শখের সাদা শাড়ি পর্ব-০৭+০৮

0
275

#শখের সাদা শাড়ি
#ফাতেমা তুজ
#পর্ব-০৭+০৮

৭.
অফিস থেকে ফিরতেই বাড়ির নিচ থেকে চেচামেচি শুনতে পায় উর্মি। এক মন ভয় নিয়ে ছুটে যায় ভেতরে। পাশের বাসার সুলেখা ফুপু ও তার ভাতিজা কে দেখে বুকে চিনচিন ব্যথা হয়। বড় ভাবি জোৎস্না সমান তালে চেচামেচি করছে। বাড়ির পেছন দিকের এক কোনে ভোতা মুখে দাড়িয়ে আছে মেঘনা। এক হাতে অন্তু কে জড়িয়ে রাখা। যা বোঝার বুঝে গেল উর্মি। এই ভয় টাই পেয়েছিল সে। তুলি কে আশ পাশে দেখা যাচ্ছে না। এর মানে সে ও এসব কান্ডের সাথে বেশ ভালোই জড়িত। উর্মি এগোয়। কেউ ওকে পাত্তা দেয় না। সুলেখা ফুপু নিজের ভারী শরীর টা নিয়ে একে বারে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছেন। যেসব অকথ্য ভাষা ব্যবহার করলো তার মধ্যে সব থেকে খারাপ লাগে দুটি বিষয়ে। এক ফকিরের ছেলে মেয়ে আর দুই মেঘনার বাপের বাড়ি আসার অন্ন ধ্বংস। প্রতিবাদ করে উর্মি–
” মুখ সামলে কথা বলবেন ফুপু। আমরা মধ্যবিত্ত ঠিক তাই বলে ফকির না।কখনো আপনাদের বাসায় গিয়েছি দু মুঠো ভাত এর জন্য। ”

” চোরের মায়ের বড় গলা। ”

” আপনার বাসায় চুরি করেছি আমরা? চোর বলেন কোন সাহসে। বড়লোক হলেই মানুষ হওয়া যায় না। ”

সুলেখা একটু নিশ্চুপ। তখনি ভীরু বলল
” বেয়াদবি করবি না উর্মি। ”

” বেয়াদবি কোথায় করছি ভীরু ভাই। আপনিই বলেন আপনার ফুপু যে বললো আমরা ফকির চোর,সে কোন হিসেবে বল‍ে। ”

” তোর ভাতিজা কি করছে জানোস? ”

” কি করছে অন্তু? ”

” আমার মেয়ের সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছে। ”

উর্মি একটু চুপ হয়ে অন্তুর পানে তাকায়। সত্যতা অন্তুর নিকট। বড় ভাবি মাঝ থেকে বল‍ে উঠে–
” আমার পোলা লাইন মারার চেষ্টা করছে তো ভালো করছে। আরও করবো। নিজে মেয়ে সামলান আগে। ”

” ভাবি মুখ সামলান। আমার মেয়ে এখানে কি করছে। আপনার ঐ টুকু লেংটা ছেলে আমার মেয়ের পেছনে ঘুরে। জিজ্ঞাসা করে দেখেন। ”

” আর আপনার মেয়ে সাধু? সে বুঝি আমার ছেলের সঙ্গ দেয় না? ”

” আমার মেয়ে সঙ্গ কেন দিবে। আপনার ছেলেই তো পিছু পিছু আসে। এই টুকু ছেলে নাক টিপলে দুধ বের হয় সেই ছেলে টাকার পেছনে দৌড়ায়। ভালোই তো শিক্ষা দিছেন। ”

জোৎস্না আরও ক্ষেপে যায়। দুজনের মুখোমুখি তর্ক চলতেই থাকে। উর্মি অন্তুর কাছে এসে দাড়ায়। মাথা নিচু করে আছে দেখে রাগ হয়। ইচ্ছে হচ্ছে চট করে দুটো বসিয়ে দিতে টকটকে গালে। টেনে নিয়ে যায় উর্মি। মেঘনা পেছন পেছন ছুটে।
” কিছু বলিস না বোন। বাচ্চা মানুষ। ”

