রাগে_অনুরাগে💚✨
#পর্ব_০১
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
নিজের হবু বরকে অন্য একটি মেয়ের পাশে বর বেশে বসে থাকতে দেখে বেশ চমকে গেলো আরাধ্যা।হয়তো দেখার ভুল ভেবে চোখ থেকে চশমাটা খুলে ভালো করে মুছে দেখলো নাহ্ সে একদম ঠিক দেখছে।এটা তো সত্যিই আর্য।
আরাধ্যা থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার জায়গায়।যেই ছেলের সাথে তার পাঁচদিন পরে বিয়ে।সেই ছেলে কি করে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারে!আরাধ্যাকে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যেতে দেখে রুশা তার দিকে এগিয়ে আসে।আজ রুশার কাজিনের বিয়ে।সেই বিয়েতেই আরাধ্যা এসেছে।তবে তাকে যে এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সেটা তার জানা ছিলো নাহ্।
রুশা এসে আরাধ্যার কাঁধে হাত রেখে বললো,
“কিরে আধু তোর কি হয়েছে?তুই হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো?ছবি তুলবি নাহ্!”
আরাধ্যা একটা ঢোক গিলে রুশার দিকে তাকালো।রুশা লক্ষ্য করলো আরাধ্যার চোখে-মুখে হতাশা দেখা যাচ্ছে।যা দেখে রুশা বললো,
“আধু কি হয়েছে তোর?”
“রুশা’ আর্যর সাথে ফিহার বিয়ে হচ্ছে।”
“আর্য মানে ফিহার বরের কথা বলতেছিস?”
“আর্য আমার হবু বর।তবে বর্তমানে সে ফিহাকে বিয়ে করতেছে।”
রুশা অবাক হয়ে বললো,
“কি বলছিস তুই এইসব?”
“আমি ঠিকই বলতেছি।তুই তো আমার হবু বরকে দেখিসনি।তাই কিছুই জানিস নাহ্।”
“কিন্তু জিজু আর ফিহার রিলেশন তো প্রায়’ই দুই বছর ধরে।তোর সাথে তাহলে কিভাবে বিয়ে ঠিক হয়?”
“আমি নিজেই কিছু বুঝতে পারতেছি নাহ্।”
রুশা’ আর্য আর ফিহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আরে ওদের তো বিয়ে হয়ে গেলো।এখন তুই কি করবি!”
আরাধ্যা তাকিয়ে দেখলো আর্য আর ফিহার বিয়ে হয়ে গেছে।সবাই অনেক হাসি-খুশি।আরাধ্যা মলিন হাসি দিয়ে বললো,
“থাক এখন কিছু বলার দরকার নেই।আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।আমার ভালো লাগতেছে নাহ্।”
“আধু আরো কিছুক্ষণ থাক।আমি বরং জিজুকে সবটা জিজ্ঞেস করি।”
“দরকার নেই রুশা।আমি আমার বাবা-মা’র সাথে কথা বলবো।হয়তো আর্য সাহেবের আমাকে পছন্দ ছিলো নাহ্।”
“Exactly!আমার আসলেই তোমাকে পছন্দ ছিলো নাহ্।”
পরিচিত পুরুষ কণ্ঠ কানে বাজতেই আরাধ্যা পিছনে ঘুরে তাকালো।সে দেখলো আর্য বাঁকা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আরাধ্যা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আর্য বললো,
“তুমি ভাবলে কিভাবে তোমার মতো ডাবল ব্যাটারিকে আমার পছন্দ হবে!আর্য ইসলামের পছন্দ সবসময় exclusive.আমি জাস্ট বাবা-মায়ের মন রক্ষা করতে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।তবে বাবা-মা বিয়ের দাওয়াত দিতে কুমিল্লায় যেতেই আমি ফিহাকে বিয়ে করে নিলাম।একবার বিয়ে হয়ে গেলে তো আর আমাকে কিছু বলবে নাহ্।”
আরাধ্যা আর্যর কথাগুলো মন দিয়ে শুনতেছিলো।তারপরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
“আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে যে আপনার মতো এমন চিপ মাইন্ডের লোকের সাথে আমার বিয়ে হয়নি।এখন আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া ফিহা জানি সুখী হয়।কারণ আপনার যা অবস্থা!”
আর্য চোখ রাঙিয়ে বললো,
“তুমি কি বললে!”
আর্য এটা বলে আরাধ্যার দিকে এগিয়ে আসতে গেলে রুশা আরাধ্যার সামনে এসে দাঁড়ালো।যার কারণে আর্য তার জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো।
“আর্য ভাইয়া আপনি যে এমন এটা আমার জানা ছিলো নাহ্।একটা মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে তার সাথে এমন ব্যবহার কিভাবে করেন আপনি?”
“রুশা তুুমি চুপ থাকো।আর এমন একটা মেয়ের সাথে তুমি কি দেখে ঘোরাঘুরি করো?”
