শত ডানার প্রজাপতি পর্ব-০৩

0
4300

#শত ডানার প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩

আমি ফ্লোরে বসে আছি পিছনে দেয়াল । অগ্নি ভাইয়ার অগ্নিদৃষ্টি আমার দিকে । মনে হচ্ছে এখনই চোখ দিয়ে আমাকে ভস্ম করে দিবে ।উনি কিছুটা ঝুকে আমার চোখে চোখ রাখে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমার গাল টিপে ধরে । দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত গলায় বলে,

– “বলেছিলাম না আমার থেকে দূরে থাকতে ? কি এক কথা একবার কানে যায় না ? কি বউয়ের অধিকার ফলাচ্ছি লে !
নাকি আমাকে ফাসানোর ধান্দা করছিলে । ভুলে গেছ তুমি আমার নাম মাত্র বউ ?
তোমার কোন কৌশলই আমার উপর চলবে না । একটা কথা ভালো করে কানে ঢুকিয়ে রাখো ।তোমার মত মিডল ক্লাস ছোট মনের মানুষকে ভালোবাসা তো দূর ,তাকাই না পর্যন্ত । ইউ আর যাস্ট ডিসগাস্টিং । ”

উনি নিজের কথা শেষ করে আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি উনার কথা শুনে থ হয়ে বসে রইলাম । বুক চিড়ে কান্না আসছে । চোখের পানি বাঁধা মানছে না । কিন্তু আমি কান্না করলাম না । বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছি । আমি কাদঁবোনা । এই লোকের জন্য তো একদম না !
ফ্লোর থেকে উঠে দাড়াই । উনার দিকে শক্ত চাহনি তে তাকিয়ে বলি ,

– “মানে যা মনে আসবে তাই বলবেন ? আর আমি সিরিয়ালের নাইকাদের মত তা শুনে চোখের জল ফেলবো !
আমাকে কি গপি ভাহু পাইছেন ?
আমার এত খারাপ দিন আসে নাই যে আমি আপনাকে ফাসাতে যাবো ! আমি মানছি আমার টেস্ট একটু খারাপ কিন্তু এতোও না যে আপনাকে পছন্দ করবো । নিজেকে এত ইম্পরট্যান্টস দেওয়ার মত কিছু নেই অকে !
আপনি দেখতে ঠি ক ঠা ক আছেন বাট ইউ আর নট মাই টাইপ । ”

উনি আমার কথা শুনে বেশ তেতে যায়। আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজায় কেউ নক করে ।উনাকে পিঠ দেখিয়ে দরজা খোলার জন্য পা বাড়াই । উনি সিংহের মত গর্জন করে উঠে।বাট হু কেয়ার্স ?
উনি পিছন থেকে কিছুসময় রাগী দৃষ্টি তাকিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
দরজা খুলে দেখি মধ্যবয়স্ক এক মহিলা দাড়িয়ে ।আমাকে দেখে বললো ,

– “বউমনি আপনাকে বড় মেডাম রেডি হয়ে নিচে যেতে বলেছে । ”

আমি মুচকি হেসে উত্তর দেই ,

– “আমি এক্ষুনী রেডি হয়ে আসছি ”

মহিলাটি চলে যায়। আমি তাড়াতাড়ি করে রেডি হতে লাগি। শত হোক আমি এই বাড়ির বউ তো ? হোক তা নামে বা একবছরের জন্য ।আর বাড়ীর বউদের এতবেলা পর্যন্ত ঘুম একদম শোভা দেয় না ।
লাল শাড়িটা পড়ে একটু সাজগোজ করে নিচে চলে যাই ।
নিচে যেতেই আপু আর আন্টিকে দেখতে পাই । আপু নাস্তা রেডি করছে ,আবির ভাই পেপারস চেক করছে আর নাস্তা করছে । আর আন্টি চা খাচ্ছে আর নিউজ পেপার পড়ছে । আন্টি খুব স্ট্রিট একজন মানুষ ।প্লাস খুব স্ট্রং । আঙ্কল মারা যাবার পর আন্টি একা হাতেই এই পুরো বিজনেস সামলিয়েছে ।কিন্তু তাই বলে সংসারে কোনো ত্রুটি রাখেনি ।সবদিকে সমান ভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছে । ওই যে কথায় আছে না ? যে মেয়ে রাধঁতে পারে সে মেয়ে চুলও বাধতে পারে ।
আমাকে দেখেই আন্টি মুচকি হেসে বলে ,

– “ঘুম ভেঙেছে ? ”

আমি মাথা নাড়িয়ে লাজুক হেসে উত্তর দিলাম ,

– “জি আন্টি । গুড মর্নিং ”

আন্টি আমার কথায় মুখ কালো করে ফেলেন যেন উনার কথাটা খুব একটা পছন্দ হয়নি । কিন্তু আমি এমন কি বললাম ?
আন্টি গম্ভির কন্ঠে বললেন,

– “এখনো আন্টি ? আমাকে মা বলা যায় না! এখনো আপন করে নিতে পারনি ?

