রাগে অনুরাগে পর্ব-০২

0
470

#রাগে_অনুরাগে💚✨

#পর্ব_০২

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরাধ্যা বাড়ি ঢুকে দেখলো সবাই তার জন্য বসে আছে।সে দেখলো রুশাও তার বাড়িতে এসে হাজির।আরাধ্যা বাড়িতে আসতেই রুশা আর রুমা বেগম আরাধ্যার কাছে এগিয়ে আসলো।রুমা বেগম এসে আরাধ্যার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“মা কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?তোর জন্য আমাদের কত চিন্তা হচ্ছিলো।রুশা আমাদের সবটা বলেছে।”

আরাধ্যা মৃদু হেসে বললো,

“আরে আম্মু আমি একদম ঠিক আছি।আমার কিছু হয়নি।”

আরাধ্যা রুশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“ওই পেত্নী তুই আমাদের বাড়িতে চলে এসেছিস!”

“তা আমি কি করবো?আমাদের কত চিন্তা হচ্ছিলো তুই জানিস?তুই হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলি।আর এতো লেট হলো কেনো তোর আসতে?”

আরাধ্যা মনে মনে বললো,

“মিহির বাবুর কথা সবাইকে জানানো ঠিক হবে নাহ্।”

আরাধ্যা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“আসলে আমি মেইন রোড দিয়ে এসেছি তো তাই টাইম লেগেছে।আর বৃষ্টি হচ্ছিলো তুই তো জানিস আমার বৃষ্টি কত পছন্দ!”

রুমা বেগম আরাধ্যাকে ভালো ভাবে দেখে বললো,

“মা তোর কোনো বিপদ হয়নি তো!কারণ এই রাতের বেলা মেইন রোড তো তেমন ভালো নাহ্।”

“আম্মু আমার কিছু হয়নি।আমি একদম ঠিক আছি।তোমরা চিন্তা করো নাহ্ তো।আর হ্যাঁ আমার বিয়ে নিয়ে বেশি মাতামাতি করো নাহ্।আমার একটু টাইম চাই।এইবার তো তোমাদের কথায় বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।সবটা তো দেখলে!”

হিমু সাহেব আরাধ্যার কাছে এসে তার মাথায় হাত দিয়ে বললো,

“মা পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।তোর জন্য এমন একটা ছেলেকে পছন্দ করেছিলাম!”

“আহ্ বাবা তুমি এইসব কি বলছো?বাবা কখনো মেয়ের কাছে ক্ষমা চায় নাকি!”

“তারপরেও….”

হিমু সাহেবকে থামিয়ে আরাধ্যা বললো,

“বাবা এইসব কথা বাদ দেও।আর রুশু চল।তুই আজকে না হয় আমার সাথেই থাকবি।কালকে বাসায় যাস।”

আরাধ্যা তার রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো।রুশাও আরাধ্যার পিছনে গেলো।আরাধ্যা তার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।তারপরে রুশাকে বললো,

“তুই বিয়ে বাড়ি রেখে আমাকে খুঁজতে বের হয়ে গিয়েছিস!”

“আফটার অল তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড আধু।তোর প্রায়োরিটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি।”

রুশার কথা শুনে আরাধ্যা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“তোর মতো বেস্টফ্রেন্ড পেয়ে আমি নিজেকে অনেক লাকী মনে করি।”

“সেইম টু ইউ মিস.আধুরাণী।”

রুশার কথায় আরাধ্যা হেসে দিলো।আরাধ্যা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বললো,

“রুশু তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।আমার খুব টায়ার্ড লাগতেছে।ঘুমিয়ে পড়লে ভালো লাগবে।”

“ওকে তুই শুয়ে পড় আমি আসতেছি।”

আরাধ্যা রুশার কথায় মৃদু হাসলো।রুশা ওয়াশরুমে চলে গেলো।আরাধ্যা বিছানায় শুতেই হঠাৎ তার মিহিরের কথা মনে পড়লো।

“আজকে ওই লোকটা না থাকলে আমার কত বড় একটা বিপদ হয়ে যেতো।আমি কি ভুল করতে যাচ্ছিলাম!আমাকে কি পেত্নীতে ধরে ছিলো নাকি?খেয়ে কাজ নাই রাস্তার মাঝখান থেকে হাঁটতে ছিলাম।”

