রাখিব তোমায় যতনে পর্ব-০২

0
532

#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০২
-‘ বাবা তুমি কেন বুঝতে চাইছো না আমি এই বিয়েটা করতে চাইছি নাহ।ইনফেক্ট আমি কখনই বিয়ে করবো না।বুবুকে হারিয়ে তোমরা কিভাবে আবারও আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্যে এমন করতে পারো?’

শুদ্ধতার একরোখা জবাব শুনে রাশেদ সাহেব গম্ভীর গলায় বলে,
-‘ আমি যা করছি তোমার ভালোর জন্যেই বলছি।সবটা মেনে নেহ।’

শুদ্ধতা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
-‘ বুবুকেও তো তার ভালোর জন্যেই বিয়ে দিয়েছিলে তাহলে আমার বুবু কেন এমন করলো?আর তুমি কিসব পাগলামি শুরু করছো।সামনের বছর ভোটে নাকি তুমি দাঁড়াবে না।কিন্তু কেন বাবা? তুমি কেন বাবা?তুমি তো এমন ছিলে না বাবা?’

রাশেদ সাহেব শান্ত কন্ঠে বলেন,
-‘ আমি আমার বুদ্ধি খাটিয়ে কাজটা করছি।তোমাকে নীবদ্ধকেই বিয়ে করতে হবে।আর আমি ভোটে আর দাড়াবো না।কারন নীবদ্ধ সামনের বছর দাঁড়াবে!’

শুদ্ধতা দাঁতেদাঁত চেপে বললো,
-‘ শত্রুর ঘরে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতে তোমার একটুও বিবেগে বাধছে নাহ?’

-‘ নাহ বাধছে না।কারন ফারুক আমার বিপক্ষে দলের নেতা হতে পারে।তবে আমার শত্রু নাহ।আর আমরা আমাদের কাজ আর পরিবার এই দুটো বিষয় আলাদা রাখি। আমি আর একটা কথা শুনতে চাই না শুদ্ধতা।তুমি বড্ড বেশি কথা বলছো।’

শুদ্ধতার মুখশ্রী রাগে লাল হয়ে গিয়েছে।কিন্তু বাবার সাথে আর একটুও তর্ক না করে সোঁজা ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে।ভেবেছিলো বাবার সাথে একটু ঠান্ডা মাথায় কথা বলবে। কিন্তু তার বাবার এমন একরোখা জেদের কাছে ওর কোন কথাই পাত্তা পেলো না।অসহ্য রাগে শুদ্ধতার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
স্কুটি নিয়ে সোঁজা ভার্সিটি চলে এলো।কিন্তু যাওয়ার সময়ে নজরে এলো কয়েকজন ছেলে মিলে একটা মেয়েকে রেগিং করছে।ভীতরের রাগটা যেন দ্বিগুন বেড়ে গেলো শুদ্ধতার।রাগে ফুসতে ফুসতে শুদ্ধতা এগিয়ে গেলো সেদিকে।ছেলেগুলো শুদ্ধতাকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেলো।তাদের মধ্যে লিডার ছেলেটা সেই ছেলেটা কাঁপা গলায় বললো,
-‘ ভাবি? আপনি ভালো আছেন?’

ছেলেগুলোর দৃষ্টি সব নিচের দিকে।কেউ শুদ্ধতার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে না।শুদ্ধতা দাঁতেদাঁত চিপে বলল,
-‘ আপনারা এখানে কি করছেন? এইভাবে এই মেয়েটাকে কেন ডিস্টার্ব করছেন? ‘

-‘ নাহ নাহ ভাবি!আমরা যাস্ট কথা বলছিলাম।’

শুদ্ধতা রাগে চিৎকার করে উঠলো,
-‘ আমার সাথে আবার মিথ্যে বলা হচ্ছে।থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিবো। শুধু কথা বললে এই মেয়েটা কাঁদছে কেন?’