আমি অনবরত মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম ,

– “না না আন্টি ,উপস সরি মা ! এমন কিছু না আসলে অভ্যাস ছাড়াতে একটু কষ্ট হচ্ছে এই আর কি । ”

শেষের কথাগুলো নিচু স্বরে বলি । আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ,

– “তুমি চেষ্টা করো দেখবে অভ্যাস হয়ে যাবে । ”

আমি উত্তরে মুচকি হাসলাম । হিয়া আপুর দিকে তাকাতেই আপু ইশারা করে বুঝালো আমাকে খুব সুন্দর লাগছে । আমি লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসি । এমন সময়ই দেবদাশ উপ্স কাবির সিং ! না ,না অগ্নি ভাইয়ার আগমন হয় । বেশ গম্ভির মুখ নিয়ে ফোন টিপতে টিপতে আমার পাশের চেয়ারে এসে বসে । আমি তার থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে দূরে সরে বসি । হিয়া আপু নাস্তা সার্ভ করে দেয় । উনি কোনো দিকে না তাকিয়ে নাস্তা করতে লাগে । বেশ কিছুসময় কেটে যায়। সবাই যার যার মত নাস্তা করছে । মা নিরবতা ভেঙে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন ,

– “আজ তোমাদের চার জন কে ওই বাসায় যেতে হবে । বাড়িতে ছোট করে অনুষ্ঠান রেখেছে । বিয়াই সবাইকে আমন্ত্রন করেছে ।আমি যেতে পারবোনা কিছু কাজ আছে । তোমরা নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ো । ”

আবির ভাই বাধ্য ছেলেদের মত বলল,

– “আচ্ছা মা ! ”

কিন্তু অগ্নি ভাইয়া শুনে না শুনার মত করে আছে । মা গম্ভির গলায় বলে ,

– “অগ্নি তুমি কি শুনতে পারছো আমি কি বলছি ? ”

অগ্নি ভাইয়া মায়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর বললেন,

– “জি শুনতে পারছি মিসেস আদ্রিতা খাঁন ।আজ কাল আমার মর্জি আর আমার রইলো কই? সব তো আপনার ইচ্ছাতেই হয় ।”

অগ্নি ভাইয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে যায় । মা আহত চোখে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। উনি যেতেই মা ছোট একটা নিশ্বাস নিয়ে আহত গলায় বললেন ,

– “আজ যেই কারণে তুই আমাকে ঘৃণা করিস । একদিন এই কারণটার জন্যেই ,তুই আমাকে ধন্যবাদ দিবি ।
মিলিয়ে নিস ।

________________

নাস্তা করেই জটপট রেডি হয়ে নিলাম । উনিও ঘন্টা খানেক পর চলে আসেন।
গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি যেই গাড়ি তে পিছনের সিটে উঠবো ওমনি সামনের থেকে অগ্নি ভাইয়ার গম্ভীর আওয়াজ ,

– “আমাকে কি ড্রাইভার মনে হয় নাকি ? ”

অন্যকোন সময় হলে কঠিন করে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতাম । কিন্তু এই মুহুর্তে আমি বড্ড ক্লান্ত শরীর মন উভয় দিক থেকে । তাই কথা বাড়ালনা।কিছুক্ষন রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সামনে বসে পড়ি । গাড়ি চলছে নিজ গতি তে । আমার মনে কিছু একটা খচখচ করছে । তাই নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম ,

– “আমার মামা মামী এই কন্ট্রাক্ট মেরেজের কথা যেন জানতে না পারে । তাহলে খুব কষ্ট পারে । তাদের সামনে প্লিজ স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রী থাকার মত চেষ্টা করবেন । এটা আমার রিকোয়েস্ট প্লিজ !
ভয় নেই আপনার ঘাড়চেপে বসবো না। এক বছর কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী চলে যাবো আপনার জীবন থেকে । আর সুপ্তি ফিরলে তার ও আগে । ”

