শখের সাদা শাড়ি পর্ব-০৫+০৬

0
302

#শখের সাদা শাড়ি
#ফাতেমা তুজ
#পর্ব-০৫+০৬
৫.
আধ ঘন্টা ধরে দরজা বন্ধ করে কি যে করলো উর্মি তা কেউ ই বুঝলো না। সর্বশেষ মুখ কালো করে বের হলো অন্তু। বেশ বকা খেয়েছে আজ। এমন অপকর্ম করলে বকা তো খেতেই হবে। ছাদে গিয়ে উর্মি দেখে পাশের বাসার এক বাচ্চার সাথে ইশারা করছে অন্তু। এতো পেকে গেছে? যখন টেনে ঘরে নিয়ে এসে প্রশ্ন করা হয় তখন অন্তু জানায় এটাই সেই মেয়ে যার গালে সেদিন চুমু দিয়েছিলো। তারপর উর্মি বেশ কড়া কে বোঝায় এই বয়সে এমন করা ঠিক কত টা অপরাধ। তাছাড়া এতে ফ্যামিলি তে নালিশ আসবে। পুরো বদনাম হয়ে যাবে। অন্তু বোধহয় বুঝেছে বিষয় টা। ছোট মানুষ সে, চারপাশে যা দেখে তাই করে বসে। তবু উর্মি নরম হলো না। আজ যদি শাসন না করা হয় তাহলে পরে ভুগতে হবে। যা চায় না উর্মি। সন্ধ্যায় উর্মি খেতে বসলো। কাচ কলার তরকারি। স্বাদ টা ভালো তবে কেন যেন পেটে জায়গা হলো না। আচমকাই বমি করে ভাসিয়ে দিলো মেঝে। এই অহেতুক বমির কারন অনুধাবন হলো না। মেঘনা চটজলদি সব পরিষ্কার করলো। বিছানায় এসে বসলো উর্মি।বোধহয় এতো টেনশন শরীরে কুলোয় না। রাত দিন খেটে বাড়ি তে এসে ও সেই টেনশন নিতে হয়। একটা মানুষের পক্ষে যন্ত্র সৃষ্টি সম্ভব তবে নিজে যন্ত্র যন্ত্র হয়ে যাওয়া টা একে বারেই অসম্ভব। নুন চিনির সরবত গুলিয়ে এনেছে মেঘনা। বাসায় স্যালাইন এর একটা প্যাকেট ও অবশিষ্ট নেই। সরবত টা খেয়ে নেয় উর্মি। ভীষণ বাজে লাগে এর স্বাদ টা। তবে সুস্থ না হলে কাল অফিস যেতে পারবে না। এতে করে সৌমেন স্যার রেগে যাবেন। জয়েন এর পর পর ই যদি এমন করে অসুস্থ হয় তাহলে কি চলবে নাকি? মাথার খুব নিকটে বসে মেঘনা আলগোছে মাথা টা কোলের উপর রাখে উর্মি।
” অন্তু কে থামাতে হবে আপা। না হলে পরে পস্তাতে হবে। ”

” কেন? সে আবার কি করেছে। ”

” অন্তু যাকে চুমু দিয়েছে সে জানিস কে? ”

” কে? ”

” সুলেখা ফুপুর বড় ভাইয়ের নাতনি। ঐ যে কিছু দিন আগে সৌদি থেকে আসলো না। ফুটফুটে একটা মেয়ে। নাম টা ভুলে গেছি। জানিস আজ দেখলাম ছাদ থেকে ঈশারায় কথা বলছে। আমার মাথা ঠিক নেই রে আপা। কিছু ভালো লাগে না। ”

” ধুর এতে টেনশন করার কি আছে। বাচ্চা রা তো খেলাধুলো করবেই। ”

” বুঝতে পারছিস না। এতে অনেক কিছু হতে পারে। ”

” তাহলে বাসায় জানাবি কথা টা? ”

” এটা আরো সমস্যার। বড় ভাবি জানতে পারলে অন্তু কে আরো লেলিয়ে দিবে। বড় লোকের মেয়ে, দেখতে সুন্দর সব মিলিয়ে বড় ভাবির রাজকপাল। এমন টাই বলবে পারলে এই বাচ্চা বয়সেই বিয়ে করিয়ে নিবে। আর ছোট ভাবি জানলে সুলেখা ফুপুর কান ভাঙাবে। তিনি কি কি করতে পারে সেটা তো ভালোই জানিস। ”