ছেলেগুলো আর কিছু বলার সাহস পেলো না।শুদ্ধতা রাগি গলায় বলে,
-‘ আর কোনদিন যদি দেখি মেয়েদের এইভাবে উত্তেক্ত করতে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিবো! আর কিসের ভাবি হ্যা? আমি আপনাদের কোন ভাইয়ের ভাবি? আমার কি এখনো বিয়ে হয়েছে?আর কোনদিন যদি দেখি ভাবি ভাবি করতে জিভ কেটে দিবো।ইডিয়ট গুলা।’

শুদ্ধতা কাঁদতে থাকা মেয়েটার হাত ধরে ওখান থেকে নিয়ে আসলো।মেয়েটা এখনো হিচঁকি দিয়ে যাচ্ছে।শুদ্ধতা সহ্য করতে না পেরে দিলো এক ধমক,
-‘ এই মেয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদবে না।গাধার মতো এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করছিলে? সবগুলো থাপড়িয়ে গাল ফাটিয়ে দিতো পারো নি? তোমাদের মতো বলদা মেয়েদের কারনেই ওসব ছেলে এতো সাহস পায়। আর কোনদিন কাঁদবে না।প্রতিবাদ করতে শিখবে। এখন যাও ক্লাসে।’

মেয়েটা শুদ্ধতাকে ধন্যবাদ দিয়ে ক্লাসে চলে গেলো।এদিকে শুদ্ধতার মন মেজাজ ভালো না থাকায় আর ক্লাসে গেলো না।ভার্সিটির মাঠের ওপাশে একটা বড় নদী বয়ে গেছে। পরিবেশটা বেশ ভালো।শুদ্ধতা সেদিকটায় চলে গেলো।মেজাজ ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসের কোন কিছুই ওর মাথাতে ঢুকবে না।

_____________
-‘ ভাই ভাই! ভাবি তো প্রচুর রেগে গর্জন দিচ্ছে। ওই রকির দলবলরে ইচ্ছামতো ঝারছে।পারলে ওদেরকে মেরে ভর্তা বানিয়ে দিতো।’

পার্টি অফিসে বসে জরুরি আলাপে মত্ত ছিলো নীবদ্ধ।পুরো নাম নীবদ্ধ এহসান। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান সে।তার আরো দুটো ছোট ভাই আছে। মেঝো ভাই ঐক্য এহসান আর ছোট ভাই ঈশান এহসান।বাবার নাম ফারুক এহসান আর মায়ের নাম আয়েশা রহমান।

হাঁপাতে থাকা ছেলেটির কথা শুনে নীবদ্ধ ভ্রু-কুচকে তাকালো ছেলেটির দিকে।গম্ভীর কন্ঠে বলল,
-‘ শুদ্ধতা তো অকারনে এমন করবে না তা আমি জানি।কারন টা কি?’

ছেলেটি বলে,
-‘ ভাই আমি ঠিক জানিনা।বোধহয় ওই রনি কোন মেয়েকে ডিস্টার্ব করতেছিলো।এটা দেখেই ভাবি রেগে গিয়েছে।’

নীবদ্ধ উঠে দাড়ালো।শুভ্র পাঞ্জাবির হাতাগুলো ভালোভাবে কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে পার্টি অফিসের সকল ব্যাক্তিদের উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ সরি এভ্রিওয়ান।আই হেভ টু গো।বাকি আলোচনা আমরা কাল করবো।’

নীবদ্ধ’র এমন কথায় মধ্যবয়স্ক একটা লোক বিদঘুটে হেসে বলে,
-‘ তা ফারুক এহসানের ছেলে যে এমন বউ পাগল হবে তা কে জানতো।পুরাই দেখি বউয়ের আচঁল ধরে ঘুরে বেড়ানো লোক।’

বয়স্ক লোকটার এমন কথায় সকলে ভয়ে ভয়ে নীবদ্ধ’র দিকে তাকালো।কারন সবাই এই একবছরে বেশ ভালোভাবে জানে নীবদ্ধের রাগ সম্পর্কে। নীবদ্ধ’র চোখ লাল হয়ে গেলো রাগে। তারপরেও মুখে হাসি টেনে বলল,
-‘ মিঃআমজাদ আমার বয়সটাই তো বউয়ের আচঁল ধরে ঘুরে বেড়ানোর।বউয়ের আমার মাথা গরম বেশি।তাকে আবার আমি ছাড়া কেউ সামলাতে পারবে না।আমি তো অন্য মানুষদের মতো না যে আমার একটাতে হয় না।বাড়িতে বউ রেখে বাহিরে বে***মা**দের সাথে রাত কাটাবো।আমি একজনেই সন্তুষ্ট।আর সারাজীবনই থাকবো।আসি তাহলে?’