উনি কোন উত্তর দিলেন না।চুপচাপ করে গাড়ি চালাচ্ছেন । মৌনতা সম্মতির লক্ষন । তবে কি সম্মতী ধরে নিবো ? ধরাই যায় !
আবারো নিরবতা বিরাজ করছে । হ্ঠাৎ নিরবতা ভেঙে উনিই ডেকে উঠেন,

– “হুর !! ”

আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি বলে উঠেন ,

– “হেইট ইউ ! ”

তার মুখে বিশেষ কোন অনুভুতির ছাপ নেই । কথাটা বেশ স্বাভাবিক ভাবে বললেন । আমি তার দিকে ফিরে তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বললাম ,

– “হেইট ইউ মোর এন্ড মোর !!! ”

আমার কথায় উনি বাঁকা হেসে ড্রাইভিং এ মন দেয় । উনি নিশ্চিত পাগল হয়ে গেছে তাই একা হাসে আবার কারণ ছাড়া রেগে যায় ।
আমি মুখ ঘুরিয়ে বাহিরের দিকে চোখ দেই । ছোট্ট নিশ্বাস বেরিয়ে আসে । কিছুক্ষণ পর চোখজোড়া ছোট হয়ে আসতে লাগে । আজ কেন জানো আপুর হলুদের কথা বড্ড মনে পড়ছে তা ভেবেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে ।

অতীত_______________

অগ্নি ভাইয়া মেরুন রং এর পাঞ্জাবি পরেছেন । চুল গুলা স্টাইল করা । ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। ঠোঁটের কোনে লেগে আছে টুকরো টুকরো হাসি । আসে পাশের মেয়ে গুলো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে । আমিও খেয়েছি কিন্তু তা চেহারায় প্রকাশ করলাম না । কারণ এই মুহুর্তে আমার উনার মাথা ফাটাতে ইচ্ছা করছে । আমি প্রচণ্ড রকম বিরক্তি নিয়ে জুসের গ্লাস হাতে দাড়িয়ে আছি। আর আমার ঠি ক সামনে অগ্নি ভাইয়া চেয়ারে আরাম করে গা এলিয়ে আছে । ঠোঁটে তৃপ্তিকর হাসি । আমাকে এভাবে দাড়া করিয়ে উনি বেশ মজা পাচ্ছে !
সবাই কত আনন্দ করছে । আপুকে হলুদ দিচ্ছে ।নাচচ্ছে গান গাইছে । আর আমি উনার ওয়েটার হয়ে দাড়িয়ে আছি ।কখনো কফি এনে দিচ্ছি আবার কখনো জুস এনে দিচ্ছি । আমি না হয় একটু ভুল করেই ফেলেছি তাই বলে উনি আমার উপর এভাবে প্রতিশোধ নিবে ? আমার ইনোসেন্ট চেহারা দেখে কি উনার দিলে একটু দয়া হয় না ? খুব রাগ হচ্ছে রাগে কান্না আসছে । আমি উনাকে বেশ শান্ত স্বরে বলি ,

– “ভাইয়া আমি এখন যাই কেমন ? ”

উনি গম্ভির কন্ঠে বলে ,

– “উহু একদম না । আমি আরো কিছু খাবো! ”

আমি বেশ চমকিয়ে শব্দ করে বললাম,

– “আপনি আরো কিছু খাবেন ?”

– “কেন তোমার সমস্যা হচ্ছে ? আন্টিকে বলবো তুমি আমাকে খাবার এনে দিচ্ছনা ?

আমি শুধু অবাক হচ্ছি । মানুষ এত বদ কেমনে হয় ? আমাকে এভাবে শাস্তি দিলো ? এতক্ষন যে আমাকে দিয়ে গাধার খাটনি খাটালেন তা ভুলে গেলো ? এ কেমন নির্দয় লোক ?
আমার কত শখ ছিলো হিয়া আপুর বিয়েতে কত্তও মজা করবো কিন্তু এই নির্দয় মানুষ রুপি রাক্ষসরাজের জন্য আমার সব শখ মাটি হয়ে গেল ।
আমার ভাবনায় ছেদ পরে উনার কড়া ধমকে!
উনি ধমক দিয়ে বললেন,

– “এই মেয়ে যাও আমার জন্য ডিজার্ট নিয়ে আসো ! ”

