লাল গোলাপ পর্ব-০৬

0
250

#লাল_গোলাপ
#লেখিকা_মিতু
পর্বঃ ০৬

নিশান কেমন জানি শক্তি পাচ্ছে না কোন কিছু করার জন্য। হাত পা কেমন অসর হয়ে আসছে। নিশান নিথর হয়ে শুধু বিছানায় পড়ে রয়েছে। আর ফারহানের কথাগুলো শুধু কানে বাজছে।

– রুমিকে গতকাল দেখে গিয়েছে। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আর ওর বাসায় গিয়ে লাভ নেই…

নিশানের মাথায় শুধু এই কথাগুলোই ঘুরছে। হঠাৎই নিশান একলাফে উঠে বসে। ওর মধ্যে যেন আধ্যাত্মিক শক্তি এসে পড়েছে। কারণ ও শেষ একটা সুযোগ পেয়েছে রুমিকে আবার ওর করে পাওয়ার।

নিশান দ্রুত রুমির বাসায় ছুটে যায়। রাত এখন ১১.৩৩ বাজে। নিশান দ্রুত গাড়ি চালিয়ে রুমির বাসায় যায়। নিশান কোন রকম গাড়িটা পার্ক করে রুমিদের বাসায় বেল দিতে থাকে। অনেকগুলো বেল দিলে রুমিদের সার্ভেন্ট গেইট খুলে দেয়। নিশান সার্ভেন্টকে রেখে তাড়াতাড়ি বাসার ভিতরে ঢুকে পড়ে। এত্তো গুলো বেল দেওয়ায় রুমির পরিবারের সবাই হল রুমে এসে পড়ে শুধু রুমির ভাই বাদে। রুমি নিশানকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। অার হতভম্ব হয়ে যায় নিশানের অবস্থা দেখে।

নিশান আর এক মূহুর্ত সময় নষ্ট না করে রুমির বাবার কাছে দৌঁড়ে গিয়ে তার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে বলে,

– আঙ্কেল দোহাই লাগে আপনি রুমিকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন না। আমি রুমিকে প্রচন্ড ভালোবাসি। আমি ওকে বিয়ে করব। প্লিজ ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দিবেন না। ও আমাকে অনেক বেশী ভালোবাসে। আমার থেকেও ও আমাকে বেশী ভালোবাসে। কিন্তু আমি ওর ভালোবাসা বুঝতে পারি নি। তাই ও এই বিয়েতে রাজি হয়েছে। দয়া করে ওকে আমার সাথে বিয়ে দিন। কথা দিচ্ছি ও কোন দিন বিন্দুমাত্র কষ্ট পাবে না আমার থেকে। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না আঙ্কেল। আন্টি প্লিজ আঙ্কেলকে বলুন না ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দিতে না। প্লিজ…

নিশানকে এখন পুরো একটা পাগল উম্মাদের মতো লাগছে। চোখেমুখে কান্নার পানি। চুল অগোছালো। রুমির বাবা পাশের টেবিল থেকে একগ্লাস পানি এনে নিশানকে ধরে সোফায় বসিয়ে পানিটা খেতে দেয়। নিশান রীতিমতো হাপাচ্ছিল। নিশান পানিটা তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়। নিশান পানিটা খেয়ে একটু স্বস্তি পায়। ও কিছুই বুঝতে পারছে না। রুমির বাবা রুমিকে ডাক দিয়ে নিশানের পাশে বসতে বলে। নিশান আবার বলে উঠে,

– আঙ্কেল ওর কোন দোষ নেই। ওকে কিছু বলবেন না। সব দোষ আমার। দয়া করে ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দিবেন না।

রুমির বাবা এবার শান্ত গলায় বললেন,

– সবই বুঝলাম। কিন্তু বাবা আগে বলো তো তোমাকে কে বলছে আমি ওর বিয়ে দিচ্ছি বা বিয়ে ঠিক করেছি???

নিশান যেন আকাশ থেকে পড়ে। আশ্চর্যের চরম মাত্রায় গিয়ে পৌঁছায় নিশান। নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না। নিশান একবার রুমির দিক আর একবার রুমির বাবার দিক তাকাচ্ছে।

– হ্যাঁ বাবা তোমাকে কে বলল আমরা রুমির বিয়ে দিচ্ছি??(মা)

নিশান এবার অবাক হয়ে বলে,

– ফারহান বলল, ওকে নাকি কাল দেখে গিয়েছে। তারা সব ঠিক করে গিয়েছে। খুব তাড়াতাড়িই নাকি ওর বিয়ে হবে??