” তাহলে কি করা যায় বল তো। ”

এতোক্ষণ পর মেঘনার কন্ঠে ও তীব্র ভয়ের আভাস। রুচিশীল ফ্যামিলির মানুষ হলে ও পয়সার দিক থেকে নগন্য। বাবার রেখে যাওয়া এই বাড়ির এক টা অংশ ব্যতীত আর কিছুই নেই। মোটামুটি ভাবে চলছে সংসার টা। এখন যদি অহেতুক কেচ্ছা রটে যায় তাহলে চরম মূল্য চুকাতে হতে পারে। সেসব ভেবে উর্মির চোখ দুটো অস্থির হয়ে এলো। তবে মেঘনার কথা মনে করে শান্ত হলো। বাচ্চা পেটে রেখে টেনশন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রসঙ্গ বদল করে উর্মি ঘুমাতে এলো।

সচরাচর বাস পাওয়া যায় না। আজ যেন উর্মির জন্যই অপেক্ষা করছিলো বাস টা। উর্মি সবার আগে অফিস প‍ৌছালো। দারোয়ান সালাম দিতেই উর্মি বলল–
” সৌমেন স্যার কি এসেছেন? ”

” স্যার তো কাল অফিস থেকে যান ই নাই। এখানেই তো আছেন। ”

” ও। আর কেউ আছেন? ”

” না। আর কেউ ছিলো না। ”

ভাবনা নিয়ে এগোয় উর্মি। সৌমেন স্যার কাল বাড়ি ফিরেন নি। তাহলে অফিসের সবাই কে কেনো ছুটি দিলেন। হঠাৎ এতো রেগেই ছিলেন কেন। কি আছে এর আগে পিছে। ভাবতে ভাবতে লিফ্ট এর কাছে পৌছে গেল। একজন লোক বের হচ্ছে দেখে সাইট হয়ে দাড়ালো। লিফ্ট এ চরে নির্দিষ্ট ফ্লোরে প্রেস করে দিয়ে চুপ করে রইলো। নিজের ডেক্স এ এসে আবার সৌমেন স্যার এর কেবিনে এলো। সৌমেন উবু হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের উপর মাথা রেখে। অদ্ভুত লাগলো দেখতে। একবার ভাবলো ডাকবে তারপর ভাবলো কোনো দরকার নেই। তবে হঠাৎ করেই চোখ গেল পরে থাকা ইনহেলার এর দিকে। সেটা তুলে দিয়ে যেই না ফিরবে তখনি চেচিয়ে উঠলো উর্মি। সৌমেন এর নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। একি মসিবত! সময় নষ্ট না করে দারোয়ান কে ডেকে নিয়ে আসে উর্মি। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসার জোগাড়। অফিসে সে প্রথম পা দিয়েছে। এতে করে সৌমেন স্যার এর এক বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হলে ও এর জন্যে উর্মি কে সবার প্রথম নাকাল হতে হবে। হসপিটালে নিয়ে এসে আরো চিন্তায় পরে গেল। মেঘনা কে একটা কল করলো।
” হ্যাঁ রে উর্মি এই টাইমে তো কল করিস না। তুই ঠিক আছিস তো। শরীর খারাপ লাগছে কি। ”

” আপা আমি ঠিক আছি। তুই খেয়েছিস নাকি সেটা জানার জন্য কল করলাম। আর অন্তু কোথায় রে? ”

” অন্তু কে দেখলাম টিভি দেখে। আর আমাকে খাইয়েই তো বের হলি। ভুলে গেলি নাকি। ”

” ও হ্যাঁ। একদম ই ভুলে গেছি। আচ্ছা কাজ করতে দিলে দেখে শুনে করবি। ভারী কিছু তুলবি না। ছোট ভাবি কথা শুনালে ও না। ”

” ঠিক আছে। কিন্তু তোকে কেমন যেন অস্থির লাগছে। ”

” চাপে আছি তো তাই। রাখছি রে। ফলের জুস রেখে এসেছি। ফ্রিজ থেকে নিয়ে সরাসরি খাস না আবার। ঠান্ডা কমলে তারপর খাবি। ”

