রহস্যে ঘেরা ভালবাসা পর্ব-০৮

0
493

#রহস্যে_ঘেরা_ভালবাসা
#পর্ব_৮
#M_Sonali

কারো মধুর সুরে কোরআন তেলাওয়াত করতে শুনে, ঘুম ভেঙে গেল আমার। মিটিমিটি চোখে আসে পাশে তাকাতেই দেখি এখনো বাইরে বেশ অন্ধকার। তার মানে সকাল হতে আরও কিছুক্ষণ দেরি আছে। আড়মোড়া ভেঙে পিছন দিকে ঘুরে দেখতেই, দেখি মীর ফ্লোরে জায়নামাজের উপর বসে মনযোগ দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করছে। কি মধুর সে সুর।এই সুরের কাছে যেন পৃথিবীর সকল সুর হার মেনে যায়। আমি মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর মনোযোগ দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে থাকলাম। এভাবে বেশ কিছুটা সময় পার হওয়ার পরেই হঠাৎ করে মীর কোরআন তেলাওয়াত করা থামিয়ে দিলো। তারপর কোরআনের দিকে চোখ রেখেই গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

–“সূর্য উঠতে আর বেশি দেরি নেই। দ্রুত গিয়ে অজু করে ফজরের নামাজ পড়ে নাও।”

ওনার কথা শুনে এদিক ওদিক ফিরে তাকালাম আমি। বোঝার চেষ্টা করলাম উনি কথাগুলো আসলে কাকে বললেন! তখন’ই উনি আবারো বলে উঠল,

–“আব্রু, এই রুমে তুমি আর আমি ছাড়া অন্য কেউ নেই। তাই যা বলেছি তোমাকেই বলেছি। এখন দেরি না করে দ্রুত গিয়ে ওযু করে এসে নামাজ পরে নাও।”

কথাটা বলে উনি আবারো কোরআন তেলাওয়াতে মনোযোগ দিলেন। আমি এবার ওনার কথায় বেশ অবাক হলাম। সাথে মন থেকে অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করতে লাগলো আমার। সকালে উঠে এমন মধুর সুরে কোরআন তেলাওয়াত শুনলে কার না ভালো লাগবে! তাও যদি হয় প্রিয় মানুষের কণ্ঠে! আমি আর দেরি না করে দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে চলে গেলাম। একটু পর ফ্রেস হয়ে ওযু করে এসে দেখলাম মীর আমার জন্যে আগে থেকেই জায়নামাজ বিছিয়ে রেখেছেন। এটা দেখে মনটা যেনো খুশিতে ভরে গেলো আমার। দ্রুত গিয়ে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে নিলাম।

আমার নামাজ শেষ হতে হতে ওনার কুরআন তেলাওয়াতও শেষ হয়ে গেল। আমি যখন জায়নামাজ গোছাচ্ছিলাম, তখন তিনি গিয়ে রুমের জানালা খুলে দিলেন। জানালা দিয়ে অসম্ভব সুন্দর সকালের স্নিগ্ধ ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে ছুঁয়ে গেল আমার। আমি সকালে দেরিতে ঘুম থেকে উঠি বলে সকালের এত সুন্দর স্নিগ্ধ আবহাওয়া কখনো দেখা হয়নি। তাই আজকে যেন মনটা জুড়িয়ে গেল এ টুকুতেই।

মীর জানালার রেলিং ধরে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে বাইরের প্রকৃতি দেখতে লাগল। আমিও আর দেরী না করে হাতের জায়নামাজটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে রেখে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাইরে দৃষ্টি রাখতেই চোখটা জুড়িয়ে গেল আমার। সকালের আবহাওয়াটা সত্যিই এতটা সুন্দর হতে পারে সেটা হয়তো এত সকালে না উঠলে কখনোই বুঝতে পারতাম না। চারিদিকে সবুজ শ্যামলে ঘেরা। যেনো নতুন এক প্রকৃতির মিষ্টি রূপ দেখছি আমি। আর সবচাইতে বেশি যেটাতে সৌন্দর্য অনুভব করছি, সেটা হচ্ছে আমাদের সামনেই একটা বিশাল বড় বেল গাছ। আর সেই বেল গাছের মগডালে একটা ছোট্ট পাখির বাসা। যে বাসার মধ্যে দুটি পাখি চুপচাপ বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে তারাও আমাদের মত সকালের সুন্দর প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত।

