রৌদ্র মেঘের আলাপণ পর্ব -০৮

0
403

#রৌদ্র মেঘের আলাপণ
#পর্ব-৮
#WriterঃMousumi Akter

–ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভড়কে গেলো মেঘ।মাথার উপর সিলিং ফ্যান পায়ের কাছে সিলিং ফ্যান ফুল স্পীডে চলছে।সকালের দিকে বেশ ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে।রৌদ্র মেঘের শাড়ি টেনে কখন গায়ে জড়িয়েছে মেঘকে সহ ঘুমের মাঝে মেঘ বুঝতেই পারে নি।মাঝে তো কোলবালিশ ছিলো কোলবালিশ ফ্লোরে পড়ে আছে।রৌদ্র বুকের সাথে মেঘকে জড়িয়ে ধরে একটা শিশুর মতো ঘুমোচ্ছে।মেঘ ভীষণ ঘাবড়ে গেলো।আস্তে করে নিজের শাড়ি টেনে নিয়ে ভাল ভাবে পরে নিলো।রৌদ্র তার ঘুমের মাঝে কোনো সুযোগ নেই নিতো।নাতো তেমন কিছুইনা,বাড়াবাড়ি কিছু হলে সে নিশ্চয়ই বুঝতো।এই ভারী শাড়ি গহনায় ভীষণ অস্বস্তি লাগছে মেঘের।কাকে কি বলবে মেঘ কিছুই বুঝতে পারছে না।ওয়াশ রুমে গিয়ে ওজু করে নামাজ পড়ে নিলো মেঘ।ও বাড়িতে খুব ভোরে উঠার ই অভ্যাস মেঘের।টানা দুই বছরে প্রথম কোনো সকাল যেখানে চিন্তা নেই কি রান্না করতে হবে,রান্না পছন্দ হবে কিনা,শ্বাশুড়ির বকাঝকার ও চিন্তা নেই।তবে চিন্তা হচ্ছে সবাই এই বিয়ের কথা জেনে গেলে কি হবে।কি ভাববে সবাই তাকে।মেঘ জীবনে কখনো কোনো অন্যায় করেনি,কাউকে কষ্ট ও দেয় নি,আজ প্রথমবার নিজের ননদের জন্য ঠিক হওয়া পাত্রর সাথে তার বিয়ে হয়ে ভীষণ অপরাধ বোধ হচ্ছে।

আবার এই রৌদ্র নামক মানুষ টাকে উপরে যায় বলুক মেঘ মন থেকে জানে রৌদ্রের থেকে বেশী ভাল তাকে কেউ কখনো বাসেনি।মেঘ কখনো ভুলতে পারেনি রৌদ্রকে।বিগত দুই বছরে মেঘ বহুবার ভেবেছে রৌদ্রর কথা কিন্তু নিজের বিবাহিত জীবনে অশান্তি বাড়াতে চায় নি মেঘ তাই রৌদ্রর সাথে যোগাযোগ করেনি।রৌদ্রর ভয়ংকর বাসাকে মেঘ খুব ভয় পেতো।মেঘ জানে রৌদ্র তাকে ভয়ংকর রকমের ভালবাসে।এক টানা বৃষ্টিতে ভিজেছে,রোদে পুড়েছে মেঘ কে দেখার জন্য।রৌদ্রর এর ভয়ংকর ভালবাসার জন্য বিয়ের আগে বাবার কাছে ভীষণ রকমের মার খেয়েছিলো।রৌদ্রর ভয়ংকর রকমের ভালবাসার জন্য মেঘের জীবনে বিয়ের আগে শুরু হয়েছিলো তুমুল অশান্তি।মেঘের লেখাপড়া বন্ধ হয়েছিলো,মাহিম কে ফোন করে বিয়ে ভাঙার হুমকি অভিশপ্ত করে তুলেছিলো মেঘকে।রৌদ্র মেঘ কে হুমকি দিয়েছিলো তাকে যে বিয়ে করবে তাকে খু*ন করে মেঘ কে তুলে আনবে সে।এই ভয়ে মেঘ পালিয়ে বেড়িয়েছে।

