রাখিব তোমায় যতনে পর্ব-০৩

0
530

#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৩

নির্মল বাতাসে হৃদয় জুড়িয়ে যাচ্ছে।নীলাভ আকাশে শুভ্র মেঘেদের আনাগোনা।তারা এদিক সেদিন ছোটাছুটি করছে।সূর্যের প্রখর রোদের আলোয় ঝলমল করছে প্রকৃতি।শুদ্ধতা মুগ্ধ হয়ে সব অবলোকন করছে নদীর পাড়ে বসে।নদীর পানিগুলোও কি সুন্দর চিকচিক করছে রোদের আলোতে।শুদ্ধতা নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে।এতোক্ষনের রাগটা যেন এই মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে বিলীন হয়ে গিয়েছে।

এদিকে দূর থেকে নিজের প্রাণপ্রিয়াকে দেখে ওর দলের সব লোকদের ইশারায় চলে যেতে বললো নীবদ্ধ।তারা নীবদ্ধ’র ইশারা মতো চলে যেতেই নীবদ্ধ পা বাড়ায় শুদ্ধতার কাছে।শুদ্ধতা একটা গাছের খারিতে বসে ছিলো।নীবদ্ধ গিয়ে তার পাশে বসে পরলো।কিন্তু কিছু বললো না চুপচাপ অবলোকন করতে লাগলো প্রকৃতির সৌন্দর্যে ডুবে যাওয়া এক প্রকৃতি কন্যার রূপ।

শুদ্ধতা নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঝট করে চোখ মেলে তাকালো।পাশে ফিরে নীবদ্ধকে দেখে আশ্চর্য হলো বেশ।প্রায় বিশদিন পর লোকটাকে দেখলো শুদ্ধতা।এই কয়দিনে একবারও আসেনি ওর সামনে।শুদ্ধতা শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো নীবদ্ধ’র দিকে।ঠান্ডা গলায় বললো,
-‘ আপনি এখানে কেন? কি চাই?’

নীবদ্ধ হাসলো।কি সুন্দর সেই হাসি।চোখ ফেরানো দায় হয়ে পরে।শুদ্ধতা নিজেকে সামলে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো।নীবদ্ধ বলল,
-‘ শুনলাম আপনি নাকি আজ অনেক রেগে আছেন।রনিদের নাকি অনেক বকাঝকা করেছেন?’

শুদ্ধতা রাগকে নিয়ন্ত্রনে রেখেছিলো।তবে নীবদ্ধ’র এহেন প্রশ্নে রাগটা আবার বারছে।তাও নিজেকে সামলে দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
-‘ এখন আপনি বুঝি এইজন্যেই এসেছেন এখানে?আমাকে বুল্লি করতে এসেছেন?’

নীবদ্ধ সাথে সাথে গর্জে উঠলো।শুদ্ধতার এমন হুটহাট আবলতাবল ভেবে রাগ দেখানো বিষয়টা নীবদ্ধ একদম মেনে নিতে পারে না।তাই রাগি গলায় বলে,
-‘ আমি আপনার উপর রাগ দেখাতে চাই না শুদ্ধতা।তবে আপনি এমন সব কথা বলেন যে আমি রাগ না করেও থাকতে পারি না।সবসময় সবকিছু নেগেটিভভাবে নিন কেন আপনি?’

-‘ তাহলে আমার কাছে আসেন কেন?আমি কি বলেছি আমার কাছে আসতে? ‘

শুদ্ধতার চাপা রাগ নিয়ে বলা কথায় নীবদ্ধ ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকালো শুদ্ধতার দিকে।তারপর বলে,
-‘ আপনি বলবেন কেন?আমার অধিকার কাছে আপনার কাছে আসার। আমি আপনার উডবি শুদ্ধতা। আমাকে মিনিমাম সম্মানটুকু করুন।আমি আপনার ভবিষ্যতে স্বামি হবো।সেটা আপনি চাইলেও আর না চাইলেও।বিয়ে আপনার এই আমাকেই করতে হবে।’

শুদ্ধতা দ্বিগুন তেজ নিয়ে বলে,
-‘ এখন কি আপনি আমাকে জোর করবেন?’

নীবদ্ধ’র সরাসরি জবাব,
-‘ আপনি বাধ্য করবেন!’