আমি মুগ্ধ নয়নে প্রকৃতি দেখছি। সবকিছুই যেন বারবার মুগ্ধ করছে আমায়। বাবার বাসায় থাকতে সবসময় বেলা দশটার আগে ঘুমই ভাঙতো না। কখনো যদি নয়টার দিকে উঠে পড়তাম তো সেদিন সারাদিন শুধু ঘুমের জন্য জন্য ছটফট করতে করতে কেটে যেত।

আশেপাশে মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ মীরের দিকে চোখ মেলে তাকালাম আমি। তাকাতেই দেখি সে এক নজরে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমাকে তার দিকে তাকাতে দেখেই দ্রুত আমার থেকে চোখ সরিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন তিনি। তবে আমি তাকে অলরেডি দেখে ফেলেছি। মনে মনে বেশ আনন্দিত হলাম আমি। মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলাম,

–” চোখ সরিয়ে নিলেন কেন? আমি তো আপনারই বউ। এভাবে চোখ সরানোর কি আছে! আপনি আমাকে দেখতেই পারেন।”

আমার কথা এড়িয়ে গিয়ে উনি শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন,

–” বাইরের আবহাওয়া টা দেখেছো একবার! আল্লাহর কি অপরুপ সৃষ্টি।মাশাআল্লাহ। যে ব্যক্তি সকালে ঘুম থেকে না উঠে। সে এই প্রকৃতির সুন্দর্য টা পুরোপুরি মিস করে যায়। এই সুন্দর্য দেখার মত ভাগ্য শুধু তাদেরই হয়, যারা সকালে উঠে নামাজ পড়ে এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে যায়।আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে।”

ওনার কথা মুগ্ধ হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে শুনছিলাম আমি। ওনার পুরো কথা শেষ হওয়ার পরেই আমি মুচকি হেসে ছোট করে উত্তর দিলাম,

–“হুমম এর আগে আমিও মিস করেছি। তবে আজ থেকে আর মিস হবে না ইনশাআল্লাহ। ”

–“ইনশাআল্লাহ!”

আমি ওনাকে আরো কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাব তখন’ই দরজায় টোকা পড়ার শব্দ হলো। আমি থেমে গিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। দেখলাম উনি বাইরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বুঝলাম উনি দরজা খুলতে চাইছেন না। তাই আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।
খুলতেই দেখি হায়া মুচকি হাসি দিয়ে, এক গ্লাস দুধ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে দুষ্টু হেসে বললো,

–“Good morning my sweet sister. কেমন আছেন এখন আপনি?”

কথাটি বলে আমায় চোখ টিপ মারলো হায়া। ও চোখ টিপ মারায় আমি বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারলাম ও দুষ্টুমি করছে। তাই আমিও একটু ভাব নিয়ে বলে উঠলাম,

— এইতো আমি এখন অনেক বেশি ভালো আছি। তা আপনি কেমন আছেন জানতে পারি? দুলাভাই কোথায়? এত সকাল সকাল আপনি দুলাভাইকে ছেড়ে আমার দরজার সামনে! কি ব্যাপার বলুন তো?”

কথাগুলো বলেই হাহা করে হেসে দিলাম আমি। আমার সাথে তাল মিলিয়ে হায়াও হাসতে লাগল। কিছুক্ষণ সময় হেসে নিয়ে বললো,

–” অনেক দুষ্টামি হয়েছে, এখন এই দুধের গ্লাসটা নিয়ে মীর ভাইয়াকে দে। উনি প্রতিদিন সকালে গরম দুধ খান। তাড়াতাড়ি দে নইলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

–” হায়া তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? এত সকালে কেউ গরম দুধ খায় নাকি! তাও আবার খালি পেটে? চা অথবা কফি হলে তবুও মেনে নিতাম। কিন্তু এত সকালে কেউ গরম দুধ খায়, এমনটা কখনও শুনেছিস? নাকি ভুল করে চায়ের বদলে গরম দুধ নিয়ে এসেছিস বলতো?”

