রৌদ্র মেঘের আলাপন পর্ব – ০৭

0
392

#রৌদ্র মেঘের আলাপন
#পর্ব-৭
#WriterঃMousumi Akter

–মেঘ বিছানার এক কোণে গুটিসুটি মেরে সুয়ে পড়লো।কিন্তু ঘুম আসছে না ভয়ে,নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে।এখানে আপণ বলতে কেউ নেই তার।নিজের অসুবিধার কথা জানানোর মতো ও কেউ নেই।এইদিকে একজন পুরুষ মানুষ স্বয়ং তার রুমে আছে, ঘুমোলে যদি রৌদ্র তার কাছে চলে আসে এই ভয়ে আরো চোখ বুঝতে পারছে না মেঘ। বিভিন্ন চিন্তা জেকে বসেছে মেঘের মাথায়।আজ মাহিম বেঁচে থাকলে মেঘের জীবন টা হয়তো এমন হতো না।মাহিম না থাকায় মেঘের জীবন টা আজ এমন এলোমেলো।এসব ভেবেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মেঘের।

–রৌদ্র রুমের মধ্য রাখা ডিভান এ বসে কপালের চামরা ভাজ করে একটা ফাইল দেখছে আর মেঘকে দেখছে।মেঘ উল্টা দিকে ঘুরে সুয়ে আছে।রৌদ্র একবার ফাইলে মনোযোগ দিচ্ছে তো আরেকবার মেঘের দিকে।রৌদ্র বুঝতে পারছে মেঘের মনের মাঝে অনেক অশান্তি হচ্ছে এই সময় টা অনেক খারাপ যাচ্ছে মেনে নেওয়া কষ্ট হচ্ছে।মেঘের মনের এটুকু অবস্থা বোঝার মতো ক্ষমতা রৌদ্রের আছে।মেঘ কে মানসিক ভাবে এমন ছটফট করতে দেখে রৌদ্র মনে মনে বলছে খারাপ সময়ের পরেই ভাল সময় আসে মেঘ,আজকের এই খারাপ দিনটা খুব শিঘ্রই তোমার জীবন থেকে বিলীন হয়ে যাবে। আই প্রমিজ ইউ মেঘ।সোনালী দিন তোমার জীবনে আসবেই,এই রৌদ্রকেই তুমি ভালবাসবে,বসন্ত আসবে তোমার জীবনে।

–রৌদ্র অনেক বার খাবার খেতে বলেছে তবুও মেঘ খাবার খায় নি।মেঘ খায় নি বলে রৌদ্রের মনের মাঝে অশান্তি হচ্ছে।মেঘ কে জোর করার ও সাহস পাচ্ছেনা।রৌদ্র ও না খেয়ে আছে। এইদিকে ক্ষুদায় পেট জ্বলে যাচ্ছে রৌদ্রের।মেঘ না খেলে সে খাবার মুখে তুলতে পারবে না।মেঘ যে ঘুমোয় নি রৌদ্র বুঝতে পারলো।

‘রৌদ্র ডিভান বসেই ডাকলো, মেঘ ক্ষুদা পেটে কখনো ঘুম আসে না। খাবারের সাথে রাগ করো না প্লিজ খেয়ে নাও দেখবে ঘুম আসবে।আমার প্রচুর ক্ষুদা পেয়েছে তুমি না খেলে আমিও খেতে পারবো না মেঘ।’

–মেঘের বুকের মাঝে কেমন যেনো অদ্ভুত এক অনুভূতি সাড়া দিলো।মেঘের চোখে যে ঘুম নেই উল্টা দিকে থাকা মানুষ টা মুখ না দেখেও কিভাবে বুঝতে পারলো।রৌদ্রর খাবার খাওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট দেখে মেঘের অতীতের কিছু স্মৃতি মনে পড়লো।মেঘ রোজ রাতে অপেক্ষা করতো মাহিমের জন্য এক সাথে খাবার খাওয়ার জন্য।মাহিম বাইরে থেকে খেয়ে আসতো আর মেঘ কে বলতো তুমি খেয়ে নাও অফিসের ক্লাইন্ট দের সাথে খেয়ে এসছি।মেঘ একদিন রাগ করে বলেছিলো আজ আমার সাথে খাবার না খেলে আমি রাতে না খেয়ে থাকবো।মেঘ না খেয়ে থাকলেও মাহিম মেঘের সাথে খায় নি সে রাতে।মেঘ সেদিন ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলো, ভীষণ কেঁদেছিলো।মেঘেরনা খাওয়ায় কিছুই যায় আসেনি মাহিমের।অথচ আজ সে একজনের সাথে খেতে চাইছে না আর সে আমি না খেলে খাবে না।

‘চোখের পানি মুছে মেঘে এদিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো,কিভাবে বুঝলেন আমি ঘুমোয় নি।’