” ঠিক আছে ম্যাডাম। ”

ফোন রেখে হাঁটু তে মুখ গুজে দেয় উর্মি। ভালো লাগে না। মাথা টা কেমন ঝি ঝি পোকার মতো শব্দ করে। সৌমেন স্যার এর বিষয় টা ওকে আরো বিচলিত করে তুললো। কি দরকার ছিলো আগ বাড়িয়ে সৌমেন স্যার এর কেবিনে যাওয়া।

এক বোতল পানি কিনে এগিয়ে এলো সমীর। পথের ধারে বসে আছে উর্মি। কেমন যেন অগোছালো লাগছে। বোতল টা ব্যাগে রেখে উর্মির পাশাপাশি বসলো। অথচ উর্মি টের ও পেল না। মন দিয়ে কি এমন রাজকার্যের কথা ভাবছে মেয়েটা। সমীর নিশ্বাস চেপে রইলো। আর তারপর ই শুধালো–
” এখানে বসে আছেন যে। আমার জানা মতে এখন তো অফিস টাইম। ”

উত্তর আসে না। হাত টা এগিয়ে নিয়ে আবার গুটিয়ে ফেললো। খ্যাক করে কাশলো। এবার মনোযোগ এলো। ভীষণ ভাবে চিন্তিত দেখালো। উর্মি বোধহয় ঘোর এর মাঝে আছে।
” আপনি ঠিক আছেন? পানি খাবেন। আমার কাছে পানি আছে। ”

পানি বের করে দেয় সমীর। এক সেকেন্ড ব্যয় করলো না। ঢগঢগ কর‍ে পানি খেতে লাগলো। তারপর স্থির হয়ে বুঝতে পারে এতোক্ষণ কি ঘটেছে। বৃথা হাসার চেষ্টা করে উর্মি। তবে সমীর এর ধারালো দৃষ্টি।
” কি হয়েছে উর্মি। আপনাকে এমন অস্থির আর দুর্বল লাগে কেন? অফিসে যান নি?”

” গিয়েছিলাম,আবার চলে আসছি। ”

” অহ ঠিক আছে। তবে এখানে বসে বসে কি করছেন। কেমন যে আছেন সেটা যে মুখের ভঙ্গিমাতেই প্রকাশ। ”

” আসলে আমি ক্লান্ত। ”

” সেটা তো বুঝলাম। তবে ক্লান্তি টা শুধু কাজের প্রেসার থেকে নাকি আদার্স কোনো ইস্যু। ”

একটু থামে সমীর। তারপর আবার বলে
” আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন উর্মি। আমি কি পৌছে দিবো আপনাকে। ”

” না না এখন যেতে পারবো না। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। তবে এখানে কেন? ”

” স্যার হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পরেছেন। সেই জন্যই এখানে আসা। ”

” সৌমেন ভাই অসুস্থ! ও সীট, আমি তো ভাবলাম ভাই হয়তো আদার্স কোনো ইমপরট্যান্ট ওয়ার্ক নিয়ে বিজি। বাট! ”

সব টা খোলসা করে বললো উর্মি। এখন শান্তি লাগছে। পেটের কথা কাউ কে না বলে থাকা যায় নাকি? সব টা শুনে ব্যথিত হয় সমীর। সে জানায় সৌমেন কে দেখতে যাবে। উর্মি নিজে ও পিছু পিছু হাঁটে।

চলবে…..