–” আব্রু, তোর মত প্রথম দিন আমিও বেশ অবাক হয়েছিলাম। তবে বাসার সবাই সকালে উঠে চা খেলেও মীর ভাইয়া গরম দুধই খান। তাই তুই বরং এটা নিয়ে ওনাকে দিয়ে দে। আজকে আমি দিয়ে গেলাম, আগামীকাল থেকে কিন্তু তোকে এটা করতে হবে। তুই এখন ওনার বৌ, ভুলে যাস না। তাই ওনার এসব দ্বায়ীত্ব এখন থেকে তোর।”

–” Yes my dear sister, আমার মনে থাকবে। এখন আপনি যান, আমি এটা ওনাকে দিচ্ছি।”

–“হ্যাঁ যাচ্ছি, তুই এটা ওনাকে দিয়ে একটু পর নিচে চলে আয়। সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করব।”

–” আচ্ছা ঠিক আছে হায়া।”

তারপর হায়ার হাত থেকে দুধের গ্লাস টা নিয়ে আমি রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আমার হাতে দুধের গ্লাস দেখেই মীর আমার কাছে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিল গ্লাসটা নেওয়ার জন্য। তখনই আমি সেটা ওকে নিতে না দিয়ে চট করে কয়েক ঢোক দুধ খেয়ে নিলাম। তারপর গ্লাসটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,

–” এবার আপনি খেতে পারেন স্বামী। ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনেছি স্ত্রীর মুখের এঠো খাবার খেলে নাকি তার প্রতি মুহাব্বাত বাড়ে। আমিতো আপনার স্ত্রী তাই আমার এঠো খেলে আমাদের মাঝে মুহাব্বাত বাড়বে, তাই না?”

উনি আমার কথার উত্তর না দিয়ে বেশ বিরক্তি মাখা মুখ করে গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটাই খেয়ে ফেললেন। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন,

–” আমি এখন একটি দরকারি কাজে চলে যাচ্ছি। আসতে আসতে হয়তো বিকেল হবে। সারা দিন আর বাসায় ফিরব না। তুমি আম্মুকে বলে দিও চিন্তা না করতে। আর আমার জন্য অপেক্ষা করে থেকোনা। নিজের মত খেয়ে নিও।”

কথাটি বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। আমি বেশ অবাক হলাম। উনি এখন আমার সাথে একদমই স্বাভাবিক আচরণ করছেন। রাতের মতো আর এড়িয়ে চলছেন না। তবে সারাদিনের মনে কোথায় গেলেন উনি? ব্রেকফাস্ট টাও তো করে গেলেন না!

কিছুক্ষণ সেখানেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে এসব কথা চিন্তা করলাম। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের খালি গ্লাসটা টেবিলে রেখে রুমটা সুন্দর ভাবে গোছাতে লাগলাম। যদিও আমি বাড়িতে এসবের কোনো কিছুই করি না। কিন্তু এখন আমি একজন বউ। আর নতুন বউ এ সবকিছু গুছিয়ে না রাখলে শ্বশুরবাড়ির লোকে খারাপ বলবে। তাই সবকিছু গোছাতে শুরু করলাম। তবে মনের মাঝে একটা চিন্তা থেকেই গেল। সেদিন রাতে মীরের সাথে ছাদের ওপর যে মেয়েটিকে দেখেছিলাম! সেই মেয়েটি আসলে কে? তার পরিচয়’ই বা কি? এই বাসার লোক কি ঐ মেয়েটির ব্যপারে জানে?