আমি সরু দৃষ্টি তে তাকিয়ে রেগে উত্তর দেই ,

– “আমি পারবোনা না না না । না মানে না । একদম পা- র- বো- নাআয়ায়ায়া । ”

উনি আমার চিৎকারে নিজের কান চেপে ধরে । আমি এখনো রাগে ফুসফুস করছি । উনি এবার চেয়ার থেকে উঠে যায় । আমার দিকে কপাল কুচকিয়ে তাকায় । সামনের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,

– “সুন্দরীইইইইইইইই ,সেদিন কি জানো বলছিলে ? ও হ্যা ! আমি যেন দোয়া করি তুমি আমার বউ হয়ে আমার জীবন তেজপাতা করতে পারো ! পারবে তো আমাকে হ্যান্ডেল করতে ? ”

আমার উনার এই রুপে খুব ভয় করছে । আমি ভয়ে কান্না করে দেই । কাদো কাদো গলায় বললাম ,

– “ভাইয়া আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আর জীবনে এমন কিছু বলবোনা ! ”

বলেই ভ্যা করে কান্না করে দেই । উনি আমার কান্না দেখে শব্দ করে হাসতে লাগে । বললেন ,

-“এতোটুকুতেই এই অবস্থা ? আবার আমার জীবন তেজপাতা করবে ? ”

কথা শেষ করে আবার শরীর কাঁপিয়ে হাসতে লাগে । মূহুর্তেই আমার কান্না থেমে যায় । হা হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি । কারো হাসি এত সুন্দর কি করে হয় ? কেউ এত সুন্দর কি করে হয় ? উফফফ আল্লাহ !
এমন সময়ই দরজার কাছে কিছু পরার আওয়াজ পাই । আমি আর অগ্নি ভাইয়া সঙে সঙে সেই দিকে তাকাই । তাকিয়ে দেখি সুপ্তি দাড়ানো । তার চোখে মুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ । সুপ্তি থরথর করে কাপছে । তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে চলে যায় । অগ্নি ভাইয়া তার পিছু পিছু যায় বার বার সুপ্তিকে ডাকতে লাগে । কিন্তু সুপ্তি তাকায় না চলে যায়।
আমি এসব কান্ডে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে থাকি । সব আমার মাথার উপর দিয়ে যায় । কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারি সুপ্তি আর অগ্নি ভাইয়া পূর্বপরিচীত ।
কিন্তু মনে একটা সংশয় রয়ে যায় । সুপ্তি কেন এত ভয় পাচ্ছিলো ? এর কারণ কি ছিলো ?

সেদিন আর অগ্নি ভাইয়াকেও দেখতে পালাম না । বিয়ের দিন উনার সাথে দেখা হল কিন্তু কথা হল না । তিনি আমাকে বরাবরই ইগনোর করলেন । আমিও আর কথা বাড়াইনি । কিন্তু উনি কেন জানো আমার দিকে রাগী দৃষ্টি তে তাকাচ্ছিল মনে হচ্ছিলো চোখ দিয়ে খেয়ে ফেলবে ।
বউভাতের দিনও তাই হলো ।
আপুর বিয়ের একসাপ্তাহ কেটে যায় । একদিন ভার্সিটি থেকে ফিরলে মামা রেডি হতে বললেন হিয়া আপুর শ্বশুর বাড়ি যাবে।আজ অগ্নি ভাইয়ার এংগেজমেন্ট । ইচ্ছা না থাকার স্বর্থেও যেতে হলো । কিন্তু সেখানে যেয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় শক খাই !
কারন অগ্নি ভাইয়ার সাথে আর কারোনা আমারই বেস্টফ্রেন্ডের বিয়ে হচ্ছে । অথচ আমি কিছু জানিনা । আমি কি ওর এতটাই পর যে একবার জানানোও প্রয়োজন মনে করলো না ? চোখ গুলো ভরে আসছে । কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে সুপ্তির কাছে গেলাম । সুপ্তি আমাকে দেখেই দ্বিধায় পড়ে গেলো । আমি সুপ্তিকে অভিনন্দন জানাতে যাবো তার আগেই কোথা থেকে যেন অগ্নি ভাইয়া চলে আসে । আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে দূরে নিয়ে আসে । ধমক দিয়ে বললেন,

– “আমার হবু বউ থেকে দূরে থাক । অনেক ঝামেলা করেছো আর না । সুপ্তির আশেপাশে যেন তোমাকে না দেখি ! ”

