রহস্যে ঘেরা ভালবাসা পর্ব-০৪

0
641

#রহস্যে_ঘেরা_ভালবাসা
#পর্ব_৪
#M_Sonali

লাল টকটকে রংয়ের একটা গাউন জামা পড়ে অনেক সুন্দর করে সেজেগুজে একটি বড় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছি আমি। হাতে রয়েছে একগুচ্ছ লাল গোলাপ। অপেক্ষা করছি মীরার জন্য। আমার দু চোখ যেন এদিক-ওদিক শুধু তাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই মীরের দেখা পাচ্ছিনা। আমার ঠিক সামনেই রয়েছে একটি বিশাল নদী। সেই নদীর ঢেউয়ের শব্দ বারবার ভেসে আসছে আমার কানে। আশেপাশের পরিবেশ টা অনেক বেশি নিরব নিস্তব্ধ এবং সুন্দর। পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ আর নদীর ঢেউয়ের শব্দ ছাড়া আশেপাশে আর কিছুই চোখে পড়ছেনা বা শোনাও যাচ্ছে না। জায়গাটা ভীষণ মনমুগ্ধকর। কিন্তু তবুও আমার মনটা ভালো হচ্ছে না। বারবার শুধু আঁকুপাঁকু করে মীরকেই পাগলের মত খুঁজে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ দূর থেকে ঘোড়ার পায়ের শব্দ শুনে সেদিকে ফিরে তাকালাম আমি। তাকাতেই দেখলাম মীর একটা সাদা ধবধবে ঘোড়ায় চড়ে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। ওকে দেখে কোনো রূপকথার রাজকুমার এর চাইতে কম লাগছেনা। গোল্ডেন রঙের একটি কাজ করা পাঞ্জাবি পড়েছে। সেই সাথে মাথায় পড়েছে অনেক সুন্দর একটি পাগড়ী। ঠিক যেন কোনো রূপকথার রাজকুমার। আমি তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলাম। এদিক-সেদিক কোথাও আর কোন নজর নেই আমার।

একটু পরে সে এসে আমার সামনে দাড়ালো। তারপর ঘোড়া থেকে নেমে একদম আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়াল সে। কিন্তু তার মুখের দিকে তাকাতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার। তাকে এত সুন্দর লাগলেও তার মুখে রয়েছে একরাশ বিষন্নতার ছাপ। যেন মনের মাঝে অনেক বেশি বিষন্নতা ঘিরে রেখেছে তাকে। আমি তার কাছে আর একটু এগিয়ে গিয়ে বলতে লাগলাম,

–” এত দেরী করলে কেন মীর, তুমি জানো সেই কখন থেকে তোমার জন্য এখানে অপেক্ষা করে আছি আমি? এতো দেরিতে কেন এলে তুমি?”

কথাটি বলেই তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু না সে আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না। শুধু নিরব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো বলে উঠলাম,

–” তুমি জানো আমি এই দিনটার জন্য কতদিন ধরে অপেক্ষা করে আছি! যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছি সেদিন থেকেই তোমার জন্য এক ভালোলাগার সৃষ্টি হয়েছিল আমার মনে। আর ধীরে ধীরে সেই ভালোলাগাটা যে কখন ভালবাসায় পরিনত হয়ে গেছে সেটা নিজেও জানি না। এখন তো আমার প্রতিটা মুহূর্ত তোমার ভাবনাতেই কেটে যায়। আমি তোমাকে চাই মীর। নিজের স্বামী হিসেবে চাই। তুমি আমাকে গ্রহণ করে নাও নিজের স্ত্রী হিসেবে। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না। আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি মীর। আই লাভ ইউ সো মাচ। আই লাভ ইউ লট মীর।”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই হাতে থাকা ফুলগুলো মীরের দিকে এগিয়ে দিলাম আমি। তখনই সে আমার থেকে দু পা পিছিয়ে গিয়ে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। একটিবারের জন্যও আর আমার দিকে ফিরে তাকাল না। তার এমন আচরণে বেশ অবাক হলাম আমি। মনটা যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। যখনই আমি মুখ খুলে আবারও কিছু বলতে যাব! তখনি মীর অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল,

