লালগোলাপ❤ Part-07 +8

0
3381

লালগোলাপ❤
Part-07 +8
Writer-Moon Hossain

শীতল কে মেডিক্যালে নেওয়া হয়েছে।শীতলের জ্ঞান নেই।শীতলের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠেছিলো।পুরো শরীরে গরম পানিতে ছ্যাঁকা লেগে আছে। শীতল ফ্লোরে শুয়ে রাজের অট্টহাসিতে ভেঙে পড়া মুখ খানি দেখেছিলো। খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে তার। আল্লাহ বলেনঃ “নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে আছে স্বস্তি ” [কুরআন–৯৪:৬]
শীতলের কষ্টে শরীর অসার হয়ে আছে। এরপর আর গলা দিয়ে একটা আওয়াজও বের হয়নি।
রাজ নিজেও জানেনা সে আজ কি করেছে। তার শ্রেয়সী কে কতটা কষ্ট দিয়েছে। চিৎকার শুনে প্রথমে রাফিয়া এসেছিলো। রাফিয়া পুরো ব্যাপার টা বোঝে উঠার পর শিউরে উঠেছিলো। রাজ তখনো হাসছিলো। হাসান কানে হেডফোন গুজে ডঃ জাকির নায়েকের লেকচার শুনছিলো আর এক্সারসাইজ করছিলো খালি গায়ে। রাফিয়া হাসান ভাই বলে তার রুমে কামরায় ঢুকে পড়লো। আজ পর্যন্ত রাফিয়া কখনো হাসানের রুমে আসেনি।
হাসান অবাক হয়ে উঠলো।
-রাফিয়া সবকিছু ঠিক আছে তো?
-কিছু ঠিক নেই হাসান ভাই।
-আরে বাবা না কেঁদে বলো? কানে হেডফোন লাগানো ছিলো তাই কিছু আন্দাজও করতে পাচ্ছিনা।
-ভাইয়া বোধহয় ভাবি কে মেরে ফেললো।
-কি বলো? এসো আমার সাথে। ভাবি কোথায়?
-বাবার কামরায়।
হাসান খালি গায়েই শীতলের কাছে গেলো।
রাজ তখন চুপচাপ ছিলো। কি হয়েছে কিছু বুঝতে পাচ্ছেনা। এর আগেও তো রাতে কতবার সে শীতলের গায়ে পানি ঢেলেছে তখন তো শীতল এমন ভাবে আত্ম চিৎকার করে ফ্লোরে বা মাটিতে শুয়ে পড়েনি।
হাসান বিছানার চাদর নিয়ে সোজা শীতলের গায়ের উপর দিয়ে দিলো।
-রাফিয়া জলদি আমাকে একটা শার্ট দাও। ভাবি কে মেডিকেলে নিতে হবে।
-ভাবি পর্দাশীল মেয়ে। উনাকে ধরবন না খবরদার।
-বেচারি মরে যাচ্ছে। বেঁচে থাকলে তো পর্দা হবে। জীবন বাঁচানো ফরজ।
তোমার ভাবির কিছু হবে না, যা পাপ আমার হবে।
হাসান শীতলকে জলদি ময়মনসিংহ মেডিক্যালে নিয়ে গেলো।
অটিতে শীতলের চিকিৎসা চলছে। প্রয়োজনীয় মেডিসিন দেওয়া হচ্ছে যেন শরীরে ফোসকা না পড়ে।
রাফিয়া জোরে জোরে কাঁদছে ক্যাবিনের বাহিরে বসে।
হাসান চিন্তিত মুখে রাফিয়ার কাছে এলো।
-ভাবি কেমন আছে হাসান ভাই? বেঁচে আছে তো?
– কি বলো?উনার কিছু হবে না। ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে।
মেডিক্যালের সব ফরমালিটি পূরণ করেছি। আমি এখানে আছি। তুমি বরং বাসায় যাও।রাফিয়াও নিশ্চয়ই কাঁদছে।
তোমার ভাইয়া কখন কি করে বসে ঠিক নেই।
-ভাইয়ার এতোদিনের সমস্ত কিছু মেনে নিয়েছি। কিন্তু আজকের ঘটনা মানতে পাচ্ছিনা। জলজ্যান্ত একজন মানুষর উপর কিভাবে ফুটন্ত পানি ঢেলে দিলো।
-ভাইয়ার মাথার ঠিক নেই। তোমাকে বুঝতে হবে।
-কখনো ভাইয়া ক্ষমা করতে পারবো না যদি ভাবির কোন ক্ষতি হয়।
-এবার কি তোমার মাথা টা খারাপ হয়ে গেলো নাকি? কি সব বলছো?
-ভাবির অন্তর আত্মা নিশ্চয়ই কেঁপে উঠেছে হাসান ভাই।
রাফিয়া জোরে জোরে কাঁদছে।
-কান্না থামাও। যা হবার হয়েছে। ভাবি বেঁচে আছেন।
-এটার নাম বাঁচা বলে না।
-তোমার বাবা কে অফিসে ফোন দিয়েছি। এলো বলে।
-বাবা ভাবির এই অবস্থা দেখে সইতে পারবে না। কিছু একটা হয়ে যাবে আবার।
– সেটা আমি দেখছি। আল্লাহ! কে ডাক। তিনি সর্বত্র আছে। উনার উপর বিশ্বাস রাখ।
.