রৌদ্র মেঘের শেষ দেখার দিন রৌদ্র মেঘের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ভীষণ কেঁদেছিলো।তুমি আমার জীবনের বাতি মেঘ,তুমি ছাড়া অন্ধকার হয়ে যাবে এই জীবন।এত গুলো বছর পাগলের মতো ভালবেসেছি তোমায়।তুমি হীনা ভেষে যাবো সুখহীন জীবনে।তবে আমি মরে যাবো না মেঘ।যদি কোনদিন কষ্টে থাকো সেই দিনে আমাকে প্রয়োজন হতে পারে তোমার।সুখের দিনে না হোক কষ্টের দিনে আমি আসবো।বাবার ঠিক করা পাত্রকে স্বামি হিসেবে মেনে নিয়েছিলো মেঘ আর তাকেই ভালবাসতে শুরু করেছিলো।তাইতো রৌদ্রর ভালবাসা বুঝলেও সাড়া দেয় নি কখনো।

— বাইরে এখনো অন্ধকার এইজন্য মেঘ বিছানার এক কোনে বসে আছে।রৌদ্র ঠান্ডায় গুটিসুটি মেরে সুয়ে আছে।মেঘ ফ্যান দুইটায় অফ করে দিলো।রৌদ্র কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার এখনো ঠান্ডা লাগছে গায়ে কিছু একটা জড়ানোর প্রয়োজন।মেঘ এ বাড়ির কিছুই জানেনা কোথায় কি আছে।নিজের বিয়ের ওড়না টা রৌদ্রর গায়ে জড়িয়ে দিলো।

–খানিকক্ষণ পরে মেঘের অনুভব হলো এই মানুষ টা কে কি সে নামাজ পড়তে ডাকবে।ডাকা কি উচিত,না সে ডাকবে না।নাহ নামাজ পড়ার জন্য সবাইকে ডাকা উচিত।নামাজের সাথে রাগের কোনো সম্পর্ক নেই।মাহিমকে নামাজের জন্য ডাকলে ভীষণ বকাঝকা করতো পরে আবার বলতো সরি মেঘ সকালের ঘুম ছাড়তে পারি নাহ।তাই রিয়্যাক্ট করে ফেলি।রৌদ্র কি রিয়্যাক্ট দেখাবে।রৌদ্র রিয়্যাক্ট দেখালে আর কোনদিন সে ডাকবে না।কোনদিন ই বা কি মেঘ তো আর সারাজীবন এখানে থাকবে না।যে কোন দিন ই এখান থেকে তাকে চলে যেতে হবে।

–মেঘ আস্তে করে ডাকলো,রৌদ্র।শুনছেন।
রৌদ্র আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন।উঠুন প্লিজ নামাজের সময় হয়েছে।এইটুকু কথা মনে হয় রৌদ্রর গভীর ঘুমের দেশে প্রবেশ করতে পারছে না।এইজন্য মেঘ গায়ে হাত দিয়ে ডাকলো।আস্তে করে ঝাঁকি দিতে শুরু করলো।রৌদ্র মেঘের হাত আস্তে করে টেনে নিজের বুকের উপর এনে দুই হাতে আগলে ধরে রাখলো।রৌদ্রের চোখ বন্ধ আছে অথচ হাত দিয়ে মেঘের হাত ধরে রেখেছে।মেঘ বুঝতে পারলো ঘুমের মাঝে এমন করছে।একটা মানুষের কত ঘুম ভাবা যায়।কতক্ষণ ধরে মেঘ ডাকাডাকি করছে কানের কাছে এমন ঘ্যানঘ্যানানি কিভাবে সহ্য করছে রৌদ্র,মেঘ ভেবেই অবাক হচ্ছে।মাহিম এর কান বেশ সজাগ ছিলো এক ডাকেই রেসপন্স করতো।আর এত সময় সিনক্রিয়েট শুরু করতো।আর এই রৌদ্রের কি পরিমাণ ঘুম হয় বাবাহ।খাটের বক্সে কটন দেখে কানে হালকা সুড়সুড়ি দিতেই রৌদ্র আস্তে নড়ে মেঘের হাত ধরে একটু টান দিলো।মেঘ সম্পূর্ণ ঝুঁকে গেলো রৌদ্রের বুকের উপর।

রৌদ্র শান্ত আর স্হীর চোখে তাকিয়ে রইলো মেঘের দিকে।

মেঘ বেশ অস্বাভাবিক হয়ে গেলো।

“রৌদ্র বললো,কি হয়েছে মেঘবালিকা।”

“সরি, ভেরী সরি।আপনাকে বিরক্ত করার জন্য।আসলে নামাজ পড়ার জন্য ডাকছিলাম।আপনি ডাক শুনছিলেন না সেজন্য অনেকক্ষন ধরে ডাকাডাকি করছিলাম।”

“তো,চোখে মুখে এমন ভয় ভয় আর অপরাধী ভাব কেনো?”