আরাধ্যা কথাগুলো বলে মুখ গোমড়া করে ফেললো।

/🌼/

মিহির আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে ছিলো।হঠাৎ তার সামনে আরাধ্যার মুখ ভেসে ফুটলো।আরাধ্যার মুখটা মনে পড়তেই মিহিরের মুখে হাসি ফুটলো।

“কি কিউটিপাই একটা মেয়ে!আমার লাইফের ফাস্ট ক্রাশ।এর আগে কখনো কোনো মেয়েকে এতো ভালো লাগেনি আমার।যতটা ভালো লেগেছে আমার চাশমিশকে!”

কিছু একটা ভাবতেই মিহিরের মুখ মলিন হয়ে গেলো।সে বিছানায় বসে বললো,

“আচ্ছা আমি যে তাকে নিয়ে এতোকিছু ভাবতেছি।তারও তো কেউ থাকতে পারে!সেও তো কাউকে ভালোবাসতে পারে!”

কথাগুলো ভাবতেই মিহিরের খুব খারাপ লাগলো।সে মুখটা গোমড়া করে বললো,

“যদি লাইফের ফাস্ট ক্রাশকে হারিয়ে ফেলি।তাহলে কিভাবে হবে!আমি তো চাশমিশের প্রেমে পড়ে গেছি।”

হঠাৎ মিহিরের দরজায় কেউ ঠকঠক শব্দ করলো।মিহির বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দেখলো মুহিত দাঁড়িয়ে আছে।মুহিতকে দেখে মিহির ভ্রু কুচকে বললো,

“কি রে এতো রাতে তুই এখানে কি করিস?”

“এতো রাত পর্যন্ত তুমি জেগে আছো তাই দেখতে আসলাম।”

মুহিতের কথা শুনে মিহির মুচকি হেসে বললো,

“প্রেমে পড়েছি তো তাই সেটা ফিল করার চেষ্টা করতেছি।”

“ভাইয়া তুমি প্রেমে পড়েছো?”

“হুম।”

“বলো নাহ্ ভাবি কেমন দেখতে?”

“ধ্যাত এখনো নামটাই জানলাম নাহ্ আর ভাবি বানিয়ে দিলি!”

“প্রেমে যে পড়েছো এটাই বড় কথা।নাম তো জানাই যাবে কোনোভাবে!”

“তা অবশ্য ঠিক বলেছিস।তবে এখন এতো পাকনামি না করে যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।এতো রাত জেগে কি করিস তুই?”

“একটা হরর মুভি দেখতে ছিলাম।দেখা শেষ এখন ঘুমাতে যাবো।”

“ওকে যা।গুড নাইট।”

“গুড নাইট ভাইয়া।”

মুহিত চলে গেলো।মিহির দরজা লাগিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।তার চোখের সামনে বারবার আরাধ্যার মুখটা ভাসছে।

“এই মেয়ে একদিনেই আমাকে পাগল করে দিয়েছে।আজকে মনে হয় আমার আর ঘুম আসবে নাহ্।”

মিহির কথাটা বলে হেসে দিলো।হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই তার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।সে তার বিছানার পাশে রাখা ফটোফ্রেমটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

“মা তুমি আমাদের ছেড়ে এতো তাড়াতাড়ি না চলে গেলেও পারতে!”

—🦋🌸—

ফজরের আযানের শব্দে আরাধ্যার ঘুম ভাঙলো।সে ঘুম থেকে উঠে ওযু করে এসে নামাজ পড়লো।নামাজ শেষ হতেই সে দেখলো রুশা তার পাশে বসে নামাজ পড়ছে।আরাধ্যা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো।তারপরে বিছানায় এসে বসলো।রুশার নামাজ শেষ হতেই রুশা এসে আরাধ্যার পাশে বসলো।

“কি রে আধু আর ঘুমাবি নাহ্?”

“আচ্ছা রুশু আমাকে কি চশমা পড়লে সত্যিই ডাবল ব্যাটারির মতো লাগে?”