-ক্যাবিনে যাওয়া যাবে না হাসান? একবার বৌমা কে দেখব।
-চাচাজান, আপনি বাড়ি যান। আমি এখানে আছি।
-বৌমা কে একটি বার দেখব।
-কাল দেখবেন। এখন ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে।
-ওর বাবা মা কে কি জবাব দেব? মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিলাম। আমার মায়ের মতো হয়ে উঠেছিলো এই কয়েক মাসে।
শীতলের শশুর মিটিংয়ে আটকে পড়েছিলো। প্রিয় বৌমার এমন করুণ অবস্থা শুনে এক মিনিটও থাকতে পারলেন না। সোজা মেডিক্যালে চলে এলেন।
-বাবা হাসান, বৌমা বাচঁবে তো?
– চাচাজান, নিশ্চিন্তে থাকুন। কাল এসেই সুস্থ দেখবেন ভাবি কে।
রাফাও এসেছিলো শীতল কে দেখতে। রাফা বোরখা, হিজাব পড়ে এসেছে। শীতল এভাবে দেখলে খুব খুশি হতো। শীতল সব সময় রাফা কে হেদায়েতের পথে আনার চেষ্টা চালিয়েছে।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا.
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি হেদায়াতের দিকে আহবান করবে তার জন্য তার অনুসারী ব্যক্তির সমপরিমাণ নেকী রয়েছে কিন্তু তার নেকী থেকে বিন্দু পরিমাণ হ্রাস পাবে না। যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে তার জন্য তার অনুসারী ব্যক্তির সমপরিমাণ পাপ রয়েছে কিন্তু তার পাপ থেকে বিন্দু পরিমাণ হ্রাস পাবে না।(মুসলিম হা/৬৯৮০; মিশকাত হা/১৫৮)।
কথা গুলো ভেবে রাফার চোখে পানি চলে এসেছে।
রাফা আল্লাহ কে স্বরণ করছে বার বার। তার ভাবির মতো মানুষের কিছু হতে পারেনা।
-এই নাও কফি।
কিছুই তো খেলে না।
রাফিয়া জেদ করে থেকে গেলো হাসানের সাথে মেডিক্যালে।
শীতলের ক্যাবিনের বেলকুনিতে বেঞ্চে বসে ছিলো রাফিয়া।
-ঘন ঘন কফি পান করা নেশার মতো। ভাবি কফির অভ্যাস ছাড়িয়ে দিয়েছে আমাকে।
-রাফিয়া আর কেঁদো না। ভাবি সুস্থ হয়ে যাবে। তুমি ভেঙে পড়লে চাচাজান, রাফা আর ভাইয়া কে কে দেখে রাখবে?
-এই মূহুর্তে ভাবি ছাড়া কারও চিন্তা মাথায় আসছে না।
হাসনের বুকে বিঁধছে রাফিয়ার কান্না ভরা মুখ দেখে। কালো কালো ডাগর ডাগর চোখজোড়া থেকে টপাটপ পানি পড়ছে। আকাশের হালকা নিভু নিভু আলোতে হারিয়ে যাওয়া কোন দেশের রাজকন্যার মতো লাগছে তাকে।
রাফিয়া থেকে থেকে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছে। পৃথিবীতে এই একটা মানুষের কান্না হাসান সহ্য করতে পারেনা। তখন তারও খুব কাঁদতে ইচ্ছে হয়।
খুব ইচ্ছে করছে রাফিয়ার কাঁধে হাত রেখে তাকে ভরসা দিতে সে আছে পাশে। চোখের পানি গুলো মুছে দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, তোমাকে কখনো কাঁদতে দেখতে ইচ্ছে করেনা।
হাসান একটু দূরে গিয়ে মনে মনে অজস্র বার বলল – আমি আছি, আমি আছি, আমি আছি তোমার পাশে।
.
-ভাবি কেমন লাগছে?
-আমি কোথায়? বেঁচে আছি তো?
– হ্যাঁ। মেডিক্যালে তুমি৷
শীতলের ঘুম ভেঙেছে সকালে। পুরো শরীর অসার হয়ে আছে। শীতল কিছু বুঝতে পাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে সদ্য নতুন দুনিয়ায় পা দিয়েছে।
রাফিয়ার কথা শুনে এক সেকেন্ডেই সবকিছু মনে পড়লো।
-উনি কোথায়?
-কে?
-তোমার ভাইয়া?
-কেন?
-বড় আপা, কাল রাত থেকে আমি এখানে আছি। তোমার ভাইয়া কোথায়?
-বাড়িতে।
-আমি বাড়ি যাব। উনার কাছে।
-তুমি সুস্থ হয়ে নাও আগে।
-তোমার মাথা নষ্ট। এক সেকেন্ডও উনি আমাকে ছাড়া থাকতে পারেনা। উনি কিছু করে বসবেন। নাকি কিছু করে ফেলেছেন।
আমাকে না দেখতে পেয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছে উনার। মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়েছে বোধহয়।
-ভাবি তুমি পাগল হয়েছো ভাইয়ার মতো? তুমি এই অবস্থায়ও ভাইয়ার কথা ভাবছো? তোমার উনি তোমাকে কি করেছে তা টের পাচ্ছো না?