“না মানে আপনাকে ডেকেছি তাই।”

“আমি তোমার স্বামি মেঘ।তুমি আমাকে ভয় পাবে কেনো?আমি ভয় পাবো তোমাকে। কেননা পুরুষ মানুষ নারীর প্রতি অসম্ভব রকমের দূর্বল।”

“আগে তো রাস্তায় মারামারি করতেন।”

“মানুষ মারি অহেতুক তো মারিনা।অন্যায় ছাড়া কাউকে কিছুই বলিনা।আর তুমি তো কোনো অন্যায় করো নি।আমাকে জান্নাতের পথে ডাকছো আর আমি রাগ করবো,আমাকে এতটা খারাপ মনে হয় তোমার।তুমি ভালবেসে চাইলে আমার জান ও হাজির মেঘ।একবার চেয়েই দেখো।”

”যা চাইবো তাই দিবেন।”

“সিওর দিবো।।”

“নামাজ পড়ে আসুন চাইবো।”

”রৌদ্র গায়ের ওড়না দেখে বেশ অবাক হয়ে বললো,আমার গায়ে তোমার ওড়না কিভাবে এলো মেঘবালিকা।”

“কিভাবে এলো বুঝবেন। যে পরিমান ঘুম আপনার আধাঘন্টা ধরে ডাকাডাকি করছি কানেই তো শুনছেন না।”

“সব ই শুনছিলাম কিন্তু ইচ্ছা করে উঠিনি।তোমার ঠোঁটের মিষ্টি বুলি সাজ সকালে উপভোগ করার মতো ছিলো।আমি এই সুন্দর মুহুর্ত ভীষণ ভাবে উপভোগ করছিলাম।ভীষণ ভাল লাগছিলো আমার কাছে তাইতো চুপটি করে তোমার ডাকাডাকি শুনছিলাম।”

মেঘ মৌন রইলো।

“রৌদ্র নামাজ শেষ করে বললো,বলো কি চাই তোমার।”

“আমাকে মুক্তি দিন আপনি।প্লিজ অনুরোধ করছি আমাকে মুক্তি দিন।আমি থাকতে চাইছি নি আপনার সাথে।আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে কিছু জানার আগে আমাকে যেতে দিন প্লিজ।”

“রৌদ্র বাকা হেসে বললো,এত রিস্ক নিয়ে বিয়ে করেছি কি তোমাকে মুক্তি দিতে।এইটা মাথায় ভুলেও এনোনা মেঘ।কোনদিন পাবেনা মুক্তি।আমাকে খারাপ ভাবো নো প্রব্লেম।তোমার ভালোর জন্য যা করতে হয় করবো আমি।”

“মেঘ কাঁদতে কাঁদতে বললো,কি ক্ষতি করেছি আমি বলুন।কি চান আমার থেকে। ”

“স্টপ ক্রায়িং মেঘ।কোথায় যাবে তুমি?কার কাছে যাবে।আনসার মি মেঘ।কে আছে তোমার।কাল রাতে ছেলেগুলো টেনে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিলো তোমাকে মেঘ।এই শহর এতটা সোজা নয় মেঘ।তোমার মতো ফুল রাস্তায় বেরোলে কলঙ্কিত করবে তোমাকে,ছিড়ে টুকরো টুকরো করবে।আর যদি বলো পরিবার তোমাকে তারা বের করে দিয়েছে। এতকিছুর পরেও তুমি যেতে চাইলে আমি যেটা বলেছিলাম সেটাই হবে।শেষ করে দিবো সবাইকে। এটা মাথায় রেখো।আর হ্যাঁ তোমার প্রাক্তণ শ্বশুর বাড়িতে আমাদের বিয়ের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি।আর এটাই তোমার শ্বশুর বাড়ি মাথায় রেখো।”

“হোয়াট আপনি ছবি পাঠিয়েছেন।আর কত নিচে নামবেন আপনি?”

“যতটা নিচে নামলে তোমাকে ভালো রাখা যায় ততটায়।”

যে পরিবারে এতদিন থেকেছি তারা আমাকে ভালবাসে নি এটা ঠিক,তবে আমার জন্য তাদের বিপদ হোক এটা চাই না আমি।আমি চলে গেলে তাদের ক্ষতি করবে রৌদ্র।কোথায় বা যাবো আমি, রৌদ্র সারাক্ষণ নজর রাখছে আমার উপর।মেঘ নিরুপায়।

এরই মাঝে পাশের রুম থেকে ভাঙা চোরা আর কাঁন্নার আওয়াজ আসছে।রৌদ্র ছুটে গেলো পাশের রুমে।মেঘ ও পেছনে পেছনে ছুটে গেলো।

চলবে,,