রাখিব তোমায় যতনে পর্ব-০৪

0
452

#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্ব০৪

গম্ভীর মুখশ্রী,চোয়াল শক্ত,দাঁতেদাঁত চেপে বসে আছে নীবদ্ধ। হাতে কিছু কাগজ।মূলত এই কাগজগুলো পড়েই রাগে হিসহিস করছে নীবদ্ধ।পাশেই দাঁড়ানো জয় ভয়ে ঝিমিয়ে আছে।নীবদ্ধ আরেকবার চোখ বুলালো কাগজগুলোতে। সেখানের স্পষ্ট লিখা আছে।

‘ নীবদ্ধ এহসান তোর নিজের ক্ষমতা নিয়ে অনেক অহংকার তাই নাহ? ওয়েল খেলা সবে শুরু।তোকে এই একবছর শুধু দেখেই গিয়েছি কোন কিছু বলিনি বলে তুই দাপিয়ে বেড়াচ্ছিস সবখানে। তবে এইবার আমার খেলা শুরু। সামনে যা হতে চলেছে পারলে ঠেকাস।তুই না নিজেকে অনেক বুদ্ধিমান ভাবিস সাথে তোর নাকি অনেক পাওয়ার।তো এইবার দেখি তুই নিজের পাওয়ার কতোখানি কাজে লাগাতে পারিস।বি রেডি নীবদ্ধ এহসান।’

হাতের মুঠোতে কাগজটা দুমড়ে মুচড়ে নিলো নীবদ্ধ। ওকে হুমকি দেওয়া।এতো বড় কলিজা যার হয়েছে সেই কলিজা টেনে হিছড়ে ছিড়ে ফেলবে নীবদ্ধ।তার আগে কিসের পরিকল্পনা করছে জা*নোয়ারগুলো তা জানতে হবে। নীবদ্ধ ভারি আওয়াজে বলে,
-‘ কাজটা কে করতে পারে তা আমি খুব ভালোভাবে জানি। এখন শুধু এটা জানতে হবে ওরা কিসের সরযন্ত্র করছে।লোক লাগাও জয়।পলিটিক্স আমি টাকার জন্যে করতে আসিনি।আমি এসেছি মানুষের সেবা করতে তাদের পাশে দাড়ানোর জন্যে। আর আমি সেটা এমপি হওয়ার আগে থেকেই করবো। আমার সব লোকেদের লাগিয়ে দেও।একটা নিস্পাপ মানুষেরও যেন কিছু না হয় জয়।’

জয় নীবদ্ধ’র কথা মতো কাজে চলে গেলো। নীবদ্ধকে প্রচুর সম্মান করে জয়।এই লোকটা সাধারন মানুষদের জন্যে এই একবছরে যা যা করেছে তা অন্য কোন পলিটিক্স’র লোক ত্রিশ বছরেও করেনি।জয় চলে যেতেই নীবদ্ধ চেয়ারে শরীরের ভার ছেড়ে দিলো।চোখ বুজে ভাবতে লাগলো পরিকল্পনাটা ঠিক কিভাবে সাজাবে।
এমন সময় কল আসলো ওর ফোনে।চট করে চোখ খুলে তাকায় নীবদ্ধ।ফোনের স্ক্রীনে মায়ের নাম্বারটা দেখে দ্রুত হাতে রিসিভ করলো।কানে লাগিয়ে বলে উঠলো,
-‘ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম মা।’

ওপাশ থেকে বাচ্চাসুলভ কন্ঠের আওয়াজ,
-‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম ভাইয়া। আমি আম্মু না।আমি ঈশান!’

ভ্রু-কুচকে এলো নীবদ্ধ’র ঈশানের কন্ঠ শুনে।প্রশ্ন করলো,
-‘ ঈশান?তুই এই টাইমে বাড়িতে কেন? কি হয়েছে?’

ফুঁপিয়ে উঠলো ঈশান।আহ্লাদি স্বরে বললো,
-‘ ভাইয়া তুমি জলদি বাড়িতে এসো।’

ছোট ভাইয়ের এমন কান্নারত কন্ঠ শুনে ভয় পেলো নীবদ্ধ।ভাই দুটো তার জান।এদের কিছু হলে নীবদ্ধ’র মাথা ঠিক থাকে না।নীবদ্ধ অস্থির গলায় বলে,
-‘ কি হয়েছে ঈশান? কাঁদছিস কেন?’