‘আমার ভালবাসা এতটা ঠুনকো নয় মেঘ এটুকু বুঝবো না।একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে রৌদ্র বললো,তুমি বুঝবে না মেঘ।আমি জোর করবো না কিছুই বুঝানোর জন্য মেঘ।খুব শিঘ্রই তুমি বুঝে যাবে মেঘ।আর এই রৌদ্রর বুকে এসে মাথা গুজে বলবে আমি সেদিন বুঝি নি ভালবাসা কি।’

‘মেঘ নিশ্চুপ আছে।মুখে কোনো কথা নেই।কিছুক্ষণ পরে বললো,আপনি খেয়ে নিন খাবার।’

‘তুমি না খেলে আমি খেতে পারবো না।’

‘আমি যদি সারাজীবন না খেয়ে থাকি।’

‘পরীক্ষা নিওনা আমার ভালবাসার মেঘ।একশ তে একশ পাবো নিরানব্বই ও পাবো ন।বাই দ্যা ওয়ে আমি অনন্ত কাল না খেয়ে থেকে প্রুভ করতে পারবো।বাট তোমাকে আমার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য না খেয়ে থাকতে দিবো না।তোমার ভালোর জন্য জবরদস্হি করতে হলেও করবো পরে না হয় শাস্তি দিও মাথা পেতে নিবো।’

রৌদ্র খাবার এগিয়ে দিলে মেঘ চুপচাপ খাবার খাওয়া শুরু করলো।রৌদ্র না খেয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেঘ শান্ত কন্ঠে বললো,আপনি ও খেয়ে নিন।

রৌদ্র মেঘের সাথে খাবার খেয়ে নিলো।

–মেঘ খাবার খেয়ে নিয়ে আবার সুয়ে পড়লো।রৌদ্র মুগ্ধ হয়ে দেখছে মেঘ কে।

–হঠাত ঘুমের মধ্য মেঘ বাঁচাও বলে চিৎকার করে ওঠে।মেঘ সুয়ে থাক অবস্থায় উঠে বসে দুই হাঁটুর মাঝে মাথা দিয়ে থরথর করে কাঁপছে।

‘রৌদ্র এক ঝটকায় উঠে যায় আর মেঘ কে ধরে বলে কি হয়েছে মেঘ।ভয় পেয়েছো কেনো?রৌদ্রের চোখে মুখে মেঘের জন্য ভীষণ অস্হিরতা।’

‘মেঘের চোখের কোনে পানি।মেঘ রৌদ্র কে দেখে বলে এখানে কেউ ছিলো আমাকে মে রে ফেলবে।’

‘রৌদ্র বলে কুল ডাউন মেঘ এখানে এসে কেউ তোমাকে স্পর্শ ও করতে পারবে না।মুখ দিয়ে কটু কথা বললে সে জিভ আমি রাখবো না হাত দিয়ে স্পর্শ করলে হাত ও রাখবো না।তুমি এইখানে সেভ মেঘ। এইখানে আমি আছি।দুঃস্বপ্ন দেখেছো মেঘ। ‘

–রৌদ্র এক গ্লাস পানি নিয়ে মেঘের মুখে তুলে খাইয়ে দিলো।মেঘ ঘন ঘন কয়েক টা নিঃশ্বাস নিয়ে আবার সুয়ে পড়লো।রৌদ্র বললো আমি বসে আছি তুমি ঘুমোও।

মেঘ হঠাত কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে যার জন্য ভয়ে কাঁপছে।উল্টো দিক ঘুরে আবার সুয়ে আছে মেঘ।

–মেঘ আবার ও সুয়ে পড়লো কিন্তু ঘুমোতে পারলো না।ভয়ে শরীর কাঁপছে মেঘের।মেঘ সাইড ঘুরে দেখলো রৌদ্র নেই।রৌদ্রকে না দেখে মেঘ ভয়ে আরো কাঁপছে।কোথায় গেলো রৌদ্র।এদিক ওদিক খুজে চলেছে কিন্তু কোথাও নেই।এক মিনিটে কোথায় গেলো রৌদ্র।মেঘ ভয়ে ভয়ে ডাকলো রৌদ্র কোথায় আপনি?আমার ভয় করছে রৌদ্র আপনি কোথায়।সাড়াশব্দ না পেয়ে মেঘ ঘরের বাইরে গেলো।এই বিশাল বাড়িতে কোথায় খুজবে মেঘ কিছুই বুঝতে পারছে না।দুই রুমের পরের রুমে লাইট জ্বলছে,জানালার পাল্লা খোলা,ঘরের আলো বারান্দায় এসে পড়েছে।কারো কাঁন্নার আওয়াজ ভেষে আসছে।মেঘ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে কেউ খোলা চুলে ফ্লোরে বসে কাঁদছে।এ বাড়িতে এসে তো সবার সাথেই পরিচয় হয়েছে মেঘের কিন্তু এ কে এর সাথে তো কেউ পরিচয় করায় নি।মেঘ দেখেছে বিভিন্ন হরর মুভিতে মধ্যরাতে আত্মার কাঁন্নার আওয়াজ ভেষে আসে।মেঘ মুখ দেখতে না পেয়ে ভয়ে দৌড় দিয়ে কারো গায়ের উপর পড়ে।চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে রৌদ্রর গায়ের উপর পড়েছে।আর সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে যায়।রৌদ্র মেঘকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে চোখে,মুখে পানির ছিটা দিয়ে সুস্থ করে।রৌদ্র বেশ ঘাবড়ে যায়,মেঘের মাঝে লুকিয়ে আছে তার প্রাণপাখি মেঘের কিছু হলে রৌদ্রর মাথা পাগল হয়ে যায়।মেঘ চোখ খুলে রৌদ্রকে দেখেই ভয়ে জড়িয়ে ধরে। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আকড়ে ধরে।রৌদ্রর হাত পা যেনো অবস হয়ে যায় মেঘ তাকে জড়িয়ে ধরেছে বলে।হাত পা কাঁপছে, ভেতরে অদ্ভুত এক অনুভূতি। মেঘ আগে কখনো তার এতটা কাছাকাছি আসে নি।রৌদ্রের ভেতরে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।রৌদ্র বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।মেঘ কাঁপতে কাঁপতে বলে আমার ভয় করছে,আমাকে একা এ রুমে রেখে কোথায় গেছিলেন আপনি।এ বাড়িতে ভূত আছে।আমি এখানে আর থাকবো না।প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন।