এসব কথা ভাবতে ভাবতে রুমটা গোছানো শেষ করে রুম থেকে বের হলাম আমি। তারপর গুটি গুটি পায়ে নিচে নেমে আসলাম। নিচে আসতেই দেখি ব্রেকফাস্ট নিয়ে টেবিলে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে আসতে দেখেই শায়লা আন্টি আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। ওনাকে সালাম দিলাম আমি। উনি সালামের উত্তর নিয়ে মুচকি হেসে বললেন,

–” আব্রু মামনি, আমরা এতক্ষণ তোমার জন্য’ই অপেক্ষা করছিলাম। এসো সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করি।”

–” জি আন্টি। আন্টি আপনার ছোট ছেলে বাইরে গেছেন। আর যাওয়ার আগে বলে গেছেন,,,!”

এতোটুকু বলতেই শায়লা আন্টি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

–“হ্যা জানি ও আমাকে বলে গেছে আসতে বিকেল হবে। তুমি ওকে নিয়ে টেনশন করো না। ওর যখন সময় হয় ও চলে আসবে। তুমি আসো আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করি। আর একটা কথা, আমাকে আন্টি নয়! আম্মু বলে ডাকবে।মীর আর সায়েম আমার কাছে যেমন, তোমরা দুজনেও ঠিক তেমন। তোমরা আমার বউ নও আমার মেয়ের মত। তাই আমাকে সবসময় আম্মু বলে ডাকবে কেমন?”

উনার কথায় আমি মুচকি হেসে উত্তর দিলাম,

–“জ্বী আম্মু, তাই হবে। ”

তারপর উনার সাথে একসাথে গিয়ে টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করলাম সবাই। সত্যিই এ বাসার প্রতিটি মানুষই অসম্ভব ভালো। আমি কপাল গুনে এমন একটা ফ্যামিলি পেয়েছি। আব্বু আম্মুর মত সায়েম ভাইয়াও অনেক ভালো। আমার সাথে একদম ছোট বোনের মত করে কথা বলেন তিনি। খুবই ভালো লাগলো সবার আচরণে। ব্রেকফাস্ট শেষ হলে হায়া আর সায়েম ভাই মিলে উপরে চলে গেল। আব্বু বেরিয়ে গেল অফিসের জন্য। তখনই আম্মু আমাকে ডাকলেন। তারপর আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে সোফার উপর বসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বললেন,

–” আব্রু আমি তোমার শাশুড়ি নই। আমি তোমার মা। সাথে তোমার একজন বন্ধুও ভাবতে পারো। তাই আমার কাছে কখনো কিছু লুকিও না। আমি বন্ধুর মত পাশে থেকে তোমাকে সব কিছুতে সাহায্য করবো। ”

এতটুকু বলে একটু থামলেন। তারপর আবারও বলতে লাগলেন,

–“কাল রাতে তোমাদের মাঝে কোন মিস আন্ডাস্ট্যান্ডিং হয়নি তো? সব ঠিক আছে তো মা? আমার মীর তোমার সাথে ভালো আচরণ করেছে তো?”

ওনার কথায় বেশ অবাক হলাম আমি। একজন শাশুড়ি যে এভাবে তার ছেলের বউ এর সাথে কথা বলতে পারে, কখনও কল্পনাও করিনি। সবার কাছে কত শুনেছি যে, সকল শাশুড়ি তার ছেলে বউদের অনেক জ্বালায়। অনেক যন্ত্রনা ও প্যারা দেয়। কিন্তু এমন একজন শাশুড়ি হয়তো কপালগুণে পেয়েছি আমি। হালকা মুচকি হাসলাম। তারপর ওনার হাত দুটি নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বললাম,

–” আপনি চিন্তা করবেন না আম্মু। আমাদের মাঝে সবকিছুই ঠিক আছে, আলহামদুলিল্লাহ। আর আপনার ছেলেও আমার সাথে কোন প্রকার খারাপ আচরণ করেনি।”

–” আলহামদুলিল্লাহ শুনে অনেক খুশি হলাম মা। তবে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে! আশা করি তুমি আমার কথা গুলো শুনবে এবং সেগুলো নিয়ে ভেবে ভালো করে বোঝার চেষ্টা করবে। ”