–” আব্রু,জীবনে যা চাই তাই যে সবসময় পেতে হবে এমন কোন কথা নাই। তুমি নিজের মতো থাকো। তোমার আমার চাইতে অনেক ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হবে। আমি তোমার জন্য দোয়া করি। কিন্তু আমাকে নিয়ে কখনো কল্পনা জল্পনা করো না। কেননা আমি তোমাকে কখনই বিয়ে করতে পারবোনা। আমার সাথে বিয়ে হলে তোমার সারাজীবন দুঃখে পার করতে হবে। বিপদে বিপদে অতিষ্ঠ হয়ে যাবে তুমি। তাই ভালো এটাই হবে যে তুমি আমায় ভুলে যাও।”

এতোটুকু বলে চুপ করে গেল মীর। ও কথাগুলো অন্য দিকে তাকিয়ে বললেও, আমি বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছি কথাগুলো বলার সময় ওর গলায় বারবার আটকে যাচ্ছে। যেন অনেক কষ্টে কথাগুলো বলছে সে আমায়। বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারলাম মীরও হয়তো আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু কোনো একটা কারণে হয়তো আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু সেটা তো আমি কখনোই মেনে নেব না। ভীষন রাগ হল আমার। হাতের ফুল গুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে তার কাছে এগিয়ে গেলাম। তার হাত ধরে আমার দিকে ঘুরিয়ে দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বললাম,

–” সেদিন তোমার হাত ধরার জন্য তুমি আমাকে থাপ্পড় মেরে ছিলে তাই না মীর! এই নাও আজকে একদম কাছে এসে তোমার দু হাত ধরেছি আমি। তুমি আমাকে মারতে পারো। শুধু একটা নয় ইচ্ছে করলে মেরেও ফেলতে পারো। তোমার হাতে মরতেও রাজি আমি। কিন্তু তবুও আমার তোমাকে চাই। তোমাকে বিয়ে করার পর আমার যত দুঃখ কষ্ট এবং যতই বিপদ আসুক না কেন আমি শুধু তোমাকে চাই। তোমাকে ভালবেসেছি তাই আমি তোমাকেই বিয়ে করব। অন্য কাউকে নয়। প্লিজ আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিও না। আমি বুঝতে পারছি তুমি আমাকে ভালোবাসো। নইলে এই কথাগুলো অন্য দিকে তাকিয়ে নয় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারতে। কিন্তু সেটা তুমি বলো নি। তারমানে তুমিও আমাকে ভালোবাসো। তাই না মীর! তাহলে কিসের এত বাঁধা তোমার?”

কথাগুলো একনাগাড়ে বলেই তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আচমকাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আমি। আমার এমন কান্ডে মীর যেনো একদম পাথরের মত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। একটুও নাড়াচাড়া করল না। এভাবে বেশ কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পর, এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিল সে আমায়। তারপর রাগী গলায় দাঁত কিড়মিড় করে হিংশ্র দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“এই মেয়ে লাজ লজ্জা বলতে কিছু নেই তোমার? এতবার বলার পরেও আমি একটা পরপুরুষ, তাকে তুমি কিভাবে জড়িয়ে ধরো? সেদিনকে একটা থাপ্পর দিয়ে ছিলাম তাতে মন ভরে নি তোমার! এরপর এমন কোন কাজ করলে তোমাকে সত্যিই মেরে ফেলবো আমি। আমার থেকে দূরে থাকো তাতেই তোমার ভালো হবে। আমার কাছে আসার চেষ্টা করো না। তাহলে আগুনের মত পুরে ঝলসে যাবে।”

কথাগুলো বলেই আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে আবার কোথাও যেন উধাও হয়ে গেল মীর। ও চলে যাওয়ায় আমি সেখানেই হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে ওর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে কান্না করতে লাগলাম। এভাবে চিৎকার করতে করতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠলাম আমি। সারা শরীর ঘেমে একাকার আমার। গলা শুকিয়ে কাঠ। ভালোভাবে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম আমি নিজের রুমে আছি। তারমানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম আমি। সকালে কলেজে মীরের সাথে দেখা করে আসার পর দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু ঘুমিয়ে ছিলাম। আর সেই ঘুমানোর পরেই এমন একটা বাজে স্বপ্ন দেখলাম। এই স্বপ্নের কোন মানে বুঝতে পারলাম না। তবে মনটা ভীষন ছটফট করতে লাগল আমার। যেভাবেই হোক মীরের সাথে কথা বলতে হবে আমার।

হঠাৎই আসরের আজানের আওয়াজ ভেসে আসলো কানে। বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসে নামাজে বসে পড়লাম। নামাজ শেষে দোয়ায় আল্লাহর কাছে দোয়া করে শুধু মীরকেই চাইলাম। আমি যে তাকে মনেপ্রাণে স্বামী রুপে চাই। তাতে আমার যা হয় হবে। কিন্তু তাকে আমার চাই। এই স্বপ্নের কোন কিছু মানতে চাই না আমি। আমি শুধু মীরকে চাই। নামাজ শেষে মনে মনে ঠিক করলাম কাল হায়ার বৌভাতের অনুষ্ঠানে মীরের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলব আমি।