শুদ্ধতা দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,
-‘ গুন্ডারা আর কিইবা পারে।’

নীবদ্ধ উঠে দাড়ালো।তারপর হেচঁকা টানে শুদ্ধতাকেও দাড় করিয়ে নিজের মুখোমুখি করলো।নীবদ্ধ’র সারা মুখশ্রী লাল হয়ে গিয়েছে।নীবদ্ধ গম্ভীর গলায় বললো,
-‘ আমি গুন্ডামোর কি করেছি?আপনার গায়ে আপত্তিকর স্পর্শ দিয়েছে?আপনাকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছি?নাকি আপনাকে জোড় করে কিস করেছি, নাহ অযথা কাউকে মেরেছি?কোনটা?আন্সার মি কুইকলি?’

শুদ্ধতা নীবদ্ধের সকল প্রশ্নে উপেক্ষা করলো।উলটো নিজের হাতটি ঝাটকা মেরে নীবদ্ধ থেকে ছাড়িয়ে নিলো।তারপর বলে,
-‘ আপনি চরম লেভেলের একটা অসভ্য! ‘

-‘ তা আপনার সাথে আমি কিভাবো অসভ্যতামো করলাম?’

-‘ একটু আগে আমায় কি কি প্রশ্ন করলেন নির্লজ্জের মতো!’

-‘ তো আপনি আমায় গুন্ডা বললেন কেন?আবার এখন অসভ্য বলছেন।’

শুদ্ধতা রাগে ফোঁপাতে লাগলো।নীবদ্ধ যে চরম লেভেলের একটা ঘাড়ত্যাড়া তা শুদ্ধতা ভালো করেই জানে। এই লোকটা যখনই ওর সামনে আসে ওকে রাগিয়ে দিয়ে যায়।ফর্সা মুখশ্রী শুদ্ধতার অতি রাগে লাল হয়ে গিয়েছে।নীবদ্ধ শুদ্ধতার এমন ভয়ানক রাগ দেখে নিজেকে একটু দমিয়ে আনলো। কন্ঠ যথাসম্ভব খাদে নামিয়ে বলল,
-‘ দেখুন শুদ্ধতা আমি আপনার সাথে কোন ঝগরা করতে চাই না।প্লিজ ট্রায় টু আন্ডার্স্ট্যান্ড।আমি শুধু আপনাকে জিজ্ঞেস করতে আসলাম আপনি রনিদের কেন বকেছেন?কি করেছে ওরা?আপনার সাথে কি ওরা কোন অসভ্যতামো করেছে কিনা তা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম।আর আপনার মন খারাপের কারনেই যে আপনে রাগারাগি করেছেন আমি এটাও জানি এইজন্যে আপনার মন ভালো করার জন্যে এসেছিলাম।’

নীবদ্ধ’র উচ্চারণকৃত প্রতিটা বাক্য যেন একটু হলেও শুদ্ধতার উপর প্রভাব ফেললো বোধহয়।তাইতো রুক্ষ মেজাজটাকে বদলে কন্ঠটা খানিক নরম করে শুদ্ধতা বললো,
-‘ আমাকে কিছু বলেনি রনি।তবে একটা মেয়েকে রেগিং করছিলো।তাই আমি রাগ ঝেরেছি।’

-‘ ওহ আচ্ছা! তাই বলুন।তবে ছেড়ে দিলেন কেন? সবগুলোকে থাপড়িয়ে আসবেন নাহ?’

শুদ্ধতা অবাক হলো না একটুও।কারন নীবদ্ধকে এই একবছরে খুব ভালোভাবেই চিনিছে শুদ্ধতা।শুদ্ধতাকে চুপ থাকতে দেখে নীবদ্ধ নিজেই বললো,
-‘ বাড়ি যাবেন?নাকি আরো ক্লাস আছে?’

শুদ্ধতা সামনের দিকে হাটা ধরলো।আর বলে উঠলো,
-‘ আমার কাজ আছে।আজ সানামের সাথে আমি এক জায়গায় যাবো।’

নীবদ্ধ মুচঁকি হাসলো শুদ্ধতার কথায়।জিজ্ঞেস করলো,
-‘ এতিমখানায় গিয়ে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাবেন এটা আমার কাছে লুকানোর কি আছে? আমি তো আপনার সম্পর্কে সব জানি শুদ্ধতা!’

শুদ্ধতা থেমে গেলো।ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে নীবদ্ধ’দ দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘ ওলওয়েজ আমার পিছনে লোক লাগানো বন্ধ করুন!’