#শখের_সাদা_শাড়ি
৬.
কাজ কে সর্বাঙ্গে লেপ্টে রাখে যিনি সে নিশ্চয়ই জীবনে উন্নতি করে। আর তার বড় উদাহরণ হচ্ছে সৌমেন। এই যে দীর্ঘ সাত দিন যাবত বেড রেস্ট এর মধ্যে আছে তবু ও কাজের প্রতি সে কি খেয়াল। ঘরে বসেই সব সামাল দেয়। পুরো এক সপ্তাহের সব কাজের সিডিউল নিয়ে উপস্থিত হলো উর্মি। যেই ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেই ঠিকানায় এসে সৌমেন কে কল করলো। সৌমেন নির্দেশনা দেওয়ার পর ই গেট খোলা হয়। বিশাল বড় এক বাংলো। থাকা স্বাভাবিক। ওমন বড় কোম্পানির মালিক যারা তাদের বাড়ি নিশ্চয়ই খুপরি ঘর হবে না। বাড়ির এক পাশে ফুলের টপ দিয়ে বাগান করা। কোনো গাছ ই মাটি তে লাগানো নয়। এতে অবশ্য যখন তখন স্থান পরিবর্তন করে বাসার লুক টাই চেঞ্জ করে ফেলা যায়। এই ধার ঐ ধার চোখ ঘুরিয়ে দেখে উর্মি। কেমন এক আড়ষ্টতা আর ভয় লক্ষ্য হয়। হেসে ফেলে সমীর। মেয়েটা কে ভীতু মনে হয় নি তবে সব মানুষের মনেই যে ভয়ের বাস এটা আজ প্রমাণিত।
” উর্মি কত দিন ধরে কাজ করছে সৌমেন ভাই? ”

” দিন পনেরো হলো। মেয়েটা খুব কর্মঠ। এমন একজন ইমপ্লয়ি প্রয়োজন ছিলো আমার। ”

” হুম তাছাড়া মানুষ হিসেবে ও ভালো। ”

” যেমন? ”

” সেদিন হাইওয়ে ক্রস করছিলাম তখনি দেখলাম কিছু ফুটপাতের বাচ্চা দের সাথে খেলছে। যাওয়ার সময় আবার চকলেট ও কিনে দিলো। উর্মি না থাকলে হয়তো তুমি হসপিটালের বেডে ও যেতে পারতে না। ”

” তা ঠিক। আমার জীবন বাঁচানোর জন্য কৃতজ্ঞ থাকবো। ”

মৃদু হাসলো সমীর। সি সি টিভি ফুটেজ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে তারপর চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পেন্সিল দিয়ে ডিজাইন করতে লাগলো। সৌমেন অসুস্থ থাকায় দেখতে এসেছিলো। সাথে কিছু ডিজাইন দেখাবে বলে ও স্থির হয়েছে। উর্মি এসে গেছে। চক্ষু দুটো কপালে। এতো প্যারা নিতে হয়েছে যা ধারণার ও বাইরে। হাতের ছাপ দাও, বডি চেইক করো এটা সেটা কতো প্রযুক্তি। বাংলাদেশ তবে ডিজিটাল হয়েই গেল। শুধু মাত্র উর্মির কপাল খানাই ক্ষণে ক্ষণে বিতাড়িত হয়। বুক চিরে নেমে আসা দীর্ঘ শ্বাস টা সন্তপর্নে লুকিয়ে লম্বা করে সালাম দেয়। তারপর বল‍ে–
” ভালো আছেন স্যার? ”

” বেডে শুয়ে বসে থেকে যতো টা ভালো থাকা যায়। ”

” কি করার। আল্লাহ আপনাকে দ্রুত সুস্থ করে দিক। ”

” বসো উর্মি। ”

উর্মি একটু দূরের কাউচে বসলো। ঘরের এক পাশে দোলনা রাখা। ভারী সুন্দর লাগে। উর্মি চেয়েই রইলো।সৌমেন বলল
” চাইলে বসতে পারো। এখন তুমি ইমপ্লয়ি না গেস্ট। ”

লজ্জা পেয়ে উর্মি বলে–
” না না আমি এখানেই ঠিক আছি। এমনি দেখছিলাম বেশ শৌখিন আপনি। ”

” শখ ছাড়া কি মানুষ বাঁচে উর্মি। প্রতি টা মানুষের ই শখের জিনিস থাকে। এই যে এই বাড়ি টা এটা আমার দাদুর শখ ছিলো তবে মজার বিষয় হচ্ছে তার শখের জিনিস তো পূরণ হয়েছে কিন্তু তিনি তা উপভোগ করতে পারেন নি। ”

” ইসস। ”

উর্মির কন্ঠে ব্যথা। সমীর পাশ থেকে বলল
” তবে সৌমেন ভাই শখের জিনিস পেয়ে গেলে শতভাগ আনন্দ টা ও থাকে না। ঠিক যতো টা কল্পনা করার ক্ষেত্রে অনুভব করা যায়। ”