“আমার যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে ঘুরে বেড়াবো সেটা আপনার দেখতে হবে নাহ্।আধু আমার বেস্টফ্রেন্ড।আর শুনেন এরপরে আর কখনো আপনি আরাধ্যার সাথে দেখা হলে এমন বিয়েইভ করবেন নাহ্।তাহলে কিন্তু আপনারই বিপদ আছে।”
কথাগুলো বলে রুশা পিছনে ফিরতে দেখলো আরাধ্যা নেই।রুশা অবাক হয়ে বললো,
“আধু কই গেলো?”
আর্য পাশে থেকে বললো,
“হয়তো কোথাও ন্যাকা কান্না কাঁদতে গিয়েছে।”
“আপনি চুপ থাকুন।আপনি এখানে কি করছেন যান গিয়ে ফিহার পাশে বসে থাকুন।”
রুশা এদিক-ওদিক আরাধ্যাকে খুঁজতে লাগলো।কিন্তু সে কোথাও আরাধ্যাকে দেখতে পেলো নাহ্।
–
–
–
আরাধ্যা আনমনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছে।কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো তার মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।তার শুধুমাত্র চোখে সমস্যা বলে আজকে তার এতোগুলো কথা শুনতে হলো!
অফিস থেকে কাজ শেষ করে বের হচ্ছিলো মিহির।গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় তার চোখ গেলো রাস্তার মাঝখানে।সে দেখলো একটা মেয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছে।মিহির পিছনে তাকিয়ে দেখলো একটা ট্রাক মেয়েটির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।মিহির খেয়াল করলো মেয়েটার চোখে চশমা।তাই সে পিছন থেকে বলে উঠলো,
“হেই চাশমিশ!”
কিন্তু মেয়েটার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই।সে একই ভাবে হেঁটে চলেছে।যা দেখে মিহির আর এক সেকেন্ড দেরি না করে দৌড় লাগালো মেয়েটার দিকে।কতবার ‘চাশমিশ বলে ডাকও দিয়েছে।কিন্তু তা মেয়েটা শুনেছে কিনা তা মিহিরের জানা নেই।মেয়েটার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে মেয়েটাকে রাস্তার পাশে টেনে আনলো।ট্রাক ড্রাইভার রাস্তা ক্রস করার সময় বললো,
“কি মেয়ে রে বাবা!কতবার হন বাজালাম কোনো হেলদোল নেই।”
মিহির ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললো,
“আপনারাও তো ট্রাকটা থামাতে পারতেন!
ততক্ষণে ট্রাক বহুদূর চলে গিয়েছে।।মিহির আরাধ্যার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
আচমকা সবটা ঘটায় আরাধ্যা বেশ অবাক হয়ে গেলো।সে দেখলো একটা ছেলে তার হাতটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।যা দেখে সে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো।
মিহির বুঝতে পারলো সে মেয়েটার হাত ধরে আছে বলে মেয়েটার অস্বস্তি লাগছে।তাই সে মেয়েটার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
“চোখের সাথে সাথে কি কানটাও খারাপ হয়ে গেছে নাকি?ড্রাইভার হন দিচ্ছে প্লাস আমি দৌড়ে আসতে আসতে কয়বার ডাকলাম কিন্তু আপনার কোনো হেলদোল’ই নেই।”
আরাধ্যা নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বললো,
“থ্যাংকস আমাকে বাঁচানোর জন্য।”
আরাধ্যা কথাটা বলে আবার হাঁটা শুরু করলে মিহির পিছন থেকে ডাক দিলো,
“এই যে চাশমিশ!”
মিহিরের ডাক শুনে আরাধ্যা পিছনে ফিরে তাকালো।আরাধ্যা পিছনে ফিরতেই মিহির গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমার মনে হচ্ছে আপনি মেইবি কোনো বিষয় নিয়ে গভীর ভাবনায় আছেন।তাই বলছিলাম কি আপনি চাইলে আমার সাথে যেতে পারেন।আমি আপনাকে আপনার বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারি।”
“তার কোনে দরকার নেই।আমি একাই চলে যেতে পারবো।”
“আরে শুনেন এই মিহির অলটাইম মানবসেবায় নিয়জিত থাকে।আপনার মতো একটা হাফ মেন্টালকে যদি রাস্তায় এভাবে ছেড়ে যাই তাহলে নিশ্চয়ই কালকে সকালে ব্রেকিং নিউজে দেখাবে ‘রাস্তার মাঝখান দিয়ে আনমনে হাঁটার কারণে প্রাণ গেলো এক তরুণীর।’কিন্তু এটা তো আমি মানতে পারবো নাহ্।”
মিহিরের কথা শুনে আরাধ্যা বেশ চটে গেলো।সে নাক ফুলিয়ে বললো,
“আমি মোটেও হাফ মেন্টাল নাহ্।আমি জাস্ট একটু চিন্তায় ছিলাম তাই ওভাবে হা্ঁটতে ছিলাম।আর শুনেন আপনি অন্য কোথাও গিয়ে মানবসেবা করেন।আর ব্রেকিং নিউজে যদি ওটা দেখায় একটু কষ্ট করে মেনে নিয়েন।এটা ভেবে মেনে নিয়েন একবার তো আমি বাঁচিয়েছি।দ্বিতীয় বার যদি কোনো দূর্ঘটনা ঘটে আপনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন নাহ্ সিম্পল!”
