রাখিব তোমায় যতনে পর্ব-০৮

0
472

#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৮
সকাল সকাল এমন একটা কথা শুনতে হবে ভাবতেও পারিনি নীবদ্ধ। তড়িঘড়ি করে সোয়া থেকে উঠে বসলো।চরম অবাকতার রেশ রেখে বলে,
-‘ কি বলছো এসব? মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমাদের?আমার সাথে ফাইজলামি করো?’

অপাশে থাকা জয় যেন নীবদ্ধ’র এমন কথা শুনে ভয়ে কেঁপে উঠলো।তবুও বলল,
-‘ বস আমি আপনার সাথে কেন এমন ফাইজলামি করবো?সত্যি বস আমাদের হৃদয় আর নেই।আজ সকালে আমাদের অফিসের সামনে আমাদের লোকেরা ওর লা*শ পেয়েছে।অনেক কষ্ট দিয়ে মেরেছে বস।আমি সহ্য করতে পারছি না।আপনি জলদি আসুন!’

-‘ হৃদয়ের জানাযার ব্যাবস্থা করো।সকল মসজিদে মাইকিং করে দেও যাতে সবাই হৃদয়ের জানাযায় সামিল হতে পারে।’

জয় কান্নাই করে দিলো নীবদ্ধ’র কথা শুনে। এতোক্ষন চেপে রাখতে চাইলেও পারলো না। জয়ের ক্রোদন কন্ঠ শুনেই যা বুঝার বুঝে ফেললো নীবদ্ধ।আলগোছে ফোনটা কেটে দিয়ে।দুহাতে নাক মুখ ঢেকে বসে রইলো চুপচাপ। হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো।চোখজোড়া লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে।নাকের ডগা লাল হয়ে আছে।নীবদ্ধ’র অন্তর কাঁদছে।কিন্তু চোখ থেকে একফোটা অশ্রু ঝরলো না।পাথরের মতো শক্ত রূপ ধারন করলো নীবদ্ধ।চুপচাপ ফ্রেস হয়ে সাদা পাঞ্জাবী পড়ে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।নিচে নামতেই সবাইকে ডাইনিংয়ে দেখতে পেলো নীবদ্ধ। তাও কিছু না বলে চুপচাপ চলে আসতে নিবে তার আগেই ডেকে উঠলো ঐক্য,
-‘ কোথায় যাচ্ছিস ভাই?নাস্তা করবি না?’

নীবদ্ধ’র পা জোড়া থেমে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে রক্তিম চোখে তাকালো ঐক্য’র দিকে।শক্ত কন্ঠে বলল,
-‘ নাস্তা করার ইচ্ছে হলে তোর বলা লাগতো না তার আগেই আমি গিয়ে টেবিলে বসতাম।ফারদার আর কোনদিন কোথায় যাওয়ার জন্যে রওনা হলে পিছু ডাকবি না।’

কথা শেষ হতেই হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো নীবদ্ধ।এদিকে সকাল সকাল নীবদ্ধ’র এমন আগুন মেজাজ দেখে সবাই বেশ অবাক।শুদ্ধতা কঁপালে ভাঁজ ফেলে এখনো নীবদ্ধ’র যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।নীবদ্ধ’কে ওর ঠিক লাগছে না।কিছু তো একটা হয়েছে।যার কারনে লোকটা এমন ব্যবহার করছে।চেহারা দেখেই বুঝে ফেলেছে শুদ্ধতা। লোকটার ফর্সা মুখশ্রী লাল হয়ে আছে,চোখজোড়াও লাল টকটকা।নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ঘটেছে।শুদ্ধতা ঐক্য উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ ঐক্য ভাইয়া।আপনি জয় ভাইয়াকে ফোন করে একবার জিজ্ঞেস করুন তো কি হয়েছে?নিশ্চয়ই উনি কিছু জানে এই বিষয়ে।’

শুদ্ধতার কথা শুনে আয়েশা রহমান বলেন,
-‘ হ্যা বাবা একবার ফোন কর না।ছেলেটা আমার এমন ব্যবহার করলো কেন? অনেক রেগে আছে।কিছু একটা তো হয়েছে নাহলে আমার ছেলে এমন করে না।’