রৌদ্র কোনো কথা বলতে পারছে না,হঠাত খুশিতে কাঁন্না পাচ্ছে রৌদ্রের।এক মনে মেঘের হৃদপিন্ডের আওয়াজ শুনছে।

‘মেঘ এতক্ষণে স্বাভাবিক হয়ে রৌদ্রের বুক থেকে উঠে বললো সরি আমি খুব ভয় পেয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।’

‘ধন্যবাদ জানায় এ ভয় কে মেহেভীন বিনতে মেঘ।এই ভয় না থাকলে আজ এত্ত বড় সারপ্রাইজ টা পেতাম না।রোজ ভয় পেও আর একটু হাগ দিও মাইন্ড করবো না।’

‘মেঘ কি বলবে বুঝতে পারছে না।প্রশ্ন করলো কোথায় গেছিলেন।’

‘ওয়াশরুমে চেঞ্জ করতে।’

‘আমার পাশে সুয়ে পড়ুন প্লিজ।কিন্তু আমায় স্পর্শ করবেন না।’

‘বিরিয়ানি পাহারা দিতে বলছো।আর খেতে নিষেধ করছো।বউ আমার আমি স্পর্শ করবো না।’

‘এই বিয়ে আমি মানিনা। ‘

‘মেঘ একটা প্রশ্ন ছিলো?ঘৃণা করো আমায়।আই মিন বিয়ের আগে কি ঘৃণা করতে।’

‘না।’

‘খারাপ লাগতো আমায়।’

‘না।’

‘আমার চরিত্রে খারাপ কিছু দেখেছো।’

‘না।’

‘তাহলে বিয়ে করলে না কেনো আমাকে মেঘ।কেনো ভালবাসলে না মেঘ আমাকে।আমাকে এত বড় শাস্তি কেনো দিলে মেঘ।তুমি জানো মেঘ আমার রক্তের সাথে মিশে আছো তুমি।তুমিহীনা কি ভীষণ যন্ত্রণার রাত পার করেছি।এই বুকে ভীষণ কষ্ট মেঘ তুমি ছাড়া।আমি তোমাকে বোঝাতে পারবোনা মেঘ তোমাকে আমি কত বেশী ভালবাসি।দুইটা বছর পাগলের মতো খুজেছি তোমায়।’

‘পুরনো কথা তুলে লাভ কী?ভাগ্য ছিলো না তাই বিয়ে হয় নি।তাছাড়া আপনি তো সব কিছুই জানেন।আপনার জন্য আমার,,,,’

‘ রৌদ্র কথা ঘুরিয়ে বললো,আমি কালাচাঁদ বলে।সাদা বিলাই কে বিয়ে করলে কি দেখে।গায়ের রং ছাড়া তো কিছুই বেশী ছিলো না আমার থেকে।’

‘আপনি দেখেছেন মাহিম কে?..’

‘না শুনেছি সাদা বিলাই ছিলো।’

‘একজন মৃত মানুষ কে নিয়ে মজা করছেন।আমার জীবন তো এখন আপনার হাতের পুতুল হয়েছে।জোর করে বিয়ে করেছেন,সবার কাছে চরিত্রহীন প্রমান করেছেন,আমার ভালবাসা নিয়ে মজা করছেন।’

রৌদ্র মেঘের পাশে সুয়ে বললো,এইযে বালিকা চোখের পানি মুছুন প্লিজ।না হলে আমিও কেঁদে দিবো।আর হ্যাঁ সরি ফাইম।একচুয়ালি ফান করেই বলেছি।গুড নাইট মেঘবালিকা।

চলবে,,