-আমার জন্য নিশ্চয়ই সবকিছু তোলপাড় শুরু করেছে উনি। বাড়ি যাব আমি।
-ভাবি কি করছো? স্যালাইন খুলছো কেন?
-আমি এখুনি বাড়ি যাব। উনার কাছে। আমার সংসারে ফিরব।
-ভাবি তুমি কোথাও যেতে পারবে না।
তোমার শরীরের অবস্থা টা একটু চিন্তা কর। পুরো গায়ে মলম লাগানো হয়েছে। শরীর লাল হয়ে জ্বলে যাচ্ছে আর তুমি বাড়িতে যাবে!
-আমি ছাড়া উনাকে কে ঔষধ খাওয়াবে? নিয়মিত ঔষধ না খাওয়ালে সমস্যা দেখা দেবে। মাথা কাজ করবে না। চিৎকার করতে করতে মাথায় যন্ত্রণা শুরু হবে।
-ভাইয়ার মাথা এমনিতেও কাজ করেনা। তোমার কি হাল করেছে দেখছো না?
-উনার কোন দোষ নেই। সব দোষ আমার। আমি তো গরম পানি আর ঠান্ডা পানি একসাথে রেখেছিলাম। উনার জায়গায় যে কেউ এক কাজ করতো।
-এখনো তুমি ভাইয়ার দোষ দেখছো না। নিজেই মিথ্যে দোষারোপ করছো নিজের উপর। আল্লাহ তোমাকে কি দিয়ে বানিয়েছে ভাবি?
-আমি ছাড়া কারও হাতে ঔষধ খাবে না। রাতে কি খেয়েছে, সকালে কি খেয়েছে, টেনশনে আমি পাগল হয়ে যাব৷ আমি বাড়ি যাব।
-ডক্টর, ডক্টর! আমাকে ডিসচার্জ দিন।
শীতলের অবস্থা আগের থেকে আরও নাজুক হয়ে গেলো এতোক্ষণের কর্মকাণ্ডে। স্যালাইনের সুচ খুলে স্যালাইন পড়ে শরীরের মলমের সাথে লেপ্টে গেলো। শীতলের শরীর ফুটন্ত গরম পানিতে লাল হয়ে আছে।অনেক জায়গায় ফোসকা পড়েছে। স্যালাইনের পানিতে আরও জ্বালা করছে।
তবুও শীতলের কোন হুঁশ নেই। তার একটাই টেনশন। তার অবুঝ স্বামী তাকে ছাড়া এক রয়েছে।
দুটো লেডি ডক্টর এসে শীতল কে আবারও ঘুমের ইনজেকশন দিলো জোর করে।শীতল সবার কাছে হাত জোর করছে তাকে ছেড়ে দিতে।
-আপনি অসুস্থ মিসেস রাজ। এখন বিশ্রামের প্রয়োজন আপনার। কথা বলে চিৎকার চেঁচামেচি তে আপনার স্কিনে দাগ বসে যাবে। নতুন করে শরীর ওয়াশ করতে হবে। ঔষধ, মলম লাগাতে হবে।
-ডক্টর আমাকে ঘুম পাড়াবেন না হাত জোর করছি। যেতে দিন। আমার স্বামী সবার মতো না। উনি খুব অসুস্থ। আমাকে না দেখে কষ্ট হচ্ছে অনেক। কিছু খাবেনা আমি ছাড়া। আমাকে ডিসচার্জ দিন।
-যাবেন। সুস্থ হয়ে নিন। তখন কেউ আঁটকে রাখবেনা আপনার স্বামীর কাছে যেতে। নিশ্চিত হয়ে ঘুমান। সুস্থ হয়ে সংসারে ফিরে যাবেন মিসেস রাজ।
-উনি কিছু করে ফেলবেন। নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না। উনার কাছে যাব। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।
বলতে বলতে শীতল ঘুমের ইনজেকশনে ঘুমিয়ে পড়লো। শরীর ঘুমিয়ে পড়লেও তার মন জেগে আছে। সবকিছু কিছু কেমন যেন ঘোলাটে ঘোলাটে লাগছে। রাজের শেষ দেখা হাসি মুখ খানি বার বার ভেসে উঠছে শীতলের মনে।
.
-এখন তো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু এরপর কি হবে?
-চিন্তার বিষয় রাফিয়া।
-ভাবি যে ভাইয়াকে কত ভালোবাসে তা নিজের চোখে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।
-ভালোবাসা এমন হয়। নিজের জীবনের থেকেও ভালোবাসার মানুষের গুরুত্ব অনেক।
-ভাবি জেগে উঠলে কি বলব?