আরাধ্যার কথা শুনে মিহির মুচকি হাসলো।তারপরে ব্লেজারটা গা থেকে খুলে হাতে নিয়ে বললো,
“বেশ গরম পড়েছে।বোধহয় বৃষ্টি হবে।”
মিহির কথাটা বলার সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হলো।আরাধ্যা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো বৃষ্টি শুরু হয়েছে।যা দেখে আরাধ্যার মুখে হাসি ফুটলো।কারণ সে বৃষ্টি খুব ভালোবাসে।আরাধ্যা বৃষ্টি দেখে লাফানো শুরু করলো।তারপরে মিহিরকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“বাহ্ আপনার কথা তো দেখি মিলে যায়!”
মিহির’ আরাধ্যার কথা শুনে হাসি দিলো।সেও বেশ অবাক হয়েছে তার কথার পরেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায়।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সব’ই আল্লাহর ইচ্ছা।বাই দ্যা ওয়ে চাশমিশ।অনেক রাত হয়ে গেছে।রাস্তা-ঘাটও ফাঁকা।এতো রাতে বৃষ্টিতে ভেজাও ঠিক নাহ্।সো চলে আসুন।”
“আপনি যান নাহ্!আমার জন্য আপনাকে ওয়েট করতে কে বলছে?আর আমি বৃষ্টি অনেক ভালোবাসি।তাই বৃষ্টি শেষ হলেই বাড়ি ফিরবো।”
মিহির আর কিছু নাহ্ বলে দৌড়ে গিয়ে তার গাড়ি এনে আরাধ্যার সামনে দাঁড়া করায়।তারপরে গাড়ি থেকে নেমে বললো,
“দেখুন এই জায়গাটা বেশি ভালো নাহ্।আপনার কোনো বিপদ হতে পারে।সো আমার সাথে চলুন।আমি আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিবো।তারপরে নাহয় বৃষ্টিতে ভিজবেন!”
আরাধ্যা মিহিরের কথা শুনে থেমে যায়।তারপরে ওড়নাটা গায়ে প্যাঁচিয়ে মিহিরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“এই যে আপনি বলতেছেন এই জায়গা ভালো নাহ্।আমার বিপদ হতে পারে!তবে আমি আপনাকে কিভাবে বিশ্বাস করবো?আপনিও তো আমার কাছে অপরিচিত।আপনিও তো আমার ক্ষতি করতে পারেন তাই-নাহ!”
আরাধ্যার কথা শুনে মিহির ভ্রু কুচকে বললো,
“বাহ্ কি সুন্দর কথা বললেন!যাকে নিজের জীবন বাজি রেখে বাঁচাতে আসলাম তার ক্ষতি করবো?এটা কিভাবে হয়!”
মিহিরের কথা শুনে আরাধ্যা হেসে দেয়।তারপরে হাসি থামিয়ে বলে,
“আমি আপনার সাথে মজা করেছি।কারণ আপনাকে দেখে আমার একবারও মনে হচ্ছে নাহ্ যে আপনি আমার ক্ষতি করতে পারেন!ওকে চলুন আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবেন।”
আরাধ্যা মিহিরের গাড়িতে উঠে বসলো।মিহির মুচকি হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি চালানো শুরু করলো।আরাধ্যা মিহিরকে বললো তার বাড়ি কোথায়!সেই অনুযায়ী মিহির গাড়ি চালাচ্ছে।দুজনের মাঝে নিরবতা।
মিহির গাড়ি নিয়ে আরাধ্যাদের বাড়ির সামনে থামালো।ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে।আরাধ্যা গাড়ি থেকে নেমে বললো,
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।আপনি আমার সাথে ভিতরে আসুন।”
“না থাক পরে একদিন আসবো।বাড়ি তো চিনেই ফেললাম।”
আরাধ্যা মুচকি হেসে মিহিরকে বিদায় জানিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।আরাধ্যা যেতে মিহির বললো,
“মাশাআল্লাহ কি সুন্দর মেয়ে-তাহ্!চোখে চশমা থাকায় আরো কিউট লাগে।”
হঠাৎ মিহিরের মনে পড়লো সে তো মেয়েটার নামই জিজ্ঞেস করেনি।মিহির কপালে হাত দিয়ে বললো,
“ওফ শিট!চাশমিশের নামটাই তো জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেলাম!থাক নাম জেনে কি হবে!উনি তো আমার চাশমিশ হয়েই থাকবে।”
মিহির কথাটা বলে মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
#চলবে………………..