-‘ আমি তো আপনার পিছনে লোক লাগাবো কেন? এটা আপনার ভুল ধারনা।আমাকে চিনে না এমন মানুষ খুব কম।তাছাড়া আপনার বাবাকে তো সবাই চিনে।এই শহরে এমপি তিনি। এইজন্যে আপনাকে কেউ কোথায় দেখলে আমার কাছে খবর দিয়ে দেয়। এতে আমি কি করবো?’

শুদ্ধতা মুখ ভেংচি মারলো নীবদ্ধকে অবশেষে ভার্সিটির দিকে চলে গেলো।শুদ্ধতাকে বেড়িয়ে যেতে দেখে নীবদ্ধ’র লোকেরা আবার নীবদ্ধ’র কাছে আসলো।নীবদ্ধ’কে মুচঁকি হাসতে দেখে জয় প্রশ্ন করলো,
-‘ বস এতো খুশির কারন?’

মুহূর্তেই হাসিমাখা মুখটা বদলে গম্ভীর হয়ে গেলো নীবদ্ধ’র মুখশ্রী।ধমকে উঠলো জয়কে,
-‘ সাট আপ।জাস্ট ডু ইউর ওয়ার্ক।’

জয় থতমত খেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।মস্করা বাদ দিয়ে কাজের কথাই বললো,
-‘ বস সজীব কিছু একটা গড়বড় করার ধান্দায় আছে।ও অনেক বড় একটা প্লান সাজাচ্ছে বস।’

-‘ কি হতে পারে কোন ধারনা করেছো জয়?’

-‘ না বস।আমি শুধু খবরটা পেয়েছি।বাকিটা আপনি জানেন!’

বাঁকা হাসি দিলো নীবদ্ধ বললো,
-‘ এইবার এই সালাকে জ্যান্ত পুতে দিবো আমি।অনেক ছাড় দিয়েছি।বলে পিপড়ার পাখা গজায় মরিবার তরে।ওরও মরন এসেছে।’

-‘ আপনি যা ভালো মনে করেন বস।’

নীবদ্ধ ওর দলবল নিয়ে চলে গেলো।অবশ্য যাবার আগে ঐক্যকে বলে গেলো ও যেন নিজে শুদ্ধতা যেখানে যায় নিয়ে যেতে।ওকে একা ছাড়তে না।সে জানে তার বাঘিনী একাই একশ।কিন্তু তারপরেও মনে একটা অজানা ভয় থাকে। চারদিকে রাশেদ সাহেব আর এখন নতুন করে ওর এতো শত্রু কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।তাই কোন রিস্ক নিতে চায় না নীবদ্ধ। মেয়েটার মধ্যে ওর জান থাকে।যখন বিদেশ থেকে এসে ঐক্য’র সাথে এই ভার্সিটিতে এসেছিলো তখনই দেখেছিলো শুদ্ধতাকে।এক দেখাতেই মনের মাঝে শুদ্ধতাকে নিয়ে প্রেম জেগে উঠেছিলো। তাইতো কোন কিছু না ভেবে সোজা শুদ্ধতার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো।তাদের বাবারা রাজনীতিতে দুজনের বিরোধী হলেও।পরিবারিক দিক থেকে বেশ ভালো মিল আছে তাদের মাঝে। তাই বিয়ের প্রস্তাব পাঠানানোর সাথে সাথে তারা রাজি হয়ে যান।তার মধ্যে এক সপ্তাহ পরেই ছোট খাটো আয়োজন করে বাগদান হয়ে যায় ওদের।মেয়েটা একদম রাজি না ওকে বিয়ে করার জন্যে।মানে ওকে কেন ও কাউকেই বিয়ে করবে না পণ করেছে।কিন্তু নীবদ্ধ তা হতে দিলে তো? সে তো শুদ্ধতাকে ভালোবাসে।যে করেই হোক ওকে বিয়ে করবেই। শুধু একটু সময় দিয়েছে শুদ্ধতাকে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্যে।শুদ্ধতার অনার্স শেষ হলেই নীবদ্ধ ওকে বিয়ে করে নিবে। আর মাস্টার্স করতে পারবে বিয়ের পরে।শুধু শুদ্ধতার পরিক্ষাটা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে নীবদ্ধ।

#চলবে________________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।