পুরো ডিসট্রাক্ট হয়ে গেছে। আমি যে ক্লাসে বসে বেখেয়ালিপনা করছি, সেটা স্যার খেয়াল করেছে। তাই তিনি আমার নাম ধরে একটু জোর গলায় বলে উঠলো,

–এই আকাশ তোমার মন কোথায়?
আমি ক্লাসে লেকচার দিচ্ছি। আর তুমি কিনা ক্লাসে বসে বেখেয়ালিপনা করছো।

–স্যারের মুখে হটাৎ করে এমন ধরনের কথাবার্তা শুনে মাথার রগ চোটে গেছে। এমনিতেই হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে মাথা জ্যাম খেয়ে আছে। তার উপরে স্যার নিজের গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে আরো ভয়ানক ভাবে জ্যাম খাইয়ে দিয়েছে মাথার মধ্যে। তাই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। তারপর টেবিলের মধ্যে ধ্রাম করে হাত রেখে স্যার কে বললাম, স্যার সমস্যা কি আপনার?
.
আকাশের ভয়ানক রূপ দেখে স্যারের কলিজা থেকে যেনো সমস্ত পানি শুখিয়ে গেছে! তাই তিনি গলার স্বর একদম নরম করে আকাশকে বলে,

–না,না কোনো সমস্যা না। আসলে আকাশ ভুল হয়ে গেছে আমার। আমি আসলে হুট করে কি বলতে কি বলে ফেলেছি তা নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না! প্লিজ আমায় মাফ করে দাও।
.
স্যার আকাশের কাছে মাফ চেয়ে তড়িঘড়ি করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। কারন আকাশের আচরণে চরম ভয় পেয়েছেন তিনি। “অন্যদিকে স্যার যেতেই আকাশ চুপচাপ আবার বসে পড়ে। সে নিজের সিটে বসে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তার মাথা পর্যায়ক্রমে আরো বিগড়ে যায়। তাই সে স্যারের মতন করে কাউকে কিছু না বলে ব্যাগ কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়ে। তারপর ক্লাস থেকে বেরিয়ে কলেজের ফাঁকা একটা জায়গায় দেয়াল টাইপ কিছু একটার উপরে আধো বসা অবস্থায় বসে আপন মনে কিছু একটা ভাবতে থাকে। তখনি আকাশের সামনে দিয়ে কলেজের একটা ছেলে হেঁটে যায়। আকাশ তাকে দেখে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাস করে,

–এই তোর নাম কি রে?
আর কোন বর্ষে পড়িস তুই?

–ভাই আমার নাম তুহিন। আমি দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট।

–আচ্ছা শোন। নতুন বর্ষের ক্লাসে গিয়ে দেখবি একটা মেয়ে হালকা গোলাপি রঙের জামা পরিধান করে এসেছে। ম্যাম বা স্যার যেই থাকুক না কেন, তিনাকে বলবি আমি বলেছি সেই মেয়েটাকে কিছুক্ষণের জন্য ছুটি দিতে। আমার তাকে প্রয়োজন।

–ঠিক আছে ভাইয়া।
.
তারপর ছেলেটা আকাশের কথা মতন অনার্স প্রথম বর্ষে গিয়ে দেখে একজন ম্যাম ক্লাস নিচ্ছে। তাই সে ম্যামকে সালাম দিয়ে বলে,

–ম্যাম ঐ যে আপু টাকে কিছু সময়ের জন্য ছুটি দিন। তিনাকে একটু প্রয়োজন আছে।

–নাহ এখন কোনো ছুটি টুটি হবে না। আর তুহিন তুমি কোন সাহসে ক্লাস চলাকালীন সময়ে এসে ওর জন্য ছুটি চাইছো? তোমার সাহস তো কম না দেখি।

–ম্যাম আপুকে দিয়ে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাকে আকাশ ভাই পাঠিয়েছে। প্রয়োজন হলো আকাশ ভাইয়ের।

–ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে ছুটি দেওয়া যায়। এই মেয়ে তোমার নাম কি জানি?