” দেখছি আপা। তুই যা রেস্ট নে। ”

অসহায় এর মতো তাকিয়ে থাকে অন্তু। আর তারপর ই উর্মির ক্ষোভ এর মুখেয় পরতে হয়। গালে হাত দিয়ে কান্না করে ছেলেটা। উর্মির চোখ লাল।

ভীরু আর বড় ভাবির সাথে টক্কাটক্কি লড়াই চলে। আর আশ পাশের মানুষ মজা নিচ্ছে ফ্রি তে। রেগে আগুন হয়ে আছে উর্মি। সামনে গিয়ে বলে–
” আমার ভাতিজার দোষ দেওয়ার আগে নিজের মেয়ের দোষ টা দেখেন। আমি বলবো না আমার ভাতিজা সাধু। তবে দোষ একার না। ”

” আমার মেয়ের কোনো দোষ নাই। ”

” সেটার প্রমান এক্ষুনি দিচ্ছি। ”

নিজেদের বাড়ির বাগানে বসে কাঁদছে পিংকি। পাশেই ওর মা বসে আছে। তিনি অন্তু কে গাল মন্দ করছেন। তুলি বেশ ভালো করে কান পরা দিয়েছে। উর্মি কে দেখে একটু ভরকে যায় পিংকি। অন্তু বলেছে তার ফুপি খুব রাগি। মেয়েটা কে টেনে বের করে নিয়ে আসে। পেছনে ছুটে আসে পিংকির মা। ভীরু চেচাচ্ছে। তার মেয়ে কে কেন নিয়ে আসা হলো। উর্মি হাঁটু গেড়ে পিংকির কাছে বসে।
” আম্মু প্লিজ সত্যি কথা বলবে তুমি। অন্তু তো তোমার বন্ধু তাই না? ”

” পিংকি কিছু বলবো না। ছাড় আমার মেয়ে রে। ”

” ভীরু ভাই ফাজলামি করবেন না। আমি এখনি প্রমান দিবো। আপনি আটকান কেন!”
কথা শেষ করে পিংকির মাথায় হাত বুলায়। সুলেখা ফুপু এক নিশ্বাসে গোষ্ঠী উদ্ধার করে। উর্মি নরম কন্ঠে বলল–
” পিংকি, বাবা তুমি যদি আজ মিথ্যা বলো তাহলে তোমার বন্ধু কে সবাই বকবে। দেখো পাপা এখনো গালমন্দ করছে। প্লিজ বাবা সত্যি টা বল‍বে। বলবে তো? ”

হিচকি তুলে মাথা নাড়ায় পিংকি। ততক্ষণে ছোট ভাবি ও হাজির। উর্মি এক পলক তাকিয়ে পিংকি কে বলল–
” বাবা কি হয়েছিলো। অন্তু তোমাকে ছাঁদে গিয়ে কি দিয়েছে? ”

” চকলেট দিয়েছে। ”

” অন্তু বলেছিল তোমায় আসতে? ”

” না। ”

” তাহলে, একটু ক্লিয়ার করে বলো তো। ”

সবাই টান টান উত্তেজনা নিয়ে শুনে। পিংকি বলে–
” অন্তুর সাথে আমি স্কুলে খেলতাম। খুব ভালো বন্ধু। আমিই বলেছিলাম আমায় যেন ছাঁদে এসে চকলেট দিয়ে যায়।কারন মাম্মা আমাকে চকলেট খেতে দেয় না। ডক্টর আঙ্কেল নিষেধ করেছে। ”

ব্যাস সমস্ত টা পরিষ্কার। মাঝে হয়তো অন্তু দু একবার দুষ্টুমি করেছে। তবে এর মাঝে পিংকি নিজে ও দোষী। সবাই থমথমে হয়ে যায়। ফটফট পায়ে চলে যায় উর্মি। যাওয়ার আগে পিংকির কপালে চুমু দিয়ে বলল–
” থ্যাংকস আম্মু। সত্য টা বল‍ার জন্য। আশা করি আমার ভাতিজা কে একা দোষারোপ করা হবে না আর। আমি বলছি আপনাদের মেয়ে কে সামাল দিবেন। আমি অন্তু কে কি করার করে নিবো। ”