-চিন্তার বিষয়।
-ভাবি কে আঁটকে রাখা যাবে না। ভাইয়া ভাবির নিশ্বাস।ভাবি কে বোঝাবে কে, সে যে কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তে আছে। পুরো শরীর লাল হয়ে ফুলে আছে। অনেক জায়গায় ফোসকা পড়েছে।
ভাবি নিজের দিকে একটিবারও তাকাচ্ছেন না।
বলতে বলতে রাফিয়া কেঁদে উঠলো।
হাসানের চোখ থেকেও পানি পড়ছে এমন ভালোবাসা দেখে।
শীতলের জ্ঞান ফিরলে রাজ কে না দেখতে পেলে একটা আরেকটা অঘটন ঘটতে পারে।
চলবে……..

#লালগোলাপ❤
Writer-Moon Hossain
Part-08
-কেমন আছো বৌমা?
-আলহামদুলিল্লাহ! আপনি কেমন আছেন বাবা?
-তোমার এই অবস্থা দেখে আমি কি ভালো থাকতে পারি?
-ভাবি দেখ আমি বোরখা পড়ে এসেছি। এখন থেকে তোমার সব কথা শুনব।
-মাশাআল্লাহ!
-তোমার খুব কষ্ট হয়েছিলো তাইনা ভাবি?
-এখন কোন কষ্ট হচ্ছে না আমার। আমি বাড়িতে যেতে চাই বাবা।
-দেখ মা তুমি অবশ্যই বাড়ি যাবে। তার আগে সুস্থ হয়ে নাও।
-আমি সুস্থ। আপনি দয়া করে আমার ডিসচার্জ করিয়ে নিন।
এখানে থাকলে কখনো সুস্থ হবো না। আমি বাড়ি যেতে চাই। আমার বাড়ি, আমার সংসারে ফিরতে চাই।
-জেদ করো না মা। কিছু দিন এখানে থাকতে হবে। এরপর তোমার সংসারে যেও না হয়।
-আপনারা কেউ বুঝতে পাচ্ছেন না। আমার যাওয়া টা জরুরি। নামাজও পড়তে পাচ্ছিনা এখানে।
-তুমি অসুস্থ মা। তোমার জন্য নামাজ মাফ। আল্লাহ তায়ালা পরম দয়ালু মা।
– আজ কত তারিখ?
-কেন ভাবি?
-আমি ঠিক কত ওয়াক্ত নামাজ পড়িনি সেটা জানা টা জরুরি।
-সুস্থ হয়ে সব হিসাব নিকাশ করো ভাবি। মেডিক্যালে এই কোলাহলে নামাজ পড়তে অসুবিধা হবে।
-আমার কোন অসুবিধা হবে না।
রাসূল(সাঃ) বলেছেন, যেখানেই সালাতের সময় হবে সালাত আদায় করে নাও, সমস্ত যমীন তোমার জন্য মসজিদ ৷ (সহীহ্ বুখারী-৩২৪৩)।
-ভাবি, তোমার শরীরে ঔষধ লাগানো হয়েছে একটু আগে। একটু ফলপ্রসূ হতে দাও। তারপর অজু করো।
শীতল বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। সবাই এখানে আছে শুধু রাজ ছাড়া। শীতলের মন বার বার অস্হির হচ্ছে রাজ কে দেখার জন্য।
চোখ দুটো রাজ কে খুঁজছে শুধু।
-ভাবি কাকে খুঁজছো?
-তোমার ভাইয়া কে দেখছি না যে। আমাকে না দেখতে পেয়ে নিশ্চয়ই তুলকালাম কান্ড ঘটিয়েছেন উনি।
আমার হাত ছাড়া উনি তো কারও হাতে খান না। উনি কি ঠিক মতো খেয়েছে? ঔষধ খাইয়েছে কে উনাকে?
-ভাবি তোমার জিহ্বাতেও গরম পানি পড়ে ছিলো। তোমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। চুপ করো।
-কথা এড়িয়ে যাচ্ছো রাফা।
বলো উনি কোথায়? কেমন আছো?
-তুমি উত্তেজিত হচ্ছো কেন? তোমার শরীরের জন্য ভালো না মা।
-বাবা আপনারা কিছু লুকুচ্ছেন আমার কাছে। বলুন উনি কেমন আছে নইলে আমি এই অবস্থায় চলে যাব এখান থেকে, যেখানে দুচোখ যাবে।
-ভাবি ভাইয়াকে….