–ম্যাম আমার নাম অবনী।

–হুম অবনী তোমায় কেউ একজন জরুরী তলব করেছে। তুমি জলদি গিয়ে তার সাথে দেখা করে এসো।

–জ্বি ম্যাম।
.
তারপর তুহিন নামক ছেলেটা অবনীকে সঙ্গে করে নিয়ে আকাশের কাছে আসে। তারপর আকাশকে বলে,

–ভাই এই যে আপু।

–ধন্যবাদ তোকে। আচ্ছা শোন এবার কি কাজে বের হয়েছিস সেটা কর গিয়ে।

–আচ্ছা ভাই।
.
আকাশের কথায় তুহিন নামক ছেলেটা চলে যায়। ছেলেটা চলে যেতেই আকাশ অবনীকে কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে বলে,

–এই মেয়ে তোর নাম কি?

–আমার নাম অবনী।
আর আপনার নাম তো নিশ্চয় আকাশ তাই না?

–এই ফাজিল মেয়ে একদম চুপ। তোকে পাকনামি কে করতে বলেছে। আর আমার নাম কি সেটা যেহেতু জানিস এই, তাহলে এতো ভনিতা করছিস কেন?

–দুঃখীত।

–রাখ তোর দুঃখীত। তুই আমাকে এটা বল যে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে তুই আমাকে ঐ সববকি বলে গেছিস?

–আসলে আপনাকে টেনশনে দেখে ভালো লাগছিলো না। তাই ওসব বলেছি।

–আরেহ আমার টেনশন, এতে তোর ভালো না লাগার কি আছে শুনি?

–আমার অনেক কিছুই আছে।

–সেই অনেক কিছুটা কি শুনি।

–আমার আপনাকে ভালো লাগে। আপনাকে সেদিন প্রথম দেখেই আমার মাথার সিট নড়ে গেছে।

–এই মেয়ে থাপ্পড় চিনিস?
এক থাপ্পড়ে গালের সব কয়টা দাঁত ফালাই দিব।
তোর তো দেখি সাহস কম না। যেখানে কলেজের সমস্ত স্টুডেন্ট এবং শিক্ষকরা পর্যন্ত আমার সাথে কথা বলতে হুঁশ করে বলে, সেখানে তুই এসে আমার সাথে লুতুপুতু করছিস? তোর তো দেখি অনেক সাহস বেড়েছে।

–দেখুন আমার সাহস বরাবরের মতোই আছে। আর তাছাড়া আপনার সাথে কোথায় লুতুপুতু করেছি আমি? আপনি কি আমাকে সেই সুযোগ টুকু দিয়েছেন? আপনার ভিতরে যেই বদরাগ, তা দেখে এখনো সাহস ও তো করতে পারিনি লুতুপুতু করার জন্য। না হয় তো,

–না হয়তো কি?

–অনেক কিছুই করতাম। আপনাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতাম। হুট করে দৌড়ে এসে আপনাকে জড়িয়ে ধরতাম। হুট করেই এসে আপনার কোলে বসে পড়তাম। কিন্তু আপনার বদমেজাজের জন্য এমন কিছুই করার সাহস করতে পারছি না।

–মেয়েটার কথা শুনে মাথার মধ্যে মরিচা বাতি জ্বলছে। কারন একে তো ওর মধ্যে ডর ভয় বলতে কিছু নেই। দ্বিতীয়ত সে আমার সাথে লুতুপুতু করার সাহস পাচ্ছে পাচ্ছে না বলেও মুখ দিয়ে লুতুপুতু টাইপ কথাবার্তা বলছে। কি পদের মেয়েরে বাবা। ইচ্ছা করছে থাপড়ে কান পট্টি গরম করে দেই। এই অবনী শোন, তুই আমার ব্যাপারে কিন্তু এখনো ভালো করে কিছুই জানিস না। তো আগে আমার ব্যাপারে ভালো করে স্টাডি কর। তারপর অটোমেটিক তোর এই পাগলামি মাথা থেকে সরে যাবে। না হয়তো থাপড়ে কান পট্টি গরম করে দিব।