– আরে না। ও মিথ্যা বলেছে হয়তো। রুমির বিয়ের কথা আমরা এখনো ভাবিই নি। তবে মনে হচ্ছে এবার ভাবতে হবে। তোমার মতো এরকম একটা প্রেমিক স্বামী পেলে অন্তত আমার মেয়ে কখনো কষ্ট পাবে না। (বাবা)

– হ্যাঁ এরকম ছেলে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। কি অবস্থা করেছে নিজের আমাদের মেয়ের জন্য। বাবা তোমার সাহস আছে মানতে হবে। কিন্তু বুঝলাম না ফারহানটা এমন করলো কেন।… এই রুমিইই তুই মুচকি হাসছিস কেন?? তোরা ইচ্ছা করে এই কাজ করেছিস না?? দেখতো ছেলেটার কি অবস্থা হয়েছে?? (মা)

– মা তোমরা কিছু বলোই না। উনি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন। উনার প্রতি আমার ভালোবাসাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তোমাদের তিনজনার পর একমাত্র উনাকে আমার ভালো লেগেছে। কিন্তু উনি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই উনাকে একটু শিক্ষা দিলাম। (রুমি)

– বাবা আমি তোদের মাঝে নেই। তোরা এ যুগের ছেলেপেলে। তোদের কাহিনি খুব জটিল। তা নিশান সব তো শুনলামই। এখন আমাদের কথা হলো তুমি তোমার পরিবারকে নিয়ে কাল আসো। আমাদের দিক থেকে তো হ্যাঁ ই। এখন তোমার বাবা-মা রাজি হলে শুভ কাজে দেরী হবে না। কাল তাদের সাথে করে নিয়ে এসো। (বাবা)

– জি আঙ্কেল আন্টি। আপনাদের সত্যিইই খুব ধন্যবাদ।

– বাস্তবে এমন না হলেও এটা সত্য তুমি আমাদের একমাত্র ছেলেকে বাচিঁয়েছ। তাছাড়া তুমি খুব ভালো একটা ছেলে। আমাদের তো তোমাকে সেদিনই পছন্দ হয়েছে। শুধু সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। (বাবা)

– ধন্যবাদ আঙ্কেল।

– রুমির মা চলো আমরা উপরে যাই। ওরা কথা বলে ওদের মাঝে ঝামেলা শেষ করুক। চলো। (বাবা)

– হ্যাঁ চলো।

রুমির বাবা-মা ওদেরকে স্পেস দিয়ে চলে যায়। নিশান কপালে হাত দিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে। মাথাটা ঝিমমম দিয়ে আছে ওর। রুমি নিশানের দিকে তাকাচ্ছে আর ছটফট করছে। নিশান যে খুব কষ্ট পেয়েছে তা রুমির বুঝতে আর বাকি নেই। রুমি আস্তে করে উঠে নিশানে সামনে ফ্লোরে হাটুতে ভর দিয়ে বসে। রুমি নিশানের হাত ধরে কপাল থেকে সরাতে চেষ্টা করে। নিশান আবার কপালে হাত দেয়। নিশান চোখ বন্ধ করে আছে। রুমি বুঝতে পেরেছে নিশান খুব কষ্ট পেয়েছে।

রুমি আস্তে করে উঠে নিশানকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর বলে,

– ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।

নিশান আর পারে না। চোখের পানিগুলো ছেড়ে দিয়ে রুমিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। এ কান্না প্রাপ্তির কান্না। নিশান কান্নামাখা কণ্ঠে বলে,

– আমাকে মাফ করে দেও রুমি। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি আমি তোমাকে এতটা বেশী ভালোবেসে ফেলেছি।

রুমি মুখ তুলে দেখে নিশান কান্না করছে। রুমি একটু উপরে উঠে ওর নরম মিষ্টি ঠোঁট দিয়ে নিশানের দুচোখে গভীর স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। এরপর নিশানের দুগালে, কপালে অসংখ্য চুমু দিয়ে ভরিয়ে দেয়। নিশান বলে,

– সব জায়গায়ই তো দিলে আসল জায়গায়টাই তো দিলে না।

রুমি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। ওর গাল দুটো লাল টুকটুকে আভা ধরেছে। খুব মিষ্টি লাগছে ওকে। রুমি লজ্জাসিক্ত হয়ে বলে,

– আসল জায়গা আবার কোনটা??