রাফা চোখের পানি ফেলছে আর মুছে নিচ্ছে হাতে।
-রাফা বোন আমার, বলো আমাকে কি হয়েছে উনার।
-বাবা ভাইয়াকে মেরেছে শেকল দিয়ে। রুমে আটকে রেখেছে। ঔষধ খাওয়া দাওয়া কিছুই হয়নি ভাইয়ার।
ভাইয়া সারাদিন দরজা ধাক্কা দেয় আর তোমার কথা বলে। তোমার নাম ধরে চিৎকার করে শুধু।
শীতলের শশুর মাথা নিচু করে আছে।
শীতলের জোরে জোরে কেঁদে ফেললো।
এতো কষ্ট তখনো হয়নি যখন রাজের সাথে তার বিয়ে হয়েছিলো কিংবা ফুটন্ত গরম পানি পুরো শরীরে ঢালা হয়েছিলো।
শীতল বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে রাজের জন্য।
শীতলের শশুর বলেছে, শীতল সুস্থ হয়ে তবে বাড়ি গিয়ে রাজের সাথে দেখা করবে। কোন মতেই শীতল কে ডিসচার্জ করানো যাবেনা কারণ বাড়িতে তার ভালো চিকিৎসা হবেনা। বাড়ি গিয়েই স্বামী সেবায় লেগে পড়বে।
রাজ কে মেডিক্যালেও আনা যাবে না। এখানে আসলে সে শীতল কে ছেড়ে যেতে চাইবে না। কিছু না বুঝে শীতলের আবার ক্ষতি করতে পারে।
রাজ কে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। রাজ অন্ধকার রুমে ফ্লোরে বসে বসে কাঁদছে। মনে হচ্ছে তার হৃদপিন্ড কেউ ছিঁড়ে ফেলেছে। বুকে খুব ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু কেন হচ্ছে তা পাগলটা অনুভবও করতে পাচ্ছেনা।
শ্রেয়সী তুমি কোথায় , শ্রেয়সী তোমার কাছে যাব, শ্রয়সী তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আমার। বারবার এগুলো বলে বলে গর্জন করছে রাজ।
বাড়ির কাজের লোকেরাও পর্যন্ত এমন আহাজারি তে কেঁদে উঠেছে। কারও সাহস নেই ছোট সাহেবের দরজা খুলে দেওয়ার বা হাত পায়ের শেকল খুলে দেওয়ার৷ সবার নীরবে কাঁদা ছাড়া কোন পথ নেই সামনে।
শীতলের নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে ভোরের দিকে।
-আল্লাহ তায়ালা আমি কি মরে যাচ্ছি! এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো আমার। শরীর নয় মনের কষ্টে মরে যাচ্ছি আমি। তুমি আমার অন্তরের খবর জানো। প্রতিটা মেয়ের জীবনে বিয়ের আগে থেকেই অন্তরে তার স্বামীর জন্য জায়গা করে রাখে। স্বামী যেমন হোক সে স্বামী। কবুল বলে আমার এই এক জীবনে উনাকে স্থান দিয়েছি। আমার স্বামী যেমন হোক তেমনি আমার। আমি উনাকে আমার আত্মার সাথে মিশিয়েছি।আত্মা ছাড়া শরীরের কোন মূল্য নেই। আত্মা ছাড়া শরীর কখনো জীবিত থাকেনা।
আল্লাহ তুমি তো জানো আমি কখনো উনাকে স্বাভাবিক না বলে অবজ্ঞা করিনি। আমার জীবন দিয়ে হলেও উনাকে সুখ দিয়ে যাব।আমার সমস্ত ইবাদতে উনার জন্য দোয়া থাকে। আমার সওয়াবে উনার জন্য দোয়া থাকে। আমি আমার জীবনের সকল আমলের বিনিময়ে উনার জন্য দোয়া করি। উনি সুস্থ হয়ে যান। স্বাভাবিক জীবন যাপন করে। উনার প্রতি আমার এতোটুকুও বিদ্বেষ নেই। উনি আমাকে চোখে হারায়, কখনো জ্ঞান থাকা অবস্থায় আমাকে আঘাত করবে না। যা হয়েছে তা আমার দোষেই হয়েছে। “হে মহান আল্লাহ তায়ালা, তুমি আমার অবুঝ স্বামী কে দেখে রেখো। না জানি তিনি কেমন আছেন এখন।
যে ব্যক্তি অন্যের জন্য দোয়া করে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আবু দাঊদ-১৫৩৪।
আমার এমন লাগছে কেনো, আমি কি মরে যাচ্ছি! আমি ছাড়া উনার কি হবে?
-পর্দা নড়ে উঠলো। সেই সাথে শীতলও নড়ে উঠলো।
খুশিতে কথা বলতে পাচ্ছেনা সে।
রাজ চোখের পানি মুছতেই আবার পানি পড়ছে চোখ থেকে। পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে বারবার মুছবার চেষ্টা করছে চোখের পানি। শব্দ করে করে নাক টানছে বোধহয় সর্দি লাগছে। বিয়ের দিনের মতো জিপার খোলা। শীতল হাসি আঁটকে রেখেও হেঁসে ফেললো। লোকটা আসলেও ছেলেমানুষ।
রাজ শীতলের কাছে গিয়ে অভিমানের সুরে বলল- শ্রেয়সী!
শীতল চোখ বন্ধ করে স্বামীর আদরের মধুর ডাক শুনে অনুভব করতে লাগলো। আহ! কি শান্তি।
-শ্রেয়সী আমাকে একা ফেলে এখানে একা একা ঘুমুচ্ছো কেন?
অনেক মজা হচ্ছে তোমার তাইনা?
-আমি এখানে একটুও থাকতে চাইনা।
-মিথ্যে বলছো। তোমার অনেক মজা লাগছে এখানে আমি নেই তাই। জানো, তোমার জন্য কত কষ্ট হচ্ছে আমার?