————————–

রাত ১০.০৫ মিনিট
ডাইনিং টেবিলে রাতের খাবার সাজাচ্ছে হারা এবং ওর শাশুড়ি শায়লা বেগম। এই একদিনের মাঝেই দুজনের মাঝে যেন মা মেয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। শায়লা বেগম অনেক বেশি আপন করে নিয়েছে হায়াকে। সেইসাথে আশরাফ চৌধুরী ও নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে তাকে। সারাদিন অনেক আনন্দে এবং ভালোবাসায় কেটেছে হায়ার। আর সায়েমের কথা তো বলতেই হবে না। সে তো সবসময় দুষ্টুমি এবং ভালোবাসায় মুগ্ধ করে রেখেছে তাকে। তবে শুধু একটা জিনিসই বারবার খটকা লাগছে হায়ার। সেটা হল মীরকে। এ বাসায় আসার পর থেকে মীর একটিবারের জন্যও বড় ভাবী হিসেবে কথা বলেনি তার সাথে। এমনকি কখনো সে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলেও মীর তাকে বারবার এড়িয়ে গেছে। হায়ার বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে যে মীর তাকে ভাবি হিসেবে মেনে নিতে পারছে না। যদিও কথাটা এখন অব্দি কাউকে বলেনি হায়া। তবে মনের মাঝে এই কথাটাই বারবার নাড়া দিয়ে যাচ্ছে তার। বাসার সবাই মেনে নিলেও যদি মীর তাকে মেনে না নেয়! তাহলে কি সায়েম তার সাথে বাজে আচরণ করবে? তাকে কি আর এভাবে ভালবাসবে না? এসব কথাই যেন বারবার মনে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে তার।

হঠাৎ শায়লা বেগমের ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে হায়ার। শায়লা বেগম তার পাশে এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে গম্ভির গলায় বলেন,

–” আমি জানি হায়া তুমি এখন কি ভাবছ! নিশ্চয়ই মীরের ব্যবহারে তোমার খারাপ লাগছে। তুমি ওকে নিয়ে ভাবছো এখন তাই না?”

শাশুড়ি মা যে এভাবে ওর মনের কথা বুঝে যাবে সেটা কল্পনাও করতে পারেনি হায়া। অবাক চোখে শায়লা বেগমের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নেয় সে। কিন্তু কোন উত্তর দেয় না। ওর নীরবতায় শায়লা বেগম উত্তর পেয়ে যায়। তিনি মুচকি হেসে শান্ত গলায় বলে ওঠেন,

–” মীর কে নিয়ে একদম ভেবোনা হায়া। ও একটু অন্যরকম। আমাদের কারো সাথে ওর তেমন মিল নেই। তবে ওর মনের দিক থেকে অনেক ভালো। তুমি হয়তো ভাবছো তুমি ওর বড় ভাবী, কিন্ত ও এখনো তোমার সাথে একটিবারের জন্যও পরিচিত হলো না। বা সেভাবে কথা ও বলল না। কিন্তু আমি বলি এটা নিয়ে তুমি কোন রকম চিন্তা করো না হায়া। মীর কখনোই কোন মেয়ের সাথে কথা বলে না। এটা ওর ছোট বেলার অভ্যাস। তবে সবাইকেই অনেক ভালবাসে।”

এতোটুকু বলে থেমে গেলেন শায়লা বেগম। ওনার কথা শুনে এবার চোখ তুলে ওনার দিকে তাকালো হায়া। তারপর উত্তেজিত গলায় বলে উঠলো,

–“আমি একটা কথা কিছুতেই বুঝতে পারছি না আম্মু। আপনাদের কারো সাথেই আমি মীর ভাইয়ার কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না। আপনারা সবাই কতটা হাসিখুশি কত ভালো মনের মানুষ। সবার কত অমায়িক ব্যবহার। কিন্তু একমাত্র মীর ভাইয়াকেই দেখছি এ বাসায়, যে একদম নিরব নিস্তব্ধ থাকে সব সময়। সব সময় গম্ভীর মুখে থাকে সে। উনাকে দেখে মনে হয় যেন এক রাজ্যের চিন্তা তার মাথায় সবসময় ঘুরপাক খায়। আমার কাছে ভিষন রহস্যময় লাগে তাকে। আমি সত্যি এখানে আসার পর একবার এর জন্যও ওনাকে বুঝতে পারিনি। তাই একটু টেনশন করছিলাম।”