স্বীয় কক্ষে খাপটি মেরে বসে আছে উর্মি। রাত প্রায় এগারো টা। অফিস থেকে বিকেলে ফিরেছে আজ। মাঝে সৌমেন স্যার কাজ দিয়েছিল। সব টাই পানির মতো ভেসে গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সৌমেন স্যার কে কল করে।
” আমি আসলে খুব দুঃখিত স্যার। ”

” কি হয়েছে উর্মি? ”

” কাজ টা করতে পারি নি। পারিবারিক সমস্যায় আটকে গিয়েছিলাম। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। এতো ভেবো না। বাট কালকের মধ্যে কিন্তু লাগবে। ”

” ওকে স্যার। ”

” আর শাড়ির কালেকশন গুলো সমীর এর থেকে জেনে নাও। ”

” আচ্ছা। ওনার মেইল আইডি নেই আমার কাছে। ”

” আমি সেন্ড করে দিচ্ছি। ”

” ওকে স্যার। ”

ফোন রেখে কিছুক্ষণ জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে উর্মি। নোটিফিকেশন এর শব্দে ঘোর ভাঙে। মেইল আইডি টা চেইক করে সমীর কে একটা মেইল পাঠায়। ঝটপট কল আসে সমীর এর।
” হ্যাঁ উর্মি কেমন আছেন? ”

” ভালো আপনি ভালো আছেন? ”

” হ্যাঁ ভালো আছি। উর্মি শুনেন আপনি আমায় হোয়াটস অ্যাপ অথবা ফেসবুকে নক দেন। আমি সব কালেকশন বুঝিয়ে দিচ্ছি তারপর মেইল করে একটা চার্ট পাঠিয়ে দিবো। ”

” আচ্ছা। ”

উর্মি কথা মতো ফেসবুকে নক করে। মেঘনা ধীর চিত্তে উপস্থিত হয়। উর্মির পাশে বসে।
” ঘুমা আপা, আমার লেট হবে। ”

” খাবার টা খেয়ে নে বোন। ”

” ক্ষিদে নেই আপা। ”

” অন্তুর উপর রাগ করেছিস? ”

” আমার রাগ আদেশ নিষেধ কারো যায় আসে না রে। তাই আর ভাবছি না। ”

অন্তু দরজার কাছ থেকে চলে আসে। উর্মি তখন ফোনের স্ক্রিনে ব্যস্ত। কান্নার শব্দে তাকায়। অন্তু কে দেখে বুক ভারী হয়। সামান্য চেচিয়ে উঠে অন্তু। উর্মি নিজের কান্না সংবরণ করে।
” আমি আর কখনো পিংকির সাথে কথা বলবো না ফুপি। তুমি আমায় মাফ করে দাও। প্লিজ ফুপি, প্লিজ। ”

মেঘনা ছলছল চোখে। উর্মি ডুকরে উঠে। অন্তু কে বুকে জড়িয়ে বলে–
” একদিন অনেক টাকা হবে তোর। আর তখন ঐ মানুষ গুলো কে দেখিয়ে দিবি মধ্যবিত্ত রাও পারে। ”

টুলুটুলু চোখ নিয়ে শশী কে পড়াচ্ছে উর্মি। কাল সারা রাত কাজ করেছে। ফলস্বরূপ চোখ দুটো কোটরে চলে এসেছে। শশী একটু পর পর ই এটা সেটা বলছে তবে উর্মি উত্তর করতে পারছে না। মাথা ব্যথা করে। হালকা হাতে মাথায় মালিশ করে।
শশী বলে–
” সালমা আন্টি একটু চা দেও তো আপু কে। ”

” তুমি পড়ো শশী। ”