– কষ্ট হচ্ছে? মাফ করে দিন কষ্ট দেওয়ার জন্য।
-তুমি জানো না, তোমার হাতে ছাড়া কিছু খেতে পারিনা আমি।
-অন্যায় হয়েছে আমার।
রাজের ধরার জন্য শীতল হাত টা বাড়িয়ে দিলো।
রাজ তা না বোঝেই নিজের মনে কথা বলে যাচ্ছে।
শীতল উঠতে পাচ্ছেনা। রাজের হাত স্পর্শ করতে পারলে সব কষ্ট দূর হয়ে যেতো। রাজ কি একটুও বুঝতে পাচ্ছেনা তার শ্রেয়সী তাকে ছোঁয়ার জন্য আকুল হয়ে আছে।
-তোমার কি হয়েছে?
– কিছু তো হয়নি আমার।
-আচ্ছা তোমার শরীরে লাল লাল কি এগুলো? তুমি কি লাল মেকওভার করেছো? সাদা সাদা পাউডার দিয়েছো কেন?
-হ্যাঁ মেকআপ এগুলো।
কেন আপনার পছন্দ হয়নি?
-না। একদম না। এগুলো তুলে ফেলো প্লিজ।
আগের মতো হয়ে যাও।
কথাটা বলেই রাজ শীতলের হাতে একটু ঘষে দিলো। ব্যথায় শীতল আহ! করে উঠলো।
-এগুলো উঠছে না কেন শ্রেয়সী? আরও জোরে ঘষতে হবে।
চলো তোমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিই।
শীতলের শশুর সহ সবাই আতংকে একাকার হয়ে গেলো।
সবাই রাজ কে শীতলের কাছ থেকে নেওয়ার জন্য চিৎকার করছে।
-ডক্টর ওকে নিয়ে যান। ও মেয়ে টা কে মেরেই ফেলবে।
শীতল অস্হির হয়ে উঠলো। সবাই কে রাজকে স্পর্শ না করার জন্য বলল।
রাজ কে কাছে আসতে দেওয়ার জন্য সবাই কাছে অনুরোধ করলো।
লেডি ডক্টর এসে রাজ কে থামালো।
-মিঃ রাজ। এই মেকআপ উঠবে না।
আপনার ওয়াইফ অসুস্থ। এভাবে ঘষলে হাতের চামড়া উঠে যাবে।
– হাতের চামড়া উঠবে কেন?
-বললাম না আপনার স্ত্রী অসুস্থ।
– অসুস্থ থাকলে কষ্ট হয় অনেক আমি জানি।
শ্রেয়সী তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?
-না। আপনি এসেছেন আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছি।
– তোমার কি হয়েছে?
-বললাম তো কিছু না।
রাজ শীতলের ফোসকা লাগা হাত জোরে ধরে বলল -এগুলো মেকআপ না।
তোমাকে কে মেরেছো বলো?
– কেউ না। আপনি শান্ত হন।
-আমি জানি কেউ তোমাকে মেরেছে। তোমাকে ব্যথা দিয়েছে। আমি তাকে মাডার করব। তার মাথা ফাটিয়ে দেব।
রাজ পাশে থাকা টেবিলে দুটো লাথি মারলো।
লেডি ডক্টর হাত ছাড়াতে গেলে শীতল বাঁধা দেয়।
শীতল রাজের দুই গাল স্পর্শ করে বলে -তাকান আমার দিকে।
-তাকালাম।
– আমি নিজে নিজে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি। এজন্য এখানে এসেছি আপনাকে ছেড়ে।
আমার কিছু হয়নি।
-তুমি একা কেন আসলে? আর কখন ব্যথা পেলে দেখলাম নাতো।
-এই জায়গা ভালো নয়। খুব নোংরা। আপনার কষ্ট হবে তাই একা এসেছি।
রাতে যখন ঘুমিয়েছিলেন তখন ব্যথা পেয়েছি।
রাজ কেঁদে বলল -আমাকে বললে না কেন?
তাহলে আমিও আসতাম আরও আগে এখানে। তুমি যেখানে আমিও সেখানে থাকব।
-ভুল হয়েছে। মাফ করে দিন।
রাজ মুখ ফিরিয়ে বলল – করব না মাফ।
আমার অনেক কষ্ট লেগেছে।
-আমারও কি কম কষ্ট লেগেছে আপনাকে ছাড়া।
এবারের মতো মাফ করে দিন। এই দেখুন কান ধরেছি।
মৃত্যুও আমাকে আপনার কাছ থেকে দূরে নিতে পারব না।
-তুমি মরে গেলে আমিও মরে যাব।
শীতল রাজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল – আর কখনো এমন কথা বলবেন না। আমি আছি।
-আমিও আছি শ্রেয়সী।
-আপনার শরীর এতো গরম কেন? আপনাকে দেখে এতো শান্তি পেয়েছি যে ভালো করে একবারও খেয়াল করিনি।
গায়ে আঘাত কিসের?
-বাবা মেরেছে।
শীতল আঘাত গুলো তে হাত বুলিয়ে দিলো। রাজের চোখ পানি মুছে দিয়ে বলল – আর কেউ কখনো আপনার গায়ে আঘাত দিতে পারবে না। আমি কখনো আপনাকে কষ্ট পেতে দেবোনা। কথা দিলাম।
-আমি তোমাকে এক সেকেন্ডও চোখের আড়াল হতে দেব না।
-আপনার ব্যথা লাগছে গায়ে?