” বরাবর ই তুমি ঠিক বলো সমীর। ”

হাসে সৌমেন। সমীর পেছন থেকে উঠে গিয়ে সামনে বসে। উর্মি একটু বেশিই অবাক হয়। সে পাঁচ মিনিট ধরে এই রুমে উপস্থিত অথচ সমীর কে নজরেই পরলো না। রোগা পাতলা লম্বা দেখতে এক ছেলে সেই তাকে নজরে না পরার বিশেষত্ব তো নেই।
” হাই। ভাবুক হচ্ছেন কেন? ”

” আমি আসলে খেয়াল ই করি নি। ”

” পেছনে ছিলাম যে তাই দেখেন নি। আচ্ছা দেখেন তো কেমন হলো ডিজাইন টা। ”

উর্মি ডিজাইন টা দেখে। এতো সুন্দর করে গ্রাউন এর ডিজাইন করেছে সমীর যে ওর চোখ জুড়িয়ে আসে। সৌমেন ও দেখে বেশ প্রশংসা করে। নাস্তা দেওয়া হয় উর্মি কে। অথচ উর্মি লজ্জা পায়। সৌমেন বুঝে বিষয় টা।
” লজ্জা পাওয়ার বিষয় না এটা। খাবার না খেলে মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই সবাই কেই খেতে হয়। ”

” লজ্জা পাচ্ছি না তো। ”

দ্বিতীয় বারের মতো চায়ের কাপ তুলে নিয়ে ভ্রু বাকিয়ে তাকায় সমীর। উর্মি বাচ্চা দের মতো সাফাই গায়
” সত্যিই লজ্জা পাচ্ছি না আমি। ”

ফিক করে হেসে দেয় সমীর। সৌমেন তখন ধীর পায়ে উঠে বেরিয়ে গেছে। কিছু ফাইল পত্র গুছিয়ে নিতে হবে। সমীরের হাসি তে এবার আরও বেশি লজ্জিত হয় উর্মি। হাতের তালু তে নখ ঘষে। কেমন যেন এক অনুভব হয়। আজকাল বড্ড লজ্জায় পরতে হয় তাকে। পরিবারের সাথে যতো টা ফ্রেন্ডলি কথা বলতে পারে তার এক অংশ প্রযোজ্য হয় না অন্য দের ক্ষেত্রে।

মেঘনা আর অন্তু কথা বলছিলো। উর্মি ঘরে ঢুকতেই চুপ হয়ে যায় দুজনে। ক্লান্ত থাকা তে পাত্তা ই দেয় না। সাওয়ার নিয়ে গা এলিয়ে দেয়। সকাল ছয় টা থেকে তিন টে বাচ্চা কে পড়ায় তারপর আবার একটা থেকে অফিস। রাতে এসে রান্নায় হেল্প।সব মিলিয়ে পড়াশোনা টা চাঙ্গে। সময় এখন সাড়ে সাত টা। না খেয়েই পড়তে বসেছে। আজ অনেক টা পড়তে হবে। আলগোছে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মেঘনা। অন্তু কে নিয়ে ব্যলকনিতে বসে। অন্তুর চুপচাপ থাকা টা ভালো ঠেকে না। মেঘনার বুকের ভেতর ভয় নেমেছে।
” বাবা সত্যি করে বল,কি হয়েছে? ”

” কিছু হয় নি বড় ফুপি। ”

” মিথ্যে বলে না। দেখ পরে কিন্তু ঝামেলা হবে। ”

” পিংকি রাগ করেছে। ”

” এটা আবার কে? ”

” পাশের বাড়ির মেয়ে। ”

” কি বলিস! আমি তো মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না। ”

” স্কুলে ব্রেক টাইমে আমি খেলতাম ওর সাথে। এখন খেলি না যে। তাই আমাকে ধাক্কা মেরেছে। ”

” সর্বনাশ! এই বাচ্চা কালে কি শুরু করেছিস তোরা। ”

অন্তু সামান্য চেচিয়ে বলে–
” কারো সাথে খেলা টা দোষের নাকি। তোমরা সব সময় এমন করো। ”

” কি রে কি হলো তদের। কার সাথে কি খেলা দোষের। ”