আমি লজ্জা আর বিস্ময়ের চরম পর্যায় । আমি কি ঝামেলা করেছি ? কেন আমাকে এভাবে কথা শুনাচ্ছে ?
আমি তা জিগাসা করতে যাবো তার আগেই উনি চলে যায় । আমি সেখানে এক সেকেন্ড দেরী না করে বাড়িতে চলে আসি।সেদিন থেকে সুপ্তির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই । সুপ্তিও কোনো খোঁজ নেয়নি । কিছুদিন পর মামা থেকে শুনি অগ্নি ভাইয়ার বিয়ে ।আমি তেমন গুরুতও দেই না। তাদের বিয়ে আমার তাতে কি ? তারা বিয়ে করুক না করুক তাতে আমার কি আসে যায় !

হ্ঠাৎ একদিন ভোর সকালে আদ্রিতা আন্টি আমাদের বাড়িতে আসে। সবাই বেশ চমকিয়ে যাই উনাকে এত সকাল সকাল দেখে । মামা মামী তো বরাবরই ঘামছে । ওই বাড়িতে কোনো সমস্যা হয় নি তো ।
আন্টি ড্রইং রুমে বসে । মামী নাস্তা নিয়ে এসে বললেন ,

– “বেয়াইন আপনি এত সকাল সকাল । হিয়ার কি কিছু করেছে ?

মামীর কথায় স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।আন্টি শীতল কন্ঠে বললেন,

– “হিয়া কে নিয়ে কিছুনা বিষয়টা অন্য । ”

মামা ভ্রু কুচঁকিয়ে বললেন ,

– “তা কি বেয়াইন । ”

আন্টি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সরাসরি বললেন ,

– “আমার ছেলে অগ্নির জন্য আপনার ভাগ্নির হাত চাইতে এসেছি । ”

কথাটা একপ্রকার বোমের মত বাড়ীতে ব্লাস্ট হলো । মামা থতমত গলায় বললেন,

– “অগ্নি তো সুপ্তির সাথে বিয়ে ঠি ক তাই না ? ”

– “হ্যা ,কিন্তু সুপ্তি কাল রাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে । কোথায় গিয়েছে তা কেউ জানে না । নোট লিখে গেছেন সে এখন বিয়ে করতে পারবেনা ।
এদিকে একসাপ্তাহ পর বিয়ে সবাইকে ইনভাইটেশন দেওয়া শেষ । এখন যদি জানতে পারে বউ পালিয়েছে পুরো সোসাইটির সামনে আমার নাক কাটা যাবে । প্লিজ আমার রিকোয়েস্ট আপনারা রাজী হয়ে যান । আমার ছেলের জন্য হুর থেকে বেটার কেউ হতে পারেনা । আমার প্রথম চয়েস হুর ছিলো শুধু অগ্নির চাপে পড়ে সুপ্তির সাথে বিয়েতে রাজী হয়েছি । কিন্তু নিলজ্জ মেয়ে কি করলো ? পালালো । মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলো ।
আশা করি আপনারা আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না ।”

মামা বললেন,

– “বেয়াইন এটা বিয়ে শাদীর ব্যপার স্যপার হুরে জীবনের ব্যপার এই ডিসিশন নেওয়ার অধিকার হুরের। হুরের সিদ্ধান্তই হবে আমাদের সিদ্ধান্ত ! ”

আমি এতসময় পর্দার আড়াল থেকে শুনছিলাম। মামা কথা শুনে বাহিরে বেড়িয়ে এলাম।বললাম,

– “আমি এই বিয়েতে রাজি না । ”

আন্টি আমার কথা শুনে বললেন,

– “প্লিজ মা তোমার কাছে আমার রিকোয়েস্ট আমার মান সম্মান বাচাঁও । ”

– “আন্টি আমার বেয়াদবি মাফ করবেন । কিন্তু আমি পারবোনা অগ্নি ভাইয়াকে বিয়ে করতে । সে আমার বান্ধবীর ভালোবাসার মানুষ আমি কি করে তাকে বিয়ে করবো ? ”

আন্টি বেশ শক্ত গলায় বললেন ,

– “যদি তোমার বান্ধবী সত্যি আমার ছেলেকে ভালোবাসতো তাহলে পালাতো না।
এটাই কি তোমার শেষ সিদ্ধান্ত ? ”