” অসুস্থ লাগে তোমায়। ”

” ঘুম হয় নি তাই। তুমি সলভ করো ম্যাথ টা। ”

” হুম। ”

চা দিলে চা পান করে উর্মি। তবু মাথা ব্যথা যায় না। শশী কে পড়িয়ে বের হয়ে আসে। হেটে যাচ্ছে। পা যেন আটকে আছে। পরে যেতে নিচ্ছিল। তবে একটা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বেঁচে যায়। আবার হাঁটা দেয় তখনি এক গাড়ি এসে থামে। সমীর কে দেখে হাসার চেষ্টা করে উর্মি বলে–
” হাই ”

” হেই কোথায় যাচ্ছেন? ”

” বাসায় যাচ্ছি। ”

” ও তাহলে চলেন আমি প‍ৌছে দেই। ”

” না না ঠিক আছে। আমি যেতে পারবো। ”

” আরে আসেন তো। ”

মৃদু স্বরে হু বলে উঠে পরে উর্মি। শরীর টা সুস্থ থাকলে যেতো না। তবে আজ কে আর পারছে না।
তুলি ছাঁদে কাপড় মেলছিল। গাড়ির শব্দে নিচে তাকায়। উর্মি কে সমীর এর সাথে দেখে গোল করে ফেলে চোখ। উর্মি হেসে কথা বলছে। এক কাপ চা খাওয়ার অনুরোধ ও করলো। কাজের বাহনায় না করে দিলো সমীর। উর্মি বেশি ভনিতা না করে ঘরে চলে এলো। বড্ড মেজমেজ করছে শরীর টা।

চলবে….

#শখের_সাদা_শাড়ি
৮.
হলুদ রঙের কাপড় পরেছে উর্মি। গায়ে ফুলের গহনা। আয়নায় দাঁড়িয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগালো। সাজ গোজ বেশ একটা পছন্দ না। সেই কারনে মেকাপ এর সরঞ্জাম ও নেই তেমন। ধীর পায়ে উর্মির বরাবর এগোয় মেঘনা। বোন টা তাঁর ভীষণ সুন্দর। বলতে গেলে উপমা খুঁজতে হয়। চোখ দুটো বড় বড়। এই চোখে কাজল টা খুব মানায়। তবে উর্মি কখনোই কাজল পরে না। নিজের ব্যাগ থেকে কাজল নিয়ে আসে মেঘনা। উর্মি না বলতেই মেঘনা চোখ পাকায়। চিকন করে রেখা টেনে দেয় সুন্দর নয়নে। কপালের ডান পাশ টায় নামিয়ে দেয় এক গাছি চুল। বড্ড সুন্দর লাগে দেখতে। তুলি নাক মুখ কুচকে বসে আছে। উর্মি কে দেখে খুব একটা ভালো লাগলো না। মুখ টা বাকালো আড়ালে। উর্মি ছোট ভাইয়ার পাশে বসলো। পেপার টা টেনে রেখে দিলো।
” তোমায় তো পাওয়াই যায় না ছোট ভাইয়া। কাজের ব্যস্ততায় পরিবার কে ভুলে গেছো? ”

” ধুর পরিবার কে ভুলবো কেন। ”

” সে জন্যে একবার খোঁজ ও নিলে না। ”

” তোমার ভাইয়া খুব টায়ার্ড ছিলো উর্মি। ”

তুলি এসে পাশে দাঁড়ালো। সৌজন্য তো দেখা করতে চেয়েছিল তবে তুলিই বাঁধা দেয়। সে কথা কে ইনিয়ে বিনিয়ে ঝটলা বাঁধায়।
” তা কোথায় যাওয়া হচ্ছে আমার বোনের? ”

” স্টুডেন্ট এর বাসায়। শৌখিন ভাইয়া কে চিনো না? তোমার স্কুলেই পড়েছে। ”

” ওও হ্যাঁ। খুব মেধাবি ছিল। জুনিয়র হলে ও ওর নাম ডাক ছিলো আশ পাশে। সেই ছেলে আজ বিয়ে করছে। বাহ ”