মিঃ আমজাদের মুখটা নিমিষেই একটুখানি হয়ে গেলো অপমানে।নীবদ্ধ যে জায়গা মতো খোচাটা দিয়েছে তা বেশ ভালো করেই সবাই বুঝতে পারছে।সবাই মিটিমিটি হাসছিলেন।মিঃ আমজাদ সবাই ধমকে উঠে বললেন,
-‘ সাট-আপ।সালা দুদিনের ছোকরা কিনা আমায় অপমান করে।দেখে নেবো আমি একে।দেখে নেবো।’

মিঃআমজাদ আসন ছেড়ে চলে গেলেন।তিনি যেতেই আবারও হাসতে লাগলো।

—————–
নীবদ্ধ’র পার্টি অফিস শুদ্ধতার ভার্সিটির পাশেই।পাঁচ মিনিটের রাস্তা।নীবদ্ধ হেটেই ভার্সিটিতে আসলো।সচরাচর সে এখানে আসে না।আর শুদ্ধতা যেদিন ওকে বারণ করেছিলো অযথা তার সামনে না আসতে সেদিন থেকে আরও কমিয়ে দিয়েছে আসা যাওয়া।আজ অনেকদিন পর এখানে আসা হলো নীবদ্ধর। ভার্সিটির মাঠে আসার পরেই বুঝতে পারলো মেয়েরা ড্যাবড্যাবিয়ে তার দিক তাকিয়ে।বিরক্ততিতে কপালে ভাঁজ পরলো নীবদ্ধ’র।এই এক জ্বালা এই মেয়েগুলো যে এমন প্রতি*বন্ধিদের মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকে এটা দেখলেই তার শরীর রাগে জ্বলে যায়।নীবদ্ধ ওর এসিস্ট্যান্ট জয়কে দাঁত খিচিয়ে বলে উঠলো,
-‘ জয়! এই মেয়েগুলো এমনভাবে তাকিয়ে আছে কেন?আমাকে কি এলিয়েনের মতো লাগছে দেখতে?’

জয় তড়িঘড়ি করে বলে,
-‘ আল্লাহ্ বস কি বলেন এসব?আপনাকে এলিয়েন কেন দেখাবে।আপনি তো একজন সুদর্শন,সুঠামদেহি তাগড়া যুবক।এইজন্যেই এইভাবে তাকিয়ে থাকে সবাই।’

নীবদ্ধ চোখ রাঙ্গালো জয়কে।জয় ভয় পেয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো।নীবদ্ধ এইবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারদিকে তাকালো।এখন শুদ্ধতার কোন ক্লাস নেই।কিন্তু মেয়েটাকে মাঠের আশেপাশেও দেখা যাচ্ছে না।আশেপাশে তাকাতেই ঐক্য’কে চোখে পড়ে নীবদ্ধ’র। সে উচ্চস্বরে ডেকে উঠলো ঐক্যকে।ঐক্য আর শুদ্ধতা একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে।শুদ্ধতা অনার্স ফাইনাল ইয়ার আর ঐক্য মাস্টার্সে পড়াশোনা করছে।ঐক্য নিজের বন্ধুদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো।এমন সময় বড় ভাইয়ের উচ্চকন্ঠের ডাক শুনে তড়াক করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।নীবদ্ধকে তার দলবল নিয়ে ভার্সিটি মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গেলো।ঐক্য নীবদ্ধ’র কাছে আসতেই নীবদ্ধ প্রশ্ন করলো,
-‘ তোর ভাবি কোথায় আছে? এখানে এসে নাকি রাগারাগি করেছে অনেক ওই রনিদের সাথে।এখন কোথায় আছে জানিস? অনেক রেগে আছে জানতে পারলাম!’

#চলবে_____________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।