নিশান আঙুল দিয়ে ওর ঠোঁট দেখিয়ে দেয়। রুমি লজ্জায় মাথা নাড়িয়ে না করে নিশানকে জড়িয়ে ধরে আর বলে,

– ওখানে বিয়ের পর। এখন না।

– আচ্ছা।

– খুব কষ্ট পেয়েছেন?? সরি….

– কষ্টটা বেশী পেয়েছি তোমাকে হারাতে গিয়ে। বিশ্বাস করবে না তোমাকে হারানোর ভয়ে আমার শ্বাস যেন কেমন আটকে আসছিল।

– তো বলুন না সেই না বলা কথাটা। আর কত অপেক্ষা করব??

– ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি। খুব খুব ভালোবাসি।

রুমি প্রচন্ড খুশী হয়। খুশীতে নিশানের গালে গভীর একটা চুমু এঁকে দেয়। তারপর বলে,

– এই সামান্য কথাটা আগে বললেই হতো। তা না বলে আপনি ভাব নিয়ে বসে ছিলেন। পাঠকরা আপনার উপর কত রাগ জানেন?? তারা চায়ই না আমাদের মিল হোক।

– আরে তারা খুব ভালো। তাদের ভালোবাসা আমাদের সাথে আছে বলেই তো আমরা আবার এক হয়েছি। তারা মনে মনে ঠিকই চায় আমরা এক হই। এখন আল্লাহ চাইলে আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি হলেই হয়।

– বিয়ের পর কিন্তু আমাকে খুবববব আদর করবেন। ঠিক আছে?? (লজ্জা নিয়ে।)

– কীভাবে আদর করব তাও বলে দেও। (মজা করে)

– যাহ দুষ্ট। সেটা আপনি ভালো করেই জানেন। হিহি।

– হুম জানি তো। তুমিও কয়দিন পর জানবে। হাহা। নেও এখন একটা দেও আমি চলে যাই।

– না দিব না। যান আপনি। (লজ্জা পেয়ে)

– না দিলে কিন্তু আমি আসল জায়গায়টাই জোর করে নিব।

– আচ্ছা দিচ্ছিতো। কি দুষ্ট হবু জামাই আমার।

এরপর রুমি নিশানের গালে ওর নরম ঠোঁটের স্পর্শ বুলিয়ে দিলে নিশান খুশি হয়ে চলে যায়।

রুমি আজ খুব খুশী। ওর আর ফারহানের প্ল্যান সাক্সেসফুল হয়েছে। একমাত্র ফারহানের জন্যই রুমি নিশানকে পেয়েছে। রুমি ফারহানকে ফোন দিয়ে সব বলে। ফারহান অনেক খুশী হয়। সাথে রুমিতো সেই খুশী। ও আবার ওর ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়েছে।

এদিকে নিশান বাসায় গিয়ে রুমির কথা ওর বাবা-মাকে জানায়। তারা দুইজনই রাজি হয় রুমিকে দেখতে আসার জন্য। দেখতে আসা বলতে সব ফাইনাল করতে। নিশানও আজ অনেক খুশী। সব ঠিকঠাক মতো হচ্ছে।

পরদিন সকালে,

নিশান আর ওর পুরো পরিবার রেডি হয়ে ডায়মন্ডের আংটি আর বালা নিয়ে রুমিদের বাসায় রওনা হয়। রুমির বাসায় পৌঁছে বেল দিতেই রুমির বাবা-মা দরজা খুলে দেয়। রুমির বাবাকে দেখে নিশানের বাবা বলে,

– আফজাল তুই!!! তুই রুমির বাবা?? এ বিয়ে হবে না নিশান। কখনো এ বিয়ে হবে না। আমি হতে দিব না। চলো তোমারা।

নিশান স্তব্ধ হয়ে যায় ওর বাবার কথা শুনে। এতো দূর এসে শেষমেশ ঘাটের কাছে নিশানে নৌকা ডুবে গেল!!

চলবে….