রাগে অনুরাগে পর্ব-০৩

0
405

#রাগে_অনুরাগে💚✨

#পর্ব_০৩

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

মিহির মিষ্টির দোকানে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো।মেয়েটা পড়ে যেতে যাবে এমন সময় মিহির তাকে ধরে ফেললো।মিহির আর আরাধ্যা মুখোমুখি।মিহির একভাবে আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে আছে।তার মুখে মুচকি হাসি।

মিহির এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে আরাধ্যা ভ্রু কুচকে মিহিরের মুখের সামনে তুড়ি মারলো।যার ফলে মিহিরের ধ্যান ভাঙ্গলো।সে আরাধ্যাকে দাঁড়া করিয়ে বললো,

“আরে চাশমিশ আপনি এখানে?”

“এক আত্মীয়ের বাসায় যাবো তো তাই মিষ্টি কিনতে আসলাম।তা আপনি কি করতেছেন এখানে?”

“আসলে আজকে আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী।যার কারণে কিছু অনাথ আশ্রমে খাবার দেবো।এখানে দই-মিষ্টির অর্ডার দেওয়া আছে সেগুলো নিতে আসলাম।”

আরাধ্যা অবাক হয়ে বললো,

“আপনার মা নেই?”

“নাহ্।আমি যখন ইন্টারে পড়ি তখনই মা মারা গিয়েছে।”

মিহিরের কথা শুনে আরাধ্যার মুখটা মলিন হয়ে যায়।মিহির বুঝতে পারে আরাধ্যা কষ্ট পেয়েছে।আরাধ্যার মন ভালো করতে মিহির বললো,

“আরে মা নেই তো কি হয়েছে!বাবা আর ভাই তো আছে।এতো সিরিয়াস হয়েন নাহ্।”

আরাধ্যা মিহিরের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তার চোখ ছলছল করছে।আরাধ্যা মৃদু হেসে বললো,

“একটা জিনিস কি জানেন!আপনি অনেক কষ্ট চেপে রেখেও হাসতে পারেন।”

মিহির মুচকি হেসে বললো,

“ঠিক আপনার মতো।”

আরাধ্যা কিছু বলতে যাবে এমন সময় রুশা মিষ্টি কিনে এনে বললো,

“আধু মিষ্টি কেনা শেষ।এখন চল।”

রুশাকে থামিয়ে আরাধ্যা বললো,

“আরে রুশা ওয়েট কর।রুশা উনি হলেন মিহির বাবু।আর মিহির বাবু ও হলো রুশা।মানে আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড।”

মিহির রুশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“Nice to meet you.”

রুশা হাসি দিয়ে বললো,

“Same here.”

আরাধ্যা মিহিরকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আচ্ছা মিহির বাবু আজকের মতো আসি।পরে আবার দেখা হবে আল্লাহ হাফেজ।”

আরাধ্যা কথাটা বলে রুশার সাথে চলে যেতে যাবে এমন সময় মিহির পিছন থেকে বললো,

“চাশমিশ আপনার সাথে একটু কথা ছিলো ”

মিহিরের কথায় আরাধ্যা আর রুশা পিছনে ঘুরে তাকালো।

“আচ্ছা রুশু তুই গিয়ে রিক্সা ঠিক কর।আমি উনার কথা শুনে আসতেছি।”

“ওকে।”

রুশা চলে গেলো।আরাধ্যা এসে মিহিরের সামনে দাঁড়ালো।”

“বলুন কি বলবেন।”

“আসলে আপনার নামটা আমার জানা হয়নি।উনি আপনাকে আধু ডাকতে ছিলো।আধু কি আপনার নাম?”