ঐক্য মাথা দুলিয়ে বলে,
-‘ চিন্তা করবেন না ভাবি।আমি এখনি ফোন দিচ্ছি।’

ঐক্য জয়ের নাম্বারে ফোন লাগালো।কিন্তু ফোন তুললো না।আবারও ফোন করলে তিনবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করলো জয়।ঐক্য কথা বললো আগে,
-।বড় ভাইয়ার কি হয়েছে বলতে পারো জয়?সকাল সকাল কেমন যেন রাগি মুডে সবার সাথে কথা বলে চলে গেলো।কেমন যেন দেখাচ্ছিলো ভাইয়াকে।’

অপাশ থেকে জয় যা বললো তার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ঐক্য।টু শব্দও করলো না।একটু পর কলটা কেটে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।ওকে এমন করতে দেখে সবাই অস্থির হয়ে একেকটা প্রশ্ন করতে লাগলো।কিন্তু ঐক্য চুপচাপ বসে আছে। ফারুক এহসান ঐক্যকে এমন করে থাকতে দেখে এইবার ধমকে উঠলেন,
-‘ কি সমস্যা?কথা বলছো না কেন? বলবে তো কি বলেছে জয়?’

ঐক্য ফারুক এহসানের ধমক শুনে নড়েচড়ে বসলো।কাঁপা গলায় বলে,
-‘ হ…হৃদয় ভাইয়াকে কারা যেন মেরে ফেলেছে বাবা।ভাইয়ার অফিসের সামনে কারা যেন হৃদয়ের লা*শ ফেলে রেখে গিয়েছে।ভাইয়ার লোকেরা সকালে এসে হৃদয়ের মর*দেহ উদ্ধার করে।আর এই কারনেই ভাইয়াকে এমন দেখাচ্ছিলো।’

ঐক্য’র মুখে এমন কথা শুনে বেশ বড় ঝটকা খেলেন সবাই।ফারুক এহসান চোখ বড় বড় করে তাকালেন। অতঃপর দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললেন। আবারও ওদের দলের একজন লোক মারা গেলো।আর কতো মৃ*ত্যু দেখবেন উনি।সহ্য হচ্ছেনা আর এসব।বুকটা ব্যাথা করছে উনার।আয়েশা রহমান কেঁদে উঠলেন।নীবদ্ধ’র আন্ডারে যারা কাজ করে তাদের সকলকেই বড্ড স্নেহ করেন তিনি।কারন ওখানে কেউ কেউ আগে ফারুক এহসানের সাথে ছিলেন আর কেউ কেউ আছে যারা ফারুক এহসানের সাথে ছিলেন তাদের ছেলে।হৃদয় তো ফারুক এহসানের বিশ্বস্ত একজন কর্মীর ছেলে ছিলো।তিনি আহাজারি করে উঠলেন,
-‘ এটা কি শুনালি তুই আমাকে ঐক্য। এটা কে করলো রে। ছেলেটা কতো ভালো ছিলো।কি সুন্দর করে মামনি ডাকতো আমাকে। ওরে আল্লাহ্ ওর সাথে কেন এমন হলো।’

এইবার ফারুক এহসানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-‘ আমি আগেই বলেছিলাম আমার ছেলেটাকে রাজনীতিতে জড়িয়েন না।আপনি করেছেন করেছেন।আমার ছেলেদের এসবে জড়াতে দিয়েন না।আপনি আমার কথা শুনলেন নাহ।আয় হায় রে।’

শুদ্ধতা কি বলবে ভেবে পেলো না।বড্ড খারাপ লাগছে হৃদয় ছেলেটার জন্যে।ওকে দেখলেই কি সুন্দর করে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করতো ‘ ভাবি কেমন আছেন?’।অবশ্য নীবদ্ধ’র আন্ডারে থাকা সবাই ওকে বেশ সম্মান করে।শুদ্ধতা সানামকে ইশারায় কিছু একটা বুঝালো।তারপর ঐক্যকে বলে,
-‘ ঐক্য এখানে বসে থাকলে চলবে না।আমাদের নীবদ্ধে’র কাছে যাওয়া উচিত।তিনি খুব ভেঙ্গে পরেছেন।’