আমি মাথা হ্যা বোধক নাড়ালাম । আন্টি বললেন,

– “তাহলে তোমার বোনের সংসার করাও আর হবেনা। আমি যেমন গড়তে পারি তেমন ভাঙতেও পারবো ।
আমি আমার সম্মানের জন্য সব পারি । অনেক কষ্টে এই সম্মান অর্জন করেছি ।
আজকের দিন সময় দিলাম ভেবে সিদ্ধান্ত জানাবে । ”

আন্টি কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায়।। মামা মামী চিন্তায় পড়ে যায় । মামী কান্না কাটি করতে লাগে । সেদিন বিকাল দিকে হ্ঠাৎ আননোন নাম্বার থেকে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একজন পুরুষের কন্ঠ ভেসে আসে “হ্যালো ” । কন্ঠটা শুনতেই শরীরে শীতল হাওয়া বইলো ।চোখ গুলো ভরে আসে। কন্ঠটা খুব পরিচীত আর কাছের একজনের । হঠাৎ এতো মাস পর শুনতে পেয়ে কলিজায় লাগে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার মন ভেঙে চুরমার করে ওপাশের ব্যক্তি বললেন,

– “হুর আমি অগ্নি । ”

কথাটা শুনে মন ছোট হয়ে গেলো ।আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। আচ্ছা দুটো মানুষের কন্ঠ কি এতটা মিল হতে পারে ? আদো সম্ভব ?
আমার ভাবনায় ডাক পড়ে । অগ্নি ভাইয়া ভারী গলায় বললেন,

– “আমি জানি হুর তুমি আমাকে শুনছো ।এটাও জানি মা আজ তোমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে গিয়েছিলো । আমি সুপ্তিকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারবো না । আমার দ্বারা সম্ভব না !
আশা করি তোমার উত্তর না হবে । ”

বলেই ফোন রেখে দেয় আমি থম মেরে বসে থাকি । কি করবো এখন ? আমার কি করা উচিত ? সারারাত নিদ্রাহীন ভাবনায় কাটিয়ে দিলাম । চোখ বন্ধ করলেই শুধু মামা মামী আর হিয়া আপুর চেহারা ভেসে উঠে । তারা আমাকে ছোট থেকে মানুষ করেছেন ,আগলিয়ে রেখেছেন । তাদের ঋন কোনদিন শোধ করা সম্ভব না। আমার জীবনের বলি দিয়ে যদি তাদের হাসি মুখ দেখা যায় তাহলে তাই হোক । আমি তো জন্মের পর থেকে পুড়াকপালী । ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলাম যা হবার তা হবে ।
সবদিক বিবেচনা করে পরের দিন আন্টিকে বললাম আমি বিয়েতে রাজী ।এক সাপ্তাহ পর আমাদের সেইদিনেই বিয়ে হয় যেদিন অগ্নি ভাইয়া আর সুপ্তির বিয়ের কথা ছিলো । এর মাঝে এক সাপ্তাহ অগ্নি ভাইয়া বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু আমি করিনা কারন তার রাগের সামনে ধারানোর মত শক্তি আমার ছিলোনা !!!!

বর্তমান____________

মুখের উপর কারো ঘন নিশ্বাসে আমার ঘুম ভাঙে । চোখ খুলে দেখি অগ্নি ভাইয়া আমার দিয়ে গভীর নয়নে তাকিয়ে । আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলি,

– “আমার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিচ্ছিলেন ? আপনি আমার নামে মাত্র হাসবেন্ড । আমার থেকে দুরে থাকেন ! ”

তার বলা কথা তাকেই ফিরিয়ে দেই । গাড়ি বাড়ির সামনে দাড়ানো তাই তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি । নিশ্চিত রাক্ষসরাজ রাগে লাল হয়ে আছে ! নাকের দগাটা লাল হয়ে আছে রাগে? বেশ মজা লাগছে ।
উনি পিছুপিছু আসতে লাগে । বাড়িতে ডুকতেই মামী জড়িয়ে ধরে বললেন,

– “কেমন আছিস মা ? ও মা শাড়ি পরেছিস ? লাল শাড়িতে একদম আসমানী হুর লাগছে ! ”

আমি মামীর কথায় লজ্জাময় হাসি দেই । হ্ঠাৎ পিছনে একজন লোক কে দেখে ভয় পেয়ে যাই ।ভয়ে অগ্নি ভাইয়ার হাত শক্ত করে চেপে ধরি ।অগ্নি ভাইয়ার পিছনে চলে যাই ।
লোকটি তখনো আমার দিকে অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে ।

চলবে ……❤️

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন । প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন 😊😊😊