“আমার নাম আরাধ্যা রহমান।রুশা আমাকে শর্ট করে আধু ডাকে।”

“ওহ্ আচ্ছা।”

“ওকে তাহলে এখন আসি।”

“জ্বি যান।”

আরাধ্যা চলে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে মিহিরের সামনে দাঁড়ায়।

“বাই দ্যা ওয়ে মিহির বাবু আপনার মুখে কিন্তু ‘চাশমিশ’ ডাকটা শুনতেই আমার ভালো লাগে।”

আরাধ্যার কথায় মিহির মুচকি হেসে বললো,

“আমারও কিন্তু আপনার মুখে ‘মিহির বাবু’ ডাক শুনতে বেশ ভালোই লাগে।”

দুজনে একসাথে হেসে দিলো।আরাধ্যা চলে গেলো।মিহির দোকান থেকে মিষ্টি নিয়ে মুহিতের কাছে গেলো।

—🐰✨—

আরাধ্যা আর রুশা’ আর্যদের বাড়িতে গেলো।আরাধ্যা আর্যদের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।আরাধ্যাকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে রুশা বললো,

“খারাপ লাগতেছে তোর আধু?”

রুশার কথায় আরাধ্যা মৃদু হেসে বললো,

“খারাপ লাগছে নাহ্।তবে একটা জিনিস ভেবে হাসি পাচ্ছে যে যেই বাড়িতে কিছুদিন পরে আমার বউ হয়ে আসার কথা ছিলো।আজ আমি সেই বাড়িতে কি পরিচয়ে আসছি!”

রুশা আরাধ্যার কাঁধে হাত দিলো।আরাধ্যা নিজেকে স্বাভাবিক করে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,

“রুশু ভিতরে চল।ফিহা কেমন আছে সেটা তো আমাদের জানতে হবে।যতই হোক ও আমাদের বান্ধবী।”

“হুম চল।তবে চাচা-চাচি অনেক ভুল করেছে একটা ছেলেকে ভালো করে না চিনেই বিয়েটা দিয়ে দিলো।”

“আঙ্কেল-আন্টির কি দোষ বল?ফিহা তো নিজেই আর্য সাহেবের সাথে রিলেশন করে বিয়ে করেছে।তবে ফিহা চাইলেই আর্যর সাথে আমাদের পরিচয় করাতে পারতো।তাহলে এতো কিছু ঘটতো নাহ্।”

সুফি বেগম দরজার সামনে থেকে যাওয়ার সময় দেখলো আরাধ্যা দাঁড়িয়ে আছে।সঙ্গে আরেকটা মেয়ে।সুফি বেগমের মুখটা মলিন হয়ে গেলো আরাধ্যাকে দেখে।সুফি বেগম আরাধ্যার কাছে এগিয়ে আসলো।

আরাধ্যা আর রুশা কথা বলতেছিলো হঠাৎ দেখলো সুফি বেগম তাদের দিকে এগিয়ে আসতেছে।সুফি বেগম আরাধ্যার কাছে এসে তার গালে হাত দিয়ে বললো,

“মা তুমি এখানে?”

“আরাধ্যা হাসি দিয়ে বললো,

” হ্যাঁ আন্টি।আসলে ফিহা আমার বান্ধবী।আর রুশার কাজিন।”

আরাধ্যা রুশাকে দেখিয়ে বললো।সুফি বেগম রুশার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো।

“আচ্ছা তোমরা ভিতরে আসো।আমি ফিহাকে ডেকে দিচ্ছি।”

আরাধ্যা আর রুশা বাড়ির ভিতরে গেলো।সুফি বেগম আরাধ্যার হাত ধরে বললো,

“মা পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।আর্য যে এমনটা করবে আমি কখনো তা ভাবিনি।”

“আরে আন্টি এইসব বাদ দেন।উনি যাকে ভালোবাসে তাকেই বিয়ে করছে।সেটা তো ভালোই হয়েছে।”

সুফি বেগম কিছু না বলে মলিন হাসি দিলো।আর্য আর ফিহা একসাথে নিচে নামলো।ফিহা’ রুশা আর আরাধ্যাকে দেখে তাদের কাছে দৌড়ে আসলো।দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরে বললো,

“কি রে তোরা দুজন?আমাকে রেখে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলি?বাড়ি থেকে চলে আসার সময়ও তোদের দেখি নাই।”