–আপনার ব্যাপারে স্টাডিজ করার কোনো প্রয়োজন নেই আমার। আর আপনি আমাকে মারতে চাইলে মারতে পারেন। আপনার ইচ্ছা মতন কোষে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে আমাকে আপনার বুকে টেনে নিয়ে চুমু খেলে আমি সব ভুলে যাবো।

–এই মেয়ে তোকে মনে হচ্ছে সত্যিই একটা শিক্ষা দিতে হবে। কারন আমার গা ঘেঁষার অনেক শখ দেখছি তোর।

–হুম অনেক শখ। আপনার একদম শরীরের সাথে মিশে যেতে চাই আমি। আপনার ঐ লাল টুকটুকে ঠোঁট জোড়ায় সাথে আমার ঠোঁট জোড়া একদম লেপ্টে দিতে চাই। প্লিজ আমায় মেরে হলেও আপনার কাছে টেনে নিন।

–মেয়েটার কথা শুনে ধৈর্যের বাঁধ পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে। তাই হুট করেই সজোড়ে একটা টান দিয়ে মেয়েটাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলাম। তারপর কোনো কথাবার্তা ছাড়া মেয়েটার কোমরে এক হাত দিয়ে চেপে ধরে তার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া লেপ্টে দিয়েছি। মেয়েটা একদম শান্তশিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেনো সে আমার ঘরের বউ। তার স্বামী তাকে কাছে টেনেছে। তাই সে বাধ্য বউয়ের মতন স্বামীকে সঙ্গ দিচ্ছে। এভাবে কিছুক্ষণ যেতেই কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে অবনীকে ছেড়ে দিলাম। অবনীকে ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরতেই দেখি তুহিন নামক সেই ছেলেটা আমাদের দিকে চাক্ষুষ নজরে তাকিয়ে আছে। যেটা দেখে কিনা আমার মেজাজ আবারো বিগড়ে গিয়েছে। তাই ছেলেটাকে ঝাঁজালো কন্ঠে বলে উঠলাম, এই তুহিন তুই এখানে কি করছিস রে?
.
ছেলেটা আকাশের ঝাঁজালো কন্ঠ শুনে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আকাশকে বলে উঠে,

–ভাই বিশ্বাস করেন আমি কিছুই দেখিনি।
আপনি প্লিজ আমার উপরে রেগে যাইয়েন না।
.
ছেলেটার কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিমা দেখে অবনী সেই ছেলেটাকে বলে উঠে,

–এই তুহিন ভাইয়া আপনি তারাতাড়ি এখান থেকে চলে যান। আমি উনাকে দেখছি।
.
অবনীর কথায় তুহিন নামক ছেলেটা চটজলদি সেখান থেকে কেটে পরে। আর অবনী তখন আকাশের হাত আলতো করে চেপে ধরে আকাশকে বলে,

–আরেহ আপনি খামোখা উনার উপরে রাগ দেখিয়ে কি লাভ বলুন? উনি তো কিছু করেনি। কারন এটা তো রাস্তা। এখান দিয়ে মানুষ চলাচল করবে সেটাই স্বাভাবিক। আমরা এনা পথের মাঝে বসে রোমান্স করছি। ভুল টা তো আমাদেরই তাই না। তাই আপনি প্লিজ শান্ত হন। এতো রাগ দেখাতে হয় না। প্লিজ মাথা ঠান্ডা করুন।
.
আকাশ অবনীর কথায় কেমন যেনো হয়ে যায়!
আকাশের ভিতরের সমস্ত রাগ অবনীর কথায় মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেনো গায়েব হয়ে গিয়েছে! তাই আকাশ এবার শান্ত মেজাজে অবনীকে কাছে টেনে নিয়ে তার কোমরে জড়িয়ে ধরে। পরে তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের কোলের মধ্যে বসায়। অবনীও আকাশকে ভালো মন্দ কিছুই বলে না। সে চুপচাপ আকাশের আচরণে সাড়া দিচ্ছে। “অন্যদিকে আকাশ অবনীকে কাছে টানতেই তার মধ্যে এক ধরনের নেশার ঘোর লাগে। তাই সে অবনীর ঘাড়ে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে অবনীর চুলের ঘ্রাণ নিতে আরম্ভ করে। আকাশের এমন আচরণে অবনী এবার তাকে বাঁধা দিয়ে বলে,