জোৎস্না কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে দুজন। মেঘনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হেসে উঠে।
” কি হবে ভাবি, তোমার ছেলে বলছে সে খেলবে। আমি বলছিলাম এই বয়সে কেউ খেলে নাকি। তাই বললো খেলা টা কোনো দোষের না। ”

” ও তাই বল। আর এখন কি খেলবি তুই। ঘরে যা পড়তে বোস। ”

নির্বিঘ্নে অন্তু উঠে যায়। জোৎস্না ছেলের পানে তাকিয়ে বলে–
” বাহ্বা এতো সুবুদ্ধি হলো কবে। মেঘনা তুই ঘরে গিয়ে উর্মি কে ডেকে দে তো কথা আছে একটু। আমি ভেজা কাপড় গুলো মেলে দেই। ”

” জী ভাবি। ”

পড়া শোনার পাঠ চুকিয়ে আসে উর্মি। পড়তে বসলেই যতো ঝোর ঝামেলা। বড় ভাবি কে বসার ঘরে না পেয়ে রান্না ঘরে যায়। সেখানে ই পেয়ে যায়। তুলি খাবার নিচ্ছিলো। উর্মি কে দেখে সৌজন্য হাসে। স্বামীর সাথে একান্তে খাবে বলে স্থির করেছে। বিষয় টা খারাপ না। যদি এর পেছনে ভালো উদ্দেশ্য থাকে।
” তুলি চলে গেছে? ”

” হ্যাঁ ভাবি। ”

” আচ্ছা শোন না রে। ”

উর্মি বলার পর ও তুলি গিয়েছে কি না সেটা দেখে নেয়। দেয়ালের ও যে কান আছে সেটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সে। উর্মি বুঝতে পারে কঠিন কিছু শুনতে হবে। হলো ও তাই। বড় ভাবি জানালো অন্তুর জন্য রাখা প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা সঞ্চয়ের কথা। উর্মি একটু সময় নিয়ে উত্তর করলো —
” এক মাসে তো সম্ভব না ভাবি। আমি দু মাসে পাঁচ হাজার করে দশ হাজার টাকা দিয়ে দিবো। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। চিন্তা মুক্ত করলি রে। বেশ ঝামেলায় ছিলাম। ”

বড় ভাবি চলে যায়। উর্মি খোলা চোখে তাকিয়ে থাকে। আড়াল থেক সব টাই শুনেছে তুলি। রাগে ফুসতে থাকে। স্বামীর কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে। বউ সোহাগী স্বামী ক্ষিপ্ত হয়। তুলি যে মিথ্যে বলে না এই নিয়ে তার আবার বিরল ধারণা।

শশী কে পড়াচ্ছিলো উর্মি। দিন কে দিন বিগড়ে যাচ্ছে মেয়েটা। পড়া শোনা করা যেন বিষ।
” পড়াশোনা থেকে মন সরে গেছে তোমার। এটা কিন্তু ঠিক না। ”

” পড়ি তো আপু। ”

” সেটার নমুনা দেখলাম। লাস্ট উইকলি টেস্টে ইংলিশে পেয়েছো ৩৮ আর ম্যাথ এ ৩৩। বুঝো এসব? এক মার্কস এর জন্য ফেল আসে নি। ”

” আমি তো সব দিয়েছিই কিন্তু ”

” তবু টেনে টুনে পাস। বাহ ”

হতাশ হয় উর্মি। শেষ বেলায় এসে যদি শশীর অবস্থা এমন হয় তাহলে তো বড় সমস্যা।শশী কে এই মাসেই ছেড়ে দিবে ভেবেছিলো তবে এখন মত বদলেছে। বাকি দুটো টিউশনি ছেড়ে দিয়ে শশী কেই পড়াবে। না হলে এই মেয়ে নাম ডুবাবে।পড়া শোনা শেষ করিয়ে চলেই যাচ্ছিলো তবে ডেকে পাঠান শশীর মা। একটা কার্ড দিয়ে বলেন সামনে মাসের পাঁচ তারিখ শৌখিন এর বিয়ে। উর্মি যেন আসে। মুখে আসবো বললে ও মন টা টানছে না। বিয়ে তে আসতে গেলে ও একটা খরচা আছে। যা উর্মির পক্ষে ঝামেলার। তবে আসতে যে হবেই।

চলবে….