রুশা কিছু বলতে যাবে তার আগে আরাধ্যা বললো,

“আরে আমরা একটু ঘুরতে গেছিলাম।এমনি সময় তো ওতো রাতে আমাদের কেউ বাইরে ঘুরতে দেয় নাহ্।তাই কালকে রাতে সুযোগটা ছাড়তে পারিনি।”

ফিহা আস্তে করে আরাধ্যাকে বললো,

“আধু আমি কিন্তু সবটা জানি।আমার শ্বাশুড়ি মা আজ সকালে আমাকে সবটা বলেছেন।”

আরাধ্যা ভ্রু কুচকে ফিহার দিকে তাকিয়ে বললো,

“ভালো হয়েছে।সবটা জানিস জেনেই খুশি হলাম।”

“আর্য যে এমনটা করতে পারে আমার জানা ছিলো নাহ্।”

আর্য ফিহার পিছনে দাঁড়িয়ে বললো,

“ফিহা এতো আস্তে আস্তে কি কথা বলতেছো তোমরা?”

আর্যকে দেখে আরাধ্যা হাসি দিয়ে বললো,

“আরে জিজু কেমন আছেন আপনি?”

আর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“তুমি কি এখানে আবার অপমানিত হতে এসেছো?”

আরাধ্যা চোখের চশমা ঠিক করে বললো,

“আরে আপনি তো আমার চোখের সমস্যা ছাড়া আর কোনো খুঁত ধরতে পারেননি।সো এতে তো অপমানিত হওয়ার কিছু নেই।এটা সিম্পল ব্যাপার।”

আর্য কিছু বলতে যাবে তার আগে ফারুক সাহেব বললেন,

“আর্য ওরা আমাদের গেস্ট।আশা করি তুমি ওদের সাথে কোনো বাজে আচরণ করবে নাহ্।”

আর্য কিছু না বলে রাগে কটকট করতে করতে তার রুমের দিকে চলে গেলো।

||🌻||

আরাধ্যা রুশাদের বাড়িতে এসেছে রুশার সঙ্গে।আরাধ্যা গিয়ে রুপা বেগমকে বললো,

“আন্টি তোমার মেয়েকে তোমার কাছে দিয়ে গেলাম।এখন আমি যাই।”

রুপা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললেন,

“এই ভরদুপুরে তুই চলে যাবি মানে?না খেয়ে এক পা এই বাড়ি থেকে বের করে দেখ।তোর খবর আছে।”

“আন্টি আমার খুদা নেই।ফিহার শ্বশুর বাড়িতে অনেক কিছু খেয়েছি।”

“চুপ আর কোনো কথা শুনতে চাই নাহ্।তুই আর রুশা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।নাহলে কিন্তু দুটোর’ই খবর আছে!”

`🌸′

মিহির আর মুহিত অনাথ আশ্রমে খাবার দিয়ে বাড়িতে আসলো।তারপরে মুবিন সাহেবকে নিয়ে দুই ভাই খেতে বসলো।তিনজনে খাচ্ছে হঠাৎ করে মুবিন সাহেব বললো,

“মিহির আমারও তো বয়স হচ্ছে।একদিন হঠাৎ করে মারা যাবো।তার আগে তোর বিয়েটা দেখে যেতে চাই বাবা।মুহিতের তো বিয়ের এখনো দেরি আছে।”

মিহির চোয়াল শক্ত করে বললো,

“বাবা তুমি মারা যাওয়ার কথা কেনো বললে?”

“আচ্ছা বাবা আর বলবো নাহ্।কিন্তু তুই এখন বিয়েটা কর।”

মিহির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“বাবা কয়েকদিন ওয়েট করো।কিছু খবর নেওয়া হয়ে গেলেই তোমাকে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবো!”

মুহিত পাশে থেকে বললো,

“বাবা ভাইয়া তো প্রেমে পড়েছে।”

মুবিন সাহেব হাসি দিয়ে বললো,

“কি রে মিহির!মুহিত কি সত্যি বলতেছে নাকি?”

মিহির মুচকি হেসে বললো,

“হ্যাঁ বাবা।আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।প্রথম দেখাতেই যাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।”

#চলবে…………..