-তুমি হাত বুলিয়ে দাও। ব্যথা চলে যাবে।
-আসুন হাত বুলিয়ে দিই।
শীতল রাজের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আঘাত গুলো তে।
.
-তোমার আপেল গুলো থেকে আমি একটা আপেল নিই? আমার ক্ষিদে লেগেছে।
-সে কি! আপনি খাওয়া দাওয়া করেন নি?
-কিভাবে করব। তুমি তো নেই। তোমার হাতে ছাড়া আমি কি কখনো খেয়েছি?
শীতলের চোখে পানি এসে গেলো।
-অন্যায় হয়েছে আমার।
এই নিন হা করুন।
রাজ কো আপেল খাইয়ে দিচ্ছে শীতল। রাজ খাচ্ছে আর চোখ বুলাচ্ছে ক্যাবিনে।
লেডি ডক্টর, নার্স সবার চোখে পানি এসেছে গিয়েছে ওদের এমন ভালোবাসা দেখে। কি সুন্দর আন্ডারস্ট্যান্ডিং দু’জনার। শীতলের শশুর, রাফ, রাফিয়া সবাই ক্যাবিনের বাহিরে বসে আছে। হাসান তাদের নাশতা এনে দিয়েছে।
-কি দেখছেন?
-তোমাকে কতক্ষণ ধরে দেখিনা। তোমাকে শুধু দেখতে ইচ্ছে করছে।
শীতল আহত চোখে মাথা নিচু করে বলল – আমি এতো ব্যথা পেয়েছি যে আমাকে দেখতে ভালো লাগবে না আপনার।
আমি কুৎসিত হয়ে গিয়েছি।
– কোথায় তুমি তো পরি দের মতো।
– প্লিজ দয়া করে এভাবে বলবেন না, এভাবে তাকাবেন না, আমার পুরো শরীরে লাল লাল দাগ পড়ে আছে। আমি জানি আমি দেখতে আর আপনার পরি দের মতো না। আগের মতো নই আমি।
রাজ হঠাৎ করেই শীতলকে শোয়া অবস্থায় ঝাপিয়ে পড়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। শীতলও রাজকে জরিয়ে ধরলো।
-শ্রেয়সী আমি তোমাকে আর ছাড়াব না। এই যে ধরেছি আর ছাড়াছিনা।
ছাড়া পেলেই আবার তুমি একা একা চলে যাবে।
শীতল এতোক্ষণ কি বলল তা কিছুই ঢুকেনি রাজের মাথায়। সুন্দর অসুন্দরের সে কি বুঝবে? তার শ্রেয়সীর কাছে থাকতে পারলে আর কি চায়।
জরিয়ে ধরাতে শীতলের গায়ে ব্যথা লাগছে।
লেডি ডক্টর এগিয়ে আসতেই শীতল ইশারা করলো।
-ডক্টর। উনি জরিয়ে না ধরলে আমার ব্যথা আরও বাড়বে। উনি কাছে না থাকলে কষ্ট লাগবে।
উনি আমার সুস্থ হওয়ার ঔষধ।
রাজ মুখ তুলে শীতলের দিকে তাকিয়ে বলল- তুমি ভালো হয়ে যাবে। কিছু হবে না তোমার।
-হ্যাঁ। আপনি এসেছেন, এখন আমি ভালো হয়ে যাব।
-তোমার কষ্ট হচ্ছে?
-আপনার ছোঁয়া পেয়ে সব কষ্ট দূর হয়েছে। কোন কষ্ট নেই আমার।
-টেনশন করো না শ্রেয়সী। আমি তোমার সেবা করব।
-কিভাবে?
-যেভাবে তুমি আমার সেবা করতে সেভাবে।
আমি তোমাকে ঔষধ খাওয়াবো, গোসল করাবো, খাবার খাওয়াবো।
শীতলের চোখে খুশিতে পানি চলে এলো।
.
-একটা কথা বলব?
-জ্বি বলুন।
-তোমার কান্না ভরা মুখ দেখলে আমার ভেতর ঝড় শুরু হয়।
-মানে?
-মানে আবার কি? কিছুনা। মানুষ মাত্রই ইমোর্সোনাল। একজন মানুষ কাঁদলে অন্য মানুষের কষ্ট হতেই পারে।
-হাসান ভাই আপনার কথার কিছুই বোঝা যায়না। কি যে বলেন আপনি।
-একটু চেষ্টা করলেই বুঝতে পারতে।
-কিছু বললেন?
হাসান মাথা চুলকিয়ে বলল- নাতো। তুমি বেশি শুনো, যেমনটা মানুষ বেশি বুঝে।
হাসান রাফিয়ার সাথে গাড়ি করে বাড়িতে ফিরছে। শীতলের শশুর আর রাফা মেডিক্যালে আছে। রাজ কে নিয়ে বিকেলে ফিরবে।
হাসান আর রাফিয়া পেছনে বসেছে। ড্রাইভার চাচা গাড়ি চালাচ্ছে। কানে হেডফোন গুজে ওয়াজ শুনছে। উনি সব সময় ওয়াজ শুনে সকল কাজকর্ম করেন।
পাশাপাশি বসে হাসানের মনে অস্হিরতা শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে হৃদয় বের হয়ে আসবে।
আচ্ছা রাফিয়ার কি এমন অনুভূতি হচ্ছে না?