–এই যে মহাশয়, শুরুতে তো রাগ দেখিয়েছেন। কিন্তু এখন এতো রোমান্টিক হয়ে গেছেন কারন টা কি?
.
অবনীর মুখে এমন কথা শুনে আকাশের চেহারার রং পুরোপুরি কুঁচকে যায়। যেটা পাশ থেকে অবনী খেয়াল করে। তাই সে আকাশকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে,

–আচ্ছা আপনার যা ইচ্ছে হয় করুন। কিন্তু এখানে না প্লিজ। কারন একটু আগে একজন বেফাঁস ভাবে সামনে চলে এসেছে। তার মতন হুট করে আবার কখন কে চলে আসে তার কোনো ঠিক নেই। তাই আমি বলছি যে এখন আমরা নিজেকে সংযত রাখি। না হয়তো মানুষের সম্মুখে লজ্জার পাশাপাশি আপনার রাগ ও উঠে যাবে। পরে আপনাকে সামাল দিতে আমার দম বের হবে।

–তো এখন কি করা উচিৎ?

–রোমান্স বাদ দিয়ে রেখে আপনার যা খুশি তাই করেন।

–নাহ আর কিছু করার এই ইচ্ছা নাই। তুমি ক্লাসে চলে যাও।

–ওমাগো মা! এটা কি আপনি কথা বলছেন?

–এই কি হয়েছে? আর আমি কথা বলছি মানে কি ধরনের প্রশ্ন এটা?

–আপনি দেখি তুই থেকে তুমিতে নেমে এসেছেন।
যা দেখে বেশ অবাক লাগছে আমার!

–অবাক লাগার কিছুই নেই। ক্লাসে চলে যাও তুমি।

–আচ্ছা ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।
.
আকাশের কথায় অবনী ক্লাসে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরে। তখনি আকাশ পিছন থেকে আবার অবনীকে ডাক দেয়। অবনী আকাশের ডাকে পিছু ঘুরে হেঁটে আকাশের কাছে এসে তাকে জিজ্ঞাস করে,

–কি হয়েছে?
আবার ডাকলেন কেন?

–কোনো ছেলের সাথে মিশবে না কেমন?
ছেলেদের থেকে একদম দূরে দূরে থাকবে।
.
আকাশের এমন কথা শুনে অবনী মুচকি একটা হাসি দিয়ে আকাশের কপালে একাধিক চুমু একে দেয়। তারপর আকাশকে বলে,

–জনাব,আপনার কথার একটুও নড়চড় হবে না। আপনি একদম নিশ্চিন্তে থাকুন। এবার চললাম। আর হ্যাঁ যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই। আপনি নিজের রাগ টাকে একটু কন্ট্রোল করার চেষ্টা করুন।

–এই রাগ কন্ট্রোল করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে তুমি চেষ্টা করলে হয়তো কমে যাবে।

–ঠিক আছে জনাব আমিই আপনাকে শান্ত মেজাজের মানুষ বানিয়ে দিব। এবার চললাম।
.
তারপর অবনী ক্লাসে চলে যায়। আর আকাশ সেই জায়গাটায় বসে বসে অবনীকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে। এমন সময় মুজাহিদ নামক আকাশের বডিগার্ডটা কলেজের ভিতরে প্রবেশ করে আকাশের কাছে আছে। তারপর আকাশের কাছে এসে আকাশের কানে কানে কিছু একটা বলে, যেটা শুনে আকাশ পুরোপুরি শকট হয়ে যায়! এবং সাথে তার সারা শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠে! কারন মুজাহিদ তাকে যা শুনিয়েছে এখন, সেটা শুনবার জন্য আকাশ কখনোই প্রস্তুত ছিলো না!

চলবে….

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।