” হুম বিয়ে তো করতে হবেই। বয়স তো কম হলো না। দুই এক বছর পর ই ত্রিশ ছুঁবে। ”

” সেটাও ঠিক। ”

কথার মাঝে বড় ভাবি চা দিয়ে গেলেন। উর্মি দীর্ঘশ্বাস নামিয়ে অন্তুর ঘরে প্রবেশ করে। সারাদিন শুয়ে বসে দিন কাঁটায়। ঘটনার এক সপ্তাহ হতে চললো অথচ ছেলেটা অস্বাভাবিক। বাচ্চা এক ছেলে তাঁর মনে ও কেমন অনুভূতি বুনে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা।

রিক্সা থেকে নেমে একটু থমকায় উর্মি। ভীষণ অস্বস্তি হয়। হলুদের শাড়ি পরে কেমন যেন হলদে পরি লাগে। গাড়ি থেকে নেমে ভ্রু কুঞ্চিত করে সমীর। মুখ ভরা হাসি ফুটিয়ে ফিসফিস করে বলে–
” এখানে কি করেন। ”

” ওরে বাবা ” শব্দ করে পিছিয়ে যায় উর্মি। আচমকা ভরকে গিয়েছিল। সমীর ঠোঁট উল্টিয়ে হাসে।

” আমি আসলে চমকে গিয়েছিলাম। ”

” সে তো দেখলাম ই। এখানে দাঁড়িয়ে এমন কাচুমাচু করছেন কেন? ”

” কি করবো বুঝতে পারছি না। সেন্টারে বিয়ে দেখে কেমন যেন লাগে। ”

” নর্মাল বিহেভ করেন। এটা একটা সেন্টার, যেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। তাছাড়া আপনি গেস্ট হয়েই এসেছেন এটাই মাথায় রাখেন। ”

” জী। ”

” আসুন আমার সাথে। ”

সোফা সেটে বসে আছে শৌখিন। সেখান জুড়ে মেয়ে ছেলেদের ভীড়। শশী তো ভাইয়ের বিয়ে কে নিজের বিয়েই মনে করে ফেলেছে। চোখে কালা চশমা লাগিয়ে কোমর দুলিয়ে নাচে। হেসে উঠলো উর্মি। সমীর তার পাশ থেকে চলে গিয়ে শৌখিন এর পাশে বসে। কি যেন বলে ফিস ফিস করে। ওমনি পেটে গুতো দেয় শৌখিন। সমীর একটু ব্যথা পাওয়ার ভঙ্গিতে আবার কি যেন বললো। এবার উর্মি ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেললো।এই ছেলের অভিনয় দারুণ।
” ম্যাম সফট ড্রিঙ্কস? ”

” থ্যাংকস। ”

সফট ড্রিঙ্কস এ ঠোঁট ছোঁয়ায় উর্মি। টেস্ট ভালো। সমীর আর শৌখিন দুজনে নেচে কুদে একাকার। দুজন কে দেখে মনে হবে না এরা পঁচিশ পেরিয়েছে আরও কয়েক বছর পূর্বে। শৌখিন এর মা শ্যামলতা এসে উর্মি কে নিয়ে গেল। খাবার খাইয়েই ক্ষান্ত হলেন। পেটে আর জায়গা নেই। শশী এক বার ডাকলো নাচ করার জন্য। উর্মি বারণ করে দিলো। আলো নিভে গেল। নিভু আলো তে কাউ কে দেখাই যায় না। মৃদু সাউন্ডে রোমান্টিক গান চলছে। গুরুজন রা আগেই চলে গেছেন। একটু আগেই সবাই ছিলো হলুদে মাখো মাখো। উর্মির গালে নেই তার লেশ মাত্র। বহু কষ্টে এই হলুদ থেকে বেঁচেছে। উর্মি একটু পেছন যেতে চাইলেই এক টা শীতল হাতের স্পর্শ পেল বাহু তে। পিঠ ঠেকে গিয়েছে সেই শক্ত বুকে। দুরুদুরু করে উর্মির হৃদয়। এক রাশ ব্যকুলতা থেমে যায় চেনা পারফিউম এর ঘ্রাণে। একটু আগেই সমীর এর গা থেকে এই ঘ্রাণ টা এসেছিল। তবে কি সমীর? ভাবনার ছন্দপতণ ঘটাতে বলে সমীর।
” আপনি হলুদ লাগান নি কেন উর্মি? ”