হায়ার কথাগুলো শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন শায়লা বেগম। কিন্তু কোনো উত্তর দিলেন না। তারপর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

–“হায়া অনেক রাত হয়ে গেছে। তুমি একটু উপরে গিয়ে তোমার শ্বশুর এবং সায়েমকে ডেকে নিয়ে আসো। আমি মীরের খাবার টা ওর রুমে দিয়ে আসছি।”

কথাটা বলেই রান্নাঘরের দিকে চলে যেতে নিলেন শায়লা বেগম। তখনই উনার হাতটা চেপে ধরলো হায়া। তারপর আবারও প্রশ্ন করে উঠল সে,

–“আচ্ছা আম্মু আমি এখানে আসার পর থেকেই দেখছি, আপনারা সবাই একসাথে টেবিলে বসে খাবার খান। কিন্তু শুধুমাত্র মীর ভাইয়া’ই একা রুমে খাবার খায়। কিন্তু এমন কেন, উনি কি আমাদের সাথে একসাথে বসে খেতে পারেন না? আপনি বসুন আমি ভাইয়াকে ডেকে আনছি। আজকে সবাই মিলে একসাথে খাব!”

হায়ার কথা শুনে এবার যেন ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন শায়লা বেগম। মুখে কিছু না বললেও উনাকে দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে উনি অস্বস্তি বোধ করছেন। কিন্তু মুখে হ্যা বা না কোন কিছুই বলছেন না সে। তাই হায়া আর দেরি না করে মীরের রুমের দিকে পা বাড়ালো। সে মনে মনে ঠিক করে নিল, যেভাবেই হোক আজ মীর এর সাথে কথা বলবে সে। সে মীরের বড় ভাবি হয়, তার একটা অধিকার আছে দেবরের ওপর।

মীরার রুমের সামনে গিয়ে দেখল দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দেওয়া। এবার দরজায় বেশ কয়েকটা টোকা দিয়ে মীরের নাম ধরে ডাকতে লাগল হায়া। মীর ভাইয়া মীর ভাইয়া বলে। তখনই দরজা খট করে খুলে গেল। মীর দরজা খুলে বাইরে বের হলেও, নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে সালাম দিয়ে বলে উঠলো,

–“আসসালামু আলাইকুম। ভাবি আপনি এখানে! কিছু বলবেন?”

এই প্রথম মীরের মুখ থেকে ভাবি ডাকটা শুনে বেশ আনন্দিত হলো হায়া। খুশির ঝিলিক নিয়ে বলে উঠল,

–“ওয়ালাই কুমুসসালাম। মীর ভাইয়া আপনি নিচে চলুন। আমরা সবাই একসাথে বসে রাতের খাবার খাব। আজকে সারাটা দিন গেল আপনি আমার সাথে একটি কথাও বললেন না। আপনার কি আমাকে ভাবী হিসেবে পছন্দ হয়নি?”

হায়ার কথার উত্তরে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো মীর। তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,

— ভাবি, আমি আম্মু ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সাথেই কথা বলাতেই ছাচ্ছন্দবোধ করি না। আপনি নিচে গিয়ে সবার সাথে খাবার খান। আমি নিজের রুমে খাবার খেয়ে নিবো। আর আপনার উপর আমার কোন অভিযোগ নেই। মাশাআল্লাহ, আমার ভাইয়ের জন্য আপনিই বেস্ট চয়েজ। দোয়া করি আপনারা অনেক সুখি হন। আর হ্যা এই পরিবারটাকে আর পরিবারের সবাইকে অনেক ভালো রাখুন ভালবাসুন।”

কথাগুলো নিচের দিকে তাকিয়ে বলেই হায়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল মীর। ওর কথায় বেশ অবাক হলো হায়া। সত্যিই এই ছেলেটার মাঝে রহস্য দিয়ে ঘেরা। কোনভাবেই যেন এ ছেলেটিকে বুঝে উঠতে পারছেনা সে। তবে মীরের কোথায় বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারল যে মীরের তার প্রতি কোন অভিযোগ নাই। বরং ভাবী হিসেবে তাকে বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করে নিয়েছে মীর। কিন্তু এই রহস্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করার কোন ইচ্ছা হল না এখন হায়ার। তাই চুপচাপ আবারো নিচে নেমে আসলো সে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,