ঐক্য শুদ্ধতার কথায় সহমত পোষন করলে ফারুক এহসান বলেন,
-‘ তোমাদের ওখানে যাওয়া লাগবে না মামনী।অনেক ভীড় হবে। বুঝোই তো রাজনৈতিক বিষয়।পুলিশ,মিডিয়া সবাই আসবে।তোমাদের বাসায় ড্রোপ করে দিবো আমরা।তুমি তোমার বাবাকে খবরটা দিয়ে দিও।অবশ্য তোমার বাবা এতোক্ষনে বোধ হয় জেনেও গিয়েছেন। আমি আর ঐক্য যাবো সেখানে।চিন্তার কোন কারন নেই।’

শুদ্ধতা চুপচাপ মেনে নিলো ফারুক এহসানের কথা।তবে আয়েশা রহমান বাড়িতে একা থাকবে আবার ঈশানটাও অসুস্থ তাই সেটা ভেবে বলে,
-‘ আচ্ছা থাক আংকেল আপনারা যান।আমি নাহয় পরে বাড়িতে যাবো।এমনিতেই আন্টি কান্নাকাটি করছেন ঈশানের শরীরটাও ভালো না। আপনারা আসলে নাহয় আমি বাড়ি যাবো।শুধু একটু কষ্ট করে সানামকে হোস্টেলে দিয়ে আসলেই হবে।’

সানামও সম্মতি দিলো।এমনিতেও একদিন হোস্টেলে যায়নি।আজও না গেলে সমস্যা হয়ে যাবে। অতঃপর ঐক্য, ফারুক এহসান আর সানাম চলে গেলো।শুদ্ধতা আয়েশা রহমানকে রুমে পাঠিয়ে দিলো একজন সার্ভেন্ট্স এর সাহায্যে টেবিলটা গুছিয়ে নিলো। তারপর ফোন লাগালো রাশেদ সাহেবের কাছে।তিনি ফোন পিক করতেই শুদ্ধতা বলে,
-‘ আসসালামু আলাইকুম বাবা।কিছু খবর পেয়েছো?’

রাশেদ সাহেব বলেন,
-‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম! হ্যা শুনেছি অনেক খারাপ লাগলো খবরটা শুনে।ছেলেটা অনেক ভালো ছিলো।’
-‘ হ্যা অনেক ভালো ছিলো।তুমি যাবে বাবা?’
-‘ তা আর গিয়ে পারি?আমি রেডি হচ্ছিলাম।’
-‘ ওহ আচ্ছা।বাবা শুনো।’
-‘ হ্যা বল!’
-‘ আসলে এই বাড়িতে কেউ নেই।ঐক্য ভাইয়া আর আংকেল চলে গেছেন সেখানে।বাড়িতে আন্টি আর ঈশান আছে।আন্টি অনেক কান্নাকাটি করছেন আর ঈশানটারও শরীর অসুস্থ তাই বলছিলাম কি আমি এখানে থেকে যাই?’

রাশেদ সাহেব বেশ খুশি হলেন শুদ্ধতার কথায়।বলেন,
-‘ তা আর বলতে থেকে যা তুই। আমিও তোকে থাকতে বলতাম।আর তুই একা না পারলে তোর মা’কেও পাঠিয়ে দেই! ‘

শুদ্ধতা নাকচ করলো,
-‘ তার কোন দরকার নেই বাবা।আম্মুর শরীরটাও ভালো না।কাল দেখেছিলাম ডায়বেটিস বেড়েছে।সুস্থ্য থাকলে আমি নিজেই বলতাম আম্মুকে পাঠানোর কথা।আমি একাই সামলাতে পারবো বাবা।তুমি সাবধানে যেও।আর ওখানে গিয়ে পরিস্থিতি জেনে আমায় একটু ফোন দিও কেমন?’

রাশেদ সাহেম হ্যা বলে ফোন কেটে দিলেন।শুদ্ধতা চাপা শ্বাস ফেলে ঈশানের ঘরের দিকে গেলো।

#চলবে_________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।