-‘ তুমি শুধু বাড়িতে এসো।আর হ্যা ভাবিকে নিয়ে আসবে।একা আসলে আমি তোমায় বাড়িতে ঢুকতে দিবো না।’

ঈশানের একরোখা জেদি কন্ঠস্বর।নীবদ্ধ আশ্চর্য হয়ে বলে,
-‘ আচ্ছা জ্বালাতো। এখন তোর ভাবিকে আমি কিভাবে নিয়ে আসবো?’

-‘ আমি কিছু জানি না।আসবে মানে সাথে ভাবিকেও নিয়ে আসবে।’

এটা বলেই খট করে ফোন কেটে দিলো ঈশান।বেশ চিন্তায় পরে গেলো নীবদ্ধ।কি হলো তার ছোট ভাইটার।হঠাৎ এমন কাঁদছেই বা কেন? না এখানে আর বসে থেকে লাভ নেই।বাড়িতে যেতে হবে। তার আগে শুদ্ধতাকে নিয়ে যেতে হবে।অফিসরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো নীবদ্ধ।জয়কে কাজে পাঠিয়ে দিয়েছে তাই জয়কে মেসেজ করে বিষয়টি জানিয়ে দিলো।অতঃপর বেড়িয়ে পরলো শুদ্ধতার কাছে যাওয়ার জন্যে।

____________
ক্লাসে বসে বোর ফিল করছে শুদ্ধতা আর সানাম।একের পর এক টানা তিনটা ক্লাস করে ক্লান্ত তারা।তবুও এখানে বসে থাকতে হচ্ছে।শুদ্ধতা বিরক্তি নিয়ে ঘ্যাচঘ্যাচ করে সবটা পড়া খাতায় নোট করছে।এভাবে যেমন হোক শুদ্ধতা অনেক ভালো ছাত্রী।সব ক্লাস মনোযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করে।আজও বেতিক্রম কিছু না। না চাইতেও ক্লাসে মনোযোগ দিচ্ছে।এমন সময় পিওন আসলো ক্লাসে।বলল,
-‘ শুদ্ধতা খান! আপনার সাথে নীবদ্ধ এহসান এসেছেন দেখা করতে। জলদি আসুন।তিনি অপেক্ষা করছেন।’

পিওন চলে গেলো।এদিকে পিওনের কথাগুলো শুনে কঁপালে ভাজ পরলো শুদ্ধতার।এই লোকটা আজ আবার কি জন্যে এসেছে। কে জানে? লোকটার এমন হুটহাট কার্যকালাপগুলো একদম অসহ্য লাগে শুদ্ধতার। ঠোঁট ফুলিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে শুদ্ধতা।ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।সানামকে বলে,
-‘ তুইও কি ক্লাস করবি? আর ক্লাস করা লাগবে না।চল আমার সাথে।একা একা ভালো লাগছে না।’

সানাম স্থির দৃষ্টিতে তাকালো শুদ্ধতার।যেতে ইচ্ছে করছে না।কিন্তু বান্ধবীর এভাবে বলায় তা ফেলেও দিতে পারছে না।তাই রাজি হয়ে গেলো।
____________
ওয়েটিংরুমে বসে আছে নীবদ্ধ।ভার্সিটির ভিপির সাথে টুকটাক কথা বলছেন।ভিপি সাহেব চিন্তিত স্বরে বিভিন্ন কথা বলছেন মনোযোগ দিয়ে শুনছে নীবদ্ধ।

-‘ কি আর বলবো স্যার।ভার্সিটির কয়েকটা ছেলেপেলে যে কি পরিমান বেয়াদপ। তা বলে বুঝানো যাবে না।বড়লোক বাপের ছেলে মেয়ে।কিছু বলতেও পারছি না।ভার্সিটিতে এসে বিভিন্ন নেশা করে।ড্রাগস,গাজা আরো অনেক ক্ষতিকারন নেশাজাতীয় দব্র সেবন করে।তাদের দেখা দেখি আরো কতো ছেলে মেয়েরা যে খারাপ হয়েছে।পুলিশ কেস করেছিলাম একবার।কোন লাভ হয়নি।টাকার ক্ষমতা দামিয়ে দিয়েছে।ভার্সিটিতে এসব বেআইনি কাজগুলো চলে।আর আমরা কিছু করতে পারছি না।’