“আধু তুই এখনো ওই আর্যর কথা নিয়ে পড়ে আছিস?বাদ দে ওর কথা।”

“আচ্ছা শোন কালকে রাতে আমার সাথে কি কি ঘটেছে।”

আরাধ্যা রুশাকে কালকে রাতের সব ঘটনা বললো।মিহিরের কথাও বললো।

রুশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“এতোকিছু ঘটেছে আর তুই আমাদের কিছুই বললি নাহ্!”

“মা-বাবার সামনে ইচ্ছে করেই বলিনি।”

“বাই দ্যা ওয়ে তোর মুখে হাসি ফুটলো কি মিহিরের কারণে?”

রুশার কথায় আরাধ্যা চোখ ছোট ছোট করে বললো,

“মোটেও নাহ্।আমার মুখে হাসি ফুটেছে শুধুমাত্র বৃষ্টির কারণে।আমার মনে যতই কষ্ট থাকুক।বৃষ্টি দেখলে তা নিমিষেই হারিয়ে যায়।”

রুশা আরাধ্যার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“সরি রে আধু।আমি আগে যদি সবটা জানতাম মানে আর্য যে তোর হবু বর তা জানতাম তাহলে হয়তো এমন হতো নাহ্।”

রুশার কথায় আরাধ্যা মুচকি হেসে বললো,

“পাগলি নাকি তুই!আর জানলেও কি করতি?যে যাকে ভালোবাসে তার সাথেই তাকে ভালো মানায়।সো আর্য সাহেবের সাথে ফিহাকেই ভালো মানাবে।”



মিহির নামাজ পড়ে এসে দেখলো মুবিন সাহেব বসে বসে পেপার পড়ছেন।মিহির গিয়ে মুবিন সাহেবের পাশে বসলো।মিহিরকে দেখে পেপারটা ভাঁজ করে রেখে মৃদু হেসে বললেন,

“নামাজ পড়তে গিয়েছিলি মিহির?”

“হ্যাঁ বাবা।অনেকদিন পরে মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়লাম।”

“ভালো করেছিস।আজ তো তোর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী!এই দিনেই সোহানা আমাদের একা করে চলে গিয়েছিলো।”

মুবিন সাহেব কথাটা বলে কেঁদে দিলেন।মিহির নিজেকে স্বাভাবিক রেখে মুবিন সাহেবের হাত ধরে বললো,

“বাবা তুমি এভাবে কাঁদলে চলে নাকি?তোমার জন্যই আমরা আজ এই পর্যন্ত আসতে পেড়েছি।আর আল্লাহ হয়তো চাননি মা আমাদের সাথে এতোদিন থাকবেন।তাই তাকে নিয়ে চলে গিয়েছেন।”

মিহির কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তার চোখ ছলছল করতেছে।

/💙\

আরাধ্যা রুশাকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছে।তার গন্তব্য এখন ফিহার শ্বশুর বাড়ি মানে আর্যর বাড়ি।

“আচ্ছা রুশু কিছু মিষ্টি কেনা উচিত।কারণ ফিহার শ্বশুর বাড়ি বলে কথা!”

“আরে কিছু লাগবে নাহ্ আধু।এমনিই চল।”

“তুই আসলেই পাগল হয়ে গেছিস।”

“তোর একটুও রাগ হচ্ছে নাহ্ আধু?”

“আরে রাগ করে কি হবে!তাড়াতাড়ি চল।মিষ্টি কিনে ফিহার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ওর সাথে দেখা করবো।দ্যান তোর বাসায় গিয়ে তোকে পৌঁছে দিবো।”

“কেনো রে আমি কি বাচ্চা নাকি?”

“বা রে আমার একটা দায়িত্ব আছে নাহ্!”

আরাধ্যার কথায় রুশা হেসে দিলো।আরাধ্যাও তার সাথে হাসলো।



“মুহিত লিস্ট মিলিয়ে তো সব বাজার শেষ।খালি দই-মিষ্টি নিলেই হবে।”

“হ্যাঁ ভাইয়া।”

“আচ্ছা মুহিত তুই গাড়িতে বসে থাক।আমি মিষ্টি নিয়ে আসতেছি।”

“ওকে ভাইয়া।”

#চলবে………………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]