নিরুত্তর উর্মি। এভাবে আটকে আছে ভাবতেই লজ্জায় মেখে গেল। সমীর বেশ অনেক টা ঝুকলো। এতে করে উত্তপ্ত নিশ্বাস গুলো উর্মির ঘাড়ে লেপন হয়। ছুটোছুটি করে না উর্মি। এই মৃদু শ্বাস গুলো ভালো লাগছে কেন যেন। একটু শ্বাস নিতেই বুঝতে পারে সমীর এর মুখ থেকে মদের ভোটকা ঘ্রাণ ভেসে আসে। উর্মি তড়িঘড়ি করে বলে–
” আপনি মদ খেয়েছেন। সরেন প্লিজ। ”

” মদ! না না আমি মদ খাই না উর্মি। ট্রাস্ট মি খাই না। আপনার কসম জাস্ট একটু খেয়েছি। ”

না চাইতেই হেসে উঠে উর্মি। মানুষ টা পাগল নাকি? উর্মি একটু জোর লাগিয়ে সরে আসে। এবার গান টা একটু জোরালো হয়। হেভি মিউজিক আর দারুণ এক ল্যারিক্স। হাতে টান অনুভব করে উর্মি। সমীর তাকে বাহু ডোরে আবদ্ধ করে নিয়েছে। একবার ভয় হয়। মদ খেয়ে মাতলামো করবে না তো? তবে ধারণা কে বদলে দিয়ে তীব্র আকুলতা প্রকাশ করে সমীর–
” উইল ইউ বি মাই ডান্স পার্টনার? ”

কি আশ্চর্য! প্রশ্ন করলো ঠিক তবে উত্তর এর প্রয়োজন মনে হলো না। উর্মির হাতের তালু তে হাত মিশিয়ে ডান্স করতে শুরু করলো। হতবাক উর্মি শুধু ই চেয়ে রইলো। এমনকি তাল মিলিয়ে দিচ্ছে সমীর। দারুণ নাচে এই বিষয়ে সন্দেহ না করাই উত্তম। কোনো গভীর স্পর্শ না করেই রোমান্টিক গানে দারুণ নাচ তুলে ফেললো। উর্মি এক বার ভাবলো এই ছেলে পাগল, তারপর ভাবলো এই ছেলে শিল্পী, না না তারপর ই ভাবলো এই ছেলে মাতাল। পুরো দমে মাতাল। যা আভাস দেয় সমীরের অন্তরের প্রেমাতাল।

পরদিন খুব আড়ালেই অনুষ্ঠানে জয়েন করেছে উর্মি। সমীর এর মুখোমুখি হয় নি। শশী কে শরীর খারাপের অযুহাত বলে একাই ফিরে এসেছে। জামা কাপড় বদল করে সাওয়ার নিলো লম্বা করে। সৌমেন এর কল এলো তৎক্ষণাৎ। মেঘনা ফোন রিসিভ করে দিয়ে বলল–
” তোর অফিস থেকে কল এসেছে। ”

” দে। ”

” স্যার আমি তো আজ আর কালকের দিন টা ছুটি নিয়েছি। ”

” হুম জানি উর্মি। তবে রাতে তো ফ্রি থাকবে? ”

” হ্যাঁ। ”

” তাহলেই হচ্ছে। আমরা অনলাইন মিটিং অ্যারেঞ্জ করবো একটা। সেটা তেই জয়েন করবে কেমন? ”

” ওকে স্যার। ”

” পরশু ঠিক টাইমে চলে আসবে। মিস যেন না হয়। রাখছি। ”