নীবদ্ধ সবটা শুনলো। শক্ত মুখে দাম্ভিকতার সাথে বলে,
-‘ চিন্তা করবেন না স্যার।এই বিষয়টা আমি নিজে তদন্ত করবো।আপনাকে নিয়ে বেশ কয়েকজনই আমার কাছে এসেছে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছে।ব্যস্ততার কারনে ওতোটা ঘাতটে পারিনি।কিন্তু এইবার আর ছাড় দেবোনা।চিন্তা করবেন নাহ।’

ভিপি সাহেব অত্যন্ত খুশি হলেন নীবদ্ধ’র কথায়।বলেন,
-‘ ধন্যবাদ স্যার।অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

-‘ ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না স্যার।এটা তো আমার কর্তব্য!’

ভিপি সাহেব কিছু বলবেন তার আগেই ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করে শুদ্ধতা।শুদ্ধতাকে দেখে ভিপি আর কথা বাড়ালেন না।শুদ্ধতা ভিপিকে সালাম জানালো।দু একটা কথা বলে ভিপি বিদায় নিলেন। নীবদ্ধ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুদ্ধতার দিকে।তা খেয়াল করে শুদ্ধতা কড়া গলায় বলে,
-‘ কি চাই?’

নীবদ্ধ হতাশ নিশ্বাস ছাড়লো। এটা তার জীবনের দ্বিতীয় নারি যার সামনে চাইলেও নিজের কঠিন রূপ ধরে রাখতে পারে না।প্রথম নারিটি হলো তার মা।নীবদ্ধ হালকা হেসে বলে,
-‘ কি সালিকা ভালো আছো?’

সানাম হেসে দিলো নীবদ্ধ’র কথায় বলে,
-‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?’

নীবদ্ধ অসহায় গলায় বলে,
-‘ আমি থাকি ভালো আর কিভাবে বলো? একজনের ভালোবাসার জন্যে আমি দিনরাত তরপাচ্ছি।আর সেই নিষ্ঠুর ব্যাক্তি আগুনের গোলা আমার দিকে ছুড়ে মারে প্রতিনিয়ত। আর আমি সেই আগুনে ভস্ম হচ্ছি দিন রাত। ভালো থাকি কিভাবে?’

সানাম হু হা করে হেসে দিলো।শুদ্ধতা চোখ রাঙ্গালো সানামকে। তারপর নীবদ্ধকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ কি চাই?আমাকে এতো জরুরিভাবে ডাকার কি মানে?আমি ক্লাস করছিলাম।’

-‘ সেটা আমিও জানি।জরুরি না হলে তোমায় অহেতুক আমি ডাকতাম না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।’

শুদ্ধতার নীবদ্ধ’র একরোখা কথায় দমে গেলো।এটা সে জানে যে নীবদ্ধ অতি জরুরি না হলে কখনই ওকে অহেতুক ডাকে না।তাই শুদ্ধতা শান্ত গলায় বলে,
-‘ তো কারনটা কি জানতে পারি?’

নীবদ্ধ শান্ত কন্ঠে বলল,
-‘ একটু আগে ঈশান আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি করলো।বলছে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে সাথে তোমাকেও নিয়ে যেতে। এখন কেন এমন বলছে আমি তা জানি না।কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ফোন কেটে দিয়েছে। তোমাকে না নিয়ে গেলে না কি আমাকে বাড়িতেও ঢুকতে দিবে না।’

শুদ্ধতা বেশ চিন্তিত হয়ে পরলো।ছেলেটা এমন কান্নাকাটি করার কারন না।ঈশানকে বড্ড ভালোবাসে শুদ্ধতা।ওর কোন ভাই নেই।ঐক্যকে নিজের বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করে শুদ্ধতা।আর ঈশানকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ। চিন্তায় অস্থির শুদ্ধতা আর কথা বাড়ালো না রাজি হয়ে গেলো।সানামকেও সাথে নিয়ে গেলো। অবশ্য সানাম যেতে চাইনি শুদ্ধতা আর নীবদ্ধ’র জোড়াজুড়িতে যেতে বাধ্য হয়েছে।

#চলবে_________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।