উনার কথায় হালকা ভ্রু কুঁচকা লাম আমি। তারপর জিজ্ঞেস করলাম,

–“জ্বী আম্মু বলুন, আমি অবশ্যই শুনবো।”

–” আব্রু মা, মানুষের জীবনে কখন কি হয় তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। আমার মীর অনেক ভালো একটি ছেলে। ওর মত ছেলে হয়তো সারা বাংলাদেশ খুঁজেও একটা মিলবে না। তবে ও একটু গম্ভির আর অদ্ভুত টাইপের। কিন্তু ও যা করে সকলের ভালোর জন্যে করে। তাই তোমার কাছে আমার অনুরোধ আব্রু মা। তোমার সাথে মীর যা’ই করুক না কেনো। তুমি কখনো ওকে ভুল বুঝো না। বা ওকে কখনো ছেড়ে যেও না। ও যাদের ভালবাসে তাদের ভালোর জন্যে ও সব কিছু করতে পারে। ওকে বাইরে থেকে যেমন দেখতে ও আসলে তেমন নয়। আমার মীর সবার থেকে অনেক আলাদা ও ভালো। ওকে সব সময় তোমার ভালবাসা দিয়ে আগলে রেখো আব্রু। আমার ছেলেটাকে কখনো একা ছেড়ো না, ভুল বুঝো না।”

এতোটুকু বলে থামলেন উনি। ওনার কথা শুনে আমি ওনার হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরে উনাকে আশ্বাস দিয়ে বললাম,

–” আপনি চিন্তা করবেন না আম্মু। আমি তাকে ভালোবাসি বলেই এভাবে বিয়েতে রাজি হয়েছি। আপনার ছেলেকে আমি এখন নয় বরং এক বছর আগে থেকেই চিনি। আর তখন থেকেই পছন্দ করি। তাই ওনাকে ছেড়ে যাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। যা কিছু হয়ে যাক না কেন আমি ওনাকে কখনোই ছাড়বো না। নিজের ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখব। এটা আপনার কাছে আমার প্রমিস আম্মু।”

–” আলহামদুলিল্লাহ শুনে অনেক খুশি হলাম আব্রু। অনেক সুখি হও তোমরা। আমার দোয়া সব সময় তোমাদের সাথে থাকবে।”

ওনার কথা শেষ হতেই আমি চট করে আবারও বলে উঠলাম,

–” আচ্ছা আম্মু আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। একটা বিষয়ে জানার আছে আমার। যদি আপনি কিছু মনে না করেন? তাহলে আমি জিগ্যেস করতে পারি!”

–” হ্যা অবশ্যই, বল কি জানতে চাও?”

–” ইয়ে মানে আম্মু, বিয়ের আগে আপনার ছেলে কি কাউকে পছন্দ করত? বা ওনার কি কোন ভালোবাসার মানুষ আছে? যাকে সে বিয়ে করতে চেয়েছিলো? আপনি কি এটা জানেন আম্মু?”

আমার কথাটা শুনে যেন বেশ কিছুটা অবাক হলেন উনি। সাথে চমকে উঠলেন। তারপর বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন। আমি বুঝতে পারলাম তিনি আমার কথাটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,

–” আব্রু মামনি, এখন তুমি ওপরে নিজের রুমে যাও, আমার একটু কাজ আছে। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব কেমন।”

কথাটা বলেই এক প্রকার আমাকে এড়িয়ে দ্রুত চলে গেলেন উনি। বিষয়টা ভীষণ চিন্তায় ফেলে দিল আমায়। ওনার এভাবে চলে যাওয়াটা যেন মেনে নিতে পারছি না আমি। “তার মানে কি সত্যিই মীরের ভালোবাসার কেউ আছে? ওই মেয়েটাকে সত্যিই মীর ভালোবাসতো! আমি কি তাহলে ওর মনে কখনো জায়গা পাবোনা?”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,