” আপা এক গ্লাস পানি দে তো। ”

” কি হয়েছে? ”

” তেমন কিছু না রে। তবে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ”

” তাই বল। তোর ভয় পাওয়া দেখে আমি ও — ”

গ্লাস টা টেবিলে রেখে আয়না তে নিজেকে দেখে উর্মি। মেঘনা বেড টা ঝেড়ে দিলো। কাবাড থেক জামা বের করতে করতে উর্মি জানালো এখনি ডাক্তার এর কাছে যাবে। মেঘনার চেকাপ করা দরকার।

বড় ভাইয়া আয়েসে চা খাচ্ছেন। ওদের কে দেখেই প্রশ্ন করলো কোথায় যাচ্ছে। উর্মি জানালো ডাক্তার এর কাছে যাচ্ছে চেকাপ করাতে। নড়ে চড়ে উঠে অমর।
ঘর থেকে তড়িঘড়ি করে আসে বড় ভাবি জোৎস্না। উর্মি এক পলক তাকিয়ে হৃদয়ে দীর্ঘশ্বাস লুকালো।
” ভাবি অন্তুর টাকা টা। চার হাজার দিচ্ছি পরের মাসে ছয় হাজার দিবো। ”

” ঠিক আছে। মনে রাখিস রে। না হলে এই দিকে অনেক চাপ যাবে। ”

” মনে থাকবে ভাবি। ”

মেঘনা কে নিয়ে বেরিয়ে আসে উর্মি। এক পলক দেখে মেঘনা। উর্মির ঠোঁট জুড়ে হাসি। মলিন গুটানো এক ব্যথিত হৃদয়। মেঘনা চুপ থাকে। কি বলবে? নিজেই তো বোঝা স্বরূপ।

সন্ধ্যার মিটিং এর আগে রাতের খাবার শেষ করলো উর্মি। না জানি কত সময় ধরে চলবে মিটিং। মেঘনা পাশে বসা ছিল। ল্যাপটপ অন করা দেখে উঠে গেল।
” যাস কেন? ”

” তোর কাজে সমস্যা হবে। আমি বরং অন্তুর ঘরে যাই গে। ”

” যা। দেখিস তো খাবার খেয়েছে কি না। আর একটু বুঝিয়ে দিস। ”

” হুম। ”

ল্যাপটপ অন করে উর্মি। প্রথমেই চোখ যায় সমীর এর দিকে। এই মিটিং এ সমীর ও রয়েছে? তীব্র এক লজ্জা জাগে অন্তরে। এই লাজুকতা নিয়ে কি করে শেষ করলো মিটিং তা উর্মি নিজে ও বুঝে না। ঘুমিয়েই পরেছিল তবে তখনি সমীর এর ম্যাসেজ এলো। ” সময় হবে উর্মি? ”

” হবে। ”

কল আসে সেকেন্ডেই। উর্মি একটু সময় নিয়ে রিসিভ করে। ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে বলে সমীর–
” আমি কি সেদিন উল্টো পাল্টা কিছু করেছি উর্মি? প্লিজ বলেন। আমার খুব টেনশন হচ্ছে। ”

” না কিছু করেন নি। ”

” উফ বাঁচালেন। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ”

” কেন? কিছু করার কথা ছিল না। ”

” আসলে উর্মি আমি স্যরি। আমি ফুটেজ এ সব টাই দেখেছি। প্লিজ আর লজ্জা দিবেন না। ”

লজ্জিত কন্ঠ টা এতো সুমধুর ছিলো যে উর্মি হেসে উঠলো।
” ঠিক আছে আমি কিছু মনে করি নি। মাতলামো করেন নি এটাই অনেক। ”

” ইস কি লজ্জা। ”

হো হো করে হাসে উর্মি। এবার সমীর ও হেসে কুটি কুটি। ফোন আলাপ চললো অনেক সময়। কখন যে সারারাত পার হয়ে গেল খেয়াল ই হলো না।এ যেন এক শখের কথা।

চলবে…