এতো সুদর্শন একটা ছেলে বসে আছে তার পাশে অথচ তার কোন রিয়াকশন নেই।
আহা! মেয়েটা সব সময় এতো ব্যথা দেয় কেনো?
.
শীতলের শশুর অনেক চেষ্টার পরও রাজ কে কিছুতেই বাড়ি নিয়ে যেতে পারলেন না।
রাজ সবাই কে অবাক করে দিয়ে শীতলের সাথে শীতলের বেডের চাদরে ঢুকে পড়লো। শীতল কে জড়িয়ে ধরে সে শুয়ে আছে। সে নাকি এখানেই থাকবে শীতলের সাথে। শীতল কে ছাড়া কিছুতেই যাবে না জেদ ধরে বসে আছে।
-মেয়েটা কে মেরে ফেলবে নাকি তুমি। রাজ বাবা আমার, ও অসুস্থ। তুমি চলো আমার সাথে। কাল ভোরে আবার নিয়ে আসব তোমাকে।
-নো, নো। আমি যাবনা ওকে ছাড়া। এক সেকেন্ডও শ্রেয়সী কে ছাড়া বাঁচব না আমি।
-বাবা উনি বরং এখানে থাকুক। বাড়িতে গিয়ে আপনাদের ঝামেলা করবে।
আমাকে ছাড়া উনার কষ্ট হবে।
-বৌমা তা কি করে হয়। তুমি নিজের খেয়াল রাখবে নাকি ওর খেয়াল রাখবে?
-বাবা তুমি যাও। আমি তো সুস্থ। আমার খেয়াল রাঝতে হবে না। আমি ওর খেয়াল রাখব।
– মিঃ রাজ আপনি আপনার স্ত্রীর বেড থেকে উঠুন। ক্যাবিনের সোফা তে ঘুমান।
-শুনুন ডক্টর। বিয়ে মানে একসাথে থাকা, এক সাথে ঘুমুনো, শ্রেয়সী বলেছে। তো আমি শ্রেয়সীর বেড ছেড়ে সোফায় কেন ঘুমুবো?
-আপনার স্ত্রীর প্রবলেম হবে। উনি ব্যথা পাবেন।
– বেডে জায়গা আছে। এই দেখুন কতটা জায়গা। আপনিও ঘুমুতে পারবেন। আসুন ঘুমান।
শীতল বলল – উনি আমার সাথে শুয়ে থাকুক। আপনারা সবাই চলে যান। আমাদের একা থাকতে দিন। প্লিজ, হাত জোর করছি উনাকে থাকতে দিন। বাবা আপনি চলে যান রাফা কে নিয়ে।
আমি সুস্থ হয়ে যাব তাড়াতাড়ি দেখে নেবেন।
কোন প্রবলেম হবে না।
.
ক্যাবিন খালি। রাজ শীতল কে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে।
শীতলের খুব ভালো লাগছে যদিও জরিয়ে ধরায় ব্যথা লাগছে। কিন্তু ও কিছু না।
-আচ্ছা আপনার আমাকে ঘৃণা লাগছে না?
-কেন?
-এই যে আমার গায়ে লাল লাল ব্যথা। দেখতে কত জঘন্য লাগছে না জানি।
তবুও আমাকে জরিয়ে ধরে আছেন। গা ঘিন ঘিন লাগছে না আপনার।
-তোমার কথা কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার।
কেন ঘিন ঘিন লাগবে?
– ধরুন,আমার লাল লাল ব্যথার জায়গা থেকে কিড়-মাকড় বের হলো। তখনও কি এভাবে জরিয়ে ধরবেন?
শীতল কে রাজ ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো।
শীতলের মন খারাপ হলো। রাজ ওকে আর পছন্দ করবে না এখন থেকে মনে হয়।
শীতলের চোখ থেকে অজস্র পানি বের হচ্ছে। হঠাৎ রাজ আগের মতো শীতলের উপর ঝাপিয়ে পড়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। শীতলের গলায় অজস্র চুমো দিতে শুরু করলো। শীতল তার উওর পেয়েছে উদাহরণ সহ।
শীতল আল্লাহর দয়া দেখে অবাক হয়ে গেলো। আল্লাহ পরম দয়ালু। তিনি চাইলে কষ্টের পর একশত গুন সুখ দেবেন।
রাজ আজ শীতল কে সুখের পৃথিবীতে নিয়ে গেলো।
❤ অর্থসহ আল্লাহর ৯৯ টি নাম এর দুটি নাম ❤ (আরবী,বাংলা?
১. ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦُ আর-রহ়মান সবচাইতে দয়ালু, কল্যাণময়, করুণাময়
২. ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ আর-রহ়ীম সবচাইতে ক্ষমাশীল।
.
.
চলবে………..❤